পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ

৯৫৫-[১৭] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাতে এ দু’আ পাঠ করতেন,

’’আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাস্ সাবা-তা ফিল আমরি ওয়াল ’আযীমাতা ’আলার্ রুশদি, ওয়া আস্আলুকা শুকরা নি’মাতিকা ওয়া হুসনা ’ইবা-দাতিকা, ওয়া আস্আলুকা ক্বলবান সালীমান ওয়ালিসা-নান স-দিক্বান ওয়া আস্আলুকা মিন খয়রি মা- তা’লামু, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন শাররি মা- তা’লামু, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা- তা’লামু’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কাজের স্থায়িত্ব ও সৎপথে দৃঢ় থাকার আবেদন জানাচ্ছি। তোমার নি’আমাতের শুক্‌র ও তোমার ’ইবাদাত উত্তমভাবে করার শক্তির জন্যও আমি তোমার কাছে দু’আ করছি। সরল মন ও সত্য কথা বলার জন্যও আমি প্রার্থনা জানাচ্ছি। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি তুমি যা ভালো বলে জান। আমি তোমার কাছে ঐসব হতে পানাহ চাই যা তুমি আমার জন্য মন্দ বলে জানো। সর্বশেষ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই আমার সে সকল অপরাধের জন্য যা তুমি জানো।)। (নাসায়ী)[1]

আহমাদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

وَعَن شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي صَلَاتِهِ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك الثَّبَات فِي الْأَمر والعزيمة عَلَى الرُّشْدِ وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ وَأَسْأَلُكَ قَلْبًا سَلِيمًا وَلِسَانًا صَادِقًا وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا تَعْلَمُ. رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وروى أَحْمد نَحوه

وعن شداد بن اوس قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول في صلاته اللهم اني اسالك الثبات في الامر والعزيمة على الرشد واسالك شكر نعمتك وحسن عبادتك واسالك قلبا سليما ولسانا صادقا واسالك من خير ما تعلم واعوذ بك من شر ما تعلم واستغفرك لما تعلم رواه النساىي وروى احمد نحوه

ব্যাখ্যা: ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ দু‘আ সালাতে ‘আম্ তথা অনির্ধারিতভাবে নির্দিষ্ট কোন স্থানের জন্য খাস না।

আমি (ভাষ্যকার) বলি, আহমাদ-এর রিওয়ায়াত আছে, ‘‘এ সমস্ত দু‘আ আমাদের সালাতে অথবা সালাতের শেষে পড়া।’’

(اَللّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الثَّبَاتُ فِي الْأَمْرِ) তথা দীনের সকল কাজে যেন সর্বদাই অঁটুট থাকতে পারি এবং তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারি।

‘আল্লামা শাওকানী বলেনঃ কাজে সুদৃঢ় থাকার আবেদন যেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বল্প বাক্যের মধ্যে অনেক বাক্যের সমষ্টিতুল্য, কেননা আল্লাহ যাকে কর্মে সুদৃঢ় রাখেন তাকে ধ্বংসাত্মক কাজে পতিত হওয়া হতে বেঁচে থাকবে আর এমন অনৈতিক কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়বে না যা আল্লাহ অপছন্দ করেন।

(وَالْعَزِيْمَةَ عَلَـى الرُّشْدِ) সৎ পথে চলার সুদৃঢ়তা, এর সঠিক অর্থ সত্য পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। সঠিক পথকে আঁকড়িয়ে ধরা ও অবিচল থাকা। যেমন- তিরমিযীর বর্ণনা (أَسْأَلُكَ عَزِيْمَةُ الرُّشْدِ) আমি আপনার কাছে কামনা করছি সঠিক পথের দৃঢ়তা; এর অর্থ প্রচেষ্টা করা, হিদায়াতের কর্মে যাতে সে তার প্রতিটি কাজ সে পূর্ণ করতে পারে।

(وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ) তথা তোমার নি‘আমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফীক্ব কামনা করছি।

(وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ) আর তোমার ‘ইবাদাত তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের উপর করতে পারি।

(وَأَسْأَلُكَ قَلْبًا سَلِيْمًا) তোমার কাছে পরিচ্ছন্ন হৃদয় কামনা করছি তথা সকল প্রকার বাতিল ‘আক্বীদাহ্ বা চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস হতে আর কুপ্রবৃত্তির আকর্ষণ হতে।

(وَلِسَانًا صَادِقًا) জিহবা সংরক্ষিত হয় মিথ্যা হতে।

(وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ) আর কল্যাণ কামনা করছি যা তুমি জানো।

(وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا تَعْلَمُ) যা তুমি জান পাপ কাজ ও ‘আমলে কমতি আর তিরমিযী অতিরিক্ত করেছে (إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ) নিশ্চয় আপনি গায়েবের বিষয় অধিক জানেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ

৯৫৬-[১৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাতের মধ্যে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর বলতেন, ’’আহসানুল কালা-মি কালামুল্ল-হি ওয়া আহসানুল হাদয়ি হাদয়ু মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’- (অর্থাৎ- আল্লাহর ’কালামই’ সর্বোত্তম কালাম। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিদায়াতই সর্বোত্তম হিদায়াত।)। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي صَلَاتِهِ بَعْدَ التَّشَهُّدِ: «أَحْسَنُ الْكَلَامِ كَلَامُ اللَّهِ وَأَحْسَنُ الْهَدْيِ هدي مُحَمَّد» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

وعن جابر قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول في صلاته بعد التشهد احسن الكلام كلام الله واحسن الهدي هدي محمد رواه النساىي

ব্যাখ্যা: হাদীসটির সুস্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায় উল্লিখিত দু‘আটি শারী‘আতসম্মত তাশাহুদের পরে এবং সালামের পূর্বে আর এটাই নাসায়ী (রহঃ) অনুধাবন করেছেন তিনি হাদীসটিকে চয়ন করেছেন।

بَابُ نَوْعِ اخِرُ مِّنَ الذِّكْرِ بَعْدَ التَّشَهُّدِ তথা তাশাহুদের পরে আরো অন্যান্য দু‘আ অনুরূপ জাহারী জামি‘উল উসূলে বলেছেন।

কিন্তু আলবানী (রহঃ) ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, উল্লিখিত দু‘আটি প্রসিদ্ধ খুতবাহ্ হাজাত এর মধ্যে শাহাদাত-এর পরে প্রযোজ্য। এমনকি তিনি বলেছেন, فِي صَلَاتِه দ্বারা উদ্দেশ্য তাঁর দু‘আ ও আল্লাহর প্রশংসায় بَعْدَ التَّشَهُّدِ দ্বারা উদ্দেশ্য খুৎবায়।

আর জাবির (রাঃ)-এর এ হাদীস সংক্ষিপ্ত নাসায়ীতে যা বিস্তারিত মুসলিমে এসেছে।

জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুৎবাহ্ বা ভাষণ দিতেন তাঁর চোখ লাল হতো এবং আওয়াজ উঁচু হতো এবং তাঁর রাগ কঠিন হতো এবং তার পরে বলতেন সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ এবং তাঁর বর্ণনায় অন্য শব্দে এসেছে-

তিনি খুৎবাহ্ দিতেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করতেন যে, প্রশংসার তিনি যোগ্য, অতঃপর বলতেন আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন তাকে পথভ্রষ্ট কেউ করতে পারে না। আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হিদায়াতের পথ দেখাতে পারে না। আর উত্তম হাদীস হলো আল্লাহর কিতাব। আর আল্লাহর প্রশংসা বলতে এখানে প্রসিদ্ধ খুতবাহ্।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ

৯৫৭-[১৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের ভিতর এক সালাম ফিরাতেন সামনের দিকে। এরপর ডানদিকে একটু মোড় নিতেন। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُول الله صلى يُسَلِّمُ فِي الصَّلَاةِ تَسْلِيمَةً تِلْقَاءَ وَجْهِهِ ثُمَّ تميل إِلَى الشق الْأَيْمن شَيْئا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت كان رسول الله صلى يسلم في الصلاة تسليمة تلقاء وجهه ثم تميل الى الشق الايمن شيىا رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দিতেন ক্বিবলামুখী করে সালাম ফিরাতেন যেমনটি ইবনু হাজার বলেছেন। আর মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, সালাম শুরু করতেন সম্মুখের দিকে, অতঃপর সামান্য ডান পাশে করতেন।

আর এ হাদীস প্রমাণ করে সালাতে সালাম শারী‘আতসম্মত। ইতিপূর্বে এ আলোচনা হয়ে গেছে।

এটি দু’ সালামের হাদীসের বিরোধী না বরং এক সালামের হাদীসের মর্মার্থই প্রমাণ করে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঁচুস্বরে সালাম দিতেন এবং মুক্তাদীদেরকে এক সালাম শুনাতেন আর না এক সালামের উপর সীমাবদ্ধ করতেন। সুতরাং প্রমাণ করে এক সালাম শুনাতেন যেমনটি আহমাদ-এর রিওয়ায়াত রাতের সালাতের ঘটনায় এসেছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সালাম দিতেন ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম’’ তাঁর আওয়াজকে উঁচু করতেন তাতে আমরা জাগ্রত হতাম।

আর ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস আহমাদে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোড় সালাত ও বিতর সালাত কে পৃথক করতেন এক সালামের মাধ্যমে তিনি তা আমাদেরকে শুনাতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ

৯৫৮-[২০] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইমামের সালামের উত্তর দিতে, একে অন্যকে ভালোবাসতে ও পরস্পর সালাম বিনিময় করতে হুকুম দিয়েছেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ سَمُرَةَ قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَرُدَّ عَلَى الْإِمَامِ وَنَتَحَابَّ وَأَنْ يُسَلِّمَ بَعْضُنَا عَلَى بَعْضٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن سمرة قال امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان نرد على الامام ونتحاب وان يسلم بعضنا على بعض رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (أَنْ نَرُدَّ عَلَـى الْإِمَامِ) আমরা সালামের জবাব দিতাম ইমামকে দ্বিতীয় সালামের মাধ্যমে যারা ইমামের ডানে থাকি আর প্রথমে জবাব দেই যারা ইমামের বামে থাকি এবং উভয় পাশে যারা থাকেন।

(نَتَحَابَّ) একে অপরকে যেন ভালোবাসে- মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন যে, আমরা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীকে ভালোবাসার সাথে সকল মু’মিনকে ভালোবাসব যেন প্রত্যেকে চমৎকার আচরণ, সৎ কাজ করে এবং সত্য কথা বলে আর বিশুদ্ধ কল্যাণ কামনা করে যা ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের দিকে নিয়ে যাবে।

(وَأَنْ يُسَلِّمَ بَعْضُنَا عَلـى بَعْضٍ) একে অপরকে সালাম দিবে। আর এ সালাম, সালাত ও সালাতের বাইরে উভয় স্থানেই অন্তর্ভুক্ত, তবে বাযযার শুধু সালাতের সাথেই সংশ্লিষ্ট করেছে।

আর শাওকানী বলেনঃ এটা ইমামের সালাম মুক্তাদীর ওপর আর মুক্তাদীর সালাম ইমামের ওপর ও মুক্তাদীর সালাম পরস্পর পরস্পরের ওপর।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে