পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৩৯-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শাসক হয়ে জনগণের মধ্যে রাষ্ট্রকার্য পরিচালনা করে, সে কিয়ামতের দিন এরূপ অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, একজন মালাক (ফেরেশতা) তার গর্দান ধরে রাখবেন। অতঃপর মালাক তার মাথা আকাশের দিকে তুলবেন। অতএব আল্লাহ তা’আলা যখন নির্দেশ দেন তাকে নিক্ষেপ করো, তখন মালাক তাকে জাহান্নামের নিম্নদেশে ছুঁড়ে ফেলবেন। যার গভীরতা চল্লিশ বছরের পথ। (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ্, আর বায়হাক্বী-এর ’’শু’আবুল ঈমান’’)[1]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ حَاكِمٍ يَحْكُمُ بَيْنَ النَّاسِ إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَلَكٌ آخِذٌ بِقَفَاهُ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَإِنْ قَالَ: أَلْقِهْ أَلْقَاهُ فِي مَهْوَاةٍ أَرْبَعِينَ خَرِيفًا . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ والْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان

عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من حاكم يحكم بين الناس الا جاء يوم القيامة وملك اخذ بقفاه ثم يرفع راسه الى السماء فان قال القه القاه في مهواة اربعين خريفا رواه احمد وابن ماجه والبيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: خريف (أَرْبَعِينَ خَرِيفًا) শব্দের অর্থ বছর। নিহায়াহ্ গ্রন্থাকার বলেন, خريف (খরীফ) বলা হয় বছরের ঋতু সময়ের একটি ঋতুকে যা গ্রীষ্ম ও শীতকালের মাঝে হয়ে থাকে। তবে অত্র হাদীসে উদ্দেশ্য হলো বছর। কেননা এটা বছরে মাত্র একবারেই আসে। এমনটাই মতামত দিয়েছেন ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)। ‘‘আল মুগরিব’’ গ্রন্থে রয়েছে, মাহওয়া বলা হয় গিরিপথকে। আবার কেউ বলেছেন মাহওয়া অর্থ গর্ত। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের শব্দ «مَلَكٌ آخِذٌ بِقَفَاهُ» দ্বারা বুঝা যায়, তাকে জোর করে তার মাথা আকাশমন্ডলীর দিকে দেয়া হবে। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অর্থাৎ ‘‘আমি তাদের স্কন্ধে বেড়ি পরাবো থুতনি পর্যন্ত ফলে তারা চোখ বন্ধ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে’’- (সূরা ইয়াসীন ৩৬ : ৮)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৪০-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে ন্যায়পরায়ণ শাসক এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে; তখন সে আকাঙ্ক্ষা করবে যে, একটি খেজুরের ব্যাপারেও যদি সে দুই ব্যক্তির মধ্যে পরস্পর বিবাদের ফায়সালা না করত (কতই না উত্তম হতো)। (আহমাদ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيَأْتِيَنَّ عَلَى الْقَاضِي الْعَدْلِ يومُ القيامةِ يَتَمَنَّى أَنَّهُ لَمْ يَقْضِ بَيْنَ اثْنَيْنِ فِي تَمْرَة قطّ» . رَوَاهُ أَحْمد

وعن عاىشة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لياتين على القاضي العدل يوم القيامة يتمنى انه لم يقض بين اثنين في تمرة قط رواه احمد

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে পূর্বের হাদীসগুলোর ন্যায় উচ্চারণ কার্যের প্রতি চরম হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। হাদীসটির সারকথা হলো-

(ক) যতদূর সম্ভব বিচারকার্য তথা বিচারপতি হওয়ার দায়িত্ব থেকে বিরত থাকা উচিত।

(খ) বিচারকাজে ভুল-ভ্রান্তি হয়ে গেলে এর জন্য কিয়ামতে চরম লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হবে।

(গ) মানুষের হক নষ্ট করা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।

(ঘ) বিচারকার্যে ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়কেও তুচ্ছ করার সুযোগ নেই। (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৪১-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাসক যে পর্যন্ত না জুলুম ও অবিচার করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার সাথে থাকেন। কিন্তু যখন সে জুলুম ও অবিচার করতে থাকে, তখন আল্লাহর সাহায্য তার ওপর থেকে সরে যায় এবং শায়ত্বন তার সহচর হয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]

আর ইবনু মাজাহ্-এর অপর বর্ণনাতে আছে, যখন সে জুলুম ও অবিচার করে তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে তার নাফসের প্রতি অর্পণ করেন।

وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ مَعَ الْقَاضِي مَا لَمْ يَجُرْ فَإِذَا جَارَ تَخَلَّى عَنْهُ وَلَزِمَهُ الشَّيْطَانُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةٍ: «فَإِذَا جارَ وَكله إِلَى نَفسه»

وعن عبد الله بن ابي اوفى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله مع القاضي ما لم يجر فاذا جار تخلى عنه ولزمه الشيطان رواه الترمذي وابن ماجه وفي رواية فاذا جار وكله الى نفسه

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে বিচার কাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিচারক যদি ন্যায় বিচার করেন তাহলে তার ওপর আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হয়। পক্ষান্তরে যদি জুলুম করেন তাহলে আল্লাহর সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় এবং শায়ত্বন তার সাথী হয়ে যায়। ইবনু মাজাহ-এর অপর বর্ণনায় এসেছে, তাকে তার অভিভাবক বানিয়ে দেয়া হয় আল্লাহ তার দায়িত্ব নেয়া থেকে মুক্ত হয়ে যান। এ বিষয়ে ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা আছে সেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ বিচারকের সাথে থাকেন অর্থাৎ তাকে সাহায্য করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে ইচ্ছাকৃত জুলুম না করে। ইমাম ত্ববারানী হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং মানাবী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীসের সানাদে জা‘ফার বিন সুলায়মান আল কাবী নামক রাবী য‘ঈফ হওয়ার কারণে হাদীসটি য‘ঈফ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৩০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৪২-[১২] সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মুসলিম ও এক ইয়াহূদীর মধ্যে পরস্পর বিবাদ নিয়ে ’উমার (রাঃ)-এর নিকট আসলো। এমতাবস্থায় ’উমার (রাঃ) তা সত্যায়িত করে ইয়াহূদীর পক্ষে রায় দিয়ে দিলেন। তখন ইয়াহূদী ’উমার (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললঃ আল্লাহর কসম! আপনি হক বিচার করেছেন। অতঃপর ’উমার তাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করে বললেনঃ তুমি কিভাবে জানলে (হক বিচার হয়েছে)? উত্তরে ইয়াহূদী বললঃ আল্লাহর কসম! আমরা তাওরাত কিতাবে পেয়েছি, যে শাসক ন্যায়বিচার করে তার ডানপাশে একজন মালাক (ফেরেশতা) থাকেন এবং বামপাশে একজন মালাক থাকেন। তারা তার কাজটিকে সহজসাধ্য করে দেন এবং ন্যায় ও সঠিক কাজ করার মধ্যে সাহায্য করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ন্যায়ের সাথে থাকেন। কিন্তু যখন তিনি ন্যায় ও হক পন্থা পরিহার করেন, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) উপরে চলে যান এবং তার সঙ্গ পরিত্যাগ করেন। (মালিক)[1]

وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ: أَنَّ مُسْلِمًا وَيَهُودِيًّا اخْتَصَمَا إِلَى عُمَرَ فَرَأَى الْحَقَّ لِلْيَهُودِيِّ فَقَضَى لَهُ عُمَرُ بِهِ فَقَالَ لَهُ الْيَهُودِيُّ: وَاللَّهِ لَقَدْ قَضَيْتَ بِالْحَقِّ فَضَرَبَهُ عُمَرُ بِالدِّرَّةِ وَقَالَ: وَمَا يُدْريكَ؟ فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: وَاللَّهِ إِنَّا نَجِدُ فِي التَّوْرَاةِ أَنَّهُ لَيْسَ قَاضٍ يَقْضِي بِالْحَقِّ إِلَّا كَانَ عَنْ يَمِينِهِ مَلَكٌ وَعَنْ شِمَالِهِ مَلَكٌ يُسَدِّدَانِهِ وَيُوَفِّقَانِهِ لِلْحَقِّ مَا دَامَ مَعَ الْحَقِّ فَإِذَا تركَ الحقَّ عرَجا وترَكاهُ. رَوَاهُ مَالك

وعن سعيد بن المسيب ان مسلما ويهوديا اختصما الى عمر فراى الحق لليهودي فقضى له عمر به فقال له اليهودي والله لقد قضيت بالحق فضربه عمر بالدرة وقال وما يدريك فقال اليهودي والله انا نجد في التوراة انه ليس قاض يقضي بالحق الا كان عن يمينه ملك وعن شماله ملك يسددانه ويوفقانه للحق ما دام مع الحق فاذا ترك الحق عرجا وتركاه رواه مالك

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি বিশিষ্ট তাবি‘ঈ সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত বিচার কাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার উজ্জ্বল নমুনা। যেখানে দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার -এর ন্যায়নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঘটনার বিবরণ হলো একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহূদী বিচার নিয়ে ‘উমার -এর নিকট আসলেন। ‘উমার দেখলেন ইয়াহূদী সঠিকতার উপর আছে, তাই ইনসাফ করতঃ বিচার তার পক্ষে করলেন। ইয়াহূদী বলে উঠলো, আল্লাহর শপথ! ‘আপনি ন্যায় করেছেন’ এ কথা বললে ‘উমার তাকে প্রহার করলেন এবং বললেন, তুমি কিভাবে বুঝলে? তখন ইয়াহূদী বললো, আমরা তাওরাতে পেয়েছি যে, কোনো বিচারক যদি ন্যায়সঙ্গত বিচার করে তাহলে তার ডান ও বাম পাশে দু’জন মালাক থাকেন তারা তাকে সঠিকতায় পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে ন্যায়ের পথে থাকে যখন সে ন্যায় বিচার না করে তখন মালায়িকাহ্ তাকে বর্জন করেন।

এখানে প্রশ্ন হলো, ‘উমার ন্যায় করলে ইয়াহূদী ব্যক্তি তাকে সমর্থন করলেন এবং আপনি ন্যায় বিচার করেছেন। পরবর্তীতে ‘উমার ইয়াহূদীকে বেত্রাঘাত করার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তাকে ব্যথাদায়ক হয় এমন আঘাত করেননি বরং সে প্রহারটি ছিল এরূপ যেমন আমরা কেউ আমাদের পক্ষে সমর্থন দিলে তাকে একটু মৃদু আঘাত করে থাকি এরূপ ছিল। অত্র হাদীসের ইয়াহূদী যেহেতু যিম্মী ছিলেন, তাই তাদের মাঝে ইসলামের হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে।

 মাস্আলাহ্ : যদি আহলে কুফুরের তথা অমুসলিমদের মাঝে বিচার করতে হয় তাহলে তা কয়েক শ্রেণীর হতে পারে। বাদী-বিবাদী দু’জনই ইয়াহূদী অথবা দু’জনই নাসারা অথবা একজন ইয়াহূদী অপরজন নাসারা। সুতরাং যদি দু’জনেই ইয়াহূদী হয় তাহলে মুসলিমরা তাদের বিচার করবে না। আর যদি বিচার করতে হয় তাহলে তারা চাইলে করা যেতে পারে ন্যায়সঙ্গতভাবে। ইবনু ‘আবদুল হাকাম বলেন, বিচারক চাইলে বিচার করতে পারে। যদি বাদী-বিবাদী উভয়জন সন্তুষ্টচিত্তে কোনো মুসলিম বিচারকের নিকটে বিচার চায় তাহলে এক্ষেত্রে মুসলিম বিচারকের পথ দু’টি একটি বিচার না করা আর অপরটি হলো বিচার করলে তাদের মধ্যে ইসলাম অনুপাতে ন্যায়সঙ্গত বিচার করা- এ দু’টি বিষয়ে মুসলিম বিচারপতি স্বাধীন যেটি ইচ্ছা করতে পারেন।

মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘হে নাবী! বেধর্মীরা আপনার নিকট বিচার নিয়ে আসলে আপনি তাদের বিচার করুন অথবা ফিরিয়ে দেন আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তারা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আর তাদের মাঝে বিচার করলে ন্যায়সঙ্গত বিচার করুন, নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় বিচারকারীকে পছন্দ করেন’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪২)। (আল্ মুনতাকা ৭ম খন্ড, হাঃ ১৩৮০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৪৩-[১৩] ইবনু মাওহাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উসমান ইবনু ’আফফান (রাঃ) ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি মানুষের মাঝে ইনসাফ কায়িম (বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ) করুন। ইবনু ’উমার(রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন না? ’উসমান(রাঃ) বললেনঃ আপনি এই দায়িত্বকে অপছন্দ করছেন, অথচ আপনার পিতা তো (খলীফাহ্ নিযুক্ত হওয়ার পূর্বেও) বিচার-ফায়সালা করেছেন। ইবনু ’উমার (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিচারক নিযুক্ত হয়ে ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচারকার্য পরিচালনা করে তার জন্য এটাই উত্তম যে, সে তা থেকে ন্যায্যভাবে অব্যাহতি লাভ করতে পারে। অতঃপর ’উসমান(রাঃ) ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে আর কিছুই বলেননি। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَوْهَبٍ: أَنَّ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لِابْنِ عُمَرَ: اقْضِ بَين النَّاس قَالَ: أَو تعاقبني يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: وَمَا تَكْرَهُ مِنْ ذَلِك وَقد كَانَ أَبوك قَاضِيا؟ قَالَ: لِأَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ كَانَ قَاضِيًا فَقَضَى بِالْعَدْلِ فَبِالْحَرِيِّ أَنْ يَنْقَلِبَ مِنْهُ كَفَافًا» . فَمَا راجعَه بعدَ ذَلِك. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابن موهب ان عثمان بن عفان رضي الله عنه قال لابن عمر اقض بين الناس قال او تعاقبني يا امير المومنين قال وما تكره من ذلك وقد كان ابوك قاضيا قال لاني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من كان قاضيا فقضى بالعدل فبالحري ان ينقلب منه كفافا فما راجعه بعد ذلك رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে দেখা যাচ্ছে তৃতীয় খলীফা ‘উসমান বিন ‘আফ্ফান তার শাসনামলে দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব -এর পুত্র ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ)-কে বিচারকার্য গ্রহণের আহবান জানাচ্ছেন অথচ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করছেন। পরক্ষনে ‘উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি কেন বিচারের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান অথচ আপনার পিতা এ দায়িত্ব পালন করেছেন। এ প্রশ্নের উত্তরে ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যারা বিচারক হয় তারা যেন ন্যায়বিচার করে।

(فَبِالْحَرِىِّ أَنْ يَنْقَلِبَ مِنْهُ كَفَافًا) অংশটুকু ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামা ত্বীবী (রহ) বলেছেনঃ

أَنَّ مَنْ تَرَكَ الْقَضَاءَ وَاجْتَهَدَ فِي تَحَرِّي الْحَقَّ وَاسْتَفْرَغَ جَهْدَه فِيهِ حَقِيقٌ أَنْ لَا يُثَابَ وَلَا يُعَاقَبَ، فَإِذَا كَانَ كَذٰلِكَ، فَأَيُّ فَائِدَةٍ فِي تَوَلِّيهِ.

অর্থাৎ- যারা বিচারপতি হলো, অতঃপর ন্যায়সঙ্গত বিচারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলো তাদের এ কাজে কোনো সাওয়াবও নেই গুনাহও নেই। সুতরাং বিষয়টির অবস্থা যখন এরূপ যে, তা গ্রহণে সাওয়াব পাপ কেনটিই নেই। সুতরাং তা গ্রহণে কে রাজী হবে? (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৪৪-[১৪] আর রযীন-এর এক বর্ণনাতে নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত, ইবনু ’উমার (রাঃ) ’উসমান (রাঃ)-কে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আমি পরস্পর দু’ ব্যক্তির মধ্যেও বিচার-ফায়সালা করব না। তখন ’উসমান(রাঃ) বললেনঃ আপনার পিতা তো বিচারকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। তখন ইবনু ’উমার(রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, তবে আমার পিতা যদি কোনো সমস্যায় পড়তেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞেস করে নিতেন। আর যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বিষয়ে সমস্যা অনুভব করতেন, তখন জিবরীল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করতেন। তাই এখন আমি এমন কাউকে পাব না যার স্মরণাপন্ন হব।

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, সে মহান সত্তার আশ্রিত হলো। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রয় চায়, তোমরা তাকে আশ্রয় দাও। সুতরাং আমাকে বিচারক নিযুক্ত করা থেকে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অতঃপর ’উসমান ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে অব্যাহতি দিয়ে বললেনঃ আপনি এ কথাগুলো কারো নিকট বহিঃপ্রকাশ করবেন না (কেননা, বিচারকের দায়িত্ব নিতে সবাই অনীহা প্রকাশ করবে)।[1]

وَفِي رِوَايَةِ رَزِينٍ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ قَالَ لِعُثْمَانَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَا أَقْضِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ: قَالَ: فَإِنَّ أَبَاكَ كَانَ يَقْضِي فَقَالَ: إِنَّ أَبِي لَوْ أُشْكِلَ عَلَيْهِ شَيْءٌ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَوْ أُشْكِلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْءٌ سَأَلَ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَإِنِّي لَا أَجِدُ مَنْ أَسْأَلُهُ وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ عَاذَ بِاللَّهِ فَقَدْ عَاذَ بِعَظِيمٍ» . وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «مَنْ عَاذَ بِاللَّهِ فَأَعِيذُوهُ» . وَإِنِّي أَعُوذُ باللَّهِ أنْ تجعلَني قاضِياً فأعْفاهُ وَقَالَ: لَا تُخبرْ أحدا

وفي رواية رزين عن نافع ان ابن عمر قال لعثمان يا امير المومنين لا اقضي بين رجلين قال فان اباك كان يقضي فقال ان ابي لو اشكل عليه شيء سال رسول الله صلى الله عليه وسلم ولو اشكل على رسول الله صلى الله عليه وسلم شيء سال جبريل عليه السلام واني لا اجد من اساله وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من عاذ بالله فقد عاذ بعظيم وسمعته يقول من عاذ بالله فاعيذوه واني اعوذ بالله ان تجعلني قاضيا فاعفاه وقال لا تخبر احدا

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের মূল বিষয়বস্তু হলো বিচারকাজ করতে বা বিচারক হওয়ার আশা না করা। ‘উসমান ইবনু ‘উমার -কে বিচারক হওয়ার আমন্ত্রণ জানালে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বিচারক হওয়া থেকে পরিত্রাণ চান। ‘উসমান তাকে পুনরায় বললেন, বিচারক হলে অসুবিধা কি আপনার আববা ‘উমার তো বিচারক ছিলেন? এর উত্তরে ইবনু ‘উমার বলেন, আমার পিতা কোনো বিষয়ে না বুঝলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতেন আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না বুঝলে জিবরীলের মারফতে আল্লাহর নিকট থেকে জেনে নিতেন। কিন্তু আমার বিষয়টিতো এমন নয়। এ কথা বলে তিনি বিচারকাজ গ্রহণ করা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায়, ‘উমার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবিত থাকাকালীনই বিচারক ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ নাফি‘ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে