সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর Ahmed Rajib Haider ফেসবুক এ জয়েন করে। তার ফেসবুক আইডি-https://www.facebook.com/rha.rajib।২০১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে সে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ১০ হাজার মানুষ হত্যার প্রামাণ্য অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর হত্যা বার্ষিকীতে মুসলমানদের ধর্মীয় উত্সব পালন কতটা মানবিক?’ (সম্ভবত এদিন মুসলমানদের ঈদের দিন ছিল)।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে লিখেছেন, ‘সবাই তারেক-কোকো আর হাসিনা-খালেদার বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় করে ফেলছে... এদিকে প্রতি বছর সবার চোখের সামনে দিয়ে কয়েক লাখ হাজী যে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা সৌদি আরবে ঢেলে দিয়ে আসছে সেটা কেউ টু শব্দটা করে না...!!’
২০১১ সালে নিজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে মুসলমানদের নিয়ে কটাক্ষ করে লিখেছেন, “মুসলিমদের ‘টেররিস্ট’ আখ্যা দেয়া অন্যায়, তাদের জন্য উপযুক্ত নাম হলো ‘সিরিয়াল কিলার’!”
আবার ২৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে আরেক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমরা ঈশ্বর নামক কারও জারজ না... আমাদের বাবা-মায়েরা নিজেদের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে আমাদের জন্ম দিয়েছে! আমার স্রষ্টা আমার জেনেটিক বাবা-মা, আমি তাদের সৃষ্টি। আবার আমি আমার সন্তানদের স্রষ্টা...তারা আমার সৃষ্টি!!! আর এই পুরো প্রকৃয়াটিতে বাবা-মায়ের বাইরে যদি কাউকে ধন্যবাদ দিতে হয়, সে হলো ধাত্রী অথবা ডাক্তার ও নার্স!’
রাজিবের পাশাপাশি আরও যেসব ব্লগার শাহবাগের আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখি চালিয়ে আসছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ডা. ইমরান এইচ সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, নিজেকে নাস্তিক দাবিকারী আসিফ মহিউদ্দিন, ইসলামবিদ্বেষী একটি রাজনৈতিক দলের কট্টরপন্থী ব্লগার ইব্রাহিম খলিল (সবাক) প্রমুখ। [নয়া দিগন্ত ও আমার দেশ]
এছাড়া ইংল্যান্ড প্রবাসী ওই রাজনৈতিক দলের এক ব্লগার আরিফুর রহমানকে দেখা যায় নানা আপত্তিকর মন্তব্য করতে। তাদের মধ্যে আসিফ মহিউদ্দিন সামনের সারিতে থেকে শাহবাগের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আসিফ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নিজেকে নাস্তিক দাবি করলেও তার যত মাথাব্যথা ইসলাম ধর্ম নিয়ে। তবে কখনও কখনও সমন্বয়ের অংশ হিসেবে অন্য একটি ধর্মেরও সমালোচনা করে থাকে সে। একটি বিশেষ ধর্মের অনুসারী হলেও সে মুসলিম নাম ধারণ করে ইসলামকে বিতর্কিত করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোয় অভিযোগ করা হয়। নিচে বর্তমানে সক্রিয় কয়েকজন বাম ও রাম ঘরানার রাজনীতির সমর্থক নাস্তিক ব্লগারের কটাক্ষপূর্ণ এরকম কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলো :
আসিফ মহিউদ্দিন একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। সে কমিউনিজমে বিশ্বাসী। শাহবাগে প্রথম সমাবেশে সে একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়। একটি ছবিতে দেখা যায় এ ধরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইসলামবিদ্বেষী বৃহৎ দলের বুদ্ধিজীবী ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ওইদিন তাকে পিঠ চাপড়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
আসিফ মহিউদ্দিন (গত ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০০) ব্লগে একটি পোস্ট লিখেছেন। সেখানে ইসলাম ও কুরআনকে কটাক্ষ করে তার লেখা হলো : ‘বিসমিল্লহির রহমানির রাহিম। আউজুবিল্লা হিমিনাশ শাইতানির নাস্তিকানির নাজিম।’
গত বছরের ৫ মে পবিত্র কুরআন শরীফকে মহাপবিত্র ‘আহাম্মকোপিডিয়া’ লেখার মতোও ধৃষ্টতা দেখায় এ ব্লগার। তবে পরে তীব্র প্রতিবাদের মুখে এ পোস্টটি সে তার ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলে (এর স্ক্রিন শট এখনও আছে)।
আসিফ মহিউদ্দিন তার ফেসবুক ওয়ালে পৃথিবীর সর্বযুগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে লিখেন, ‘মুহাম্মদ নিজেকে আইডল বা নিজেকেই ঈশ্বর না বলে একটি কল্পিত ঈশ্বরকে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ যেন ব্যক্তিপূজায় আসক্ত না হয়, তাকেই যেন মানুষ ঈশ্বর বানিয়ে পূজা করতে শুরু না করে, সে ব্যাপারে তিনি কঠোর ছিলেন। তাই তার সমস্ত রচনাই তিনি আল্লার নামে চালিয়ে দিয়েছেন, এর রচয়িতা হিসেবে আল্লাকে সৃষ্টি করেছেন!’
আরেক পোস্টে এই কুলাঙ্গার লিখেছেন, ‘ধর্মান্ধ মুসলিমদের উত্তেজনার শেষ নেই। তাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে কে মুহাম্মদের ছবি আঁকলো, কে ধর্মের সমালোচনা করলো। অথচ এতে মুহাম্মদ/আল্লার কখনই কিছু যাবে আসবে না। ব্যাপারটা এমন নয় যে, মুহাম্মদের ছবি আঁকা হলে স্বর্গে মুহাম্মদ সাহেব কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে আত্মহত্যা করছেন! আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, তার উম্মতরা ঠিকই তাকে একজন পীরে পরিণত করেছে।’
ফেসবুকে বিশ্বনবীর একটি কাল্পনিক ছবিকে দেখিয়ে তিনি লিখেছেন, এই ছবিটা মুহাম্মদের উন্মাদ উম্মতদের উদ্দেশ্যে একটা জবাব হতে পারে।’
ইসলামের বিধান পর্দা বা বোরকা নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বোরখা পরাটা সমর্থন করি না, বোরখা হিজাব মূলত আরবির বর্বর সমাজের প্রতীক। একটা সমাজে অত্যধিক বোরখার প্রাদুর্ভাব থাকা মানে হচ্ছে সেই সমাজের পুরুষগুলো সব এক একটা ধর্ষক, সেই ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সকল নারীকে একটা জেলখানা নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এইসব অজুহাতে নারীকে যুগ যুগ ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে, কখনও ঘরের ভেতরে, আবার কখনও বোরখা নামক চলমান জেলখানার ভেতরে।’
ইসলামকে শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য দান নিয়েও কটাক্ষ করে তিনি লিখেছেন, ‘ধার্মিকদের মাথায় স্বার্থচিন্তা থাকে যে, এই উপকারে সে পরকালে হুর পাবে। এমনকি তারা কোন দরিদ্র, দুস্থ, পঙ্গু মানুষকে দেখলেও বেশিরভাগ সময়ই স্বার্থপরের মতো নিজের কথাই ভাবে। আর যদি ওই পঙ্গু লোকটির কথা ভাবেও, তাতেও তাদের মাথায় থাকে স্বর্গে হুরী সঙ্গমের অশ্লীল চিন্তা।’
তার মতে, ‘জনগণের সুখ ও অর্থনৈতিক সাম্যের জন্য সর্বপ্রথম যা করতে হবে, তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের উচ্ছেদ।’তবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে এমন অবমাননামূলক ও উসকানিমূলক পোস্ট লেখায় তৌহিদী জনতার প্রচণ্ড আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত আসিফ মহিউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কয়েকজনকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। তবে পাশাপাশি যেভাবে এদের মুখোশ উন্মোচনকারী মিডিয়ার সমালোচনা ও হুমকি দেয়া হচ্ছে তাতে তাদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া নিয়ে আমাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে[1]।
বলা দরকার, কারো মনে বিশ্বাস না জন্মালে তিনি বিশ্বাস নাও করতে পারে। ধর্ম তাকে জবরদস্তি করতে বলে নি। কিন্তু কেউ চাইলেই বাকস্বাধীনতার নামে বিভৎস ও বিকৃত ভাষায় কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কেন্দ্রে আঘাত করতে পারে না। সকল ধর্ম এমনকি তথাকথিত ধর্মনিরেপক্ষবাদও নাকি তাই বলে। আমাদের সংবিধান ও সরকারের ভাষ্যও তাই। সুতরাং কেউ যদি দেশে অশান্তি সৃষ্টিকারী কিছু ব্লগারের পক্ষে দাঁড়ান তবে তারাও তো সমান অপরাধী।
এদিকে আরিফুর রহমান (হুঙ্কারসহ নানা নামে লেখে) লিখেছেন, ‘আমি মনে করি আল্লা বিষয়টা মুহাম্মদের একটা বুজরুকি। ছিটগ্রস্ত মুহাম্মদ তার হ্যালুসিনেশনের সময় মনে করতো জিব্রাইল আইছে, তাই আল্লার কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে ধর্ম তৈরি করেছে। নাম দিয়েছে ইজলাম। এই হলো আল্লা বিষয়ে আসল কাহিনী।’
হিজাব নিয়ে আরিফ লিখেছেন, ‘হিজাব হলো ছৌদি নোংরামির চূড়ান্ত... কুত্তাদের কালো কাপড়ের কালচার। একে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়াটাই একটা বড় রকমের গুনাহ...!! হিজাবের বিরুদ্ধে পোস্টতো আসবই। ইসলামী পুরুষতন্ত্রের ছাগুরা।’
ইব্রাহিম খলিল নামের এক প্রতারক সবাক নামে লিখেছেন, ‘মির্জা সাথীর প্রোফাইট পিকচার সুন্দর। নিজের অজান্তেই লুল ফালাইতে ইচ্ছা কর্তাছে...’ আলআওয়াম আল আনয়াম (আওয়ামী লীগ চতুষ্পদ জানোয়ারের ন্যায়)। সুরা গো. আ, আয়াত-৪২০।’
ধর্ম নিয়ে সবাক লিখেছে, ‘শুয়রের বাচ্চারা বানাইছে একখান বালের ধর্ম। বৌ... (এতটা অশ্লীল শব্দ যে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না) কিছু কথা কইছে, আর... ফালানোর পর কিছু কথা বলে। দুইটাই শালাগো ধর্তব্য হইছে। বিশ্বাস হালকা কইরা স্বার্থবন্দী কথাগুলান যাচাই কইরা আবার ধার্মিকরাই বাহির কইরলো বিরাট ক্যারফা। তারপর ধর্মের গোয়া বাইর হইছে লস্করই-তাইয়্যিবাল, বাল কায়েদা, বালকাতুল জিহাদ, সোগাবুত হাহরীর। ধর্মরেও... ধর্মের সোগা দিয়া পয়দা হওয়া বর্বরগুলানরেও... ।’
শুধু তাই নয়, এ নাস্তিকদের অনেকের ফেসবুকে ইসলামকে নিয়ে নানা কটূক্তিকর স্ট্যাটাস বেশ দেখা যাচ্ছে। ঠিক এমনি আশরাফুল ইসলাম রাতুল নামে এক নাস্তিক কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘সাহস থাকলে একবার শাহাবাগ আয় রাজাকারের চুদারা, তোদের মুহাম্মদ (স.) আর নিজামী বাপকে একে অন্যের পোদের ভেতর ঢুকাবো।’ (নাউজুবিল্লাহ) [সৌজন্যে : দৈনিক আমার দেশ ও নয়া দিগন্ত, ১৮ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংখ্যা] এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে রীতিমত তোলপাড় হয়। উসকানিমূলক ও চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ এসব মন্তব্যের প্রতিবাদ ও ইসলাম ধর্মের নানা দিক নিয়ে যথাসাধ্য পোস্ট দিয়ে যান ইসলামপন্থী ব্লগাররা। তারা নাস্তিকদের দেয়া নানা যুক্তি খণ্ডনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে ফেসবুক ব্যবহারকারী ও ব্লগারদের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে ইসলামপ্রিয় মুসলিমদের সতর্ক থাকার আহ্বানও জানানো হয়।
>চূড়ান্ত সফলতার পর ব্যর্থতার পথে যাত্রা- এই জগতের নিয়ম। নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও দেশপ্রেমের সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রথম আলো বাংলাদেশের শীর্ষ ও সফলতম পত্রিকার খেতাব অর্জন করেছে। চূড়ান্ত ব্যর্থতা ছাড়া অর্জনের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই এর। অথচ তাদের ভাওতাবাজী শ্লোগানগুলোর অসারতা সম্পর্কে ইসলামপন্থী বা ডানরা শুধু নয়; এ দেশের বাম ও স্বগোত্রীয় ধর্মবিদ্বেষী শ্রেণী পর্যন্ত কখনো সন্দেহ পোষণ করে নি। জাতীয় সংসদেও প্রথম আলো নামের প্রথম কালোর বিরুদ্ধে দীর্ঘ সমালোচনা হয়েছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পাদকের সম্পৃক্ততা, একটি দেশের প্রতি তার গোপন এজেন্ডা এবং দুই নেত্রীকে মাইনাসের চেষ্টা নিয়েও বহু কথা হয়েছে মিডিয়াপাড়ায় ‘মিশনারিনির্ভর পত্রিকা খ্যাত’ এ দৈনিকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ধ্বংস করে ধর্ষণের রাজধানীর লকব পাওয়া পাশের দেশের অশ্লীল ও পৌত্তলিক সংস্কৃতি প্রচলন ও উৎসাহিতকরণে এর অবদান অনস্বীকার্য।
সর্বদা শান্তি ও প্রগতির কথা বললেও বিস্ময়করভাবে পত্রিকাটি জন্মলগ্ন থেকে লেগে আছে শান্তি ও প্রগতির ধর্ম ইসলাম ও তার অনুসারীদের পেছনে। ইসলামবিদ্বেষীদের মহিমান্বিতকরণ এবং ইসলাম ও মুসলমানের চরিত্র হননে ধারাবাহিকতা ও আপোসহীনতায় প্রথম আলোর অবস্থান সবার ওপরে। একদিকে ইসলামের বিপক্ষশক্তির শতজনের সমাবেশকে হাজারো-লাখো জনতার মহাসমাবেশ হিসেবে তুলে ধরা অন্যদিকে লক্ষাধিক ইসলামপ্রেমীর স্বতস্ফূর্ত সমাবেশকে অনতিদীর্ঘ ও অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন কিংবা একেবারেই তুলে না ধরা এর পলিসি।
প্রথম আলো যে সবচে খারাপ কাজটি করে সবার অগোচরে তা হলো কোনো কোনো অন্যায়ের ব্যাপারে এবং ইসলাম ও মুসলমানের জন্য ইতিবাচক কিংবা উৎসাহবর্ধক সংবাদ বিষয়ে বোবা শয়তানের ভূমিকা গ্রহণ করে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক। বিউটি পার্লার হিসেবে পারসোনার অনেক নামডাক রয়েছে। রাজধানী জুড়ে অনেক শাখা রয়েছে পারসোনার। শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১ পারসোনার বনানী শাখা থেকে একটি লুকানো ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে পারসোনা কর্তৃপক্ষ এবং এক আইনজীবী মহিলা গ্রাহকের সঙ্গে তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে হৈ চৈ পড়ে যায়। প্রত্যেক মিডিয়ায় খবরটি ফলাও করে প্রচার হয়। কিন্তু পারসোনার মালিক ব্যক্তিগতভাবে প্রথম আলো সম্পাদকের বন্ধু হওয়ায় পত্রিকাটি লাগাতার এ বিষয়ে নিরবতা পালন করে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে একটি ছবি প্রচারিত হয়। তাতে দেখা যায় পারসোনার মালিক কানিজ আলমাসের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় করমর্দন করছেন মতিউর রহমান। এ ঘটনায় সেকুলার পাঠকরাও প্রথম আলোর ভূমিকায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হন।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কলামিস্ট ও গল্পকার আনিসুল হক। তিনি একটি বই লিখেছেন ‘ছহি রাজাকারনামা’ নামে। কুরআনের আয়াত নিয়ে এ ধরনের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক রচনা বাংলা ভাষায় নজিরবিহীন। বাংলা সাহিত্যের সেরা কবি-সাহিত্যিকরা শত শত বছর ধরে পবিত্র কুরআনের প্রশংসা করে বহু কবিতা-গান রচনা করেছেন, এখনো করছে এবং ভবিষ্যতেও করবেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবি নবীন চন্দ্র সেনকে নিয়ে লেখা ‘নবীনচন্দ্র’ কবিতায় নিজেকে ‘কোরআনের কবি’ বলে পরিচয় দিয়েছেন। নজরুল কোরআনের আমপারা অংশের কাব্যানুবাদ করেছেন। গানে ও কবিতায় পবিত্র কোরআনের সূরা ফাতেহার অনুবাদ করেছেন গোলাম মোস্তফা, সুফিয়া কামাল, ফররুখ আহমদ, মতিউর রহমান মল্লিকসহ বাংলাদেশের প্রথম সারির অনেক কবি-সাহিত্যিক।
বাংলা সাহিত্যের এক সময়ের জনপ্রিয় কবি ও চিন্তাবিদ শেখ ফজলুল করিম পবিত্র কুরআন নিয়ে রচনা করেছেন সুদীর্ঘ অনবদ্য কবিতা ‘কোর-আন’। এ কবিতায় তিনি লিখেছেন—‘বিশ্ব-মানব মঙ্গল-সেতু আমাদের ফোরকান’ এবং ‘বিশ্ব মানব মুক্তির হেতু আমাদের কোরআন’। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন কুরআনের গদ্য অনুবাদ করেছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কুরআনের কয়েকটি সূরার অনুবাদ করেছেন কবিতায়। অন্য ধর্মাবলম্বী হলেও এদের বিরুদ্ধে কখনও কুরআন বিকৃতির অভিযোগ ওঠে নি। সচেতন মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের একজন মুসলমান লেখক ও সাংবাদিক হয়ে আনিসুল হক কীভাবে এ ধরনের ভয়াবহ বিকৃত রচনা লেখা লিখতে পারলেন?
তার একটি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াতকে সম্পূর্ণ বিদ্রূপাত্মক ভাষায় লেখা হয়। লেখাটি নিয়ে ফেসবুক, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট এবং সচেতনমহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত সচলায়তন ব্লগে আনিসুল হকের ‘ছহি রাজাকারনামা’ লেখাটি প্রকাশ পায়। সচেতন ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সঙ্গে সঙ্গে লেখাটি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ক্ষোভ ধীরে ধীরে বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য আনিসুল হকের এ লেখাটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালের ১২ এপ্রিল পূর্বাভাস পত্রিকায়। ১৯৯৩ সালে লেখাটি আনিসুল হকের ‘গদ্যকার্টুন’ বইতে স্থান পায়। ২০১০ সালে এই বইটি পুনরায় মুদ্রণ করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সন্দেশ। বইটিতে পর্দানসিন নারী ও দাড়ি-টুপিধারী আলেমদের নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন শিশির ভট্টাচার্য।
পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে—‘সমস্ত প্রশংসা জগতের প্রতিপালক আল্লাহর’। আনিসুল হক তার ‘সহি রাজাকারনামা’য় লিখেছেন, ‘সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের’। সূরা ফাতেহার আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ আনিসুল হক ব্যঙ্গ ও বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা করো, আর রাজাকারদের সাহায্য প্রার্থনা করো।’
পবিত্র কুরআনের সূরা দুহার ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো।’ আনিসুল হক বিদ্রূপ করে লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্য অতীতের চাইতে ভবিষ্যেক উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে।’
পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৩ নং আয়াতে বলা হয়, ‘আর তোমরা ভয় কর যে, ইয়াতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূর্ণ করতে পারবে না; তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে বিয়ে করে নাও দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকেই (বিবাহ কর), অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (বিবাহ কর)।’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিপরীতে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে, একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছে করে আর তাহার জন্য বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভুক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙালিরমণীগণকে, অপিচ তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের সহিত মিলিত হইবার পথে কোনোরূপ বাধা থাকিলো না।’
পবিত্র কুরআনের সূরা মুরসালাতের ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আমি কি আগের লোকদের (অবিশ্বাসী জালেম) ধ্বংস করিনি?’ আনিসুল হক এ আয়াতের ব্যঙ্গ করে লিখলেন, ‘গ্যালিলিও নামের এক পাপিষ্ঠ অতীতে সত্য অস্বীকার করিয়াছিল এবং সে কি প্রাপ্ত হয় নাই চরম শাস্তি।’
পবিত্র কুরআনের সূরা নাবার ৩১-৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অপরদিকে পরহেজগার লোকদের জন্য রয়েছে চরম সাফল্য। (তা হচ্ছে) বাগবাগিচা, আঙ্গুর (ফলের সমারোহ), (আরো আছে) পূর্ণ যৌবনা সমবয়সী সুন্দরী তরুণী।’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তাহাদের জন্য সুসংবাদ। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছে, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না।’
এভাবেই কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করে আনিসুল হক লিখেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভু পাকিস্তানের প্রশংসা কর। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু পাকিস্তানীরা ক্ষমতাশীল।’
আনিসুল হকের ‘ছহি রাজাকারনামা’ লেখাটির প্রতিটি বাক্যেই পবিত্র কুরআনের বাকভঙ্গি ও কুরআনের বাংলা অনুবাদের ক্লাসিক ভাষা ব্যবহার করে কুরআনের আয়াতকে ব্যঙ্গ ও বিকৃত করা হয়েছে। ২০১০ সালে ‘সন্দেশ’ থেকে প্রকাশিত আনিসুল হকের বইটিতে ‘ছহি রাজাকারনামা’ ছাড়াও ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’, ‘নমিনেশন ইন্টারভিউ গাইড’সহ কয়েকটি লেখায় ইসলামি সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিদ্রূপ করা হয়েছে।[দৈনিক আমার দেশ, বৃহস্পতিবার ২৮/০৩/২০১৩]
১৭ সেপ্টেম্বর২০০৭তারিখে প্রকাশিত প্রথম আলোর কৌতুক ম্যাগাজিন আলপিনের ৪৩১তম সংখ্যায় স্থান পাওয়া একটি কার্টুন নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কার্টুনটিতে একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের সঙ্গে একজন বালকের সংলাপে বালকটি ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম নিয়ে একটি কৌতুক করে।২০ বছর বয়সী কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের আঁকা কার্টুনটির বিষয়বস্তু একজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে বিড়াল হাতে এক বালকের আলাপচারিতা। কার্টুনটির লিখিত সংলাপই মূলত বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন বালকটিকে তার নাম জিজ্ঞাসা করা হয় তখন সে নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ উল্লেখ করে না, যা বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ইসলাম ধর্মেরনবীমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানার্থে ব্যবহৃত করে। অগ্রজ লোকটি ছেলেটিকে সকল নামের আগে এই শব্দ ব্যবহার করতে বলে। কার্টুনের শেষ অংশে যখন লোকটি জানতে চায় যে, বালকটির হাতে কী, তখন জবাবে সে বলে ‘মুহাম্মদ বিড়াল’।
দেশের ধর্মপ্রাণ কোটি কোটি মুসলিম এবং হাজার হাজার আলেম-উলামা কার্টুনটির তীব্র প্রতিবাদ জানান। আয়োজন করা হয় গণপ্রতিবাদের। যা ২০০৭ সালের শুরুতে চালু হওয়া বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিষিদ্ধ ছিল। এর ধারাবাহিকতায় রাস্তায় সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় নেতৃবর্গ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। দাবি জানান প্রথম আলোর অনুমোদন কেড়ে নেয়ার। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আলপিনের ৪৩১তম সংখ্যাটির বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর সকল কপি বাজেয়াপ্ত করে। গ্রেপ্তার করা হয় কার্টুনটির রচয়িতা আরিফুর রহমানকে।পরবর্তীতে আলপিন ও মূল পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদকমতিউর রহমানদৈনিকটিতে একটি লিখিত মন্তব্যে কার্টুনটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এটি প্রকাশের জন্য তিনি অনুতাপ প্রকাশ করেন। ইসলামপন্থীদের প্রচণ্ড চাপের মুখে তৎকালীন বায়তুল মুকাররমের খতীব মাওলানা উবাইদুল হকের হাতে হাত রেখে প্রকাশ্যে তওবা করেন।
বাংলাদেশে যতগুলো ইসলামী পরিভাষা আজ ঠাট্টা-মশকরা ও অপপ্রচারের শিকার যেমন ফতোয়া, তালাক, হিল্লা বিয়ে, মৌলবাদ ইত্যাদি শব্দ সেসবের পেছনেও প্রধান ভূমিকা এই প্রথম আলোর। এ পত্রিকাই মূলত সবার আগে এসব শব্দকে নেতিবাচক হিসেবে প্রচার করে। আলেমদের যতটা হেয় এ পত্রিকা করেছে অবশিষ্ট সব পত্রিকা মিলেও তা পারে নি।
এই পত্রিকাটি টাকা দিয়ে কেনার তো প্রশ্নই ওঠে না। তাদের অপসাংবাদিকতা সম্পর্কে সজাগ থাকতে কেবল অনলাইনে পড়ি। আজকাল অনলাইনেও তাদের এড্রেসে ক্লিক করতে রুচিতে বাধে। হেফাজতের লংমার্চ নিয়ে করা লিড নিউজে পত্রিকাটি বলেছে, ‘আল্লাহ, রাসুল ও ইসলামি অনুশাসনের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের...’। ব্লগে ইসলাম অবমাননার বিষয়টি যেখানে সারাদেশের মানুষের কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার সেখানে প্রথম আলো কিভাবে ‘কথিত’ শব্দ লেখে?! খানিক বাদে বেলা ১১টায় খোদ প্রথম আলোই অনলাইনের চলতি আপডেটে ‘ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩’ শীর্ষক সংবাদে বলেছে, ‘উপকমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের ভাষ্য, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য লিখতেন। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও হার্ডডিস্ক থেকে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।’ প্রমাণিত যদি হয় তাহলে কথিত হয় কিভাবে?
এই বামরাই তো গ্রেফতারকৃত স্বঘোষিত নাস্তিকদের মুক্তি চেয়েছেন বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে। এরাই আবার কিভাবে বিশাল জনগোষ্ঠীর মত প্রকাশের সমাবেশে প্রতিরোধের কথা বলেন?! আসলে অনেক আগে থেকেই স্ববিরোধিতা ও স্বার্থপরতা এদের স্বভাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য হেন কাজ নেই করে না। হেন কথা নেই বলে না। নিজেদের সুবিধার জন্য এরা টুপি পরে সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে বছরে দুয়েকবার মসজিদে যায়। কখনো গণ্যমান্য রাজনীতিবিদ কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশ নেয়। এই মেনন-ইনু-শাহরিয়ার কবির গংরাই পেটু-পূজারী খাজাদের দখলে থাকা ফাউন্ডেশনে গিয়ে মিলাদুন্নবীসহ নানা হালুয়া-রুটির প্রোগ্রামে হাজির হয়ে ভাগ বসায়।
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ যথার্থই লিখেছেন, ‘যাঁরা আগে মার্ক্সীয় তত্ত্ব আওড়াতেন, তাঁরা এখন আম-ছালাতত্ত্বের প্রবক্তা হয়েছেন। মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ ও মাও সে তুংয়ের চিন্তাধারা বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছে। গত ৪২ বছরে বুড়ো মার্ক্সের উম্মতরা—তাঁরা মস্কো তরিকার হোন বা বেইজিং তরিকার হোন—সব বেসামরিক ও সামরিক শাসকের স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে এখন তাঁরা প্রায় বিলুপ্ত এক প্রজাতি। কোনো ব্যক্তির কাছে একটি ছালার যে কদর, বড় শাসক দলগুলোর কাছে বামদের সে দামও নেই। শাসক দলগুলোর কাছে বঙ্গীয় বামরা ছেঁড়া ছালার চেয়ে বেশি কিছু নন।’ [দৈনিক প্রথম আলো, ০৯/০৪/১৩]
বামরা ফতোয়ার বিরুদ্ধে কত আন্দোলনই না করে ব্যর্থ হলো। অথচ এরাই দুদিন পরপর নিত্যনতুন ফতোয়া জারি করে। বামদের সাম্প্রতিক ফতোয়া হলো, আস্তিক-নাস্তিক নির্ধারণ করবেন আল্লাহ। এই ‘হুজুর’রা আবার কে? এই শিক্ষিত অর্বাচীনদের কে বুঝাবে নাস্তিক ফতোয়া দেবার দায়িত্ব আল্লাহর নয়। আল্লাহ যে বিধান ও আইন দিয়েছেন, তার আলোকে আল্লাহর বিধান বিষয়ে পারদর্শী আল্লাহর বান্দা তথা আলেম-উলামাই এ বিষয়ে ফতোয়া দেবেন।
এরাই প্রধানমন্ত্রীকে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নারীনীতি পাশ, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বিলুপ্তি এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনে বাধ্য করে তাঁর ও তাঁর দলের মহা সর্বনাশ করেছে। এরাই সিংহভাগ মুসলমানের রক্তে কেনা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ছেড়েছে। এরাই বেপথু শাহবাগীদের নেতা ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণের সাহস দিয়েছে। এরাই আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিককে দুই শিবিরে বিভক্ত করে দেশের নিরাপত্তা, শান্তি ও অগ্রগতিকে প্রশ্ন ও শঙ্কার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এই বামেরা প্রতিটি সরকারের আমলে তাদের ভোল পাল্টে বড় বড় সব সুযোগ বাগিয়ে নিয়েছে। আজ সারা দেশের আস্তিককূল এই নাস্তিকপ্রধান বামদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর শান্তির মহান দূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননার প্রতিবাদে লংমার্চের পর শাপলা চত্বরে ঐতিহাসিক যে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, তাতে বামদের তৈরি করা পরিবহন ধর্মঘট, প্রতিরোধের ঘোষণা এবং গুটিকয় শাহবাগির বৃথা আস্ফালন বালির বাঁধের মতো ভেসে গিয়েছে।
শত বাধাবিপত্তি ডিঙ্গিয়ে পঞ্চাশ ষাট মাইল পথ হেঁটে হেফাজতের সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রায় ত্রিশ লাখের মতো মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন এ দেশে বামদের ঠাঁই নেই। এদেশে রাসূল প্রেমিক লাখ লাখ মুসলিম ঘুমিয়ে নেই। প্রয়োজনে তাঁরা রক্ত দিতে জানেন। পারেন যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও। ৬ মার্চের (২০১৩) সমাবেশে মানুষ যে আপ্যায়ন, পরহিতৈষণা ও স্বার্থত্যাগের অসংখ্য নজির পেশ করেছেন তা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। তার দেখা মেলে কেবল মক্কা-মদীনার পবিত্র ভূমিতেই। এ বিশাল সমাবেশে আগত নবীপ্রেমিকরা সেদিন যদি থুতুও নিক্ষেপ করতেন তবে তাতেও শাহবাগের সরকারি নিরাপত্তায় থাকা নব্য দেশপ্রেমিকরা ভেসে যেত। উপস্থিত আশেকে রাসূলদের এক সিকিভাগ মূত্রত্যাগ করলে তাতে শাহবাগ বানের তোড়ে ভেসে যেত।
কিন্তু ইসলামের শান্তির শিক্ষায় দীক্ষিত লাখো মুসলিম সব রাজনীতিবিদকে হতাশ করে জানিয়ে দিয়েছে আমরা অশান্তি চাই না। শান্তিই আমাদের প্রধান অন্বেষা। তাই তারা পরিস্থিতি অনুকূল থাকলেও তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানো স্বঘোষিত শত্রুদের দিকে পা বাড়ায় নি। অথচ এরপরও হেফাজতের শান্তিপ্রিয় হরতালের বিরুদ্ধে এই বেয়াদব শাহবাগিরা লাঠি হাতে রাজপথে নেমেছে। গণতন্ত্রের কবর রচনা করে ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডা-পাণ্ডারাও বাংলার সবুজ ভূমিকে রক্তে লাল করেছে আলেম-তালেবে ইলমদের পবিত্র রক্তে। এর পেছনেও প্রধান ভূমিকা রেখেছে এই সুবিধবাদী বামেরা। হেফাজতের কর্মসূচির অপব্যাখ্যা করে এরাই রাজপথে নামিয়ে দিয়েছে তাদের নারীকর্মীদের।
সময় এসেছে এই কুলাঙ্গার বামগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। সময় হয়েছে দল-মত নির্বিশেষে সকল তাওহিদী জনতার প্রিয়তম ব্যক্তিত্ব রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার। আল্লাহর আইনকে যারা বুঝে না বুঝে বর্বর ও মধ্যযুগীয় বলে আখ্যায়িত করে আজই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
উদ্বেগের বিষয় হলো এমন ধর্মহীনের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। এক রাজিব লোকান্তরে কিন্তু বহু রাজিব অনলাইনে। নাস্তিকদের ওপর হামলা এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান নয়। প্রয়োজন তাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করা। মিডিয়াযুদ্ধে নেমে তাদের পরাস্ত করা। এত দিন যারা ফেসবুক ব্লগকে অবহেলা করেছেন, সময় হয়েছে তাঁদের নড়েচড়ে বসার। সময় হয়েছে জাতির কাণ্ডারিদের মিডিয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে মিডিয়া প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার।
অবশ্য শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে হবে না। এদের ভাষা ও বক্তব্য এতটাই নোংরা যে এসবের জবাব দেয়াটাও কোন ভদ্র মানুষের রুচিতে আসে না। সুতরাং রাজনৈতিকভাবেও এদের মোকাবেলা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারকে বাধ্য করতে হবে এদের আইনের আওতায় আনতে। ব্লগগুলোয় আমি কিছুদিন এদের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের নোংরামি এতটাই জঘন্য যে আপনি এদের সঙ্গে কথা বলার রুচি হারিয়ে ফেলবেন। আমাদের জোটবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এদের মোকাবেলা করতে হবে। আর এদের অনলাইনের কুকীর্তি অফলাইনে জনসাধারণের সামনে আনতে হবে। তখনই এদেরকে যথাযথভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। মোদ্দাকথা কুকুরের মাথায় হাত বুলালে কোনোই লাভ হবে না। কখনো ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুরে’র ব্যবস্থাও করতে হবে।
আমার ফেসবুক বন্ধু মাওলানা আবদুল হক ঠিকই বলেছেন, আবহমান বাংলা আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। ৯০ শতাংশ মুসলিম-অধ্যুষিত হলেও এ দেশে অন্য সব সংখ্যালঘু ধর্মগোষ্ঠী সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করে। ধর্মের দিক থেকে এখানে কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। সকল ধর্মেরই দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে, কমবেশি নিজস্ব সংস্কৃতিও আছে। কেবল একটি ধর্ম- হ্যাঁ, ধর্মই -এর বাইরে। এ ধর্মের নাম নাস্তিক্য। বাংলাদেশে নাস্তিক্যের কোনো ভিত্তি নেই, ঐতিহ্য নেই, সংস্কৃতি নেই। ভুঁইফোঁড়ও নয়, বরং এটা একটা আমদানিকৃত উপদ্রব।
নাস্তিকতা সেই একমাত্র অধর্মের ধর্ম, যা কোনো নীতিবোধে বিশ্বাস করে না। ফলে, আইনের চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হলে একজন নাস্তিকের খুন বা ধর্ষণ না-করবার কোনো কারণ নেই। অতএব নাস্তিক আর অমানুষ সমার্থক শব্দ। কিন্তু মানুষের মুখোশ পরে থাকে বলে এ অমানুষদের আমরা প্রায়ই চিনতে ভুল করি। মানুষের সমাজে মানুষের সঙ্গে মিশে থাকার প্রয়োজনেই অমানুষ নাস্তিকদেরকে ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়। ছদ্মবেশ অপরিহার্য। এরা বাস করে গা ঢেকে, আত্মপরিচয় লুকিয়ে। কাপুরুষের মতো মাঝেমধ্যে লোকদেখানো সালাত আদায় করে। মরলে জানাযায়ও অংশ নেয়। তাই নাস্তিক মানেই ভণ্ড। কারণ সে খোলাখুলি কখনোই বলতে পারে না যে, সে নাস্তিক।
তবে আশার কথা, ষোল কোটি মানুষের মধ্যে নাস্তিকের সংখ্যা আঙুলে গোনা যাবে, এত কম। অন্যদিকে শঙ্কার কথা হল, কম হলেও এরা কখনোই বসে নেই। মানুষের বিশ্বস্ত সমাজে সারাক্ষণই এরা সিঁদ কাটছে ইঁদুরের মতো। এদের নির্বিরাম তৎপরতায় বাংলাদেশে এখন অনেক ইঁদুরের গর্ত। দেশের স্বাধীনতার ভিত্তিভূমির সুরক্ষার প্রয়োজনে এই ইঁদুরগুলিকে তাড়িয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কাজেই বাংলাদেশের বিশ্বাসী জনগণের সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় আন্দোলন হলো ‘নাস্তিক খেদাও আন্দোলন’, সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ শ্লোগান হলো : ‘নাস্তিকমুক্ত বাংলাদেশ চাই!
বাংলাদেশে যখনই ইসলামের ওপর আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কোনো বিপদ বা আগ্রাসন এসেছে, তখনই নতুন করে ইসলামপন্থীদের নিজস্ব মিডিয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করেন সবাই। সবগুলো মিডিয়া যখন একযোগে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানায়, নির্লজ্জ হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে ইসলামের স্বপক্ষের লোকদের খলনায়ক আর প্রকৃত খলনায়কদের নায়ক বানায়, তখনই সবাই নিজেদের মিডিয়ার শূন্যতা বোধ করেন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতেই এই বাস্তবতা ও অভাবের কথা ভুলে যান। দিনদিন যেখানে আধুনিক মিডিয়ার শাখা-প্রশাখা ডালপালা মেলছে, সেখানে বাংলাদেশে প্রকৃত ইসলামপ্রেমী একটি জাতীয় দৈনিকও নেই। এই নাস্তিক ও তাদের দোসরদের মোকাবেলায় এখনই অনতিবিলম্বে দরকার একাধিক জাতীয় দৈনিক এবং একাধিক মিডিয়া।
এখন থেকেই এই আন্দোলনের নতুন রূপ দেয়া দরকার। ইসলামী ঘরানার অনেক ভাইয়ের ফেসবুক আইডি আছে। নামে বেনামে কিছু likepage তৈরি করে সেগুলোকে কেন্দ্র করে সকলকে জমায়েত করতে হবে। এই পেজগুলোয় সাধারণ মানুষের প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সারাদেশের মেধাবী ছেলেদের দিয়ে এডমিন প্যানেল তৈরি করতে হবে।
আঠারোর্ধ্ব বয়সী মুসলিমকে মার্জিত অনলাইনার হতে উৎসাহিত করতে হবে। পেজগুলোয় ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে সামাজিক বিষয় বেশি পোস্ট দিতে হবে। সাধারণ ব্রাউজারদের সামনে নাস্তিকদের ভণ্ডামি ও আসল মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে। অনেকের কাছে এই প্রস্তাবগুলো অবান্তর মনে হতে পারে। তাদের বলব, কয়েকদিন নিয়মিত সাধারণ অনলাইনার হয়ে এই পরিবেশগুলো ঘুরে দেখুন। অতপর আপনিও আমার সঙ্গে একমত হয়ে বলবেন এসব করা উচিত। অসম্ভব মনে হলেও কিছু করার নেই। ভুলে যাবেন না আরব বসন্তের সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর এমনকি তথাকথিত শাহবাগের আন্দোলনের ডাকও কিন্তু অনলাইনেই দেয়া হয়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, প্রথম কাজ হবে নাস্তিকদের কুকীর্তি জাতির সামনে প্রকাশ করা, দ্বিতীয় কাজ তালিকা করে ওই সব কুলাঙ্গারের ব্লগ বাতিলের জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া, তৃতীয় কাজ ইসলামী ব্লগ তৈরি করা এবং চতুর্থ কাজ আগামী তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে সতর্কতার সঙ্গে ওই খারাপ ব্লগগুলো থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করা।
এ ক্ষেত্রে সবচে বেশি মনোযোগ দিতে হবে শিক্ষকতা ও মিডিয়ার প্রতি। কারণ, এ দুই পেশায় যুক্ত হয়েই বামধারার লোকেরা তাদের শিক্ষা ও চিন্তা-চেতনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ইসলামবিরোধী নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারায় প্রভাবিত ও আচ্ছন্ন করেছেন। মেধাবী ইসলামপ্রিয় শিক্ষানুরাগী লোকদের আজ ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এ দুই পেশায়। আমরা যত দেরি করব, তত বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। অতিসত্ত্বর আমাদের এদিকে মনোযোগী হতে হবে।