পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভীতি প্রদর্শন ও সতর্কীকরণ
৫৩৭৪-[৪] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার এ উম্মাত আল্লাহর রহমাতপ্রাপ্ত উম্মত, তাদের ওপর পরকালে শাস্তি হবে না। তবে ইহকালে তাদের ’আযাব হলো ফিতনাহ্, ভূমিকম্প ও হত্যাযজ্ঞ। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الْإِنْذَار والتحذير)
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُمَّتِي هَذِهِ أُمَّةٌ مَرْحُومَةٌ لَيْسَ عَلَيْهَا عَذَابٌ فِي الْآخِرَةِ عَذَابُهَا فِي الدُّنْيَا: الْفِتَنُ وَالزَّلَازِلُ وَالْقَتْلُ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4278) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (أُمَّتِي هَذِهِ) বর্তমানে বিদ্যমান আমার এই উম্মতেরা অথবা সাধারণভাবে আমার উম্মাত।
(أُمَّةٌ مَرْحُومَةٌ) সকল নবীর উম্মতের চাইতে অতিরিক্ত রহমতপ্রাপ্ত, কেননা আমাদের নবী রহমাতুল্লিল ‘আলামীন তথা সারা বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ।
(لَيْسَ عَلَيْهَا عَذَابٌ فِي الْآخِرَةِ) পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি হবে না। তাদের অপরাধগুলো দুনিয়ার মেহনত, রোগ বালাই এবং বিভিন্ন বালা-মুসীবাতের মাধ্যমে প্রতিদান হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ দুনিয়াতের যাদের শাস্তি হয়ে যাবে পরকালে তাদের কাফিরদের মতো শাস্তি হবে না। তাই তো আল্লাহ বলেন, (...مَنۡ یَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا یُّجۡزَ بِهٖ...) “...যে ব্যক্তি কোন কুকর্ম করবে, সে তার বিনিময়প্রাপ্ত হবে...।” (সূরা আন্ নিসা ৪: ১২৩)
উক্ত কথার সমর্থন হিসেবে হাদীসের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, (عَذَابُهَا فِي الدُّنْيَا: الْفِتَنُ وَالزَّلَازِلُ وَالْقَتْلُ)
তাদের শাস্তি হলো তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ, দুনিয়াতে বিগ্রহ, বিপদাপদ ভয়-ভীতি, অন্যায়ভাবে একে অপরকে হত্যা করা। মূলত দুনিয়ার শাস্তি পরকালে শাস্তির চাইতে অনেক হালকা। অথবা হাদীসটি ঐ সমস্ত লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের কোন কবীরাহ গুনাহ নেই। অথবা এর মাধ্যমে হয়তো একটি বিশেষ দল তথা সাহাবীদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু তিনি ঘোষণা করেছেন,
(اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ) “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না, এটা ছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছে মাফ করবেন।” (সূরা আন্ নিসা ৪: ৪৮)
‘আল্লামাহ্ মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি মুশকিল তথা সন্দেহপূর্ণ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। কেননা হাদীসের বক্তব্য হচ্ছে, এই উম্মতের কাউকে শাস্তি প্রদান করা হবে না যদিও তারা কবীরাহ সহ অন্যান্য গুনাহ করে থাকে। অথচ অন্য হাদীসে কবীরাহ্ গুনাহকারীদের জন্য শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তবে আমরা যদি হাদীসের ব্যাখ্যা এভাবে করি তাতে সমস্যা দূরীভূত হয়। তা হলো এখানে উম্মত বলতে তাদেরকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে যারা নবী (সা.) -কে যথাযথভাবে অনুসরণ করে এবং আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধকে পুরোপুরি মেনে চলে।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসটিতে খাস করে মুহাম্মাদ (সা.) -এর উম্মতের প্রশংসা করা হয়েছে। আর অন্যান্য সকল উম্মতের চাইতে এই উম্মতের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ অনুগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। দুনিয়াতে তারা যদি কোন মুসীবতে পতিত হয় এমনকি দুনিয়াতে যদি তাদের পায়ে কাটা বিধে, পরকালে এর বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তাদের গুনাহ মোচন করে দিবেন, যা অন্যান্য উম্মাতের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নেই। এর প্রমাণ হলে হাদীসের ভাষ্য (مَرْحُومَةٌ) (অনুগ্রহপ্রাপ্ত)। (আওনুল মা'বুদ ৭/৪২৭২, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)