হাসান (Hasan) হাদিস পাওয়া গেছে 5052 টি

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮২৭-[৪০] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে সর্বোত্তম দান হলো তাঁবুর ছায়ার ব্যবস্থা করা এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধরত সৈনিকের সেবা-শশ্রুষার জন্য গোলাম দান করা অথবা আল্লাহর পথে পূর্ণ বয়স্কা (বাচ্চা প্রজননকারী অথবা সৈনিকের আরোহণের জন্য) উষ্ট্রী দান করা। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الصَّدَقَاتِ ظِلُّ فُسْطَاطٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمِنْحَةُ خَادِمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ طَرُوقَةُ فَحْلٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে তিনটি উৎকৃষ্ট ও সর্বোত্তম সাদাকা বা দান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো :

(এক) আল্লাহর রাস্তায় যারা কাজ করে তাদের অবস্থানস্থলকে ছায়াঘেরা করার জন্য ছোট বা বড় তাঁবু সাদাকা হিসেবে দেয়া, যা সফরে থাকাকালীন সময়ে বিশেষ সময়ে বিশ্রাম নেয়া বা রাত্রিযাপন করার জন্য স্থাপন করা হয়। فُسْطَاطٍ ‘‘ফুসত্বাত্ব’’ বলা হয় এমন তাঁবুকে, যার চারপাশে বেষ্টনী দেয়া হয় না; বরং স্থানটিকে ছায়াবিশিষ্ট করার জন্য শুধুমাত্র উপরে ছাউনি দেয়া হয়। তাহযীব গ্রন্থে বলা হয়েছে, পশমের তৈরি ঘরকে ‘‘ফুস্ত্বাত্ব’’ বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(দুই) আল্লাহর রাস্তায় কারো খিদমাতের জন্য খাদেম বা সেবক দান করা।

(وَمِنْحَةُ خَادِمٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) এর অর্থ হলো আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া কোনো ব্যক্তিকে কোনো খাদেমের মালিক বানিয়ে দেয়া বা খাদেম ধার দেয়া। এখান থেকে বুঝা যায় যে, নিজে কারো খিদমাত করাটা আরো বেশী উত্তম ও অধিক সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(তিন) আল্লাহর রাস্তায় কোনো মুজাহিদকে সফর করার জন্য বাহন দান করা।

(طَرُوْقَةُ فَحْلٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) অর্থ হলো আল্লাহর রাস্তায় সওয়ারী বা বাহন দান করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৩০-[৪৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী পাহাড়ের সংকীর্ণ পথ অতিক্রমকালে সুমিষ্ট পানির এক ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি আনন্দে আতিশয্যে বলে ফেললেন যে, কতই না উত্তম হতো আমি যদি লোকালয় ছেড়ে এ পাহাড়ে বসবাস করতে পারতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাহাবীর এ আকাঙ্ক্ষার প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (সাবধান) ঐরূপ কামনা করো না। কেননা তোমাদের কারও আল্লাহর পথে অবস্থান (জিহাদে শামিল থাকা) স্বীয় বাড়ীতে সত্তর বছরের সালাত আদায় অপেক্ষা সর্বোত্তম। তোমরা কি এটা প্রত্যাশা কর না যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করান? তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে উষ্ট্রী দোহনের বিরতির ন্যায়ও যদি কিছু সময় যুদ্ধ করে, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَن أبي هريرةَ قَالَ: مَرَّ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِعْبٍ فِيهِ عُيَيْنَةٌ مِنْ مَاءٍ عَذْبَةٌ فَأَعْجَبَتْهُ فَقَالَ: لَوِ اعْتَزَلْتُ النَّاسَ فَأَقَمْتُ فِي هَذَا الشِّعْبِ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَا تَفْعَلْ فَإِنَّ مَقَامَ أَحَدِكُمْ فِي سَبِيلِ الله أفضل من صلَاته سَبْعِينَ عَامًا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَيُدْخِلَكُمُ الْجَنَّةَ؟ اغْزُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبت لَهُ الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসটি থেকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ফাযীলাতের পরিমাণ সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়।

شِعْبٍ বলা হয় দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী গিরিপথকে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : ‘‘তুমি সেখানে থেকো না’’ এর দ্বারা তিনি সাহাবীকে সেখানে থাকতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ জিহাদ করা ফরয, আর ফরয ছেড়ে নফল ‘ইবাদাতের জন্য নিজেকে আলাদা রাখা অবাধ্যতার শামিল।

ইবনুল মালিক ত্বীবী (রহঃ)-এর কথা নকল করে বলেন, ‘‘উক্ত সাহাবী জিহাদ শেষ করে সেখানে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছিল, ঠিক সেভাবে যেভাবে আবেদ সাধকগণ নির্জনতা অবলম্বন করে থাকেন।

সত্তর বছর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সময়ের আধিক্য বুঝানো; কোনো সময়কে সীমাবদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৩১-[৪৪] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একদিনের সীমান্ত পাহারা দেয়া, অন্য সকল পুণ্যকর্মের তুলনায় এক হাজার দিনের চেয়ে উত্তম। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ يَوْمٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَنَازِلِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে একদিন ‘‘রিবাত্ব’’ তথা মুসলিম সেনাদের পাহাড়ায় নিয়োজিত থাকার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং এটাকে হাজার দিন অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

(مِنَ الْمَنَازِلِ) এ বাক্যের ব্যাখ্যায় মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ ‘‘এ কথার দ্বারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে মুজাহিদদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর আকলী ও নকলী দলীল বিদ্যমান রয়েছে। আর এটা রিবাত্বের অন্য আরেকটি তাফসীর তথা ‘‘সালাতের জন্য মসজিদে অপেক্ষা করাও রিবাত্ব’’ এ অর্থ নিতেও বাধা সৃষ্টি করে না। এখানে رِبَاطُ ‘রিবাত্ব’ বলতে জিহাদে আকবার তথা ময়দানের বড় জিহাদকে বুঝানো হয়েছে। আর অন্য হাদীসে এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করাকে রিবাত্ব বলার অর্থ হলো তা জিহাদে আসগার। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৬৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উসমান ইবন আফফান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৩৭-[৫০] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা এবং দু’টি দাগের (চিহ্নের) চেয়ে পছন্দনীয় অন্য কিছুই নয়। ফোঁটা দু’টির একটি হলো আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনরত অশ্রুর ফোঁটা, অপরটি হলো আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর দাগ দু’টির একটি আল্লাহর পথে (জিহাদে) আহত হওয়ার দাগ, অপরটি ফরয ’ইবাদাতসমূহের কোনো একটি আদায়ের দাগ। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ: قَطْرَةِ دُمُوعٍ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَقَطْرَةِ دَمٍ يُهْرَاقُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَمَّا الْأَثَرَانِ: فَأَثَرٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَثَرٌ فِي فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ تَعَالَى . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে শরীরের এক ফোঁটা রক্ত প্রবাহিত হওয়ার বিশেষ মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে।

এ হাদীসে ‘‘আল্লাহর রাস্তায়’’ কথাটি ‘আম্ তথা ব্যাপকার্থবোধক। অর্থাৎ এখানে জিহাদ ছাড়া অন্যান্য কল্যাণকার কাজও উদ্দেশে হতে পারে, যা আল্লাহর জন্য করা হয়। এই হাদীসে চোখের পানি বুঝাতে বহুবচন ব্যবহার করার কারণ হলো তা সাধারণত পরিমাণে বেশী হয়। আর তার তুলনায় রক্তের পরিমাণ কম হয়। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘চোখের পানির ফোঁটা’’ বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। আর রক্তের ফোঁটা বুঝাতে একবচন ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের এক ফোঁটা রক্তের দাম অনেক ফোঁটা চোখের পানি অপেক্ষা বেশী।

আল্লাহর রাস্তায় আলামাত বা চিহ্ন হতে পারে মসজিদের দিকে যাওয়ার কারণে ধূলোমলিন হওয়া, হতে পারে যুদ্ধের ময়দানে প্রাপ্ত ক্ষত বা আঘাত এবং ‘ইলম অন্বেষণের কাজে বের হওয়ার ফলে কোনো চিহ্ন বা আলামাত।

(وَأَثَرٌ فِىْ فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللّٰهِ تَعَالٰى) তথা ‘‘আল্লাহর কোনো ফরয বিধান পালনে কোনো আলামাত বা চিহ্ন’’ এ বাক্যে বুঝানো হয়েছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় উযূ করার কারণে হাত-পা ফেঁটে যাওয়া বা উযূর ভিজা অংশ অবশিষ্ট থাকা। কিংবা খুব গরমে সিজদা করার কারণে কপাল পুড়ে দাগ হয়ে যাওয়া। অথবা সিয়াম পালনের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া বা হজে/হজ্জের সফরের কারণে পা ধূলোমলিন হওয়া। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৬৯)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৩৯-[৫২] উম্মু হারাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নৌযানে সফরকালীন মাথার চক্করের ফলে বমি (ইত্যাদি সমস্যা) হলে একজন শাহীদের ন্যায় সাওয়াবের অধিকারী হবে, আর সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুবরণ করলে দু’জন শাহীদের সমপরিমাণ সাওয়াব অর্জিত হবে। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَن أم حرَام عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمَائِدُ فِي الْبَحْرِ الَّذِي يُصِيبُهُ الْقَيْءُ لَهُ أَجْرُ شَهِيدٍ وَالْغَرِيقُ لَهُ أَجْرُ شَهِيدَيْنِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: হাদীসের বাণী (الْمَائِدُ فِى الْبَحْرِ الَّذِىْ يُصِيبُهُ الْقَيْءُ) অর্থাৎ- যখন সমুদ্রের বাতাসে তার মাথা এপাশে ওপাশে নড়াচড়া করে ও নূয়ে পড়ে আর ঢেউয়ের তালে নৌযান এদিকে ওদিকে নড়াচড়া করে।

মুযহির বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি সমুদ্রে আরোহণ করে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে সে একজন শাহীদের সমান প্রতিদান পাবে। কারণ তার সমুদ্রে সফরটা ছিল আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে। যেমন ব্যক্তি সমুদ্র পথে সফর করে থাকে যুদ্ধের জন্য, হজে/হজ্জের জন্য, ‘ইলম অর্জনের জন্য এবং ব্যবসার জন্য- যদি তার আর কোনো রাস্তা না থাকে। কিন্তু যদি সে শুধু তার মাল বৃদ্ধির জন্য সফর করে তাহলে এ মর্যাদা পাবে না। তাছাড়া খাবারের জন্যও যদি সফর করে তবুও শাহীদের মর্যাদা পাবে’’।

আলোচ্য ব্যক্তি শাহীদের মর্যাদা লাভের কারণ দু’টি, একটি হলো তার আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের কারণে, আর অপরটি হলো ডুবে মারা যাওয়ার কারণে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৪৫-[৫৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! কোনো লোক যদি আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে এবং দুনিয়ার ধন-সম্পদ (গনীমাত) প্রাপ্তির লোভও রাখে (তবে তার কি কোনো সাওয়াব মিলবে)? তদুত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার কোনো সাওয়াব নেই। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رسولَ الله رجلٌ يُرِيدُ الْجِهَادَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَهُوَ يَبْتَغِي عَرَضاً من عرَضِ الدُّنْيَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا أجر لَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটিতেও পার্থিব ভোগ্য সামগ্রী বা সুনাম সুখ্যাতি অর্জনের উদ্দেশে জিহাদে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির পরকালীন প্রতিদান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সতর্কবাণী তুলে ধরা হয়েছে।

হাদীসের উক্তি (مِنْ عَرَضِ الدُّنْيَا) অর্থাৎ- সে দুনিয়ার সম্পদ থেকে পারিশ্রমিক বা বিনিময়ের আশা করে, অথবা পার্থিব সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এ উদ্দেশে জিহাদ করলে সে কোনো পরকালীন প্রতিদান পাবে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: لَا أَجْرَ لَه তথা ‘‘তার জন্য কোনো প্রতিদান নেই’’ এ বাক্যের উদ্দেশ্য হলো, সে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ না করে তাহলে পরকালে তার জন্য কোনো পুরস্কার বা প্রতিদান নেই। আর যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে যুদ্ধ করে এবং গনীমাত লাভেরও আশা করে, তাহলে সে নিঃসন্দেহে এর প্রতিদান পরকালে পাবে। তবে যে ব্যক্তি গনীমাতের আশা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যুদ্ধ করবে তার তুলনায় ঐ ব্যক্তির প্রতিদান বা সাওয়াব কম হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ দুনিয়া কামনা করে (গনীমাতের আশা করে) এবং কেউ শুধু পরকাল কামনা করে’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৫২)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৪৬-[৫৯] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিহাদ দু’ প্রকারের হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় জিহাদ করে, ইমামের (নেতার) আনুগত্য প্রদর্শনের সাথে সাথে স্বীয় ধন-সম্পদ খরচ করে, সহচরদের সাথে সদাচরণ করে এবং অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হতে দূরে থেকে জিহাদে শরীক হয়- তাহলে ঐ ব্যক্তির নিদ্রা-জাগরণ সবই সাওয়াবে পরিণত হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অহংকার, বীরত্ব প্রকাশ ও সুনাম-সুখ্যাতি লাভের জন্য জিহাদ করে, আর ইমামের আনুগত্যের খিলাফ করে এবং জমিনে অনিয়ম-অরাজকতা সৃষ্টি করে, সে জিহাদ থেকে ন্যূনতম সাওয়াব নিয়েও ফিরবে না। (মালিক, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ مُعَاذٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْغَزْوُ غَزْوَانِ فَأَمَّا مَنِ ابْتَغَى وَجْهَ اللَّهِ وَأَطَاعَ الْإِمَامَ وَأَنْفَقَ الْكَرِيمَةَ وَيَاسَرَ الشَّرِيكَ واجتنبَ الْفساد فَإِن نَومه ونهبه أَجْرٌ كُلُّهُ. وَأَمَّا مَنْ غَزَا فَخْرًا وَرِيَاءً وَسُمْعَةً وَعَصَى الْإِمَامَ وَأَفْسَدَ فِي الْأَرْضِ فَإِنَّهُ لَمْ يَرْجِعْ بِالْكَفَافِ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের অবস্থার ভিন্নতা বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া এখানে লোক দেখানোর জন্য বা পার্থিব কোনো মর্যাদা লাভের উদ্দেশে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং এর কঠিন পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদীসের প্রথমাংশে বর্ণিত উক্তি (اَلْغَزْوُ غَزْوَانِ) তথা ‘‘যুদ্ধ দুই প্রকারের’’, এ বাক্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কাযী ইয়ায বলেনঃ ‘‘এখানে যুদ্ধের দু’টি প্রকারের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে: একটি হচ্ছে ফরয তথা আবশ্যকীয় এবং অপরটি নফল তথা ঐচ্ছিক। কিন্তু পরবর্তী বাক্যে এ আলোচনা থেকে সরে গিয়ে যোদ্ধা বা মুজাহিদদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে’’। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَأَنْفَقَ الْكَرِيْمَةَ) তথা ‘‘সে উত্তম বস্তু আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছে’’ এখানে ‘‘কারীমাহ্’’ বলতে প্রতিটি বস্তুর সর্বোৎকৃষ্ট অংশকে বুঝানো হয়েছে। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ এখানে ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে তার সম্পদের মধ্য হতে উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে এবং নিজে স্বশরীরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

(وَاجْتَنَبَ الْفَسَادَ) এখানে উদ্দেশ্য হলো, সে যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করা ও কোনো কিছু বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে শারী‘আতে বর্ণিত সীমা অতিক্রম করে না। আর এমন কোনো কাজ করে না, যার কারণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা ফাসাদ সৃষ্টি হবে। কারণ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না’’। (সূরা আল বাকারা ২ : ৬০)

এর ভাবার্থ হলো, কেউ যদি উপরোল্লিখিত ত্রুটিগুলো থেকে যুদ্ধের ময়দানে মুক্ত থাকতে না পারে, তাহলে সে সেখান থেকে সমান সমান তথা নেকী অর্জন করেনি এবং পাপও হয়নি এমন অবস্থায়ও ফিরে আসতে পারবে না। বরং সে জিহাদের কোনো প্রতিদান তো পাবেই না, উল্টো গুনাহ উপার্জন করে ফিরবে। কারণ কোনো ক্ষেত্রে যদি আনুগত্য পুরোপুরি করা না যায়, তাহলে সেটা অবাধ্যতায় পরিণত হয়। আর আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি নিঃসন্দেহে পাপী। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১২)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৪৮-[৬১] ’উকবা ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোনো লোককে কোনো দায়িত্বে নিযুক্ত করি আর সে উক্ত দায়িত্ব পালনে গাফলতি (অবহেলা) করে, তবে কি তোমরা তাকে পদচ্যুত করে তার স্থলে এমন কোনো লোককে নিযুক্ত করতে সক্ষম, যে আমার নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করবে। (আবূ দাঊদ)[1]

আর ফাযালাহ্-এর হাদীস ’সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুজাহিদ যে তার নাফসের সাথে জিহাদ করে’ কিতাবুল ঈমানের মধ্যে বর্ণিত আছে।

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَن عقبَة بن مَالك عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أعجزتم إِذا بعثت رجلا فَم يَمْضِ لِأَمْرِي أَنْ تَجْعَلُوا مَكَانَهُ مَنْ يَمْضِي لِأَمْرِي؟» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَذَكَرَ حَدِيثَ فَضَالَةَ: «وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ» . فِي «كِتَابِ الْإِيمَانِ»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে এ কথা বলেন যে, যদি আমার প্রেরিত আমীর তোমাদের কাছে গিয়ে নিজ দায়িত্ব তথা আমার দেয়া ফায়সালা বাস্তবায়ন না করে তাহলে তোমরা তাকে অপসারণ করো এবং তার জায়গায় এমন কাউকে আমীর হিসেবে নিযুক্ত কর, যে এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে।

(أَنْ تَجْعَلُوْا مَكَانَه مَنْ يَمْضِىْ لِأَمْرِىْ؟) এর ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘‘আমি যদি কোনো আমীর নিযুক্ত করে তোমাদের নিকট প্রেরণ করি, আর সে যদি তোমাদের নিকট গিয়ে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে, তাহলে তোমরা তাকে অপসারণ করে তার জায়গায় অন্যকে নিযুক্ত কর। অথবা, আমি যদি কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তোমাদের নিকট কাউকে প্রেরণ করি, আর সে যদি ঐ সিদ্ধান্তের অবাধ্য হয়, তাহলে তোমরা তাকে অপসারণ কর।

ইবনুল মালিক বলেনঃ এর অর্থ হলো, ‘‘তোমরা তাকে অপসারণ করে তার স্থলে এমন কাউকে নিযুক্ত কর, যে আমার আদেশের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করবে’’। সুতরাং যদি কোনো আমীর তার প্রজাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করে এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণ না করে, তাহলে উক্ত আমীরকে তারা অপসারণ করবে এবং তার স্থলে অন্যকে বসাবে।

কারো মতে, যদি তাকে অপসারণ করতে গেলে ফিতনা বা রক্তপাতের আশংকা থাকে এবং যদি ঐ নেতা শুধুমাত্র সম্পদের ক্ষেত্রে যালিম হয়, তাহলে তাকে অপসারণ করা বৈধ হবে না। আর যদি সে অত্যাচারী নেতা অধিকহারে রক্তপাত ঘটায় এবং তাকে হত্যা করলে রক্তপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে এবং তার সহযোগীদেরকে জাতীয় স্বার্থে হত্যা করাও বৈধ। আর যদি উক্ত নেতাকে অপসারণ করলে রক্তপাত বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে তাকে হত্যা না করে অপসারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উকবাহ ইবনু আমির (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৩-[৬৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের ভাইয়েরা যখন উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের রূহগুলোকে (জান্নাতের) সবুজ পাখির অভ্যন্তরে স্থাপন করেন। আর এ পাখিগুলো জান্নাতের নহরসমূহে বিচরণ করে, জান্নাতের ফল-ফলাদি খায় এবং ’আরশের ছায়ায় স্বর্ণের ফানুসে ঝুলন্তরূপে অবস্থান করে। অতঃপর তারা যখন এরূপ সুমিষ্ট পানীয়, সুস্বাদু খাদ্য ও আরামদায়ক মনোমুগ্ধকর বিশ্রামাগার লাভ করবে, তখন তারা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বলে উঠবে, এমন কে আছে যে আমাদেরকে ভাইদের নিকট সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেবে, আমরা যে জান্নাতে জীবিত অবস্থান করছি তারা যাতে জান্নাত লাভে অবহেলিত না হয় এবং জিহাদের মাঠে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে। এমতাবস্থায় তাদের এ আকাঙ্ক্ষার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি তোমাদের পক্ষ হতে তাদের নিকট সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেব। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন, ’’যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযকপ্রাপ্ত হয়’’- (সূরা আ-লি ’ইমরান ৩ : ১৬৯)। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لِأَصْحَابِهِ: إِنَّهُ لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ يَوْمَ أُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظلِّ العرْشِ فلمَّا وجَدوا طِيبَ مأكَلِهِم ومشرَبِهمْ ومَقِيلهِم قَالُوا: مَنْ يُبلِّغُ إِخْوانَنا عنَا أَنَّنا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ لِئَلَّا يَزْهَدُوا فِي الْجَنَّةِ وَلَا يَنكُلوا عندَ الحربِ فَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنا أبلغكم عَنْكُمْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ)
إِلَى أخر الْآيَات)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে উহুদ যুদ্ধে শহীদদের আত্মার অবস্থা বর্ণনা করে সকল মুসলিমদের জিহাদের প্রতি এবং শাহাদাতের কামনা করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

(إِنَّه لَمَّا أُصِيْبَ إِخْوَانُكُمْ يَوْمَ أُحُدٍ) এ বাক্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে চেয়েছেন যে, যখন তোমাদের মুসলিম ভাইয়েরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিল। এ বাক্যের অর্থ হলো, তারা যখন শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভ করেছিল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১৭)

(جَعَلَ اللّٰهُ أَرْوَاحَهُمْ فِىْ جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ) অর্থাৎ- সবুজ রঙের পাখীর পেটের ভিতর তাদের অন্তরসমূহ স্থাপন করা হয়েছে, ফলে তা সজিবতা ফিরে পেয়েছে এবং জান্নাতে এদিক ওদিক ঘুরাফেরার সক্ষমতা লাভ করেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(فَلَمَّا وَجَدُوْا طِيْبَ مأكَلِهِمْ وَمَشْرَبِهِمْ ومَقِيْلِهِمْ) তথা যখন তারা তাদের উত্তম পানাহারের ব্যবস্থা এবং উৎকৃষ্ট আবাসস্থল পেয়ে গেল তখন তারা দুনিয়ায় জীবিত ভাইদের কাছে এ সংবাদ পাঠানোর আকাঙ্ক্ষা করল যে, তারা জান্নাতে জীবিত অবস্থায় রয়েছে। যাতে করে অন্যরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে উৎসাহিত হয়। ‘মাক্বীল’ শব্দের অর্থ হলো ঐ জায়গা যেখানে দ্বিপ্রহরের সময় বিশ্রাম নেয়া হয়।

(وَلَا يَنْكُلُوْا عِنْدَ الْحَرْبِ) এর অর্থ হলো, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ বা জিহাদ করার ক্ষেত্রে কাপুরুষতা প্রদর্শন না করে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৫-[৬৮] ’আব্দুর রহমান ইবনু আবূ ’আমীরহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিমকে আল্লাহ মৃত্যু দান করার পরে আবার তোমাদের মধ্যে (দুনিয়ায়) ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও দুনিয়া ও তার সমুদয় ধন-সম্পদের পরিমাণ তাকে দেয়া হয়, একমাত্র শাহাদাতবরণ ব্যতীত। ইবনু আবূ ’আমীরহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সমৃদ্ধ গ্রাম ও নগরের অধিবাসীর মালিক হওয়া অপেক্ষা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া আমার নিকট সর্বোত্তম। (নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عبدِ الرَّحمنِ بن أبي عَميرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنْ نَفْسٍ مُسْلِمَةٍ يَقْبِضُهَا رَبُّهَا تُحِبُّ أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْكُمْ وَأَنَّ لَهَا الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا غير الشَّهِيد» قَالَ ابْن عَمِيرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ أُقْتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ يَكُونَ لِي أَهْلُ الْوَبَرِ وَالْمَدَرِ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: আলোচনাধীন হাদীসে শাহীদের মর্যাদা আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তিই কেবল অফুরন্ত নি‘আমাত লাভের পরও পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে এসে আবার শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভের ইচ্ছা পোষণ করবে; অথচ সেখানে সে দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর তুলনায় বেশী নি‘আমাত পাবে।

(مَا مِنْ نَفْسٍ مُسْلِمَةٍ يَقْبِضُهَا رَبُّهَا) এ বাক্যে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা নিজে মানুষের মৃত্যু ঘটান। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কতিপয় ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহই আত্মাসমূহের মৃত্যু ঘটান, আর রূপকার্থে মালাকুল মাওত (ফেরেশতা) মৃত্যু ঘটায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(لَأَنْ أُقْتَلَ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ يَّكُوْنَ لِىْ أَهْلُ الْوَبَرِ وَالْمَدَرِ) এ বাক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ করা আমার নিকট আহলুল ওয়াবার ও আহলুল মাদার অপেক্ষা উত্তম’’। الوبر (আল ওয়াবার) শব্দের অর্থ পশম। এখানে أهل الوبر (আহলুল ওয়াবার) বলতে মরুভূমিতে বসবাসকারী বা যাযাবরদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, কারণ তাদের তাঁবুগুলো সাধারণত পশমের তৈরি হয়ে থাকে। আর المدر أهل (আহলুল মাদার) বলতে গ্রাম ও শহরে বসবাসকারীদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মোটকথা এখানে আহলুল ওয়াবার ও আহলুল মাদার বলতে দুনিয়া এবং তার মাঝে যত কিছু আছে সব কিছু উদ্দেশ্য। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়া এবং তার মাঝে থাকা সবকিছু অপেক্ষা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করা তার নিকট অধিক উত্তম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৮৫৯-[৭২] ’উতবাহ্ ইবনু ’আব্দুস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিহাদে নিহত ব্যক্তি তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে।

১- সেই প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তি, যে নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, শত্রুর মুকাবিলায় বীরদর্পে লড়াই করে, পরিশেষে শাহাদাত বরণ করে। এদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ ব্যক্তিই পরীক্ষিত শহীদ। সুতরাং ’আরশের নিচে আল্লাহর তাঁবুতে তাদেরই স্থান হবে। আর নবী-রসূলগণের মর্যাদা যে সমস্ত শাহীদের ওপর নাবূওয়াতের মর্যাদা ব্যতীত অধিক অন্য কোনো কিছু হবে না।

২- সেই মু’মিন ব্যক্তি, যে পাপ-পুণ্যের জীবন অতিবাহিত করেছে, আর নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে করতে শাহাদাত লাভ করেছে। তার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে পাপরাশি মোচনকারী শাহাদাত লাভ; যা তার অন্যায় ও অপরাধসমূহ মুছে দেয়। মূলত তরবারি হলো সকল গুনাহ মোচনকারী, ফলে সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা অনায়াসে প্রবেশ করবে।

৩- মুনাফিক (মুসলিম) নিজের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, এমনকি শত্রু মুকাবিলায় যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণও করে; কিন্তু সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কেননা তরবারি (মুনাফিকের) নিফাক দূরীভূত করতে পারে না। (দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عُتبةَ بن عبدٍ السَّلَميِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: الْقَتْلَى ثَلَاثَة: مُؤمن جَاهد نَفسه وَمَالِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ: «فَذَلِكَ الشَّهِيدُ الْمُمْتَحَنُ فِي خَيْمَةِ اللَّهِ تَحْتَ عَرْشِهِ لَا يَفْضُلُهُ النَّبِيُّونَ إِلَّا بِدَرَجَةِ النُّبُوَّةِ وَمُؤْمِنٌ خَلَطَ عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ» قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ: «مُمَصْمِصَةٌ مَحَتْ ذُنُوبَهُ وَخَطَايَاهُ إِنَّ السَّيْفَ مَحَّاءٌ لِلْخَطَايَا وَأُدْخِلَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَ وَمُنَافِقٌ جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَإِذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ فَذَاكَ فِي النَّارِ إِنَّ السيفَ لَا يمحُو النِّفاقَ» . رَوَاهُ الدارميُّ

ব্যাখ্যা: পূর্বোল্লিখিত হাদীসে জান্নাতী শহীদদের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হয়েছে। আর এ হাদীসে নিহত ব্যক্তিদের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথম প্রকার হলো মু’মিন, যে ‘আমলের দিক থেকে পূর্ণ নেক ‘আমলকারী। নিজের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার কারণে সে জান্নাতী হবে এবং জান্নাতে নাবীদের স্তরের সাথে শুধুমাত্র নাবূওয়াতের কারণে সামান্য পার্থক্য ব্যতীত অন্য কোনো পার্থক্য থাকবে না। আর নাবীগণের সাথে তাদের এই পার্থক্যের কারণ হলো, আম্বিয়াগণ তাদের উম্মাতকে আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন আর তারা তা পালন করে, ফলে আম্বিয়াগণ বেশী মর্যাদার অধিকারী হবেন।

(مُمَصْمِصَةٌ مَحَتْ ذُنُوْبَه وَخَطَايَاهُ) তথা তার শাহাদাত বরণ তার সকল গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দিবে। এখানে ممصمصة শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গে আনার কারণ হলো এর দ্বারা উদ্দেশ্য শাহাদাত বরণ করা। আর ‘আরবী ‘‘শাহাদাহ্’’ শব্দটি স্ত্রী লিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয়।

