৩৭১৮

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৮-[৫৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় শাসক হলেন দুনিয়াতে আল্লাহ তা’আলার ছায়ার ন্যায়। নির্যাতিত ও অত্যাচারিত বান্দাগণ শাসকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে। সুতরাং তিনি যদি ন্যায়পরায়ণতার পথ অবলম্বন করেন, তবে তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। আর প্রজাদের কর্তব্য হলো তার শুকরিয়া আদায় করা। আর তিনি যখন জুলুম ও অত্যাচার করেন তখন গুনাহের বোঝা তার ওপর বর্তাবে, এমতাবস্থায় প্রজাসাধারণের ধৈর্যধারণ করা উচিত।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ السُّلْطَانَ ظِلُّ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ يَأْوِي إِلَيْهِ كُلُّ مَظْلُومٍ مِنْ عِبَادِهِ فَإِذَا عَدَلَ كَانَ لَهُ الْأَجْرُ وَعَلَى الرَّعِيَّةِ الشُّكْرُ وَإِذَا جَارَ كَانَ عَلَيْهِ الْإِصْرُ وعَلى الرّعية الصَّبْر»

ব্যাখ্যা: এখানে (السُّلْطَانَ ظِلُّ اللّٰهِ) বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, (السُّلْطَانَ ظِلُّ الرَّحْمٰن) অর্থাৎ ‘সুলত্বন’ হলো জমিনে দয়াময়ের (আল্লাহর) ছায়া। কেননা সে জনসাধারণের কষ্ট দূর করে, যেমন ছায়া মানুষকে রৌদ্রের কষ্ট থেকে রক্ষা করে থাকে। ‘আরব পরিভাষায় ظِلُّ দ্বারা আশ্রয় এবং প্রতিরক্ষার পরোক্ষ অর্থ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাহলে অর্থ হয় যে, বাদশাহ হলেন দুনিয়ায় জনগণের আশ্রয়স্থল এবং বিপদ ও কষ্টের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা স্বরূপ।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ বাক্যটি তাশবীহ বা সাদৃশ্য বর্ণনার জন্য এসেছে। (يَأْوِى إِلَيْهِ كُلُّ مَظْلُومٍ مِنْ عِبَادِه) প্রত্যেক মাযলূম নির্যাতিত ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ বাক্যটিতে সাদৃশ্যতা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ যেমন সূর্যোত্তাপ থেকে রক্ষার জন্য ছায়ার ঠাণ্ডায় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে ঠিক তেমনি উৎপীড়িত মাযলূম মানুষ জুলুমের উত্তাপ থেকে রক্ষার জন্য বাদশাহর ন্যায় বিচারের স্নিগ্ধ ছায়াতলে আশ্রয় পেয়ে থাকে।

ছায়াকে আল্লাহর দিকে ইযাফত বা সম্পর্কিত করা অর্থাৎ ‘আল্লাহর ছায়া’ এ কথাটি তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যেমন বলা হয়, বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর, রূহুল্লাহ, নাকাতুল্লাহ ইত্যাদি। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে বলি তার (আল্লাহর) ‘ছায়া’ বলতে সৃষ্টির কোনো কিছুর দৃশ্যমান ছায়া সদৃশ নয়; বরং তাঁর মহান মর্যাদা অনুসারে তিনি বিশেষ গুণে একক ও অদ্বিতীয় এবং তাঁর স্বকীয় মর্যাদা অনুসারেই সেটি তার ক্ষেত্রে যেভাবে হওয়া প্রযোজ্য সেভাবেই। বাদশাহ যেমন দুনিয়াতে দুঃখ ও বেদনাক্লিষ্ট ব্যক্তির আশ্রয়স্থল, ঠিক তেমনি ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ কিয়ামতের দিন আল্লাহর ‘আরশের ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করবেন যেদিন ঐ ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না।

বাদশাহর ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের সুফল সে দুনিয়াতেও পাবে আখিরাতেও পাবে। আর যদি সে ন্যায় বিচার না করে এবং প্রজা সাধারণের ওপর জুলুম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অস্ত্রধারণ না করে সবর ইখতিয়ার করা উচিত। জুলুমের কারণে সেই গুনাহগার হবে এবং আল্লাহর দরবারে জওয়াবদিহিতার মুখোমুখি হবে।

হাদীসের এ বাণীতে ইশারা রয়েছে যে, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। আর যালিম বাদশাহ হলো আল্লাহর প্রতিশোধ, ঘৃণা ও পরীক্ষা।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী : ‘‘নিশ্চয় এতে তোমাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ৪৯)

‘‘নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ বান্দার জন্য রয়েছে নিদর্শন।’’ (সূরা লুকমান ৩১ : ৩১)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ঈমান দু’ভাগে বিভক্ত অর্ধেক হলো ধৈর্য আর অর্ধেক কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ আমাদের দু’টি বস্তুই গ্রহণের তাওফীক দান করুন।

(السُّلْطَانَ ظِلُّ اللّٰهِ) ‘বাদশাহ আল্লাহর ছায়া’ এ বাক্য দ্বারা যেমন বাদশাহর মহান মর্যাদা বুঝানো হয়ে থাকে ঠিক তাকে সম্মান করার ইঙ্গিতও এতে রয়েছে।

অত্র হাদীসে স্পষ্টই এসেছে, «مَنْ أَكْرَمَ سُلْطَانَ اللّٰهِ فِي الدُّنْيَا أَكْرَمَهُ اللّٰهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» যে দুনিয়াতে বাদশাহকে সম্মান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)