পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৪-[১] আবূ সালামাহ্ (রহঃ) ফাত্বিমাহ্ বিনতু কয়স (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তার স্বামী আবূ ’আমর ইবনু হাফস্ তাকে চূড়ান্ত তালাক দেয়, ঐ সময়ে সে মদীনায় উপস্থিত ছিল না। অতঃপর স্বামীর ওয়াকীল (প্রতিনিধি : আইয়্যাস ইবনু আবূ রবী’ এবং হারিস ইবনু হিশাম) আমার নিকট কিছু যব নিয়ে আসে, যাতে আমি (অতি নগণ্য মনে করে) অসন্তোষ হই। ওয়াকীল বলল, আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট তোমার আর কিছুই পাওনা নেই। (কারণ, তুমি ত্বলাক (তালাক)ে বায়িনপ্রাপ্তা অর্থ বাবদ যব ছাড়া আর কিছুই রেখে যায়নি) এতে ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে অভিযোগ করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কোনো খোরাকি খরচ নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে উম্মু শরীক-এর ঘরে ’ইদ্দত পালনের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরক্ষনেই বললেন, ঐ রমণীর ঘরে তো লোকজনের চলাচল বেশি হয় (অত্যন্ত দানশীলা ও অতিথিপরায়ণতার জন্য)। বরং তুমি ইবনু উম্মি মাকতূম-এর ঘরে ’ইদ্দত পালন কর, সে অন্ধ ব্যক্তি বিধায় তুমি নির্দ্বিধায় গায়ের পোশাক ছাড়তে পারবে। অতঃপর যখন তোমার ’ইদ্দতকাল শেষ হবে, তখন আমাকে খবর দিবে।

ফাতিমা (রাঃ) বলেন, আমার ’ইদ্দতকাল শেষ হলে আমি তাঁকে জানালাম যে, মু’আবিয়াহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান ও আবূ জাহ্ম (রাঃ)উভয়ে আমার নিকট বিয়ের প্রস্তাব (’ইদ্দত শেষে) পাঠিয়েছে। তদুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আবূ জাহম তো তার কাঁধ হতে লাঠি নামিয়ে রাখে না (তথা সে স্ত্রীকে অত্যধিক মারধর করে অথবা অধিকাংশ সময় সফরে থাকে)। আর মু’আবিয়াহ্ তো দরিদ্র মানুষ, তার কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। তুমি উসামাহ্ ইবনু যায়দণ্ডকে বিয়ে কর (দীনদারী ও স্বভাব-চরিত্রতায় উত্তমতায় প্রাধান্য দাও)। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বিয়ে করব না (উসামাহ্ কৃষ্ণবর্ণ ক্রীতদাস পুত্র হওয়ার কারণে)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় উসামাকে বিবাহ করতে বললে তিনি তাকেই বিয়ে করলেন। আল্লাহ তা’আলা এ বিয়েতে এমন বরকত দিলেন যে, অন্য রমণীরা ঈর্ষা পোষণ করত।

অপর বর্ণনায় আছে, আবূ জাহ্ম স্ত্রীকে অতিমাত্রায় মারধর করত। (মুসলিম)[1]

অপর বর্ণনায় আছে যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাক দিলে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কোনো খোরাকী নেই, তবে তুমি গর্ভবতী হলে পেতে।

بَابُ الْعِدَّةِ

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ: أَنَّ أَبَا عَمْرِو بْنَ حَفْصٍ طَلَّقَهَا الْبَتَّةَ وَهُوَ غَائِبٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا وَكِيْلُهُ الشَّعِيرَ فَسَخِطَتْهُ فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا لَكِ عَلَيْنَا مِنْ شَيْءٍ فَجَاءَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: «لَيْسَ لَكِ نَفَقَةٌ» فَأَمَرَهَا أَنْ تَعْتَدَّ فِي بَيْتِ أُمِّ شَرِيكٍ ثُمَّ قَالَ: «تِلْكِ امْرَأَةٌ يَغْشَاهَا أَصْحَابِي اعْتَدِّي عِنْدَ ابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ رَجُلٌ أَعْمَى تَضَعِينَ ثِيَابَكِ فَإِذَا حَلَلْتِ فَآذِنِينِي» . قَالَتْ: فَلَمَّا حَلَلْتُ ذَكَرْتُ لَهُ أَنَّ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ وَأَبَا جَهْمٍ خَطَبَانِي فَقَالَ: «أَمَّا أَبُو الْجَهْمِ فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِهِ وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ فَصُعْلُوكٌ لَا مَالَ لَهُ انْكِحِي أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ» فَكَرِهْتُهُ ثُمَّ قَالَ: «انْكِحِي أُسَامَةَ» فَنَكَحْتُهُ فَجَعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا وَاغْتَبَطْتُ وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهَا: «فَأَمَّا أَبُو جَهْمٍ فَرَجُلٌ ضَرَّابٌ لِلنِّسَاءِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّ زَوْجَهَا طَلَّقَهَا ثَلَاثًا فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَا نَفَقَةَ لَكِ إِلَّا أَنْ تَكُونِي حَامِلا»

عن ابي سلمة عن فاطمة بنت قيس ان ابا عمرو بن حفص طلقها البتة وهو غاىب فارسل اليها وكيله الشعير فسخطته فقال والله ما لك علينا من شيء فجاءت رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكرت ذلك له فقال ليس لك نفقة فامرها ان تعتد في بيت ام شريك ثم قال تلك امراة يغشاها اصحابي اعتدي عند ابن ام مكتوم فانه رجل اعمى تضعين ثيابك فاذا حللت فاذنيني قالت فلما حللت ذكرت له ان معاوية بن ابي سفيان وابا جهم خطباني فقال اما ابو الجهم فلا يضع عصاه عن عاتقه واما معاوية فصعلوك لا مال له انكحي اسامة بن زيد فكرهته ثم قال انكحي اسامة فنكحته فجعل الله فيه خيرا واغتبطت وفي رواية عنها فاما ابو جهم فرجل ضراب للنساء رواه مسلم وفي رواية ان زوجها طلقها ثلاثا فاتت النبي صلى الله عليه وسلم فقال لا نفقة لك الا ان تكوني حاملا

ব্যাখ্যা: (طَلَّقَهَا الْبَتَّةَ) অর্থাৎ তিনি তাকে আবশ্যক কার্যকর তালাক দেন। আবশ্যক কার্যকর তালাক বলতে এমন তালাক বুঝানো হয়েছে যারপর স্ত্রীকে রাখার কোনো সুযোগ থাকে না। তাই এখানে তিন তালাক অথবা তৃতীয় তালাক বুঝানো হয়েছে। হাদীসটির বর্ণনা বিভিন্নভাবে এসেছে। উল্লেখিত বর্ণনায় (طلقها البتة)। কোনো কোনো বর্ণনায় (طلقها ثلاثا) অর্থাৎ তিনি তাকে তিন তালাক দেন। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় : (طلقها اخرثلاث تطليقات) অর্থাৎ তিন ত্বলাকের শেষ তালাক দেন। আবার কোনো বর্ণনায় (طلقها طلقة كانت بقية من طلاقها) অর্থাৎ তিনি তাকে এক তালাক যা তার ত্বলাকের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল। আবার কোনো বর্ণনায় البتة বা সংখ্যা শব্দের উল্লেখ ছাড়া কেবল তালাক দেয়ার কথা রয়েছে। অতএব বর্ণনাগুলোর সামঞ্জস্য বিধান হলো, তিনি ইতোপূর্বে দুই তালাক দিয়েছিলেন। শেষবার তিন নম্বর তালাকটি দেন। এতে সকল বর্ণনার সামঞ্জস্য বিধান হয়ে যায়। যে বর্ণনায় শুধু ত্বলাকের কথা রয়েছে অথবা এক তালাক বা তিন ত্বলাকের শেষ তালাক এগুলো স্পষ্ট। আর যিনি আবশ্যক ত্বলাকের কথা বর্ণনা করেন, তার কথার উদ্দেশ্য হলো তিনি এক তালাক দিয়েছেন। এর মাধ্যমে পূর্বের তালাকসহ তিন তালাক হয়ে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে গেছে। আর যিনি বলেছেন তিন তালাক তার কথার উদ্দেশ্য তিন পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৮০)

(لَيْسَ لَكِ نَفَقَةٌ) তোমার জন্য কোনো খোরাকী নেই, অর্থাৎ তুমি ‘ইদ্দত পালনকালে স্বামীর পক্ষ থেকে তুমি খোরাক পাওয়ার অধিকার রাখো না।

তালাকপ্রাপ্তা নারী ‘ইদ্দত পালনকালে খোরাকী ও বাসস্থান পাওয়ার অধিকারী হবে কিনা- এ ব্যাপারে ‘আলিমদের মতামত হলো, যদি তালাক রজ্‘ঈ হয় তবে সর্বসম্মতিক্রমে নারী খোরাকী পাওয়ার অধিকারী থাকবে। এভাবে যদি তালাক বায়্যিনাহ্ হয় এবং তালাকপ্রাপ্তা নারী গর্ভবতী হয় তবে ‘ইদ্দতকালীন সময়ে নারী বাসস্থান ও খোরাকী পাবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তালাকপ্রাপ্তা গর্ভবতী নারীর বেলায় বলেন, وَإِن كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتّٰى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ‘‘যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে।’’ (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ৬৫)

আর যদি নারী ত্বলাকে বায়্যিনাহ্প্রাপ্তা হয় এবং গর্ভবতী না হয়- এ ব্যাপারে ‘আলিমগণ মতানৈক্য পোষণ করেন। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মতে উক্ত নারী খোরাক বা বাসস্থান কিছুই পাবে না। বর্ণিত হাদীসটি তিনি এবং তাঁর অনুসারীদের দলীল।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বাসস্থান পাবে; কেননা তা কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ
‘‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্যনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও।’’ (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ৬৫)

বর্ণিত আয়াত মোতাবেক বাসস্থানের জন্য গৃহ দিতে হবে, তবে খোরাক দিতে হবে না। কেননা খোরাক প্রদান আল্লাহ তা‘আলা গর্ভবতী হওয়ার সাথে নির্ধারণ করেছেন। যেমন উপরে আমরা দেখেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে।’’ এর দ্বারা বুঝা যায় যে, গর্ভবতী না হলে খোরাক দেয়ার প্রয়োজন নেই।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে বাসস্থান ও খোরাক উভয়টি দিতে হবে। তাঁর দলীল উপরোক্ত আয়াত। কেননা আল্লাহ এখানে বাসস্থান দেয়ার কথা বলেছেন। আর বাসস্থান দিয়ে একজন নারীকে আটকে রাখতে বাধ্য করলে তার খোরাক দেয়া এমনিতেই আবশ্যক হয়ে পড়ে। আর অন্য আয়াতে গর্ভবতী হলে খোরাক দেয়ার কথা বলায় গর্ভবতীর খোরাকের বিধান প্রমাণিত হয়। গর্ভবতী না হলে খোরাক না দেয়ার হুকুম উক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় না। এছাড়া এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘উমার বলেন, لا ندع كتاب ربنا ولا سنة نبينا لقول امرأة : لها النفقة والسكنى ‘‘একজন নারীর কথায় আমরা আমাদের রবে্র কিতাব এবং নাবীর সুন্নাত ছাড়ব না। তার জন্য খোরাক ও বাসস্থান রয়েছে।’’ (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান ১০/৬৩, হাঃ ৪২৫০)

(تَضَعِينَ ثِيَابَكِ) তুমি তোমার কাপড় রাখবে। এখানে ‘ইদ্দত পালনকালীন সময়ের একটি বিধান বলে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ‘ইদ্দত পালনকালে তুমি সাজ-সজ্জার কোনো কাপড় পরিধান করবে না বরং তা রেখে দিয়ে অন্য সাধারণ কাপড় পরিধান করবে।

(أن معاوية بن أبي سفيان وأبا جهم خطباني) অর্থাৎ মু‘আবিয়াহ্ এবং আবূ জাহ্ম আমাকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব পাঠালেন।

এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, কেউ কাউকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে অন্য কেউ প্রস্তাব দিতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন এখানে আবূ জাহম এবং মু‘আবিয়াহ্ দু’জনের বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার কথা এসেছে। অথচ অন্য হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, يَتْرُكَ) أَوْ يَنْكِحَ حَتّٰى أَخِيهِ خِطْبَةِ (وَلَا يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلٰى ‘‘ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয় যতক্ষণ না সে বিবাহ করবে বা ছেড়ে দেয়।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : বিবাহ, অনুচ্ছেদ : বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়া, হাঃ ৪৭৪৭)

এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, কারো প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। ‘উলামায়ে কিরাম উভয় হাদীসের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান এভাবে করেন যে, বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার পর তারা যদি একে অপরের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং কথাবার্তা মোটামুটি পাকাপাকির পর্যায়ে চলে যায়, এমতাবস্থায় অন্য কারো জন্য প্রস্তাব দেয়া জায়িয নয়। এর আগে যেমন কেউ ভালো প্রস্তাবের অপেক্ষায় থাকার কারণে কাউকে কোনো ধরনের কথা দিচ্ছে না, এমতাবস্থায় প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দিতে কোনো সমস্যা নেই।

(فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ) সে তার কাঁধ থেকে লাঠি সরায় না। এর দ্বারা দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে। এক. সে অধিক সফর করে এ কথার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সফরের সময় লাঠি সাথে রাখার নিয়ম তাদের ছিল। দুই. ‘সে অধিক প্রহারকারী’ এ কথার দিকে ইঙ্গিত করা। এখানে এই অর্থই উদ্দেশ্য; কেননা অন্য বর্ণনায় রয়েছে (انه ضراب للنساء) অর্থাৎ সে মেয়েদেরকে খুব প্রহারকারী।

এ হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে, বিবাহের পূর্বে স্বামী বা স্ত্রী সম্পর্কে কেউ জানতে চাইলে তার দোষ বলা গীবাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা হাদীসে রয়েছে (الْمُسْتَشَارُ مُؤْتَمَنٌ) অর্থাৎ পরামর্শ চাওয়া হয় এমন ব্যক্তির কাছে আমানত কাম্য। (তিরমিযী- অধ্যায় : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ : পরামর্শ চাওয়া হয় এমন ব্যক্তির কাছে আমানত কাম্য, হাঃ ২৭৪৭)

অতএব স্বামী বা স্ত্রী কারো ব্যাপারে কেউ জানতে চাইলে তাদের ভিতর বাস্তব কোনো দোষ থাকলে তা বলে দেয়া কর্তব্য। যাতে দোষ না জেনে বিয়ের পরবর্তীতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ ক্ষেত্রে পরামর্শদাতাকে অত্যন্ত সতর্কতার দিকে লক্ষ্য রেখে একমাত্র বাস্তব ক্ষতিকারক দোষটিই বলার অনুমোদন থাকবে। অতিরিক্ত বা মিথ্যা কিছু বললেই আমানাতের খিয়ানাতকারী বলে গণ্য হবে।

এ হাদীস থেকে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি দারিদ্রের বিষয়টি লক্ষ্য রেখেছেন। অতএব যার কাছে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ পরিমাণ সম্পদ নেই তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা দোষের কিছু নয়। হাদীসে এমন ব্যক্তির জন্য বিয়ে না করে সওম পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّه أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنّه لَه وِجَاءٌ

‘‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : বিবাহ, অনুচ্ছেদ : যার বিয়ের সামর্থ্য নেই সে সওম পালন করবে, হাঃ ৪৬৭৮)

কুরআনেও এদিক ইঙ্গিত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যারা বিবাহে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৪)। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৮০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৫-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, (উপরোক্ত হাদীসের প্রেক্ষিতে) ফাতিমা (রাঃ) নিঃসঙ্গ এক ঘরে অবস্থানের ব্যাপারে শঙ্কার দরুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (’ইদ্দত পালনের সময়) অন্যত্র যাওয়ার (গৃহ-ত্যাগের) অনুমতি দান করেন। অপর বর্ণনায় আছে, অতঃপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, ফাত্বিমার কি হয়েছে? সে কি আল্লাহকে ভয় করে না, সে বলে (’ইদ্দতকালে) বাসস্থান ও খোরপোষের বিধান তার জন্য করা হয়নি। (বুখারী)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَن عائشةَ قَالَتْ: إِنَّ فَاطِمَةَ كَانَتْ فِي مَكَانٍ وَحِشٍ فَخِيفَ عَلَى نَاحِيَتِهَا فَلِذَلِكَ رَخَّصَ لَهَا النَّبِيُّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم تَعْنِي النُّقْلَةِ وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَتْ: مَا لِفَاطِمَةَ؟ أَلَا تَتَّقِي اللَّهَ؟ تَعْنِي فِي قَوْلِهَا: لَا سُكْنَى وَلَا نَفَقَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عاىشة قالت ان فاطمة كانت في مكان وحش فخيف على ناحيتها فلذلك رخص لها النبي صلى الله عليه وسلم تعني النقلة وفي رواية قالت ما لفاطمة الا تتقي الله تعني في قولها لا سكنى ولا نفقة رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ‘ইদ্দত পালনরত নারীর জন্য স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য কোথায়ও যাওয়া বৈধ নয়, তবে যদি এমন কোনো জটিল কারণ দেখা দেয় যার কারণে স্বামীর ঘরে থাকা সম্ভব না হয়, এক্ষেত্রে মহিলা বের হয়ে নিরাপদ স্থানে গিয়ে ‘ইদ্দত পালন করতে পারবে। এ হাদীস এবং পূর্বের হাদীসটিও এই মাসআলার প্রমাণ বহন করে। এখানে স্বামীর ঘরে থাকা জটিল হওয়ার যে কারণটি বলা হয়েছে তা হলো, ঘরটি নির্জন দূর এলাকায় হওয়ায় ভয়ের কারণ ছিল। কোনো কোনো বর্ণনায় ভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সামনের বর্ণনাটিতে আমরা ভিন্ন কারণ দেখতে পাব।

এ হাদীসটিও তাদের পক্ষে দলীল যারা বলেন, বায়্যিনাহ্ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ‘ইদ্দত পালনকালে স্বামী তার গৃহ এবং খোরাক দু’টোই দিবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৬-[৩] সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) এতদসম্পর্কে বলেন যে, স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সাথে মুখরা হয়ে ঝগড়া-বিবাদ করার কারণে তাকে গৃহ-ত্যাগের অনুমতি দিয়েছিল। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَن سعيدِ بنِ المسيِّبِ قَالَ: إِنَّمَا نُقِلَتْ فَاطِمَةُ لِطُولِ لِسَانِهَا عَلَى أحمائِها. رَوَاهُ فِي شرح السّنة

وعن سعيد بن المسيب قال انما نقلت فاطمة لطول لسانها على احماىها رواه في شرح السنة

ব্যাখ্যা: তাকে স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে যেতে বলার কারণ হলো, স্বামীর আত্মীয়দের বেলায় তার যবান লম্বা ছিল। অর্থাৎ তার মুখের ভাষা খারাপ ছিল। মুখ দিয়ে সে সবাইকে কষ্ট দিত। কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, তাকে বাহিরে যেতে দেয়ার কারণ ছিল, তার স্বভাব ভালো ছিল না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৭-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালাকে তিন তালাক দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় একদিন তিনি স্বীয় বাগানের খেজুর পাড়তে চাইলে জনৈক ব্যক্তি তাকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করলেন। এতদসম্পর্কে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হ্যাঁ, তুমি বের হয়ে তোমার বাগানের খেজুর পাড়তে পার। কেননা তুমি তো তোমার খেজুরের বিনিময়ে সাদাকা করবে বা অন্য কোনো সৎকাজ করবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَن جابرٍ قَالَ: طُلِّقَتْ خَالَتِي ثَلَاثًا فَأَرَادَتْ أَنْ تَجُدَّ نَخْلَهَا فَزَجَرَهَا رَجُلٌ أَنْ تَخْرُجَ فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «بَلَى فَجُدِّي نَخْلَكِ فَإِنَّهُ عَسَى أَنْ تَصَّدَّقِي أَوْ تَفْعَلِي مَعْرُوفا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال طلقت خالتي ثلاثا فارادت ان تجد نخلها فزجرها رجل ان تخرج فاتت النبي صلى الله عليه وسلم فقال بلى فجدي نخلك فانه عسى ان تصدقي او تفعلي معروفا رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ বহন করে যে, তালাকপ্রাপ্তা নারী ‘ইদ্দত পালনকালে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাহিরে যেতে পারবে।

ইমাম মালিক, সাওরী, শাফি‘ঈ, আহমাদ (রহঃ) ও অন্যান্যদের নিকট প্রয়োজনীয় কাজে দিনে বের হতে পারবে। তাদের নিকট ত্বলাকের ‘ইদ্দত এবং স্বামী মৃত্যুর ‘ইদ্দত উভয় ‘ইদ্দাতেই প্রয়োজনে দিনে বের হতে পারবে। স্বামী মৃত্যুকালীন ‘ইদ্দাতের ক্ষেত্রে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-ও তাদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন। তবে বায়্যিনাহ্ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ক্ষেত্রে তাঁর অভিমত হলো, রাত বা দিন কখনোই সে ঘরের বাহিরে বের হবে না। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৮৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৮-[৫] মিস্ওয়ার ইবনু মাখরমাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুবায়’আহ্ আল আসলামী (রাঃ)তার স্বামীর (সা’দ ইবনু খাওয়ালাহ্-এর) মৃত্যুর কয়েক দিন পরে সন্তান প্রসব করেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বিবাহের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দেন। অতঃপর তিনি অন্যত্র বিয়ে করেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ: أَنَّ سُبَيْعَةَ الْأَسْلَمِيَّةَ نُفِسَتْ بَعْدَ وَفَاةِ زَوْجِهَا بِلَيَالٍ فَجَاءَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَأْذَنَتْهُ أَنْ تَنْكِحَ فأذِنَ لَهَا فنكحت. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن المسور بن مخرمة ان سبيعة الاسلمية نفست بعد وفاة زوجها بليال فجاءت النبي صلى الله عليه وسلم فاستاذنته ان تنكح فاذن لها فنكحت رواه البخاري

ব্যাখ্যা: সুবায়‘আহ্ আল আসলামিয়্যাহ্-এর স্বামী মারা যাওয়ার কতদিন পর বাচ্চা প্রসব হয়েছিল- এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এই বর্ণনায় কোনো সংখ্যা ছাড়া কয়েক রাতের কথা বলা হয়েছে। আবার বিশ, পনের, পঁচিশ, বিশ আরো কয়েক রাত, আধা মাস, পনের দিন অর্থাৎ আধা মাস এভাবে সর্বোচ্চ দুই মাসের বর্ণনা পাওয়া যায়। বিভিন্ন বর্ণনা থাকলেও সব বর্ণনা এ কথাটি নিশ্চিত করে যে, তার বাচ্চা প্রসব চার মাস দশ দিনের পূর্বে হয়েছে।

স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ‘ইদ্দাতের মেয়াদ চার মাস দশ দিন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২৩৪)

‘উলামাদের যারা এ আয়াতটি ব্যাপক মনে করেন তাদের মতে স্বামী মারা যাওয়া যে কোনো ধরনের নারীকে চার মাস দশ দিন ‘ইদ্দত পালন করতে হবে। যেমন কোনো নারীকে গর্ভবতী রেখে যদি তার স্বামী মারা যায় এবং স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর অর্থাৎ চার মাস দশ দিনের পূর্বেই বাচ্চা প্রসব করে তবে তার ‘ইদ্দত শেষ হবে না। বরং তাকে চার মাস দশ দিন পূর্ণ করতে হবে।

অপরদিকে অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে আয়াতটি ব্যাপক নয়। বরং যে নারী গর্ভবতী নয় তার ক্ষেত্রে এ আয়াতটি প্রযোজ্য। গর্ভবতী নারীর ‘ইদ্দত সর্বাবস্থায় তার বাচ্চা প্রসব। স্বামী মারা যাওয়ার পরপরই যদি স্ত্রী বাচ্চা প্রসব করে তবে তার ‘ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। বর্ণিত হাদীসটি তাদের পক্ষে প্রমাণ বহন করে। এ হাদীসের আলোকে তারা বলেন, গর্ভবতী নারীর ‘ইদ্দত বাচ্চা প্রসব। চাই ‘ইদ্দত স্বামীর মৃত্যুর কারণে হোক অথবা স্বামী তাকে তালাক দেয়ার কারণে হোক। তাদের মতে, কুরআনের আয়াত যেখানে চার মাস দশ দিনের কথা বলা হয়েছে তা ঐ নারীর জন্য যে গর্ভবতী নয়। তাদের আরো দলীল হচ্ছে, কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘গর্ভবতী নারীদের ‘ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।’’ (সূরা আত্ব তালাক ৬৫ : ৪)

হাদীসের আলোকে তারা উপরের আয়াতটিকে ব্যাপক মনে না করে এই আয়াতটিকেই ব্যাপক মনে করেন এবং এই আয়াতের আলোকে গর্ভবতী নারী চাই ত্বলাকের কারণে ‘ইদ্দত পালন করুক বা স্বামী মারা যাওয়ার কারণে ‘ইদ্দত পালন করুক সন্তান প্রসবের মাধ্যমে তার ‘ইদ্দত শেষ হবে। তবে ‘আলী , ইবনু ‘আব্বাস -সহ অনেকের মতে, স্বামী মারা যাওয়া গর্ভবতী নারীর ‘ইদ্দত হবে দুই সময়ের দীর্ঘ সময়। অর্থাৎ যেটা পরে হবে সতর্কতা স্বরূপ সেটাকেই ‘ইদ্দত গণ্য করতে হবে। যেমন স্বামী মারা যাওয়ার পর চার মাস দশ দিন পূর্বেই যদি বাচ্চা প্রসব হয়ে যায় এক্ষেত্রে ‘ইদ্দত চার মাস দশ দিন পুরো করবে। আর যদি বাচ্চা প্রসব চার মাস দশ দিন পরে হয় তবে এই মেয়াদ পার হলে ‘ইদ্দত শেষ হবে না বরং বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর ‘ইদ্দত শেষ হবে।

হাদীসে সন্তান প্রসব না বলে নিফাস হওয়া বলায় আরেকটি জিনিস বুঝা যায়, প্রসবের মাধ্যমে মহিলার ‘ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে বাচ্চাটি যে কোনো প্রকৃতির হোক না কেন। পরিপূর্ণ বাচ্চা, অপরিপূর্ণ বাচ্চা এমনটি গোশতের টুকরো গর্ভপাত করলেও ‘ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৩২০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৯-[৬] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক মহিলা এসে বলল যে, আমার মেয়ের স্বামী মারা গেছে। এমতাবস্থায় তার চোখে অসুখ হয়েছে, (’ইদ্দতকালে) আমি কী তার চোখে সুরমা ব্যবহার করাতে পারব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। এতে স্ত্রীলোকটি দু’ বা তিনবার অনুমতি চাইল। প্রতিবারেই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। অতঃপর বললেন- দেখ! মাত্র ৪ মাস ১০ দিন, অথচ জাহিলিয়্যাত (অন্ধকার) যুগে তোমাদের এক একজন নারীকে ’ইদ্দতকাল এক বছর পূর্ণ হলে উটের গোবর ফেলতে হতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَن أُمِّ سلمةَ قَالَتْ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ ابْنَتِي تُوُفِّيَ عَنْهَا زَوْجُهَا وَقَدِ اشْتَكَتْ عَيْنُهَا أَفَنَكْحُلُهَا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا كُلُّ ذَلِكَ يَقُولُ: «لَا» قَالَ: «إِنَّمَا هِيَ أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ وعشرٌ وَقد كَانَت إِحْدَاهُنَّ فِي الجاهليَّةِ تَرْمِي بِالْبَعْرَةِ عَلَى رَأْسِ الْحَوْلِ»

وعن ام سلمة قالت جاءت امراة الى النبي صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله ان ابنتي توفي عنها زوجها وقد اشتكت عينها افنكحلها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا مرتين او ثلاثا كل ذلك يقول لا قال انما هي اربعة اشهر وعشر وقد كانت احداهن في الجاهلية ترمي بالبعرة على راس الحول

ব্যাখ্যা: ‘ইদ্দত পালনকালীন সময়ে মহিলার জন্য কোনো ধরনের সাজ-সজ্জা জায়িয নয়। সাজ-সজ্জার মাঝে চোখে সুরমা লাগানো অন্তর্ভুক্ত। তাই বিনা প্রয়োজনে সুরমা লাগানোও অবৈধ এতে কোনো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রয়োজনে সুরমা লাগাতে পারবে কিনা- এ নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। বর্ণিত হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, ‘ইদ্দতকালীন সময়ে সুরমার ব্যবহার প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে হোক কোনো ক্ষেত্রেই জায়িয নয়। তবে আরেকটি হাদীস যেখানে আবূ সালামাহ্-এর ওপর উম্মু সালামার শোক পালনকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চোখে সাবির (চোখে লাগানোর ওষুধ বিশেষ) দেখে বলেন, এটা কি? তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা সাবির ছাড়া কিছু নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «اجْعَلِيهِ بِاللَّيْلِ وَامْسَحِيهِ بِالنَّهَارِ» ‘‘এটাকে রাতে দাও এবং দিনে মুছে ফেল।’’ (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার, কিতাবুল লি‘আন, ইহদাদ অনুচ্ছেদ, হাঃ ১৫৩৪২)

দুই হাদীসের সমন্বয় হলো, প্রয়োজনে রাতে সুরমা বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার জায়িয। কিন্তু দিনে তা কোনো অবস্থায়ই জায়িয নয়। রাতে ব্যবহার করলেও দিনে মুছে ফেলবে।

তবে মূলত নিষেধের হাদীসগুলো অপ্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু বর্ণিত হাদীসে চোখের অভিযোগের পরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরমা ব্যবহারের নিষেধ করার কারণে বুঝা যায় যে, নিষেধের হাদীস কেবল অপ্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং প্রয়োজন অপ্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে সুরমা ব্যবহার নিষেধ থাকবে। তবে ‘ইদ্দত পালনকালে মূল নিষেধ হলো সাজ-সজ্জা। তাই সাজ-সজ্জা ছাড়া প্রয়োজনে ঔষধরূপে ব্যবহারের নিষেধকে ‘উলামায়ে কিরাম মাকরূহ তানযিহী হিসেবে ধরে নেন। অর্থাৎ সাজের কারণে ব্যবহার আর প্রয়োজনে ব্যবহার এক নয়। আবার কোনো কোনো ‘আলিম বলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যবহার জায়িয। তাদের মতে এখানে রসূলের নিষেধের কারণ হয়তবা তার অভিযোগটি সাধারণ ছিল, সুরমা ব্যবহার না করলে কোনো অসুবিধা ছিল না। তাই অভিযোগের পরও রসূল নিষেধ করেন।

(إِنَّمَا هِىَ أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ وَعَشْرٌ) এটাতো কেবল চার মাস দশ দিনই। রাসুল  -এর এ কথার উদ্দেশ্য হলো, ‘ইদ্দত পালন করতে একটু ত্যাগ স্বীকার করা তেমন কিছু নয়। এ কথা বলার পর জাহিলিয়্যাতের যুগে তাদের ‘ইদ্দত পালনের কষ্টের বিবরণ দেন। মূর্খতার যুগে দীর্ঘ এক বছর অনেক কষ্ট করে যে ‘ইদ্দত পালন করা হত ইসলাম সে ধরনের কঠিন কোনো হুকুম দেয়নি। জাহিলী যুগের ‘ইদ্দত পালনের তুলনায় ইসলামের ‘ইদ্দত পালন একেবারেই সহজ। তাই এই সহজ হুকুমটি পালন করতে তোমাদের একটু ত্যাগ করতে হবে।

হাদীস থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, জাহিলী যুগের এক বছরের ‘ইদ্দত পালনের প্রথা কুরআনের আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

(تَرْمِىْ بِالْبَعْرَةِ عَلٰى رَأْسِ الْحَوْلِ) ‘‘বছরের মাথায় গোবর নিক্ষেপ করত’’। হাদীসের এ অংশে জাহিলী যুগের অনর্থক নিজেকে কষ্ট দেয়ার কুসংস্কারের বিবরণ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক বছর ‘ইদ্দত পালন করার পর ‘ইদ্দত শেষে তারা ঘর থেকে বের হয়ে গোবর নিক্ষেপ করে ‘ইদ্দাতের সমাপ্তি ঘটাত। কোনো কোনো ‘আলিম বলেন, গোবর নিক্ষেপ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘ইদ্দত শেষ করা। অর্থাৎ এক বছর অযথা নোংরা কষ্টের পর ‘ইদ্দত থেকে বের হয়ে পৃথক হত যেমন গোবর শরীর থেকে বের হয়ে পৃথক হয়। কেউ কেউ বলেন, এখানে ইঙ্গিত হলো, জাহিলী যুগে ‘ইদ্দত পালনকালে নারী যে কাজ করেছে, এক বছর ‘ইদ্দত পালনের যে ধৈর্য ধরেছে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাপড় পরিধান করেছে এবং একেবারে ছোট ঘর আঁকড়ে থেকেছে, স্বামীর অধিকার হিসেবে এমন ‘ইদ্দত পালন করা অত্যন্ত তুচ্ছ বিষয় যেমন কেউ গোবর নিক্ষেপ করল।
(শারহে মুসলিম ৯ম খন্ড, হাঃ ১৪৮৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩৩০-[৭] উম্মু হাবীবাহ্ ও যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মু’মিনাহ্ আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের ওপর ঈমান আনে, তার পক্ষে কোনো মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক প্রকাশ করা বৈধ নয়। অবশ্য কোনো রমণীর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিনের জন্য শোক প্রকাশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ وَزَيْنَبَ بِنْتِ جحش عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ إِلَّا عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا»

وعن ام حبيبة وزينب بنت جحش عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا يحل لامراة تومن بالله واليوم الاخر ان تحد على ميت فوق ثلاث ليال الا على زوج اربعة اشهر وعشرا

ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসটিও এ কথার উপর দলীল যে, স্বামীর মৃত্যতে ‘ইদ্দত পালনকারী নারী শোক পালন করবে। ‘ইদ্দাতের মেয়াদ ও শোকের মেয়াদ একই। চার মাস দশ দিন যেমন ‘ইদ্দত পালন করবে তেমনিভাবে চার মাস দশ দিন সাজ-সজ্জা থেকে বিরত থেকে শোক পালন করবে। আর স্বামী মৃত্যুতে ‘ইদ্দত পালনকারী নারী ছাড়া অন্য কারো জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন জায়িয নয়। কারো মৃত্যুতে দুঃখী হয়ে একজন সর্বোচ্চ তিনদিন এই নিয়্যাতে সাজ-সজ্জা থেকে বিরত থাকতে পারে। শোকের নিয়্যাতে এর বেশি থাকলে গুনাহগার হবে।

শোক পালন উদ্দেশ্য ছাড়া মৃতের দুঃখ কাটতে অধিক সময় গেলে তা এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হাবীবা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩৩১-[৮] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (নুসায়বাহ্) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো রমণী যেন মৃতের জন্য তিনদিনের অধিক শোক পালন না করে, অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন ব্যতীত। এছাড়া সে যেন রং করা সুতার কাপড় ছাড়া কোনো রঙিন কাপড় না পরে, সুরমা না লাগায় ও সুগন্ধি ব্যবহার না করে। অবশ্য ঋতুস্রাব হতে পাক হওয়ার সময় (শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে) ’কুস্ত্ব’ ও ’আয্ফার’ জাতীয় কাঠের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় আছে, মেহেদিও না লাগায়।

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَن أُمِّ عطيَّةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تُحِدُّ امْرَأَةٌ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ إِلَّا عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا وَلَا تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوغًا إِلَّا ثَوْبَ عَصْبٍ وَلَا تكتحِلُ وَلَا تَمَسُّ طِيبًا إِلَّا إِذَا طَهُرَتْ نُبْذَةً مِنْ قُسْطٍ أَوْ أَظْفَارٍ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَزَادَ أَبُو دَاوُدَ: «وَلَا تختضب»

وعن ام عطية ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا تحد امراة على ميت فوق ثلاث الا على زوج اربعة اشهر وعشرا ولا تلبس ثوبا مصبوغا الا ثوب عصب ولا تكتحل ولا تمس طيبا الا اذا طهرت نبذة من قسط او اظفار متفق عليه وزاد ابو داود ولا تختضب

ব্যাখ্যা: لَا تُحِدُّ امْرَأَةٌ عَلٰى مَيِّتٍ)) অর্থাৎ আত্মীয় বা অনাত্মীয় কেউ মারা গেলে মহিলার জন্য তিন দিনের অতিরিক্ত শোক পালন করা জায়িয নয়। কেবল স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে। এমনকি এই শোক পালন করা জরুরী।

এখানে আমাদেরকে দু’টি বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার। এক : স্বামী ছাড়া অন্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন দিন শোক পালন জায়িয। জরুরী বা ওয়াজিব নয়। তিন দিনের বেশি পালন করলে না-জায়িয হবে। দুই : স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন শোক পালন করা কেবল জায়িয নয় বরং ওয়াজিব বা অপরিহার্য। স্বামীর ক্ষেত্রে শোক পালনে শৈথিল্যপ্রদর্শন করলে স্ত্রী গুনাহগার হবে। স্বামীর বেলায় শোক পালনের বিষয়টি বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

আরেকটি বিষয় হলো, চার মাস দশ দিনের শোক পালনের কথা অধিকাংশ নারীর দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। নতুবা মহিলা যদি গর্ভবতী হয় তবে তার ‘ইদ্দত যেমন বাচ্চা প্রসব তেমনি তার শোক পালনের মেয়াদও বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত। স্বামীর মৃত্যুর পর বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত মহিলা শোক পালন করবে। চার মাস দশ দিনের পূর্বেই যদি বাচ্চা প্রসব হয়ে যায় তবে শোক পালনের জন্য মহিলাকে চার মাস দশ দিন পূর্ণ করতে হবে না। মোটকথা, গর্ভপাত পর্যন্ত সময় চার মাস দশ দিনের কম হোক বা বেশি হোক গর্ভবতী মহিলার জন্য এ সময়টুকু শোক পালন করতে হবে। তবে কোনো কোনো ‘আলিম বলেন, গর্ভবতী মহিলা চার মাস দশ দিন পার করে ফেললে প্রসব না হলেও তাকে শোক পালন করতে হবে না। অর্থাৎ তাদের মতে শোক পালনের মেয়াদ সবার ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন।

‘আলিমগণ বলেন, স্বামী মারা গেলে ‘ইদ্দত পালনের সাথে সাথে শোক পালন করতে হয়, কিন্তু তালাকপ্রাপ্তা নারীকে কেবল ‘ইদ্দত পালন করতে হয়, ‘ইদ্দাতের সাথে শোক পালন করতে হয় না, এর রহস্য হলো; সাজ-সজ্জা এবং সুগন্ধি বিবাহের দিকে আকৃষ্ট করে, তাই এ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। যাতে এই বিরত থাকাটা মহিলাকে বিবাহ থেকে বারণ করে; কেননা মারা যাওয়া স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে বারণ সম্ভব নয়। তাই বিরত থাকাটা স্বামীর পক্ষ হয়ে বারণ করার ন্যায়। অপরদিকে তালাকপ্রাপ্তা নারীর স্বামী জীবিত থাকায় ‘ইদ্দাতের পূর্বে বিবাহতে বিবাহকারী তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবে। তাই অন্য কোনো বাধার প্রয়োজন নেই। আর চার মাস দশ দিনের রহস্য হলো, চার মাস পূর্ণ হলে সন্তানের আত্মা আসে, এর সাথে আরো দশ দিন সতর্কতাবশত। (শারহে মুসলিম ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৯৯)

وَلَا تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوغًا إِلَّا ثَوْبَ عَصْبٍ অর্থাৎ রঙিন কাপড় পরবে না তবে ‘আস্বের’ কাপড় পরতে পারে। ‘আস্বে’র কাপড় বলতে ইবনুল কইয়্যিম ও ইবনু কুদামার মতে, ‘আস্ব’ এক ধরনের উদ্ভিদ, যা দিয়ে কাপড় রঙানো। রঙিন কাপড়ের মাঝে ‘আস্ব’ দ্বারা রঙানো কাপড়ের বৈধতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য রঙ দ্বারা রঙানো কাপড় না জায়িয।

ইবনু হাজার-এর বর্ণনা মতে, এটি এক ধরনের নকশাকৃত চাদর। যার সুতা গিরো দিয়ে রঙিন করার পর কাপড়ের বুননের মাধ্যমে এমন নকশা হত যে, যে জায়গাটি গিরো দেয়া হয়েছে তা রঙিন না হয়ে সাদা থাকত। ইবনুল মুনযির বলেন, ‘আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, শোক পালনকারিণী নারীর জন্য হলুদ বা রঙিন কাপড় পরিধান করা জায়িয নয়। তবে কালো রঙে রঙিন কাপড় পরা জায়িয। ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম মালিক (রহঃ)-এর অনুমোদন দেন; কেননা কালোকে সজ্জার জন্য পরিধান করা হয় না, বরং তা চিন্তিত সময়ের পোশাক। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৯৯)

ইমাম নববী লিখেন: আমাদের ইমামগণ বলেন, যে কাপড় রঙিন, অথচ তা দ্বারা সজ্জা অবলম্বন করা হয় না তা জায়িয। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৮৮)
সারকথা, ‘ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য সাজ-সজ্জা অবলম্বন জায়িয নয়। তাই অতি সাধারণ পুরাতন রঙিন কাপড় পরলে তা না জায়িয অবৈধ হবে না। আবার ধবধবে সাদা নতুন উন্নতমানের কাপড় যা সাজের ক্ষেত্রে রঙিনকে হার মানায় বলে দেখা যায় তা পরিধান করা বৈধ হবে না। অর্থাৎ মূল বিষয় হচ্ছে সাজ-সজ্জা অবলম্বন থেকে বিরত থাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রঙিন কাপড়কেই সাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাই হাদীসে রঙিন কাপড়ের কথা বলা হয়েছে। অতএব অতি সাধারণ রঙিন কাপড় যেমন না-জায়িয হবে না, তেমনি অতি উন্নত সাদা কাপড় জায়িয হবে না। আল্লাহ অধিক জানেন।
 

(قُسْطٍ أَوْ أَظْفَارٍ) ‘কুস্ত্ব’ এবং ‘আযফার’ দু’টো সুগন্ধির নাম। শোক পালনকারী নারীর জন্য সুগন্ধি ব্যবহারের অনুমোদন না থাকলেও হায়িয থেকে পবিত্র হওয়ার সময় এই সুগন্ধি সামান্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অল্প একটু ব্যবহারের মাধ্যমে শরীর থেকে হায়িযের রক্তের দুর্গন্ধের যে একটি প্রভাব রয়েছে তা দূর করবে। শরীরকে সুগন্ধযুক্ত করার জন্য ব্যবহার করবে না। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হালকা সুগন্ধি ব্যবহারের অনুমতি দেন।

(وَلَا تَخْتَضِبُ) আর খিযাব লাগাবে না। শোক পালন অবস্থায় না-জায়িয আরেকটি বস্তু হলো মেহেদী ব্যবহার। মেহেদী সজ্জার অন্তর্ভুক্ত একটি জিনিস। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহেদী দ্বারা নিজের শরীরে রঙ্গ লাগাতে নিষেধ করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে