পরিচ্ছেদঃ ৩৭০ : দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে
৬০/১৮৭৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈলের মা [হাজার; যা বাংলায় প্রসিদ্ধ হাজেরা] ও তাঁর দুধের শিশু ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কা’বা ঘরের নিকট এবং যমযমের উপরে একটি বড় গাছের তলে [বর্তমান] মসজিদের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় তাঁদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল জনমানব, না ছিল কোন পানি। সুতরাং সেখানেই তাদেরকে রেখে গেলেন এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে গেলেন।
তারপর ইব্রাহীম ফিরে যেতে লাগলেন। তখন ইসমাঈলের মা তাঁর পিছু পিছু ছুটে এসে বললেন, ’হে ইব্রাহীম! আমাদেরকে এমন এক উপত্যকায় ছেড়ে দিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সঙ্গী-সাথী আর না আছে অন্য কিছু?’ তিনি বারংবার এ কথা বলতে থাকলেন। কিন্তু ইব্রাহীম সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তখন হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’আল্লাহ কি আপনাকে এর হুকুম দিয়েছেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, ’হ্যাঁ।’ উত্তর শুনে হাজেরা বললেন, ’তাহলে তিনি আমাদেরকে ধ্বংস ও বরবাদ করবেন না।’ অতঃপর হাজেরা ফিরে এলেন।
ইব্রাহীম চলে গেলেন। পরিশেষে যখন তিনি [হাজূনের কাছে] সানিয়্যাহ নামক স্থানে এসে পৌঁছলেন, যেখানে স্ত্রী-পুত্র আর তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তখন তিনি কা’বা ঘরের দিকে মুখ করে দু’হাত তুলে এই দো’আ করলেন, ’’হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার কিছু বংশধরকে ফল-ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট বসবাস করালাম; হে আমাদের প্রতিপালক! যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং তুমি কিছু লোকের অন্তরকে ওদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর; যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’’ (সূরা ইব্রাহীম ৩৭ আয়াত)
[অতঃপর ইব্রাহীম চলে গেলেন।] ইসমাঈলের মা শিশুকে দুধ পান করাতেন আর নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। পরিশেষে ঐ মশকের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি নিজেও পিপাসিত হলেন এবং [ঐ কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ায়] তাঁর শিশুপুত্রটিও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখলেন, [পিপাসায়] শিশু মাটির উপর ছট্ফট্ করছে। শিশু পুত্রের [এ করুণ অবস্থার] দিকে তাকানো তার পক্ষে সহ্য হচ্ছিল না। তিনি সরে পড়লেন এবং তাঁর অবস্থান ক্ষেত্রের নিকটতম পর্বত হিসাবে ’স্বাফা’কে পেলেন। তিনি তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে উপত্যকার দিকে মুখ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন, কাউকে দেখা যায় কি না। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন স্বাফা পর্বত থেকে নেমে আসলেন।
অতঃপর যখন তিনি উপত্যকায় পৌঁছলেন, তখন আপন পিরানের [ম্যাক্সির] নিচের দিক তুলে একজন শ্রান্তক্লান্ত মানুষের মত দৌড়ে উপত্যকা পার হলেন। অতঃপর ’মারওয়া’ পাহাড়ে এসে তার উপরে উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর চারিদিকে দৃষ্টিপাত করে কাউকে দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। [এইভাবে তিনি পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে] সাতবার [আসা-যাওয়া] করলেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’এ কারণে [হজ্জের সময়] হাজীগণের এই পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতবার সায়ী বা দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।’’
এভাবে শেষবার যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন, তখন একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি নিজেকেই বললেন, ’চুপ!’ অতঃপর তিনি কান খাড়া করে ঐ আওয়াজ শুনতে লাগলেন। আবারও সেই আওয়ায শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, ’তোমার আওয়াজ তো শুনতে পেলাম। এখন যদি তোমার কাছে সাহায্যের কিছু থাকে, তবে আমাকে সাহায্য কর।’ হঠাৎ তিনি যমযম যেখানে অবস্থিত সেখানে [জিব্রীল] ফিরিশ্তাকে দেখতে পেলেন। ফিরিশ্তা তাঁর পায়ের গোড়ালি দিয়ে অথবা নিজ ডানা দিয়ে আঘাত করলেন। ফলে [আঘাতের স্থান থেকে] পানি প্রকাশ পেল। হাজেরা এর চার পাশে নিজ হাত দ্বারা বাঁধ দিয়ে তাকে হাউজের রূপদান করলেন এবং অঞ্জলি ভরে তার মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। হাজেরার ভরা শেষ হলেও পানি উথলে উঠতে থাকল।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আল্লাহ ইসমাঈলের মায়ের উপর করুণা বর্ষণ করুন। যদি তিনি যমযমকে [বাঁধ না দিয়ে ঐভাবে] ছেড়ে দিতেন। অথবা যদি তিনি অঞ্জলি দিয়ে মশক না ভরতেন, তবে যমযম [কূপ না হয়ে] একটি প্রবহমান ঝর্ণা হত।’’
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হাজেরা নিজে পানি পান করলেন এবং শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন। তখন ফিরিশ্তা তাঁকে বললেন, ’ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা, এখানেই মহান আল্লাহর ঘর রয়েছে। এই শিশু তার পিতার সাথে মিলে এটি পুনর্নির্মাণ করবেন। আর আল্লাহ তাঁর খাস লোককে ধ্বংস করেন না।’ ঐ সময় বায়তুল্লাহ [আল্লাহর ঘরের পরিত্যক্ত স্থানটি] জমিন থেকে টিলার মত উঁচু হয়ে ছিল। স্রোতের পানি এলে তার ডান-বাম দিয়ে বয়ে যেত।
হাজেরা এইভাবে দিন যাপন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত জুরহুম গোত্রের কিছু লোক ’কাদা’ নামক স্থানের পথ বেয়ে পার হয়ে যাচ্ছিল। তারা মক্কার নিচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং দেখতে পেল কতকগুলো পাখী চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, ’নিশ্চয় এই পাখিগুলি পানির উপরই ঘুরছে। অথচ আমরা এ ময়দানে বহুকাল কাটিয়েছি। কিন্তু কখনো এখানে কোন পানি দেখিনি।’ অতঃপর তারা একজন বা দু’জন দূত সেখানে পাঠাল। তারা গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির খবর দিল। খবর পেয়ে সবাই সেদিকে এসে দেখল, ইসমাঈলের মা পানির নিকট বসে আছেন। তারা তাঁকে বলল, ’আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দেবেন কি?’ তিনি উত্তরে বললেন, ’হ্যাঁ। তবে এ পানির উপর তোমাদের কোন স্বত্বাধিকার থাকবে না।’ তারা বলল, ’ঠিক আছে।’
ইবনে রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’এ ঘটনা ইসমাঈলের মায়ের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিল। যেহেতু তিনি তো সঙ্গী-সাথীই চাচ্ছিলেন। সুতরাং তারা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও খবর পাঠাল। তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাদের অনেক ঘর-বাড়ি হল। ইসমাইলও বড় হলেন। তাদের নিকট থেকে [তাদের ভাষা] আরবী শিখলেন। বড় হলে তারা তাঁকে পছন্দ করল এবং তাঁর প্রতি মুগ্ধ হল। অতঃপর তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলে তারা তাদেরই এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিলেন। এরপর ইসমাঈলের মা মৃত্যুবরণ করলেন।
ইসমাঈলের বিবাহের পর ইব্রাহীম তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনকে দেখার জন্য এখানে এলেন। কিন্তু এসে ইসমাঈলকে পেলেন না। পরে তাঁর স্ত্রীর নিকট তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। স্ত্রী বললেন, ’তিনি আমাদের রুযীর সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন।’ এক বর্ণনা অনুযায়ী -’আমাদের জন্য শিকার করতে গেছেন।’ আবার তিনি পুত্রবধূর কাছে তাঁদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বধূ বললেন, ’আমরা অতিশয় দুর্দশা, দুরবস্থা, টানাটানি এবং ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছি।’ তিনি ইব্রাহীম -এর নিকট নানা অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁর পুত্রবধূকে বললেন, ’তোমার স্বামী বাড়ি এলে তাঁকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলে নেয়।’ এই বলে তিনি চলে গেলেন।
ইসমাইল যখন বাড়ি ফিরে এলেন, তখন তিনি ইব্রাহীমের আগমন সম্পর্কে একটা কিছু ইঙ্গিত পেয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ’তোমাদের নিকট কেউ কি এসেছিলেন?’ স্ত্রী বললেন, ’হ্যাঁ, এই এই আকৃতির একজন বয়স্ক লোক এসেছিলেন। আপনার সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার খবর দিলাম। পুনরায় আমাকে আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে জানালাম যে, আমরা খুবই দুঃখ-কষ্ট ও অভাবে আছি।’ ইসমাইল বললেন, ’তিনি তোমাকে কোন কিছু অসিয়ত করে গেছেন কি?’ স্ত্রী জানালেন, ’হ্যাঁ, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আপনাকে তার সালাম পৌঁছাতে এবং আরও বলেছেন, আপনি যেন আপনার দরজার চৌকাঠ বদলে ফেলেন।’ ইসমাইল বললেন, ’তিনি ছিলেন আমার পিতা এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, যেন তোমাকে আমি তালাক দিয়ে দিই। কাজেই তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও।’
সুতরাং ইসমাইল তাঁকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ’জুরহুম’ গোত্রের অন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন ইব্রাহীম ততদিন এদের থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবার দেখতে এলেন। কিন্তু ইসমাইল সেদিনও বাড়িতে ছিলেন না। তিনি পুত্রবধূর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং ইসমাইল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রী জানালেন তিনি আমাদের খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহীম জিজ্ঞাসা করলেন, ’তোমরা কেমন আছ?’ তিনি তাঁর নিকট তাঁদের জীবনযাত্রা ও সাংসারিক অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চাইলেন? পুত্রবধূ উত্তরে বললেন, ’আমরা ভাল অবস্থায় এবং সচ্ছলতার মধ্যে আছি।’ এ বলে তিনি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন।
ইব্রাহীম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’তোমাদের প্রধান খাদ্য কি?’ পুত্রবধূ উত্তরে বললেন, ’মাংস।’ বললেন, ’তোমাদের পানীয় কি?’ বধূ বললেন, ’পানি।’ ইব্রাহীম দো’আ করলেন, ’হে আল্লাহ! এদের মাংস ও পানিতে বরকত দাও।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ’’ঐ সময় তাদের এলাকায় খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত না। যদি হত, তাহলে ইব্রাহীম সে ব্যাপারে তাঁদের জন্য দো’আ করে যেতেন।’’
বর্ণনাকারী বলেন, মক্কার বাইরে কোন লোকই শুধু মাংস এবং পানি দ্বারা জীবন-যাপন করতে পারে না। কেননা, শুধু মাংস ও পানি [সর্বদা] তার স্বাস্থ্যের অনুকূল হতে পারে না।
আলাপ শেষে ইব্রাহীম পুত্রবধূকে বললেন, ’তোমার স্বামীকে আমার সালাম বলবে এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ বহাল রাখে।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম এসে বললেন, ’ইসমাইল কোথায়?’ পুত্রবধূ বললেন, ’তিনি শিকার করতে গেছেন।’ অতঃপর তিনি বললেন, ’আপনি কি নামবেন না, কিছু পানাহার করবেন না।’ তিনি বললেন, ’তোমাদের খাদ্য ও পানীয় কি?’ বধূ বললেন, ’আমাদের খাদ্য মাংস এবং পানীয় পানি।’ তিনি দো’আ দিয়ে বললেন, ’’হে আল্লাহ! এদের মাংস ও পানিতে বরকত দাও।’’ আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’’ইব্রাহীমের দো’আর বরকত, [মক্কায় প্রকাশ পেয়েছে]।’’
ইব্রাহীম বললেন, ’তোমার স্বামী এলে তাকে সালাম বলে দিয়ো এবং আদেশ করো, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখে।’
অতঃপর ইসমাইল যখন বাড়ি এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি?’ স্ত্রী বললেন, ’হ্যাঁ, একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধ এসেছিলেন। [অতঃপর স্ত্রী তাঁর প্রশংসা করলেন ও বললেন,] তারপর তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলেন, আমি তখন তাঁকে আপনার খবর বললাম। অতঃপর তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি তাঁকে খবর দিলাম যে, আমরা ভালই আছি।’ স্বামী বললেন, ’আর তিনি তোমাকে কোন অসিয়ত করেছেন কি?’ স্ত্রী বললেন, ’তিনি আপনাকে সালাম বলেছেন এবং আপনার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।’ ইসমাইল তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ’তিনি আমার আব্বা, আর তুমি হলে চৌকাঠ। তিনি নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি।’
অতঃপর ইব্রাহীম আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন তাঁদের থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবারো তাঁদের নিকট এলেন। ইসমাইল তখন যমযমের নিকটস্থ একটি বড় গাছের নীচে বসে নিজের তীর ছুলছিলেন। পিতাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর উভয়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ-কালীন যথাযথ আচরণ প্রদর্শন করলেন। তারপর ইব্রাহীম বললেন, ’হে ইসমাইল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের হুকুম দিয়েছেন।’ ইসমাইল বললেন, ’আপনার প্রতিপালক যা আদেশ দিয়েছেন, তা সম্পাদন করে ফেলুন।’ ইব্রাহীম বললেন, ’তুমি আমার সহযোগিতা করবে কি?’ ইসমাইল বললেন, ’[হ্যাঁ, অবশ্যই] আমি আপনার সহযোগিতা করব।’ ইব্রাহীম পার্শ্ববর্তী জমিনের তুলনায় উঁচু একটি টিলার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ’এখানে একটি ঘর বানাতে আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
অতঃপর ইব্রাহীম কা’বা ঘরের ভিত উঠাতে লেগে গেলেন। পুত্র ইসমাইল তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকলেন। আর তিনি দেওয়াল গাঁথতে লাগলেন। অতঃপর যখন দেওয়াল উঁচু হল, তখন ইসমাইল এই পাথর [মাক্বামে ইব্রাহীম] নিয়ে এসে তাঁর সামনে রাখলেন। তিনি তার উপর খাড়া হয়ে পাথর গাঁথতে লাগলেন। আর ইসমাইল তাঁকে পাথর তুলে দিতে থাকলেন। সেই সময় উভয়েই এই দো’আ করতে থাকলেন ’হে আমাদের মহান প্রতিপালক! আমাদের নিকট থেকে এ কাজটুকু গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।’ (সূরা বাকারাহ ১২৭ আয়াত)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম ইসমাইল ও তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি মশক; তাতে পানি ছিল। ইসমাইলের মা সেই পানি পান করতেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠত। পরিশেষে মক্কায় পৌঁছে ইব্রাহীম তাঁদেরকে বড় গাছের নিচে রেখে নিজ [অন্যান্য] পরিজনের নিকট ফিরে যেতে লাগলেন। ইসমাঈলের মা তাঁর পিছন ধরলেন। অতঃপর যখন তাঁরা কাদা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি তাঁর পিছন থেকে ডাক দিলেন, ’হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার ভরসায় ছেড়ে যাচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ’আল্লাহর ভরসায়।’ [হাজেরা] বললেন, ’আল্লাহকে নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’ তারপর তিনি ফিরে এলেন। তিনি সেই পানি পান করতে লাগলেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠতে লাগল। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি [মনে মনে] বললেন, ’অন্যত্র গিয়ে দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই।’
বর্ণনাকারী বলেন, ’’সুতরাং তিনি গিয়ে স্বাফা পর্বতে ছড়লেন। অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন, কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। অতএব [স্বাফা থেকে নেমে অন্যত্র হাঁটতে লাগলেন এবং] যখন উপত্যকায় এসে পৌঁছলেন, তখন ছুটতে লাগলেন। অতঃপর মারওয়াতে এসে পৌঁছলেন। এইভাবে তিনি কয়েক চক্র করলেন। তারপর [মনে মনে] বললেন, ’গিয়ে দেখি আবার ছেলে কি করছে?’ সুতরাং তিনি গিয়ে দেখলেন, সে পূর্বের অবস্থায় আছে। সে যেন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছট্ফট্ করছে। তা দেখে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। তিনি [মনে মনে] বললেন, ’গিয়ে দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই।’ সুতরাং তিনি গিয়ে স্বাফা পর্বতে ছড়লেন।
অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন, কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। এইভাবে তিনি সাতবার [আসা-যাওয়া] পূর্ণ করলেন। তারপর [মনে মনে] বললেন, ’গিয়ে দেখি আবার ছেলে কি করছে?’ এমন সময় এক [গায়বী] আওয়াজ শুনলেন। তিনি বললেন, ’আপনার নিকট যদি কোন মঙ্গল থাকে, তাহলে আমাদেরকে সাহায্য করুন।’ দেখলেন, তিনি জিব্রীল। তিনি তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এইভাবে আঘাত করলেন। আর অমনি পানির ঝর্ণাধারা বের হয়ে এলো। তা দেখে ইসমাঈলের মা বিস্ময়াবিষ্ট হলেন এবং অঞ্জলি ভরে মশকে ভরতে লাগলেন----।’’ অতঃপর বর্ণনাকারী বাকী দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করলেন। [এ সকল বর্ণনাগুলি বুখারীর][1]
(370) بَابُ اَحَادِيْثِ الدَّجَّالِ وَاَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَغَىْرِهَا
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: جَاءَ إِبرَاهِيمُ عليه السلام بِأُمِّ إِسْمَاعِيلَ وَبِابْنِهَا إِسْمَاعِيل وَهِيَ تُرْضِعُهُ، حَتَّى وَضَعهَا عِنْدَ البَيْتِ، عِنْدَ دَوْحَةٍ فَوقَ زَمْزَمَ فِي أَعْلَى المَسْجِدِ، وَلَيْسَ بِمَكَّةَ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ، وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ، فَوَضَعَهُمَا هُنَاكَ، وَوَضَعَ عِنْدَهُمَا جِرَاباً فِيهِ تَمْرٌ، وَسِقَاءً فِيهِ مَاءٌ، ثُمَّ قَفَّى إِبْرَاهِيمُ مُنْطَلِقاً، فَتَبِعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ فَقَالَتْ : يَا إِبْرَاهِيمُ، أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ أَنِيسٌ وَلاَ شَيْءٌ ؟ فَقَالَتْ لَهُ ذَلِكَ مِرَاراً، وَجَعَلَ لاَ يَلْتَفِتُ إِلَيْهَا، قَالَتْ لَهُ : آللهُ أَمَرَكَ بِهَذَا ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَتْ : إِذاً لاَ يُضَيِّعُنَا ؛ ثُمَّ رَجَعَتْ، فَانْطَلَقَ إِبْرَاهِيمُ عليه السلام، حَتَّى إِذَا كَانَ عِنْدَ الثَّنِيَّةِ حَيْثُ لاَ يَرَونَهُ، اسْتَقْبَلَ بِوَجْهِهِ البَيْتَ، ثُمَّ دَعَا بِهَؤُلاَءِ الدَّعَوَاتِ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: ﴿ رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ﴾ [ابراهيم: ٣٧]. وَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تُرْضِعُ إِسْمَاعِيلَ وَتَشْرَبُ مِنْ ذَلِكَ المَاءِ، حَتَّى إِذَا نَفِدَ مَا فِي السِّقَاءِ عَطِشَتْ، وَعَطِشَ ابْنُهَا، وَجَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهِ يَتَلَوَّى - أَوْ قَالَ يَتَلَبَّطُ - فَانْطَلَقَتْ كَرَاهِيَةَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَوَجَدَتِ الصَّفَا أَقْرَبَ جَبَلٍ فِي الأرْضِ يَلِيهَا، فَقَامَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ اسْتَقْبَلَتِ الوَادِي تَنْظُرُ هَلْ تَرَى أَحَداً ؟ فَلَمْ تَرَ أَحَداً . فَهَبَطَتْ مِنَ الصَّفَا حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الوَادِي، رَفَعَت طَرفَ دِرْعِهَا، ثُمَّ سَعَتْ سَعْيَ الإنْسَانِ المَجْهُودِ حَتَّى جَاوَزَتِ الوَادِي، ثُمَّ أَتَتِ المَرْوَةَ فَقَامَتْ عَلَيْهَا، فَنَظَرَتْ هَلْ تَرَى أَحَداً ؟ فَلَمْ تَرَ أَحَداً، فَفَعَلَتْ ذَلِكَ سَبْعَ مَرَّاتٍ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «فَلِذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا»، فَلَمَّا أَشْرَفَتْ عَلَى المَرْوَةِ سَمِعَتْ صَوْتاً، فَقَالَتْ : صَهْ - تُريدُ نَفْسَهَا - ثُمَّ تَسَمَّعَتْ، فَسَمِعَتْ أَيضاً، فَقَالَتْ : قَدْ أَسْمَعْتَ إنْ كَانَ عِنْدَكَ غَوَاثٌ، فَإِذَا هِيَ بِالمَلَكِ عِنْدَ مَوْضِعِ زَمْزَمَ، فَبَحَثَ بِعَقِبِهِ - أَوْ قَالَ بِجَنَاحِهِ - حَتَّى ظَهَرَ المَاءُ، فَجَعَلَتْ تُحَوِّضُهُ وَتَقُولُ بِيَدِهَا هَكَذَا، وَجَعَلَتْ تَغْرِفُ مِنَ المَاءِ فِي سِقَائِهَا وَهُوَ يَفُورُ بَعْدَ مَا تَغْرِفُ . وَفِي رِوَايَةٍ : بِقَدَرِ مَا تَغْرِفُ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «رَحِمَ اللهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ لَوْ تَرَكَتْ زَمْزَمَ أَوْ قَالَ لَوْ لَمْ تَغْرِفْ مِنَ المَاءِ - لَكَانَتْ زَمْزَمُ عَيْناً مَعِيناً» قَالَ: فَشَرِبَتْ وَأَرْضَعَتْ وَلَدَهَا، فَقَالَ لَهَا المَلَكُ : لاَ تَخَافُوا الضَّيْعَةَ فَإِنَّ هَاهُنَا بَيْتاً للهِ يَبْنِيهِ هَذَا الغُلاَمُ وَأَبُوهُ، وَإِنَّ اللهَ لاَ يُضَيِّعُ أَهْلَهُ، وَكَانَ البَيْتُ مُرْتَفِعاً مِنَ الأَرْضِ كَالرَّابِيَةِ، تَأتِيهِ السُّيُولُ، فَتَأخُذُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، فَكَانَتْ كَذَلِكَ حَتَّى مَرَّتْ بِهِمْ رُفْقَةٌ مِنْ جُرْهُمٍ، أَوْ أَهْلُ بَيْتٍ مِنْ جُرْهُمٍ مُقْبِلينَ مِنْ طَرِيقِ كَدَاءَ، فَنَزلُوا فِي أَسْفَلِ مَكَّةَ ؛ فَرَأَوْا طَائِراً عائِفاً، فَقَالُوا : إِنَّ هَذَا الطَّائِرَ لَيَدُورُ عَلَى مَاءٍ، لَعَهْدُنَا بِهَذا الوَادِي وَمَا فِيهِ مَاءٌ. فَأَرْسَلُوا جَرِيّاً أَوْ جَرِيَّيْنِ، فَإِذَا هُمْ بِالمَاءِ . فَرَجَعُوا فَأَخْبَرُوهُمْ ؛ فَأَقْبَلُوا وَأُمُّ إِسْمَاعِيلَ عِنْدَ المَاءِ، فَقَالُوا : أَتَأذَنِينَ لَنَا أَنْ نَنْزِلَ عِنْدَكِ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، وَلَكِنْ لاَ حَقَّ لَكُمْ فِي المَاءِ، قَالُوا : نَعَمْ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «فَأَلْفَى ذَلِكَ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، وَهِيَ تُحِبُّ الأُنْسَ» فَنَزَلُوا، فَأَرْسَلُوا إِلَى أَهْلِهِمْ فَنَزَلُوا مَعَهُمْ، حَتَّى إِذَا كَانُوا بِهَا أَهْلَ أَبْيَاتٍ وَشَبَّ الغُلاَمُ وَتَعَلَّمَ العَرَبِيَّةَ مِنْهُمْ، وَأَنْفَسَهُمْ وَأَعْجَبَهُمْ حِيْنَ شَبَّ، فَلَمَّا أَدْرَكَ زَوَّجُوهُ امْرَأةً مِنْهُمْ : وَمَاتَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَاءَ إِبْرَاهِيمُ بَعْدَما تَزَوَّجَ إِسْمَاعِيلُ يُطَالِعُ تَرِكَتَهُ، فَلَمْ يَجِدْ إِسْمَاعِيلَ ؛ فَسَأَلَ امْرَأتَهُ عَنْهُ فَقَالَتْ : خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا - وفي روايةٍ : يَصِيدُ لَنَا - ثُمَّ سَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ : نَحْنُ بِشَرٍّ، نَحْنُ فِي ضِيقٍ وَشِدَّةٍ ؛ وَشَكَتْ إِلَيْهِ، قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ اقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ، وَقُولِي لَهُ يُغَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِهِ . فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ كَأَنَّهُ آنَسَ شَيْئاً، فَقَالَ: هَلْ جَاءَكُمْ مِنْ أَحَدٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، جَاءَنا شَيْخٌ كَذَا وَكَذَا، فَسَأَلَنَا عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَسَأَلَنِي : كَيْفَ عَيْشُنَا، فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا في جَهْدٍ وَشِدَّةٍ . قَالَ: فَهَلْ أَوْصَاكِ بِشَيءٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ السَّلاَمَ، وَيَقُولُ : غَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكَ أَبِي وَقَدْ أَمَرَنِي أَنْ أُفَارِقَكِ ! اِلْحَقِي بِأَهْلِكِ . فَطَلَّقَهَا وَتَزَوَّجَ مِنْهُمْ أُخْرَى، فَلَبِثَ عَنْهُمْ إِبْرَاهِيمُ مَا شَاءَ اللهُ، ثُمَّ أَتَاهُمْ بَعْدُ فَلَمْ يَجِدْهُ، فَدَخَلَ عَلَى امْرَأتِهِ فَسَألَ عَنْهُ . قَالَتْ : خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا قَالَ: كَيفَ أنْتُمْ ؟ وَسَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ : نَحْنُ بِخَيرٍ وَسَعَةٍ، وَأَثْنَتْ عَلَى اللهِ . فَقَالَ: مَا طَعَامُكُمْ ؟ قَالَتْ : اللَّحْمُ، قَالَ: فمَا شَرَابُكُمْ ؟ قَالَت : الماءُ، قَالَ: اَللهم بَارِكْ لَهُمْ فِي اللَّحْمِ وَالمَاءِ. قَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم : وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ يَوْمَئِذٍ حَبٌّ وَلَوْ كَانَ لَهُمْ دَعَا لَهُمْ فِيهِ، قَالَ: فَهُمَا لاَ يَخْلُو عَلَيْهِمَا أَحَدٌ بِغَيْرِ مَكَّةَ إِلاَّ لَمْ يُوَافِقَاهُ . وَفِي رواية : فَجَاءَ فَقَالَ: أَيْنَ إِسْمَاعِيلُ ؟ فَقَالَتْ امْرأتُهُ : ذَهَبَ يَصِيدُ ؛ فَقَالَتِ امْرَأتُهُ : أَلاَ تَنْزِلُ، فَتَطْعَمَ وَتَشْرَبَ ؟ قَالَ: وَمَا طَعَامُكُمْ وَمَا شَرَابُكُمْ ؟ قَالَتْ : طَعَامُنَا اللَّحْمُ وَشَرَابُنَا المَاءُ، قَالَ: اَللهم بَارِكْ لَهُمْ فِي طَعَامِهِمْ وَشَرابِهِمْ . قَالَ: فَقَالَ أَبُو القَاسِمِ صلى الله عليه وسلم : بَرَكَةُ دَعوَةِ إبْرَاهِيمَ . قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَاقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ وَمُرِيِهِ يُثَبِّتُ عَتَبَةَ بَابِهِ. فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ قَالَ: هَلْ أَتَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، أَتَانَا شَيْخٌ حَسَنُ الهَيْئَةِ، وَأثْنَتْ عَلَيْهِ، فَسَألَنِي عَنْكَ فَأَخْبَرتُهُ، فَسَألَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا بِخَيْرٍ . قَالَ: فَأَوْصَاكِ بِشَيءٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلاَمَ وَيَأمُرُكَ أَنْ تُثَبِّتَ عَتَبَةَ بَابِكَ . قَالَ: ذَاكَ أَبِي، وَأَنْتِ العَتَبَةُ، أَمَرَنِي أَنْ أُمْسِكَكِ . ثُمَّ لَبِثَ عَنْهُمَ مَا شَاءَ اللهُ، ثُمَّ جَاءَ بَعدَ ذَلِكَ وَإِسْمَاعِيلُ يَبْرِي نَبْلاً لَهُ تَحْتَ دَوْحَةٍ قَريباً مِنْ زَمْزَمَ، فَلَمَّا رَآهُ قَامَ إِلَيْهِ، فَصَنَعَا كَمَا يَصْنَعُ الوَالِدُ بِالوَلَدِ وَالوَلَدُ بِالوَالدِ . قَالَ: يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِأَمْرٍ، قَالَ: فَاصْنَعْ مَا أمَرَكَ رَبُّكَ ؟ قالَ : وَتُعِينُنِي، قَالَ: وَأُعِينُكَ، قَالَ: فَإِنَّ اللهَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِي بَيْتاً هَاهُنَا، وَأَشَارَ إِلَى أَكَمَةٍ مُرْتَفِعَةٍ عَلَى مَا حَوْلَهَا، فَعِنْدَ ذَلِكَ رَفَعَ القَوَاعِدَ مِنَ البَيْتِ، فَجَعَلَ إِسْمَاعِيلُ يَأتِي بِالحِجَارَةِ وَإِبْرَاهِيمُ يَبْنِي حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَ البِنَاءُ، جَاءَ بِهذَا الحَجَرِ فَوَضَعَهُ لَهُ فَقَامَ عَلَيْهِ، وَهُوَ يَبْنِي وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ وَهُمَا يَقُولاَنِ: ﴿رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾ [البقرة: ١٢٧] وفي روايةٍ : إِنَّ إِبْرَاهِيمَ خَرَجَ بِإِسْمَاعِيلَ وَأُمِّ إِسْمَاعِيلَ، مَعَهُمْ شَنَّةٌ فِيهَا مَاءٌ، فَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تَشْرَبُ مِنَ الشَّنَّةِ فَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ، فَوَضَعَهَا تَحْتَ دَوْحَةٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِبْرَاهِيمُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاتَّبَعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ حَتَّى لَمَّا بَلَغُوا كَدَاءَ نَادَتْهُ مِنْ وَرَائِهِ : يَا إِبْرَاهِيمُ إِلَى مَنْ تَتْرُكُنَا ؟ قَالَ: إِلَى اللهِ، قَالَتْ : رَضِيْتُ بِاللهِ، فَرَجَعَتْ وَجَعَلَتْ تَشْرَبُ مِنَ الشِّنَّةِ وَيَدُرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى لَمَّا فَنِيَ المَاءُ قَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَداً . قَالَ: فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا، فَنَظَرَتْ وَنَظَرَتْ هَلْ تُحِسُّ أَحَداً، فَلَمْ تُحِسَّ أَحَداً، فَلَمَّا بَلَغَتِ الوَادِيَ سَعَتْ، وَأَتَتِ المَرْوَةَ، وَفَعَلَتْ ذَلِكَ أَشْوَاطَاً، ثُمَّ قَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ الصَّبِيُّ، فَذَهَبَتْ فَنَظَرَتْ فَإِذَا هُوَ عَلَى حَالِهِ، كَأنَّهُ يَنْشَغُ لِلْمَوْتِ، فَلَمْ تُقِرَّهَا نَفْسُهَا فَقَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَداً، فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا، فَنَظَرَتْ وَنَظَرَتْ فَلَمْ تُحِسَّ أَحَداً، حَتَّى أَتَمَّتْ سَبْعاً، ثُمَّ قَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ، فَإِذَا هِيَ بِصَوْتٍ، فَقَالَتْ : أَغِثْ إِنْ كَانَ عِنْدَكَ خَيْرٌ، فَإِذَا جِبْرِيلُ عليه السلام فَقَالَ بِعقِبِهِ هَكَذَا، وَغَمَزَ بِعَقِبِهِ عَلَى الأَرْضِ، فَانْبَثَقَ المَاءُ فَدَهِشَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَعَلَتْ تَحْفِنُ وَذَكَرَ الحَديثَ بِطُولِهِ، رواه البخاري بهذه الروايات كلها.
(370) Chapter: Ahadith about Dajjal and Portents of the Hour
Ibn 'Abbas (May Allah be pleased with them) reported:
Ibrahim (ﷺ) brought his wife and her son Isma'il (ﷺ), while she was suckling him, to a place near the Ka'bah under a tree on the spot of Zamzam, at the highest place in the mosque. In those days, there was no human being in Makkah, nor was there any water. So he made them sit over there and placed near them a leather bag containing some dates, and a small water-skin containing some water, and set out homeward. Isma'il's mother followed him saying: "O Ibrahim! Where are you going, leaving us in this valley where there is no person whose company we may enjoy, nor is there anything (to enjoy)?" She repeated that to him many times, but he did not look back at her. Then she asked him: "Has Allah commanded you to do so?" He said: "Yes." She said: "Then He will not neglect us." She returned while Ibrahim proceeded onwards. Having reached the Thaniya, where they could not see him, he faced Ka'bah, raised his both hands and supplicated: "O our Rubb! I have made some of my offspring to dwell in an uncultivable valley by Your Sacred House (the Ka'bah at Makkah) in order, O our Rubb, that they may perform As-Salat (Iqamat-as-Salat). So fill some hearts among men with love towards them, and (O Allah) provide them with fruits so that they may give thanks." (14:37).
Isma'il's mother went on suckling Isma'il and drinking from the water which she had. When the water in the water-skin had all been used up, she became thirsty and her child also became thirsty. She started looking at Isma'il, tossing in agony. She left him, for she could not endure looking at him, and found that the mountain of As-Safa was the nearest mountain to her on that land. She stood on it and started looking at the valley keenly so that she might see somebody, but she could not see anybody. Then she descended from As-Safa, and when she reached the valley, she tucked up her robe and ran in the valley like a person in distress and trouble till she crossed the valley and reached Al-Marwah mountain where she stood and started looking, expecting to see somebody, but she could not see anybody. She repeated that (running between As-Safa and Al-Marwah) seven times." Ibn 'Abbas further related: The Prophet (ﷺ) said, "This is the source of the tradition of the Sa'y - i.e., the going of people between the two mountains. When she reached Al-Marwah (for the last time), she heard a voice and she exclaimed: 'Shshs!' (Silencing herself) and listened attentively. She heard the voice again and said: 'O (whoever you may be) You have made me hear your voice; have you any succour for me?' And behold! She saw an angel at the place of Zamzam, digging the earth with his heel (or with his wing), till water flowed out from that place. She started to make something like of a basin around it, using her hands in this way and began to fill her water- skin with water with her hands, and the water was flowing out until she had scooped some of it." The Prophet (ﷺ) further said, "May Allah bestow mercy on Isma'il's mother! Had she let the Zamzam flow without trying to control it (or had she not scooped in that water) while filling her water-skin, Zamzam would have been a stream flowing on the surface of the earth." The Prophet (ﷺ) further added, "Then she drank (water) and suckled her child. The angel said to her: 'Do not be afraid of being neglected, for this is the site on which the House of Allah will be built by this boy and his father, and Allah will never let neglected His people.' The House of Allah (the Ka'bah) at that time was on a high place resembling a hillock, and when torrents came, they flowed to its right and left. She continued living in that way till some people from the tribe of Jurhum passed by her and her child. As they were coming from through the way of Kada', in the lower part of Makkah where they saw a bird that had a habit of flying around water and not leaving it. They said: 'This bird must be flying over water, though we know that there is no water in this valley.' They sent one or two messengers who discovered the source of water, and returned to inform them of the water. So, they all came towards the water." The Prophet (ﷺ) added, "Isma'il's mother was sitting near the water. They asked her: 'Do you allow us to stay with you?' She replied: 'Yes, but you will have no right to possess the water.' They agreed to that." The Prophet (ﷺ) further said, "Isma'il's mother was pleased with the whole situation as she used to love the company of the people. So, they settled there, and later on they sent for their families who came and settled with them. The child (i.e., Isma'il) grew up and learnt Arabic from them (his virtues) caused them to love and admire him as he grew up, and when he reached the age of puberty, they gave him one of their daughters in marriage. After Isma'il's mother had died, Ibrahim came after Isma'il's marriage in order to see his family that he had left before, but he did not find Isma'il there. When he asked Isma'il's wife about him, she replied: 'He has gone in search of our livelihood.' Then he asked her about their way of living and their condition, and she replied complaining to him: 'We are living in hardship, misery and destitution.' He said: 'When your husband returns, convey my salutations to him and tell him to change the threshold of the door of his house.' When Isma'il came, he seemed to have perceived something unusual. He asked his wife: 'Did anyone visit you?' She replied: 'Yes, an old man of such and such description came and asked me about you and I informed him, and he asked about our state of living, and, I told him that we were living in hardship and poverty.' Thereupon Isma'il said: 'Did he advise you anything?' She replied: 'Yes, he told me to convey his salutations to you and to change the threshold of your door.' Isma'il said: 'That was my father, and he has ordered me to divorce you. Go back to your family.' So Isma'il divorced her and married another woman from amongst them (Jurhum). Then Ibrahim stayed away from them for a period as long as Allah wished, and called on them again but did not find Isma'il. So he came to Isma'il's wife and asked her about him. She said: 'He has gone in search of our livelihood.' Ibrahim asked her about their sustenance and living: 'How are you getting on?' She replied: 'We are prosperous and well off.' Then she praised Allah, the Exalted. Ibrahim asked: 'What kind of food do you eat?' She said: 'Meat.' He said: 'What do you drink?' She said: 'Water.' He said, 'O Allah! Bless their meat and water!"' The Prophet (ﷺ) added, "At that time they did not have grain, and if they had grain, he would have also invoked Allah to bless it." The Prophet (ﷺ) further said, "If somebody has only these two things as his sustenance, his health and disposition will be badly affected because these things do not suit him unless he lives in Makkah." The Prophet (ﷺ) added, "Then Ibrahim said to Isma'il's wife, 'When your husband comes, give my regards to him and tell him that he should keep firm the threshold of his door.' When Isma'il came back, he asked his wife: 'Did anyone call on you?' She replied: 'Yes, a good looking old man came to me.' She praised him and added: 'He asked about you, and I informed him, and he asked about our livelihood and I told him that we were in good condition.' Isma'il asked her: 'Did he give you a piece of advice?' She said: 'Yes, he told me to convey his regards to you and ordered that you should keep firm the threshold of your door.' On that Isma'il said: 'He was my father and you are the threshold of the door. He has ordered me to keep you with me.' Then Ibrahim stayed away from them for a period as long as Allah wished and called on them afterwards. He saw Isma'il under a tree near Zamzam, sharpening his arrows. When he saw Ibrahim, he rose up to welcome him, and they greeted each other as a father does with his son or a son does with his father. Ibrahim said: 'O Isma'il! Allah has given me an order.' Isma'il said: 'Do what your Rubb has commanded you to do.' Ibrahim asked: 'Will you help me?' Isma'il said: 'I will help you.' Ibrahim said: 'Allah has ordered me to build a house here, pointing to a hillock higher than the land surrounding it."' The Messenger of Allah (ﷺ) added, "Then they raised the foundations of the House (i.e., Ka'bah). Isma'il brought the stones and Ibrahim was building (the house). When the walls became high, Isma'il brought stone and placed it for Ibrahim who stood over it and carried on building the House, while Isma'il was handing over the stones to him, both of them prayed: 'O our Rubb! Accept this service from us! Verily, You are the All- Hearer and the All-Knower."'
[Al-Bukhari].
There are some more narrations about this incident, some adding details and some with minor variations in the wordings.
Commentary:
1. In this narration, there is the historical background of walking briskly between the hills of As-Safa and AlMarwah. This ritual of Hajj and `Umrah has been fixed as a remembrance of the incident about what Hajirah (May Allah be pleased with her) had to face and what she did in the difficult circumstances. In fact, she was so pious and obedient that she agreed to live in such wilderness where there was no sign of any human being far and wide.
Secondly, there was no water to drink or food for subsistence. For this act of piety, she was rewarded with two things; firstly, she was bestowed with an eternally flowing spring which proved for her at that moment a source of life, and people still benefit from it today. Secondly, her brisk movement and running between the two hills was made an important and compulsory ritual to be performed during Hajj and `Umrah. This ritual is to continue for all times till the Day of Resurrection.
2. Ka`bah was built by Prophet Ibrahim and Prophet Isma`il.
3. Thanking Allah under all circumstances is an act of praise and piety while the reverse of this attitude is disliked and considered reprehensible.
4. If a father asks his son to do something, then the child should respond to the father's request as long as he does not order him to disobey Allah.