লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] ড. আয়িদ আল করনী ৩৪৫ টি
লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] ড. আয়িদ আল করনী ৩৪৫ টি

১. জেনে রাখুন আপনি যদি আজকের সীমার মধ্যে বসবাস না করেন, তবে আপনার চিন্তা-ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, আপনার কাজ কর্ম তালগোল পাকিয়ে ফেলবে এবং আপনার দুশ্চিন্তা বেড়ে যাবে। একথাটি নিম্নোক্ত হাদীসটিকে ব্যাখ্যা করে-

“সকাল বেলা সন্ধ্যাকে দেখার আশা করিও না এবং সন্ধ্যাকালে সকালকে দেখার আশা করিও না।”

২. অতীত ও অতীতের সব ঘটনাকে ভুলে যান। গত জিনিসের চিন্তায় বিভোর হওয়া হলো নেহায়েত পাগলামি।

৩ । ভবিষ্যৎ নিয়ে আগাম দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না। কেননা, ভবিষ্যৎতো অজ্ঞাত ও অদৃশ্য জগতে আছে; এটা আগমন করার আগেই যেন এটা আপনাকে কষ্ট না দেয়।

৪. নিন্দা ও সমালোচনায় বিচলিত হবেন না; বরং শক্ত হোন আর জেনে রাখুন যে, আপনার যোগ্যতার মানানুসারেই সমালোচনার ঝড় উঠে।

৫. আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং আমলে সালেহ এ দু'টিই জীবনকে উত্তম ও সুখী করার মূল উপাদান।

৬. যে ব্যক্তিই শান্তি, প্রশান্তি ও সুখ চায় সে ব্যক্তিই এসব কিছু আল্লাহর জিকিরের মাঝে খুঁজে পেতে পারে।

৭. আপনার নিশ্চিতরূপে একথা জানা উচিত যে, যা কিছু ঘটে তা এক স্বর্গীয় বিধি অর্থাৎ তকদীর অনুসারেই ঘটে।

৮. অন্যের থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ পাওয়ার আশা করবেন না।

৯. সর্বাপেক্ষা শোচনীয় ঘটনার জন্য প্রস্তুত হতে নিজেকে তালিম, প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং দিন।

১০. যা ঘটেছে সম্ভবত তা আপনার জন্য সর্বাপেক্ষা উপকারী (যদিও আপনি বুঝতে পারে না যে, তা কীভাবে হলো)।

১১. মুসলমানের তকদীরে যা আছে তা তার জন্য কল্যাণকর।

১২. আল্লাহর অনুগ্রহ, করুণা, দয়া ও নেয়ামতসমূহকে গণনা করার চেষ্টা করুন এবং সেগুলোর জন্য শুকরিয়া আদায় করুন।

১৩. অন্য অনেকের চেয়েও আপনি ভালো আছেন।

১৪. প্রতি মুহুর্তেই (আল্লাহর) সাহায্য আসে।

১৫. সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায়ই দোয়া করা ও সালাত পড়া উচিত।

১৬. দুর্বিপাক আপনার মনকে শক্ত করবেই এবং আপনার দৃষ্টিভঙ্গীকে পাল্টিয়ে দিবে।

১৭. অবশ্যই প্রতিটি দুঃখের পরেই সুখ আছে।

১৮. তুচ্ছ বিষয় যেন আপনার ধ্বংসের কারণ না হয়।

১৯. নিশ্চয় আপনার প্রভু মহা ক্ষমাশীল।

২০. ক্রদ্ধ হবেন না, রাগান্বিত হবেন না, রাগ করবেন না।

২১. জীবনে খাদ্য, পানি ও ছায়া (অর্থাৎ গৃহ) থাকলেই যথেষ্ট; সুতরাং অন্য কোন কিছুর অভাবে (অত্যন্ত) অস্থির ও উদ্বিগ্ন হবেন না।

২২. যে সব ক্ষতির আশঙ্কা করা হয় তার অধিকাংশই ঘটে না।

২৩. যারা দুর্দশাগ্রস্ত তাদের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞ হউন।

২৪. আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন।

২৫. আপনার বারবার সেসব দোয়া করা উচিত যেসব দোয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।

২৬. উৎপাদনশীল কোন কাজে কঠোর পরিশ্রম করুন এবং আলস্যকে বা অলসতাকে দূরে নিক্ষেপ করুন।

২৭. গুজব ছড়াবেন না এবং গুজবে কান দিবেন না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন গুজব শুনে ফেললে তা বিশ্বাস করবেন না।

২৮. আপনার বিদ্বেষ ও প্রতিশোধ গ্রহণের চেষ্টা আপনার শক্রর চেয়ে আপনার স্বাস্থ্যের অনেক বেশি ক্ষতিকর।

২৯. আপনার যে সঙ্কট, বালা মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন হয় তাতে আপনার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় বা পাপ মার্জনা হয়।

৭২ ছয়টি মূলকথা যখন আপনার নিকট তখন কেন দুঃখ করা?

“দুখের পরে সুখ” পুস্তকের গ্রন্থকার একজন বিজ্ঞলোকের ঘটনা উল্লেখ করেছেন যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাঁর ভাইয়েরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ক্ষতির জন্য তাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলেন। তিনি উত্তর দিলেন। ছয়টি উপাদানে আমি একটি ঔষধ বানিয়েছি। সে উপাদান ছয়টি কী তারা তাকে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন-

১. সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান রাখা।

২. তকদীরে যা আছে তা অলঙ্ঘনীয়ভাবে ঘটবে এই অলঙ্ঘনীয় সত্য কথাকে মেনে নেয়া।

৩. দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি ধৈর্যের সুফল পাবে, এর কোন বিকল্প নেই।

৪. ধৈর্য না ধরে আমি কী করতে পারি? একথার নিহিতার্থে অবিচল আস্থা রাখা।

৫. নিজেকে নিজে এ প্রশ্ন করা, “আমার নিজের ধ্বংস করার জন্য আমি কেন এক জন ইচ্ছুক ব্যক্তি হব?”

৬. একথা জানা যে, মুহুর্তেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে মসিবত দূর হয়ে যায় বা যেতে পারে।

অন্যেরা যদি আপনার ক্ষতি করে বা আপনাকে যাতনা দেয় বা আপনি অত্যাচারিত হন অথবা অন্যের হিংসার শিকার হন তবে দুঃখ করবেন না।

শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেছেন-

“মু’মিন ব্যক্তি ঝগড়াও করে না প্রতিশোধও নেয় না এবং অন্যের ছিদ্রান্বেষণও করে না অর্থাৎ অন্যের দোষও তালাশ করে না।” বাধা-বিপত্তি বা সমস্যার সম্মুখীন হলে হতাশ না হয়ে বরং সহ্য করুন ও ধৈর্য ধরুন।

একজন বিজ্ঞ লোক বলেছেন-

“হে সময়! তোমার নিকট যদি অবশিষ্ট কিছু (সময়) থাকে যা দিয়ে তুমি যোগ্য ও মর্যাদাবানদেরকে অপদস্ত কর। তবে তা তুমি আমাকে দাও।” অর্থাৎ হে সময়! তুমি যতই দীর্ঘ হও না কেন তোমার দীর্ঘতার চেয়ে আমার ধৈর্য অনেক বেশি। সুতরাং, তুমি আমার যোগ্যতার ও মর্যাদার হানি করতে পারবে না।

ধৈর্য হলো উদ্বিগ্নতার বিপরীত, ধৈর্য শান্তির ফল বহন করে। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধৈর্য ধরে না, পরিস্থিতির কারণে সে ধৈর্য ধরতে বাধ্য হয়।

আল মুতানাব্বি বলেছেন-

“সময় আমার উপর এতটাই সমস্যার (তীর) নিক্ষেপ করেছে যে, তীরে তীরে আমার হৃদয়ে আবরণ পড়ে গেছে এখন যখন আমি কোন তীর দ্বারা আক্রান্ত হই তখন আমি সমস্যার প্রতি ভ্রুক্ষেপ ছাড়াই বেঁচে আছি; কেননা, উদ্বিগ্ন হয়ে আমি লাভবান হয়নি।”

কেউ যদি আপনার কোন উপকার করতে অস্বীকৃতি জানায় অথবা আপনাকে যদি ভ্রুকুটি করা হয় অথবা কোন কৃপণ ব্যক্তি যদি আপনাকে ফিরিয়ে দেয় তবে ব্যাথাতুর হবেন না। যদি আপনি অন্যের কাছে কিছু চাওয়া থেকে বিরত থেকে নাকে খত দেয়ার অপমানের ঘাম বা লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে পারেন তবে বিশাল বাড়ি ও সুন্দর বাগানের চেয়ে কুঁড়ে ঘর বা তাবুই আপনার জন্য শ্রেয় এবং সেসব পার্থিব জিনিসের চেয়ে ভালো যা আপনাকে শুধু দুশ্চিন্তা ও অশান্তিই বয়ে এনে দেয়।

তীব্র মানসিক যাতনা রোগের মতোই, এটা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এর পূর্ণ মেয়াদকাল ধরে চলবে। আর যে নাকি এটাকে তাড়াতাড়ি দূর করে দিতে চায় সে প্রায়ই এটাকে বৃদ্ধি করে। দুর্দশাগ্রস্ত লোকের ধৈর্য ধরা বাধ্যতামূলক। তাকে অবশ্যই শান্তির আশায় থাকতে হবে। তাকে সালাত, প্রার্থনা ও ইবাদতে নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে থাকতে হবে।

৭৩. সুখের মূলনীতি- যেসব আয়াত নিয়ে ভাবতে হবে

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

বল, 'হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়োনা; নিশ্চয় আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (৩৯-সূরা যুমার: আয়াত-৫৩)

“এবং তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, কেননা, কাফের সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না।” (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-৮৭)

“পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে তার প্রভুর দয়া হতে নিরাশ হয়।” (১৫-সূরা হিজর: আয়াত-৫৬)

“অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” (৭-সূরা আল আরাফ: আয়াত-৫৬)

“তুমি জাননা, আল্লাহ হয়তো নতুন কোন উপায় করবেন।” (৬৫-সূরা আত তালাক: আয়াত-১)

“হয়তো তোমরা যা পছন্দ কর না তা তোমাদের জন্য ভালো এবং তোমরা যা পছন্দ করো তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২১৬)

“আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি বড়ই মেহেরবান।” (৪২-সূরা আশ শূরা: আয়াত-১৯)

“এবং আমার করুণা সব কিছুকে ঘিরে আছে।” (৭-সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৫৬)

“ভয় করিও না (বা কোন ভয় নেই), নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪০)

“(তখনকার কথা স্মরণ কর) যখন তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তাই তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন।” (৮-সূরা আনফাল: আয়াত-৯)

“এবং তারা হতাশ হয়ে যাবার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তার রহমত, করুণা ও দয়াকে চতুর্দিকে বিস্তৃত করে দেন।” (৪২-সূরা আশ শুরা: আয়াত-২৮)

“এবং তারা আমাকে আশা নিয়ে ও ভয়ের সাথে ডাকত এবং তারা আমার নিকট বিনীত ছিল.” (২১-সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-৯০)

যে কাজ আনন্দ বয়ে আনে তা হলো বই পড়ে জ্ঞানার্জন করে মনকে উন্নত করা।

আল জাহিয নামে এজন আরব লেখক কয়েক শতাব্দী পূর্বে বই পড়ে উদ্বিগ্নতা দূর করার (জন্য নিম্নরূপ) উপদেশ দিয়েছেন-

“(ভালো) বই এমন এক সঙ্গী যা অমঙ্গল, অকল্যাণ ও ক্ষতির দিকে আপনাকে প্রলোভন দেখায় না। এটা এমন বন্ধু যা আপনাকে বিরক্ত করে না। এটা এমন প্রতিবেশী যা আপনার কোন ক্ষতি করে না। এটা এমন একজন পরিচিত ব্যক্তি যিনি তোষামোদ করে আপনার থেকে কোন সুবিধা বাগিয়ে নিতে চায় না। এটা ছলনা ও মিথ্যার মাধ্যমে আপনাকে প্রতারণা করে না। বইয়ের পাতাগুলো পাঠকালে আপনার অনুভূতি শক্তিশালী ও মেধা তীক্ষ্ণ হয়। জীবনী পড়ে মানুষকে মূল্যায়ন করতে পারবেন।

এমনও বলা হয় যে, মাঝে মাঝে একমাসে বইয়ের যে ক’পাতা পড়ে যা শিখা যায় তা (সাধারণ) জনগণের মুখ থেকে একশত বছরেও শিখা যায় না। এসব কিছুই উপকার করে অথচ এতে সম্পদের ক্ষতি হয় না এবং বেতনের জন্য অপেক্ষাকারী শিক্ষকের দরজায় ধর্ণা ধরতে হয় না অথবা এমন কারো কাছ থেকে শিখতে হয়না যে আচার-আচরণে আপনার চেয়ে নিম্ন মানের। বই দিনে ও রাত্রে, ঘরে ও বাইরে (ভ্রমণকালে) আপনার আনুগত্য করে। বই (শিক্ষকের মতো) তন্দ্রা আসাতে এমনকি গভীর রাতেও (ঘুমে) ক্লান্ত হয়ে পড়ে না।

এটা এমনই শিক্ষক, যখনই আপনার দরকার তখনই এটা আপনার সেবায় নিয়োজিত। এটা এমন শিক্ষক যাকে আপনি বেতন না দিলেও এটা আপনাকে সেবা (তথা জ্ঞান) দিতে নারাজ হয় না। আপনি এটাকে পরিত্যাগ করলেও এটা আপনার আনুগত্য কমিয়ে দেয় না। সবাই যখন আপনার বিরোধী হয়ে শক্রতা দেখায় তখন এটা আপনার পাশে থাকে (ও আপনাকে সাহায্য করে)। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবেন ততক্ষণ পর্যন্ত অলসদের সঙ্গ আপনার দরকার নেই।

দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পথচারীদেরকে দেখা থেকে এটা আপনাকে বিরত রাখবে। হ্যাংলা, হাল্কা বা চপল স্বভাব, অশ্লীল ভাষাভাষী ও গণ্ডমূর্খদের সাথে মিলামিশা করা থেকে বই আপনাকে রক্ষা করবে। বইয়ের শুধুমাত্র যদি এ একটাই উপকারিতা থাকত যে, এটা আপনাকে বোকার মতো দিবাস্বপ্ন দেখা থেকে ও হ্যাংলাপনা করা থেকে বিরত রাখে, তবুও এটাকে অবশ্যই আপনার এমন একজন সত্যিকার ও প্রকৃত বন্ধু হিসেবে গণ্য করতে হবে যিনি নাকি আপনাকে মহা অনুগ্রহ দান করেছেন।”

৭৫. বইয়ের মাহাত্ম্য নিয়ে কিছু কথা

আবু উবাইদা বলেছেন- “মুহাল্লাব তার পুত্রকে নিম্নোক্ত উপদেশ দিয়েছেন, ‘হে বৎস! বৰ্ম বিক্রেতা বা পুস্তক বিক্রেতার সাক্ষাৎ ছাড়া বাজারে সময় নষ্ট করবে না।”

হাসান লু’লুয়ী বলেছেন- “চল্লিশ বছর যাবৎ দিনে-রাতে যখনই ঘুমতে যাই না কেন একটা পুস্তক আমার বুকের উপর থাকেই।”

ইবনে যাহম বলেছেন-

“প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুমানো ক্ষতিকর; ঘুমের সময় আমার যখন তন্দ্রা আসে তখন আমি একটি জ্ঞানগর্ভ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বই হাতে তুলে নেই এবং কোন (প্রজ্ঞার) মুক্তার সাক্ষাৎ বা সন্ধান পেলে আমি কল্যাণ লাভ করি। যখন মনের সুখে বই পড়ায় ডুবে থাকি ও (জ্ঞনগর্ভ কথা) শুনতে থাকি তখন গাধার তীর্যক ডাক ও কোন কিছু ভাঙ্গার তীক্ষ্ণ শব্দ শুনে যতটা সর্তক হই তার চেয়েও বেশি সতর্ক থাকি।”

তিনি আরও বলেছেন-

“যদি আমি কোন বইকে মনোরম ও উপভোগ্য পাই এবং আমি এটাকে উপকারী মনে করি তবে তুমি আমাকে দেখবে যে, আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে খুঁজছি যে কত পৃষ্ঠা বাকি আছে এ ভয়ে যে (এ মজাদার বইটি পড়া) শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা। যদি এটা বহু পৃষ্ঠা সম্বলিত অনেক খণ্ডের পুস্তক হয় তবে আমার জীবনকে (ধন্য) ও সুখকে পরিপূর্ণ পাই।”

كِتَابٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ

“(হে মুহাম্মদ!) এ কিতাব যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতএব এ কিতাব দিয়ে (মানুষকে) সর্তক করতে এর সম্বন্ধে আপনার মনে যেন কোন সঙ্কোচ না থাকে এবং (এ কিতাব) মু’মিনদের জন্য উপদেশ।” (৭-সূরা আল আরাফ: আয়াত-২)

১. পাঠ উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা দূর করে।

২. পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকাকালে মিথ্যায় ডুবে থাকা থেকে বাঁচা যায়।

৩. স্বভাবগত পাঠ বা পড়ার অভ্যাস (মানুষকে) এত ব্যস্ত রাখে যে, অলস ও অকৰ্মাদের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করা যায় না।

৪. ঘনঘন পাঠের দ্বারা বাগ্মিতার এবং স্পষ্ট বক্তব্যের গুণ লাভ করা যায়।

৫. পাঠ মনকে উন্নত করতে এবং চিন্তা-ভাবনাকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

৬. পাঠ জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতি ও বোধশক্তি উভয়কেই উন্নত করে।

৭ পড়ার মাধ্যমে অন্যদের অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞদের প্রজ্ঞা ও পণ্ডিতদের বোধ (বা বুঝ) দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।

৮ ঘনঘন পড়ার দ্বারা জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্বন্ধে শিক্ষা করে সেগুলো জীবনে বাস্তবায়ন করা এ উভয়বিধ যোগ্যতাই অর্জন করা যায়।

৯. কল্যাণকর বই পড়ার সময় বিশ্বাস বাড়ে বিশেষ করে আমলকারী মুসলিম লেখকদের বই পাঠে। এ ধরনের পুস্তক ধর্মোপদেশে পরিপূর্ণ আর এসব ধর্মোপদেশ কল্যাণের পথ দেখাতে ও অকল্যাণ থেকে দূরে সরাতে খুবই শক্তিশালী।

১০. পাঠ মনকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে এবং সময়কে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচায়।

১১. বারবার পাঠের দ্বারা বহু শব্দের উপর দক্ষতা অর্জন করা যায় এবং বিভিন্ন বাক্য গঠন শিক্ষা করা যায়। অধিকন্তু, ধারণা করার ও বুঝার ক্ষমতা উন্নত হয় যার কথা নিচের দু’পংক্তি কবিতার মাঝে লিখা আছে—

“আত্মার পুষ্টি ধারণা করার ও বুঝার মাঝেই- খাদ্য ও পানির মাঝে নয়।”

উমর (রাঃ) বলেছেন- “আমরা যে উত্তম জীবন লাভ করেছি তা ধৈর্যের মাধ্যমেই এসেছে।”

তিনি আরো বলেছেন- “আমরা যে উত্তম জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তা ধৈর্যের জীবন এবং ধৈর্য যদি মানুষ হতো তবে সে সবচেয়ে বেশি উদার হতো।”

আলী (রাঃ) বলেন- “বাস্তবিকই ঈমানের জন্য ধৈর্য হলো এমনটি যেমনটি নাকি দেহের জন্য মাথা। মাথা কাটা গেলে দেহ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়” অর্থাৎ ধৈর্য না থাকলে ঈমান বা বিশ্বাসও নষ্ট হয়ে যায়।

এরপর তিনি উচ্চস্বরে বলেছেন- “নিশ্চয়, যার ধৈর্য নেই তার ঈমানও নেই”

তিনি আরো বলেন- “ধৈর্য এমন এক বাহন যা কখনও হোচট খায় না।”

হাসান (রহঃ) বলেছেন- “ধৈর্য এমন এক কল্যাণের ভাণ্ডার যা আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যোগ্য মনে করেন শুধুমাত্র তাকেই দান করেন।”

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহঃ) বলেছেন- “আল্লাহ তা'আলা যদি তার কোন বান্দাকে কোন নেয়ামত দিয়ে তা ছিনিয়ে নিয়ে তার বদলে তাকে ধৈর্য প্রদান করেন তবে ধৈর্যই (ঐ ছিনিয়ে নেয়া নেয়ামতের চেয়ে) উত্তম।”

সুলাঈমান ইবনুল কাসিম বলেছেন- “ধৈর্য ছাড়া সকল কাজের প্রতিদানই জানা আছে।”

“একমাত্র ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান অধিক মাত্রায় বেহিসাবে দেয়া হবে।” (৩৯-সূরা আয যুমার: আয়াত-১০)

এমন একদিন আসবে যখন আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টির প্রথম ও শেষ অর্থাৎ সকল সৃষ্টিকে একত্রিত করবেন। শুধুমাত্র এ ঘটনার জ্ঞানই আল্লাহর বিচার সম্বন্ধে আপনাকে নিশ্চয়তা প্রদান করে। সুতরাং, কারো টাকা-পয়সা অন্যায়ভাবে বেদখল হয়ে থাকলে সে সেখানে (হাশরের মাঠে) তা পাবে; যাকে অত্যাচার করা হয়েছে সে সেখানে ন্যায় বিচার পাবে এবং যে অত্যাচার করেছে সে সেখানে শাস্তি পাবে।

জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কেন্ট বলেছেন- “এ জীবনের নাটক (এখানেই) শেষ নয়, এ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য হবে। কেননা, আমরা দেখছি যে, অত্যাচারী ও তার শিকার ন্যায়বিচার না দেখেই নিবৃত বা ক্ষান্ত হচ্ছে বা অত্যাচারিত তার প্রতিশোধ নিতে পারছে না। অতএব, অবশ্যই অন্য জগৎ হবে, সেখানে ন্যায় বিচার করা হবে।”

শায়খ আলী তানতাবী এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, “এ অমুসলিম দার্শনিকের এ বর্ণনার দ্বারা (এমন এক) পরকালের বা আখেরাতের অস্তিত্বের কথার স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়- যেখানে বিচার করা হবে।”

একজন আরব কবি বলেছেন- “যখন মন্ত্রী ও তার প্রতিনিধি স্বেচ্ছাচারী হয় এবং বিচারক তার বিচারে পক্ষপাতিত্ব করে বা অবিচার করে, তখন ধ্বংস, ধ্বংস; আকাশের বিচারকের পক্ষ থেকে জমিনের বিচারকের জন্য রয়েছে ধ্বংস।”

الْيَوْمَ تُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

“আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া হবে। আজ (কারো প্ৰতি) কোনো জুলুম করা হবে না; নিশ্চয় আল্লাহ তরিৎ হিসাব গ্রহণকারী।” (৪০-সূরা আল মু’মিন: আয়াত-১৭)

৭৯. অনেক কাজ জমে গেলে অতিরিক্ত কষ্টবোধ করবেন না

রবার্ট লুই স্টেভেনসন বলেছেন- “প্রতিটি ব্যক্তিই তার দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম—সে কাজগুলো যতই কঠিন হোক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না এবং প্রতিটি লোকই সূর্য ডুবার আগ পর্যন্ত তার সারাটা দিন সুখে কাটাতে সক্ষম আর সেটাই জীবনের অর্থ।”

ষ্টেফেন লীকক বলেছেন- “শিশু বলে : আমি যখন বালক হব...। বালক বলে : আমি যখন তরুণ হব. আর যখন সে সময় আসে তখন সে বলে : আমি যখন বিয়ে করব...। বিয়ের পরে কী ঘটে? আর এসব পর্যায় পার হওয়ার পর কী হয়? সবাই একটি চিন্তার পিছনে সদাই পড়ে আছে যে, যখন আমি অবসর হতে পারব...। কিন্তু, সে যখন সত্যিই বৃদ্ধ বয়সে পৌছে তখন পিছন ফিরে তাকায় (অর্থাৎ অতীতের বিষয় নিয়ে চিন্তা করে দেখে।) আর এক শীতল বায়ু প্রবাহে আক্রান্ত হয় (অর্থাৎ অতীতের দুঃখময় ঘটনার কথা ভেবে বিষাদিত হয়ে যায়। (সে ভাবে যে) সে তার সারা জীবন (বৃথা) নষ্ট করেছে, এক মুহুৰ্তও (সুখে) কাটাতে পারেনি। আর আমরা এভাবেই অনেক পরে বা দেরীতে শিখতে পারি যে, বর্তমান কালের প্রতিটি মুহুর্তেই জীবনকে উপভোগ করাই বা বর্তমান কালের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগানোই (প্রকৃত সুখের) জীবন।”

যারা তওবা করতে বিলম্ব করে-এই হলো তাদের অবস্থা।

আমাদের একজন ধাৰ্মিক পূর্বসূরি বলেছেন- “বিলম্ব করার ব্যাপারে এবং ‘আমি পরে করব’ ও কথা বলার ব্যাপারে আমি তোমাকে সতর্ক করছি কারণ, এটা এমন কথা যা মানুষকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখে এবং সওয়াবের কাজ করা থেকে পিছনে ফেলে দেয়।”

“তাদেরকে খাওয়া-দাওয়া ও ফুর্তি করতে দাও এবং মিথ্যা আশায় তারা মোহাচ্ছন্ন থাকুক। কেননা, শীঘ্রই তারা (প্রকৃত ঘটনা) জানতে পারবে।” (১৫-সূরা হিজর: আয়াত-৩)

ফরাসী দার্শনিক মন্টেইন বলেছেন- “আমার জীবনটা দুর্ভাগ্যে ভরা ছিল, (আমার জীবন) আমাকে কখনো করুণা দেখাওনি।”

আমি একথা স্বীকার করছি যে, তাদের জ্ঞান ও মেধা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রসিদ্ধ অনেকেই তাদের সৃষ্টির আড়ালে যে রহস্য রয়েছে তার কিছুই জানত না। আল্লাহ তার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে যে শিক্ষা পাঠিয়েছেন তারা সে শিক্ষা দ্বারা পরিচালিত হতেন না।

“আর যার জন্য আল্লাহ আলোর ব্যবস্থা করেননি, তার জন্য কোনো আলো নেই।” (২৪-সূরা আন নূর: আয়াত ৪০)

إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا

আমি অবশ্যই তাকে পথ দেখিয়েছি, হয়তো সে কৃতজ্ঞ হোক নয়তো অকৃতজ্ঞ হোক।” (৭৬-সূরা দাহর: আয়াত-৩)

ডেন্‌টি বলেছেন -“একথা ভাবুন যে, আজকের এই দিনটি আর কখনো ফিরে আসবে না।”

এর চেয়ে উত্তম, সুন্দরতর ও অধিকতরপূর্ণ হলো এই হাদীসটি- “এমনভাবে সালাত (নামাজ) আদায় করো যেন এটা তোমার বিদায়কালীন সালাত।”

যে ব্যক্তি এ কথা মনে রাখে যে, আজকের দিনটিই তার শেষ দিন সে খাঁটি তওবা করবে, আমলে সালেহ বা নেক আমল করবে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অনুগত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।

৮০. দুঃখ করবেন না-নিজেকে এ প্রশ্নগুলো করুন

১. ভবিষ্যতের ভয় ও দুশ্চিন্তার কারণে অথবা দিগন্তের ওপারের যাদুময় বাগানের আশায় (আলেয়ার আলোর আশায়) আমি বর্তমান জীবন ভোগ বা বর্তমানে জীবনযাপন ত্যাগ করছি কি?

২. অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে চিন্তা করে করে আমি কি আমার বর্তমানকে তিক্ত করছি?

৩. আমি আমার দিনটি ভালোভাবে কাজে লাগানোর ইচ্ছা নিয়ে কি আমি ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠি?

৪. আমি কি আমার বর্তমান জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হচ্ছি?

৫. অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে কখন আমি বর্তমান জীবন ভোগ করা বা বর্তমান জীবন যাপন শুরু করব? কি আগামী সপ্তাহে? না-কি আগামী কাল? না আজই?

দেখানো হচ্ছেঃ ৭১ থেকে ৮০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৪৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 · · · 32 33 34 35 পরের পাতা »