নারীকে মাহরাম ব্যতীত পর-পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত থেকে বিরত রাখা লজ্জাস্থান হিফাযত করার একটি অংশ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يخلون بامرأة ليس معها ذو محرم منها، فإن ثالثهما الشيطان«
“যে আল্লাহ ও পরকাল দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে এমন নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না যার সাথে মাহরাম নেই। কারণ, তাদের তৃতীয়জন হচ্ছে শয়তান”।[1]
আমের ইবন রাবি‘আহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ألا لا يخلون رجل بامرأة لا تحل له، فإن ثالثهما الشيطان، إلا محرم«
“জেনে রেখ, কোনো পুরুষ এমন নারীর সাথে একান্ত সাক্ষাত করবে না, যে তার জন্য হালাল নয়। কারণ, তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান, যদি না সে পুরুষটি হয় মাহরাম”।[2]
ইমাম মাজদ ইবন তাইমিয়্যাহ ‘মুনতাকা’ গ্রন্থে বলেন: ইমাম আহমদ উপর্যুক্ত হাদীস দু’টি বর্ণনা করেছেন, তবে এ হাদীসের ভাবার্থ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, যা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত।
ইমাম শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২০) গ্রন্থে বলেন: “পর-নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত ঐকমত্যে হারাম। অনুরূপ ঐক্যমত্য নকল করেছেন হাফেয ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে। হারাম হওয়ার কারণ তাদের তৃতীয়জন শয়তান, যা হাদীসেই স্পষ্ট। শয়তানের উপস্থিতি তাদেরকে হারাম লিপ্ত করবে, তবে মাহরামসহ সাক্ষাত বৈধ। কারণ, তার উপস্থিতিতে পাপ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” সমাপ্ত।
কতক নারী ও তাদের অভিভাবক বেশ কিছু নির্জন সাক্ষাত সম্পর্কে শিথিলতা করেন:
ক. স্বামীর নিকটাত্মীয়দের সাথে নির্জন সাক্ষাত করা ও তাদের সামনে চেহারা উন্মুক্ত রাখা। বস্তুত তাদের সাথে নির্জন সাক্ষাত অন্যান্য সাক্ষাত থেকে বেশি ক্ষতিকর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»إياكم والدخول على النساء، فقال رجل من الأنصار: يا رسول الله أفرأيت الحمو ؟ قال: الحمو: الموت«
“খবরদার, তোমরা নারীদের নিকট প্রবেশ করবে না, তখন এক আনসারী ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, حمو বা দেবর সম্পর্কে কী বলেন? তিনি বললেন: দেবর হচ্ছে মৃত্যু”। আরবিতে স্বামীর ভাইকে الحمو বলা হয়। তিনি দেবরের সাথে নির্জন সাক্ষাতকে মৃত্যুর মতো অপছন্দ করেছেন।
হাফেয ইবন হাজার রহ. ‘ফাতহুল বারী’: (৯/৩৩১) গ্রন্থে বলেন: ইমাম নাওয়াওয়ী বলেছেন: “ভাষাবিদগণ সবাই একমত যে, الحمو অর্থ স্বামীর নিকটাত্মীয়, যেমন স্বামীর বাবা, স্বামীর চাচা, স্বামীর ভাই, স্বামীর ভাইয়ের ছেলে ও স্বামীর চাচার ছেলে প্রমুখগণ।” তিনি আরো বলেন: “হাদীসে স্বামীর নিকটাত্মীয় দ্বারা উদ্দেশ্য স্বামীর বাবা ও স্বামীর সন্তান ব্যতীত অন্যান্য পুরুষ, কারণ তারা স্ত্রীর জন্য মাহরাম, তাদের সাথে একান্ত সাক্ষাত বৈধ। তাদেরকে মৃত্যু বলা যাবে না।” তিনি বলেন: “ভাইয়ের স্ত্রী তথা ভাবীর সাথে নির্জন সাক্ষাত করার বিষয়টি মানুষ সচরাচর শিথিলভাবে দেখে অথচ তার উদাহরণ হচ্ছে মৃত্যু। সে-ই সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞার পাত্র।” সমাপ্ত।
শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২২) গ্রন্থে বলেন: “الحمو: الموت এ কথার অর্থ হচ্ছে অন্যদের অপেক্ষা তার থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা বেশি, যেমন অন্যান্য ভীতিকর বস্তু থেকে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ভীতিজনক।” সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন! আল্লাহকে ভয় কর, এ বিষয়ে শিথিলতা করো না, যদিও মানুষেরা শিথিলতা করে। কারণ, শরী‘আতের নির্দেশ উপদেশ হিসেবে উত্তম মানুষের অভ্যাস নয়।
