শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন:
“যদি কোনো ফকীহের একটি মতামত পাওয়া যায়, যার বিপরীতে সহীহ হাদীস পাওয়া যায় — তাহলে হাদীসটিকে গ্রহণ না করার জন্য তার অবশ্যই কোনো ওজর থাকবে। কোনো ফকীহ যখন কোনো হাদীস গ্রহণ না করেন, তার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। সেগুলো হলো:
প্রথম কারণ:
হাদীসটি ঐ ফকীহের কাছে পৌঁছায়নি।
যার কাছে হাদীস পৌঁছেনি, তাকে তা অনুযায়ী আমল করার জন্য দায়িত্ববান করা যায় না। যদি তার কাছে হাদীসটি না পৌঁছে থাকে এবং সে ঐ বিষয়ে কুরআনের কোনো আয়াত, অন্য কোনো হাদীস, কিয়াস অথবা ইস্তিসহাবের ভিত্তিতে কোনো ফতোয়া দিয়ে থাকেন — তাহলে কখনো তা হাদীসের সাথে মিলতে পারে, আবার কখনো বিরোধ করতেও পারে।
এটাই সবচেয়ে বেশি ঘটে সালাফদের অনেক বক্তব্যের ক্ষেত্রে যেগুলো কিছু হাদীসের বিরোধী মনে হয়; কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সকল হাদীস সম্পর্কে কারো পূর্ণ জ্ঞান ছিল না।
দ্বিতীয় কারণ:
হাদীসটি ফকীহের কাছে পৌঁছেছে, কিন্তু তা তার নিকট সহীহ সাব্যস্ত হয়নি।
তৃতীয় কারণ:
ফকীহের ইজতিহাদ অনুযায়ী হাদীসটি দুর্বল — যদিও অন্য কেউ তার সঙ্গে একমত নন।
চতুর্থ কারণ:
উক্ত ফকীহ হাদীস বর্ণনাকারী ‘আদল’ (ন্যায়বান) এবং হিফজ (স্মরণশক্তি)-সম্পন্ন রাবির ক্ষেত্রে এমন কোনো শর্ত রেখেছেন যা অন্য কেউ মানেননি।
পঞ্চম কারণ:
হাদীসটি ফকীহের কাছে পৌঁছেছে এবং তা তার নিকট সহীহও হয়েছে — কিন্তু তিনি হাদীসটি ভুলে গেছেন।
ষষ্ঠ কারণ:
হাদীসটির অর্থ বা দিকনির্দেশনা ফকীহ বুঝতে পারেননি।
সপ্তম কারণ:
ফকীহ মনে করেন হাদীসে কোনো দালালাত (প্রামাণ্য ইঙ্গিত) নেই।
এটি আগের কারণ থেকে ভিন্ন, কারণ আগেরটিতে দিকনির্দেশনা বোঝেননি, আর এখানে দিকনির্দেশনা বুঝেছেন, কিন্তু সেটাকে সঠিক দালালাত মনে করেননি।
অষ্টম কারণ:
ফকীহ মনে করেন, হাদীসটির যে দালালাত আছে তা বাতিল হয়ে গেছে অন্য কোনো প্রমাণ দ্বারা; যেমন:
১) সাধারণ অর্থকে নির্দিষ্ট অর্থ দ্বারা বিশেষায়িত করা,
২) মুক্ত বক্তব্যকে সীমাবদ্ধ করা,
৩) সাধারণ আদেশকে এমন প্রমাণ দ্বারা বাধ্যতামূলক না রাখা,
৪) আসল অর্থকে রূপক অর্থ দ্বারা প্রতিস্থাপন —
বস্তুত এসব বিরোধের বিষয় অনেক বড় ও বিশাল একটি অধ্যায়।
শারঈ নস বা বক্তব্যসমূহের মধ্যকার ইঙ্গিতসমূহের বিরোধ ও পরস্পরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পদ্ধতি এক বিরাট সাগরের মতো।
নবম কারণ:
ফকীহ মনে করেন, হাদীসটি এমন কিছুর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হয়েছে যা তার দুর্বলতা, রহিত হওয়া, অথবা ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যা থাকার প্রমাণ বহন করে, যদি সেখানে ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে— তবে সে ব্যাখ্যা থাকার বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য হতে হবে; যেমন: অন্য আয়াত, অন্য হাদীস, বা ইজমার বিরোধী হওয়া।
দশম কারণ:
ফকীহ হাদীসটির বিরোধিতা করেছেন এমন কিছু দিয়ে, যা তার নিকট দুর্বলতা, নাসিখ (রহিতকারী) বা ব্যাখ্যা থাকার দলীল — কিন্তু অন্য কেউ সেটিকে দলীল মনে করেন না, বা প্রকৃতপক্ষে তা উপযুক্ত বিরোধী নয়।
যেমন: অনেক কূফী আলিম সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করেছেন কুরআনের ‘জেনারেল’ অর্থ দ্বারা এবং তারা মনে করেন কুরআনের সাধারণ অর্থ হাদীসের ‘নাস’ (স্পষ্ট ভাষ্য)-এর ওপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।
তথ্যসূত্র:
মাজমূ‘ ফাতাওয়াঃ ইবনু তায়মিয়াহ, ২০তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৯–২৫০।