ইসলামী জীবন-ধারা আবদুল হামীদ ফাইযী ৩১৪ টি
ইসলামী জীবন-ধারা আবদুল হামীদ ফাইযী ৩১৪ টি

বুকের লোম তোলা বৈধ। যেমন পিঠ বা জাঙ্গের লোম তুলে ফেলা অবৈধ নয়।[1]

[1]. ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/১৮২

বগলের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও ইসলাম মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। অতএব বগলের গন্ধে যাতে অন্য কেউ কষ্ট না পায়, তার খেয়াল রাখা উচিত প্রত্যেক মুসলিমের। যেমন বগলের লোম তুলে বা ছিঁড়ে ফেলা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত। এই সুন্নাত পালন করেও পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা সকলের কর্তব্য।

প্রকাশ থাকে যে, সুন্নাত হল বগলের লোম তুলে বা ছিঁড়ে ফেলা। অবশ্য তা কষ্টকর হলে কেটে, চেঁছে বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ফেলা বৈধ।[1]

[1]. কাশশাফুল ক্বিনা’ ১/৯৫

পুরুষের জন্য কোন সময় হাত-পায়ে কোন রঙ ব্যবহার করা বৈধ নয়; বিবাহের সময়ও নয়। কারণ রঙ হল মহিলার জন্য।

উল্লেখ্য যে, বিবাহের সময় পুরুষের হাতে মেহেদী লাগানো মহিলাদেরই সাদৃশ্য অবলম্বন।

সৌন্দর্যের জন্য নয়; বরং টাইম দেখার জন্য হাতে ঘড়ি বাঁধা বৈধ। যে হাতে ঘড়ি নিরাপদে থাকবে এবং ঝাঁকুনি কম লাগবে সেই হাতে বেঁধে রাখা দোষাবহ নয়। যেহেতু রসূল (ﷺ) এর যুগে ঘড়ি ছিল না, সেহেতু তা ডান হাতে বাঁধা সুন্নাত -এ কথা বলা যায় না।

সতর্কতার বিষয় যে, যে ঘড়ি আংশিক অথবা পূর্ণরূপে সোনার তৈরী (তা পুরুষের জন্য) এবং যে ঘড়িতে কোন বিজাতির প্রতীক অথবা মূর্তি থাকে সে ঘড়ি ব্যবহার করা বৈধ নয়।

আঙ্গুলের গিরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইসলাম মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই সাথে আঙ্গুলে অঙ্গুরীয় বা আংটি ব্যবহারকে বৈধ করেছে। আল্লাহর রসূল (ﷺ) আংটি ব্যবহার করেছেন।[1] তাঁর আংটি ছিল রৌপ্যনির্মিত।[2] তাতে অঙ্কিত ছিল ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’। অবশ্য সে আংটি তিনি শীলমোহর স্বরূপ ব্যবহার করতেন।[3]

তিনি ডান হাতে আংটি ব্যবহার করতেন।[4] ঐ আংটি তিনি অনামিকা (কনিষ্ঠা বা কড়ে আঙ্গুলের পাশের) আঙ্গুলে পরতেন।[5] তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করতেন।[6]

জ্ঞাতব্য যে, বাম হাতেও আংটি পরা বৈধ। রাসুল (ﷺ) কখনো কখনো বাম হাতে আংটি পরেছেন।[7] হাসান-হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি ব্যবহার করতেন।[8]

প্রকাশ থাকে যে, বিজাতির অনুকরণে বিবাহের পয়গামের দিন অনুষ্ঠান করে পয়গামের আংটি পরা এবং তা প্রেমের প্রতীক ও ধারক স্বরূপ ব্যবহার করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। অনেকে ঐ আংটি আঙ্গুল থেকে খুলে ফেললে অমঙ্গলের আশঙ্কা করে। সুতরাং এরুপ ধারণা করা শিরক।

অনেকে প্রেমিকের পরানো ঐ আংটি বাম হাতে ব্যবহার করে এবং খামাখা ধারণা করে যে, বাম হাতের আঙ্গুলের শিরার সাথে নাকি সরাসরি হৃদয়ের সংযোগ আছে!!

পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা হারাম; যেমন এ কথা পূর্বেও আলোচিত হয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখলেন। তিনি তার হাত হতে তা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি ইচ্ছাকৃত দোযখের আঙ্গারকে হাতে নিয়ে ব্যবহার করে?’’

অতঃপর রাসুল (ﷺ) চলে গেলে লোকটিকে বলা হল, ‘তোমার আংটিটা কুড়িয়ে নিয়ে অন্য কাজে লাগাও। (অথবা তা বিক্রয় করে মূল্যটা কাজে লাগাও।)’ কিন্তু লোকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি আর কক্ষনো তা গ্রহণ করব না, যা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।’’[9]

কথিত মতে, ‘চার আনা সোনার আংটি আঙ্গুলে রাখা বৈধ’ কথাটির দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং এক আনা বা তার চেয়ে কম সোনারও আংটি ব্যবহার পুরুষের জন্য বৈধ নয়।

বৈধ নয় লোহার আংটি ব্যবহার করাও। যেহেতু রাসুল (ﷺ) সোনা ও লোহার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।[10]

একদা এক ব্যক্তি রাসুল (ﷺ)-এর নিকট এল। তার হাতে ছিল সোনার আংটি। তা দেখে তিনি তার নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি তাঁর অপছন্দের কথা বুঝতে পেরে ফিরে গিয়ে সেটি খুলে ফেলে একটি লোহার আংটি পরে এল। রাসুল (ﷺ) তা দেখে বললেন, ‘‘এটি তো আরো খারাপ। এটি তো জাহান্নামবাসীদের অলংকার!’’ এ কথা শুনে লোকটি ফিরে গেল এবং সেটিকেও খুলে ফেলে একটি চাঁদির আংটি আঙ্গুলে নিল। তা দেখে রাসুল (ﷺ) নীরব থাকলেন।[11]

এখানে জ্ঞাতব্য যে, বিবাহের মোহরের জন্য এক সাহাবীকে তাঁর লোহার আংটি খুঁজতে বলা তা ব্যবহার বৈধ হওয়ার দলীল নয়।[12]

অষ্টধাতু-নির্মিত আংটি কোন রোগ-বালা দূরীভূত করার জন্য ব্যবহার করা শির্ক।

পাথর বসানো আংটি পরা বৈধ। কিন্তু পাথরের কোন অমূলক তাসীরের কথা বিশ্বাস করা শির্ক।

প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর আংটি কিন্তু সৌন্দর্যের জন্য ছিল না। সেটি ছিল তাঁর শীলমোহর। তাই শীলমোহরযুক্ত আংটি ব্যবহার সুন্নাত। পক্ষান্তরে কেবল সৌন্দর্যের জন্য আংটি ব্যবহার করা সুন্নাত নয়, ততো অবৈধও নয়।

[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৭৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯২ প্রমুখ

[2]. মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়াহ ৭৩

[3]. ঐ ৭৪

[4]. ঐ ৭৭-৮১

[5]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৭৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯২

[6]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৭৮, আবূ দাঊদ হা/৪২২৫

[7]. মুসলিম, আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৪৮৯৯

[8]. মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়াহ ৮২

[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯০

[10]. বাইহাক্বী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১২৪২

[11]. আল-আদাবুল মুফরাদ ১০২১

[12]. ফাতহুল বারী ১০/২৬৬, আদাবুয যিফাফ, আলবানী দ্রঃ

পায়ের লেবাস মোজা ও জুতা। ইসলাম মুসলিমকে জুতা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে।[1] যেহেতু জুতা পরে পথ চললে কোন সওয়ারীর উপর চড়ে থাকার মত পা নিরাপদে থাকে, পথ চলতেও আরাম লাগে। জুতা পরার আদব রয়েছে ইসলামে, যা নিম্নরূপঃ

১। জুতা (ও মোজা) পরার সময় ডান পায়েরটা আগে পরুন এবং খোলার সময় বাম পায়েরটা আগে খুলুন।

প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের যখন কেউ জুতা পরে, তখন সে যেন ডান পা থেকে শুরু করে এবং যখন খোলে, তখন সে যেন বাম পা থেকে শুরু করে। যাতে ডান পায়ের জুতা আগে পরা হয় এবং শেষে খোলা হয়।’’[2]

প্রকাশ থাকে যে, কোন হিংস্র জন্তু মোজার ভিতরে লুকিয়ে থাকতে পারে -এই আশঙ্কায় তা ঝেড়ে পরা উত্তম। তবে তা না ঝেড়ে পরা নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস সহীহ নয়।[3]

২। জুতা পরার সময় যদি হাত লাগাতে হয় অথবা তার ফিতা বাঁধতে হয়, তাহলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে বসে বসে পরুন। যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) খাড়া হয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন।[4]

৩। এক পায়ে জুতা দিয়ে পথ চলবেন না। হয়তো বা তাতে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি থাকতে পারে। অন্যের চোখে অসভ্য দেখাতে পারে। আর তা ছাড়া এক পায়ে জুতা দিয়ে চলে শয়তান। অতএব পথ চলতে একটি জুতা নষ্ট হয়ে গেলে, অপর জুতাটি পায়ে না রেখে উভয় জুতা হাতে নিয়ে পথ চলুন। এ ব্যাপারে একাধিক হাদীস রয়েছে।[5]

৪। কখনো কখনো খালি পায়েও পথ চলুন।

ফাযালাহ বিন উবাইদ যখন মিসরে (বা শামে) আমীর মুআবিয়ার নায়েব ছিলেন, তখন এক সাহাবী (মদীনা থেকে গিয়ে) তাঁকে দেখলেন, তিনি এলোমেলা বেশে অবস্থান করছেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি ব্যাপার যে, আমি আপনাকে এলোমেলা বেশে দেখছি, অথচ আপনি দেশের আমীর?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে অতিরিক্ত বিলাসিতা করতে নিষেধ করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘কিন্তু আপনার পায়ে জুতা দেখছি না কেন?’ উত্তরে ফাযালাহ বললেন, ‘যেহেতু রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে কখনো কখনো খালি পায়ে চলতে আদেশ করতেন।’[6]

বলাই বাহুল্য যে, বিশেষ করে সবুজ ঘাসের উপর চলতে আধুনিক যুগের ডাক্তারগণও উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তা মানুষের মাঝে বিনয় সৃষ্টি করে।

৫। খালি ময়দানে অথবা মাটির উপর নামায পড়লে এবং জুতা পরিষ্কার থাকলে জুতা পরেই নামায পড়ুন। অবশ্য পবিত্র হলেও কার্পেট বিছানো বা মেঝে বিশিষ্ট মসজিদের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মসজিদ নোংরা করবেন না। বরং নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে নামায পড়ুন। চুরির ভয় হলে ব্যাগে নিয়ে কাছে রেখে নামায পড়ুন।

[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৬

[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৫৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৭ প্রমুখ

[3]. সিলসিলাহ যয়ীফাহ হা/২৪৪০

[4]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৭১৯

[5]. আহমাদ ৯১৯৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৮, নাসাঈ হা/ ৫৩৬৯, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৫৫, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৭, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৪৮

[6]. আহমাদ ২৩৪৪৯, আবূ দাঊদ হা/৪১৬০

নখ কাটা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত। নখ ছেড়ে রাখা বৈধ নয়। মানুষ একটি সভ্য জাতি। সে জাতি এবং বিশেষ করে কোন মুসলিম অসভ্য পশুর সদৃশ হতে পারে না।

হাতের নখ কাটার সময় প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাতের নখ কাটতে হয়। পায়ের নখ কাটার সময় ডান পায়ের নখ আগে কাটতে হয়। তবে কোন আঙ্গুলের নখ আগে কাটতে হয়, তার কোন দলীল নেই। সর্বপ্রথম ডান হাতের কনিষ্ঠা, তারপর মধ্যমা, তারপর বৃদ্ধা, তারপর অনামিকা, তারপর তর্জনী, তারপর বাম হাতের বৃদ্ধা--- বলে যে পর্যায়ক্রম বর্ণনা করা হয়, তার কোন দলীল নেই। ইবনে দাক্বীক্বুল ঈদ বলেন, শরীয়তে এর কোন দলীল নেই। এইভাবে নখ কাটা মুস্তাহাব হওয়ার কথা বিশ্বাস করা জায়েয নয়। যেহেতু কোন কিছুকে মুস্তাহাব মনে করা শরয়ী বিধান। আর তা প্রমাণের জন্য দলীল জরুরী।[1]

নখ কাটার পর হাত ধোয়ায় যদি স্বাস্থ্যগত কোন উপকার থাকে, তাহলে তা করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু তা সুন্নাত বা মুস্তাহাব মনে করে করলে তারও দলীল থাকা জরুরী।

প্রকাশ থাকে যে, জিহাদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নখ লম্বা রাখা হারাম নয়।[2]

[1]. কাশশাফুল ক্বিনা’ ১/৯৪

[2]. কাশশাফুল ক্বিনা’ ১/৯৪-৯৫

পুরুষের লজ্জাস্থান হল নাভি থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত। এই স্থানকে গুপ্তস্থানও বলা হয়। মানুষের জন্য সে স্থান গুপ্ত রাখা ওয়াজেব। এমনকি একাকী থাকলেও তা প্রকাশ করা বা খুলে রাখা উচিত নয়। তদনুরূপ অপরের ঐ স্থানের দিকে চেয়ে দেখা বৈধ নয়। সামনে কেউ না থাকলেও আল্লাহকে লজ্জা করা ঈমানের অন্যতম পরিচয়। অবশ্য স্ত্রীর কাছে থাকলে সে কথা আলাদা।

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘(পুরুষের) নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থান হল লজ্জাস্থান।’’[1]

উল্লেখ্য যে, নাভির উপরে কাপড় বেঁধে রাখা মুসলিমের কর্তব্য। আর উচিত নয় তার নিচে কাপড় বাঁধা।

আর ঊরুর ব্যাপারে রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তুমি তোমার ঊরু খুলে রেখো না এবং কোন জীবিত অথবা মৃতের ঊরুর দিকে তাকিয়ে দেখো না।’’[2]

অন্যত্র বলেন, ‘‘তুমি তোমার জাং ঢেকে নাও। কারণ, জাং হল লজ্জাস্থান।’’[3]

[1]. হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৫৫৮৩

[2]. আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৭৪৪০

[3]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম, ইবনে হিববান, সহীহুল জা’মে হা/৭৯০৬

গুপ্তাঙ্গ গুপ্তই থাকে, তবুও তার (নাভির নিচে এবং পেশাব-পায়খানাদ্বারের আশে-পাশে) গজিয়ে ওঠা লোম পরিষ্কার করে ফেলতে হয় মুসলিমকে।

উল্লেখ্য যে, মুসলিম কেবল বাহিরেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়; বরং আভ্যন্তরিক ও গোপনীয় বিষয়েও সে বড় সভ্য।

এই লোম চেঁছে ফেলাই সুন্নাত। অবশ্য তা কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করে তুলে ফেলাও বৈধ। যেমন চাঁছার যন্ত্র না পাওয়া গেলে অথবা চাঁছা কষ্টকর হলে কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলাও দূষণীয় নয়।

পক্ষান্তরে গুপ্তাঙ্গের লোম কাঁচি দ্বারা পরিষ্কার করলে পরিবারে ও জীবনে অশান্তি নেমে আসে এ ধারণা অমূলক।

গুপ্তাঙ্গের লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে) পরিষ্কার করতে কোন পুরুষের কাছেও লজ্জাস্থান খোলা বৈধ নয়।[1]

এ লোম কোন্ দিনে কাটতে হবে, তারও কোন প্রমাণ মিলে না। সুতরাং তা যে কোন দিনে কাটা যায়। তবে প্রত্যেক সপ্তাহে জুমআর দিন নখ, মোচ ইত্যাদি কেটে ফেলার কথা ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণনা পাওয়া যায়।[2]

অবশ্য সে সব না কেটে ৪০ দিন বেশী পার করা যাবে না। যেহেতু আনাস (রাঃ) বলেন, ‘মোচ ছাঁটা, নখ কাটা, নাভির নিচের লোম চাঁছা এবং বোগলের লোম তুলে ফেলার ব্যাপারে আমাদেরকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে; যাতে আমরা সে সব চল্লিশ দিনের বেশী ছেড়ে না রাখি।’[3]

প্রকাশ থাকে যে, যাদু থেকে বাঁচার জন্য দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন চুল, লোম বা নখ ইত্যাদি মাটিতে পুঁতে ফেলা দূষণীয় নয়। পুঁতে ফেলা আদেশ বা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নয়।[4]

মানুষ সম্মানিত জীব। তার সকল অংশও সম্মানিত। সুতরাং তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন অংশ (নখ) চুল (ইত্যাদি) বিক্রয় করা বৈধ নয়। ইমাম আত্বা চুল বিক্রয়কে ঘৃণিত আচরণ মনে করতেন।[5]

[1]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, ইলা রাববাতুল খুদূর ১০৩পৃ.

[2]. বাইহাক্বী ৩/২৩৪

[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৫৮

[4]. সিলসিলাহ যয়ীফাহ হা/২৩৫৭

[5]. ইবনে আবী শাইবাহ ৪/১২৩

খতনা করা বালকের জন্য আবশ্যক। এতে রয়েছে পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্নতা ও বহু যৌনরোগের হাত হতে মুক্তির উপায়। তাছাড়া এতে রয়েছে দাম্পত্য সম্ভোগণ্ডসুখের পূর্ণ তৃপ্তি ও রহস্য। এটা মানুষের এক সুরুচিপূর্ণ প্রকৃতি।[1]

[1]. বিস্তারিত আদব জানার জন্য ‘শিশু প্রতিপালন’ দ্রঃ

মানুষ সভ্য জাতি। সৌন্দর্যের সাথে সৌরভ মানুষের মনে আনন্দ আনে। যেমন নিজে আনন্দ পাওয়া যায়, তেমনি অপরকেও আনন্দ দেওয়া যায়, আকৃষ্ট করা যায়। এ জন্যই ইসলামী শরীয়তে নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার বৈধ। আল্লাহর রসূল (ﷺ) আতর ব্যবহার করতেন এবং তিনি তা খুব পছন্দ করতেন।

তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও খোশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা।’’[1]

অবশ্য এই ব্যবহারের রয়েছে কিছু বিধান।

স্ত্রীর মন আকর্ষণ করার জন্য আতর ব্যবহার বিধেয়। যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর মনই এক অপরকে নানাভাবে আকর্ষণ করে। আর বিশেষ করে আতর তাদের প্রেমের সমুদ্রে জোয়ার আনে।

যেমন সমাজে যেতে হলে সৌন্দর্য অবলম্বনের সাথে সাথে সুগন্ধি ব্যবহার বিধেয়। ঈদের জামাআতে হাজির হতে খোশবু ব্যবহার বিধেয়।

ইমাম মালেক বলেন, ‘আমি আহলে ইল্মদের কাছে শুনেছি, তাঁরা প্রত্যেক ঈদে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহারকে মুস্তাহাব মনে করতেন।’

জুমআর জামাআতে হাজির হওয়ার জন্যও আতর ব্যবহার বিধেয়।

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।’’[2]

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে, তার স্ত্রীর সুগন্ধি (আতর) থাকলে তা ব্যবহার করে, উত্তম লেবাস পরিধান করে, অতঃপর (মসজিদে এসে) লোকেদের কাতার চিরে (আগে অতিক্রম) করে না এবং ইমামের উপদেশ দানকালে কোন বাজে কর্ম করে না, সে ব্যক্তির জন্য তা উভয় জুমআর মধ্যবর্তী কৃত পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কর্ম করে এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করে সে ব্যক্তির জুমআহ যোহরে পরিণত হয়ে যায়।’’[3]

বিশেষ বিশেষ জায়গায় শরীয়ত আমাদেরকে সুগন্ধি ব্যবহার করতে নিষেধ করে। যেমন হজ্জ বা উমরাহ করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় সর্বপ্রকার সুগন্ধি ব্যবহার নিষিদ্ধ।

সেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখার বিষয় যে, সেন্টে যেন কোহল বা স্পিরিট মিশ্রিত না থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের নিকট) বৈধ নয়।[4] অবশ্য এমন সময় ঐ শ্রেণীর সেন্ট্ দেহে ব্যবহার করা দূষণীয় নয়, যে সময় ব্যবহারের পর তা গোসলের মাধ্যমে ধোয়া যাবে।

যে সুগন্ধিতে রঙ আছে, তা পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘(রহমতের) ফিরিশ্তাবর্গ তিন ব্যক্তির নিকটবর্তী হন না; নাপাক ব্যক্তি, নেশাগ্রস্ত (মাতাল) ব্যক্তি এবং খালূক মাখা ব্যক্তি।’’[5]

খালূক জাফরান প্রভৃতি থেকে প্রস্ত্তত মহিলাদের ব্যবহার্য একপ্রকার সুগন্ধিদ্রব্য বিশেষ। এটি ব্যবহার করলে দেহে বা পোশাকে লালচে হলুদ রং প্রকাশ পায়। তাই তা পুরুষদের জন্য ব্যবহার নিষিদ্ধ।

পরিশেষে বলি যে, বাহ্যিক সাজ-সজ্জার সাথে সাথে মানুষকে নিজ হৃদয় ও রসনার সৌন্দর্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। নচেৎ বাহ্যিক চমকের কোন দাম থাকে না। মুখ খুললেই তার আসল রূপ ধরা পড়ে যায়। আর তখন তার বাহ্যিক সাজ-সজ্জা তার জন্য হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

জালিনুস এক ব্যক্তিকে দেখলেন, খুব আভিজাত্যসম্পন্ন পোশাক পরে আছে, কিন্তু কথা বলার সময় ভুল বলছে। তা দেখে তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি যে শ্রেণীর কাপড় পরে আছ ঠিক তেমন ভাবের কথাবার্তা বল, নচেৎ এমন শ্রেণীর কাপড় পর, যেমন ভাবের তোমার কথাবার্তা।’

যেমন কারো বাহ্যিক রূপ-সজ্জা দেখে ধোকা খাওয়াও উচিত নয়। যেহেতু অনেক মানুষ আছে যাদের বাহ্যিক রূপ না থাকলেও আভ্যন্তরিক রূপ অনেক। পক্ষান্তরে আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে ঠিক এর বিপরীত; যাদের বাহ্যিক রূপের বাহার আছে, কিন্তু ভিতরে সে বড় কুৎসিত। অথচ একটা কুৎসিত মনের চাইতে কুৎসিত চেহারা অনেক ভালো।

একদা নাখ্খার উযরী হযরত মুআবিয়ার নিকট এলেন। তাঁর গায়ে ছিল একটি আলখাল্লা। তা দেখে মুআবিয়ার মনে যেন তাচ্ছিল্য ভাব এল। নাখ্খার সে কথা তাঁর চেহারায় অনুমান করে নিলেন ও বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! এ আলখাল্লা আপনার সাথে কথা বলবে না, আপনার সাথে কথা বলবে তার পরিধায়ী।’ অতঃপর তিনি এমন সুন্দর কথা বললেন, যাতে হযরত মুআবিয়া মুগ্ধ হলেন। তারপর যখন নাখ্খার উঠে গেলেন, তখন তিনি বললেন, ‘এমন মানুষ কখনো দেখিনি, যে প্রথমে ঘxণ্য হয় এবং পরে সম্মানার্হ হয়।’

সত্যই তো সুন্দর পোশাক পরিহিত ব্যক্তি মাত্রই ভদ্রলোক নয়। সুতরাং লোকের পরহেযগারীর পোশাক দেখে ধোকা খাবেন না, গোড়ালীর অনেক উপরে কাপড় পরা দেখে অবাক হবেন না এবং কপালে সিজদার কালো দাগ দেখে চমকিত হবেন না। বরং সংসার ও টাকা-পয়সার ব্যাপারে দেখুন, তার পরহেযগারী কতটুক?

এক ব্যক্তি হযরত উমারকে বলল, অমুক লোকটা বড় খাঁটি লোক। তিনি বললেন, তা তুমি কিরূপে জানলে? ওর সাথে কোন সময় সফর করেছ? বলল, না। বললেন, তোমার ও ওর মাঝে কোনদিন তর্ক বা মতবিরোধ হয়েছিল? বলল, না। বললেন, ওর কাছে কোনদিন কিছু আমানত রেখেছিলে? বলল, না। বললেন, তাহলে ওর সম্পর্কে তুমি কিছুই জান না। আমার মনে হয়, তুমি ওকে মসজিদে মাথা হিলাতে দেখেছ।[6]

আবার বলি যে, মানুষের বেশভূষা ও বাহ্যিক আড়ম্বর দেখে ধোকা খাওয়া উচিত নয়। মুর্দার উপর বহু মূল্যের কাফন থাকলে কি তার মান বাড়ে?

[1]. আহমাদ, নাসাঈ, হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৩১২৪

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৮৪৬

[3]. আবূ দাঊদ, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ তারগীব ৭২০

[4] (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৮৫, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/২০৩

[5]. বায্যার, সহীহ তারগীব ১৬৭

[6]. উয়ূনুল আখবার ৩/১৫৮
দেখানো হচ্ছেঃ ৮১ থেকে ৯০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩১৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 6 7 8 9 10 · · · 29 30 31 32 পরের পাতা »