মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) - 3. Purification
২৮১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

আত্ব ত্বহা-রাহ্(الطَّهَارَةِ) এর শাব্দিক অর্থ- প্রত্যেক শারীরিক অনুভূতি সম্বন্ধীয় অথবা মানসিক দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা।

পরিভাষাগতভাবে দেহকে নাজাসাতে হুকমী এবং দেহ, কাপড় ও ’ইবাদাতের স্থানকে নাজাসাতে হাকীকি তথা পায়খানা-প্রস্রাব ও বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা হতে মুক্ত রাখা। উল্লেখ্য যে, ’আমল যেহেতু ’ইলমের ফল এবং ’ইলমের পর ’আমলের স্থান তখন কিতাবুল ’ইলমকে লেখক আগে নিয়ে এসেছেন। পক্ষান্তরে ’ইলমের পর ’আমলের স্থান ও দৈহিক ’আমলের মাঝে সর্বোত্তম হচ্ছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এবং পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সালাতে শামিল হওয়া যায় না; তাই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর শর্তস্বরূপ ’ইলমের পরই পবিত্রতা অধ্যায়কে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রত্যেক ’ইলম অন্বেষণকারীর জন্য দায়িত্ব হচ্ছে দীনের হাকীকাত ও তার কল্যাণকর হুকুম-আহকাম জানার জন্য ইমাম ইবনুল ক্বাইয়ূম-এরإِعْلَامُ الْمُوَقِّعِيْنَ নামক গ্রন্থ এবংحُجَّةُ اللهُ الْبَالِغَةِ ও হাফিয ’ইরাক্বীর তাখরীজুল আহাদীসসহإِحْيَاءُ عُلُوْمُ الدِّيْنِ গ্রন্থ এবং জাস্‌র-এরالحصون الحميدية এবং এ বিষয়ের আরো অন্যান্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করা।


২৮১-[১] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। ’আলহামদু লিল্লা-হ’ মানুষের ’আমলের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং ’সুবহানাল্লাহ-হি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লা-হ’ সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো নূর বা আলো। দান-খয়রাত (দানকারীর পক্ষে) দলীল। সবর বা ধৈর্য হলো জ্যোতি। কুরআন হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম হতে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে- হয় তাকে সে আযাদ করে দেয় অথবা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। (মুসলিম)[1]

আর এক বর্ণনায় এসেছে, ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা­-হু আল্লা­-হু আকবার’ আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপূর্ণ করে দেয়।[2] মিশকাতুল মাসাবীহ-এর সংকলক বলেছেন, আমি এ বর্ণনাটি বুখারী-মুসলিম কিংবা হুমায়দী বা জামিউল উসূলে কোথাও পাইনি। অবশ্য দারিমী এ বর্ণনাটিকে ’সুবহানাল্লাহ­-হি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লা-হি’ এর স্থলে বর্ণনা করেছেন।

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

عَن أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآنِ - أَوْ تَمْلَأُ - مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُورٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِي رِوَايَةٍ: «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ تَمْلَآنِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ» . لَمْ أَجِدْ هَذِهِ الرِّوَايَةَ فِي الصَّحِيحَيْنِ وَلَا فِي كِتَابِ الْحُمَيْدِيِّ وَلَا فِي «الْجَامِعِ» وَلَكِنْ ذَكَرَهَا الدَّارِمِيُّ بدل «سُبْحَانَ الله وَالْحَمْد لله»

عن ابي مالك الاشعري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الطهور شطر الايمان والحمد لله تملا الميزان وسبحان الله والحمد لله تملان - او تملا - ما بين السماوات والارض والصلاة نور والصدقة برهان والصبر ضياء والقران حجة لك او عليك كل الناس يغدو فباىع نفسه فمعتقها او موبقها» . رواه مسلم وفي رواية: «لا اله الا الله والله اكبر تملان ما بين السماء والارض» . لم اجد هذه الرواية في الصحيحين ولا في كتاب الحميدي ولا في «الجامع» ولكن ذكرها الدارمي بدل «سبحان الله والحمد لله»

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লিখিত شَطْرُ الْإِيْمَانِ থেকে উদ্দেশ্য ঈমানের অর্ধেক। এক মতে বলা হয়েছে- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া ও এর বিশাল সাওয়াব বর্ণনা করা যেন তা ঈমানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

এ ধরনের আরো মত আছে, তবে شطر থেকে نصف অর্থ নেয়াটাই শক্তিশালী মত। যা বানী সুলায়ম গোত্রের জনৈক ব্যক্তির হাদীসে ‘‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক’’। এভাবে আভিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে شَطْرُ শব্দের অর্থ نصف -ই জানা যায়। الإيمان থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে সাওয়াবের বিশালত্বের বিবরণ দেয়া।

(اَلصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ) অর্থাৎ- সদাক্বাহ্ (সাদাকা) সদাক্বাকারীর ঈমানী দাবীর সত্যতার স্পষ্ট প্রমাণ। কেননা ব্যক্তির সম্পদ ব্যয় সাধারণত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়ে থাকে, অতএব সম্পদ ব্যয় তার ঈমানের ব্যাপারে সত্যতার প্রমাণকারী ছাড়া কিছু না।

(اَلصَّبْرُ ضِيَاءٌ) অর্থাৎ- ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশসূচক কাজের আনুগত্য করে ও তাঁর নিষেধসূচক ও অবাধ্য কাজ থেকে বেঁচে থেকে সঠিক পথের উপর ধৈর্য ধারণ করা, এছাড়া সকল প্রকার বিপদে ও দুনিয়াবী সকল অপছন্দনীয় কষ্টদায়ক বিষয়ের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা ব্যক্তির জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন বহু পথের এমন এক জ্যোতি লাভ করে যার মাধ্যমে ব্যক্তি সঠিক পথের দিশা পায়। হাদীসে ধৈর্য ধরাকে ضياء বা জ্যোতি বলা হয়েছে যা نور অপেক্ষাও শক্তিশালী। صبر ধৈর্য ধরাকে ضياء বলার ও صلاة কে نور বলার কারণ হচ্ছে- যেহেতু صبر -এর বিষয়টি صلاة অপেক্ষা প্রশস্ত। ব্যক্তি তার জীবনে প্রত্যেক ওয়াজিব কাজ করতে গিয়েও নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকতে গিয়ে ধৈর্যের মুখাপেক্ষী হয়। দীনের প্রতিটি বিষয়ই ধৈর্যের উপর নির্ভরশীল।

হাদীসটিতে একজন মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাসবীহ, তাহলীল ও ‘আমলের উল্লেখ করা হয়েছে যা তাকে ‘আমলের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগাবে। হাদীসটি থেকে আরো বুঝা যায়, কুরআন অনুযায়ী ‘আমল করলে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে কুরআন ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য হবে, পক্ষান্তরে তা হতে মুখ ফিরিয়ে রাখলে কুরআন ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। হাদীসের শেষাংশ থেকে বুঝা যায় মানুষের সামনে সঠিক পথ স্পষ্ট হয়ে আছে অথচ মানুষের অবস্থা এই যে, প্রত্যেকে তার নিজের ব্যাপারে চেষ্টা করে, অতঃপর তাদের কেউ এমন, যে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেয় এবং এভাবে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করে। আর কেউ এমন আছে, যে শায়ত্বন (শয়তান) ও প্রবৃত্তির অনুসরণের মাধ্যমে নিজেকে শায়ত্বন (শয়তান) ও প্রবৃত্তির কাছে বিক্রি করে দেয় এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অতএব এ অংশে মানুষের শিক্ষণীয় দিক হলো- সদা-সর্বদা যেন নিজের প্রতি খেয়াল রাখা যে, সে প্রতিনিয়ত কোন ‘আমল করে সে নিজেকে কার কাছে বিক্রি করছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮২-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশ করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন একটি কথা বললো না আল্লাহ তা’আলা যা দিয়ে তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিবেন এবং (জান্নাতেও) পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! অবশ্যই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কষ্ট হলেও পরিপূর্ণভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা, মসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা এবং এক ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পর আর এক ওয়াক্ত সালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটাই হলো ’রিবাত্ব’ (প্রস্তুতি গ্রহণ)।[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَى إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاة فذلكم الرِّبَاط»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: (الا ادلكم على ما يمحو الله به الخطايا ويرفع به الدرجات؟ قالوا بلى يا رسول الله قال: «اسباغ الوضوء على المكاره وكثرة الخطى الى المساجد وانتظار الصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط»

ব্যাখ্যা: (يَمْحُو اللّهُ بِهِ الْخَطَايَا) ‘‘যা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহসমূহ মুছে দিবেন।’’ অর্থাৎ- গুনাহ লিপিবদ্ধকারী লেখকদের দফতর থেকে গুনাহসমূহ মুছে ফেলবেন। আর এ মুছে ফেলাটাই আল্লাহ তাকে তা মাফ করে দিয়েছেন তার দলীল। এ গুনাহ দ্বারা ঐ সগীরাহ গুনাহ উদ্দেশ্য যা আল্লাহর হাক্বের সাথে সম্পৃক্ত।

(وَيَرْفَعُ بِه الدَّرَجَاتِ) ‘‘আর তা দ্বারা পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন।’’ অর্থাৎ- জান্নাতে তাকে উঁচু মর্যাদা দান করবেন। অনুরূপভাবে দুনিয়াতেও তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

(كَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ) ‘‘মসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা।’’ (الْخُطَا) বলা হয়, পায়ে হেঁটে চলার সময় দু’পায়ের মধ্যবর্তী জায়গাকে। যাকে আমরা বাংলা ভাষায় পদক্ষেপ বলি। অধিক পদক্ষেপ দু’টি কারণে হতে পারে। যথা- (১) মাসজিদ থেকে বাসস্থানের অবস্থান দূরবর্তী স্থানে হওয়ার কারণে, (২) বারবার মসজিদে আগমনের কারণে। কারণ যাই থাক না কেন মসজিদে অধিক যাতায়াতকারীর ব্যক্তির জন্য হাদীসে বর্ণিত মর্যাদা তার জন্য নির্ধারিত আছে।

(انْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ) ‘‘এক সালাতের পর আরেক সালাতের জন্য অপেক্ষা করা।’’ অর্থাৎ- এক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর পরবর্তী সালাত আদায় করার উদ্দেশে মসজিদে বসে থাকা অথবা সালাত আদায় করে স্বীয় কর্মস্থলে ফিরে যাবার পর পরবর্তী সালাত আদায়ের জন্য মনে মনে সংকল্প করা এবং এজন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা যাতে মসজিদে গিয়ে পরবর্তী সালাত আদায়ে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৩-[৩] মালিক ইবনু আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, ’এটাই রিবা-ত্ব, এটাই রিবা-ত্ব’ দু’বার বলা হয়েছে। (মুসলিম, আর তিরমিযীতে তা তিনবার উল্লিখিত হয়েছে)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَفِي حَدِيث مَالك بن أنس: «فَذَلِك الرِّبَاطُ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ» . رَدَّدَ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَة التِّرْمِذِيّ ثَلَاثًا

وفي حديث مالك بن انس: «فذلك الرباط فذلكم الرباط» . ردد مرتين. رواه مسلم. وفي رواية الترمذي ثلاثا

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি ঠাণ্ডা পানি কিংবা শরীরে ব্যথা বা অন্যান্য সমস্যা সত্ত্বেও দুনিয়ার সকল বিষয়ের প্রতি খেয়াল বর্জন করে উযূর অঙ্গগুলোকে তিনবার করে ধৌত করে এবং ঘর্ষণের মাধ্যমে ও উযূর অঙ্গগুলোর শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উদ্দেশে উযূর প্রতি ব্যাস্ত থাকে তাহলে এ ধরনের ব্যক্তির ‘আমলনামা থেকে আল্লাহ তার সগীরাহ্ গুনাহসমূহ মিটিয়ে দিবেন এবং ইহজীবন ও পরজীবনে তার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং এটিই আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ অর্থাৎ- ‘‘হে মু’মিনগণ! ধৈর্য অবলম্বন কর, দৃঢ়তা প্রদর্শন কর, নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে পারস্পরিক বন্ধন মজবুত কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ২০০)। এর মাঝে উল্লিখিত প্রকৃত রিবাত্ব। কারণ এ ধরনের উযূ (ওযু/ওজু/অজু)  একজন ব্যক্তিকে শায়ত্বনী পথসমূহ থেকে বাধা দেয়। আত্মাকে প্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে এবং নাফসের শত্রু ও শায়ত্বন (শয়তান) হতে দূরে রাখে।

পরিশেষে বলা যায়, মুসলিমে উল্লিখিত হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ কথাটি দু’বার এবং তিরমিযীর বর্ণনাতে তিনবার এসেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দান অথবা বিষয়টির মর্যাদা বুঝানো এবং এ ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ প্রদানের জন্য একাধিকবার বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৪-[৪] ’উসমান (রাঃ) হতে বণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে এবং উত্তমভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে, তার শরীর হতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تخرج من تَحت أَظْفَاره»

عن عثمان رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من توضا فاحسن الوضوء خرجت خطاياه من جسده حتى تخرج من تحت اظفاره»

ব্যাখ্যা: গুনাহের একটি নিজস্ব আকার-আকৃতি আছে যা মানব দেহের সাথে ঝুলন্ত বা লেগে থাকে কিংবা দেহ হতে আলাদাও থাকতে পারে। কথাটিকে উপেক্ষা করা যায় না যেমন বলা হয়েছে ‘আল্লামা সুয়ূত্বী তাঁর قوت المغتذي গ্রন্থে বলেন- হাদীসটির বাহ্যিক দৃষ্টি-ভঙ্গি হাক্বীক্বাতের উপর। অতঃপর এ কথাটি এমন হাদীস দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন যা প্রমাণ করে নিশ্চয়ই গুনাহের আকার-আকৃতি আছে। হাদীসটি প্রত্যেক মু’মিনকে বেশি বেশি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৫-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দু’ হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্যে তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে সে (উযূ (ওযু/ওজু/অজু) র জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ المَاء مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خرجت من يَدَيْهِ كل خَطِيئَة بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوب)
(رَوَاهُ مُسلم)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا توضا العبد المسلم او المومن فغسل وجهه خرج من وجهه كل خطيىة نظر اليها بعينيه مع الماء مع اخر قطر الماء فاذا غسل يديه خرجت من يديه كل خطيىة بطشتها يداه مع الماء او مع اخر قطر الماء فاذا غسل رجليه خرج كل خطيىة مشتها رجلاه مع الماء او مع اخر قطر الماء حتى يخرج نقيا من الذنوب) (رواه مسلم)

ব্যাখ্যা: হাদীসটি বেশি বেশি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানকারী এবং নিয়্যাত খালিস করে কুরআন তিলাওয়াত অথবা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কায়িম করার উদ্দেশে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলে শরীরের সমস্ত সগীরাহ্ গুনাহ মাফ হয়ে যায় এটা নিশ্চিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৬-[৬] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম ফরয সালাতের সময় হলে উত্তমভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে, বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ’ করে (সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তার এ সালাত), তা তার সালাতের পূর্বের গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্ (প্রায়শ্চিত্ত) হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করে থাকে। আর এভাবে সর্বদাই চলতে থাকবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عثمان قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما من امرى مسلم تحضره صلاة مكتوبة فيحسن وضوءها وخشوعها وركوعها الا كانت كفارة لما قبلها من الذنوب ما لم يوت كبيرة وذلك الدهر كله» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি উযূর সুন্নাত ও তার নিয়ম-কানুন সংরক্ষণের মাধ্যমে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে এবং সালাতের প্রতিটি রুকনকে সর্বাধিক বিনয়-নম্রতার সাথে, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে, মন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে যথার্থভাবে আদায় করে তাহলে আল্লাহ তার পূর্বের সগীরাহ্ গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। তবে শর্ত হলো যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকে। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) গুনাহ মাফের কারণ হওয়াকে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত না হওয়ার সঙ্গে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। অতএব কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহতে লিপ্ত হলে সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা করা হবে না এবং এটিই আল্লাহর আয়াত اِن تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ থেকে বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে।

তবে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন- শর্তারোপ ছাড়াই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ ছাড়া, কেননা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ইমাম নাবাবী বলেন, এটাই উদ্দেশিত অর্থ। প্রথম অর্থটি যদিও ইবারত থেকে সম্ভাবনাময় অর্থ কিন্তু হাদীসের বাচনভঙ্গি তা অস্বীকার করছে। কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের ক্ষমা কেবল তাওবা-ই করতে পারে। অথবা আল্লাহর রহমাত ও দয়া। কখনো কখনো বলা হয়, উযূই যখন গুনাহ মোচন করে দিবে তাহলে সালাতে আর কি কাজ? আবার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যখন গুনাহ মোচন করে দিবে তখন জামা‘আত এবং হাদীসসমূহে গুনাহ মোচনের আরো যত কারণ বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো কি মোচন করবে?

এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে- এগুলোর প্রত্যেকটি গুনাহ মোচনের জন্য উপযুক্ত। অতএব সগীরাহ্ গুনাহ হয়েছে এমন কোন ‘আমল তা ছোট গুনাহকে ক্ষমা করবে আর যদি ব্যক্তি এমন হয় যে, সে সগীরাহ্ গুনাহ করেনি, কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করেছে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তার কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহকে হালকা করবেন। অন্যদিকে সগীরাহ্ বা কাবীরাহ্ (কবিরা) কোন গুনাহই যদি না করে থাকেন তাহলে এসব ‘আমলের কারণে আল্লাহ তার জন্য পুণ্য লিখবেন এবং এর মাধ্যমে তার মর্যাদাকে আরো উন্নীত করবেন।

উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু রুকূ‘র আলোচনা করেছেন সাজদার আলোচনা করেননি। এর কারণ হচ্ছে- যেহেতু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ও রুকূ‘ পারস্পরিক দু’টি রুকন, তাই যখন উভয়ের একটিকে সুন্দরভাবে আদায় করতে বলেছেন তখন এমনিতেই বুঝা যাচ্ছে অপরটিও সুন্দরভাবে আদায় করতে হবে এবং ‘‘রুকূ‘কে’’ যিকর দ্বারা খাস করাতে একটি সতর্কতাও পাওয়া যাচ্ছে যে, রুকূ‘র ব্যাপারে নির্দেশটি অত্যন্ত কঠিন, ফলে রুকূ‘টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ; কেননা রুকূ‘কারী রুকূ‘তে নিজেকে পুরোপুরি বহন করে কিন্তু সাজদাতে সে জমিনের উপর ভর করে থাকে।

একমতে বলা হয়েছে রুকূ‘কে সাজদার অধীন করার জন্যই বিশেষভাবে রুকূ‘র উল্লেখ করেছেন। কারণ রুকূ‘ এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘ইবাদাত নয়। অথচ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ইবাদাত, যেমন- তিলাওয়াতে সিজদা্, শুকরিয়া আদায়ের সিজদা্ ইত্যাদি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৭-[৭] উক্ত রাবী [’উসমান (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদা তিনি এরূপে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন, তিনবার নিজের দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধুলেন, এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন, তারপর ডান পা তিনবার ও বাম পা তিনবার করে ধুলেন। এরপর তিনি [’উসমান (রাঃ)] বললেন, আমি যেভাবে উযূ করলাম এভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ করতে দেখেছি। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি আমার ন্যায় উযূ করবে ও মনোযোগ সহকারে দুই রাক্’আত (নফল) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে, তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। মুত্তাফাকুন ’আলায়হি; এ বর্ণনার শব্দসমূহ ইমাম বুখারীর।[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْهُ أَنَّهُ تَوَضَّأَ فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ ثَلَاثًا ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى ثَلَاثًا ثُمَّ الْيُسْرَى ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ: «مَنْ تَوَضَّأَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ نَفسه فيهمَا بِشَيْء إِلَّا غفر لَهُ مَا تقدم من ذَنبه» . وَلَفظه للْبُخَارِيّ

وعنه انه توضا فافرغ على يديه ثلاثا ثم تمضمض واستنثر ثم غسل وجهه ثلاثا ثم غسل يده اليمنى الى المرفق ثلاثا ثم غسل يده اليسرى الى المرفق ثلاثا ثم مسح براسه ثم غسل رجله اليمنى ثلاثا ثم اليسرى ثلاثا ثم قال: رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم توضا نحو وضوىي هذا ثم قال: «من توضا وضوىي هذا ثم يصلي ركعتين لا يحدث نفسه فيهما بشيء الا غفر له ما تقدم من ذنبه» . ولفظه للبخاري

ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত (فَأَفْرَغَ عَلـى يَدَيْهِ) দ্বারা উদ্দেশ হলোঃ দু’ কব্জি পর্যন্ত হাত ধোয়া, এ অংশের মাঝে ঐ ব্যাপারে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, পাত্রে দু’হাত প্রবেশের পূর্বে সতর্কতা স্বরূপ দু’ হাত ধুয়ে নিতে হবে যদিও ঘুম থেকে উঠার পর না হয়। উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে যা হাদীসে ব্যবহৃত ثُمَّ শব্দটি দ্বারা বুঝা যায়। হাদীসে পরস্পর وَاسْتَنْفَقَ وَاسْتَنْثَرَ শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়। এর উদ্দেশ্য হলোঃ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে পানি নাকের শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে তা পুনরায় ঝেড়ে ফেলতে হবে। (ثُمَّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ) অংশ থেকে বুঝা যায় প্রত্যেক উযূর পর দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মুসতাহাব। উযূর পর কেউ যদি ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করে দেয় তাহলে তার জন্য এ সাওয়াব অর্জন হয়ে যাবে। যেমন মসজিদে ঢোকার পর কেউ সরাসরি ফরয সালাতে শামিল হলে বা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করলে তার জন্য তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় হয়ে যায়। হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, ঐ ব্যক্তির গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে যার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) হাদীসটিতে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হবে এবং হাদীসে নির্দেশিত দু’ রাক্‘আত সালাতের মতো সালাত আদায় করবে; যে দু’ রাক্‘আত সালাতে ব্যক্তি মনে মনে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলবে না।

উল্লেখ্য যে, পূর্বে কতিপয় হাদীস এসেছে যেখানে শুধু ভালোভাবে উযূ করলে ব্যক্তির গুনাহসমূহ ঝরে পড়ার কথা বলা হয়েছে। এ হাদীসে ব্যক্তির গুনাহসমূহ মাফের জন্য উযূর সঙ্গে বিশেষ দু’ রাক্‘আত সালাতের কথাও জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উভয় হাদীসের বক্তব্যে কিছু কম-বেশি আছে, এর কারণ কি?

উত্তরে বলা যেতে পারে, উযূ এবং সালাত প্রত্যেকটিই আলাদাভাবে গুনাহ মাফের উপযোগী। অথবা উযূ শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ মোচনকারী, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ মোচনকারী। অথবা উযূ প্রকাশ্য গুনাহসমূহের মোচনকারী এবং সালাত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের পাপ মোচনকারী।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৮-[৮] ’উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম উযূ করে এবং উত্তমরূপে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে (অন্তর ও দেহ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে রুজু করে) দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مقبل عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عقبة بن عامر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما من مسلم يتوضا فيحسن وضوءه ثم يقوم فيصلي ركعتين مقبل عليهما بقلبه ووجهه الا وجبت له الجنة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসটি থেকে প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু)  করার পর অন্তরে আল্লাহর ভয় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিনয়-নম্রতার ভাব রেখে দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা আবশ্যক হয়ে যাবে। হাদীসটিতে জান্নাতে প্রবেশের বিষয়টি মুতলাক্ব বা ‘আম্ নয়, কারণ ‘আমভাবে জান্নাতে প্রবেশের বিষয়টি কেবল ঈমানের বিনিময়েই সম্ভব আর হাদীসে সালাতের মাধ্যমে যে জান্নাতে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে তা কবূল হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে এ ঈমান। বিবেচনায় ঈমান ব্যক্তির প্রথম ধাপ আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দ্বিতীয় ধাপ। প্রথম ধাপে থাকার কারণে যদি জান্নাতে প্রবেশ করা যায় তাহলে দ্বিতীয় ধাপ থাকার কারণে আরো ভালোভাবে প্রবেশ করা যাবে। আর আমরা জানি ঈমান থাকলে ব্যক্তি তার অপরাধের শাস্তি পাওয়ার পর কোন একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর উভয় ধাপ ঠিক থাকলে সে প্রথমবারে শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

অতএব আমরা বলতে পারি, হাদীসে জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার দ্বারা প্রথমবারে জান্নাতে প্রবেশকে উদ্দেশ করা হয়েছে। আর তা কাবীরাহ্ (কবিরা) ও সগীরাহ্ সকল গুনাহ ক্ষমা হওয়ার উপর নির্ভরশীল বরং এরপর আরো যা কিছু পাপ ব্যক্তি করবে তাও ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে শর্তারোপ এই করা হয়েছে যে, তার মরণ ভালো ‘আমল বা ঈমানের উপর হতে হবে। মূলত আল্লাহ তার অনুগ্রহে বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তিনি তার ওয়া‘দা ভঙ্গ করেন না। হাদীসটিতে ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে ও তারপর দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং হাদীসটি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের দিকে ইশারা করছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৮৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৮৯-[৯] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, এরপর বলবেঃ ’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’, অর্থাৎ- ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ ’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’- (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আর হুমায়দী তাঁর আফরাদে মুসলিম গ্রন্থে, ইবনুল ’আসীর ’’জামি’উল উসূল’’ গ্রন্থে এরূপ ও শায়খ মুহীউদ্দীন নাবাবী হাদীসের শেষে আমি যেরূপ বর্ণনা করেছি এরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম তিরমিযী উপরোক্ত দু’আর পরে আরো বর্ণনা করেছেনঃ ’’আল্লা-হুম্মাজ ’আলনী মিনাত্ তাওয়া-বীনা ওয়াজ ’আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরীন’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তওবা্‌কারীদের মধ্যে শামিল কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে গণ্য কর)।[1]

মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ তাঁর সিহাহ গ্রন্থে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, ’’যে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলো ও উত্তমভাবে তা করলো শেষ ..... পর্যন্ত। তিরমিযী তার জামি কিতাবে হুবহু এটাই বর্ণনা করেছেন। অবশ্য তিনিأَنَّ مُحَمَّدًا (আন্না মুহাম্মাদান) শব্দের পূর্বে أَشْهَدُ (আশ্হাদু) শব্দটি বর্ণনা করেননি।

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَفِي رِوَايَةٍ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ . هَكَذَا رَوَاهُ مُسْلِمٌ فِي صَحِيحِهِ وَالْحُمَيْدِيُّ فِي أَفْرَاد مُسلم وَكَذَا ابْن الْأَثِير فِي جَامع الْأُصُول
وَذكر الشَّيْخ مُحي الدِّينِ النَّوَوِيُّ فِي آخِرِ حَدِيثِ مُسْلِمٍ عَلَى مَا روينَاهُ وَزَاد التِّرْمِذِيّ: «الله اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ» وَالْحَدِيثُ الَّذِي رَوَاهُ مُحْيِي السُّنَّةِ فِي الصِّحَاحِ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ» إِلَى آخِرِهِ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ فِي جَامِعِهِ بِعَيْنِهِ إِلَّا كَلِمَةَ «أَشْهَدُ» قَبْلَ «أَن مُحَمَّدًا»

وعن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما منكم من احد يتوضا فيبلغ او فيسبغ الوضوء ثم يقول: اشهد ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله وفي رواية: اشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له واشهد ان محمدا عبده ورسوله الا فتحت له ابواب الجنة الثمانية يدخل من ايها شاء . هكذا رواه مسلم في صحيحه والحميدي في افراد مسلم وكذا ابن الاثير في جامع الاصول وذكر الشيخ محي الدين النووي في اخر حديث مسلم على ما رويناه وزاد الترمذي: «الله اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين» والحديث الذي رواه محيي السنة في الصحاح: «من توضا فاحسن الوضوء» الى اخره رواه الترمذي في جامعه بعينه الا كلمة «اشهد» قبل «ان محمدا»

ব্যাখ্যা: হাদীসে উযূর পর পঠিতব্য যে দু‘আটি উল্লেখ করা হয়েছে তার দ্বারা মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে করা ‘আমলের স্বচ্ছতা ও হাদীসে আকবার ও আসগার থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পবিত্রতা লাভের পর অন্তরকে শির্ক ও রিয়া থেকে পবিত্র রাখার দিকে ইশারা করা হয়েছে এবং তাওবাহ্ গোপন গুনাহ হতে পবিত্রকারী এবং উযূ (ওযু/ওজু/অজু) আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে বাধাদানকারী বাহ্যিক গুনাহের পবিত্রকারী বিধায় উযূর পর পঠিতব্য দু‘আর প্রথমাংশের সাথে আত্ তিরমিযীর বর্ণনা করা বর্ধিত অংশের সমন্বয় সাধন ঘটেছে।

হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার পর শাহাদাতায়ন পাঠ করে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। এ বক্তব্যের মর্মার্থ হচ্ছে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইলে একটি দরজাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। তথাপিও হাদীসে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, এটি মূলত ব্যক্তির কর্মের সম্মানার্থে। অথবা বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে দৃষ্টি দিলে বলা যায়, ব্যক্তি যে ধরনের ‘আমল বেশি করবে তার জন্য ঐ ‘আমলের জন্য প্রস্ত্তত করা বিশেষ দরজা খুলে দেয়া হবে কারণ জান্নাতের দরজাসমূহ প্রস্ত্তত করা হয়েছে বিশেষ বিশেষ ‘আমলের জন্য।

যেমন যে ব্যক্তি বেশি বেশি সওম পালন করবে তার জন্য জান্নাতের রইয়্যান নামক দরজা খুলে দেয়া হবে। অনুরূপ যে ব্যক্তি যেমন ‘আমল করবে তাঁর জন্য তেমন দরজা খুলে দেয়া হবে। ইবনু সাইয়্যিদিন্ নাস বলেনঃ দরজার সংখ্যাধিক্যতা খুলে দেয়া ও এসব হতে ডাকা ইত্যাদি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন ব্যক্তির সম্মান এবং মর্যাদার দিকেই ইশারা। অতএব বিষয়টি এমন নয় যে, কোন এক দরজা দিয়ে ডাকা হলে সে সে দরজার সীমা অতিক্রম করবে না। বরং প্রত্যেক দরজা দিয়ে ডাক/সাক্ষাৎ পাওয়ার পর যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়েই সে প্রবেশ করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৯০-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমার উম্মাতকে (জান্নাতে যাবার জন্য) এই অবস্থায় ডাকা হবে যখন তাদের চেহারা উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র কারণে ঝকমক করতে থাকবে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকাতে থাকবে। ’’অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতাকে বাড়াতে সক্ষম সে যেন তাই করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِن أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غرته فَلْيفْعَل»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان امتي يدعون يوم القيامة غرا محجلين من اثار الوضوء فمن استطاع منكم ان يطيل غرته فليفعل»

ব্যাখ্যা: হাদীসে ব্যবহৃত غُرًّا শব্দের অর্থ শুভ্র ঝলক যা ঘোড়ার কপালে হয়ে থাকে। তবে এখানে উদ্দেশ্য মু’মিনের চেহারাতে সৃষ্ট নূর। আর তারপরেই مُحَجَّلِيْنَ শব্দের অর্থ শুভ্রতা যা ঘোড়ার দু’ হাত ও দু’ পায়ে হয়ে থাকে, তখনও উদ্দেশ্য নূর। মুদ্দাকথা ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন মু’মিনের উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো শুভ্র নূরে ঝলকাতে থাকবে। তাদেরকে যখন সাক্ষ্যদাতাদের সামনে ডাকা হবে, হাশরের মাঠে, মীযানের নিকট, সীরাতের নিকট অথবা জান্নাতে তখন এ গুণ অনুপাতেই ডাকা হবে। এ অবস্থায় তারা এ গুণের উপরই বহাল থাকবে অথবা এ নামেই তাদেরকে ডাকা হবে। মু’মিন ব্যক্তির চেহারা ঝলকানোর দু’টি কারণের একটি উযূ; যা এ হাদীসে উল্লেখ আছে। অপর কারণ- সিজদা্ (সিজদা/সেজদা); যা আত্ তিরমিযীতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর এর হাদীসে উল্লেখ আছে। পক্ষান্তরে হাত, পা ঝলকানোর কারণ একটি আর তা হলো উযূ (ওযু/ওজু/অজু)।

এ হাদীসের রাবীদের একজন নু‘আয়ম বলেনঃ غُرًّا(فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَه فَلْيَفْعَلْ) উক্তিটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি নাকি আবূ হুরায়রাহর উক্তি? হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী ফাতহুল বারীতে বলেনঃ সাহাবীগণের থেকে যে দশজন এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তাদের কারো বর্ণনাতে এ বাক্যটি আছে বলে আমি জানি না এবং যারা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন তাদের বর্ণনাতেও আছে বলে জানি না কেবল নু‘আয়ম-এর এ বর্ণনাটি ছাড়া। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কারীর জন্য ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তার উযূর কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শুভ্রতাকে বর্ধিতকরণে এ হাদীসটি দলীলস্বরূপ। তবে এ শুভ্রতাকে বর্ধিতকরণে উযূর অঙ্গগুলোকে কি পরিমাণ ধৌত করতে হবে এ নিয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। বলা হয়েছে হাত কাঁধ পর্যন্ত। পা হাঁটু পর্যন্ত। অন্য মতে বলা হয়েছে, হাত অর্ধ বাহু পর্যন্ত এবং পা নলা পর্যন্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৯১-[১১] উক্ত রাবী (আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (জান্নাতে) মু’মিনের অলংকার অর্থাৎ- উযূর চিহ্ন সে পর্যন্ত পৌঁছবে যে পর্যন্ত উযূর পানি পৌঁছবে (তাই উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সুন্দরভাবে করবে)। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنَ حَيْثُ يبلغ الْوضُوء» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تبلغ الحلية من المومن حيث يبلغ الوضوء» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসটি একজন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কারীর হাত ও পা ধোয়ার যে ফরয পরিমাণ রয়েছে তার অপেক্ষাও কিছু বেশি ধোয়ার ও অন্যান্য অঙ্গগুলোকেও ধোয়া বা মাসাহকরণে কমতি না করার প্রতি নির্দেশ দিচ্ছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৯২-[১২] সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (হে মু’মিনগণ!) তোমরা দীনের উপর যথাযথভাবে অটল থাকবে। অবশ্য তোমরা সকল (কাজ) যথাযথভাবে করতে পারবে না, তবে মনে রাখবে তোমাদের সকল কাজের মধ্যে সালাতই হচ্ছে সর্বোত্তম। আর উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র সব নিয়ম-কানুনের প্রতি মু’মিন ব্যতীত অন্য কেউ লক্ষ্য রাখে না। (মুয়াত্ত্বা মালিক, আহমাদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمُ الصَّلَاةُ وَلَا يُحَافِظُ عَلَى الْوُضُوءِ إِلَّا مُؤْمِنٌ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

عن ثوبان قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «استقيموا ولن تحصوا واعلموا ان خير اعمالكم الصلاة ولا يحافظ على الوضوء الا مومن» . رواه مالك واحمد وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে, সকল নির্দেশ পালনের মাধ্যমে এবং সত্যের অনুসরণ ও সঠিক পথকে আঁকড়িয়ে ধরে ইসলামের ওপর অটল থাকতে হবে। তবে ওটা এমন এক পবিত্র আলো যার দ্বারা কারো অন্তর আলোকিত হলে সে সমস্ত মানবিক অন্যায় থেকে মুক্ত থাকবে এবং আল্লাহ যাকে তাঁর তরফ থেকে শক্তিশালী করবেন সে কেবল সঠিক পথের উপর অবিচল থাকতে পারবে আর তার সংখ্যায় কম। তবে বিষয়টি কঠিন হওয়ার দরুন তার প্রতি উদাসীন হয়ে থাকা অথবা ব্যক্তি যে অবস্থায় বর্তমান তার উপর ভরসা করে বসে থাকা কিংবা অক্ষমতা ও অনিচ্ছাবশত ‘আমলে ঘাটতি হওয়াতে সঠিক পথের উপর অবিচল থাকা হতে নিরাশ হয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। বরং সঠিক পথের উপর অবিচল থাকার সহজ একটি উপায় হচ্ছে বিভিন্ন রকম ‘ইবাদাত করতে থাকা; ক্বিরাআত (কিরআত), তাসবীহ, তাহলীল, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অব্যাহত রাখা। সালাত নষ্টকারী কথা হতে বিরত থাকা। এমন এক বৈশিষ্টপূর্ণ ও সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ‘ইবাদাতকে আঁকড়িয়ে ধরতে হবে। বিশেষ করে এ সালাতের পূর্বশর্ত উযূর প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।

এ হাদীসে উল্লিখিত সালাত দ্বারা গোপনীয় বিষয়ের পবিত্রতা বুঝানো হয়েছে। কেননা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অশ্লীল ও অসমীচীন কাজ থেকে বাধা দেয়। পক্ষান্তরে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাহ্যিক বিষয়াবলীকে পবিত্র করে। উল্লেখ্য যে, সর্বোত্তম ‘আমল সম্পর্কে বৈপরীত্যপূর্ণ অনেক হাদীস এসেছে। সুতরাং হাদীসটির সামঞ্জস্যতা প্রয়োজন। অন্যান্য হাদীসের সাথে এ হাদীসের সামঞ্জস্য এভাবে যে, এ হাদীসে উল্লিখিত خَيْرَ أَعْمَالِكُمْ -কে مِنْ خَيْرَ أَعْمَالِكُمْ অর্থে ব্যবহার করতে হবে। এমনিভাবে হাদীসের শেষ অংশে মু’মিন বলতে পূর্ণ মু’মিনকে বুঝানো হয়েছে। পরিশেষে এক কথায় বলা যায়, একজন মু’মিন ব্যক্তিকে সঠিক পথের উপর অবিচল থাকার সর্বাধিক সহজ উপায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সংরক্ষণ করা এবং এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কে সংরক্ষণ করতে হলে এর পূর্বশর্ত উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কে সংরক্ষণ করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৩-[১৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) থাকতে উযূ করে তার জন্য (অতিরিক্ত) দশটি নেকী রয়েছে। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَوَضَّأَ عَلَى طُهْرٍ كُتِبَ لَهُ عَشْرُ حَسَنَاتٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من توضا على طهر كتب له عشر حسنات» . رواه الترمذي

হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৪

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৪-[১৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের চাবি হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আর সালাতের চাবি হলো ত্বহারাত (উযূ (ওযু/ওজু/অজু)। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلَاة الطّهُور» . رَوَاهُ أَحْمد

عن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «مفتاح الجنة الصلاة ومفتاح الصلاة الطهور» . رواه احمد

ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী বলেনঃ সালাতকে জান্নাতে প্রবেশের ভূমিকা বলা হয়েছে যেমন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কে সালাতের ভূমিকা করা হয়েছে। উযূ ছাড়া যেমন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিশুদ্ধ হয় না তেমন সালাত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা যায় না। যারা সালাত বর্জনকারীকে কাফির বলে এ হাদীসটি তাদের দলীল আর নিশ্চয়ই এ সালাত ঈমান ও কুফরের মাঝে পার্থক্যকারী।

আর অন্যান্যগণ বলেনঃ এ হাদীস সালাতের ব্যাপারে উৎসাহ দানকারী। আর তা এমন এক বিষয় যা থেকে অমুখাপেক্ষী থাকা যায় না এবং এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শাস্তি ছাড়া প্রথমেই জান্নাতে প্রবেশের কারণ।


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৫

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৫-[১৫] শাবীব ইবনু আবূ রাওহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক সাহাবী হতে বর্ণনা করেন। একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং (সালাতে) সূরাহ্ আর্ রূম তিলাওয়াত করলেন। সালাতের মধ্যে তাঁর তিলাওয়াতে গোলমাল বেঁধে গেল। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মানুষের কি হল! তারা আমার সাথে সালাত আদায় করছে অথচ উত্তমরূপে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করছে না। এটাই সালাতে আমার ক্বিরাআতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। (নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن شبيب بن أبي روح عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَقَرَأَ الرُّومَ فَالْتَبَسَ عَلَيْهِ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ: «مَا بَالُ أَقْوَامٍ يُصَلُّونَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُونَ الطَّهُورَ فَإِنَّمَا يلبس علينا الْقُرْآن أُولَئِكَ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

وعن شبيب بن ابي روح عن رجل من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم صلى صلاة الصبح فقرا الروم فالتبس عليه فلما صلى قال: «ما بال اقوام يصلون معنا لا يحسنون الطهور فانما يلبس علينا القران اولىك» . رواه النساىي

ব্যাখ্যা: হাদীসটি অনেকেই বর্ণনা করেছেন প্রত্যেকেই সাহাবী থেকে। তার মাঝে ইমাম নাসায়ী ও আহমাদও বর্ণনা করেছেন তাদের উভয়ের সানাদের রাবীগুলো বিশুদ্ধ কিন্তু মুজতারাবুল ইসনাদ। তবে তাদের দু’জনের সানাদই রাজেহ। হাদীস দ্বারা বুঝা যায় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) তে ত্রুটি সৃষ্টিকারীরা ইমামের ক্বিরাআতে ত্রুটি সৃষ্টির কারণ।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৬

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৬-[১৬] বানী সুলায়ম গোত্রের এক ব্যক্তি (সাহাবী) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাঁর নিজের হাতে গুণে বললেনঃ ’সুবহা-নাল্ল­-হ’ বলা হলো দাঁড়ি পাল্লার অর্ধেক, আর ’আলহামদু লিল্লা-হ’ বলা হলো দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করা এবং ’আল্লা­-হু আকবার’ বলা হলো আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা আছে তা পূর্ণ করে দেয়া। সিয়াম ধৈর্যের অর্ধেক এবং পাক-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ رَجُلٍ مِنْ بَنِي سُلَيْمٍ قَالَ: عَدَّهُنَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَدِي أَوْ فِي يَدِهِ قَالَ: «التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ يَمْلَؤُهُ وَالتَّكْبِيرُ يَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَالصَّوْمُ نِصْفُ الصَّبْرِ وَالطُّهُورُ نِصْفُ الْإِيمَانِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ

وعن رجل من بني سليم قال: عدهن رسول الله صلى الله عليه وسلم في يدي او في يده قال: «التسبيح نصف الميزان والحمد لله يملوه والتكبير يملا ما بين السماء والارض والصوم نصف الصبر والطهور نصف الايمان» . رواه الترمذي وقال هذا حديث حسن

ব্যাখ্যা: হাদীসটি দুর্বল, তবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতেও বর্ণিত, হাদীসে সওম (রোযা)-কে সবরের অর্ধেক বলা হয়েছে, তার কারণ সবর যেহেতু নাফসকে আনুগত্যে নিয়োজিত রাখে ও অবাধ্যতা হতে বিরত রাখে, সওম তেমন নাফসের প্রবৃত্তিকে অবাধ্য কাজ হতে পূর্ণাঙ্গভাবে দূরে রাখে। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ হতে সওম সবরের অর্ধেক।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৭

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৭-[১৭] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) আস্ সুনাবিহী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মু’মিন বান্দা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে ও কুলি করে, তখন তার মুখ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন সে নাক ঝাড়ে তখন তার নাক থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধোয়, গুনাহ তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার চোখের পাতার নীচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। এরপর যখন নিজের দু’টি হাত ধোয়, তখন তার হাত হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার হাতের নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মাথা মাসাহ করে, মাথা হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি দুই কান থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নিজের পা দু’টো ধোয়, তার দুই পায়ের গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার পায়ের নখের নীচ হতেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর মসজিদের দিকে গমন এবং তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হয় তার জন্য অতিরিক্ত। (মুওয়াত্ত্বা মালিক ও নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَن عبد الله الصنَابحِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ فَمَضْمَضَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ فِيهِ وَإِذَا اسْتَنْثَرَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ أَنفه فَإِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ وَجْهِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَشْفَارِ عَيْنَيْهِ فَإِذَا غسل يَدَيْهِ خرجت الْخَطَايَا مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ يَدَيْهِ فَإِذَا مَسَحَ بِرَأْسِهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رَأْسِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ أُذُنَيْهِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رِجْلَيْهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ رِجْلَيْهِ ثُمَّ كَانَ مَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ وَصَلَاتُهُ نَافِلَةً لَهُ» . رَوَاهُ مَالك وَالنَّسَائِيّ

عن عبد الله الصنابحي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اذا توضا العبد المومن فمضمض خرجت الخطايا من فيه واذا استنثر خرجت الخطايا من انفه فاذا غسل وجهه خرجت الخطايا من وجهه حتى تخرج من تحت اشفار عينيه فاذا غسل يديه خرجت الخطايا من تحت اظفار يديه فاذا مسح براسه خرجت الخطايا من راسه حتى تخرج من اذنيه فاذا غسل رجليه خرجت الخطايا من رجليه حتى تخرج من تحت اظفار رجليه ثم كان مشيه الى المسجد وصلاته نافلة له» . رواه مالك والنساىي

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লিখিত মুখের গুনাহ বলতে- অশ্লীল কাজের দিকে ফুসলানো, অবাধ্য কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়া রয়েছে ইত্যাদি সগীরাহ্ গুনাহ। নাকের গুনাহ বলতে এমন বস্তুর ঘ্রাণ নেয়া যা বৈধ নয় যেমন- চুরি করা আতর। চেহারার গুনাহ বলতে এমন বস্তুর দিকে দৃষ্টি দেয়া যার দিকে দৃষ্টি দেয়া বৈধ নয় যেমন কোন গাইরে মাহরাম নারীর দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে দৃষ্টি দেয়া। হাতের গুনাহ বলতে এমন গুনাহ যা স্পর্শ করা জায়িয নয়। মাথার গুনাহ বলতে অশ্লীল চিন্তা করা, কানের গুনাহ বলতে অশ্লীল কিছু শোনা। পায়ের গুনাহ বলতে এমন কাজের উদ্দেশে হেঁটে যাওয়া যা করা উচিত নয়।

হাদীসে উল্লেখ হয়েছে ‘‘অতঃপর যখন সে মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে গুনাহ ঝরে যায় এমনকি তার কান হতেও।’’ উল্লিখিত অংশ প্রমাণ করছে কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব মাথা মাসাহের পানি দিয়ে কান মাসাহ করতে হবে নতুন পানি দ্বারা নয়। এ হাদীস نَافِلَةً لَهٗ বলা হয়েছে, মর্মার্থ হচ্ছে- ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সাথে সাথে তার উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর গুনাহ ঝরে যায় পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অঙ্গের গুনাহ থাকলে সেগুলোর গুনাহও মাফ হয়ে যায়, অর্থাৎ- সগীরাহ্ গুনাহ। সগীরাহ্ গুনাহ যদি না থাকে তাহলে তার কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হালকা করা হবে। যদি কোন প্রকার গুনাহ না থাকে তাহলে তার মর্যাদাকে উন্নীত করা হবে। হাদীসটি একজন মুসলিমকে উযূর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৮

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৮-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে (অর্থাৎ- মদীনার বাকী’তে) উপস্থিত হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশে) বললেনঃ ’’আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম, (তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) হে মু’মিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখতে পাই’’। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখনো আসেনি, তাদের আপনি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকবো। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم أَتَى الْمَقْبَرَةَ فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا قَالُوا أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ فَقَالُوا كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْض» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اتى المقبرة فقال: «السلام عليكم دار قوم مومنين وانا ان شاء الله بكم لاحقون وددت انا قد راينا اخواننا قالوا اولسنا اخوانك يا رسول الله قال انتم اصحابي واخواننا الذين لم ياتوا بعد فقالوا كيف تعرف من لم يات بعد من امتك يا رسول الله فقال ارايت لو ان رجلا له خيل غر محجلة بين ظهري خيل دهم بهم الا يعرف خيله قالوا بلى يا رسول الله قال فانهم ياتون غرا محجلين من الوضوء وانا فرطهم على الحوض» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘‘আমরা ইন-শা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি’’ বলেছেন অথচ মরণ সুনিশ্চিত। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের একাধিক উক্তি আছে যা দশ পর্যন্ত পৌঁছাবে। সে উক্তিগুলো থেকে সর্বাধিক স্পষ্ট হচ্ছে- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারাকাতের জন্য إِنْ شَآءَ اللّهُ (ইন-শা-আল্লাহ) বলেছেন, সন্দেহের জন্য নয়। অন্য এক মতে বলা হয়েছে- আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য এরূপ বলেছেন। যেমন- আল্লাহর বাণীঃ  وَلَا تَقُوْلَنَّ لِشَاىْءٍ اِنِّىْ فَاعِلٌ ذلِكَ غَدًا - اِلَّا اَنْ يَّشَآءَ اللّهُ অর্থাৎ- ‘‘কোন বিষয় সম্পর্কে কক্ষনো বল না যে, ‘ওটা আমি আগামীকাল করবো’। ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ বলা ছাড়া’’- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ : ২৩)।

হাদীসে সাহাবীগণের প্রশ্ন ‘‘আমরা কি আপনার ভাই নই?’’ এর উত্তরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘‘তোমরা আমার সাহাবী।’’ এ ধরনের উত্তর দিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণেরকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন থেকে আলাদা করে দেননি। বরং তাঁদের একটি আলাদা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সামনে মু’মিনদের যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন তা কেবল উম্মাতে মুসলিমার জন্য খাস।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
২৯৯

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৯৯-[১৯] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন (আল্লাহর দরবারে) সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার অনুমতি দেয়া হবে। আর এভাবে আমিই প্রথম ব্যক্তি যাকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠাবার অনুমতি দেয়া হবে। অতঃপর আমি আমার সামনে (উপস্থিত উম্মাতদের দিকে) দৃষ্টি নিক্ষেপ করবো এবং সকল নবী-রসূলদের উম্মাতদের মধ্য হতে আমার উম্মাতকে চিনে নিবো। এভাবে আমার পেছনে, ডান দিকে, বাম দিকেও তাকাবো। আমার উম্মাতকে চিনে নিবো। (এটা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে আপনি নূহ (আঃ) থেকে আপনার উম্মাত পর্যন্ত এত লোকের মধ্যে আপনার উম্মাতকে চিনে নিবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাত উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র কারণে ধবধবে সাদা কপাল ও ধবধবে হাত-পা সম্পন্ন হবে, অন্য কোন উম্মাতের মধ্যে এরূপ হবে না। তাছাড়া আমি তাদেরকে চিনতে পারবো এসব কারণে যে, তাদের ডান হাতে ’আমলনামা থাকবে এবং তাদেরকে আমি এ কারণেও চিনবো যে, তাদের অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানরা তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করবে। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَن أبي الدَّرْدَاء قَالَ: قَالَ رَسُولُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ بِالسُّجُودِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ أَنْ يرفع رَأسه فَأنْظر إِلَى بَيْنَ يَدِي فَأَعْرِفُ أُمَّتِي مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ وَمِنْ خَلْفِي مِثْلُ ذَلِكَ وَعَنْ يَمِينِي مِثْلُ ذَلِك وَعَن شمَالي مثل ذَلِك . فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَعْرِفُ أُمَّتَكَ مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ فِيمَا بَيْنَ نُوحٍ إِلَى أُمَّتِكَ؟ قَالَ: «هُمْ غُرٌّ مُحَجَّلُونَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ لَيْسَ أَحَدٌ كَذَلِكَ غَيْرَهُمْ وَأَعْرِفُهُمْ أَنَّهُمْ يُؤْتونَ كتبهمْ بأيمانهم وأعرفهم يسْعَى بَين أَيْديهم ذُرِّيتهمْ» . رَوَاهُ أَحْمد

عن ابي الدرداء قال: قال رسول صلى الله عليه وسلم: (انا اول من يوذن له بالسجود يوم القيامة وانا اول من يوذن له ان يرفع راسه فانظر الى بين يدي فاعرف امتي من بين الامم ومن خلفي مثل ذلك وعن يميني مثل ذلك وعن شمالي مثل ذلك . فقال له رجل: يا رسول الله كيف تعرف امتك من بين الامم فيما بين نوح الى امتك؟ قال: «هم غر محجلون من اثر الوضوء ليس احد كذلك غيرهم واعرفهم انهم يوتون كتبهم بايمانهم واعرفهم يسعى بين ايديهم ذريتهم» . رواه احمد

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, উযূর কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকানো উম্মাতে মুসলিমার খাস বৈশিষ্ট্য। এছাড়া হাদীসটিতে উম্মাতের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে যার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে চিনতে পারবেন। ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) বিভীষিকাময় দিনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাঁর উম্মাতের মুক্তির জন্য ব্যাস্ত হবেন হাদীসটিতে তা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
৩০০

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়

اَلْوُضُوْءُ (واو বর্ণে যম্মাযোগে) শব্দের অর্থ উযূ করা আর واو বর্ণে ফাতাহ যোগে اَلْوَضُوْءُ -এর অর্থ উযূর পানি। অত্র অধ্যায়ে ঐ সমস্ত বিষয় বর্ণনা করা উদ্দেশ্য যা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বিনষ্ট করে ফেলে এবং অন্য একটি উযূ (নতুন উযূ) আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।


৩০০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ছুটে গেছে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে উযূ না করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يتَوَضَّأ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تقبل صلاة من احدث حتى يتوضا»

ব্যাখ্যা: সে ব্যক্তির সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রত্যাখ্যাত হয় বা গণ্য করা হয় না, সঠিক হয় না; যার সামনের এবং পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হয় যতক্ষণ না সে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। আর উযূ পানি এবাং মাটি উভয়ের দ্বারাই হতে পারে। উযূ অর্থ পবিত্রতা অর্জন করা যা গোসল, উযূ এবং তায়াম্মুম দ্বারা হতে পারে। এ হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়।

প্রথমত সামনের বা পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়ার মাধ্যমে উযূ বিনষ্ট হবে আর উযূ না হলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সঠিক হবে না। চাই তার নির্গত হওয়াটা নিরুপায় অবস্থায় হোক বা স্বাভাবিক অবস্থায় হোক। কেননা হাদীসে উভয় অবস্থার মাঝে কোন পার্থক্য বর্ণিত হয়নি। দ্বিতীয়ত ঐ লোকেদের প্রতিউত্তর যারা বলে যেহেতু তার উযূ নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সে উযূ করে আগের সালাতের উপর নির্ভর করবে। তৃতীয়ত সকল সালাত পবিত্রতা অর্জনের উপর নির্ভরশীল। আর জানাযাহ্, ঈদ সহ সমস্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ- উযূ ছাড়া কোন সালাত গৃহীত হবে না।

قَوْلُهٗ (لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طَهُوْرٍ) (পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সালাত গৃহীত হয় না)। অর্থাৎ- ‘পবিত্রতা ছাড়া’ অর্থ এ নয় সালাতটি পবিত্রতার পরিপন্থী কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে না। কেননা অন্যান্য শর্তের ন্যায় পবিত্রতার ভিন্নধর্মী বিষয়ের সাথেও সালাতের সম্পৃক্ততা থাকা অবশ্যক। তবে যদি পবিত্রতার পরিপন্থী দ্বারা তার সম্পূর্ণ বিপরীত উদ্দেশ্য হয় তাহলে ঠিক আছে। আর তা হলো حَدَثٌ হাদাস অর্থাৎ- এমন অপবিত্রতা যা উযূ, গোসল বা তায়াম্মুম ছাড়া দূরীভূত হয় না।

قَوْلُهٗ (وَلَا صَدَقَةُ مِنْ غُلُوْلٍ) (খিয়ানাতের মাল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে গ্রহণ করা হয় না)غُلُوْلٌ  (গুলূল) অর্থ হারাম সম্পদ। غُلُوْلٌ -এর মূল অর্থ গনীমাতের মালে খিয়ানাত করা। গনীমাতের সম্পদ বণ্টিত হওয়ার পূর্বে তা চুরি করা হারাম।

যে ব্যক্তিই সংগোপনে কোন কিছুতে বিশ্বাসঘাতকতা করলো বা খিয়ানাত করলো সেই গুলূল করল। ইবনুল ‘আরাবী (রহঃ) বলেনঃ হারাম সম্পদের সদাক্বাহ্ (সাদাকা) প্রত্যাখ্যান এবং শাস্তির যোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে উযূ বা পবিত্রতা ছাড়াই সম্পাদিত সালাতের ন্যায়। অতএব, সালাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সম্পদ পবিত্র হওয়া শর্ত। এ হুকুমটি সকল প্রকার হারাম সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও এখানে গনীমাতের আত্মসাৎকৃত সম্পদের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কারণ এটা হতে পারে যে, গনীমাত সকলের অধিকার সম্বলিত সম্পদ। আর অন্যের অধিকারযুক্ত সম্পদের সদাক্বাই যদি গ্রহণ করা না হয় তাহলে একক অধিকারভুক্ত সম্পদ গৃহীত না হওয়াটাই অধিক যুক্তিসঙ্গত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৮৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 12 13 14 15 পরের পাতা »