হাদীসের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে নিহত হওয়া সত্ত্বেও মুনাফিক জাহান্নামী হবে, কারণ তরবারি নিফাকের মতো পাপকে মিটিয়ে দিতে অক্ষম; যদিও তরবারি গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়। তবে আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো পাপী ও পথভ্রষ্ট লোকেদের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ আঞ্জাম দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ «وَإِنَّ اللّٰهَ لَيُؤَيِّدُ هٰذَا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ» অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পাপী ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাঁর দীনকে শক্তিশালী করেন’’- (সহীহুল বুখারী হাঃ ৩০৬২)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৭২-[১২] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা একটি তীরের বিনিময়ে তিন (শ্রেণীর) লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ১- তীর প্রস্তুতকারী, যে সাওয়াবের নিয়্যাতে তা প্রস্তুত করে। ২- তীর নিক্ষেপকারী ও ৩- তীর দানকারী। সুতরাং তোমরা তীর নিক্ষেপ ও সওয়ারীর (যুদ্ধযানের) প্রশিক্ষণ গ্রহণ কর। তবে তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ আমার নিকট তোমাদের সওয়ারীতে আরোহণ অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। তিনটি খেলা ছাড়া সকল প্রকারের খেলা যা লোকেরা খেলে থাকে তা অন্যায় ও বাতিল। ১- ধনুকের সাহায্যে তীর নিক্ষেপ করা। ২- ঘোড়ার প্রশিক্ষণ ও ৩- স্ত্রীর সঙ্গে আমোদণ্ডপ্রমোদ করা। এগুলো শারী’আতে বৈধ ও স্বীকৃত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

আর আবূ দাঊদ ও দারিমী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপের শিক্ষা গ্রহণ করার পর অবহেলা বা অনীহা প্রকাশ করে তা বর্জন করে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর একটি নি’আমাত পরিহার করল। অথবা বলেছেন, সে আল্লাহর নি’আমাতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।

عَن عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يُدْخِلُ بِالسَّهْمِ الْوَاحِدِ ثَلَاثَةَ نَفَرٍ الْجَنَّةَ: صَانِعَهُ يَحْتَسِبُ فِي صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ وَالرَّامِيَ بِهِ وَمُنَبِّلَهُ فَارْمُوا وَارْكَبُوا وَأَنْ تَرْمُوا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوا كُلُّ شَيْءٍ يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ إِلَّا رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ وَمُلَاعَبَتَهُ امْرَأَتَهُ فَإِنَّهُنَّ مِنَ الْحَقِّ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَزَادَ أَبُو دَاوُد والدارمي: «ومَنْ تركَ الرَّميَ بعدَ مَا عَلِمَهُ رَغْبَةً عَنْهُ فَإِنَّهُ نِعْمَةٌ تَرَكَهَا» . أَوْ قَالَ: «كفرها»

ব্যাখ্যা: (صَانِعَه يَحْتَسِبُ فِىْ صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ) তা প্রস্তুতকারী যে তা প্রস্তুত করার মাধ্যমে কল্যাণের আশা করে, অর্থাৎ যে তীরের কারণে তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে তার মধ্যে এক শ্রেণীর লোক তারা যারা তীর তৈরি করে এবং এর দ্বারা কল্যাণের তথা সাওয়াবের আশা করে।

(الرَّامِىَ بِه) তা নিক্ষেপকারী, অর্থাৎ তীর নিক্ষেপকারী যিনি তার তীর নিক্ষেপের দ্বারা সাওয়াবের আশা করে তিনিও জান্নাতে যাবেন।

(وَمُنَبِّلَه) তাকে তীর প্রদানকারী অর্থাৎ যিনি তীর নিক্ষেপকারীর হাতে তীর তুলে দেন সাওয়াবের প্রত্যাশায় তিনিও জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৫)

(ارْمُوْا وَارْكَبُوْا) তোমরা তীর নিক্ষেপ কর এবং (বাহনে) আরোহণ কর, শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে তীর নিক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং বাহনে আরোহণ করেও তীর নিক্ষেপ করবে। অর্থাৎ তোমরা যেমন তীর নিক্ষেপ করা শিখবে অনুরূপভাবে বাহনে আরোহণ করাও শিখবে যাতে বাহনে আরোহণ করে তীর নিক্ষেপ করতে পার।

ত্বীবী (রহ) বলেনঃ وَارْكَبُوْا দ্বারা উদ্দেশ্য বাহনে আরোহণ করে বর্শা নিক্ষেপ করা। অতএব হাদীসের পরবর্তী অংশ। (وَأَنْ تَرْمُوْا أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوْا) বর্শা নিক্ষেপ করার চাইতে তীর নিক্ষেপ করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। তবে হাদীসের প্রকাশমান অর্থ হলো তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ, বাহনে আরোহণের প্রশিক্ষণের চাইতে উত্তম। কেননা বাহনে আরোহণের প্রশিক্ষণের মধ্যে অহংকারিতা রয়েছে বিপরীতে শুধুমাত্র তীর নিক্ষেপের মধ্যে এ অহংকার নেই অথচ এর উপকারিতা ব্যাপক।

(মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৬; তুহফাতুল আহ্ওযাযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৭)

(كُلُّ شَيْءٍ يَلْهُوْ بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ إِلَّا) হাদীসে উল্লেখিত তিন প্রকার খেল-তামাশা বৈধ। তাছাড়া যত প্রকার খেলা আছে তা সবই বাতিল। অর্থাৎ তাতে কোনো সাওয়াব নেই। পক্ষান্তরে তীর নিক্ষেপ করা, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার উদ্দেশে ঘোড়দৌড় শিক্ষা এবং স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশা করার মধ্যে পূর্ণ সাওয়াব বিদ্যমান।

(مَنْ تَرَكَ الرَّمْىَ بَعْدَ مَا عَلِمَه رَغْبَةً عَنْهُ) যে ব্যক্তি তীর চালনা শিখার পর তা হতে বিমুখ হয়ে তা পরিত্যাগ করল, অর্থাৎ এ বিদ্যার প্রতি অমনোযোগী হয়ে তা ছেড়ে দিল।

(فَإِنَّه نِعْمَةٌ تَرَكَهَا) সে একটি নি‘আমাত ছেড়ে দিল অথবা সে এ নি‘আমাতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হলো। আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতকে অবহেলা করল। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৬)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উকবাহ ইবনু আমির (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৭৯-[১৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাল রংয়ের ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ ও বরকত রয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُمْنُ الْخَيْلِ فِي الشُّقْرِ» . رَوَاهُ الترمذيُّ وَأَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (يُمْنُ الْخَيْلِ فِى الشُّقْرِ) ‘‘লাল ঘোড়ার মধ্যেই বরকত আছে’’।

মুখতারুস্ সিহ্তাহ্-এর লেখক বলেন, الشُّقْرِ (আশকার) অর্থ রং। যে মানুষের চামড়া লাল-সাদা রং-এ মিশ্রিত ঐ মানুষকে বলা হয় الشُّقْرِ। আর ঘোড়া যদি ঝুটি ও তার লেজসহ সম্পূর্ণ লাল রং-এর হয় তাকে বলা হয় আশকার। আর ঝুটি ও লেজ যদি কালো হয় তাকে বলা হয় كُمَيْت (কুমায়ত)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৯৫)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৮৭-[২৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বড় পতাকাটি ছিল কালো বর্ণের এবং ছোট পতাকাটি ছিল সাদা বর্ণের। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
قَالَ: كَانَتْ رَايَةُ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ وَلِوَاؤُهُ أبيضَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছোট পতাকা ছিল কালো রং-এর আর বড় পতাকা ছিল সাদা বর্ণের। তূরিবিশতী বলেনঃ (رَايَةُ) ঐ পতাকাকে বলা হয় যা যুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নিকট থাকে যাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর (لِوَاء) বলা হয় আমীরের সেই পতাকাকে যা আমীরের সাথে থাকে।

সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ (رَايَةُ) বলা হয় ছোট পতাকাকে আর (لِوَاء) বলা হয় বড় পতাকাকে। এ ব্যাখ্যাকে ঐ হাদীস সমর্থন করে যাতে বলা হয়েছে, আমার হাতে থাকবে প্রশংসার পতাকা। আদম (আঃ) এবং অন্যরা কিয়ামতের দিন আমার পতাকা তলে থাকবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০৫)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৮৮-[২৮] মূসা ইবনু ’উবায়দাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মুহাম্মাদ ইবনু কাসিম-এর মুক্তকৃত গোলাম আমাকে বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ)-এর নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পতাকার (বর্ণের) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তা চতুষ্কোণ বিশিষ্ট কৃষ্ণ (কালো) বর্ণের যা নামিরাহ্ চাদর দ্বারা তৈরি ছিল। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ مَوْلَى مُحَمَّدِ بْنِ الْقَاسِمِ قَالَ: بَعَثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْقَاسِمِ إِلَى الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ يَسْأَلُهُ عَنْ رَايَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: كَانَتْ سَوْدَاءَ مُرَبَّعَةً مِنْ نَمِرَةٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (كَانَتْ سَوْدَاءَ مُرَبَّعَةً مِنْ نَمِرَةٍ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পতাকা ছিল চার কোণ বিশিষ্ট কালো বর্ণের যা নামিরাহ্ চাদর দ্বারা তৈরি ছিল। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ (سَوْدَاءَ) ‘‘কালো বর্ণের’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য উক্ত পতাকাতে কালো রং এর অংশ বেশী ছিল, দূর থেকে তাকে কালো রং এর দেখাতো তবে তা একেবারে খাঁটি কালো রং-এর ছিল না। কেননা হাদীসের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, (مِنْ نَمِرَةٍ) নামিরাহ্ দ্বারা তৈরি। নামিরাহ্ বলা হয় ঐ পশমী চাদরকে যার মধ্যে সাদা কালো ডোরা থাকে। আর এজন্যই একে নামিরাহ্ বলা হয়। কারণ নামিরাহ্ অর্থ নেকড়ে বাঘ যার গায়ে কালো ও সাদা ডোরা বিদ্যমান। নেকড়ের সদৃশ বলেই এ চাদরের নামকরণ করা হয়েছে নামিরাহ্। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৮৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৮০)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ

৩৮৮৯-[২৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেছেন যে, তার বড় পতাকাটি সাদা বর্ণের ছিল। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ جَابِرٌ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ مَكَّةَ وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: মক্কা প্রবেশের দিন তার পতাকা ছিল সাদা। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, (لِوَاء) বলা হয় বড় পতাকাকে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন তিনি যখন সেখানে প্রবেশ করেন তখন তার বড় পতাকাটি ছিল সাদা বর্ণের। তবে এ বর্ণনাটি সঠিক নয়। কেননা ইয়াহ্ইয়া ইবনু আদাম এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। শরীক-এর অন্যান্য একাধিক ছাত্র বর্ণনা করেছেন যে, (أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ دَخَلَ مَكَّةَ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন যখন তিনি সেখানে প্রবেশ করেন তখন তার মাথায় কালো পাগড়ী ছিল। আর এ বর্ণনাটিই সঠিক ও সংরক্ষিত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৭৯)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা

৩৯১০-[১৯] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন আরোহী (সফরকারী) এক শায়ত্বন, দু’জন আরোহী দুই শায়ত্বন, কিন্তু তিনজন হলো একটি পরিপূর্ণ জামা’আত। (মালিক, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ وَالثَّلَاثَةُ رَكبٌ» . رَوَاهُ مالكٌ وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: (الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ) ‘‘একা ভ্রমণকারী আরোহী শায়ত্বন’’। ‘আল্লামা মুযহির (রহঃ) বলেনঃ অর্থাৎ- একা একা ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে দু’জন ভ্রমণকারী দু’টো শায়ত্বন। আর যে ব্যক্তি নিষিদ্ধ কাজ করে সে শায়ত্বনের আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি শায়ত্বনের আনুগত্য করে সে যেন নিজেই একটি শায়ত্বন। এজন্যই একা ভ্রমণকারীকে শায়ত্বন বলা হয়েছে।

ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ একা ভ্রমণকারী ব্যক্তি যদি সফরে মারা যায় তাহলে তার নিকট এমন কোনো ব্যক্তি উপস্থিত পাওয়া যাবে না যে, তাকে গোসল দেয়াবে এবং দাফন করবে। আর তার নিকট এমন ব্যক্তিও পাওয়া যাবে না যার নিকট তার মাল সম্পর্কে ওয়াসিয়্যাত করতে পারে এবং সফরে তার রেখে যাওয়া মাল তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে পারে এবং তার সংবাদ তার পরিবারের নিকট পৌঁছাতে পারে। আর যদি সফরে তিনজন একত্রে থাকে তাহলে পরস্পরে তাদের কাজে সহযোগিতা করতে পারবে এবং জামা‘আত সহকারে সালাত আদায় করতে পারবে এতে করে তারা জামা‘আতে সালাত আদায় করার সাওয়াবও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে। তাইতো তিনজনের কমে সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৭৪)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা

৩৯১৫-[২৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন আমাদের প্রতি তিনজনের জন্যে একটি উটের ব্যবস্থা ছিল, এমনিভাবে আবূ লুবাবাহ্ ও ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আরোহী। রাবী বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ে হাঁটার পালা আসতো তখন তারা বলতেন, আপনার হাঁটার পালায় আমরাই হাঁটব। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদের তুলনায় বেশী শক্তিশালী নই আর সাওয়াব প্রত্যাশাকারী হিসেবে আমি তোমাদের চেয়ে বেশী মুখাপেক্ষী। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كُنَّا يَوْمَ بَدْرٍ كُلَّ ثَلَاثَةٍ عَلَى بَعِيرٍ فَكَانَ أَبُو لُبَابَةَ وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ زَمِيلَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَكَانَتْ إِذَا جَاءَتْ عُقْبَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَا: نَحْنُ نَمْشِي عَنْكَ قَالَ: «مَا أَنْتُمَا بِأَقْوَى مِنِّي وَمَا أَنَا بِأَغْنَى عَنِ الْأَجْرِ مِنْكُمَا» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة

ব্যাখ্যা: (مَا أَنْتُمَا بِأَقْوٰى مِنِّىْ وَمَا أَنَا بِأَغْنٰى عَنِ الْأَجْرِ مِنْكُمَا) দুনিয়াতে তোমরা আমার চাইতে অধিক শক্তিশালী নও এবং আমিও তোমাদের চেয়ে সাওয়াব হতে অমুখাপেক্ষী নই। অর্থাৎ- দুনিয়াতে তোমরা আমাকে পরিত্যাগ করে অধিক লাভবান হতে পারবে না, যেহেতু তোমরা আমার চাইতে অধিক শক্তিশালী নও। আর তোমাদের মাধ্যমে যে সাওয়াব অর্জন করবে। পরকালে আমি সে সাওয়াব হতে অমুখাপেক্ষী নই। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, নাবী অত্র হাদীসে তার নম্রতা এবং তার সঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতির চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সফরের নিয়ম-শৃঙ্খলা

৩৯২০-[২৯] সাহল ইবনু মু’আয তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কোনো এক জিহাদে ছিলাম। পথিমধ্যে এক বিসত্মীর্ণ এলাকা জুড়ে লোকেরা অবস্থান করে যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছিল। এতদশ্রবণে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি অন্যের অবস্থান বা যান চলাচল সংকীর্ণ বা বন্ধ করে, তার কোনো জিহাদ নেই। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن سهلِ بن مُعاذٍ عَن أبيهِ قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَضَيَّقَ النَّاسُ الْمُنَازِلَ وَقَطَعُوا الطَّرِيقَ فَبَعَثَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُنَادِيًا يُنادي فِي النَّاسِ: «أَنَّ مَنْ ضَيَّقَ مَنْزِلًا أَوْ قَطَعَ طَرِيقًا فَلَا جِهَادَ لَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (أَنَّ مَنْ ضَيَّقَ مَنْزِلًا أَوْ قَطَعَ طَرِيْقًا فَلَا جِهَادَ لَه) অবশ্যই যে ব্যক্তি অবতরণস্থল সংকীর্ণ করে ফেলল অথবা চলার রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে দিল তার কোনো জিহাদ নেই। অর্থাৎ বিশ্রামের জন্য অবতরণের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশী জায়গা নিয়ে অন্যের অবতরণের স্থানকে সংকীর্ণ করে ফেললো অথবা মানুষের চলাচলের রাস্তায় অবতরণ করে তাদের চলার পথে বিঘ্ন ঘটালো তার জিহাদ নেই, অর্থাৎ সে ব্যক্তি জিহাদের পূর্ণ সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে মানুষের ক্ষতি করার কারণে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২৬)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ সাহল ইবনু মু‘আয (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা

৩৯৫০-[১৪] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় আবূ বকর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে এক অভিযানে শত্রুর ওপর রাতের বেলায় আক্রমণ করি, তখন আমাদের সংকেত ছিল ’আমিত আমিত’ অর্থাৎ- (হে আল্লাহ!) শত্রুদেরকে ধ্বংস কর (মৃত্যু দাও)। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ أبي بكر زمن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فبيَّتْناهُم نَقْتُلُهُمْ وَكَانَ شِعَارُنَا تِلْكَ اللَّيْلَةَ: أَمِتْ أَمِتْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (كَانَ شِعَارُنَا تِلْكَ اللَّيْلَةَ : أَمِتْ أَمِتْ) অর্থাৎ- ঐ রাতে আমাদের প্রতীকী চিহ্ন ছিল (أَمِتْ أَمِتْ) গুরুত্বারোপের জন্য শব্দটি বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে। অথবা উদ্দেশ্য হলো- এ শব্দটি ঐ শব্দের অন্তর্ভুক্ত যা বারংবার উল্লেখ করা হয়। একমতে বলা হয়েছে, সম্বোধিত সত্বা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। কেননা তিনি মৃত্যুদানকারী, সুতরাং অর্থ হলো- হে সাহায্যকারী! তুমি মৃত্যু দাও’’।

আর শারহুস্ সুন্নাতে আছে, ‘‘হে সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি! তুমি হত্যাযজ্ঞ চালাও, এ ক্ষেত্রে সম্বোধিত ব্যক্তি যোদ্ধা’’। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ সালামাহ ইবনু আক্ওয়া‘ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)
দেখানো হচ্ছেঃ ৩৫২১ থেকে ৩৫৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫০৫২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 174 175 176 177 178 · · · 250 251 252 253 পরের পাতা »