পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬১-[১] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে নববীর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে সাধ্যমতো শক্তি সঞ্চয় কর। মনে রাখ, প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। শোন! প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। শোন! প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। (মুসলিম)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

عَن عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُول: (وَأَعدُّوا لَهُ مَا استطَعْتُمْ منْ قُوَّةٍ)
أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ)
رَوَاهُ مُسْلِمٌ

عن عقبة بن عامر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو على المنبر يقول واعدوا له ما استطعتم من قوةالا ان القوة الرمي الا ان القوة الرمي الا ان القوة الرميرواه مسلم

ব্যাখ্যা: উপরোল্লিখিত হাদীসে যুদ্ধের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করাকে আবশ্যককারী কুরআনের আয়াতটি বর্ণনা করতঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ বস্তু।

وَأَعِدُّوْا لَهٗ مَا اسْتطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ এ অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে সকল জিনিস দ্বারা যুদ্ধে আত্মরক্ষা করা যায় এবং অধিক শক্তিশালী হওয়া যায়, উল্লেখিত আয়াতে এ জাতীয় সকল উপকরণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সবিকছুই এ আয়াতের বিধানের আওতাধীন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ) তথা ‘‘জেনে রাখ! শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ বস্তু’’, এর দ্বারা তিনি মূলত যুদ্ধের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এতে বুঝানো হয়েছে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপভাবে যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা করা, শরীর চর্চা করা, প্রশিক্ষণ দেয়া এবং নেয়া সব কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬২-[২] উক্ত রাবী [’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শীঘ্রই রোম সাম্রাজ্য তোমাদের হাতে পরাজিত হবে এবং তোমাদের সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। অতএব তোমাদের কেউ যেন তীর নিক্ষেপে অক্ষমতা প্রকাশ না করে। (মুসলিম)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «سَتُفْتَحُ عَلَيْكُمُ الرُّومُ وَيَكْفِيكُمُ اللَّهُ فَلَا يَعْجِزْ أَحَدُكُمْ أَنْ يَلْهُوَ بِأَسْهُمِهِ» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ستفتح عليكم الروم ويكفيكم الله فلا يعجز احدكم ان يلهو باسهمه رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলিমরা রূম (রোম) সাম্রাজ্য জয় করবে। আর বাস্তবেই পরবর্তীতে মুসলিমরা তা জয় করেছিল।

(سَتُفْتَحُ عَلَيْكُمُ الرُّوْمُ) এ বাক্যের ভাবার্থ হলো আল্লাহ প্রদত্ত বিজয় ও সাহায্যের মাধ্যমে তোমরা অচিরেই রূম জয় করেব।

(فَلَا يَعْجِزْ أَحَدُكُمْ أَنْ يَلْهُوَ بِأَسْهُمِه) এ বাক্যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই সময় তোমাদের কেউ যেন তীর-ধনুক বা অস্ত্র নিয়ে জিহাদের ময়দানে উক্ত শত্রুদের সাথে জিহাদ করতে অপারগ হয়ে না যায়। মুযহির (রহঃ) বলেনঃ এর ভাবার্থ হলো, রুমের অধিকাংশ সৈন্য তিরন্দাজ, অতএব তোমরাও তীর চালনা শিখে নিও, যাতে তোমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পার। আর তোমরা অবশ্যই তাদেরকে পরাজিত করতে পারবে। আর আল্লাহ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তোমাদের দ্বারা রূমবাসীদের প্রতিহত করবেনই। অতএব তোমরা যখন রূম বিজয় করবে তখন তীর চালনো ছেড়ে দিও না; বরং অন্যদেরও তীর চালানোর প্রশিক্ষণ দিবে। তোমরা এমন মনে করবে না যে, আমরা রূম বিজয় করে ফেলেছি, অতএব এখন তো আর তীরের কোনো প্রয়োজন নেই; বরং তোমরা তীর চালানো ধরে রাখবে, কারণ এটা তোমাদের সব সময় প্রয়োজন হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৩-[৩] উক্ত রাবী [’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিক্ষা গ্রহণ করে তা পরিহার (চর্চা না) করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, অথবা সে নাফরমানি করল। (মুসলিম)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يقولُ: «مَنْ علِمَ الرَّميَ ثمَّ تَرَكَهُ فَلَيْسَ مِنَّا أَوْ قَدْ عَصَى» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من علم الرمي ثم تركه فليس منا او قد عصى رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে জিহাদের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কেউ তীর নিক্ষেপ করা শিক্ষা করার পর পুনরায় তা ভুলে গেলে তার নিন্দা করা হয়েছে।

(مَنْ علِمَ الرَّمْىَ ثُمَّ تَرَكَه) এর ভাবার্থ হলো, কেউ তীর নিক্ষেপণ শিক্ষা করার পর তা ভুলে গেলে তার জন্য ইসলামে কঠিন ধমক ও সতর্কবাণী পেশ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির বিনা কারণে এ শিক্ষা ভুলে যাওয়া ইসলামে খুবই অপছন্দনীয় বিষয়। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯১৯)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (فَلَيْسَ مِنَّا) তথা ‘‘সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’’, অর্থাৎ সে আমাদের দলের মধ্যে শামিল হবে না। তীর নিক্ষেপ না শিখার চেয়ে অনেক বেশী ভয়ংকর হলো তা শিখার পর ভুলে যাওয়া। কারণ যে তা শিখেনি সে ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কিন্তু যে শিখেছে সে (রসূল ও সাহাবীদের) তাদের দলে প্রবেশ করেছে, অতঃপর ভুলে গিয়ে সে যেন ঐ মহান ব্যক্তিদের দলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে এবং প্রাপ্ত নি‘আমাত অস্বীকার করছে। তাই তার এ অন্যায় খুবই ভয়ঙ্কর। এজন্যই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন যে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৪-[৪] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসলাম’ সম্প্রদায়ের একদল লোকের কাছে আসলেন, তখন তারা বাজারের মধ্যে তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা করছিল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের লক্ষ্য করে বললেন, হে ইসমা’ঈল-এর বংশধর! তোমরা তীরন্দাজ হও। কেননা তোমাদের পিতামহ (ইসমা’ঈল (আঃ)) তীরন্দাজ ছিলেন। আমি অমুক দলের পক্ষে আছি। কিন্তু অপর পক্ষ থেকে তীর চালনা বন্ধ করে দিল। তখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের কি হলো? তারা বলল, আমরা কিরূপে তীর ছুঁড়তে পারি, আপনি যে অমুক দলের সঙ্গে রয়েছেন? এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সাথেই আছি। (বুখারী)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَن سلَمةَ بنِ الأكوَعِ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَسْلَمَ يَتَنَاضَلُونَ بِالسُّوقِ فَقَالَ: «ارْمُوا بَنِي إِسْمَاعِيلَ فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا وَأَنَا مَعَ بَنِي فُلَانٍ» لِأَحَدِ الْفَرِيقَيْنِ فَأَمْسَكُوا بِأَيْدِيهِمْ فَقَالَ: «مَا لَكُمْ؟» قَالُوا: وَكَيْفَ نَرْمِي وَأَنْتَ مَعَ بَنِي فُلَانٍ؟ قَالَ: «ارْمُوا وَأَنا مَعكُمْ كلكُمْ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن سلمة بن الاكوع قال خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم على قوم من اسلم يتناضلون بالسوق فقال ارموا بني اسماعيل فان اباكم كان راميا وانا مع بني فلان لاحد الفريقين فامسكوا بايديهم فقال ما لكم قالوا وكيف نرمي وانت مع بني فلان قال ارموا وانا معكم كلكم رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিতেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

(يَتَنَاضَلُوْنَ بِالسُّوْقِ) অর্থাৎ- তারা ‘সূক’ নামক স্থানে তীর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা করছিল। মূলত السوق শব্দের অর্থ হলো বাজার। কিন্তু হাদীসে বর্ণিত السوق শব্দটি সম্পর্কে ইবনু মালিক বলেন, ‘‘এটি একটি জায়গার নাম’’। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ তখন তারা পায়ে হেঁটে চলছিল; কোনো সওয়ারীতে আরোহী অবস্থায় ছিল না।

(وَكَيْفَ نَرْمِىْ وَأَنْتَ مَعَ بَنِىْ فُلَانٍ؟) এ বাক্যে তারা বলছে যে, আমরা কিভাবে তীর নিক্ষেপ করব, অথচ আপনি সাহায্য-সহযোগিতার দিক থেকে অমুক গোত্রের সাথে সাহায্য-সহযোগিতার দিক থেকে আছেন? অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়াটি তারা কষ্টকর মনে করলেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের সকলেরই সাথে আছে, অতএব তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। আর এটি ছিল একটি প্রতিযোগিতা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৫-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ ত্বলহাহ্ (উহুদ যুদ্ধে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একই ঢালের আড়ালে আত্মরক্ষা করছিলেন। আর আবূ ত্বলহাহ্ একজন সুতীক্ষ্ণ তীরন্দাজ ছিলেন। যখন তিনি তীর নিক্ষেপ করতেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে তীরের লক্ষ্যস্থল প্রত্যক্ষ করতেন। (বুখারী)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَبُو طَلْحَةَ يَتَتَرَّسُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتُرْسٍ وَاحِدٍ وَكَانَ أَبُو طَلْحَةَ حَسَنَ الرَّمْيِ فَكَانَ إِذَا رَمَى تَشَرَّفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْظُرُ إِلَى مَوضِع نبله. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن انس قال كان ابو طلحة يتترس مع النبي صلى الله عليه وسلم بترس واحد وكان ابو طلحة حسن الرمي فكان اذا رمى تشرف النبي صلى الله عليه وسلم فينظر الى موضع نبله رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিতেও তীর নিক্ষেপ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে খুবই আগ্রহী ছিলেন তার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।

(كَانَ أَبُوْ طَلْحَةَ يَتَتَرَّسُ مَعَ النَّبِىِّ ﷺ بِتُرْسٍ وَاحِدٍ) অর্থাৎ, আবূ ত্বলহাহ্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একই ঢালের নীচে আড়াল হয়েছিলেন। সাধারণত যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ করে তাকে শত্রুদের থেকে আড়াল করে রাখার জন্য অন্য একজন সৈন্যের প্রয়োজন হয়, কারণ তীর নিক্ষেপ করার সময় তার দুই হাতই ব্যস্ত থাকে। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঢাল দ্বারা আবূ ত্বলহাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ১৯০২)

(فَكَانَ إِذَا رَمٰى تَشَرَّفَ النَّبِىُّ ﷺ) অর্থাৎ- যখন আবূ ত্বলহাহ্ তীর নিক্ষেপ করত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব মনোযোগ সহকারে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতেন। ‘‘ইস্‌তিশরাফ’’ বলা হয় চোখের ভ্রম্নতে হাত রেখে কোনো কিছু দেখাকে। যেমন সূর্য দেখার সময় আমরা ভ্রম্নতে হাত রেখে দেখি। এভাবে দেখলে কোনো বস্তু খুব সুন্দর ও পরিষ্কারভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত মনোযোগের সাথে আবূ ত্বলহার তীর নিক্ষেপ দেখছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৬-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (যুদ্ধাস্ত্রের) ঘোড়ার কপালের মধ্যে বরকত ও কল্যাণ নিহিত। (বুখারী)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (الْبَرَكَةُ فِي نَوَاصِي الْخَيل)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم البركة في نواصي الخيل

ব্যাখ্যা: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ক্ষেত্রে বাহন হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহারের জুড়ি নেই। ঘোড়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে বলে সুসংবাদপ্রদান পূর্বক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত উক্তিটি করেছেন।

(اَلْبَرَكَةُ فِىْ نَوَاصِى الْخَيْلِ) তথা ‘‘ঘোড়ার কপালে কল্যাণ আছে’’ বলতে শুধুমাত্র ঘোড়ার কপাল উদ্দেশ্য নয়; বরং ঘোড়ার জাত বা পূর্ণ ঘোড়াই উদ্দেশ্য। যেমন ‘আরবরা বলে থাকে, فلان مبارك الناصية অর্থাৎ- অমুকের কপাল অনেক বরকতময়, যার ভাবার্থ হলো অমুক ব্যক্তি বরকতময়। সুতরাং আলোচ্য উক্তিটির ভাবার্থ হলো, ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। কারণ ঘোড়ার মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হয়- যাতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তোমরা কাফিরদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদা সজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, যা দ্বারা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করবে, এছাড়া অন্যান্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না; কিন্তু আল্লাহ জানেন’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ৬০)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৭-[৭] জারীর ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলাম যে, তিনি স্বহস্তে ঘোড়ার কপালের কেশরাজি মুছছিলেন এবং বলছিলেন, কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর তা হলো (আখিরাতে) পুরস্কার ও (দুনিয়াতে) গনীমাতের মাল। (মুসলিম)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْوِي نَاصِيَةَ فرسٍ بأصبعِه ويقولُ: الْخَيْلُ مَعْقُودٌ بِنَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ: الأجْرُ والغَنيمةُ . رَوَاهُ مُسلم

وعن جرير بن عبد الله قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم يلوي ناصية فرس باصبعه ويقول الخيل معقود بنواصيها الخير الى يوم القيامة الاجر والغنيمة رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসেও পূর্বোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, আর তা হলো ঘোড়ার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এটি পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ লাভের মাধ্যম। পার্থিব কল্যাণ হলো যুদ্ধলব্ধ সম্পদ তথা গনীমাত, আর পরকালীন কল্যাণ হলো জিহাদের সাওয়াব বা প্রতিদান।

(يَلْوِىْ نَاصِيَةَ فَرَسٍ بِأِصْبِعِه) এ অংশে বলা হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঘোড়ার কপালের চুলগুচ্ছতে মৃদুভাবে হাত ঘুরাচ্ছিলেন। ইমাম নববী বলেনঃ ‘‘এখানে ‘নাসিয়্যাহ্’ বলতে ঘোড়ার কপালের উপর থাকা কেশগুচ্ছ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(اَلْخَيْلُ مَعْقُوْدٌ بِنَوَاصِيْهَا الْخَيْرُ) তথা ‘‘ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বেঁধে দেয়া হয়েছে’’, এ বাক্যের ব্যাখ্যায় ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ এখানে ‘নাসিয়্যাহ্’ বলতে ইঙ্গিতমূলকভাবে সম্পূর্ণ ঘোড়াকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- ঘোড়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। যেমন ‘আরবরা বলে থাকে, (فلان مبارك الناصية) অর্থাৎ- অমুকের কপাল অনেক বরকতময়, যার ভাবার্থ হলো অমুক ব্যক্তি বরকতময়। সুতরাং আলোচ্য উক্তিটির ভাবার্থ হলো ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। কারণ ঘোড়ার মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হয়- যাতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এখানে الْخَيْرُ তথা কল্যাণ বলতে গনীমাতের মাল এবং পরকালীন প্রতিদান উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

‘‘ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বেঁধে দেয়া হয়েছে’’ এ বাক্যের ভাবার্থ সম্পর্কে ‘আল্লামা সিন্দী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘অর্থাৎ ঘোড়ার মধ্যে অবশ্যই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর এ কল্যাণ যেন ঘোড়ার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে এরূপ বুঝায়। এ কথার উদ্দেশ্য হলো, ঘোড়া তার মালিকের জন্য কল্যাণ অর্জনের উপকরণসমূহের একটি। (নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৫৭৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৮-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তার প্রতিশ্রুতির উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া লালন-পালন করে, কিয়ামতের দিন তার তৃপ্তিদায়ক খাদ্য ও প্রস্রাব-পায়খানা ঐ লোকের ’আমলের পাল্লায় ওযন করা হবে। (বুখারী)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ احْتَبَسَ فَرَسًا فِي سَبِيل الله إِيمَانًا وتصْديقاً بوَعْدِه فإِنَّ شِبَعَه ورِيَّه ورَوْثَه وبَوْلَه فِي مِيزَانه يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احتبس فرسا في سبيل الله ايمانا وتصديقا بوعده فان شبعه وريه وروثه وبوله في ميزانه يوم القيامة رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (مَنِ احْتَبَسَ فَرَسًا فِىْ سَبِيلِ اللهِ) যে আল্লাহর পথে ঘোড়া আটকিয়ে রাখলো, অর্থাৎ যুদ্ধ হতে পারে এই আশংকায় যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ঘোড়া পালন করল। ‘আল্লামা তূরিবিশতী বলেন, সীমান্তে কোনো হামলা হতে পারে এই আশংকায় তা দমন করার জন্য যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করল।

(إِيْمَانًا وَتَصْدِيْقًا بِوَعْدِه) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে এবং তাঁর ওয়া‘দাকে সত্য জেনে, অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে, তাঁর নির্দেশ পালনার্থে এবং তার কৃত ওয়া‘দা সত্য এটা বিশ্বাস করে। মোটকথা ঘোড়া প্রতিপালন করেছে আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য এবং সাওয়াবের আশায়। কেননা আল্লাহ ওয়া‘দা করেছেন যে, তাঁর পথে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া প্রতিপালন করার জন্য সাওয়াব প্রদান করা হবে। তাই যিনি এ নিয়্যাতে ঘোড়া প্রতিপালন করল সে যেন বলল, তুমি যে ওয়া‘দা করেছ আমি তোমার সে ওয়া‘দাকে বিশ্বাস করি। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৩৯৩ পৃঃ)

(فإِنَّ شَبْعَه وَرِيَّه وَرَوْثَه وَبَوْلَه فِىْ مِيْزَانِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ) ক্বিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওজন করা হবে, অর্থাৎ উল্লেখিত বস্তুসমূহের সাওয়াব তার নেকীর পাল্লায় রাখা হবে। মুহাল্লাব বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসলিমদের শত্রুর মুকাবালা করার উদ্দেশে ঘোড়া ওয়াক্ফ করা বৈধ। ইবনু আবূ জামরাহ্ বলেনঃ অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, হাদীসে বর্ণিত কর্ম সম্পাদনকারীর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করা হবে। তাই তা মীযানের পাল্লায় রাখা হবে। ইমাম ইবনু মাজাহ মারফূ‘ সূত্রে তামীম্ আদ্ দারী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়া পালন করে এবং নিজ হাতে তার খাবার খাওয়ায় এর প্রতিটি দানার বিনিময়ে তার একটি করে সাওয়াব অর্জিত হবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৮৫৩)

‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মানুষের ‘আমলসমূহ যে রকম ওযন হবে তেমনি ঐ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্তুসমূহও ওযন করা হবে। (শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৫৭৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৬৯-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার মধ্যে ’শিকাল’ হওয়া ভালো দৃষ্টিতে দেখতেন না। ’শিকাল’ ঐ ঘোড়াকে বলা হয়, যার পিছনের ডান পায়ে এবং সামনের বাম পায়ে শ্বেতবর্ণ থাকে। অথবা সামনের ডান পায়ে এবং পিছনের বাম পায়ে। (মুসলিম)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يكرَهُ الشَّكالَ فِي الْخَيْلِ وَالشِّكَالُ: أَنْ يَكُونَ الْفَرَسُ فِي رِجْلِهِ الْيُمْنَى بَيَاضٌ وَفِي يَدِهِ الْيُسْرَى أَوْ فِي يدِه اليُمنى ورِجلِه اليُسرى. رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكره الشكال في الخيل والشكال ان يكون الفرس في رجله اليمنى بياض وفي يده اليسرى او في يده اليمنى ورجله اليسرى رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَكْرَهُ الشِّكَالَ فِى الْخَيْلِ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিকাল ঘোড়া অপছন্দ করতেন, শিকাল বলা হয় ঐ ঘোড়াকে যার সামনের ডান পা ও পিছনের বাম পা, অথবা সামনের বাম পা ও পিছনের ডান পা সাদা রঙের।

ইমাম নববী বলেনঃ এটি শিকালের ব্যাখ্যাসমূহের মধ্য হতে একটি ব্যাখ্যা। আবূ ‘উবায়দ ও জুমহূর ভাষাবিদগণের মতে শিকাল ঐ ঘোড়াকে বলা হয় যার তিনটি পা শ্বেতবর্ণ এবং এক পা ভিন্ন বর্ণের। একে শিকাল বলা হয় এজন্য যে, ঘোড়ার তিন পা বেঁধে এক পা খোলা রাখা হয় যাতে ঘোড়া পালাতে না পারে। আর তিন পা শ্বেতবর্ণ ঘোড়া ঐ বন্দি ঘোড়ার সদৃশ, তাই তাকে শিকাল বলা হয়। আবার কখনো এক পা শ্বেত বর্ণের এবং তিন পা ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে তাকেও শিকাল বলা হয়। ইবনু দুরায়দ বলেনঃ একসাইটের পা শ্বেতবর্ণ ও অন্যসাইটের পা অন্য বর্ণের হলে তাকে শিকাল বলা হয়। আবূ ‘আমর আল মাওয বলেনঃ ঘোড়ার ডানদিকের সামনের ও পিছনের পা শ্বেতবর্ণ হলে অথবা বামদিকের সামনের ও পিছনের পা শ্বেত বর্ণের হলে তাকে শিকাল বলা হয়। ‘আলিমগণ বলেন, শিকাল অপছন্দ হওয়ার কারণ তা বন্দি ঘোড়ার ন্যায়। এও বলা হয়ে থাকে যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘোড়া তেজী হয় না। তাই তা অপছন্দনীয়। কিছু ‘আলিম বলেছেন, শিকাল ঘোড়ার কপাল যদি শ্বেতবর্ণ হয় তাহলে তার অপছন্দনীয়তা দূর হয়ে যায়। কারণ তাতে শিকালের সাদৃশ্যতা বিদূরিত হয়ে গেছে। (শারহে মুসলিম ১৩ খন্ড, হাঃ ১৮৭৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৭০-[১০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’হাফ্ইয়া’ হতে ’সানিয়্যাতুল বিদা’ নামক স্থান পর্যন্ত দূরত্বের মাঝে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। আর এ স্থান দু’টির মধ্যকার ব্যবধান হলো ছয় মাইল। আর প্রশিক্ষণবিহীন ঘোড়াসমূহের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন ’সানিয়্যাতুল বিদা’ হতে ’বানী যুরইক’-এর মসজিদ পর্যন্ত, এ জায়গা দু’টির মধ্যকার ব্যবধান হলো এক মাইল। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سابَقَ بينَ الخيلِ الَّتِي أُضمِرَتْ منَ الحَفْياءِ وَأَمَدُهَا ثَنِيَّةُ الْوَدَاعِ وَبَيْنَهُمَا سِتَّةُ أَمْيَالٍ وَسَابَقَ بَيْنَ الْخَيْلِ الَّتِي لَمْ تَضْمُرُ مِنَ الثِّنْيَةِ إِلَى مَسْجِد بني زُرَيْق وَبَينهمَا ميل

وعن عبد الله بن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سابق بين الخيل التي اضمرت من الحفياء وامدها ثنية الوداع وبينهما ستة اميال وسابق بين الخيل التي لم تضمر من الثنية الى مسجد بني زريق وبينهما ميل

ব্যাখ্যা: (سَابَقَ بَيْنَ الْخَيْلِ الَّتِىْ أُضْمِرَتْ) যে ঘোড়া ইযমার করানো হয়েছে সেই ঘোড়ার মাঝে প্রতিযোগিতা করিয়েছেন।

ইমাম সুয়ূত্বী বলেনঃ ইযমার বলা হয় ঐ পদ্ধতিকে যে পদ্ধতিতে ঘোড়াকে প্রথমে খাইয়ে মোটা করা হয়, অতঃপর ঘোড়া মোটা ও শক্তিশালী হয়ে গেলে তার খাবার পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়। এরপর ঐ ঘোড়াকে একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার গা চট দ্বারা ঢেকে দেয়া হয় যাতে গরম হয়ে ঘর্মাক্ত হয়, এরপর তার ঘাম শুকিয়ে তার মাংস কমে যায় এবং অধিক দৌড়াতে সক্ষম হয়। আল্লামা তূরিবিশতী বলেন, উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ঘোড়াকে শক্তিশালী করতে চল্লিশদিন সময় লাগে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৪)

(مِنَ الْحَفْيَاءِ وَأَمَدُهَا ثَنِيَّةُ الْوَدَاعِ وَبَيْنَهُمَا سِتَّةُ أَمْيَالٍ) হাফ্ইয়া হতে সানিয়্যাতুল বিদা‘ পর্যন্ত উভয়ের মাঝের দূরত্ব ছয় মাইল। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ হাফ্ইয়া মদীনার বাহিরে একটি স্থানের নাম- (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭২)। ‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ হাফ্ইয়া-কে হাইফাও বলা হয়- (শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৫৮৫)।

ثَنِيَّةُ বলা হয় উঁচু টিলাকে। মদীনার নিকটবর্তী এই টিলাকে ثَنِيَّةُ الْوَدَاعِ এজন্য বলা হয় যে, মদীনাবাসী যখন কাউকে বিদায় জানায় তখন তারা বিদায়ীকে বিদায় জানানোর জন্য এ টিলা পর্যন্ত তার পশ্চাতে এসে থাকে।

(إِلٰى مَسْجِدِ بَنِىْ زُرَيْقٍ) বানী যুরায়ক-এর মসজিদ পর্যন্ত। যুরায়ক এক ব্যক্তির নাম- (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৪)। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নামে মসজিদের নামকরণ করা বৈধ। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এতে কোনো মতভেদ নেই যে, ঘোড়া অথবা প্রাণীর মধ্যে প্রতিযোগিতা করা বৈধ। অনুরূপ তীর নিক্ষেপ ও অস্ত্র ব্যবহারের পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করা বৈধ। কেননা এতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও নিয়ম-কানুন শিখা যায়- (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭২)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৭১-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’আযবা নামক একটি উষ্ট্রী ছিল। দৌড় প্রতিযোগিতায় কোনো উটই তাকে পরাজিত করতে পারত না। একবার জনৈক গ্রাম্য ’আরব একটি উটের পিঠে আরোহণ করে এলো এবং তাকে পিছনে ফেলে দিল। এটা মুসলিমদের জন্য বেদনাদায়ক হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুনিয়াতে কোনো কিছুই সমুন্নত হয় না; আল্লাহ তা’আলার চিরন্তন সত্য কথা হলো তাকে (কোনো সময়) অবনত করে দেন। (বুখারী)[1]

بَابُ إِعْدَادِ اٰلَةِ الْجِهَادِ

وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَتْ نَاقَةٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُسَمَّى الْعَضْبَاءَ وَكَانَتْ لَا تُسْبَقُ فَجَاءَ أَعْرَابِيٌّ عَلَى قَعُودٍ لَهُ فَسَبَقَهَا فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ لَا يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا وضَعه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن انس قال كانت ناقة لرسول الله صلى الله عليه وسلم تسمى العضباء وكانت لا تسبق فجاء اعرابي على قعود له فسبقها فاشتد ذلك على المسلمين فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان حقا على الله ان لا يرتفع شيء من الدنيا الا وضعه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (كَانَتْ نَاقَةٌ لِرَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ تُسَمَّى الْعَضْبَاءَ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি উটনী ছিল, যার নাম ছিল ‘আযবা, মূলত ‘আযবা বলা হয় এমন উটকে যার কান ফাটা, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উটনীর কান ফাটা ছিল না। বরং এ উটনীর নাম ছিল ‘আযবা।

(كَانَتْ لَا تُسْبَقُ) ‘‘তা প্রতিযোগিতায় পরাজিত হত না’’ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উট এত দ্রুতগামী ছিল যে, কোনো উট প্রতিযোগিতায় তাকে পিছে ফেলতে পারত না।

(فَجَاءَ أَعْرَابِىٌّ عَلٰى قَعُوْدٍ لَه فَسَبَقَهَا) এক বেদুঈন তার ক‘ঊদ নিয়ে আসলো আর তা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলো। অর্থাৎ এ ক‘ঊদটি প্রতিযোগিতায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আযবা উটনী পিছে ফেলে দিয়ে তা বিজয়ী হয়ে গেল। قَعُوْدٍ (ক‘ঊদ) বলা হয় ঐ পুরুষ উটকে যার বয়স দুই বৎসর থেকে ছয় বৎসরের মধ্যে এবং যার বয়স ছয় বৎসরের বেশী হয়ে তাকে جمل (জামাল) বলা হয়। তেমনিভাবে قَعُوْدٌ ঐ উটকে বলা হয় যা বাহন হওয়ার উপযোগী এবং মাদী উটের উপর সওয়ার হতে সক্ষম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৪)

জাওহারী বলেনঃ সওয়ার হওয়ার উপযোগী স্বল্প বয়সের উটকে قَعُوْدٌ বলা হয়। কমপক্ষে তার বয়স দুই বৎসর এবং ছয় বৎসর বয়সে উপনীত হলে তাকে جمل বলা হয়। আযহারী বলেনঃ একমাত্র পুরুষ উটকেই قَعُوْدٌ বলা হয়। মাদী উটকে বলা হয় قَلُوصٌ (কলূস)। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ২৮৭২)

(فَاشْتَدَّ ذٰلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ) বিষয়টি মুসলিমদের নিকট কষ্টকর মনে হলো, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের এ পরাজয় মুসলিমদের হৃদয়ে কষ্টের কারণ হলো।

(إِنَّ حَقًّا عَلَى اللّٰهِ أَنْ لَّا يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا وَضَعَه) আল্লাহর কর্তব্য হলো দুনিয়াতে কোনো বস্তু বেশী মর্যাদাবান হলে তার মর্যাদা কমিয়ে দেয়া অর্থাৎ দুনিয়াতে কোনো বস্তুর মর্যাদা বেশী বেড়ে গেলে তার মর্যাদা কমিয়ে দেয়া আল্লাহ তা‘আলার স্থায়ী বিধান। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৫)

হাদীসের শিক্ষা:

১. প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের উদ্দেশে ঘোড়া পালন করা বৈধ।

২. বিনয় প্রকাশের প্রতি উৎসাহ প্রদান।

৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম চরিত্র এবং তাঁর বিনয় প্রকাশ।

৪. সাহাবীদের অন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে