পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩২-[১] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে লাল-শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্রিত করা হবে যেমন তা সাফাই করা আটার রুটির মতো। সে জমিনে কারো (ঘর বা ইমারতের) কোন চিহ্ন থাকবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ النَّقِيِّ لَيْسَ فِيهَا عَلَمٌ لأحدٍ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6521) و مسلم (28 / 2790)، (7055) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

عن سهل بن سعد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يحشر الناس يوم القيامة على ارض بيضاء عفراء كقرصة النقي ليس فيها علم لاحد متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6521 و مسلم 28 2790 7055 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (أَرْضٍ عَفْرَاءَ) খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الْعَفَرُ) হলো সাদা যা তুষারশুভ্র নয়। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الْعَفَرُ) এমন সাদা যাকে কিছুটা লাল করা হয়। এজন্য বলা হয়, (عَفَرُالْأَرْضِ) তা হচ্ছে জমিনের উপরিভাগ। ইবনু ফারিস বলেন, (عَفْرَاءَ) অর্থ নির্ভেজাল সাদা। দাউদী বলেন, (شَدِيدَةُ الْبَيَاضِ) প্রচুর সাদা। তিনি বলেন, প্রথম অর্থটি অধিক নির্ভরযোগ্য।
(كَقُرْصَةِ ا لنَّقِيِّ)  আটা যা ভেজাল ও আবর্জনামুক্ত। এটা খত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মত।
(لَيْسَ فِيهَا مَعْلَمٌ لِأَحَدٍ) অন্য বর্ণনায় (مَعْلَم) রয়েছে। (عَلَمٌ)(مَعْلَم) একই অর্থে ব্যবহার হয়। খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো চিহ্ন। (مَعْلَم) মীম ও লাম বর্ণের যবর এবং এ দুটোর মাঝে ‘আইন সাকিন। আর তা এমন জিনিস যার দ্বারা পথের নির্দেশনা লাভ করা যায়। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)। বলেন, উদ্দেশ্য হলো তাতে কোন বসবাস, বাড়িঘর বা প্রাচীন ঐতিহ্যের কোন চিহ্ন নেই। আর নেই তাতে এমন কোন প্রকারের নিদর্শন যাতে পথের দিশা পাওয়া যায়। যেমন- পাহাড় বা স্পষ্ট বড় প্রস্তরখণ্ড। আবূ মুহাম্মাদ ইবনু জামরাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন- এতে আল্লাহর মহান ক্ষমতার দলীল রয়েছে। আর এর দ্বারা কিয়ামত দিবসের আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি জানানো যায়। যাতে শ্রোতারা জাগ্রত জ্ঞানসম্পন্ন হতে পারে এবং এ বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। কারণ কোন কিছুতে পতিত হওয়ার পূর্বে তার বিশেষ বিষয়াদি সম্পর্কে জানা থাকলে অন্তরকে প্রস্তুত ও উদ্দীপ্ত করা যায়। হঠাৎভাবে আপতিত হতে হয় না। সে দিনটা হবে ন্যায়নীতি কায়িম করার দিন ও হক প্রকাশের দিন। অতএব হিকমতের দাবী হলো যে স্থানে এসব কিছু হবে সে স্থানটা গুনাহ ও যুলুমের কর্মকাণ্ডমুক্ত থাকবে। আর এতে মু'মিন বান্দাদের নিকটে আল্লাহ তা'আলা তার মর্যাদার সাথে উপযুক্ত জমিনে সমাসীন হবেন। কারণ সেখানে কর্তৃত্ব শুধুমাত্র এক আল্লাহর জন্য নিবেদিত ও নির্ধারিত, আর সে স্থান শুধুমাত্র তার জন্য হওয়াই সমীচিন। [সংক্ষেপিত] (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা. ৬৫২১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৩-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন দুনিয়ার এই জমিনটি হবে একটি রুটির মতো, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাকে হাতের মাঝে নিয়ে এমনভাবে উলট-পালট করবেন যেমন তোমাদের কেউ সফর অবস্থায় তাড়াতাড়ি করে এই হাতে সেই হাতে নিয়ে রুটি তৈরি করে এবং এই রুটি দিয়ে জান্নাতবাসীদের আপ্যায়ন করা হবে। নবী (সা.) -এর আলোচনা এ পর্যন্ত পৌছলে তখন জনৈক ইয়াহুদী এসে বলল, হে আবূল কাসিম ! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কল্যাণ দান করুন। আমি কি আপনাকে অবগত করব না যে, (তাওরাতে উল্লেখ আছে,) কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদেরকে কি বস্তু দিয়ে সর্বপ্রথম আপ্যায়ন করা হবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, বল! সে বলল, এ জমিন হবে একটি রুটি, যেরূপ নবী (সা.) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ইয়াহূদীর কথা শুনে নবী (সা.) আমাদের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসলেন যে, তাঁর চোয়ালের দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়ল। অতঃপর ইয়াহুদী বলল, আমি কি আপনাকে জানাব না যে, সে খাদ্যের তরকারি কি হবে? তা হবে বালাম ও নূন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, এটা আবার কী? সে বলল, ষাঁড় ও মাছ। সে দু’টির কলিজার উপরের অতিরিক্ত যে মাংস তা সত্তর হাজার লোকে খাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ الْأَرْضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُبْزَةً وَاحِدَةً يَتَكَفَّؤُهَا الْجَبَّارُ بِيَدِهِ كَمَا يَتَكَفَّأُ أَحَدُكُمْ خُبْزَتَهُ فِي السّفر نُزُلاً لِأَهْلِ الْجَنَّةِ» . فَأَتَى رَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ. فَقَالَ: بَارَكَ الرَّحْمَنُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ أَلَا أُخبرُك بِنُزُلِ أهل الجنةِ يومَ القيامةِ؟ قَالَ: «بَلَى» . قَالَ: تَكُونُ الْأَرْضُ خُبْزَةً وَاحِدَةً كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا ثُمَّ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُكَ بِأَدَامِهِمْ؟ بَالَامٌ وَالنُّونُ. قَالُوا: وَمَا هَذَا؟ قَالَ: ثَوْرٌ وَنُونٌ يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ ألفا. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6520) و مسلم (30 / 2792)، (7057) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تكون الارض يوم القيامة خبزة واحدة يتكفوها الجبار بيده كما يتكفا احدكم خبزته في السفر نزلا لاهل الجنة فاتى رجل من اليهود فقال بارك الرحمن عليك يا ابا القاسم الا اخبرك بنزل اهل الجنة يوم القيامة قال بلى قال تكون الارض خبزة واحدة كما قال النبي صلى الله عليه وسلم فنظر النبي صلى الله عليه وسلم الينا ثم ضحك حتى بدت نواجذه ثم قال الا اخبرك بادامهم بالام والنون قالوا وما هذا قال ثور ونون ياكل من زاىدة كبدهما سبعون الفا متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6520 و مسلم 30 2792 7057 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (خُبْزَةً) অর্থ রুটি আর তা এমন আটা যা চুলায় আগুনে জ্বালানোর পর তার গর্তে রাখা হয়। সে গর্তকে মানুষ গরম ছাই বা খাক বা মাটি বলে।
(يَتَكَفَّؤُهَا)-এর অর্থ নোয়ানো, ঝুকানো। এ থেকে ব্যবহৃর হয় (كَفَأْتُ الْإِنَاءَ) (যখন তুমি তাকে উল্টাবে)।
(خُبْزَتَهُ فِي السّفر) খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এমন রুটি যা মুসাফিরের জন্য তৈরি করা হয়। কারণ এটাকে বিছানো হয় না যেমন পাতলা রুটিকে বিছানো হয়। মূলত হাতের উপরে উলটপালট করা হয় যাতে সেটা সমান হয়।
(نُزُلاً لِأَهْلِ الْجَنَّةِ) তা হলো এমন জিনিস যা আহলে জান্নাতদের মেহমানদারী হিসেবে তৈরি করা হবে। বলা হয়, (أصلح القوم نزلهم) অর্থাৎ খাবারের পূর্বে মেহমানের জন্য তাড়াতাড়ি যা পেশ করা হয়। হাদীসের জমিনের রুটির সাদৃশ্য তার দুটি অর্থ হতে পারে (এক) সেদিন জমিনের আকৃতি বর্ণনা করা। অন্যটি হলো রুটির বর্ণনা সম্পর্কে যা জান্নাতীদের জন্য আতিথেয়তা হবে। অথবা নতুনভাবে এবং বিরাট পরিমাণের বর্ণনা সম্পর্কে।
হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: দুনিয়ার জমিন আগুনে পরিবর্তিত হওয়া হাক্বীকৃী বা আসল অর্থে ধরতে হবে এবং অবস্থান স্থলের ব্যক্তিদের খাদ্যের জন্য রুটিতে পরিবর্তিত হওয়াকে রূপক অর্থে গণ্য করতে হবে।
(بَالَامٌ) শব্দটির ব্যাপারে মতভেদ আছে। শব্দটি হাদীসের বর্ণনায় হিব্রু ভাষায় রয়ে গেছে। যে কারণে সাহাবীগণ শব্দটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। আল্লামাহ্ নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলেন, এটা হিব্রু ভাষা যার অর্থ বলদ।
(يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ ألفا) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অতিরিক্ত অংশ বলতে কলিজার সাথে যুক্ত আলাদা অংশ বুঝানো হয়েছে যা উৎকৃষ্ট। সে কারণে তা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে সত্তর হাজার জনকে। আর তারাই বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদেরকে উৎকৃষ্টমানের খাদ্য সামগ্রী দ্বারা আপ্যায়ন করা হবে। আর সত্তর হাজার সংখ্যা দ্বারা অধিক সংখ্যককে বুঝানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা, ৬৫২০-২১)।
জমিন খাদ্যে রূপান্তরিত হওয়া বিবেকবিরোধী নয়। এখন জমিনের মাটি থেকে নতুন নতুন চমৎকার সাদযুক্ত ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে। আবার আল্লাহ তা'আলা যদি জমিনকে দুধে ময়দায় রূপান্তর করেন, এটা আল্লাহর নিকটে দূরের ব্যাপার নয়। যে দলটি জমিনী রুটিকে খাবে তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, ৩৮১ পৃ.)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৪-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কিয়ামতের দিন) তিন ধরনের মানবমণ্ডলীর হাশর হবে। জান্নাতের আকাক্ষী, জাহান্নাম হতে ভীত-সন্ত্রস্ত; আর একদল হবে এক উটে (সওয়ারীতে) দু’জন কোন একটিতে তিনজন, কোন এক উটে চারজন, আবার কোন এক উটে দশজন ধারাক্রমে আরোহণ করবে। অবশিষ্ট আরেক দল তাদেরকে আগুনে একত্রিত করবে। দিনের বেলায় তারা যেখানে অবস্থান করবে, আগুনও সেখানে তাদের সাথে অবস্থান করবে। তারা রাতে যেখানে অবস্থান করবে, আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে রাত্রে অবস্থান করবে। অনুরূপভাবে ভোরে ও সন্ধ্যায় তারা যেখানে থাকবে, আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ: رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَتَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ. تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ باتو وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ يمسوا . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6522) و مسلم (59 / 2861)، (7202) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يحشر الناس على ثلاث طراىق راغبين راهبين واثنان على بعير وثلاثة على بعير واربعة على بعير وعشرة على بعير وتحشر بقيتهم النار تقيل معهم حيث قالوا وتبيت معهم حيث باتو وتصبح معهم حيث اصبحوا وتمسي معهم حيث يمسوا متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6522 و مسلم 59 2861 7202 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ) মানুষকে তিন স্তরে জমায়েত করা হবে। (رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ) জান্নাতের আকাক্ষী এবং জাহান্নাম থেকে ভীত, এরা প্রথম উপায়ে আসবে।
(وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ) সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় সবগুলোর পূর্বে (واو) রয়েছে। তবে বুখারীর বর্ণনায় শুধু প্রথমে (واو), আছে। দু' বর্ণনায় এরা দ্বিতীয় উপায়ে জমায়েত হবে।
(تَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ) সহীহ মুসলিম-এর অপর বর্ণনাতে কিয়ামতের পূর্বের ঘটিত নিদর্শনাদির উল্লেখ রয়েছে। যেমন পশ্চিমদিকে সূর্যোদয় হওয়া। এর শেষে আছে এগুলোর শেষে বের হবে আগুন যা এডেনের গর্ত থেকে বের হবে এবং মানুষকে খেদিয়ে প্রস্থান করাবে। তাদের সাথে আগুন অবিচ্ছিন্নভাবে থাকবে। এরা তৃতীয় উপায়ে জমায়েত হবে। খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এ হাশর কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে হবে। মানুষদেরকে জীবিত অবস্থায় শামের দিকে জমা করা হবে। এদের ব্যাপার ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে তারা খালি পায়ে বিবস্ত্র হয়ে পায়ে হেটে আসবে।
ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এই হাশর তথা জমায়েতটা হবে দুনিয়াতে কিয়ামতের পূর্বে। এটা হচ্ছে কিয়ামতের শেষ নিদর্শন, যা আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়। কারণ তাতে সকাল, সন্ধ্যা, রাত্রি যাপন ও কায়লূলাহ বা বিশ্রামের বিষয়ে উল্লেখ হয়েছে যা আখিরাতে থাকে না। আবার অন্য হাদীসে রয়েছে, যতক্ষণ হিজায থেকে আগুন বের না হবে ততক্ষণ কিয়ামত হবে না। মুসলিম ব্যতীত অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন তোমরা এ আগুনের কথা শুনবে তখন তোমরা শামের উদ্দেশে বের হও এ যেন তিনি তাদেরকে কষ্ট দেয়ার পূর্বে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।

হুলায়মী ও গাযালী (রহিমাহুয়াল্লাহ) উল্লেখ করেন যে, এটা আখিরাতের হাশর। হুলায়মী বলেন, তিন ধরনের মানুষকে তিন উপায়ে আখিরাতে জমা করা হবে। প্রথম শ্রেণি হলো (أبرار) তথা নেককারগণ যারা আল্লাহর সাওয়াবের প্রত্যাশী বা রাগিবীন এবং ভয় ও আশার মধ্যে অবস্থানকারী বা রাহিবীন।
২য় শ্রেণি- মিশ্রিত ব্যক্তি যারা উটের উপরে আসবে। আর ৩য় শ্রেণি হলো কাফির, যাদেরকে আগুনে একত্রিত করবে। তাদের দলীল নাসায়ীতে রয়েছে, (يُحْشَرُالنَّاسُ يَوْمَ الْقِيَاماَةِ)
সিনদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অধিকাংশ বিদ্বানের মত হলো, এটা দুনিয়ার হাশর এবং কিয়ামতের সর্বশেষ নিদর্শন। এটাই উপযুক্ত মত, এতে কায়লূলাহ্ বা আরাম নেয়া অথবা অনুরূপ বিষয়ের উল্লেখ হয়েছে।
ইসমাঈলী আলোচিত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ও ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নগ্ন, খালি পা ও পব্ৰজের হাদীসের মাঝে সমন্বয় করেছেন এভাবে যে, হাশর থেকে ধর্তব্য হলো বিক্ষিপ্ত মানুষকে একত্রিত করা। যেটা মাখলুককে কবর থেকে খালি পায়ে বিবস্ত্র অবস্থায় বের করা, অতঃপর হাঁকিয়ে হিসাবের জন্য একত্রিত করা হবে। এ সময় মুত্তাকীদেরকে উটের উপর আরোহণ করে জমায়েত করা হবে। আবার অন্য কেউ এভাবে দুই বিপরীত হাদীসকে একত্রিত করেছেন যে, মানুষদের কবর থেকে উঠার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ইবনু আব্বাস-এর হাদীসে, অতঃপর সেখান থেকে অবস্থানস্থলে যাওয়ার বিভিন্ন অবস্থা বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর হাদীসে।
এ মতটিকে আরো শক্তিশালী করেছে আহমাদ, নাসায়ী ও বায়হাকীতে বর্ণিত আবূ যার (রাঃ)-এর হাদীস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন যে, মানুষেরা কিয়ামতের দিন তিন দলে একত্রিত হবে- এক) কাপড় পরিহিত, আগ্রহী আরোহী দল। দুই) পদব্রজে চলা দল। তিন) এমন দল যাদেরকে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) মুখের ভরে টেনে আনবেন। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতকে সঠিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা, ৬৫২২; নাসায়ী ২য় খণ্ড, হা. ২০৮৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৫-[৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: (হে লোক সকল!) কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তারপর তিনি (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- (کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُهٗ ؕ وَعۡدًا عَلَیۡنَا ؕ اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ) “আমি তোমাদেরকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনব যেমন প্রথমবার তৈরি করেছিলাম, এটা আমার প্রতিশ্রুতি, যা আমি অবশ্যই পূরণ করব"- (সূরাহ আল আম্বিয়া ২১: ১০৪)। [অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন,] সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরিধান করানো হবে, তিনি হবেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, আমি দেখব যে, আমার উম্মতের কিছুসংখ্যক লোককে গ্রেফতার করে বামদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমি বলব, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক। (কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?) তখন আল্লাহ বলবেন, যখন থেকে আপনি তাদেরকে রেখে পৃথক হয়ে চলে এসেছেন, তখন হতেই তারা দীনকে পরিত্যাগ করে উল্টা পথে চলেছিল। তিনি (সা.) বলেন, তখন আল্লাহর নেক বান্দা ’ঈসা আলায়হিস সালাম যেমন বলেছিলেন অনুরূপ বলব, ’আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিনই আমি তাদের অবস্থা অবহিত ছিলাম..... আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী’ পর্যন্ত। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» ثُمَّ قَرَأَ: (كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فاعلين) وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ وَإِنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِي يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُولُ: أُصَيْحَابِي أُصَيْحَابِي فَيَقُولُ: إِنَّهُمْ لَنْ يَزَالُوا مرتدين على أَعْقَابهم مذْ فَارَقْتهمْ. فَأَقُول كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ: (وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دمت فيهم) إِلى قَوْله (الْعَزِيز الْحَكِيم) مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3349) و مسلم (58 / 2860)، (7201) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال انكم محشورون حفاة عراة غرلا ثم قرا كما بدانا اول خلق نعيده وعدا علينا انا كنا فاعلين واول من يكسى يوم القيامة ابراهيم وان ناسا من اصحابي يوخذ بهم ذات الشمال فاقول اصيحابي اصيحابي فيقول انهم لن يزالوا مرتدين على اعقابهم مذ فارقتهم فاقول كما قال العبد الصالح وكنت عليهم شهيدا ما دمت فيهم الى قوله العزيز الحكيم متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3349 و مسلم 58 2860 7201 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (الْغُرْلُ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا) এর অর্থ (غَيْرُمَخْتُونِينَ) (খতনাহীন)। (قُلْفَةٌ) অর্থাৎ এমন চামড়াকে বলা হয় যাকে খতনা দেয়াতে কেটে ফেলতে হয়। এটা কাটাবিহীন উঠানো হবে। (শারহু নাবাবী ১৭শ খণ্ড, হা. ২৮৬)

(حُفَاة) এমন ব্যক্তি যার কোন জুতা এবং মোজা নেই। (عُرَاة) যার কোন আবরণ বা সতর নেই। বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ দাউদে বর্ণিত আবূ সাঈদ-এর হাদীসে রয়েছে, যখন আবূ সাঈদ-এর মৃত্যু হাজির হলো তখন তিনি নতুন কাপড় নিয়ে ডাকলেন ও তা পরিধান করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি। তিনি (সা.) বলেন, নিশ্চয় মৃত্যু ব্যক্তি যে কাপড়ে মারা গেছে, সে কাপড়ে তাকে পুনরুত্থান করা হবে। ইবনু 'আব্বাস-এর হাদীস ও আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর হাদীসকে এভাবে এক করা যায় যে, কারো হাশর হবে বিবস্ত্র হয়ে। আর কারো হাশর হবে কাপড় পরে অথবা সবাইকে উলঙ্গ করে জমা করা হবে। অতঃপর নবী 'আলায়হিস সালাম-দেরকে কাপড় পরানো হবে। আর যাকে প্রথমে কাপড় পরানো হবে তিনি হলেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। অথবা মানুষ যে কাপড়ে মারা গেছে সে কাপড়সহ কবর থেকে উত্থিত হবে। অতঃপর কাপড় তাদের থেকে খুলে পড়বে হাশরের সূচনালগ্নে। তারপর তারা উলঙ্গ হয়ে জমায়েত হবে। অতঃপর প্রথমে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে কাপড় পরিধান করানো হবে। আবার কেউ আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসকে শহীদের জন্য ধরেছেন। কারণ তাদের ব্যাপারে নির্দেশ হলো যে, তাদেরকে স্ব স্ব কাপড়ে ঢেকে দাফন করতে হবে। আবূ সাঈদ শহীদদের ব্যাপারে উপরোক্ত নির্দেশনা শুনেছেন কিন্তু তা সবার জন্য ধরে নিয়েছেন। যারা সাধারণের জন্য ধরেছেন, তাদের মধ্যে মু'আয ইবনু জাবাল (রাঃ) অন্যতম।
ইবনু আবদ্ দুনিয়া ‘আম্‌র ইবনু আসওয়াদ-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা মু'আয ইবনু জাবাল-এর আম্মাকে দাফন করতে গেলে তিনি নির্দেশ দিলেন মায়ের জন্য। তাই আমরা নতুন কাপড়ে কাফন দিলাম। আর তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের উত্তম কাফনের ব্যবস্থা কর। কারণ এতেই তাদেরকে উঠানো হবে। কোন বিদ্বান কাপড়কে ‘আমলের অর্থ গ্রহণ করেছেন। কাপড় ‘আমল অর্থে ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ হলো আল্লাহ তা'আলার বাণী: (وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ ؕ) “আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক”- (সূরাহ্ আল আ'রাফ ৭: ২৬)।
(وَ ثِیَابَکَ فَطَهِّرۡ) “তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ”- (সূরাহ্ আল মুদ্দাসসির ৭৪: ৪)।
এটা কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাখ্যা। তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো (وَعَمَلَكَ فَأَخْلِصْهُ) আর তোমার আমাকে নির্ভেজাল কর।
এ কথাটা আরো মজবুত হয় জাবির (রাঃ)-এর মারফু হাদীস দ্বারা, বলা হয়েছে, (يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَتَ عَلَيْهِ) “প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার শেষ ‘আমলের সাথে উঠানো হবে” হাদীসটিকে মুসলিম বর্ণনা করেন। কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসকে প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করেন। তার মতটি কুরআনের আয়াত দ্বারা সুদৃঢ় হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ لَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا فُرَادٰی کَمَا خَلَقۡنٰکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ) “(কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার নিকট তেমনই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হাজির হয়েছ যেমনভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম”- (সূরা আল আন'আম ৬: ৯৪)।
তিনি আরো বলেন, (...کَمَا بَدَاَکُمۡ تَعُوۡدُوۡنَ) “...যেভাবে প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পুনরায়ও সেভাবেই সৃজিত হবে”- (সূরা আল আ'রাফ ৭: ২৯)। অতএব আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসকে শহীদদের জন্য প্রযোজ্য হিসেবে ধরতে হবে। কারণ তাদেরকে স্বীয় কাপড়ে দাফন করতে হয় এবং তাতেই তাদেরকে উঠানো হবে যাতে তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়।
(أَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ) কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ মুসলিম-এর শারাহতে বলেন, (خلائق) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমাদের নবী ব্যতীত বাকী সব। অতএব তিনি নিজের সম্বোধনের ব্যাপকতার মধ্যে প্রবেশ করবেন না। কিন্তু কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ছাত্র পরে বলেন, যদি ‘আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীস না থাকত তবে তাঁর কথা ঠিক হত। আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন, কিয়ামতের দিন প্রথম খলীলুল্লাহ আলায়হিস সালাম-কে দুটি কিবতী কাপড় পরানো হবে। অতঃপর মুহাম্মাদ (সা.)-কে ‘আরশের ডানে চমৎকার এক সেট পোশাক পরানো হবে।
‘উবায়দ ইবনু উমায়র-এর মুরসালে বর্ণিত হয়েছে, মানুষকে খালি পায়ে উলঙ্গ করে উঠানো হবে। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেন, আমি আমার খলীলকে উলঙ্গ দেখেছি। তাই ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে সাদা কাপড় পরানো হবে। তিনি হবেন প্রথম কাপড় পরিহিত ব্যক্তি। ইবরাহীম 'আলায়হিস সালাম প্রথম কাপড় পরা ব্যক্তি হওয়ার রহস্য হলো তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার সময় বিবস্ত্র করা হয়েছিল। কেউ বলেন, পায়জামা দ্বারা সতর ঢাকার সুন্নাত তিনিই প্রথম চালু করেছিলেন। সে কারণে তাকে প্রথম কাপড় পরানো হবে। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আমার খলীলকে কাপড় পরাও যাতে মানুষেরা বুঝতে পারে যে, তাদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবরাহীম আলায়হিস সালাম প্রথম কাপড় পরিহিত ব্যক্তি হিসেবে বিশেষিত হওয়াতে এ কথা আবশ্যক হয় না যে, তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) থেকে সাধারণভাবে উত্তম।
(إِنَّهُمْ لَنْ يَزَالُوا مرتدين على أَعْقَابهم مذْ فَارَقْتهمْ) এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী (ما احد ثوابعدك) এর ব্যাখ্যা। নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার উদ্দেশ্য নিয়ে ‘আলিমগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেন।

(এক) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুনাফিক মুরতাদগণ। তাদেরকে উজ্জ্বল চিহ্নসহ হাশর করা হবে। অতঃপর নবী (সা.) তাদের ওপর থাকা চিহ্ন দেখে ডাকতে থাকবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হবে এরা সেসব লোক নয় যাদের সাথে আপনি ওয়াদা করেছেন। এরা আপনার পরে পরিবর্তন হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাদের জন্য যে ইসলাম প্রকাশ পেয়েছিল তার উপর তারা মৃত্যুবরণ করেনি।

(দুই) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সে সমস্ত ব্যক্তিরা যারা রাসূল (সা.) -এর যামানায় ছিল, পরে তারা মুরতাদ হয়েছে। তাদের ওপরে উযূর চিহ্ন না থাকলেও নবী (সা.) তাদেরকে ডাকবেন। কারণ তিনি (সা.) স্বীয় জীবদ্দশায় তাদের ইসালাম সম্পর্কে জানতেন। তাদের ব্যাপারে বলা হবে, আপনার পরে তারা মুরতাদ হয়েছে।

(তিন) এ কথার অর্থ হলো উদ্দেশ্য হবে কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি, যারা তাওহীদের উপরে মৃত্যুবরণ করেছে এবং বিদআতী ব্যক্তি যারা বিদ'আতের কারণে ইসালামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়নি।
(তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড হা, ২৪২৩)

বায়যাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (مرتدين) শব্দটি তাঁদের ইসালাম থেকে মুরতাদ হওয়ার দলীল নয়। বরং তারা গণ্য হবে মু'মিনদের বিরুদ্ধাচরণকারী হিসেবে এবং ঈমানের দৃঢ়তা থেকে বিচ্যুত মুরতাদ হিসেবে। তারা সৎ ‘আমলকে মন্দ দিয়ে বদলিয়ে দিত। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা. ৬৫২৬)
(الْعَبْدُ الصَّالِحُ) থেকে উদ্দেশ্য ‘ঈসা আলায়হিস সালাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৬-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নারী পুরুষ সকলে কি একজন আরেকজনের লজ্জাস্থান দেখতে থাকবে না? তিনি (সা.) বললেন, হে ’আয়িশাহ্! সে সময়টি এত ভয়ঙ্কর হবে যে, কেউ কারো প্রতি দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ পাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ؟ فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6527) و مسلم (56 / 2859)، (7198) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عاىشة قالت سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غرلا قلت يا رسول الله الرجال والنساء جميعا ينظر بعضهم الى بعض فقال يا عاىشة الامر اشد من ان ينظر بعضهم الى بعض متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6527 و مسلم 56 2859 7198 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: ‘আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স থেকে মুসনাদে আহমাদ ও হাকিমে বর্ণিত আছে, আল্লাহ বান্দাদেরকে একত্রিত করবেন। তিনি (সা.) স্বীয় হাত দ্বারা শামের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, (عُرَاةً غُرْلًا، بُهْمًا بُهْمًا) আমরা বললাম, (بُهْمًا) কাকে বলে? তিনি (সা) বললেন, যার কাছে কিছু নেই।

সহীহ মুসলিমে ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, (يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ) নাসায়ী এবং হাকিম-এর বর্ণিত হয়েছে, 'আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে যে, (يَا رَسُولَ اللَّهِ فَكَيْفَ بِالْعَوْرَاتِ) আমি বললাম, লজ্জাস্থানের কি অবস্থা হবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, (لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأَنٌ يُغْنِبهِ) তিরমিযী ও হাকিমে একটু বেশি এসেছে। তাতে রয়েছে পুরুষ ও নারীগণ অপরকে বাদ দিয়ে নিজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পুরুষেরা মহিলার দিকে বা নারীরা পুরুষের দিকে তাকাবে না। ইবনু আবদ দুন্‌ইয়াতে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) -কে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে মানুষের হাশর হবে? তিনি (সা.) বললেন, খালি পায়ে বিবস্ত্র হয়ে। তিনি আবার বললেন, লজ্জাস্থানের কি হবে? তিনি (সা.) বলেন, আমার ওপরে একটি আয়াত নাযিল হয়েছে যে, তোমার গায়ে কাপড় থাকুক বা না থাকুক তোমার এতে কোন ক্ষতি হবে না। তা হলো (لِكُلِّ امْرِئٍ الْآيَةَ) (ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা, ৬৫২৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৭-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে কিরূপে মুখের উপরে হাঁটিয়ে একত্রিত করা হবে? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, যিনি দুনিয়াতে মানুষকে দুই পায়ে চালিয়েছিলেন তিনি কি কিয়ামতের দিন তাকে মুখের উপর চালানোর সাধ্য রাখেন না? (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4760) ومسلم (2806)، (7087) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن انس ان رجلا قال يا نبي الله كيف يحشر الكافر على وجهه يوم القيامة قال اليس الذي امشاه على الرجلين في الدنيا قادرا على ان يمشيه على وجهه يوم القيامة متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 4760 ومسلم 2806 7087 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (يُحْشَرُ الْكَافِرُ) আনাস (রাঃ) থেকে অন্য সূত্রে হাকিম-এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করা হলো, জাহান্নামীদেরকে মুখের ভরে জমা করা হবে। বাযযারে বর্ণিত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, মানুষকে তিনভাবে জমায়েত করা হবে। একদল বাহনের উপরে, আরেক দল পদব্রজে এবং একদল মুখের ভরে। বলা হলো কিভাবে তারা মুখের ভরে চলবে? এসব হাদীসের সামষ্টিক অর্থ হলো নৈকট্যশীলরা আরোহণ করে, অন্য মুসলিমরা পায়ে হেঁটে আর কাফিরদেরকে মুখের ভরে এনে জমা করা হবে। (ফাতহুল বারী ৮ম খণ্ড, হা, ৪৭৬০)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে ব্যক্তি বলল, কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, কাফিররা মুখের উপর ভর করে চলবে। এটা কিভাবে সম্ভব? হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, যে সত্তা পায়ে চলার ক্ষমতা দেন তিনি মুখমণ্ডলকেও ক্ষমতা দিতে পারেন। অর্থাৎ আল্লাহর নিকটে সব কঠিন বিষয় সহজ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তার পিতা আযর-এর সাক্ষাৎ পাবেন। তখন আযর-এর চেহারা হবে কালো ধুলাবালি মিশ্রিত। তখন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাকে বলবেন, আমি কি আপনাকে (দুনিয়াতে) বলেছিলাম না যে, আপনি আমার কথা অমান্য করবেন না? তখন তার পিতা তাকে বলবেন, আজ আমি তোমার অবাধ্যতা করব না। অতঃপর ইবরাহীম আলায়হিস সালাম বলবেন, হে প্রতিপালক! আপনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, হাশরের দিন আমাকে অপমানিত করবেন না। অথচ আজ আমার পিতা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত, অতএব এর চেয়ে অধিক লাঞ্ছনা ও অপমান আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত অবৈধ করে রেখেছি। অতঃপর ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে বলা হবে, তুমি তোমার পায়ের তলার দিকে দেখ। তিনি সে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই হঠাৎ দেখবেন যে, তার সামনে কাদা গোবরে লণ্ডভণ্ড শিয়াল আকৃতি একটি নিকৃষ্ট পশু দাঁড়িয়ে আছে। তখনি তাকে চার পা ধরে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ: لَا تَعْصِنِي؟ فَيَقُولُ لَهُ أَبُوهُ: فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيكَ. فَيَقُول إِبراهيم: يَا رب إِنَّك وَعَدتنِي أَلا تخزني يَوْمَ يُبْعَثُونَ فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَدِ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: إِنِّي حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِينَ ثُمَّ يُقَالُ لِإِبْرَاهِيمَ: مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ؟ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُتَلَطِّخٍ فَيُؤْخَذُ بقوائمه فَيُلْقى فِي النَّار . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3350) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال يلقى ابراهيم اباه ازر يوم القيامة وعلى وجه ازر قترة وغبرة فيقول له ابراهيم الم اقل لك لا تعصني فيقول له ابوه فاليوم لا اعصيك فيقول ابراهيم يا رب انك وعدتني الا تخزني يوم يبعثون فاي خزي اخزى من ابي الابعد فيقول الله تعالى اني حرمت الجنة على الكافرين ثم يقال لابراهيم ما تحت رجليك فينظر فاذا هو بذيخ متلطخ فيوخذ بقواىمه فيلقى في النار رواه البخاريرواہ البخاری 3350 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (عَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ) এটা কুরআনের প্রকাশ্য অর্থের সাথে মিল রয়েছে; যেমন আল্লাহর বাণী, (وَ وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ عَلَیۡهَا غَبَرَۃٌ ﴿ۙ۴۰﴾ تَرۡهَقُهَا قَتَرَۃٌ ﴿ؕ۴۱﴾) “সেদিন কতক মুখ হবে ধূলিমলিন। তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে”- (সূরা আল ‘আবাসা ৮০: ৪০-৪১)। অর্থাৎ তাকে ধুলোই ঢেকে ফেলবে। (غَبَرَۃٌ) বলা হয় মাটির ধুলোকে। আর (قَتَرَۃٌ) বলা হয় হতাশায় বা দুঃখে সৃষ্ট মলিনতাকে। কেউ বলেন, দুঃখ বা বিপদে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেললে তাকে (قَتَرَۃٌ) বলা হয়। আর যার গায়ে ধুলো পড়ে তাকে (غَبَرَۃٌ) বলা হয়। এটি একটি বাহ্যিক বা অনুভবযোগ্য, অন্যটি আত্মিক বা মানসিক। কেউ বলেন, অধিক এমন ধুলোকে (قَتَرَۃٌ) বলা হয় যা মুখমণ্ডলকে মলিন করে দেয়। কেউ বলেন, ধোয়াশে কালোকে (قَتَرَۃٌ) বলা হয়। এখানে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَدِ) এখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম স্বীয় পিতার ব্যাপারে তাঁর শাফা'আত কবুল না হওয়ায় নিজকে (أَبْعَدِ) বলে ধরে নিয়েছেন। কেউ বলেন, (أَبْعَدِ) শব্দটি (ابيه) থেকে (صِفَةُ) হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর পিতা আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে। কারণ পাপী ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকে। আর কাফির তো আরো দূরে। কেউ বলেছেন, (أَبْعَدِ) ইসমে তাফযীল (بعيد) সিফাতুল মুশাববাহার অর্থে ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ ধ্বংস। ইসমে তাফযীলের অর্থে ব্যবহার হওয়াই অধিক মজবুত। কারণ ইবরাহীম ইবনু তহমান-এর বর্ণনায় রয়েছে, (وَإِنْ أَخْزَيْتَ أَنِي فَقَدْ أَخْزَيْتَ الْأَبْعَدَ)
(فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُتَلَطِّخٍ فَيُؤْخَذُ بقوائمه فَيُلْقى فِي النَّار)
এ বাক্যের মধ্যে (زِيخٍ) শব্দটি ‘যাল' বর্ণে যের, ইয়া সার্কিন ও পরে ‘খা অর্থ পুরুষ হায়েনা। কেউ কেউ বলেন, অধিক চুলবিশিষ্ট হলে তাকে (زِيخ) বলা হয়। (مُتَلَطِّخ) শব্দের অর্থ মেখে যাবে। কোন ভাষ্যকার বলেন, গোবর, রক্ত বা মাটিতে মেখে যাবে। কোন বর্ণনায় আছে, তার কাছ থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর বলবেন, হে ইবরাহীম! তোমার পিতা কোথায়? তিনি বলবেন, আপনি তো আমার নিকট থেকে তাকে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলবেন, নিচে লক্ষ্য কর। তিনি যখন তাকাবেন তখন দেখবেন একটি প্রাণী ময়লায় গড়াগড়ি দিচ্ছে।
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাঁর পিতাকে বিকৃত করে হায়েনা করবেন। আবূ সাঈদ-এর হাদীসে রয়েছে, হায়েনার আকৃতিতে দুর্গন্ধযুক্ত বিভৎস চেহারায় পরবর্তিত হবে।
আইয়ুব-এর বর্ণনায় রয়েছে, তার নাক ধরে বলবেন, হে আমার বান্দা! এটা তোমার পিতা। তিনি বলবেন, তোমার কসম! এটা নয়।
বলা হয়, তার চেহারাকে বিকৃত করার হিকমত হলো ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর মন যেন তার থেকে সরে যায় এবং সে আসল চেহারায় জাহান্নামে না থাকে। কারণ এতে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম অপমানিত হবেন।
কেউ বলেন, হায়েনার চেহারায় বিকৃত হওয়ার হিকমত হলো, হায়েনা প্রাণীর মধ্যে সর্বাধিক আহমাদ। আর আযর মানুষের মাঝে সবচাইতে বড় আহাম্মক। কারণ তার ছেলের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন প্রকাশিত হবার পরেও কুফরীর উপর অনঢ় থেকেছে আমৃত্যু। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তার পিতার প্রতি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। আর তিনি তার জন্য বাহুকে কোমল করেছেন। কিন্তু সে অমান্য করেছে এবং অহংকারবশত কুফরীর উপর গো ধরেছে। সে কারণে কিয়ামতের দিন তার সাথে অপমানজনক আচরণ করা হবে।
কেবলমাত্র তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে যা সে তার পিতাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু, তখন সে তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। দেখুন- সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯: ১১৪। (ফাতহুল বারী ৮ম খণ্ড, হা. ৪৭৬৮-৬৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৯-[৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন সকল মানুষ ঘর্মাক্ত হয়ে পড়বে, যা তাদের ঘাম জমিনের সত্তর গজ পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে, এমনকি তা দু’কান পর্যন্ত পৌছে লাগামে পরিণত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِي الْأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6532) و مسلم (61 / 2863)، (7205) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يعرق الناس يوم القيامة حتى يذهب عرقهم في الارض سبعين ذراعا ويلجمهم حتى يبلغ اذانهم متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6532 و مسلم 61 2863 7205 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: বায়হাক্বীতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সেদিনের বিপদ খুব কঠিন হবে। এমনকি ঘাম কাফিরের মুখ বরাবর হবে। তাঁকে বলা হলো, মু'মিনরা কোথায় থাকবে? তিনি (সা.) বললেন, তারা থাকবে স্বর্ণের চেয়ারের উপরে। আর তাদেরকে মেঘ ছায়া দান করবে। আবূ মূসা (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, কিয়ামতের দিন মানুষের মাথার উপর সূর্য থাকবে। আর তাদের ‘আমালসমূহ মাথার উপর ছায়া দিবে।
ইবনু আবূ শায়বায় সালমান (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন সূর্যকে দশ বছরের তাপ প্রদান করা হবে। অতঃপর তা মানুষের খুলির কাছাকাছি করা হবে যেন তা ধনুকের রশির সমান। মানুষেরা ঘর্মাক্ত হবে, এতে ঘাম চুয়ে মানুষের দেহের সমান হয়ে যাবে। এত উঁচু হয়ে যাবে যে, মানুষেরা ঘড় ঘড় আওয়াজ করবে। সে তাপে সেদিন মুমিন নারী-পুরুষের কোন ক্ষতি হবে না।
আবূ ইয়ালা (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, কিয়ামতের দিন ঘাম মানুষের মুখ পরিমাণ হবে যেমন মুখে লাগাম থাকে। এতে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! জাহান্নামে দিয়ে হলেও এখান থেকে আমাকে অবকাশ দিন। এসব অবস্থা হাশরের ময়দানে ঘটবে। তাদের ‘আমল অনুযায়ী শাস্তির অবস্থা বিভিন্ন রকম হবে। আর কাফিররা তো কঠিন বিপদে অবস্থান করবে।
হাদীসের প্রকাশ্য অর্থানুযায়ী মানুষ এই বিপদের অন্তর্ভুক্ত। তবে অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, এটা বিশেষ এক শ্রেণি, তারা সংখ্যায় বেশি। এর মধ্য থেকে বাদ দেয়া হয়েছে নবীদেরকে, শহীদদের ও আরো যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন। অতএব সবচেয়ে বেশি ঘাম হবে কাফিরদের, অতঃপর কবীরা গুনাহগারদের, অতঃপর পরবর্তী শ্রেণিদের। কাফিরদের সংখ্যার তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যা অতি নগণ্য হবে।
এগুলো সব অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনয়নের অন্তর্ভুক্ত, যে এথেকে বিরত থাকবে, সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব জানিয়ে দেয়ার উপকারিতা হলো যাতে শ্রোতাগণ সতর্ক হয় এবং ঐসব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। (ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা. ৬৫৩২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৪০-[৯] মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টিকুলের অতি কাছাকাছি করে দেয়া হবে। এমনকি তা প্রায় এক মাইলের ব্যবধানে হয়ে যাবে। অতএব তখন তার তাপে মানব সম্প্রদায় আপন আপন ’আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। কারো ঘাম টাখনু পর্যন্ত হবে। কারো হাঁটু অবধি। কারো কোমর অবধি আর কারো জন্য এ ঘাম লাগাম পর্যন্ত হয়ে যাবে (অর্থাৎ তার মুখের ভিতরে লাগামের ন্যায় ঢুকে যাবে) এ কথাটি বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের মুখের দিকে হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنِ الْمِقْدَادِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ فَيَكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى حَقْوَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُمُ الْعَرَقُ إِلْجَامًا» وَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ إِلَى فِيهِ. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (62 / 2864)، (7206) ۔
(صَحِيح)

وعن المقداد قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول تدنى الشمس يوم القيامة من الخلق حتى تكون منهم كمقدار ميل فيكون الناس على قدر اعمالهم في العرق فمنهم من يكون الى كعبيه ومنهم من يكون الى ركبتيه ومنهم من يكون الى حقويه ومنهم من يلجمهم العرق الجاما واشار رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده الى فيه رواه مسلمرواہ مسلم 62 2864 7206 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (كَمِقْدَارِ مِيلٍ) এটা মূলত (حَتَّى يَكُونَ مِقْدَارُقُوْبِ الشَّمْسِ مِنْهُمْ مِثْلَ مِقْدَارِمِيلٍ) সূর্য তাদের কাছে দূরত্ব হবে এক মাইলের সমপরিমাণ।
কেউ কেউ এ হাদীসে এ সন্দেহের সৃষ্টি করেছে যে, সূর্য পৃথিবী থেকে কয়েক লক্ষ মাইল দূরে থাকার পরেও এত তাপ অনুভূত হয় তাহলে এক মাইল উপরে হলে তার কিরণ বা তার অগ্নিশিখা দ্বারা সব কিছু মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে মাটিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। এসব বিষয় আখিরাতের বর্ণনা। তথাকার দেহে সে মতোই হবে। ফলে সে দেহ এত তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখবে। যেমন বুধ গ্রহ সূর্যের এ পরিমাণ কাছে যে, জমিনবাসী এক মুহূর্ত টিকতে পারবে না। এ সত্ত্বেও বুধ গ্রহের মাখলুকরা আরামে রয়েছে। যাদের ঘাম পায়ের টাখনু পর্যন্ত পৌছবে তাদের ভালো আমল খুব বেশি। এদের উপরে অন্যদেরকে অনুমান করে নিতে হবে যে, যার যত নেক আমল কম হবে, তার ততটুকু পরিমাণ ঘামে ডুবে যাবে।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তুমি যদি বল, যখন ঘাম হবে সমুদ্রের মতে, এতে কারো মুখ পর্যন্ত পৌঁছবে, তাহলে কিভাবে অন্যের টাখনু পর্যন্ত হবে? এর জবাবে আমরা বলব যে, আল্লাহ তা'আলা কারো পায়ের নীচে জমিনকে উঁচু করবেন। অথবা বলা যায়, মানুষের ‘আমাল অনুযায়ী তার ঘামকে আটকিয়ে রাখবেন। ফলে এর বিপরীত কারো নিকটে পৌছবে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা মূসা আলায়হিস সালাম-এর জন্য নদীর স্রোতকে আটকিয়ে ছিলেন। মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, শেষের মতটি গ্রহণযোগ্য। কারণ আখিরাতের সব বিষয় স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোর ব্যতিক্রম। সবকিছুই বিবেকের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকশিত হয় না।
তুমি কি দেখ না এক কবরে দু’জন ব্যক্তির একজনকে শাস্তি দেয়া হয় এবং অন্যজন সুখে আরামে থাকে। একজন তো অন্যজনের ব্যাপারে কিছুই বুঝে না। এর উদাহরণ দুনিয়াতেও দু’জন ঘুমন্ত ব্যক্তির স্বপ্ন দু' রকম। একজন চিন্তিত ও পেরেশান হয়। আর অন্যজন আনন্দে থাকে। উপরন্তু একই জায়গায় দু’জন উপবিষ্ট থাকে। তন্মধ্যে একজন উপরে থাকে। আবার অন্যজন সর্বনিম্নে অবস্থান করে। অথবা একজন সুস্থ থাকে অন্যজন ব্যথায় অথবা দুঃখ কষ্টে থাকে। (মিকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৪১-[১০] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। একদিন তিনি (সা.) বললেন: (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আদম আলায়হিস সালাম-কে লক্ষ্য করে বলবেন, হে আদম! আদম আলায়হিস সালাম উত্তরে বলবেন, হে আমার প্রভু! আমি উপস্থিত! আপনার আনুগত্যই আমার জন্য সৌভাগ্য। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার আওলাদের মধ্য হতে জাহান্নামের দলকে বের কর। আদম আলায়হিস সালাম বলবেন, জাহান্নামের দলে কতজন? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, প্রত্যেক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক সন্তানধারী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে। আর তোমরা লোকেদেরকে দেখবে নেশাগ্রস্ত, মূলত তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বরং আল্লাহর আযাবই কঠিন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আমাদের মধ্য থেকে কে হবে সেই একজন? তিনি বললেন, বরং তোমরা এ সুসংবাদ জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্য থেকে একজন এবং ইয়াজুজ-মাজুজদের থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা করি যে, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক-চতুর্থাংশ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমরা সকলে ’আল্লা-হু আকবার বলে উঠলাম। অতঃপর বললেন, আমি আশা করি, তোমরা হবে জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ। তখন আমরা পুনরায় বললাম ’আল্লা-হু আকবার’। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবার বললাম, ’আল্লা-হু আকবার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, মানুষের মধ্যে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে যেমন একটি সাদা গরুর চামড়ার মধ্যে একটি কালো লোম অথবা একটি কালো গরুর চামড়ার মধ্যে একটি সাদা লোম ।(বুখারী ও মুসলিম)।

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: يَا آدَمُ فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ. قَالَ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ. قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ (وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شديدٌ) قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَيُّنَا ذَلِكَ الْوَاحِدُ؟ قَالَ: «أَبْشِرُوا فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفٌ» ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا. فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا قَالَ: «مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلَّا كَالشَّعْرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَبْيَضَ أَوْ كشعرة بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَسْوَدَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3348) و مسلم (379 / 222)، (532) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي سعيد الخدري عن النبي صلى الله عليه وسلم قال يقول الله تعالى يا ادم فيقول لبيك وسعديك والخير كله في يديك قال اخرج بعث النار قال وما بعث النار قال من كل الف تسعماىة وتسعة وتسعين فعنده يشيب الصغير وتضع كل ذات حمل حملها وترى الناس سكارى وما هم بسكارى ولكن عذاب الله شديد قالوا يا رسول الله واينا ذلك الواحد قال ابشروا فان منكم رجلا ومن ياجوج وماجوج الف ثم قال والذي نفسي بيده ارجو ان تكونوا ربع اهل الجنة فكبرنا فقال ارجو ان تكونوا ثلث اهل الجنة فكبرنا فقال ارجو ان تكونوا نصف اهل الجنة فكبرنا قال ما انتم في الناس الا كالشعرة السوداء في جلد ثور ابيض او كشعرة بيضاء في جلد ثور اسود متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3348 و مسلم 379 222 532 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (بَعْثَ النَّارِ) অর্থাৎ জাহান্নামে প্রেরিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত দল। (مَا بَعْثُ النَّارِ؟) এর অর্থ (مَا مِقْدَارُمَبْعُوثِالنَّارِ؟) জাহান্নামে প্রেরিত লোকেদের সংখ্যা কত? কেউ বলেন, (مَا) এখানে সংখ্যাবাচক (كَمِ) এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
(مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ) প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এর বিপরীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে রয়েছে, (مِنْ كُلِّ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ) প্রতি একশতে নিরানব্বই জন এর উত্তরে কিরমানী বলেন, এখানে সংখ্যার কোন বিবেচনা নেই বরং এর দ্বারা মু'মিনদের সংখ্যা কম ও কাফিরদের সংখ্যা বেশি বুঝানো হয়েছে, আবার আবূ সা'ঈদ (রাঃ)-এর হাদীসকে মোট বানী আদম-এর ওপর প্রয়োগ করতে হবে। তখন প্রতি হাজারে দশজন হবে। এই অর্থই বেশি কাছাকাছি হবে। কারণ ইয়াজুজ-মাজুজের আলোচনা আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসে এসেছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে নয়। অথবা প্রথম হাদীসকে সমগ্র সৃষ্টির সাথে যুক্ত করতে হবে এবং দ্বিতীয় হাদীসকে এ উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে যুক্ত করতে হবে। অতএব প্রতি এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন হবে কাফির এবং প্রতি একশতে নিরানব্বই জন হবে পাপী। এটাই অধিক স্পষ্ট।
(يَشِيبُ الصَّغِيرُ) ছোটরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে অধিক চিন্তা ও বড় উদ্বেগের কারণে। বাগাবীর বর্ণনায় রয়েছে, এতে শিশুরা বুড়ো হয়ে যাবে। আর ভয়ে গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করে ফেলবে।
হাসান বলেন, স্তন্যদানকারিণী মা দুধ ছাড়ার আগেই সন্তানকে ভুলে যাবে। গর্ভবতী পেটে থাকা বাচ্চাকে অপূর্ণ প্রসব করবে। এ অর্থ সে ব্যক্তির মতকে অধিক মজবুত করে যে বলে, এ কম্পন সংঘটিত হবে দুনিয়াতে। কারণ কিয়ামতের পর গর্ভবর্তী হয় না। আর যারা বলে, এসব ঘটনা কিয়ামতে সংঘটিত হবে। তারা বলেন, এর দ্বারা বিষয়টি ভয়াবহতা বুঝানো হয়েছে। ব্যাপারটি বাস্তব নয়। যেমন মানুষের কথা (أَصَابِنَا أَمْرٌ يَشِيبُ فِيهِ الْوَلِيدُ) আমাদের এমন ব্যাপার হয়েছে যাতে শিশুরা বুড়ো হয়ে যাবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিপদ। যখন তারা বিষয়টিকে খুব বড় মনে করল এবং তাতে ভয়ের উদ্রেক হলো তখন তিনি (সা.) তাদের মনে আশায় সঞ্চার করার জন্য বললেন, (أَبْشِرُوا) “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর।'
(فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفٌ) এর অর্থ হলো, অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির বিপরীতে ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে একহাজার জন হবে। এতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, জাহান্নামীদের সংখ্যা জান্নাতীদের সংখ্যা থেকে বেশি হবে। হয়তো নৈকট্যশীল মালাক (ফেরেশতা) ও হুরদের থাকার মাধ্যমে জান্নাতীদের সংখ্যা বাড়বে।
(أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: হাদীসে এ নির্দেশনা আছে যে, ইয়াজুজ-মাজুজেরা এ হুমকির মধ্যে শামিল। আর ইয়াজুজ-মাজুজ ছাড়া অন্য পূর্ববর্তী উম্মতরাও এর মধ্যে শামিল। অতএব যখন মোট জান্নাতীদের অর্ধেক পূর্ববর্তী উম্মাতের উপরে সমবেত হবে তখন তাদের এক হাজারের জন্য একজন করেই হবে। সম্ভবত এ হাদীসটির উম্মতে মুহাম্মাদীর দুই-তৃতীয়াংশ জান্নাতে যাওয়ার বর্ণিত হাদীসের পূর্বের হাদীস। কারণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হবে। তন্মধ্যে আশিটি হবে উম্মতে মুহাম্মাদীর ও চল্লিশটি হবে বাকী উম্মাতের। আর এটাও হতে পারে যে, তাদের অর্ধেক প্রথমে প্রবেশ করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৪২-[১১] উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, (কিয়ামতের দিন) যখন আমাদের প্রভু পায়ের নলা বা গোছা উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই তাঁকে সিজদাহ্ করবে। আর বিরত থাকবে ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে রিয়া (লোক দেখানো) ও শুনানোর জন্য সিজদাহ্ করত, তারা সিজদাহ করতে চাইবে কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ ও কোমর একটি কাষ্ঠফলকের মতো শক্ত হয়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يَكْشِفُ رَبُّنَا عَنْ سَاقِهِ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ وَيَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ فِي الدُّنْيَا رِيَاءً وَسُمْعَةً فَيَذْهَبُ لِيَسْجُدَ فَيَعُودُ ظَهْرُهُ طَبَقًا وَاحِدًا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4919) و مسلم (لم اجدہ ، و انظر ح 5579 من ھذا الکتاب) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يكشف ربنا عن ساقه فيسجد له كل مومن ومومنة ويبقى من كان يسجد في الدنيا رياء وسمعة فيذهب ليسجد فيعود ظهره طبقا واحدا متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 4919 و مسلم لم اجدہ و انظر ح 5579 من ھذا الکتاب ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা'আলা যে সব বস্তু নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন সে সবগুলো সত্য এবং প্রকাশ্য অর্থেই গণ্য। যেমন আল্লাহ তা'আলার আকার আকৃতি ও হাকীকাত, কোন মানুষের নিকট জানা নেই। এসবের উপর ঈমান আনা উচিত। আর এসবের আকৃতি প্রকৃতির ব্যাপার আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা উচিত। উপমা ও তুলনা থেকে বেঁচে থাকা দরকার। এ কল্পনা না হয় যে, (আল্লাহ মাফ করুক) আল্লাহ তাআলার হাত, চেহারা, চোখ অথবা নলা কোন সৃষ্টির হাত, চেহারা ও চোখের মতো। বরং যেমন তার জাত বা সত্তার তুলনাহীন তেমনিভাবে তাঁর গুণাবলির ক্ষেত্রেও। এটা সালাফদের ‘আক্বীদাহ্ বা বিশ্বাস। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৪৩-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন খুব মোটাতাজা একজন বড় লোক আসবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা একটি মশার পাখার সমানও হবে না। অতঃপর তিনি এর প্রমাণস্বরূপ বললেন, তোমরা এই আয়াতটি পাঠ কর-  (فَلَا نُقِیۡمُ لَهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَزۡنًا) “আমি কিয়ামতের দিন কাফিরদের (নেক ’আমলের) জন্য কোন ওযনই স্থাপন করব না”- (সূরা আল কাহফ ১৮: ১০৫)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيَأْتِي الرَّجُلُ الْعَظِيمُ السَّمِينُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَزِنُ عندَ الله جَناحَ بعوضة» . وَقَالَ: اقرؤوا (فَلَا نُقيمُ لَهُم يومَ القيامةِ وَزْناً) مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4729) و مسلم (18 / 2785)، (7045) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لياتي الرجل العظيم السمين يوم القيامة لا يزن عند الله جناح بعوضة وقال اقرووا فلا نقيم لهم يوم القيامة وزنا متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 4729 و مسلم 18 2785 7045 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (لَيَأْتِي الرَّجُلُ الْعَظِيمُ) অর্থাৎ মান-মর্যাদা, প্রভাব, মাংস-চর্বি নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন (السَّمِينُ) শব্দটি (عَطْفَ بَيَانٍ) হবে। (لَايَزِنُ) সমান হবে না। (عندَ الله جَناحَ بعوضة) আল্লাহর নিকটে একটি মাছি পাখা পরিমাণও ওযন হবে না, এর অর্থ তার কোন মূল্য নেই। যেমন 'আরবদের কথা, (مَا لِفُلَانٍ عِنْدَنَا) অমুকের আমাদের কাছে কোন দাম নেই। হাদীসে এসেছে, যদি দুনিয়ামূল্য আল্লাহর নিকটে মাছির ডানার সমান হত তাহলে আল্লাহ কাফিরকে সামান্য পরিমাণ পানিও পান করাতেন না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১২ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে