পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯৫-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীন সর্বদাই বিজয়ী থাকবে (ততদিন), যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কারণ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা ইফতার করতে বিলম্ব করে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الدين ظاهرا ما عجل الناس الفطر لان اليهود والنصارى يوخرون رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: ‘‘যতদিন পর্যন্ত লোকেরা দ্রুত ইফতার করবে ততদিন পর্যন্ত দীন বিজয়ী থাকবে।’’ ‘আল্লামা আল কারী বলেনঃ আল্লাহই ভাল জানেন এর কারণ হয়ত এই যে, এই দীনে হানীফ তথা ইসলামী জীবন বিধান একটি সহজ সরল জীবন বিধান। এতে কোন প্রকার সংকীর্ণতা নেই। তাই অব্যাহতভাবে এ দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অত্যন্ত সহজ যা আহলে কিতাবদের বিপরীত। কেননা আহলে কিতাবগণ নিজেদের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছিল বিধায় আল্লাহ তা‘আলাও তাদের ওপর কঠোরতা আরোপ করেন। ফলে তারা তাদের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে ব্যর্থ হয়।

(لِأَنَّ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰى يُؤَخِّرُوْنَ) ‘‘কেননা ইয়াহূদ ও নাসারাগণ বিলম্বে ইফতার করে।’’ অর্থাৎ- তারা সূর্যাস্তের পরও আকাশে ঘন তারকা দেখা যাওয়া পর্যন্ত ইফতার করতে বিলম্ব করে। সাধারণভাবেই বুঝা যায় যে, এ বিলম্বের জন্য সায়িমের কষ্ট হয়। আর এ কষ্টের কারণেই সিয়াম পালনে ব্যর্থ হয়ে তারা সিয়াম পালনই ছেড়ে দেয়। পক্ষান্তরে ইসলাম সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করার নির্দেশ দিয়ে সায়িমের জন্য সিয়াম সহজ করে দিয়েছেন। আর যারা এ সহজ পথ অবলম্বন করবে তারা সিয়াম পালনে ব্যর্থ হবে না তাই দীন বিজয়ী থাকবে।

ইমাম ত্বীবী বলেনঃ বিলম্ব না করার কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তা আহলে কিতাবদের কাজ। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ইসলামের শত্রু আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করার মধ্যেই এ দীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর তাদের অনুসরণ করার মধ্যেই এ দীনের ধ্বংস নিহীত আছে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

يٰٓايُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصٰرٰى أَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهمِنْهُمْ

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও নাসারাদেরকে নিজেদের বন্ধু বানাবে না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তোমাদের মধ্যে হতে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে তারা তাদেরই দলভুক্ত।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৫১)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯৬-[১৫] আবূ ’আত্বিয়্যাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক উভয়ে (একদিন) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম ও আমরা আরয করলাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন সাথী আছেন। তাদের একজন দ্রুত ইফতার করেন, দ্রুত সালাত আদায় করেন। আর দ্বিতীয়জন বিলম্বে ইফতার করেন ও বিলম্বে সালাত আদায় করেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তাড়াতাড়ি করে ইফতার করেন ও সালাত আদায় করেন কে? আমরা বললাম, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। আর অপর ব্যক্তি যিনি ইফতার করতে ও সালাত আদায় করতে দেরী করতেন, তিনি ছিলেন আবূ মূসা। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ أَبِي عَطِيَّةَ قَالَ: دَخَلْتُ أَنَا وَمَسْرُوقٌ عَلَى عَائِشَةَ فَقُلْنَا: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ رَجُلَانِ مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَدُهُمَا يُعَجِّلُ الْإِفْطَارَ وَيُعَجِّلُ الصَّلَاةَ وَالْآخَرُ: يُؤَخِّرُ الْإِفْطَارَ وَيُؤَخِّرُ الصَّلَاةَ. قَالَتْ: أَيُّهُمَا يُعَجِّلُ الْإِفْطَارَ وَيُعَجِّلُ الصَّلَاةَ؟ قُلْنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ. قَالَتْ: هَكَذَا صَنَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخَرُ أَبُو مُوسَى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي عطية قال دخلت انا ومسروق على عاىشة فقلنا يا ام المومنين رجلان من اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم احدهما يعجل الافطار ويعجل الصلاة والاخر يوخر الافطار ويوخر الصلاة قالت ايهما يعجل الافطار ويعجل الصلاة قلنا عبد الله بن مسعود قالت هكذا صنع رسول الله صلى الله عليه وسلم والاخر ابو موسى رواه مسلم

ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী বলেনঃ যিনি তাড়াতাড়ি ইফতার করেন ও তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেন তিনি শারী‘আতে দৃঢ় বিধান ও সুন্নাতের উপর ‘আমল করেন। আর যিনি বিলম্বে ইফতার করেন ও বিলম্বে সালাত আদায় করেন তিনি শারী‘আত যে সুযোগ দিয়েছে তার উপর ‘আমল করেন। উল্লেখ্য যে, হাদীসে বর্ণিত প্রথম ব্যক্তি হলেন ইবনু মাস্‘ঊদ এবং ২য় ব্যক্তি হলেন আবূ মূসা আল আশ্‘আরী। কারী বলেনঃ উপরোক্ত মতভেদ বলতে তাদের ‘আমলের মতভেদ উদ্দেশ্য হলে তা অবশ্য সঠিক। আর যদি এ মতভেদ দ্বারা তাদের বক্তব্য উদ্দেশ্য হয় তাহলে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) এর বক্তব্য দ্বারা উক্ত কাজ দ্রুত করার ক্ষেত্রে আধিক্য বুঝানো উদ্দেশ্য আর আবূ মূসার বক্তব্য দ্বারা দ্রুততার আধিক্য না বুঝানো উদ্দেশ্য। তবে বিলম্বে সুযোগের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এখানে অবশ্য এটাও হতে পারে যে, ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) এর কর্ম দ্বারা সুন্নাত বুঝানো উদ্দেশ্য। আর আবূ মূসার কর্ম দ্বারা বিলম্ব করা বৈধ হওয়া বুঝানো উদ্দেশ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯৭-[১৬] ’ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) আমাকে রমাযানের সাহরী খেতে ডাকলেন এবং বললেন, বারাকাতপূর্ণ খাবার খেতে এসো। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ: دَعَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى السَّحُورِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَ: «هَلُمَّ إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والسنائي

وعن العرباض بن سارية قال دعاني رسول الله صلى الله عليه وسلم الى السحور في رمضان فقال هلم الى الغداء المبارك رواه ابو داود والسناىي

ব্যাখ্যা: (هَلُمَّ إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ) ‘‘বারাকাতপূর্ণ সকালের খাবারের দিকে এসো’’। দিনের প্রথম ভাগের খাবারকে ‘আরাবীতে (الْغَدَاءُ) বলা হয়। এখানে সাহরীকে (الْغَدَاءُ) ‘‘গাদা’’ এজন্য বলা হয়ছে যে, তা সায়িমের জন্য মুফতিরের তথা সিয়ামবিহীন অবস্থায় সকালের খাবারের তুল্য।

ইমাম খাত্ত্বাবী বলেনঃ সাহরীকে (الْغَدَاءُ) এজন্য বলা হয়েছে যে, সায়িম ব্যক্তি এ খাবার দ্বারা দিনের বেলায় সিয়াম পালনের শক্তি অর্জন করে থাকে। এক্ষেত্রে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে সকালের খাবার দ্বারা শক্তি অর্জন করে। কোন ব্যক্তি যখন তার প্রয়োজন পূরণের জন্য ভোর থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের মধ্যে কোন কাজ করে সে ক্ষেত্রে ‘আরবরা বলে থাকে غدا فلان لحاجته। তাই সিয়াম পালনকারী কর্তৃক সাহরীর সময় প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণকে (الْغَدَاءُ) বলা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৯৮-[১৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের জন্য সাহরীর উত্তম খাবার হলো খেজুর। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنَ التَّمْرُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نعم سحور المومن التمر رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: এখানে (تمر) খেজুরকে উত্তম সাহরী বলা হয়েছে। কারণ তা দ্বারা সাহরীর মধ্যে বারাকাত রয়েছে এবং প্রচুর সাওয়াবও রয়েছে। এজন্য অন্যান্য সাহরীর উপর একে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অনুরূপ ইফতারের ক্ষেত্রেও যদি রুতাব (টাটকা খেজুর) না পাওয়া যায়। ইমাম ত্বীবী বলেনঃ সাহরীর খাবার হিসেবে খেজুরের প্রশংসা করার কারণ এই যে, সাহরী গ্রহণ করাটাই একটি বারাকাতময় কাজ আর খেজুর দ্বারা সাহরী গ্রহণ করা বারাকাতের উপর বারাকাত। যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ইফতার করে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, কেননা তার মধ্যে বারাকাত রয়েছে’’। অতএব তা দ্বারা শুরু করা এবং তা দ্বারা শেষ করার মাধ্যমে উভয় ক্ষেত্রে বারাকাত অর্জন করাই উদ্দেশ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে