পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)

الْقَسْمِ শব্দটির ’কফ’ বর্ণে যবর এবং ’সীন’ বর্ণে সাকীন যোগে মাসদার বা শব্দমূল হিসেবে পঠিত হয়। অর্থ ভাগ-বণ্টনে করা শরীক বা অংশীদারদের মাঝে প্রাপ্য অংশ বণ্টন করে দেয়া। অনুরূপ স্ত্রীদের মাঝে পালি বণ্টন করা, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্ত্রীদের নিকট (পালাক্রমিক) রাত যাপন করা। ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্ত্রীর মাঝে সমতা বিধান করা, একেই নামকরণ করা হয়েছে ’স্ত্রীদের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা’। এই ন্যায়বিচার আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি রাতের পালার ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে প্রযোজ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৩২২৯-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের সময় নয়জন সহধর্মিণী ছিল। তন্মধ্যে (বিবি সাওদাহ্ (রাঃ) ব্যতীত) আটজনের জন্য পালা বণ্টন করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَسْمِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُبِضَ عَنْ تِسْعِ نِسْوَةٍ وَكَانَ يقسم مِنْهُنَّ لثمان

عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قبض عن تسع نسوة وكان يقسم منهن لثمان

ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়জন স্ত্রীকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন, তারা হলেন- ‘আয়িশাহ, হাফসাহ্, সাওদাহ্, উম্মু সালামাহ্, সফিয়্যাহ্, মায়মূনাহ্, উম্মু হাবীবাহ্, যায়নাব এবং জুওয়াইরিয়াহ্ (রাঃ)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের আটজনের মধ্যে পালাক্রমে রাত যাপন করতেন। নবম স্ত্রী সাওদাহ্ (রাঃ) বৃদ্ধা হয়ে পড়লে তার অংশ বা পালা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে হেবা করে দেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের সকলের নিকট গমন করতেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তার পালা শেষ হতো। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৬৭; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৬৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)

৩২৩০-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী সাওদাহ্ বার্ধক্যে উপনীত হওয়ায় বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার নিকট আমার প্রাপ্যের দিন (রাত্রি যাপন) আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দিলাম। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর জন্য দু’দিন নির্ধারণ করেন, একদিন তার নিজের আর একদিন সাওদার। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَسْمِ

وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ سَوْدَةَ لَمَّا كَبِرَتْ قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ جَعَلْتُ يَوْمِي مِنْكَ لِعَائِشَةَ فَكَانَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَسَّمُ لِعَائِشَةَ يَوْمَيْنِ يَوْمَهَا وَيَوْم سَوْدَة

وعن عاىشة ان سودة لما كبرت قالت يا رسول الله قد جعلت يومي منك لعاىشة فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقسم لعاىشة يومين يومها ويوم سودة

ব্যাখ্যা : এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী সাওদাহ্ (রাঃ) বিনতু যাম্‘আহ্ (রাঃ) যখন অতিবৃদ্ধা হয়ে পড়েন তখন তিনি তার প্রাপ্য পালাটুকু তার সতীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দান করে দেন। সেই ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পালা দুই দিন নির্ধারণ করেন। হিদায়াহ্ গ্রন্থাকার বলেন, যদি একাধিক স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ তার প্রাপ্য পালা তার সঙ্গীনীদের (সতীনদের) জন্য ছেড়ে দিতে রাযী হয় তবে তা বৈধ। ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, স্বামীর পক্ষ থেকে যদি কোনো স্ত্রীকে ঘুষ দিয়ে তার পালা অন্য স্ত্রীকে দেয়া হয় অথবা স্বামীই এ শর্তে বিয়ে করে যে, আমি তার কাছে দু’দিন থাকব, ইত্যাদি শর্তসমূহ বাতিল বলে গণ্য হবে।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ কোনো স্ত্রী যদি তার পালা অন্যকে হেবা করে দেয় তবে পরবর্তী সময়ে সে যখনই চায় তার হেবা প্রত্যাহার করে অধিকার ফিরে নিতে পারবে। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২১২; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৬৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)

৩২৩১-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায় (মৃত্যু হবে এমন) অবস্থায় জিজ্ঞেস করছিলেন, আগামীকাল আমি কোথায় (থাকব)? আগামীকাল কার ঘরে (থাকব)? তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, এই (পুনঃপুনঃ) বলার উদ্দেশ্য হলো, ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পালা কবে আসবে? এমতাবস্থায় সকল স্ত্রী তাঁকে তাঁর সদিচ্ছায় থাকার অনুমতি দিতেন। অতঃপর তিনি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরেই অবস্থান করেন এবং তার কাছে থেকেই ইন্তেকাল করেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْقَسْمِ

وَعَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَسْأَلُ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ: «أَيْنَ أَنَا غَدًا؟» يُرِيدُ يَوْمَ عَائِشَةَ فَأَذِنَ لَهُ أَزْوَاجُهُ يَكُونُ حَيْثُ شَاءَ فَكَانَ فِي بَيْتِ عَائِشَةَ حَتَّى مَاتَ عِنْدَهَا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعنها ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يسال في مرضه الذي مات فيه اين انا غدا يريد يوم عاىشة فاذن له ازواجه يكون حيث شاء فكان في بيت عاىشة حتى مات عندها رواه البخاري

ব্যাখ্যা : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুখে মৃত্যুবরণ করেন সেই সময় তিনি তার অসুস্থতার দিনগুলো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে কাটানোর অভিপ্রায়ে এ কথা বলেন যে, আগামীকাল আমি কোথায় থাকব? আগামীকাল আমি কোথায় থাকব? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি অধিক মুহববাতের কারণেই তিনি এ কথা বলেছেন। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (أَيْنَ أَنَا غَدًا؟) ‘‘আগামীকাল আমি কোথায় থাকব?’’ এর ব্যাখ্যা হলো, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দ্বারা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পালা আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। অথবা তার প্রশ্নটি ছিল স্ত্রীদের নিকট অনুমতি কামনা করা যেন তারা অসুস্থতার দিনগুলো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট থাকার অনুমতি প্রদান করে। সে মতে স্ত্রীগণও তিনি যেখানে থাকতে চান সেখানেই থাকার অনুমতি প্রদান করেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যু পর্যন্ত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরেই অবস্থান করেন।

মুযহির (রহঃ) বলেনঃ স্ত্রীদের মধ্যে পালা বণ্টন যে ওয়াজিব এ হাদীস তা প্রমাণ করে এবং এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যও আবশ্যক, এমনকি অসুস্থ অবস্থায়ও।

এটাও সত্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ ছিল স্ত্রীদের প্রতি অধিক ভালোবাসা এবং উত্তম আচরণের ফলশ্রুতি সরূপ এবং তা ছিল মুস্তাহাব। কেউ কেউ বলেছেন, স্ত্রীদের মধ্যে পালা বণ্টন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ওয়াজিব ছিল না বরং তার জন্য ছিল মুস্তাহাব, কেননা তিনি একই রাতে সমস্ত স্ত্রীদের কাছে গমন করতেন। এর উত্তরে বলা হয়েছে, এটা ছিল পালা বণ্টন ওয়াজিব হওয়ার আগের ঘটনা, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের অনুমতি সাপেক্ষেই তা করেছিলেন। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৪৫০; শারহে মুসলিম ১৫/১৬ খন্ড, হাঃ ২৪৪৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)

৩২৩২-[৪] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো সফরে বের হলে তাঁর সহধর্মিণীগণের মধ্যে লটারির মাধ্যমে (নির্বাচিত করে) যার নাম উঠত তাকে সাথে নিয়ে যেতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَسْمِ

وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ فأيهن خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا مَعَهُ

وعنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اراد سفرا اقرع بين نساىه فايهن خرج سهمها خرج بها معه

ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সফরে বের হতেন স্ত্রীদের মধ্যে থেকে একজনকে সফরসঙ্গী করতেন। এতে জাগতিক এবং আত্মিক উভয়বিধ কল্যাণ নিহিত ছিল। স্ত্রীদের একজনকে নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি লটারীর ব্যবস্থা করতেন। লটারীতে যার নাম আসত তাকে তিনি সাথে নিয়ে যেতেন।

শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে রয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন স্বীয় প্রয়োজনে সফরের ইচ্ছা পোষণ করবে আর স্ত্রীদের কাউকে সফরে সাথে রাখতে চাইবে তখন তাদের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে একজনকে নির্বাচন করবে। এরপর লটারী করে যখন একজনকে নিয়ে সফরে রওনা হবে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা বলব তার সফরজনিত অনুপস্থিতকালে সে বাকী স্ত্রীদের মাঝে ন্যায় বিচার করতে পারবে না। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৯৩; শারহে মুসলিম ১৫/১৬ খন্ড, হাঃ ২৪৪৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)

৩২৩৩-[৫] আবূ ক্বিলাবাহ্ (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি [আনাস (রাঃ)] বলেছেনঃ সুন্নাত তরীকাহ্ হলো, কেউ যদি পূর্ব বিবাহিতা স্ত্রী থাকাকালীন কুমারী বিয়ে করে তার নিকট সাতদিন অবস্থান করে, পরে পালা বণ্টন করবে। আর যদি বিধবা (বা তালাকপ্রাপ্তা) বিয়ে করে তার নিকট তিনদিন অবস্থান করে, পরে বণ্টন করবে। আবূ ক্বিলাবাহ্ বলেন, আমি যদি বলতে ইচ্ছা করি তবে তা হলো, হাদীসটি আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَسْمِ

وَعَنْ أَبِي قِلَابَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مِنَ السُّنَّةِ إِذَا تَزَوَّجَ الرَّجُلُ الْبِكْرَ عَلَى الثَّيِّبِ أَقَامَ عِنْدهَا سبعا وَقسم إِذا تَزَوَّجَ الثَّيِّبَ أَقَامَ عِنْدَهَا ثَلَاثًا ثُمَّ قَسَمَ. قَالَ أَبُو قلَابَة: وَلَو شِئْت لَقلت: إِن أَنَسًا رَفْعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

وعن ابي قلابة عن انس قال من السنة اذا تزوج الرجل البكر على الثيب اقام عندها سبعا وقسم اذا تزوج الثيب اقام عندها ثلاثا ثم قسم قال ابو قلابة ولو شىت لقلت ان انسا رفعه الى النبي صلى الله عليه وسلم

ব্যাখ্যা : কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী থাকতে আরো একাধিক বিয়ে করতে চায় তাহলে সে যদি কুমারী নারীকে বিবাহ করে তাহলে অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে পালাবণ্টনের পূর্বেই নববিবাহিতা কুমারী স্ত্রীর নিকট সাত দিন কাটাবে, অতঃপর পালাক্রমের আওতাভুক্ত হবে। আর যদি সায়্যেবাহ বা অকুমারী নারীকে বিয়ে করে তাহলেও অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে পালাবণ্টনের আওতাভুক্ত হওয়ার আগে তার সাথে তিন দিন কাটাবে, এরপর পালার অন্তর্ভুক্ত হবে। কুমারী কিংবা অকুমারীকে বিবাহের পর পরই সাত কিংবা তিনের এই ভেদাভেদ মাত্র, এই দিনে অতিবাহিত হলে কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।

অনেক হানাফী ‘আলিমসহ ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) অত্র হাদীসের ভিত্তিতে এই মতের প্রবক্তা; পক্ষান্তরে সামনের মুতালাক বা সাধারণ নির্দেশসূচক দু’টি হাদীসের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের আরেক দল ‘আলিম বলেন, কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সূরা আন্ নিসার ৩ নং আয়াত এবং ১২৯ নং আয়াতকেও তারা দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকে না সেখানে উল্লেখ হয়েছে: ‘‘যদি তোমরা আশংকা কর যে, (স্ত্রীদের মধ্যে) ন্যায় বিচার করতে পারবে না।’’ (সূরাহ আন্ নিসা ৪ : ৩)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘‘তোমরা কক্ষনো (স্ত্রীদের মধ্যে) ন্যায় বিচার করতে সক্ষম হবে না।’’ (সূরাহ আন্ নিসা ৪ : ১২৯)

এখানে স্ত্রীদের অধিকার সমানরূপে বলা হয়েছে। এটা কুরআন, যা অকাট্য, আর হাদীস হলো খবরে ওয়াহিদ যা অকাট্য নয়, সুতরাং তা দ্বারা অকাট্য বস্তুকে রহিত করা যাবে না।

এর উত্তরে বলা হয়, কুরআন যেমন অকাট্য হাদীস সহীহ হলে সেটিও অকাট্য, উপরন্তু এখানে হাদীস দ্বারা কুরআনকে রহিত করাও হচ্ছে না, সুতরাং এরূপ দাবী অবান্তর।

এ হাদীসটি আনাস থেকে বর্ণিত, তিনি এটি মারফূ‘ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেননি। বরং তিনি বলেছেন, সুন্নাত হলো যখন কেউ কুমারীকে বিবাহ করবে ...। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় এটি মারফূ‘ নয়, কিন্তু আনাস -এর শাগরেদ পরবর্তী রাবী আবূ ক্বিলাবাহ্ (রহঃ) বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে বলতে পার এ হাদীসটিকে আনাস মারফূ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেননা কোনো সাহাবী যদি বলেন ‘সুন্নাত হলো’ ... তাহলে এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত ছাড়া আর কি বুঝাবে? নিশ্চয় নিজে ইজতিহাদ করে বলেননি, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেই বলেছেন, সুতরাং সেটা মারফূ‘ হাদীসেরই মর্যাদাসম্পন্ন।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ কোনো সাহাবীর মুখে ‘সুন্নাত’ বলা মুহাদ্দিসীন এবং জুমহূর সালাফদের মাযহাব মতে বর্ণনাটি মারফূ‘ হাদীসের মর্যাদা পায়।

কেউ কেউ এটাকে মাওকূফ হাদীসের মর্যাদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের কথার কোনই ভিত্তি নেই।

‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ কোনো সাহাবীর মুখে সুন্নাতের দাবী হাদীসটি মুসনাদ তথা সানাদ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে হিসেবে বিবেচিত হয়, কেননা সাহাবীগণ সুন্নাত দ্বারা সুন্নাত রসূলই উদ্দেশ্য নিতেন। এছাড়াও এ হাদীসটি আনাস থেকে একাধিক ব্যক্তি মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করেছেন যেমন দারাকুত্বনী প্রমুখ মুহাদ্দিস আনাস থেকে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, আনাস বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুমারীর জন্য সাতদিন এবং অকুমারীর জন্য তিনদিন...। ইমাম বাযযারও অনুরূপ হাদীস উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২১৩; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬১; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ কিলাবাহ্ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)

৩২৩৪-[৬] আবূ বকর ইবনু ’আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে বিয়ে করার পর তাঁর খিদমাতে থাকাকালীন ভোরে উঠে বললেন, তুমি তোমার বংশের নিকট সম্মানহানী হবে না; যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে আমি তোমার নিকট সাতদিন অবস্থান করব। এভাবে অন্য স্ত্রীগণের নিকটও সাতদিন করে থাকব। আর যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে তোমার নিকট তিনদিন অবস্থান করব এবং তিনদিন করে পালা বণ্টন করব। তিনি [উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)] বললেন, তবে তিনদিন করে পালা বণ্টন করুন।

অপর বর্ণনায় আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বলেন : কুমারীর জন্য সাতদিন, আর (পূর্ব) বিবাহিতার জন্য তিনদিন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَسْمِ

وَعَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِين تَزَوَّجَ أُمَّ سَلَمَةَ وَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ قَالَ لَهَا: «لَيْسَ بِكِ عَلَى أَهْلِكِ هَوَانٌ إِنْ شِئْتِ سَبَّعْتُ عِنْدَكِ وَسَبَّعْتُ عِنْدَهُنَّ وَإِنْ شِئْتِ ثَلَّثْتُ عِنْدَكِ وَدُرْتُ» . قَالَتْ: ثَلِّثْ. وَفِي رِوَايَةٍ: إِنَّهُ قَالَ لَهَا: «لِلْبِكْرِ سَبْعٌ وَلِلثَّيِّبِ ثَلَاثٌ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي بكر بن عبد الرحمن ان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين تزوج ام سلمة واصبحت عنده قال لها ليس بك على اهلك هوان ان شىت سبعت عندك وسبعت عندهن وان شىت ثلثت عندك ودرت قالت ثلث وفي رواية انه قال لها للبكر سبع وللثيب ثلاث رواه مسلم

ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে বিয়ে করার পর তিনি তাকে বলেন, আমার সাথে তোমার বিয়ের কারণে তোমার বংশের মর্যাদার কোনো হানি ঘটবে না। এখানে ‘আহ্ল’ দ্বারা বংশকে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ‘আহ্ল’ দ্বারা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেই বুঝানো হয়েছে, কেননা স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকেই একে অপরের ‘আহ্ল’। এ অবস্থায় অর্থ হবে তোমার নিকট তিনদিন অবস্থান করায় তোমার প্রতি আমার আগ্রহ ভালোবাসার কমতি বুঝাবে না, কেননা অকুমারীর কাছে তিনদিন অবস্থান করাই বিধান। তবে তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার নিকট সাতদিনই অবস্থান করতে পারি। কিন্তু তখন অন্যান্যা স্ত্রীদের নিকটও সাতদিন অবস্থান করতে হবে।

হিদায়াহ্ গ্রন্থাকার বলেনঃ স্ত্রীদের মধ্যে গমন পরিক্রমায় সমতাই উদ্দেশ্য, চাই একদিনের হোক অথবা দুই অথবা তিন বা ততোধিক দিনের হোক। এক্ষেত্রে নতুন-পুরাতনের মাঝে কোনো ব্যবধান নেই।

ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ আমার ধারণা যে, অধিক দিন একত্রিত করা ক্ষতিজনক, তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি সম্মত হয়ে করে সেটা ভিন্নকথা।

কেউ কেউ বলেছেন, স্বামী স্ত্রীকে তিনের ইখতিয়ার দিবে, তিনদিন নিলে এই তিন অন্যের মধ্যে বণ্টন হবে না, আর সাতদিনের ইখতিয়ার গ্রহণ করলে তিনের অতিরিক্ত দিনগুলো অন্যান্য স্ত্রীদের মধ্যেও পালাবণ্টন হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে বলেছিলেন, তুমি চাইলে তোমার নিকট আমার অবস্থানের জন্য সাতদিনই নির্ধারণ করতে পার; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার অর্থ হলো তিনদিনের পর তুমি চাইলে সাতদিনই অবস্থান করব যাতে তোমার গোত্রের লোকেরা খুশী থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে কুমারী নারীর মর্যাদা দান করেছেন এবং তার গোত্রের সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ নবপরিণিতা কুমারী অকুমারীর জন্য বিশেষ সাত অথবা তিন দিনের বিষয়ে ফুকাহাগণ বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই বলেছেন, উল্লেখিত দিনগুলো অন্যান্য স্ত্রীদের মধ্যে পালাক্রমের হিসেবে আসবে না।

‘আল্লামা তূরিবিশ্তী (রহঃ) বলেন, কুমারীর জন্য সাতদিন এবং অকুমারীর জন্য তিনদিন এটা সুন্নাত। নববিবাহিতাদের জন্য এই বিশেষ দিনগুলো তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ এবং অন্তরঙ্গ হওয়ার জন্য শারী‘আতের বিশেষ ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে কুমারীর জন্য বেশী দিন ধার্য করা হয়েছে তার ভীতি ও ঘৃণা দূরীভূত হওয়া এবং হৃদয়ের প্রশান্তি ও স্থিতির জন্য, এটা তার বিশেষ ফযীলত। ‘উলামাদের অধিকাংশের মত হলো, এটা নববিবাহিতাদের বাসর পাওনা। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে