হারাম ভক্ষণ ও হারামের উপর জীবন যাপন কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। তা যে কোন উপায়েই হোক না কেন।
বর্তমান যুগের দর্শন তো খাও, দাও, ফুর্তি করো। এ দর্শন বাস্তবায়নের জন্য সকলেই উঠে-পড়ে লাগছে। সবার মধ্যে শুধু সম্পদ সঞ্চয়েরই নেশা। চাই তা চুরি করে হোক অথবা ডাকাতি। সুদ-ঘুষ খেয়ে হোক অথবা ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করে। কোন অবৈধ বস্ত্তর ব্যবসা করে হোক অথবা সমকাম, ব্যভিচার, গান-বাদ্য, অভিনয়, যাদু ও গণন বিদ্যা চর্চা করে। জাতীয় বা কারোর ব্যক্তিগত সম্পদ লুট করেই হোক অথবা কাউকে বিপদে ফেলে। শরীয়তে এ জাতীয় দর্শনের কোন স্থান নেই।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ، وَتُدْلُوْا بِهَا إِلَى الْـحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»
‘‘তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়রূপে গ্রাস করো না এবং তা ঘুষরূপে বিচারকদেরকেও দিও না জেনেশুনে মানুষের কিছু ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার জন্য’’। (বাক্বারাহ্ : ১৮৮)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়রূপে গ্রাস করো না। তবে যদি তা পরস্পরের সম্মতিক্রমে ব্যবসায়ের ভিত্তিতে হয়ে থাকে তা হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই’’। (নিসা’ : ২৯)
হারামখোরের দো‘আ আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো কবুল করেন না।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
ثُمَّ ذَكَرَ رَسُوْلُ اللهِ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ، أَشْعَثَ أَغْبَـرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ! يَا رَبِّ! وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْـحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟!.
‘‘অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে ক্লান্ত, মাথার চুল যার এলোমেলো ধূলেধূসরিত সে নিজ উভয় হাত আকাশের দিকে সম্প্রসারিত করে বলছে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম তথা তার পুরো জীবনোপকরণই হারামের উপর নির্ভরশীল। অতএব তার দো‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে?!’’ (মুসলিম ১০১৫)
উক্ত হাদীস থেকে হারাম ভক্ষণের ভয়াবহতা সুস্পষ্টরূপে বুঝে আসে। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা মুসাফিরের দো‘আ ফেরৎ দেন না অথচ এখানে তার দো‘আ কবুলই করা হচ্ছে না। আর তা এ কারণেই যে, তার জীবন পুরোটাই হারামের উপর নির্ভরশীল।
হারামখোর পরকালে একমাত্র জাহান্নামেরই উপযুক্ত। জান্নাতের নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
كُلُّ لَـحْمٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ.
‘‘যে শরীর হারাম দিয়ে গড়া তা একমাত্র জাহান্নামেরই উপযুক্ত’’। (ত্বাবারানী/কবীর ১৯/১৩৬ সা’হীহুল্ জামি’, হাদীস ৪৪৯৫)