খ. কতক নারী ও তাদের অভিভাবক মাহরাম ছাড়া ড্রাইভারের সাথে একাকী চলাফেরার ক্ষেত্রে শিথিলতা করে অথচ এটাও হারাম নির্জনতা।
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (১০/৫২) বলেন: বর্তমান এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, অপরের গাড়িতে মাহরাম ব্যতীত পর-নারীর একাকী চড়া অনেক অনিষ্টের সঙ্গী হয়। এতে বহু অনিষ্ট রয়েছে যার ব্যাপারে শিথিলতা করা কখনো সমীচীন নয়। হোক সে লজ্জাশীল নারী কিংবা বেশি বয়সের পবিত্রা নারী, যে সাধারণত পুরুষের সাথে কথা বলে থাকে। যে ব্যক্তি তার মাহরাম নারীর জন্য এ জাতীয় আচরণ পছন্দ করে তার দীনদারী দুর্বল, সে পুরুষত্বহীন ও আত্মমর্যাদাবোধশূন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان«
“কোনো পুরুষ নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হবে না, হলে অবশ্যই তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”।[3]
পর-পুরুষের সাথে গাড়িতে চড়া ঘর ও ঘরের ন্যায় নির্জন সাক্ষাতের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এতে যে অনিষ্ট রয়েছে তা নির্জন সাক্ষাতেও নেই।” সমাপ্ত।
মাহরামকে অবশ্যই বড় হওয়া জরুরি, যার উপস্থিতিতে নির্জন সাক্ষাত হয় না, বাচ্চা সাথে থাকাই যথেষ্ট নয়। কতক নারী মনে করে ছোট বাচ্চা থাকলেই নির্জনতা চলে যায় -ভুল ধারণা।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন: যদি পর-পুরুষ পর-নারীর সাথে তৃতীয় ব্যক্তি ব্যতীত নির্জনে সাক্ষাত করে তবে তা সবার নিকট হারাম। অনুরূপ যদি তার সাথে ছোট কেউ থাকে যার উপস্থিতিতে লজ্জা হয় না বয়স কম হওয়ার কারণে, এরূপ বাচ্চা দ্বারা হারাম নির্জনতা ভঙ্গ হয় না।
গ. কতক নারী ও তার অভিভাবক চিকিৎসার নামে ডাক্তারের সাক্ষাত সম্পর্কে শিথিলতা করেন, এটাও বড় অপরাধ। এতে রয়েছে বড় অনিষ্ট যা মেনে নেওয়া ও যার ওপর চুপ থাকা জায়েয নেই।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. ‘মাজমু‘উল ফতোয়া’য়: (১০/১৩) বলেন: “যাই হোক পর-নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম, চিকিৎসক ডাক্তারের জন্যও হারাম। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان«
“কোনো পুরুষ নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হবে না, হলে অবশ্যই তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”।[4]
অবশ্যই নারীর সাথে কারো থাকা জরুরি, হোক সে তার স্বামী কিংবা কোনো মাহরাম পুরুষ। যদি পুরুষ না পাওয়া যায় অবশ্যই তার নিকট আত্মীয় নারী থাকা জরুরি। যদি উল্লিখিত কাউকে পাওয়া না যায়, এ দিকে অসুখও কঠিন হয় যে বিলম্ব করা সম্ভব নয়, তাহলে অবশ্যই রোগীর সাথে সেবিকা বা তার ন্যায় কাউকে উপস্থিত থাকা জরুরি, যেন নিষিদ্ধ নির্জনতা না হয়।” সমাপ্ত।
অনুরূপ ডাক্তারের পক্ষে কোনো পর-নারীর সাথে সাক্ষাত করা জায়েয নেই, হোক পর-নারী রোগী বা তার ডাক্তারি পেশার সঙ্গী অথবা নার্স। অনুরূপ অন্ধ শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর নির্জন সাক্ষাত বৈধ নয়। অনুরূপ পর-পুরুষের সাথে বিমানে বিমানবালার নির্জন সাক্ষাত বৈধ নয়। পশ্চিমা সভ্যতা ও কাফেরদের অন্ধ অনুকরণের নামে মানুষ তার ব্যাপারে শিথিলতা করছে। কারণ, দীনী বিধানের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। লা-হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ।
অনুরূপ খাদেমার সাথে নির্জন সাক্ষাতও বৈধ নয়, যে তার বাড়িতে কাজ করে। অনুরূপ গৃহিনীর পক্ষে বৈধ নয় খাদেমের সাথে নির্জন সাক্ষাত করা। সেবক-সেবিকা ও খাদেম-খাদ্দামার সমস্যাটি বর্তমান যুগে বিরাট আকার ধারণ করেছে। কারণ, নারীরা পড়াশুনা ও ঘরের বাইরের কাজে ব্যস্ত। তাই মুমিন নারী ও পুরুষদের খুব সতর্ক হওয়া জরুরি। সাবধানতামূলক উপকরণ গ্রহণ করা, কখনো বদ অভ্যাসের সাথে জড়িত না হওয়া।
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৬৫; আহমদ: (১/১৮)
[3] আহমদ: (৩/৩৩৯)
[4] আহমদ: (৩/৩৩৯)