প্রশ্ন : শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা ও হায়েযজনিত কারণে রমজানের ভঙ্গ হওয়া দিনগুলোর কাযা রোযা এক নিয়্যতে পালন করা কি জায়েয হবে?সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
না,তা শুদ্ধ নয়। কারণ রমজানের না-রাখা রোযার কাযা পালন সম্পূর্ণ শেষ না করা পর্যন্ত শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা যাবে না।
শাইখ ইবনে উছাইমীন ‘ফাতাওয়াস্ সিয়াম’ (৪৩৮) এ বলেছেন :
“যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে রোযা পালন করে এবং তাঁর উপর রমজানের কাযা রোযা অনাদায় থাকে তবে তাঁর রোযা রাখাটা সহীহ। তবে তিনি যদি এই রোযার মাধ্যমে রমজানের কাযা রোযা পালনেরও নিয়্যত করেন তবে তাঁর দুটি সাওয়াব হবে। আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন রোযা পালনের সাওয়াব ও কাযা রোযা আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রমজানের রোযার সাথে যে নফল রোযার কোন সম্পর্ক নেই। তবে শাওয়ালের ছয় রোযা রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। সে রোযা রমজানের কাযা রোযা আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন :
(من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر)
“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল,এর সাথে শাওয়াল মাসেও ছয়দিন রোযা পালন করল, সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল।”
আর এটি জানা বিষয় যে, যার উপর কাযা রোযা রয়ে গেছে সে রমজান মাসে রোযা পালন করেছে বলে ধরা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কাযা রোযা আদায় সম্পূর্ণ করে।” সমাপ্ত।
প্রশ্ন : আমি মসজিদে বিলম্বে প্রবেশ করেছি। ততক্ষণে আমার ছয় রাকাত তারাবীর সালাত ছুটে গেছে। আমি তারাবীর পর এশার সালাত আদায় করেছি। তারাবীর যে ছয় রাকাত ছুটে গেছে এর কাযা আদায় করা কি আমার উপর ওয়াজিব?
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এশার নামাযের আগে তারাবীর নামায পড়া ঠিক হয়নি। আপনি এশার নামাযের নিয়্যত করে তারাবীর জামাতে যোগ দিতে পারতেন। দুই রাকাত পড়ে ইমাম সালাম ফিরানোর পর আপনি দাঁড়িয়ে গিয়ে এশার বাকি দুই রাকাত সালাত পূর্ণ করে নিতে পারতেন। ক্বিয়ামুল লাইল (তারাবী, বিতির, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি) এশার সালাতের আগে হয় না; বরং পরে হয়। বরং এশার সুন্নত নামাযের পরে হয়। আপনি যা আদায় করেছেন তা সাধারণ নফল হিসেবে বিবেচিত হবে; ক্বিয়ামুল লাইল হিসেবে ধর্তব্য হবে না।
শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:
যদি কোন মুসলিম মসজিদে এসে লোকদেরকে তারাবীর সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং সে ব্যক্তি তখনো এশার সালাত আদায় করেনি সেক্ষেত্রে তিনি কি এশার নামাযের নিয়্যতে তাদের সাথে তারাবীর জামাতে যোগ দিতে পারবে?
উত্তরে তিনি বলেন:
“আলেমগণের দুইটি মতের অধিকতর সঠিক মত অনুসারে তাদের সাথে এশার নিয়্যতে যোগ দিয়ে সালাত আদায় করতে কোন সমস্যা নেই। ইমাম সালাম ফিরালে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর অবশিষ্ট সালাত সম্পন্ন করবেন।” যেহেতু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এ মু’আয ইবনে জাবা’ল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এশার সালাত আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদেরকে এশার সালাত পড়াতেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারটির বিরোধিতা করেননি। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, নফল সালাত আদায়কারী ব্যক্তির পিছনে ফরয সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সালাত আদায় করা জায়েয।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহীহ গ্রন্থে এসেছে যে, কোন এক সালাতুল খওফ (ভয়ের সময়ের সংক্ষেপিত নামায) এর সময় এক গ্রুপকে নিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। আবার দ্বিতীয় গ্রুপকে নিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফিরান। এক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথমবারের আদায়কৃত নামায হচ্ছে- ফরয। কিন্তু দ্বিতীয় বারের নামায তাঁর জন্য নফল, তাঁর পেছনে সালাত আদায়কারীদের জন্য ফরজ। আল্লাহই তাওফিক দাতা।
[মাজমূ ফাতাওয়াস্ শাইখ ইবনে বায (১২/১৮১)]
শাইখ আরও বলেন: “ সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে- রমজানে বা অন্য সময়ে এশার সুন্নত নামাযের পরে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায় করা, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। এক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ এর সালাত বাড়ীতে বা মসজিদে আদায়ে কোন পার্থক্য নেই।”
[মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ শাইখ ইবনে বায (১১/৩৬৮)]
আর আপনার তারাবীর যে সালাত ছুটে গেছে সে ব্যাপারে আপনার অবকাশ রয়েছে। আপনি চাইলে তা আদায় করতে পারেন। আবার চাইলে তা ছেড়েও দিতে পারেন। তারাবীর নামায নফল ইবাদত। এর কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়, যেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কাযা আদায় ওয়াজিব।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ।
আলহামদুলিল্লাহ।
কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়া জায়েয কিনা এ ব্যাপারে ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা জবাব দেন যে, হ্যাঁ; আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে- কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়া জায়েয। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর ব্যাপকতা “তোমরা যে যে কাজের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ কর এর মধ্যে আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উপযুক্ত”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] এছাড়া যেহেতু এর প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ এর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন: যিনি বিদ্বেষন, বশীকরণ বা অন্য কোন যাদুটোনা দ্বারা আক্রান্ত তার চিকিৎসার উপায় কি? মুমিন ব্যক্তি যাদুটোনা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন অথবা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে যাদুটোনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কুরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কিত কোন দুআ-দরুদ বা যিকির-আযকার আছে কি?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
এক: যাদুকর কিভাবে যাদু করেছে সেটা আগে জানতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল নির্দিষ্ট কোন স্থানে অথবা চিরুনির মধ্যে অথবা অন্য কোন স্থানে রেখে দিয়েছে। যদি স্থানটি জানা যায় তাহলে সে জিনিসটি পুড়িয়ে ফেলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা বাতিল হয়ে যায়।
দুই: যদি যাদুকরকে শনাক্ত করা যায় তাহলে তাকে বাধ্য করতে হবে যেন সে যে যাদু করেছে সেটা নষ্ট করে ফেলে। তাকে বলা হবে: তুমি যে তদবির করেছ সেটা নষ্ট কর নতুবা তোমার গর্দান যাবে। সে যাদুর তদবিরটি ধ্বংস করে ফেলার পর মুসলিম শাসক তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিবেন। কারণ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, যাদুকরকে তওবার আহ্বান জানানো ছাড়া হত্যা করা হবে। যেমনটি করেছেন- উমর (রাঃ)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তরবারির আঘাতে তার গর্দান ফেলে দেয়া।” যখন হাফসা (রাঃ) জানতে পারলেন যে, তাঁর এক বাঁদি যাদু করে তখন তাকে হত্যা করা হয়।
তিন: যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে: এর পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে। বিশেষতঃ যে দুআটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।”
(অর্থ- হে আল্লাহ!হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)
জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন সেটাও পড়া যেতে পারে। সে দুআটি হচ্ছে- “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”
(অর্থ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।)
এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন।
আমরা যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে। আলেমগণ এ আমলগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান (রহঃ) ‘ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহিদ’ গ্রন্থের ‘নাশরা অধ্যায়ে’ এ বিষয়গুলো ও আরো কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন।
চার: সাতটি কাঁচা বরই পাতা সংগ্রহ করে পাতাগুলো গুড়া করবে। এরপর গুড়াগুলো পানিতে মিশিয়ে সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। তারপর সে পানি পানি করবে; আর কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে। যদি কোন পুরুষকে স্ত্রী-সহবাস থেকে অক্ষম করে রাখা হয় সেক্ষেত্রেও এ আমলটি উপকারী। সাতটি বরই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। তারপর সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। এরপর সে পানি পান করবে ও কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে।
যাদুগ্রস্ত রোগী ও স্ত্রী সহবাসে অক্ষম করে দেয়া ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বরই পাতার পানিতে যে আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:
১- সূরা ফাতিহা পড়া।
২- আয়াতুল কুরসি তথা সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত পড়া।
اَللّٰهُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا ھُوَ ۚ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَاْخُذُهٗ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ ۭ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ ۭ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗٓ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۭ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَھُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ اِلَّا بِمَا شَاۗءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـــــُٔـــوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ۚ وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
(আয়াতটির অর্থ হচ্ছে-“আল্লাহ্; তিনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা কিছু রয়েছে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে সে সবকিছু তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আকাশসমূহ ও পৃথিবীকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। তিনি সুউচ্চ সুমহান।)
৩- সূরা আরাফের যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সে আয়াতগুলো হচ্ছে-
قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120) قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)
(অর্থ- সে বলল, তুমি যদি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা পেশ কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক। তখন তিনি নিজের লাঠিখানা নিক্ষেপ করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল। ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর। সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত কি? তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিন। যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি? সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা বান নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেল, মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা যাদুর বলে বানিয়েছিল। এভাবে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের প্রতিপালকের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক।)[সূরা আরাফ, আয়াত: ১০৬-১২২]
৪- সূরা ইউনুসের যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
(অর্থ- আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে। তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বললেন: নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক। অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বললেন, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না। আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন স্বীয় নির্দেশে যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়।)[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২]
৫- সূরা ত্বহা এর আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)
(অর্থ-তারা বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমি বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা তারা করেছে যা কিছু সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না।)[সূরা ত্বহা, আয়াত: ৬৫-৬৯]
৬- সূরা কাফিরুন পড়া।
৭- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ৩ বার করে পড়া।
৮- কিছু দোয়া দরুদ পড়া। যেমন-
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।” [৩ বার]
এর সাথে যদি এ দোয়াটিও পড়াও ভাল “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”[৩ বার]
পূর্বোক্ত আয়াত ও দোয়াগুলো যদি সরাসরি যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে পড়ে তার মাথা ও বুকে ফুঁক দেয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাময় হবে।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাযের বিবিধ ফতোয়া ও প্রবন্ধ সংকলন সমগ্র (৮/১৪৪)
প্রশ্ন: বর্তমান যামানায় অনেক নারী পুরুষ মানুষ না থাকলে মহিলাদের সামনে এত সংকীর্ণ পোশাক পরে থাকেন যে তাদের পিঠ ও পেটের বড় একটা অংশ খোলা থাকে। আবার অনেকে ঘরে সন্তানদের সামনে একই ধরনের শর্ট পোশাক পরে থাকেন - এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কি?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন:
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
ইসলামের প্রথম যুগের নারীগণ আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের বরকতে পুতঃপবিত্রতা, লজ্জাশীলতা ও শালীনতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিলেন। সে সময়ে নারীগণ পরিপূর্ণ শরীর আচ্ছাদনকারী পোশাক পরতেন। নারীদের সামনে অথবা মোহরেম পুরুষের মধ্যে অবস্থানকালে তারা খোলামেলা চলতেন বা অনাবৃত থাকতেন বলে জানা যায় না। শতাব্দীর পর শতাব্দী, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, এমনকি নিকট অতীত পর্যন্ত মুসলিম নারীসমাজ এভাবেই চলে এসেছেন। এরপর নানা কারণে অনেক নারীর মধ্যে পোশাক ও চরিত্রের অবক্ষয় শুরু হয়েছে। সে বিষয়ে বিশদ আলোচনার স্থান এটি নয়।
নারীর প্রতি নারীর দৃষ্টি ও মেয়েদের উপর আবশ্যকীয় পোশাকের ব্যাপারে প্রচুর ফতোয়া আসার পরিপ্রেক্ষিতে ফতোয়া কমিটি মুসলিম নারীকুলকে এই মর্মে অবহিত করছে যে, লজ্জার ভূষণে নিজেকে অলংকৃত করা নারীর উপর ফরজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লজ্জাকে ঈমানের শাখা আখ্যায়িত করেছেন। শরিয়তের বিধান ও সামাজিক প্রথাগত লজ্জা হচ্ছে- নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে, শালীনতা বজায় রেখে চলবে এবং এমন চরিত্র লালন করবে যা তাকে ফেতনা ও সন্দেহ-সংশয়ের উৎস থেকে দূরে রাখবে। কুরআনের সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ করে- কোন নারী অপর নারীর সামনে তার দেহের ততটুকু অংশ খোলা রাখতে পারবে যতটুকু মোহরেমদের সামনে খোলা রাখা জায়েয। অর্থাৎ সাধারণতঃ বাড়িঘরে থাকাকালে ও গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে যতটুকু উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ততটুকু। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩১]
এই হলো কুরআনের সুস্পষ্ট দলিল। সুন্নাহও এটাই প্রমাণ করে। এর উপরেই রাসূলের স্ত্রীগণ, সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীগণ ও তাঁদেরকে সঠিকভাবে অনুসরণকারী মুমিন নারীগণ আজ পর্যন্ত চলে আসছেন। আয়াতে যাদের সম্মুখে সৌন্দর্য প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে- সাধারণতঃ ঘরে থাকাকালে, গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে যা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং যা ঢেকে রাখা কঠিন। যেমন- মাথা, হস্তদ্বয়, ঘাড় ইত্যাদি। এর চেয়ে বেশি কিছু উন্মুক্ত রাখার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহর কোন দলিল নেই। বরং এর চেয়ে বেশি উন্মুক্ত করলে নারীর প্রতি নারী আসক্ত হওয়ার দুয়ার খুলে যাবে; বাস্তবে এ ধরনের আসক্তির অস্তিত্ব রয়েছে এবং এ ধরনের আচরণ অন্য নারীদের জন্য খারাপ উদাহরণ তৈরী করবে। উপরন্তু এটি অমুসলিম নারী, বেহায়া ও বেশ্যাদের পোশাক অনুকরণের নামান্তর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে অনুসরণ করে সে তাদের দলভুক্ত।”[ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ] সহিহ মুসলিমে (২০৭৭) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার গায়ে কুসুমের রঙে (লাল রং) রঞ্জিত দুটি কাপড় দেখে বললেন: এগুলো কাফেরদের পোশাক। তুমি এগুলো পরবে না।”
সহিহ মুসলিমে (২১২৮) আরো এসেছে- দুই শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখি নাই। এক শ্রেণীর মানুষ তাদের কাছে গুরুর লেজের মত চাবুক থাকবে যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। আর এমন নারী যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, নিজে নষ্টা, অন্যকেও নষ্টকারিনী। তাদের মাথা উটের বাঁকা কুঁজের মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।” হাদিসে ‘এমন নারী যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ’ এ কথার অর্থ হচ্ছে- কোন নারী এমন কোন পোশাক পরা যে পোশাক দেহকে আচ্ছাদিত করে না। তাই সে যদিও পোশাক পরেছে কিন্তু বাস্তবে সে উলঙ্গই থেকে গেছে। যেমন- এমন স্বচ্ছ পোশাক পরা যাতে তার চামড়া পর্যন্ত দেখা যায়। অথবা এমন পোশাক পরা যা তার শরীরের ভাঁজগুলো পর্যন্ত ফুটিয়ে তোলে। অথবা এত শর্ট-পোশাক পরা যা তার শরীরের সবটুকু অংশ আবৃত করে না।
তাই মুসলিম নারীর কর্তব্য হলো- মুমিনদের মাতৃবর্গ, সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীগণ ও তাঁদেরকে সঠিকভাবে অনুসরণকারী নারীগণের আদর্শকে আঁকড়ে ধরা। পর্দা ও শালীনতা রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। এটি তাদেরকে ফেতনা থেকে দূরে রাখবে, মনের মধ্যে খারাপ কামনার উদ্রেক থেকে হেফাযত করবে।
অনুরূপভাবে মুমিন নারীদের উপর ফরজ হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব পোশাক হারাম করেছেন, যেগুলো অমুসলিম নারীদের পোশাক বা চরিত্রহীন নারীদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সেগুলো পরিহার করা। আল্লাহর আনুগত্য, তাঁর নিকট থেকে সওয়াব পাওয়ার আশা এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে এসব পোশাক বর্জন করতে হবে।
এছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ তার অধীনস্থ নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা। অধীনস্থ নারীদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ, অশ্লীল, সংকীর্ণ ও উত্তেজক পোশাক পরার সুযোগ না দেয়া। তার জেনে রাখা উচিৎ, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক কর্তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করছি তিনি যেন মুসলমানদের অবস্থা সংশোধন করে দেন। তাদের সকলকে যেন সঠিক পথে পরিচালিত করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী ও দুআকবুলকারী। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের উপর আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। সমাপ্ত।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সংকলন (১৭/২৯০)
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সংকলনে (১৭/২৯৭) এসেছে-
সন্তানদের সামনে ততটুকু খোলা যাবে প্রথাগতভাবে যা খোলা রাখা হয়। যেমন- চেহারা, দুই হাতের কব্জি, দুই বাহু, দুই পা ইত্যাদি। সমাপ্ত।
আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন: শুক্রবারে আরাফার দিন হলে সেই হজ্জ ৭ হজ্জের সমান- এ কথা কি ঠিক? আল্লাহ আপনাদেরকে হাজারগুণ প্রতিদান দিন।
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
শুক্রবারে আরাফা হলে সে বছরের হজ্জ সাত হজ্জের সমতুল্য এই মর্মে আমরা কোন হাদিস জানি না। তবে যেটা বর্ণিত আছে সেটা হচ্ছে- ৭০ হজ্জের সমতুল্য বা ৭২ হজ্জের সমতুল্য। কিন্তু কোন অবস্থাতে এ দুটি বর্ণনা সহিহ নয়।
প্রথম উক্তিটি এক হাদিসের মতনে এসেছে তবে সে হাদিসটি বাতিল, সহিহ নয়। আর দ্বিতীয় উক্তিটির কোন সনদ বা মতন আমি পাইনি। এর কোন ভিত্তি নেই।
উদ্ধৃত হাদিসের বক্তব্য হচ্ছে-
“সর্বোত্তম দিন হচ্ছে- যদি শুক্রবারে আরাফা হয়। সে হজ্জ শুক্রবারে হজ্জ নয় এমন ৭০ টি হজ্জের চেয়ে উত্তম।”
ইমামগণ এ হাদিসকে বাতিল ও গয়রে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন:
১. ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন:
পক্ষান্তরে মানুষের মুখে যা চালু আছে- এ হজ্জ ৭২টি হজ্জের সমান – এটি বাতিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেয়ীগণ হতে এর কোন ভিত্তি নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।[যাদুল মাআদ (১/৬৫)]
২. শাইখ আলবানী (রহঃ) ‘সিলসিলা যায়িফা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে বাতিল ও গয়রে সহিহ আখ্যায়িত করার পর বলেন: কিন্তু “হাদিসটি রাযিন ইবনে মুয়াবিয়া ‘তাজরিদুস সিহাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন” ‘হাসিয়াতু ইবনে আবেদ্বীন’ গ্রন্থে (২/৩৪৮) যাইলায়ীর এমন বক্তব্যের ব্যাপারে জেনে রাখুন রাযিনের এ গ্রন্থে সিহাহ সিত্তা (বুখারি, মুসলিম, মুয়াত্তা মালেক, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে তিরমিজি) এর হাদিসগুলো সংকলন করা হয়েছে যে পদ্ধতিতে ইবনুল আছির তাঁর ‘জামেউল উসুল মিন আহাদিছির রাসূল’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। তবে ‘তাজরিদুস সিহাহ’ গ্রন্থে এমন অনেক হাদিস আছে মূল গ্রন্থগুলোতে যে হাদিসের অস্তিত্ব নেই। এবং অন্য আলেমগণ তাঁদের গ্রন্থে তাঁর থেকে যে বর্ণনাগুলো সংকলন করেন সেগুলোর ব্যাপারেও একই কথা যেমন- মুনযিরি তাঁর ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থে। উল্লেখিত হাদিসটি এ ধরনের একটি হাদিস মূল গ্রন্থগুলোতে যে হাদিসটির অস্তিত্ব নেই। এমনকি হাদিসের সুপরিচিত অন্য কোন গ্রন্থেও এ হাদিসের অস্তিত্ব নেই। বরঞ্চ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর ‘যাদ’ (১/১৭) নামক গ্রন্থে এটি বাতিল বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জুমার দিনে আরাফার দিন হওয়ার ১০টি মর্যাদা উল্লেখ করার পর বলেন: পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের মুখে প্রচলিত আছে যে, এটি ৭২টি হজ্জের সমান- এ কথা বাতিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেয়ীগণ হতে এর কোন ভিত্তি নেই।
মুনাবি ‘ফাতহুল কাদির’ (২/২৮) গ্রন্থে অতঃপর ইবনে আবেদনী ‘হাসিয়া’ নামক গ্রন্থে ইবনুল কাইয়্যেম এর মতকে সমর্থন করেছেন।[সমাপ্ত]
‘সিলসিলা যায়িফা’ (১১৯৩) গ্রন্থে বলেন: সাখাবি ‘আল-ফাতাওয়া আল-হাদিসিয়া’ (২/১০৫) গ্রন্থে বলেন: “রাযিন তার সংকলিত গ্রন্থে হাদিসটিকে মারফু হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বর্ণনাকারী সাহাবী কে? অথবা হাদিসটি কে বর্ণনা করেছেন তা উল্লেখ করেননি। আল্লাহই ভাল জানেন।” সমাপ্ত
তিনি সিলসিলা যায়িফা (৩১৪৪) গ্রন্থে আরও বলেন:
হাফেয ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ (৮/২০৪) গ্রন্থে রাযিনের সংকলনের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদিসটি উল্লেখ করার পর বলেন: আমি এ হাদিসের অবস্থা জানি না। কারণ তিনি সাহাবীর নাম উল্লেখ করেননি এবং হাদিসটি কে তাখরিজ (সংকলন) করেছেন সেটাও উল্লেখ করেননি।
হাফেয নাসের উদ্দিন আল-দিমাশকি তার ‘ফাদলু ইয়াওমু আরাফা’ নামক পুস্তিকাতে বলেন: “জুমার দিনে আরাফায় অবস্থান ৭২ টি হজ্জের সমতুল্য” হাদিসটি বাতিল; সহিহ নয়। অনুরূপভাবে যির ইবনে হুবাইশ থেকে বর্ণিত যে, “এই হজ্জ জুমার দিনে হজ্জ নয় এমন ৭০টি হজ্জের চেয়ে উত্তম।” হাদিসটিও সাব্যস্ত নয়। সমাপ্ত
৩. শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
জুমরা দিন হজ্জ হওয়ার ফজিলতের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিছু বর্ণিত আছে কিনা?
উত্তরে তিনি বলেন: জুমার দিন হজ্জ হওয়ার ফজিলত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিছু বর্ণিত নেই। তবে আলেমগণ বলেন: জুমার দিনে হজ্জ হওয়াটা উত্তম।
এক: এই হজ্জ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্জের সাথে মিলে যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লামের আরাফায় অবস্থান জুমার দিনে ছিল।
দুই: জুমার দিনে এমন একটি সময় থাকে যে সময়ে কোন মুসলিম বান্দা যদি দাঁড়িয়ে নামাযরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তবে সেটা কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত।
তিন: আরাফার দিন ঈদ ও জুমার দিনও ঈদ। সুতরাং দুই ঈদের একত্রিত হওয়াটা কল্যাণকর।
পক্ষান্তরে যা মশহুর হয়ে গেছে যে, জুমার দিনে হজ্জ সত্তরটি হজ্জের সমান- গয়রে সহিহ।[আললিকা আশশাহরি (৩৪/১৮)]
৪. স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
কিছু মানুষ বলে: জুমাবার যদি হজ্জ হয় যেমন এ বছর হচ্ছে সেটা ৭টি হজ্জ আদায় করার সমান- এর পক্ষে কি সুন্নাহর কোন দলিল আছে?
তাঁর উত্তরে বলেন: এ বিষয়ে কোন সহিহ দলিল নেই। বরং কিছু মানুষ দাবী করছে, এটি ৭০টি হজ্জের সমান বা ৭২টি হজ্জের সমান- এটাও সহিহ নয়।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/২১০ ও ২১১)]
আরও দেখুন: ফাতহুল বারী (৮/২৭১) ও তুহফাতুল আহওয়াজি (৪/২৭)।
দুই: এ কথাটি বিস্তার লাভ করার কারণ বোধহয় এই যে, এটি হানাফি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের কিতাবগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হানাফিরা বলেন: জুমার দিনে হজ্জ হওয়া ৭০টি হজ্জের সমতুল্য। এমন জুমার দিনে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কোন মাধ্যম ছাড়া ক্ষমা করে দেয়া হয়।
তাঁরা আরও বলেন: জুমার দিনে হজ্জ হলে সেটি সবচেয়ে উত্তম দিন। এটি সাধারণ ৭০ টি হজ্জের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ।[রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার (২/৬২১)]
শাফেয়িরা বলেন:
বর্ণিত আছে- জুমার দিন আরাফা হলে আল্লাহ তাআলা সকল আরাফাবাসীকে মাফ করে দেন। অর্থাৎ মাধ্যম ছাড়া মাফ করে দেন। আর জুমা ছাড়া অন্যদিন হজ্জ হলে মাধ্যমে মাফ করেন। অর্থাৎ নেককারদের উসিলায় বদকারদের মাফ করে দেন।[মুগনিল মুহতাজ (১/৪৯৭)]
তিন: হাদিসটি বাতিল হওয়ায় জুমার দিনে আরাফা হওয়ার যে, মর্যাদা নেই এমনটি নয়। বরং ইবনুল কাইয়্যেম ১০টি মর্যাদা উল্লেখ করেছেন। আমরা এখানে সেগুলো উল্লেখ করব:
তিনি বলেন:
সঠিক মতানুযায়ী জুমার দিন সপ্তাহের সবচেয়ে উত্তম দিন। আরাফার দিন ও কুরবানীর দিন বছরের সবচেয়ে উত্তম দিন। অনুরূপভাবে লাইলাতুল কদর ও জুমার রাত বছরের সবচেয়ে উত্তম রাত। এ কারণে জুমার দিন আরাফায় অবস্থানের অনেক মর্যাদা রয়েছে যেমন:
এক. উত্তম দুটি দিন একত্রিত হওয়া
দুই. এটি এমন দিন যে দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময়ে দুআ কবুল হওয়া সুনিশ্চিত। অধিকাংশ আলেমের মতে সে সময় আসরের পর। আর এ সময়ে আরাফাবাসী দুআতে ও রোনাজারিতে মশগুল থাকেন।
তিন. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরাফায় অবস্থানের সাথে হুবহু মিলে যাওয়া।
চার. পৃথিবীর সর্ব প্রান্তের মুসলমান খোতবা শুনার জন্য ও জুমার নামায আদায় করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়া। একই সময়ে আরাফাবাসী আরাফাতে একত্রিত হওয়া। এভাবে সমস্ত মুসলমান নিজ নিজ মসজিদে একত্রিত হওয়া ও আরাফাবাসীর দুআর ও রোনাজারির জন্য একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে এমন কিছু অর্জিত হয় যা অন্য মাধ্যমে অর্জিত হয় না।
পাঁচ. জুমার দিন ঈদের দিন। আর আরাফার দিন আরাফাবাসীর জন্য ঈদতুল্য। এজন্য আরাফাবাসীর জন্য সেদিন রোজা রাখা মাকরুহ।...
আমাদের শাইখ (অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়া) বলেন: আরাফার দিন আরাফাবাসীর জন্য ঈদ। যেহেতু তারা এ দিনে সবাই একত্রিত হন। পক্ষান্তরে অন্য মুসলমানেরা কুরবানীর দিন মিলিত হন। এ কারণে আরাফার দিন তাদের জন্য ঈদ। মূল কথা হচ্ছে- যদি আরাফার দিন ও জুমার দিনে পড়ে তাহলে দুই ঈদ একত্রিত হয়।
ছয়. এ দিনে মুমিন বান্দাদের জন্য আল্লাহর দেয়া শরিয়ত পরিপূর্ণ করা ও নেয়ামত পূর্ণ করার দিন। সহিহ বুখারিতে তারেক বিন শিহাব হতে বর্ণিত তিনি বলেন: এক ইহুদি উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর নিকট এসে বলল: হে আমীরুল মুমেনীন, আপনারা আপনাদের ধর্মগ্রন্থে এমন একটি আয়াত পড়েন যদি সে আয়াতটি আমাদের ইহুদিদের উপর নাযিল হত আর আমরা জানতাম কোনদিন এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে তাহলে আমরা সেদিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তিনি বললেন: কোন আয়াতটি? ইহুদি বলল:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
(অর্থ- আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।)[সূরা মায়েদা, আয়াত:০৩] তখন উমর (রাঃ) বলেন: নিশ্চয় আমি জানি যেদিন ও যে স্থানে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে। এটি আরাফার ময়দানে শুক্রবারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে। তখন আমরা তাঁর সাথে আরাফার ময়দানে অবস্থান করছিলাম।
সাত. এটি কেয়ামতের দিনের মহা সম্মেলনের সাথে মিলযুক্ত। কারণ কেয়ামত শুক্রবারে সংঘটিত হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন। এদিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং এ দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যদি কোন মুসলিম বান্দা সে সময়ে আল্লাহর কাছে ভাল কিছু চাইতে পারে আল্লাহ তাকে তা দান করেন।”
আট. জুমার দিনে ও রাতে মুসলমানদের আমল অন্য দিনের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এমনকি পাপীরাও জুমার দিন ও রাতকে সম্মান করে থাকে এবং মনে করে থাকে এ দিনে যে ব্যক্তি গুনাহ করার স্পর্ধা দেখায় আল্লাহ তাকে অবিলম্বে শাস্তি দেন; দেরি করেন না। এটি তাদের নিকট স্বতঃসিদ্ধ। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা তা জেনেছে। তা এ দিনের মহান মর্যাদা, সম্মান ও আল্লাহর নিকট মনোনীত দিন হওয়ার কারণে। কোন সন্দেহ নেই এ দিনে আরাফায় অবস্থান নিতে পারার মর্যাদা অনেক বেশি।
নয়. জুমার দিন জান্নাতে কিছু বাড়তি পাওয়ার দিন...। এ দিন ও আরাফার দিন যদি মিলিত হয় তাহলে এর বাড়তি মর্যাদা থাকাটাই স্বাভাবিবক।
দশ. আরাফার দিন বিকেল বেলা আল্লাহ তাআলা আরাফাবাসীর নিকটবর্তী হন এবং ফেরেশতাদের কাছে তাদেরকে নিয়ে গর্ব করেন...
এ কারণগুলো এবং এগুলো ছাড়াও আর কারণ আছে যা জুমার দিনে আরাফায় অবস্থানকে বিশেষত্ব দিচ্ছে।
কিন্তু মানুষের মুখে মুখে যা চালু আছে যে, জুমার দিনের হজ্জ ৭২টি হজ্জের সমান এটি বাতিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অথবা কোন সাহাবী কিংবা কোন তাবেয়ী থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনার ভিত্তি নেই।
যাদুল মাআদ (১/৬০-৬৫) থেকে সংক্ষেপিত।
আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন: সম্পদের যাকাত কি নিসাব পরিমাণ হওয়া থেকে হিসাব করা হবে? নাকি বছর পূর্তি থেকে হিসাব করা হবে? যদি নিসাব পরিমাণ হওয়ার সময় সম্পদের পরিমাণ হয় ১০,০০০ এবং বছর পূর্তির পর হয় ৫০,০০০ তাহলে কোন অংকটির উপর যাকাত হিসাব করতে হবে?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
নগদ অর্থের যাকাত ফরজ হয় দুইটি কারণে
১. নগদ অর্থ নিসাব পরিমাণ হওয়া।
২. নিসাব পরিমাণ অর্থের বছর পূর্তি হওয়া।
অতএব, সঞ্চিত অর্থ যদি নিসাবের চেয়ে কম হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না।
যদি সঞ্চিত অর্থ নিসাব পরিমাণ হয় এবং নিসাব পরিমাণ অর্থের এক বছর পূর্তি হয় অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ এক চন্দ্র বছর (হিজরী সাল) অতিবাহিত হয় তখন যাকাত ফরজ হবে। নিসাবের পরিমাণ হচ্ছে- ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ ও ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। মোট অর্থের ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫%) যাকাত দেয়া ফরজ।
দুই:
যদি কারো কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকে; ধরে নিই সেটা ১০০০; আর বছর শেষে তার অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০০ তে; তাহলে সে কিভাবে যাকাত আদায় করবে? এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন:
১- এই অতিরিক্ত অর্থ যদি মূল অর্থের মাধ্যমে অর্জিত হয় যেমন- মূল এক হাজার যদি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে লাভ হয় চার হাজার তাহলে বছর শেষে সর্বমোট অর্থের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা বিধি হচ্ছে- লাভ পুঁজির বিধানের অনুগত।
২- যদি এই অর্থ মূল অর্থের মাধ্যমে অর্জিত না হয়; অন্য কোন মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে যেমন- উত্তরাধিকার, উপঢৌকন, কোন কিছু বিক্রি ইত্যাদি তাহলে এ সম্পদের আলাদা বছর হিসাব করা হবে। যেদিন এই অতিরিক্ত সম্পদ মালিকানায় এসেছে সেদিন থেকে বছর গণনা শুরু হবে। আর যদি মূল এক হাজারের সাথে যাকাত আদায় করে দিতে চায় সেটাও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি এ অতিরিক্ত অর্থের যাকাত ফরজ হওয়ার আগেই অগ্রিম আদায় করে দিলেন। এতেও কোন অসুবিধা নেই।
৩- কারো ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত অর্থ ক্রমান্বয়ে অর্জিত হয়ে থাকতে পারে। যেমন আপনি মাসিক বেতন থেকে কিছু কিছু সঞ্চয় করলেন। যেমন একমাসে ৫০০ সঞ্চয় করলেন, অন্য মাসে ১০০০ সঞ্চয় করলেন, এভাবে বছর শেষে ৪০০০ হল। তাহলে আপনার এই সুযোগ আছে যে, মূল এক হাজারের যাকাত আদায়ের সময় অতিরিক্ত অর্জিত অর্থের যাকাতও আদায় করে দিবেন। সেক্ষেত্রে আপনি অতিরিক্ত অর্জিত অর্থের যাকাত নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আদায় করে দিলেন। আর ইচ্ছা করলে আপনি প্রত্যেকবার অর্জিত সম্পদের আলাদা বছর হিসাব করতে পারেন। তবে এভাবে হিসাব রাখাটা একটু কঠিন। কারণ এক্ষেত্রে আপনাকে এক বছরে কয়েকবার যাকাত আদায় করতে হবে।
আরো বিস্তারিত জানতে 50801 নং ফতোয়া পড়ুন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
এক:
মূলতঃ কাফেরের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয; এতে করে তার সাথে সখ্যতা তৈরি হয়, তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা যায়। ঠিক যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুকাওকাস ও অন্যান্য কিছু কিছু কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন।
ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: “মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ শীর্ষক পরিচ্ছেদ”। বুখারি (রহঃ) বলেন: আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: ইব্রাহিম (আঃ) সারাকে নিয়ে সফরে বের হলেন। তিনি এমন একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন যেখানে ছিল একজন বাদশাহ বা প্রতাপশালী। তিনি বললেন: সারাকে উপঢৌকন হিসেবে ‘হাজেরা’ কে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে (রোস্টকরা) বিষযুক্ত বকরী হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল। আবু হুমাইদ বলেন: আইলার বাদশাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটি সাদা রঙের খচ্চর ও একটি চাদর উপহার পাঠিয়েছিল এবং তাঁর নিকট তাদের কবিতার ছন্দ ব্যবহার করে চিঠি লিখেছিল। এক ইহুদি নারী কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষমাখা ছাগল হাদিয়া দেওয়ার ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
দুই:
হৃদ্যতা তৈরির জন্য ও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে কাফেরকে বা মুশরিককে উপহার দেয়া জায়েয। বিশেষতঃ যদি প্রতিবেশী হয় অথবা আত্মীয় হয়। উমর (রাঃ) মক্কায় বসবাসকারী তাঁর মুশরিক ভাইকে একটি হুল্লাহ (এক ধরনের পোশাক) উপহার দিয়েছিলেন।”[সহিহ বুখারি, ২৬১৯]
তবে কাফেরদের কোন উৎসবের দিন তাদেরকে উপহার দেয়া যাবে না। কেননা এটা এই বাতিল দিবসকে স্বীকৃতি দেয়া ও সেটা উদযাপনের পর্যায়ে পড়ে। আর তা যদি এমন হাদিয়া হয় যা দিবস উদযাপনের কাজে লাগে যেমন- খাবার বা মোমবাতি ইত্যাদি তাহলে সেটা আরও বেশি জঘন্য হারাম। কোন কোন আলেমের মতে- সেটা কুফরি।
যাইলায়ী তাঁর ‘তাবইনুল হাকায়েক’ গ্রন্থ (৬/২২৮) এ বলেন: “নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। অর্থাৎ এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর”। আবুল আহওয়াছ আল-কাবির (রহঃ) বলেন: “যদি কোন ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর নওরোজের দিন এসে কতিপয় মুশরিককে কিছু উপহার দেয় এবং এ উপহারের মাধ্যমে এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে”। ‘আল-জামে আল-আসগার’ গ্রন্থকার বলেন: “নওরোজের দিন যদি অপর কোন মুসলিমকে কোন একটা হাদিয়া দেয়; কিন্তু হাদিয়ার উদ্দেশ্য এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না হয় (বর্তমানে অনেক মানুষ যা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে) তাহলে কাফের হবে না। তবে বিশেষভাবে সে দিনে এটা না করাটাই বাঞ্ছনীয়। সে দিনের আগে বা পরে করতে পারে। যাতে করে সে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য না আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” আল-জামে আল-আসগার গ্রন্থে বলেন: “যে ব্যক্তি নওরোজের দিন এমন কিছু খরিদ করল যা সে পূর্বে খরিদ করত না, এর মাধ্যমে সে যদি ঐ দিনকে সম্মান করতে চায় তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি সে পানাহার ও নেয়ামত ভোগ করতে চায় তাহলে কাফের হবে না”। সমাপ্ত
‘আল-তাজ ওয়াল ইকলিল’ গ্রন্থে বলেন: কোন খ্রিস্টানকে তার ঈদ বা উৎসবের দিন উপলক্ষে উপহার দেয়াকে ইবনুল কাসেম মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলেছেন। অনুরূপভাবে কোন ইহুদীকে তার উৎসব উদযাপন উপলক্ষে খেজুর পাতা দেয়াও মাকরূহ। সমাপ্ত।
হাম্বলি মাযহাবের ফিকাহর গ্রন্থ ‘আল-ইকনা’ তে বলা হয়েছে- “ইহুদি-খ্রিস্টানদের উৎসবে যোগদান করা, সেই দিন উপলক্ষে বেচাবিক্রি করা ও উপহার বিনিময় করা হারাম”। সমাপ্ত।
বরং এ দিন উপলক্ষে কোন মুসলমানকে হাদিয়া দেয়াও জায়েয নয়। পূর্বোল্লেখিত হানাফি মাযহাবের বক্তব্যে এ কথা এসেছে। শাইখুল ইসলাম (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে এ উৎসবগুলোর মৌসুমে এমন কোন উপহার দেয়, এ উৎসব ছাড়া স্বভাবতঃ যে উপহার দেয়া হয় না— সে উপহার গ্রহণ করা যাবে না। বিশেষতঃ সে উপঢৌকনের মাঝে যদি তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে এমন কিছু থাকে। যেমন- যীশুর জন্মদিবস উপলক্ষে মোমবাতি বা এ জাতীয় কিছু উপহার দেয়া অথবা তাদের রোজার শেষ বৃহস্পতিবারে ডিম, দুধ ও ছাগল উপহার দেয়া। একইভাবে এ উৎসবগুলোর মৌসুমে এ উৎসবগুলোকে উপলক্ষ করে কোন মুসলমানকে উপহার দেয়া যাবে না। বিশেষতঃ উপহারটি যদি তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে এমন কিছু হয়; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি।[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২৭৭]
তিন:
আর কাফেরদের উৎসবের দিন তাদের দেয়া উপহার গ্রহণ করতে দোষের কিছু নেই। উপহার গ্রহণ করা— তাদের উৎসবে যোগদান বা এতে স্বীকৃতি প্রদানের পর্যায়ে পড়ে না। বরং ভাল ব্যবহার, সখ্যতা তৈরী, ইসলামের দিকে দাওয়াতের উদ্দেশ্য নিয়ে সে উপহার গ্রহণ করা যাবে। যে কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না আল্লাহ তাআলা সে কাফেরের সাথে ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য আচরণ করা বৈধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।”[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত:০৮]
কিন্তু ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য আচরণের অর্থ এ নয় যে, তাদের সাথে অন্তরঙ্গতা ও ভালবাসা তৈরী হবে। কারণ কাফেরের সাথে অন্তরঙ্গতা ও ভালবাসা করা জায়েয নয়। তাকে বন্ধু ও সাথী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য দিয়ে। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”[সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ২২] তিনি আরও বলেন: “মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে।”[সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ১] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বের হয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১১৮] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না।”[সূরা হুদ, আয়াত: ১১৩] তিনি আরও বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” এগুলো ছাড়াও কাফেরের সাথে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আরও অনেক দলিল রয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “কাফেরের উৎসবের দিন তার দেয়া হাদিয়া গ্রহণের ব্যাপারে আমরা ইতিপূর্বে আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছি যে, একবার তাঁর কাছে নওরোজের হাদিয়া এল এবং তিনি সেটা গ্রহণ করলেন।
ইবনে আবু শাইবা বর্ণনা করেন যে, একবার এক মহিলা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, কিছু অগ্নিপূজক মহিলা আমাদের শিশুদেরকে দুধপান করায়। তাদের ঈদ-উৎসবের সময় তারা আমাদেরকে হাদিয়া দেয়। আয়েশা (রাঃ) বললেন: উৎসব উপলক্ষে যা কিছু জবাই করা হয়ে তা খাবে না; কিন্তু তাদের গাছের ফল খেতে পার। আবু বারাযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: কিছু অগ্নিপূজক তাঁর প্রতিবেশী ছিল। তারা নওরোজ ও মেহেরযান উপলক্ষে তাকে হাদিয়া দিত। তখন তিনি তাঁর পরিবারকে বলতেন: ফলজাতীয় জিনিসগুলো খাও; আর অন্যগুলো ফেলে দাও।
এ দলিলগুলো প্রমাণ করে যে, কাফেরদের উৎসবের সাথে তাদের হাদিয়া গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বরং সব সময়ের বিধান এক। যেহেতু হাদিয়া গ্রহণের মধ্যে তাদের ধর্মীয় নিদর্শনকে সহযোগিতা করার কিছু নেই।
এরপর তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, আহলে কিতাবের জবাইকৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ হলেও যা উৎসবের জন্য জবাই করা হয়েছে তা খাওয়া জায়েয নয়। তিনি বলেন: আহলে কিতাবদের উৎসবের সেসব খাবার খাওয়া যাবে যেগুলো কিনে আনা হয়েছে, অথবা হাদিয়া হিসেবে এসেছে। তবে উৎসব উপলক্ষে জবাইকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া যাবে না। আর অগ্নিপূজকদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়ার বিধান তো সবার জানা আছে— এটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) তাদের ঈদ উপলক্ষ্যে যে প্রাণী জবাই করে অথবা গায়রুল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে তারা যে প্রাণী জবাই করে যেমন- ঈসা (আঃ) বা শুক্রতারার নৈকট্য হাছিলের জন্য (ঠিক মুসলমানেরা যেভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য জবাই করে) সেগুলোর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ থেকে দুইটি অভিমত পাওয়া যায়। তাঁর থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে- এগুলো খাওয়া জায়েয হবে না; যদিও জবাই এর সময় গায়রুল্লাহর নাম না নেয়া হয়। এই মাংস খাওয়া হারাম হওয়ার হুকুমটি আয়েশা (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে...।[ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২৫১]
সারকথা হচ্ছে- আপনার খ্রিস্টান প্রতিবেশিনীর দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে; তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে। শর্তগুলো হচ্ছে-
এক. হাদিয়াটা জবাইকৃত প্রাণীর মাংস হতে পারবে না; যে প্রাণী তাদের ঈদ-উৎসব উপলক্ষে জবাই করা হয়েছে।
দুই. হাদিয়া এমন কিছু হতে পারবে না যা তাদের উৎসব উদযাপনের সাথে সদৃশতা তৈরী করে। যেমন- মোমবাতি, ডিম, খেজুরের ডাল ইত্যাদি।
তিন. নিজের সন্তানদেরকে ওয়ালা ওয়াল বারা (শত্রুতা ও মিত্রতা) এর আকিদা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাতে তারা এই উৎসবের প্রতি দুর্বল না হয় অথবা এই উপহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে।
চার. এই উপঢৌকন গ্রহণের উদ্দেশ্য হবে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরী করা, তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া; তাদের প্রতি ভালবাসা বা হৃদ্যতা থেকে নয়।
যদি এমন জিনিস দিয়ে হাদিয়া আসে যা গ্রহণ করা জায়েয নয় তাহলে হাদিয়া গ্রহণ না করার কারণ উল্লেখ করে সেটা প্রত্যাহার করতে হবে। যেমন- আপনি বলতে পারে; আমরা আপনার হাদিয়াটি নিতে পারছি না; কারণ এটি আপনাদের উৎসব উপলক্ষে জবাই করা হয়েছে। আমাদের জন্য এটি খাওয়া জায়েয নয়। অথবা এই হাদিয়াগুলো তারা গ্রহণ করতে পারেন যারা এ উৎসব পালনে অংশ গ্রহণ করেন; আমরা তো আপনাদের এ উৎসব পালন করি না; যেহেতু আমাদের ধর্মে এ উৎসব অনুমোদিত নয়; এ উৎসবের মধ্যে এমন কিছু বিশ্বাস আছে যা আমাদের ধর্মমতে সঠিক নয়— এ ধরনের কোন কথা। এ কথাগুলো তাদেরকে দাওয়াত দেয়ার একটা গ্রাউন্ড তৈরী করবে এবং তারা যে কুফরের মধ্যে রয়েছে এর ভয়াবহতা তুলে ধরবে।
মুসলমানের উচিৎ তার ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করা। ধর্মীয় বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা। লজ্জাবোধ করে অথবা সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য না দেখানো। বরং আল্লাহকে লজ্জাবোধ করা অধিক যুক্তিযুক্ত।
আরও জানতে 13642 ও 947 নং প্রশ্ন দেখুন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
আমার কাছে যা অগ্রগণ্য তা হচ্ছে- যে দিবসগুলো বা সমাবেশগুলো প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে সেগুলো বিদআতী ঈদ বা নবপ্রচলিত উৎসব। এগুলো ইসলামি শরিয়তে নব-সংযোজন; যেগুলোর পক্ষে আল্লাহ তাআলা কোন দলিল-প্রমাণ নাযিল করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা নব-প্রচলিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ প্রতিটি অভিনব বিষয়— বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হচ্ছে— ভ্রান্তি।” [মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “প্রতিটি কওমের ঈদ (উৎসব) আছে। এটি আমাদের ঈদ।”[সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম]
ইবনে তাইমিয়া প্রণীত “ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম লি মুখালিফাতি আসহাবিল জাহিম” নামক গ্রন্থে ইসলামী শরিয়তে ভিত্তি নেই এমন নবপ্রচলিত ঈদ-উৎসব পালনের নিন্দাসূচক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এ ধরনের বিদআতের প্রচলনে দ্বীনের কি ক্ষতি হয় তা সকল মানুষ জানে না; বরং অধিকাংশ মানুষ-ই জানে না। বিশেষতঃ এ ধরনের বিদআত যদি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ইবাদত শ্রেণীয় হয়। শুধু প্রজ্ঞাবান আলেমগণ এ ধরণের বিদআতের ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করতে পারেন।
যদিও মানুষ ভাল দিক বা ক্ষতিকর দিক বুঝতে না পারে তদুপরি তাদের কর্তব্য হচ্ছে— কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা।
যে ব্যক্তি বিশেষ কোনদিবসে বিশেষ রোজা, নামায, ভোজ, সাজ-সজ্জা, বিশেষ খরচ ইত্যাদি আমলের প্রচলন করে তার এ আমলের সাথে অবশ্যই অন্তরের বিশ্বাস জড়িত। অর্থাৎ এ দিন অন্য কোন দিনের চেয়ে উত্তম— এ বিশ্বাস। যদি সে ব্যক্তির অন্তরে অথবা তার অনুসারীর অন্তরে এ বিশ্বাস না থাকত তাহলে এ বিশেষ দিনে বা রাতে বিশেষ ইবাদত করার জন্য অন্তর উদ্যোগী হত না। অথচ যথাযোগ্য দলিল ছাড়া কোন বিধানকে প্রাধান্য দেয়া জায়েয নেই।
স্থান, কাল ও গণজমায়েত এ তিনটিকেই ঈদ বলা হয়। এ তিনটি থেকে আরো অনেক বিদআত উৎসারিত হয়। যেমন- তিন প্রকার সময়ের মধ্যে স্থানকেন্দ্রিক ও কর্মকেন্দ্রিক কিছু বিদআতী উৎসব অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্রকার: যেদিনকে মূলতই ইসলামী শরিয়ত শ্রেষ্ঠত্ব দেয়নি। এ দিনের ব্যাপারে সলফে সালেহীনগণের নিকট কোন আলোচনা নেই। এ দিনকে বিশেষত্ব দেয়ার মত অনিবার্য কিছু নেই।
দ্বিতীয় প্রকার: যে দিনে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেছে; যেরূপ ঘটনা অন্য দিনেও ঘটতে পারে। তবে তা এ দিনকে বিশেষ মৌসুম হিসেবে সাব্যস্ত করে না এবং সলফে সালেহীন এ দিনকে বিশেষত্ব দিতেন না। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশেষত্ব দিবে সে যেন খ্রিস্টানদের অনুকরণ করল; যারা ঈসা (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত যে কোন দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করত অথবা ইহুদীদের অনুকরণ করল। ঈদ পালন- ইসলামি শরিয়তের একটি বিধান। সুতরাং আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন সেটাই পালন করতে হবে; ইসলামের বাইরে কিছু প্রচলন করা যাবে না।
অনুরূপভাবে খ্রিস্টানগণ কর্তৃক ঈসা (আঃ) এর জন্মদিবস পালনের অনুকরণে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান দেখাতে গিয়ে কিছু কিছু লোক যা কিছুর প্রচলন করেছে সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি। অথচ যদি এটা নেক আমল হতো তাহলে তাঁরা সেটা না করার কোন কারণ নেই।
তৃতীয় প্রকার: ইসলামি শরিয়তে যে দিনগুলো সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত যেমন- আশুরার দিন, আরাফার দিন, দুই ঈদের দিন ইত্যাদি আত্মপ্রবৃত্তির অনুসারীগণ কর্তৃক এ দিনগুলোতে অভিনব কিছু আমল চালু করা হয় এবং এ বিশ্বাস করা হয় যে, এ আমলগুলো পালন করা মর্যাদাপূর্ণ; অথচ এগুলো মন্দ ও অননুমোদিত। যেমন- রাফেজি সম্প্রদায়ের আশুরার দিন পানি পান না করা ও শোক প্রকাশ করা ইত্যাদি। এগুলো নব-উদ্ভাবিত— আল্লাহ এসবের বিধান জারী করেননি, আল্লাহর রাসূল জারী করেননি, সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি, এমনকি রাসূলের পরিবারের কেউও করেননি। অপরদিকে শরিয়তের অনুমোদনের বাইরে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে, প্রতি বছরে ধারাবাহিকভাবে সমবেত হওয়া— পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমার নামাজ, ঈদের নামায ও হজ্জের জন্য সমবেত হওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই এটি নবপ্রচলিত বিদআত।
এ বিষয়ে মৌলিক কথা হলো— সময় ঘুরলে শরিয়তের যে ইবাদতগুলো পুনঃপুনঃ আদায় করতে হয় আল্লাহ তাআলা নিজেই বান্দার জন্য সেগুলোর বিধান দিয়ে দিয়েছেন; সেগুলোই বান্দার জন্য যথেষ্ট। এরপর যদি নতুন কোন সমাবেশ চালু করা হয় এটা বিধান আরোপের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার তুল্য। এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কিছু অংশ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষ যদি অনিয়মিতভাবে কোন আমল করে সেটা এ পর্যায়ে পড়বে না।[সংক্ষেপে সমাপ্ত]
এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়: কোন মুসলমানের জন্য এ দিবসগুলো উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করা জায়েয নয়, যে দিবসগুলো প্রতিবছর পালন করা হয়, প্রতিবছর ঘুরে আসে। যেহেতু এগুলো মুসলমানদের ঈদ-উৎসবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা তুলে ধরেছি। আর যদি পুনঃপুনঃ পালিত না হয় এবং মুসলমানগণ এ অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দিতে পারে তাহলে ইনশাল্লাহ এতে কোন অসুবিধা নেই।
আল্লাহই ভাল জানেন।
মাসায়েল ওয়া রাসায়েল— মুহাম্মদ আল-হুমুদ আল-নজদি, পৃষ্ঠা-৩১
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
আপনি আমাদের সাথে যেমন স্পষ্টবাদী হয়েছেন আমরাও আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব। আপনি কি আমাদের কাছে এজন্য মেইল করেছেন যে, আমরা আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিব?! আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়ার অধিকার তো আমাদের নেই। নাকি আপনি চাচ্ছেন যে, আমরা আপনাকে ব্যভিচার বৈধ বলে ফতোয়া দিব?! কোন মুসলমানের পক্ষে এ ফতোয়া দেয়া সম্ভব নয়। যেনা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই যেনার শাস্তি বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা নির্ধারণ করেছেন এবং এ গুনাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিধান আরোপ করেছেন। যেমন- যেনাকারী তওবা না করা পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে দেয়া হবে না। এ গুনার কারণে আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে শাস্তির কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের একটি চুল্লিতে ব্যভিচারী নর-নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় একত্রিত করবেন। সেখানে জাহান্নামের আগুন তাদেরকে পোড়ানো হবে। তাদের বিকট শব্দ শুনা যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি যেনা করতে চায় আমাদের কাছে তার জন্য অনুমতি নেই। আমাদের কাছে যেনা বৈধ মর্মে কোন ফতোয়া নেই।
দুই:
আগেই বলেছি আমরা আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব, আপনি যেমন আমাদের সাথে স্পষ্টবাদী হয়েছেন। ধরুন, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন –আল্লাহ না করুন- আপনার বোন বা মা যদি সে অবস্থার মধ্যে পড়ে এবং আপনি যা করতে চাচ্ছেন তারাও তা করতে চায় তখন তাদের এই চাওয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কি হবে?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি- আপনি যা করতে চাচ্ছেন সেটা কত বড় জঘন্য।
আচ্ছা এ প্রসঙ্গ বাদ দিন; অন্য প্রসঙ্গে আসুন। এ বিশ্বে এমন কত যুবক আছে যারা যেনা করতে চাচ্ছে। হতে পারে তাদের অনেকে – আপনার মত- সম্ভ্রান্ত। হতে পারে সেও এমন কঠিন ও কষ্টকর অবস্থা সইতে পারছে না। সেও যেনা করতে চাচ্ছে এবং সে যে মহিলার সাথে যেনা করতে চাচ্ছে – আল্লাহ না করুন- সে আপনার বোন অথবা আপনার মা। আপনি তখন কি বলবেন?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। জেনে রাখুন, আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা আপনার বোন ও মায়ের জন্যেও যেনা করার অনুমতি দিলাম। আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা মানুষকে আপনার বোন ও মায়ের সাথে যেনা করার অনুমতি দিলাম। ইসলামের মত পবিত্র শরিয়তে যা হওয়া অসম্ভব। আপনার বোন ও মায়ের ইজ্জত ইসলামী শরিয়তের মাধ্যমে সুরক্ষিত। আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের মাধ্যমে সংরক্ষিত। যে ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে এর সাজা পাবে। আপনি দেখলেন তো ইসলামী শরিয়া কিভাবে আপনার পরিবারের ইজ্জত-আব্রুর হেফাযত নিশ্চিত করেছে। সুতরাং আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে, আমরা আপনাকে অন্য নারীদের ইজ্জত কলঙ্কিত করার অনুমতি দিব এবং বলব, ঠিক আছে যেনা করুন; অসুবিধা নেই!!
আমরা আপনার সামনে যে উদাহরণটি তুলে ধরলাম সেটি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বোত্তম ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানেন, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন। যখন এক যুবক এসে তাঁর কাছে যেনা করার অনুমতি চাইল তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি তোমরা মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে? তুমি সেটা তোমার বোনের জন্য পছন্দ করবে? আমরা আশা করব, আপনি সচেতনভাবে অনুধাবন করবেন যে, আমরা যে উদাহরণটি পেশ করেছি এর মাধ্যমে শুধু আপনি যা করতে চাচ্ছেন সে বিষয়টির কদর্যতা তুলে ধরা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ ইচ্ছা হলেই মানুষের ইজ্জত হরণ করা বৈধ নয়। বরং তা পবিত্র শরিয়তের মাধ্যমে সংরক্ষিত। পূর্বোক্ত হাদিসটির পরিপূর্ণ ভাষ্য ও এ হাদিস বিষয়ক আরো কিছু সুন্দর কথা 52467 নং প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন:
প্রিয় ভাই, আপনি কি ভাবছেন যেনা করার মাধ্যমে যৌন উপভোগ করে আপনি প্রশান্তি পাবেন – আল্লাহ আপনাকে এ গুনাহ দূরে রাখুন ও পবিত্র রাখুন?! যদি আপনি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে মহা ভুলের মধ্যে আছেন। বরং যেনাতে লিপ্ত হওয়া মানে দেহ, মন ও দ্বীনদারির উপর অতি তিক্ত কিছু পরিণামের দুয়ার খোলা। যেনা হচ্ছে- দ্বীনদারির হরাস, তাকওয়ার বিলুপ্তি, ব্যক্তিত্বের বিচ্যুতি, আত্মসম্মানের স্খলন, খেয়ানত, লজ্জাশীলতার হরাস, আল্লাহর নজরদারির অনুভূতিহীনতা, হারামের ব্যাপারে বেপরোয়া ইত্যাদি মন্দের মূল। যেনা অবধারিত করে দেয়: আল্লাহর অসন্তুষ্টি, চেহারায় কালি পড়া ও নিষ্প্রভ হওয়া, অন্তর মরে যাওয়া ও নূর চলে যাওয়া, হৃদয় সংকীর্ণ হওয়া ইত্যাদি। আমরা 20983 নং প্রশ্নের জবাবে এ পরিণামগুলো পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরেছি। সে উত্তরটি পড়তে পারেন। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এর ‘রওদাতুল মুহিব্বীন’ কিতাব থেকে আমরা এ বিষয়গুলো উদ্ধৃত করেছি।
চার:
প্রিয় ভাই, আসুন আপনাকে জিজ্ঞেস করি- আপনি নামায রোজা কেন করেন? যদি তা এ কারণে করে থাকেন- এটাই আপনার প্রতি ধারণা- যে, আল্লাহ আপনার উপর নামায পড়া ও রোজা রাখা ফরজ করেছেন এবং এ দুটো বর্জন করা হারাম করেছেন। তাহলে আমরা আপনাকে বলব, অনুরূপভাবে আল্লাহ আপনার উপর আপনার যৌনাঙ্গ হেফাযত করাকে ফরজ করেছেন এবং যেনা করা হারাম করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না যে, আপনি বিশ্বাস করেন- আল্লাহ আপনাকে নামায আদায়কালে দেখতে পাচ্ছেন। এ কারণে আপনি প্রশান্তচিত্তে বিনম্রভাবে নামায আদায় করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে নামায পড়েন। ঠিক তেমনি আপনি যখন যেনা করবেন তখনও তো আল্লাহ আপনাকে দেখবেন! যেহেতু আপনার ঈমান আপনাকে দিয়ে সুন্দরভাবে নামায আদায় করায় তাই আমাদের ধারণা আপনার সে ঈমান আপনাকে যেনা থেকেও বিরত রাখবে। কারণ আমরা আপনার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করি। আমরা মনে করি, আপনি জানেন যে, এটি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা নয়; অথচ আল্লাহ আপনাকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছেন। আপনাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দিয়েছেন। এ মহান নেয়ামতগুলোর শুকরিয়া এভাবে করতে হয় না।
পাঁচ:
আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে আছেন যদি এতে সবর করেন তাহলে আপনি সওয়াব পাবেন। মুমিনেরা তো মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করে থাকে এবং আনন্দের সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে থাকে। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এটা করে না। মুসিবতে ধৈর্য রাখে, আনন্দকালে শুকরিয়া আদায় করে। যেদিন আপনি আপনার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সেদিন আপনি আপনার আমলনামায় এর সর্বোত্তম পুরস্কার পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনি 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়তে পারেন। সেখানে বিপদ মুসিবতে মুমিনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
ছয়:
আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনার দুআ বিফলে যায়নি। আপনি যে তাগিদ দিয়ে বলছেন আপনার দুআ কবুল হয়নি এটা আপনার ভুল। দুআ কবুলের তিনটি অবস্থা হতে পারে। এক. আপনি যা চেয়েছেন সাথে সাথে আল্লাহ সেটা দিয়ে দেয়া। দুই. দুআ অনুপাতে আপনার বালা-মুসিবত দূর করে দেয়া। তিন. আপনাকে আখেরাতে সওয়াব দেয়া, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন আপনি তা দেখবেন। কিন্তু আপনি ভেবেছেন দুআ কবুল হওয়া মানে- আপনি যা তলব করেছেন শুধু সেটা দিয়ে দেয়া। তাই আপনি বলেছেন, আল্লাহ আপনার দুআ কবুল করেননি। নিঃসন্দেহে এটি আপনার ভুল ধারণা। বান্দা কর্তৃক আল্লাহর কাছে দুআ করাটা একটি মহান ইবাদত। দুআর মাধ্যমে বান্দা স্রষ্টার কাছে তার দ্বীনতা, হীনতা তুলে ধরে। শয়তান সর্বদা চেষ্টা করে বান্দাকে দুআ থেকে বিমুখ রাখতে। তাই সে বান্দার অন্তরে অবিলম্বে তার মাকছাদ পূর্ণ হওয়ার বাসনা ঢুকিয়ে দেয়। ফলে সে বিরক্ত হয়ে দুআ ছেড়ে দেয়।
ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: জনৈক আলেম বলেন: বান্দা তখনি দুআর প্রতিদান অবিলম্বে পেতে চায় যখন দুআর উদ্দেশ্য হয়: প্রার্থনার মাকছাদ অর্জন। ফলে মাকছাদ অর্জিত না হলে দুআ চালিয়ে যাওয়াটা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে বান্দার দুআ করার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ: আল্লাহকে ডাকা, তার কাছে চাওয়া, সর্বদা নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করা, কখনো দাসত্বের বৈশিষ্ট্য ও আলামত পরিত্যাগ না করা, আদেশ ও নিষেধের অনুগত থাকা।[শারহ সহিহ মুসলিম (১০/১০০)]
দুআ কবুলের শর্তগুলো জানতে 13506 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুআ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো জানতে 5113 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুআ করার আদব বা শিষ্টাচারগুলো জানতে 36902 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুআ কবুল হওয়ার সময় ও স্থানগুলো জানতে 22438 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
সাত:
এই বিস্তারিত আলোচনার পর আমরা যেন আপনাকে বলতে শুনছি, “আমি যেনা করতে চাই না”। আমরা আপনার ব্যাপারে এই ধারণাই পোষণ করি। প্রকৃতপক্ষে যেনা করার অনুমতির জন্য আপনি আমাদের কাছে ইমেইল করেননি। অথবা আমরা আপনাকে যেনা করা জায়েয ফতোয়া দিব সে উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি পাঠাননি। যেহেতু আপনি জানেন যে, সেই অধিকার আমাদের নেই। যদি আপনি যেনা করতেই চাইতেন তাহলে আমাদেরকে ইমেইল না করেই যেনা করে ফেলতেন। কারণ আমরা তো আর আপনাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারছি না বা আপনি আমাদের কর্তৃত্বাধীনও নন যে, আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিবেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, আপনি যে মুসিবতের মধ্যে আছেন আপনি আপনার ভাইদের কাছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করতে চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন আপনার ভাইয়েরা যেন আপনাকে এমন কিছু নসীহত, দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দেয় যাতে আপনি যেনা না করেন। আমরা সে দায়িত্ব নিয়ে আপনার পাশে দাঁড়ালাম। দেরীতে বিয়ের যে পরীক্ষার মধ্যে আপনি আছেন এ অবস্থায় আমরা আপনাকে ধৈর্য রাখার উপদেশ দিচ্ছি। এ দীর্ঘ বছর ধরে দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান হেফাযত করতে পারায় আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি আপনি যদি আপনার রবের সাহায্য চান তাহলে আপনি এর চেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারবেন।
আমরা আপনাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং সৎ পাত্রী খুঁজে পেতে আরো জোর প্রচেষ্টা চালাবার পরামর্শ দিচ্ছি। নেক আমলের মাধ্যমে আপনার রবের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করে দেন, সুশোভিত করে দেন। কুফর, পাপ, অবাধ্যতাকে আপনার কাছে নিন্দনীয় করে দেন। আপনাকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমরা আশা করব আপনি 20161 নং ও 11472 নং প্রশ্নোত্তরদ্বয়ও পড়বেন।
আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা।