পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪১৯-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা চিরুনি করে দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أُرَجِّلُ رَأْسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا حَائِض

عن عاىشة رضي الله عنها قالت كنت ارجل راس رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا حاىض

ব্যাখ্যাঃ (أرجل) আরবী শব্দ (التَّرْجِيْل) থেকে নির্গত, যার অর্থ হলো : চিরুনি করা, চুলে তেল ব্যবহার করা। অতএব এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ই‘তিকাফরত ব্যক্তির জন্য পরিচ্ছন্নতা অর্জন, সুগন্ধি ব্যবহার, গোসল, চুল কামানো ও সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা জায়িয। চুল চিরুনি করার উপর ভিত্তি করে এগুলোর বৈধতা প্রমাণিত হয়। জামহূর ‘উলামার মতে ই‘তিকাফ অবস্থায় ই‘তিকাফরত ব্যক্তির জন্য কেবল ঐসব বিষয় মাকরূহ যা মসজিদে ই‘তিকাফ ছাড়া অবস্থায় মাকরূহ। কেবল ই‘তিকাফের কারণে মসজিদের ভিতর কোন কিছু মাকরূহ হয় না।

ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে পাওয়া যায় যে, ই‘তিকাফরত ব্যক্তির জন্য নিজ পেশার কাজ কর্ম করা মাকরূহ, এমনকি পেশাগত শিক্ষা করানোও।

এ হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, কেউ যদি তার শরীরের কিছু অংশ মসজিদ থেকে বের করে, তবে তার ই‘তিকাফ নষ্ট হবে না। ই‘তিকাফ বিশুদ্ধতায় এতে দোষের কিছু নেই।

খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস থেকে এই ফিকহী মাসআলাহ্ বের হয় যে, ই‘তিকাফরত ব্যক্তির জন্য পায়খানা বা প্রসাবের প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়িয নয়। এ হাদীস থেকে ই‘তিকাফরত ব্যক্তির জন্য চিরুনি করা ও ময়লা পরিষ্কার করার বৈধতা পাওয়া যায়। হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, হায়য বা ঋতুবতী মহিলার শরীর পাক, নাপাক নয়। অর্থাৎ শরীরের বাহ্যিক অংশ নাপাক নয়। কেননা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ঋতুগ্রস্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল চিরুনি করে দিতেন বলে হাদীসে বলা হচ্ছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২৪৬৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২০-[২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি জিনিস ফিতরাত- ১. খতনা করা, ২. নাভির নিম্নের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা, ৩. গোঁফ কাটা, ৪. নখ কাটা, ৫. বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْفِطْرَةُ خَمْسٌ: الْخِتَانُ وَالِاسْتِحْدَادُ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ ونتفُ الإِبطِ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الفطرة خمس الختان والاستحداد وقص الشارب وتقليم الاظفار ونتف الابط

ব্যাখ্যাঃ (الْفِطْرَةُ خَمْسٌ) ফিতরাহ্ অর্থাৎ ইসলামের ফিতরাত পাঁচটি। ফিতরাত বলা হয় মানুষের ঐ স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যকে, যে বৈশিষ্ট্যের উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কাযী এবং অন্যরা বলেনঃ হাদীসে যে ফিতরাতের কথা বলা হয়েছে এর ব্যাখ্যা পুরাতন সুন্নাত দিয়ে দেয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ এ বৈশিষ্ট্যগুলো এমন পুরাতন সুন্নাত যা সব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহণ করেছেন এবং সকলের শারী‘আত এ ব্যাপারে একমত। এগুলো যেন এমন বৈশিষ্ট্য, যার উপর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘ফিতরাত’ শব্দের যত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে এ ব্যাখ্যাটি সর্বোত্তম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

এখানে যে পাঁচটি ফিতরাত তথা স্বভাবজাত সুন্নাত বা বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে তার একটি হলো :

(الْخِتَانُ) ‘খিতান’ এর অর্থ হলো খৎনা করা। খৎনা কাকে বলে তা সকলেরই জানা। খৎনা সকল নবীদেরই পুরাতন সুন্নাত। আমাদের জন্যও খৎনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, এতে কারো দ্বিমত নেই। তবে এ সুন্নাতটির গুরুত্ব ও পর্যায় নিয়ে ‘উলামার মাঝে কিছুটা দ্বিমত লক্ষ্য করা যায়। ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেক ‘আলিমের নিকট খৎনা করা সুন্নাতটি ওয়াজিব। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম হিসেবে এটি সুন্নাত বা তাঁর পালিত একটি নিয়ম হলেও এ সুন্নাতটি আদায় করা সকলের ওপর ওয়াজিব। অপরদিকে ইমাম মালিকসহ অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে খৎনার হুকুম সুন্নাত। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৭/৪৯)

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেকেই খৎনা করাকে সুন্নাত বললেও এর গুরুত্ব সকলের নিকট ওয়াজিব পর্যায়ের। কেননা খৎনা করা ইসলামের এক বিশেষ নিদর্শন বলে গণ্য। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাহ্যিক নাপাকি থেকে পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রেও খৎনার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

পুরুষের ক্ষেত্রে খৎনা করা যেমন সুন্নাত, মহিলার ক্ষেত্রেও সুন্নাত। তবে মহিলার ক্ষেত্রে খৎনার গুরুত্ব পুরুষের মতো নয়। মহিলার ক্ষেত্রে খৎনার বিধান নিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম জায়িয, মুস্তাহাব, সুন্নাত, ওয়াজিবের মতানৈক্য করে থাকেন। তবে বিশুদ্ধ মত হলো, মহিলাদের ক্ষেত্রেও তা সুন্নাত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ الْخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ مَكْرُمَةٌ لِلنِّسَاءِ ‘‘খৎনা পুরুষের জন্য সুন্নাত, মহিলাদের জন্য সম্মানের পরিচায়ক’’। ইমাম আহমাদ হাসান সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(الِاسْتِحْدَادُ) স্বভাবজাত সুন্নাতের আরেকটি সুন্নাত হলো ‘ইসতিহদাদ’। ‘ইসতিহদাদ’ এর শাব্দিক অর্থ হলো ‘হাদীদ’ বা লৌহ বিশেষের ব্যবহার। এর দ্বারা ক্ষুর দ্বারা নাভির নিচের পশম কাটা উদ্দেশ্য। ক্ষুর দ্বারা নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সুন্নাত। এর দ্বারা এই স্থানকে আবর্জনামুক্ত ও পরিষ্কার রাখা উদ্দেশ্য। ক্ষুর দ্বারা নাভির নিচের লোমকে চেঁছে ফেলা বা কামিয়ে ফেলা উত্তম। তবে কাঁচি দিয়ে ছাঁটা বা উপড়িয়ে ফেলা অথব চুনা ব্যবহারের মাধ্যমে লোম তুলে ফেলাও বৈধ। নাভির নিচের লোম বলতে পুরুষের লজ্জাস্থানের উপর ও তার আশপাশে যত লোম রয়েছে সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এভাবে মহিলার লজ্জাস্থানের আশপাশে যত লোম রয়েছে সবই এর অন্তর্ভুক্ত। লজ্জাস্থানের সামনের রাস্তা ও পিছনের রাস্তার আশপাশের সকল লোম কামিয়ে নেয়া বা কর্তন করে নেয়া এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৭/৪৯)

(قَصُّ الشَّارِبِ) অর্থাৎ গোঁফ কর্তন করা। অর্থাৎ উপরের ঠোটের উপর গজানো পশমকে একেবারে মূল থেকে না ছেঁটে কেটে নেয়া সুন্নাত। তবে গোঁফ কর্তনের বেলায় হাদীসে বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যববহার করা হয়েছে। কাটা, ছাটা, কামানো, ছোট করা সব ধরনের শব্দই গোঁফ কর্তনের নির্দেশে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ‘উলামা এ ব্যাপারে মতানৈক্য পোষণ করেন। কারো মতে কাটা সুন্নাত, আবার কারো মতে ছাটা সুন্নাত, আবার কারো মতে উভয়টার অবকাশ রয়েছে। ইমাম তাবারী এ ব্যাপারে উভয় মতামত আলোচনা করে বলেন, সুন্নাতে উভয়টিরই অবকাশ পাওয়া যায়। তাই কোন বিরোধ নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৯৪)

(تَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ) নখ কর্তন করা। স্বভাবজাত সুনণাতের আরেকটি হলো হাত ও পায়ের নখ কেটে নেয়া। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর শারহু মুসলিমে লিখেন, নখ কাটার বেলায় মুস্তাহাব হলো, প্রথমে হাতের নখ কাটা এবং পরে পায়ের নখ কাটা। হাতের মধ্যে আবার প্রথমে ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলির নখ, এরপর মধ্যমা, এরপর অনামিকা, এরপর কনিষ্ঠা, এরপর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটবে। তারপর বাম হাতের প্রথমে কনিষ্ঠা, এরপর অনামিকা- এই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আসবে। এরপর ডান পায়ের কনিষ্ঠা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠায় গিয়ে শেষ করবে। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৭/৪৯)

এভাবে কেউ নখ কাটার মুস্তাহাব পদ্ধতি এবং মুস্তাহাব সময় বৃহস্পতিবারের কথা উল্লেখ করেন। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) এগুলো বর্ণনার পর বলেনঃ বৃহস্পতিবারে নখ কাটার ব্যাপারে কোন হাদীস নেই। বরং যেভাবেই প্রয়োজন পড়বে কাটবে। অনুরূপভাবে নখ কাটার পদ্ধতি ও তার বার নির্ধারণের বেলায় কিছুই প্রমাণিত নয়। নখ কাটার ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে ‘আলী  বা অন্যদের দিকে যা সম্পৃক্ত করা তার সবই বাতিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(نتفُ الإِبطِ) বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা। বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা সবার ঐকমত্যে সুন্নাত। যে ব্যক্তি উপড়িয়ে ফেলতে সক্ষম তার জন্য এটাই উত্তম। তবে কামিয়ে ফেললে বা চুনা দ্বারা তুলে নিলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। ইউনুস ইবনু ‘আবদুল আ‘লা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে গেলাম। তখন তার কাছে সজ্জাকারী ব্যক্তি ছিল যে তার বগলের লোম কামিয়ে দিচ্ছে। শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) তখন বললেন, আমি জানি, সুন্নাত হলো উপড়িয়ে ফেলা। কিন্তু ব্যথার কারণে আমি তা করতে সক্ষম নই। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৭/৪৯)

উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে ফিতরাত বা স্বভাবজাত সুন্নাত পাঁচটির কথা বলা হয়েছে। আবার অন্য হাদীসে বলা হয়েছে-

عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ

‘‘দশটি বিষয় ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছাঁটা, দাড়ি ছেড়ে দেয়া, মিসওয়াক করা, নাকে (উযূ করার সময়) পানি নেয়া, নখ কাটা, আঙ্গুলের জোড়া বা গাট ধৌত করা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম কর্তন করা, পানি দিয়ে ইসতিঞ্জা করা।’’

এখানে দশটি ফিতরাতের কথা উল্লেখ করে নয়টি বলার পর বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি দশ নাম্বারটি ভুলে গেছি। তবে তা কুলি করা হতে পারে।

আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যে, এ হাদীসে অতিরিক্ত যে ফিতরাতের কথা বলা হয়েছে যা উপরের হাদীসে নেই সেগুলো হলো : দাড়ি ছেড়ে দেয়া, মিসওয়াক করা, নাকে (উযূতে) পানি নেয়া, আঙ্গুলের জোড়া বা গাট ধৌত করা, ইসতিঞ্জা করা। বর্ণনাকারীর সন্দেহমূলক আরেকটি হলো কুলি করা। আবার উপরের হাদীসে খৎনা করার কথা বলা হয়েছে যা এ হাদীসে নেই। অতএব দুই হাদীস মিলিয়ে মোট এগারটি ফিতরাত বা স্বভাবজাত সুন্নাতের কথা বলা হলো। তবে একটি হাদীসে পাঁচটি, আবার অপর হাদীসে দশটি বলার কারণ বা উভয় হাদীসের মধ্যে বাহ্যিক বিরোধ নিরসন করার উপায় কি?

এর উত্তরে ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ স্বভাবজাত সুন্নাত পাঁচটি বা দশটির ভিতর সীমাবদ্ধ নয়। বরং স্বভাবজাত বেশকিছু সুন্নাতের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে পাঁচটির কথা বলেছেন, আরেক হাদীসে দশটির কথা বলেছেন। আর সীমাবদ্ধ নয় বলেই বর্ণনায় (مِنَ الْفِطْرَةِ) শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হলো, ফিতরাতের মধ্য থেকে এগুলো হলো উল্লেখযোগ্য। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৭/৪৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২১-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করো। অর্থাৎ- দাড়ি বাড়াও এবং গোঁফ খাটো করো। অপর এক বর্ণনায় আছে, গোঁফ ছেঁটে নাও এবং দাড়ি লম্বা করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ: أَوْفِرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ . وَفِي رِوَايَةٍ: «أنهكوا الشَّوَارِب وأعفوا اللحى»

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خالفوا المشركين اوفروا اللحى واحفوا الشوارب وفي رواية انهكوا الشوارب واعفوا اللحى

ব্যাখ্যাঃ (خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ) মুশরিকদের বিরোধিতা করো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে সহীহ মুসলিম-এর ব্বিরণে রয়েছে, خالفوا المجوس অর্থাৎ অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসের উদ্দেশ্য এটাই। কেননা তাদের অনেকে দাড়ি কেটে ফেলতো আবার অনেকে কামিয়ে ফেলতো এবং গোঁফ ছেড়ে দিতো। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯২)

(أَوْفِرُوا اللِّحٰى) অর্থাৎ দাড়িকে পরিপূর্ণরূপে বৃদ্ধি করো। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায় দাড়ি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে أوفِروا، وفِّروا، أعفوا শব্দ বর্ণিত হয়েছে। আবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে সহীহ মুসলিম-এর ব্বিরণে أَرْخُوا،أرْجِئُوا، أوفُوا শব্দ এসেছে।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সব বর্ণনা মিলে পাঁচ ধরনের শব্দ এসেছে। সব বর্ণনারই মর্ম এক। অর্থাৎ দাড়িকে তার আপন গতিতে লম্বা হতে দেয়া এবং বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ করা। হাদীসের শব্দ এটাই দাবী করে। আমাদের ইমামগণের অনেকে এবং অন্যান্য অনেকেই এ মত পোষণ করেন। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৯/৫২)

দাড়ির বেলায় এসব হাদীসের আলোকে অনেক ‘আলিমের মতে দাড়ি কোন অবস্থায় কাটা বৈধ নয়। বরং তাকে তার আপন গতিতে বাড়তে দিতে হবে। আবার অনেক ‘আলিম মনে করেন, দাড়ি অধিক লম্বা হলে এক মুষ্টির অতিরিক্তটুকু কাটা বৈধ রয়েছে। সহীহুল বুখারীর হাদীসে রয়েছে-

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ ، قَبَضَ عَلى لِحْيَتِه ، فَمَا فَضَلَ ، أَخَذَهٗ

‘‘আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন হজ্জ বা ‘উমরাহ্ করতেন, তিনি তাঁর দাড়িকে মুঠ দিয়ে ধরতেন, মুষ্টির অতিরিক্ত যা হত তা কেটে ফেলতেন।’’

ফাতহুল বারীতে ইমাম ত্ববারীর বরাতে লিখেন, একদল ‘আলিম হাদীসের বাহ্যিক অর্থের উপর মত দিয়েছেন। তাই তারা মনে করেন, দাড়ির পার্শ্ব থেকে বা তার লম্বা থেকে যে কোন কিছু কাটা মাকরূহ। আবার আরেক দল মনে করেন, এক মুষ্টির উপরে হলে অতিরিক্তটুকু কাটা জায়িয। তাদের দলীল ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কর্ম। তিনি অতিরিক্তটুকু কেটেছেন। ‘উমার (রাঃ)-ও এক ব্যক্তির বেলায় এমনটি করেছেন বলে তারা বর্ণনা করেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ)-ও এমনটি করেছেন বলে ব্বিরণ দেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯২)

(أَحْفُوا الشَّوَارِبَ) গোঁফ কর্তন করো।أَحْفُوا শব্দের অর্থ কর্তন করা। গোঁফ কর্তনের বেলায় পরবর্তী যে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে সেটি (أنهكوا) কাটার ক্ষেত্রে মুবালাগাহ্ বা আধিক্য করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

গোঁফের কাটা সুন্নাত নাকি হলক তথা কামিয়ে নেয়া সুন্নাত তা আমরা উপরের হাদীসের ব্যাখ্যায় জেনেছি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২২-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা এবং বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা আর নাভির নিচের লোম মুড়ানোর ব্যাপারে যেন আমরা চল্লিশ দিনের অধিক ছেড়ে না রাখি। (মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَن أَنس قَالَ: وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الْأَظْفَارِ وَنَتْفِ الْإِبِطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لَا تُتْرَكَ أَكثر من أَرْبَعِينَ لَيْلَة. رَوَاهُ مُسلم

وعن انس قال وقت لنا في قص الشارب وتقليم الاظفار ونتف الابط وحلق العانة ان لا تترك اكثر من اربعين ليلة رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (وُقِّتَ لَنَا) অর্থাৎ আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বা সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি মারফূ‘ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। যেমন বলা হয়, أُمِرْنَا بِكَذأ। অর্থাৎ আমাদেরকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সহীহ মুসলিম ছাড়া অন্য কিতাবের বর্ণনায় এসেছে, (وَقَّتَ لَنَا رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৮/৫১)

উল্লেখিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোঁফ, নখ, বগলের নিচের পশম ও নাভির নিচের পশম কাটার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার সর্বোচ্চ মেয়াদ হলো চল্লিশ দিন। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘‘আমরা যেন চল্লিশ রাতের বেশি না ছাড়ি’’ এর অর্থ হলো, আমরা এগুলো কাটা এমনভাবে ছেড়ে দিব না যে চল্লিশ দিন পার হয়ে যায়। (শারহুন নাবাবী ৩য় খন্ড, হাঃ ২৫৮/৫১)

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের উদ্দেশ্য এই নয় যে, এগুলো কাটতে চল্লিশ দিন নিতে হবে, বরং চল্লিশ দিন পার না করাটা হাদীসের উদ্দেশ্য। এর ভিতর যে কোন দিন এগুলো কেটে নেয়া যায়। এগুলোর বৃদ্ধির অবস্থার ভিত্তিতে তা কেটে নিবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নখ ও গোঁফ প্রতি জুমু‘আর দিন কেটে নিতেন বলে বিবরণ পাওয়া যায়। শারহুস্ সুন্নাহয় তা উল্লেখের পর বলেন, এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, নাভীর নিচের লোম কাটা ও বগলের পশম উপড়াতে দেরী করতেন। আর বাহ্যত এটাই বুঝা যায়; কেননা এগুলো এক সপ্তাহে লম্বা হয় না। কোন কোন বর্ণনায় ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি জুমু‘আর দিন গোঁফ ও নখ কেটে নিতেন, আর নাভীর নিচের পশম বিশ দিনে কাটতেন এবং বগলের পশম চল্লিশ দিনে উপড়াতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৩-[৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ দাড়ি চুলে খিযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করো (অর্থাৎ- খিযাব লাগাও)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لَا يَصبِغون فخالفوهم»

وعن ابي هريرة ان النبي صلى الله عليه وسلم قال ان اليهود والنصارى لا يصبغون فخالفوهم

ব্যাখ্যাঃ (لا يصبغون) আরবী শব্দ صِبْغٌ صَبْغٌ থেকে নির্গত। যার অর্থ রঙ করা বা খিযাব লাগানো। তারা রঙ করে না। অর্থাৎ তারা তাদের দাড়িতে খিযাব ব্যবহার করে না। অতএব তোমরা তাদের বিরোধিতা করো অর্থাৎ মেহেদীর খিযাব ব্যবহার করো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

দাড়ি সাদা হয়ে গেলে খিযাব তথা রঙ দিয়ে তা পরিবর্তন করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। ফাতহুল বারীতে ইমাম আহমাদ-এর বরাতে হাসান সনদে আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আনসারী কিছু বৃদ্ধ লোকের সামনে বের হন, যাদের দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন, হে আনসারের দল! তোমরা দাড়িকে লাল করো, হলুদ করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো’’। ইমাম ত্ববারানী তাঁর ‘আওসাত্ব’ কিতাবে আনাস (রাঃ) থেকে এমন হাদীস বর্ণনা করেন। আর ‘কাবীরে’ ‘উতবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মালিক থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনারবদের বিরোধিতা করতে চুল পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)

বর্ণিত হাদীসসমূহের আলোকে আমরা দেখছি যে, চুল বা দাঁড়িতে শুভ্রতা প্রকাশ পেলে খিযাব বা রঙ দ্বারা তা পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তবে খিযাবের ক্ষেত্রে যে কোন রঙের খিযাব ব্যবহার বৈধ নাকি এর মাঝে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে- এ নিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম দ্বিমত পোষণ করেন। উপরোক্ত হাদীসসমূহে খিযাবের কোন ধরণকে পৃথক করা হয়নি। এসব হাদীসের আলোকে যে কোন খিযাবই বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন একদল ‘আলিম। ‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যারা কালো খিযাব ব্যবহারের অনুমতি দেন তারা এ হাদীসগুলো দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)

পরবর্তী হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খিযাব দ্বারা চুল বা দাড়িকে পরিবর্তন করতে বলেছেন, যা কালো খিযাব পরিহার করতে বলেছেন। তাই ‘উলামায়ে কিরামের অনেকেই মনে করেন, চুলে কালো খিযাব ছাড়া অন্য খিযাব ব্যবহার করা বৈধ। কালো খিযাব ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেসব হাদীসে খিযাব ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে বা অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তা কালো ছাড়া অন্য রঙের বেলায়। ‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) উপরের হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন, ‘‘খিযাব ব্যবহারের অনুমোদন কালো ছাড়া অন্য রঙের বেলায় নির্ধারিত। কেননা ইমাম মুসলিম জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা তা পরিবর্তন করো তবে কালো পরিহার করো’’। এছাড়াও আবূ দাঊদে ইবনু ‘আব্বাস থেকে মারফূ‘ সনদে বর্ণিত, যা ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন,

يكون قوم في آخر الزمان يخضبون بالسواد كحواصل الحمام لا يريحون رائحة الجنة  

‘‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায় হবে, যারা কবুতরের বুকের ন্যায় (কালো) খিযাব ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না’’। হাদীসের সানাদ শক্তিশালী। তবে হাদীসটি মারফূ‘ নাকি মাওক্বূফ- এ নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। মাওক্বুফ হওয়াকে প্রাধান্য দিলেও তা মারফূ‘ এর হুকুমে; কেননা যুক্তির আলোকে এসব কথা বলা যায় না। তাই ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) কালো খিযাব ব্যবহার মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার মতকে পছন্দ করেন।’’ (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৪-[৬] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন (আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর পিতা) আবূ ক্বুহাফাকে (মুসলিম বানানোর জন্য) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত করা হলো। সে সময় তাঁর মাথার চুল ও দাড়ি সুগামার (কাশফুলের) মতো একেবারে সাদা ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন কিছুর দ্বারা তার চুল দাড়ির শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং ব্যবহার করো না। (মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَن جَابر قَالَ: أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثُّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّواد» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال اتي بابي قحافة يوم فتح مكة وراسه ولحيته كالثغامة بياضا فقال النبي صلى الله عليه وسلم غيروا هذا بشيء واجتنبوا السواد رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ বর্ণিত হাদীসটি কালো খিযাব ব্যবহার হারাম হওয়ার স্বপক্ষের দলীল। ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করতে অনুচ্ছেদটি এভাবে রচনা করেন, ‘লাল বা হলুদ দিয়ে চুল খিযাব করা মুস্তাহাব এবং কালো দিয়ে খিযাব করা হারাম অনুচ্ছেদ’। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমাদের মাযহাব হলো, মহিলা ও পুরুষের জন্য চুলের শুভ্রতায় হলুদ ও লাল খিযাব ব্যবহার মুস্তাহাব। আর আমাদের মাযহাবের বিশুদ্ধ মতে কালো খিযাব ব্যবহার হারাম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৯৯) উপরোল্লিখিত হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৫-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে সমস্ত ব্যাপারে কোন নির্দেশ (বা ওয়াহী) নাযিল হয়নি, সেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে কিতাবদের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করাকে পছন্দ করতেন। তৎকালের আহলে কিতাবগণ তাদের মাথার চুলকে সোজা ছেড়ে রাখত। আর মুশরিকরা সিঁথি কেটে চুলগুলোকে দু’ভাগ করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিই সোজাসুজি পিছনের দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন (সিঁথি কাটত না)। অবশ্য পরে তিনি সিঁথি কেটেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيهِ وَكَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ وَكَانَ الْمُشْرِكُونَ يَفْرِقُونَ رؤوسهم فَسَدَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهُ ثمَّ فرق بعدُ

وعن ابن عباس قال كان النبي صلى الله عليه وسلم يحب موافقة اهل الكتاب فيما لم يومر فيه وكان اهل الكتاب يسدلون اشعارهم وكان المشركون يفرقون رووسهم فسدل النبي صلى الله عليه وسلم ناصيته ثم فرق بعد

ব্যাখ্যাঃ (يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيهِ) অর্থাৎ যেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী নাযিল হয়নি সেসব বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণ ভালোবাসতেন।

বিভিন্ন বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে বিরোধিতা করার কথা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। ইতোপূর্বে খিযাবের হাদীসে আমরা দেখেছি যে, আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করতেই খিযাব করতে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই ওয়াহী না আসা বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী, কাযী ‘ইয়ায-এর বরাতে বলেনঃ যেসব বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী আসেনি সেসব বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্যের ব্যাখ্যায় ‘উলামারা ইখতিলাফ করেন। কেউ কেউ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কাজটি ইসলামের সূচনালগ্নে আহলে কিতাবদের মনকে আকৃষ্ট করা এবং মূর্তি পূজার বিরোধিতায় তাদের সাথে তাঁর ঐকমত্য দেখানোর জন্য ছিল। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আকৃষ্ট করা থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং ইসলামকে সব দীনের উপর জয় দান করেন, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে বিরোধিতার ঘোষণা দেন। যেমন চুলে খিযাবের বিষয়। আবার কেউ কেউ বলেন, এমনও হতে পারে যে, যেসব বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়নি, সেসব বিষয়ে তাঁকে আহলে কিতাবদের শারী‘আতের অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। আর এটা নিশ্চয় তাদের শারী‘আতের ঐসব বিষয়ে যেগুলোকে তারা পরিবর্তন করেনি। (শারহুন নাবাবী হাঃ ২৩৩৬, অধ্যায় : রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুলের সিফাত)

(يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ) তারা তাদের চুলকে ছেড়ে দিত। চুলকে ছেড়ে দেয়া বলতে, চুলকে দুই ভাগে ভাগ করে ডান দিকে এক ভাগ এবং বাম দিকে এক ভাগ না করেই তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় মাথার আশপাশে ছেড়ে দেয়া।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর শারহু মুসলিমে রয়েছে, ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ চুলের ক্ষেত্রে ‘সাদল’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, চুলকে কপালের উপর ছেড়ে দেয়া এবং তাকে বাটির মতো বানিয়ে ফেলা। আর ‘ফারক’ তথা সিঁথি হলো চুলকে একে অপর থেকে পৃথক করা। কেউ কেউ বলেন, ‘সাদল’ হচ্ছে, চুলকে দ্বিখন্ড- বণ্টন না করে পিছন দিকে ছেড়ে দেয়া। আর ‘ফারক’ বা সিঁথি হলো তাকে দ্বিখন্ড- ভাগ করা।

(فَسَدَلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهٗ) তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে ‘সাদল’ করতেন। অর্থাৎ মদীনায় এসে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদ্ল করেন।

(ثُمَّ فَرَّقَ بَعْدُ) এরপর সিঁথি করেন। অর্থাৎ মদীনার আসার পর কিছুকাল যাওয়ার পর সিঁথি করেন। ইবনুল মালিক বলেনঃ জিবরীল এসে তাকে সিঁথি করার নির্দেশ দেন। তাই তিনি সিঁথি করেন এবং মুসলিমরাও তাদের মাথা সিঁথি করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখ্য যে, চুলে ‘সাদ্ল’ তথা সিঁথি না করে ছেড়ে দেয়া অথবা ‘ফার্ক’ তথা সিঁথি করা কোনটি শার‘ঈ দিক নির্দেশনা হিসেবে ছিল না। তাই রসূলের সিঁথির ‘আমলের মাধ্যমে ‘সাদল’-এর হুকুম রহিত হয়ে গেছে এমন নয়।

ফাতহুল বারীতে রয়েছে, ‘সাদল’ মানসূখ বা রহিত হলে সব সহাবা বা অধিকাংশরা তা ছেড়ে সিঁথি করতেন। আর সাহাবীদের থেকে বর্ণিত যে, তাদের কেউ কেউ সিঁথি করতেন, কেউ কেউ সিঁথি করতেন না। অথচ কেউ কাউকে দোষারোপ করতেন না। আর সহীহ বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল বাবরী ছিল, তাতে সিঁথি হলে তিনি তা সিঁথি করতেন, না হলে ছেড়ে দিতেন। অতএব বিশুদ্ধ মত হলো, সিঁথি মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৬-[৮] নাফি’ (রহিমাহুল্লাহ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাযা’ হতে নিষেধ করতে শুনেছি। নাফি’-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কাযা’ কি? তিনি বললেনঃ বালকদের মাথার কিছু চুল মুড়িয়ে ফেলা এবং কিছু চুল রেখে দেয়া। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

কেউ কেউ কাযা’-এর ব্যাখ্যাটি মূল হাদীসের সাথেই সংযোগ বা সংযুক্ত করেছেন।

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى عَنِ الْقَزَعِ. قِيلَ لِنَافِعٍ: مَا الْقَزَعُ؟ قَالَ: يُحْلَقُ بعضُ رَأس الصبيِّ وَيتْرك البعضُ
وَألْحق بَعضهم التَّفْسِير بِالْحَدِيثِ

وعن نافع عن ابن عمر قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم ينهى عن القزع قيل لنافع ما القزع قال يحلق بعض راس الصبي ويترك البعضوالحق بعضهم التفسير بالحديث

ব্যাখ্যাঃ (القزع) কাযা‘ অর্থাৎ মাথার চুলের কিছু অংশ কামানো আর কিছু অংশ রেখে দেয়া। কেউ কেউ বলেন, মাথার বিভিন্ন অংশ থেকে কামিয়ে নেয়া হচ্ছে কাযা‘। ইমাম নাবাবী বলেনঃ প্রথম অর্থটিই এখানে উদ্দেশ্য; কেননা প্রথম অর্থটি হাদীসের বর্ণনাকারীর ব্যাখ্যা। বর্ণনাকারীর ব্যাখ্যা হাদীসের বাহ্যিক অর্থের বিরোধ নয়। তাই এই অর্থ নেয়া আবশ্যক।

কাযা' অর্থাৎ মাথার কিছু চুল কামানো ও কিছু রেখে দেয়া। এক অংশের চুল কামানো এবং অন্য অংশ রেখে দেয়া মাকরূহ হওয়ার বেলায় উলামারা একমত। তবে মাথার চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য হলে মাকরূহ নয়। আর এখানে মাকরূহ বলতে মাকরূহ তানযীহি। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) এ আলোচনার পর বলেনঃ আমাদের মাযহাব মোতাবেক পুরুষ-মহিলা সবার জন্যই কাযা’ মাকরূহ; কেননা হাদীসটি ব্যাপক। ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ কাযা‘ মাকরূহ হওয়া বা নিষেধের রহস্য হলো, এতে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিকে কদাকার করে দেয়া হয়। কেউ কেউ বলেন, এটা ইতর শয়তানের কষ্ট দেয়ার কারণ। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা ইয়াহূদীদের বেশ; তাই মাকরূহ। (শারহুন নাবাবী পৃঃ ৯১/৯২৭, লিবাস অধ্যায়, কাযা‘ মাকরূহ অনুচ্ছেদ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ নাফি‘ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৭-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি ছেলেকে দেখতে পেলেন, যার মাথার চুলের কিছু অংশ মুড়ানো হয়েছে আর কিছু অংশ রেখে দেয়া হয়েছে। তখন তিনি তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ পুরা মাথা মুড়িয়ে ফেলো অথবা পুরা মাথায় চুল রেখে দাও। (মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى صَبِيًّا قَدْ حُلِقَ بَعْضُ رَأْسِهِ وَتُرِكَ بَعْضُهُ فَنَهَاهُمْ عَنْ ذَلِكَ وَقَالَ: «احْلِقُوا كُلَّهُ أَوِ اتْرُكُوا كُلَّهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابن عمر ان النبي صلى الله عليه وسلم راى صبيا قد حلق بعض راسه وترك بعضه فنهاهم عن ذلك وقال احلقوا كله او اتركوا كله رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ বর্ণিত হাদীসটি উপরের হাদীসের ব্যাখ্যারূপে গ্রহণ করা যায়। অর্থাৎ মাথার কিছু অংশের চুল রেখে দেয়া এবং কিছু কামিয়ে ফেলা কাযা‘ এবং তা নিষিদ্ধ।

احْلِقُوا كُلَّهٗ أَوِ اتْرُكُوا كُلَّهٗ তার পুরো কামাও বা পুরোই ছেড়ে দাও। অর্থাৎ মাথার পুরো চুল কামিয়ে নাও অথবা পুরো চুল ছেড়ে দাও। কিছু কামাবে আর কিছু রাখবে এমনটি করবে না। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ হাদীসের এ অংশে ইঙ্গিত হলো হজ্জ এবং ‘উমরাহ্ ছাড়াও মাথার চুল হলক তথা সম্পূর্ণ কামানো বৈধ। কামানো ও রেখে দেয়ার মাঝে ব্যক্তি ইচ্ছাধীন। তবে উত্তম হলো, হজ্জ ও ‘উমরাহ্ ছাড়া না কামানো বেলায়। কেননা না কামানোই ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমল ও তার সাহাবীদের ‘আমল। আর ‘আলী (রাঃ) কামানোর বেলায় একাই তাদের থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

ইমাম শাওকানী ‘নায়লুল আওত্বার’-এ লিখেন, হাদীসে তাদের মতের প্রত্যাখ্যান রয়েছে যারা বলেনঃ মাথার চুল কামিয়ে নেয়া মাকরূহ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১১৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৮-[১০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণী নারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেনঃ তাদেরকে তোমাদের ঘর হতে বের করে দাও। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: لعن الله الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَقَالَ: «أخرجوهم من بُيُوتكُمْ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس قال لعن الله المخنثين من الرجال والمترجلات من النساء وقال اخرجوهم من بيوتكم رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ (الْمُخَنَّثِينَ) শব্দটির ‘নূন’ হরফে তাশদীদ সহকারে যবর বা যের দিয়ে দু’ভাবেই উচ্চারণ করা যায়। তবে যবর দিয়ে পড়া অধিক প্রসিদ্ধ। এর অর্থ হলো নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী। এই সাদৃশ্য অবলম্বন অবয়ব, পোশাক, খিযাব, আওয়াজ, আকৃতি, কথা বলা এবং যে কোন চাল-চলনে হতে পারে। এ কর্মটি নিষেধ। কেননা এতে আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটানো হয়।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মুখান্নাস অর্থাৎ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী ব্যক্তি দুই প্রকারের। এক : যে সৃষ্টিগতভাবে কিছুটা নারী প্রকৃতির। সে কৃত্রিমভাবে নারীর সাদৃশ্যতা অবলম্বন করেনি। এতে কোন দোষ, গোনাহ নেই। কেননা সে অপারগ। দুই : যে কৃত্রিমভাবে চাল-চলন, কথা-বার্তা এবং অবয়ব ইত্যাদিতে নারীর আকৃতি অবলম্বন করে, সে ব্যক্তির এ কাজ দোষণীয় যার অভিশাপ হাদীসে এসেছে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৮৫)

(الْمُتَرَجِّلَاتِ) ‘জিম’ অক্ষরে তাশদীদ ও যের দিয়ে উচ্চারিত। অর্থাৎ পুরুষের সাথে চাল চলন, আকার আকৃতি, হাঁটা চলা এবং উচ্চ আওয়াজ ইত্যাদিতে সাদৃশ্য অবলম্বনকারিণী নারী। এ বৈশিষ্ট্যের নারী পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করা পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনের মতই দোষণীয়। তবে জ্ঞান ও বিচক্ষণতায় নারী পুরুষের সাদৃশ্য হওয়া দোষণীয় নয়। বরং তা প্রশংসিত। যেমন বর্ণনায় রয়েছে- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পুরুষের মতো রায় তথা অভিমতের অধিকারিণী ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৮৫)

(أخرجوهم من بيوتكم) তাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও। অর্থাৎ তোমাদের এলাকা ও শহর থেকে বের করে দাও। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

সহীহুল বুখারীর বর্ণনায় আরো রয়েছে-

قال فأخرج النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فلانا وأخرج عمر فلانا অর্থ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুককে বের করে দেন এবং ‘উমার  অমুককে বের করে দেন। ‘আনজাশা’ নামক এক কালো দাস নারীদের বেশভূষা অবলম্বনের কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এলাকা থেকে বের করে দেন বলে বর্ণনায় রয়েছে। ‘উমার (রাঃ) যাকে বের করেন তার নাম কোন বর্ণনায় আসেনি। তবে কোন কোন বর্ণনায় فلانا এর স্থলে فلانة শব্দ এসেছে। অর্থাৎ তিনি কোন এক নারীকে পুরুষের বেশ অবলম্বনের কারণে বের করেছিলেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৮৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৯-[১১] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর লা’নাত সে পুরুষদের ওপর যারা নারী সাদৃশ্য ধারণ করে এবং সে সকল নারীদের ওপর যারা পুরুষ সাদৃশ্য ধারণ করে। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ والمتشبِّهات من النِّسَاء بِالرِّجَالِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنه قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لعن الله المتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ বর্ণিত হাদীস ও উপরোক্ত হাদীসের মর্ম একই। উভয় হাদীসে কেবল শব্দের ভিন্নতার মাঝে কম-বেশি হয়েছে। হাদীসটি উপরোক্ত হাদীসের অর্থকে পরিষ্কার করে দিচ্ছে।

‘আল্লামা ইবনু হাজার বলেনঃ নিষিদ্ধ সাদৃশ্য হলো কথাবার্তা ও চাল-চলনে। তবে পোশাকের ডিজাইন বিভিন্ন দেশের রীতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোন কোন সম্প্রদায়ে পুরুষ ও মহিলার পোশাকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহিলারা হিজাব ও পর্দার মাধ্যমে পুরুষ থেকে আলাদা হবে।

আমার সাদৃশ্যতার এই তিরস্কার ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে ইচ্ছা করে এমনটি করে। তবে যে পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই চাল চলনে নারী সাদৃশ্য বা যে নারী পুরুষ সাদৃশ্য তাকে ধীরে ধীরে তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়া যাবে। যদি সে তা ছাড়তে চেষ্টা না করে ঐ রীতির উপরেই থাকাকেই আঁকড়ে ধরে তবে সেও এই তিরস্কারের অন্তর্ভুক্ত হবে, বিশেষ করে সে যদি এতে সন্তুষ্ট থাকে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৮৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩০-[১২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে নারীর ওপর আল্লাহর লা’নাত যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করে কিংবা নিজ মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করায় এবং যে অন্যের গায়ে উল্কি করে অথবা নিজের গায়ে উল্কি করায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ والواشمة والمستوشمة»

وعن ابن عمر ان النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الواصلة والمستوصلة والواشمة والمستوشمة

ব্যাখ্যাঃ (الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ) হলো ঐ নারী যে মহিলার চুলকে অন্যের চুলের সাথে সংযোগ করে দেয়। আর (المستوشمة) হচ্ছে যে নারী তার চুলকে অন্যের চুলের সাথে সংযোগ করে দেয়াকে কামনা করে। মোটকথা, যে মহিলা চুল সংযোগ করে এবং যে সংযোগ করে দেয়ার কাজে লিপ্ত থাকে উভয়ের ওপরই অভিশাপ।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসগুলো এ কথার ওপর স্পষ্ট যে, চুলের সংযোগ হারাম এবং যে কোন ধরনের চুলের সংযোগকারিণী ও সংযোগকামিনী উভয়ের ওপর অভিশাপ রয়েছে। এটাই বাহ্যিক নির্বাচিত মত। তবে আমাদের ইমামগণ এর বিস্তর ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, যদি মহিলা তার চুলের সাথে অন্য মানুষের চুল মিলায় তবে তা হারাম হওয়ার বেলায় কোন দ্বিমত নেই। চাই কোন নারীর চুল সংযুক্ত করুক বা কোন পুরুষের চুল, স্বামী বা তার মাহরাম ব্যক্তির চুল বা অন্য কারো চুল- এতে কোন দ্বিমত নেই। কেননা এগুলো হারাম হওয়ার হাদীসগুলো শর্তহীন ও ব্যাপক। এছাড়া মানুষের সম্মানের কারণে তার চুল বা যে কোন অঙ্গ দ্বারা উপকৃত হওয়া হারাম। বরং তার চোখ, নখ ও সমস্ত অঙ্গ দাফন করে দেয়া হবে। এরপর ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)-এর বরাতে বলেনঃ ‘উলামাগণ এ মাসআলায় মতানৈক্য করেন। ইমাম মালিক, ইমাম ত্ববারী এবং অনেকে বা অধিকাংশরা বলেনঃ যে কোন বস্তু দিয়ে চুলের সংযোগ নিষিদ্ধ। চাই মহিলা তা চুল দ্বারা সংযোগ করুক বা পশম দ্বারা বা কোন কাপড়ের টুকরো দ্বারা। তারা ইমাম মুসলিম কর্তৃক জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাকে তার মাথায় কোন কিছু সংযুক্ত করার কারণে ধমকি দেন। লায়স ইবনু সা‘দ বলেন, নিষেধ কেবল চুলের সাথে নির্ধারিত। পশম বা কাপড়ের টুকরোর সাথে নয়।

কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তবে চুলে রেশমের রঙিন সুঁতা বাঁধা এবং এ জাতীয় যা চুলের সাদৃশ্য নয় তা নিষেধ নয়। কেননা এটা সংযোগ নয় এবং তা সংযোগের উদ্দেশ্যেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটা কেবল সৌন্দর্য ও রূপচর্চার জন্য।

কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বর্ণিত হাদীসে চুলের সংযোগকে কাবীরাহ্ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কর্মে লিপ্ত ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। হাদীসে এও রয়েছে যে, হারাম কাজে সহযোগিতাকারী হারামে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে পাপে শরীক, যেমন ‘ইবাদাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তি ‘ইবাদাতের সাওয়াবে শরীক।

(والواشمة والمستوشمة) الواشمة আরবী শব্দ وَشْمٌ থেকে ব্যুৎপত্তি। যার অর্থ : উল্কি আঁকা। অতএব الواشمة হলো ঐ মহিলা যে কাউকে উল্কি এঁকে দেয়, আর والمستوشمة ঐ মহিলা উল্কি আঁকার আবেদন করে তথা উল্কি আঁকিয়ে নেয়। চুলের সংযোগের মতোই উভয়ের ওপর আল্লাহর অভিশাপ রয়েছে। তাই এ কর্মও হারাম।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা হারাম যে করে তার জন্য, যে করিয়ে নেয় তার জন্য এবং যে এটার আবেদন করে তার জন্য। অনেক সময় ছোট শিশুর বেলায় এমনটি করা হয়। তার ক্ষেত্রে যে করিয়ে দিয়েছে সে গুনাহগার হবে। ছোট বাচ্চা শারী‘আতের দায়বদ্ধতা মুক্ত হওয়ায় গুনাহগার হবে না। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, ২১২৪/১১৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩১-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা লা’নাত করেন এমন সব নারীর ওপর যারা অপরের অঙ্গে উল্কি করে এবং নিজের অঙ্গেও করায়, যারা (ভ্রু বা কপাল) চুল উপড়িয়ে ফেলে এবং তারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও তার ফাঁক বড় করে আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলিয়ে দেয়। এ সময় জনৈকা মহিলা ইবনু মাস্’ঊদ -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি শুনতে পেলাম, আপনি নাকি এমন এমন নারীদের ওপর লা’নাত করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি কেন তাদের ওপর লা’নাত করব না, যাদের ওপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন আর আল্লাহর কিতাবেও রয়েছে। মহিলাটি বলল, আমি তো সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু তার মধ্যে কোথাও তো তা পেলাম না, যা আপনি বলছেন। তখন ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) বললেনঃ যদি তুমি কুরআন পড়তে, তাহলে তুমি অবশ্যই (মনোযোগ দিয়ে) তা পেতে। আচ্ছা তুমি কি তা এ আয়াত পড়নি? وَمَآ اٰتٰكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا.। অর্থাৎ- ’’রসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেন তা তোমরা মেনে নাও, আর যা হতে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাকো।’’ এটা শুনে মহিলাটি বলল : হ্যাঁ, এটা তো পড়েছি। তখন ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর রসূল এ সমস্ত কাজ হতেও নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ فَجَاءَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ: إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكَ لَعَنْتَ كَيْتَ وَكَيْتَ فَقَالَ: مَا لِي لَا أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ هُوَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَقَالَتْ: لَقَدْ قَرَأْتُ مَا بَيْنَ اللَّوْحَيْنِ فَمَا وجدت فِيهِ مَا نقُول قَالَ: لَئِنْ كُنْتِ قَرَأْتِيهِ لَقَدْ وَجَدْتِيهِ أَمَا قَرَأت: (مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا)
؟ قَالَت: بلَى قَالَ: فإِنه قد نهى عَنهُ

وعن عبد الله بن مسعود قال لعن الله الواشمات والمستوشمات والمتنمصات والمتفلجات للحسن المغيرات خلق الله فجاءته امراة فقالت انه بلغني انك لعنت كيت وكيت فقال ما لي لا العن من لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم ومن هو في كتاب الله فقالت لقد قرات ما بين اللوحين فما وجدت فيه ما نقول قال لىن كنت قراتيه لقد وجدتيه اما قرات ما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا قالت بلى قال فانه قد نهى عنه

ব্যাখ্যাঃ (الْمُتَنَمِّصَاتِ) এর অর্থ হলো ঐ সব মহিলা যারা চেহারার চুল উপড়ানোর আবেদন করে বা উপড়িয়ে নেয়। এখানে উদ্দেশ্য হলো ভ্রু প্লাক করা। ভ্রু প্লাক তথা ভ্রুর কিছু চুল উপড়িয়ে ভ্রুকে চিকন করিয়ে নেয়া এবং করে দেয়া উভয়টি হারাম। এর উপরে আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ। হ্যাঁ তবে যদি মহিলার দাড়ি বা গোঁফ গজিয়ে যায় তবে তা উপড়িয়ে নেয়া হারাম নয়।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বরং এটা আমাদের মাযহাবে মুস্তাহাব। চেহারার চুল উপড়ানোর নিষেধাজ্ঞা ভ্রু ও চেহারার আশপাশের পশমের সাথে নির্দিষ্ট।

(الْمُتَفَلِّجَاتِ) অর্থ হলো দাঁতের মাঝে দূরত্ব বা ফাঁক সৃষ্টিকামী নারী। অর্থাৎ রেত বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে দাঁতকে ঘষে যে নারী দুই দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে দাঁতকে ভিন্ন আকৃতিতে নিয়ে আসে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। সাধারণত বৃদ্ধা বা বৃদ্ধার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছে যাওয়া নারীরা এমনটি করে থাকে, দাঁতের সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যমে নিজের শৈশব প্রকাশের জন্য। কেননা দাঁতের মাঝে এই সূক্ষ্ম ফাঁক ছোট মেয়েদের হয়ে থাকে। অতএব মহিলা যখন বৃদ্ধা হয় এবং তার বয়স বৃদ্ধি হয় এবং নিঃসঙ্গতা অনুভব করে তখন রেত দিয়ে ঘষে; যাতে দাঁত চিকন ও দেখতে সুন্দর হয় এবং তাকে কমবয়সী ধারণা করা হয়। এসব হাদীসের ভিত্তিতে এমন কর্ম হারাম, যে করবে এবং যে করিয়ে নিবে উভয়ের জন্য। কেননা এতে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির পরিবর্তন রয়েছে। এছাড়া এতে ধোঁকা ও প্রতারণা রয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, ৪৮৮৬)

(وَمَنْ هُوَ فِي كِتَابِ اللهِ) এবং যার ওপর লা‘নাত আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনে রয়েছে। অর্থাৎ কুরআনের অভ্যন্তরে এদের লা‘নাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। বাহ্যত প্রকাশ্যভাবে কুরআনের কোথায়ও এই সিফাতের নারীদের লা‘নাতের কথা উল্লেখ না থাকায় মহিলার কাছে সেটি অস্পষ্ট ছিল। যার দরুন সে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করেছি, আমি তো কিতাবুল্লাহর দুই কভারের মাঝে যা আছে তা পড়েছি, অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি, কোথায়ও এদেরকে লা‘নাতের কথা পাইনি। তখন ইবনু মাস্‘ঊদ বলেন, لئن كنت قرأتيه لقد وجدتيه তুমি যদি চিন্তা ও গভীর মনোযোগসহ কুরআন পড়তে তবে অবশ্যই তা পেতে। তারপর তিনি কুরআনের যে আয়াত থেকে এগুলোর নিষেধাজ্ঞা বুঝা যায় তা পাঠ করলেন।

(فَإِنَّهٗ قَدْ نَهٰى عَنهُ) তিনি তথা রসূল তো এ থেকে নিষেধ করেছেন। মর্ম হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকতে বান্দা যখন নির্দেশিত, আবার তিনি এই সকল বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীসে, অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার নিষেধাজ্ঞা যেন কুরআনেই রয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে ইঙ্গিত হলো, এসব কাজে জড়িত নারীর ওপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিশাপ আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপের ন্যায়। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩২-[১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বদনযর লাগা সত্য এবং তিনি অঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَيْنُ حَقٌّ» وَنَهَى عَن الوشم. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العين حق ونهى عن الوشم رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ الْعَيْنُ حَقٌّ চোখ লাগা সত্য। অর্থাৎ অনেক সময় কেউ কোন বস্তু বা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে তার সৌন্দর্য ইত্যাদি দেখে আশ্চর্য হয়। আশ্চর্য হয়ে তাকানোর কারণে তার চোখের প্রভাব সেই ব্যক্তি বা বস্তুর উপর পড়ে। অনেক মানুষের এই তাকানো সেই ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষতি সাধন করে। চোখের প্রভাবে এই ক্ষতি বা বদনযরের ব্যাপারটি সত্য এ কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে আমাদেরকে জানাচ্ছেন ।

সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম হাদীসের বাহ্যিক অর্থই গ্রহণ করেছেন এবং তারা বলেছেনঃ চোখের প্রভাব সত্য। তবে বিষয়টি বাহ্যত যুক্তি বিরোধ হওয়ার কারণে কেউ কেউ এটাকে অস্বীকার করেন। তবে শারী‘আতে প্রমাণিত বিষয় কেবল যুক্তিবিরোধ হওয়ার কারণে তা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। শারী‘আতে কোনকিছু ঘটার খবর দিলে তা বিশ্বাস করা অপরিহার্য এবং তা মিথ্যা আখ্যায়িত করা জায়িয নয়। শারী‘আহ্ কর্তৃক প্রমাণিত এ বিষয়টি অস্বীকার এবং মিথ্যা আখ্যায়িত করা এবং শারী‘আহ্ আখিরাতের ব্যাপারে যে সংবাদ দিয়েছে তা অস্বীকার করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই?

তবে প্রকৃতিবাদী অনেকেই হাদীসে বর্ণিত চোখের প্রভাবের বিষয়টি প্রমাণ করেন। তারা বলেনঃ দৃষ্টিদানকারীর চোখে একটি বিষাক্ত শক্তি (এসিড) রয়েছে যা তাকানো ব্যক্তির চোখ থেকে উৎসারিত হয় এবং সেটি গিয়ে যার দিকে তাকায় তার ক্ষতি সাধন করে। তারা বলেন, এটি অসম্ভব কিছু নয়। যেমন সাপ বিচ্ছুর চোখ থেকে উৎসারিত বিষাক্ত শক্তি দংশিত ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে, যার ফলে সে মারা যায়। যদিও তা আমাদের অনুভূতির বাহিরে। এভাবেই মানুষের চোখের প্রভাব প্রকাশ পায়।

আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মত হলো, নিশ্চয় বদনযরকারী ব্যক্তি তাকানোর সময় তার চোখ আল্লাহ তা‘আলারই হুকুমে অন্য কারো ক্ষতি করে বা তাকে ধ্বংস করে। এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের সময় আল্লাহ তা‘আলা এই ক্ষতি সৃষ্টি করে দেন। যে কোন রূপে আল্লাহ তা‘আলা তা পৌঁছাতে পারেন। এই হলো এ বিষয়ের ‘আক্বীদাগত দিক। যার সারসংক্ষেপ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর আলোচনা থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর ইমাম নাবাবী বদনযরের মাসায়িলগত দিক আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ সংক্ষেপ বদনযরের ফিকহী দিক হলো,

যদি কেউ বদনযরে আক্রান্ত হয় তবে এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শারী‘আত উযূর নির্দেশ দিয়েছে। যেমন সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর হাদীসে রয়েছে, তিনি যখন বদনযরে আক্রান্ত হন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদনযরকারীকে উযূর নির্দেশ দেন। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘মুওয়াত্ত্বা’য় এ হাদীস বর্ণনা করেন। ‘উলামাদের কাছে বদনযরকারীর উযূর নিয়ম হলো, একটি পাত্রে পানি নিয়ে আসবে, পাত্রটি জমিনে রাখা যাবে না, এই পাত্র থেকে এক আজল পানি নিবে এবং কুলি করবে, তার কুলির পানি পাত্রে নিক্ষেপ করবে, এরপর পাত্র থেকে পানি নিয়ে তার চেহারা ধৌত করবে, এরপর বাম হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের আঙ্গুলসহ তালু ধৌত করবে, এরপর ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাতের কনুই ধৌত করবে। কনুই ও তালুর মধ্যবর্তী স্থান ধৌত করবে না। এরপর ডান পা এরপর বাম পা হাতের নিয়মে ধৌত করবে। সবই পাত্রের ভিতরে হবে। এরপর লুঙ্গির ভিতরের কোমরের ডান পার্শব ধৌত করবে। কেউ কেউ মনে করেন, লুঙ্গির ভিতর বলে লজ্জাস্থানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে জামহূরের মতো যা আমরা উল্লেখ করেছি। এটা পুরা হয়ে গেলে এই পানি আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার উপর পিছন থেকে ঢালবে।

এ কাজের মর্মের কারণ বর্ণনা বা দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব নয়। আর মানুষের বুদ্ধির এ সামর্থ্যও নেই যে, শারী‘আতের সব রহস্য সম্পর্কে সে অবগত হতে পারে। অতএব এর মর্ম কেবল যুক্তি বহির্ভূত বলে প্রত্যাহার করা যাবে না। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৮৭)

(وَنَهٰى عَن الوشم) অর্থাৎ আর তিনি الوشم তথা উল্কি আঁকা থেকে নিষেধ করেন। ইতোপূর্বে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই পুনারাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩৩-[১৫] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চুল বাঁধা অবস্থায় দেখেছি। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُلَبِّدًا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر قال لقد رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم ملبدا رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ (مُلَبِّدًا) ‘ب’ হরফে তাশদীদসহ যের ও যবর উভয়ভাবে উচ্চারিত। আরবী শব্দ تَلْبِيْدٌ থেকে উদ্গত। যার অর্থ হলো, আঠালো কোন বস্তু চুলে লাগিয়ে তাতে জট বাঁধানো। অর্থাৎ চুলে আঠালো বস্তুর প্রলেপ দেয়া। এতে মাথা উঁকুন থেকে রক্ষা পায়। কেউ কেউ বলেন, সফরের সময় আঠালো বস্তু দ্বারা মাথার চুলকে কেশরের মতো করে নেয়া। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীস থেকে ইহরামের অবস্থার বাহিরে চুলে আঠালো বস্তু দিয়ে জট বাঁধানো বা চুল এটে সেঁটে রাখার বৈধতার প্রমাণ মিলে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩৪-[১৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদেরকে যা’ফরানী রং ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَتَزَعْفَرَ الرَّجُلُ

وعن انس قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يتزعفر الرجل

ব্যাখ্যাঃ হাদীসের মর্ম হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের জন্য যা‘ফরান ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। এ নিষেধাজ্ঞার ভিতর শরীরে ব্যবহার বা কাপড়ে ব্যবহার উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটা মেয়েদের অভ্যাস। তবে রঙের পরিমাণ অল্প হলে তার অনুমতি রয়েছে। কেননা কোন কোন সাহাবীকে এই রঙে দেখলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বারণ করেননি।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’ কিতাবের বরাতে বলেনঃ আবূ ‘ঈসা বলেনঃ পুরুষের জন্য জাফরান ব্যবহার নিষেধের মর্ম হলো যা‘ফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করা। আর যা‘ফরান নিষেধ হলো বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা। কিন্তু যদি তা অল্প হয়, তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহিত সাহাবীর ক্ষেত্রে এর ছাড় দিয়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আওফ-এর পরনে যা‘ফরান লাগানো পোশাক দেখে কোন আপত্তি করেননি। এরপর তিনি বলেন, আমি বলি, হয়ত বৈবাহিক অনুষ্ঠানাদির কারণে তার কাপড়ে অনিচ্ছায় কিছু যা‘ফরান রঙ লেগে গিয়েছিল। তাই তা সেই নিষেধের আওতাভুক্ত হয়নি যাতে কম বেশি সবই অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই নিষেধটিও ব্যাপক যেখানে বলা হয়েছে إِنَّ طِيبَ الرَّجُلِ مَا وُجِدَ رِيحُهٗ وَلَمْ يَظْهَرْ لَوْنُهٗ অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় পুরুষের সুগন্ধি হচ্ছে, যার সুগন্ধি প্রকাশ পায় কিন্তু রঙ প্রকাশ পাওয়া যায় না’’। এছাড়া ইবনু শিহাব-এর যে বর্ণনা রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবা যা‘ফরান মিশ্রিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, এতে তারা কোন সমস্যা দেখতেন না।’’ এরও উদ্দেশ্য কিছু কিছু সহাবা নিতে হবে। অর্থাৎ যাদের কাছে নিষেধাজ্ঞার খবর পৌঁছেনি তারা তা ব্যবহার করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মোটকথা, বর্ণিত হাদীসটিতে আমরা পুরুষের জন্য যা‘ফরান রঙ ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা দেখতে পাচ্ছি। আবার কোন কোন ঘটনা থেকে এর কিছুটা অনুমোদন রয়েছে বলে বুঝা যায়। হাদীসের উভয় ধারার সামঞ্জস্য বিধানে কেউ কেউ বলেন, নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলো রঙ বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে। আর যেসব হাদীস থেকে অনুমোদন রয়েছে বলে অনুমিত হয় এ সকল হাদীস হচ্ছে, অল্প হওয়ার ক্ষেত্রে। এ মতের সার হলো, যা‘ফরান রং পরিমাণে বেশি ব্যবহার জায়িয নেই। তবে অল্প বা অতি সামান্য হলে কোন সমস্যা নেই।

তবে নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোতে কমবেশির সাথে পার্থক্য না থাকায় অনেক ‘আলিমের মত হলো, যা‘ফরান কম হোক বেশি হোক তা সাধারণভাবে নিষিদ্ধ। যেসব ঘটনা থেকে এর অনুমোদন বুঝা যায় তা হয় অনিচ্ছায় ছিল অথবা ব্যবহারটি নিষেধ না জানার কারণে ছিল। তাই এসব ঘটনা দিয়ে স্পষ্ট সাধারণভাবে নিষেধের হাদীসের মধ্যে পার্থক্য করার কোন যুক্তি নেই। তাই যা‘ফরান অস্পষ্ট কাপড়ে হোক, শরীর হোক পুরুষের জন্য তা ব্যবহার হারাম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩৫-[১৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বোত্তম সুগন্ধি যা আমি পেতাম, তা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গায়ে লাগাতাম। এমনকি আমি তাঁর মাথায় ও দাড়িতে সুগন্ধির চমক দেখতে পেতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كُنْتُ أُطَيِّبُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَطْيَبِ مَا نَجِدُ حَتَّى أَجِدَ وَبِيصَ الطِّيبِ فِي رَأْسِهِ ولحيته

وعن عاىشة قالت كنت اطيب النبي صلى الله عليه وسلم باطيب ما نجد حتى اجد وبيص الطيب في راسه ولحيته

ব্যাখ্যাঃ (وَبِيصَ) শব্দের অর্থ চমক, জ্যোতি, উজ্জ্বলতা। অর্থাৎ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিজের নাগালের ভিতরের সবচেয়ে ভালো ও উন্নতমানের সুগন্ধি লাগিয়ে দিতেন। এমনকি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা ও দাড়িতে সেই সুগন্ধির দ্যুতি ফুটে উঠত। অর্থাৎ মাথার চুল ও দাড়ি সুগন্ধির কারণে ঝলমল করত।

এখানে একটি প্রশ্ন হয় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের আলোকে পুরুষের সুগন্ধি এমন হওয়া চাই, যার রঙ নেই। অতএব বর্ণিত হাদীসে বাহ্যত সেই হাদীসের বিরোধ। এর জবাবে ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ হাদীসের মর্ম হলো সুগন্ধি এমন হতো যার রং লাল ও হলুদের মতো সৌন্দর্য ও শোভা প্রকাশ করত। রং দেখা যেত এমন কথা বলা হয়নি। অতএব উভয়ের হাদীসের মাঝে কোন বিরোধ সৃষ্টি হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখ্য যে, রং প্রকাশ পাওয়া ও সুগন্ধির কারণে ঝলমলে বা জ্যোতি প্রকাশ পাওয়া এক নয়। যেমন কেউ সুগন্ধি তেল ব্যবহার করলে আমরা কোন রং বা কালার দেখতে পাই না। তবে তার কারণে চুলে বা দাড়িতে এর ঝলমলে ভাব ফুটে উঠে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩৬-[১৮] নাফি’ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ইবনু ’উমার (রাঃ) (ঘরের মধ্যে) ধুনচি ব্যবহার করতেন, তখন খোশবুদার কাঠের (চন্দন, আগর ইত্যাদি) অবিমিশ্র ধুনি জ্বালাতেন আর কখনো তার সাথে কর্পূর ঢেলে দিতেন এবং বলতেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে ধুনি ব্যবহার করতেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ نَافِعٍ قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا اسْتَجْمَرَ اسْتَجْمَرَ بِأَلُوَّةٍ غَيْرِ مُطَرَّاةٍ وَبِكَافُورٍ يَطْرَحُهُ مَعَ الْأَلُوَّةِ ثُمَّ قَالَ: هَكَذَا كَانَ يَسْتَجْمِرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم

وعن نافع قال كان ابن عمر اذا استجمر استجمر بالوة غير مطراة وبكافور يطرحه مع الالوة ثم قال هكذا كان يستجمر رسول الله صلى الله عليه وسلم رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (اسْتَجْمَرَ) ধুনচি দ্বারা ধুন দিয়ে সুগন্ধি ব্যবহারকে ‘ইসতিজমার’ বলা হয়। আর ألوة হচ্ছে সুগন্ধি কাঠ যা জ্বালিয়ে ধুন দেয়া হয়। সুগন্ধি কাঠ জ্বালিয়ে তার ধোয়ার মাধ্যমে ঘর, কাপড়, শরীর ইত্যাদি সুগন্ধময় করার নাম ‘ইসতিজমার’। হাদীসের মর্ম হলো, ইবনু ‘উমার সুগন্ধি কাঠের ধূপের মাধ্যমে যখন সুগন্ধ ব্যবহার করতেন তখন এ সুগন্ধি কাঠের সাথে অন্য কোন সুগন্ধির মিশ্রণ করতেন না বা সেই কাঠে কর্পূর ঢালতেন না।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নাত, যেমন তা মহিলাদের জন্য সুন্নাত। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো ঐ সুগন্ধি যার সুবাস ছড়ায় কিন্তু রং প্রকাশ পায় না। আর মেয়েরা যখন ঘর থেকে মসজিদ বা অন্য কোথায় যাওয়ার জন্য বের হতে চাইবে তখন তার জন্য সুবাস ছড়ায় এমন যে কোন সুগন্ধি ব্যবহার নিষিদ্ধ। আবার পুরুষের জন্য সুগন্ধি ব্যবহারের গুরুত্ব জুমু‘আহ্, ঈদ, আলোচনার মাহফিল, স্ত্রীর নিকট গমন এবং মুসলিমদের সমাবেশের সময় অধিক। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ নাফি‘ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس ) 22. Clothing
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে