পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৮-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম থেকে) উঠে বলবে,
’’আল্ল-হুম্মা আসবাহনা- নুশহিদুকা, ওয়া নুশহিদু হামালাতা ’আরশিকা, ওয়া মালা-য়িকাতাকা, ওয়া জামী’আ খলক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্ল-হু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আন্তা ওয়াহদাকা, লা- শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুকা ওয়া রসূলুকা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি ভোরে তোমাকে এবং তোমার ’আরশের বহনকারীদেরকে, তোমার মালায়িকাহকে [ফেরেশতাগণকে], তোমার সমস্ত সৃষ্টিকে। নিশ্চয়ই তুমিই আল্লাহ! তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি একক, তোমার কোন শারীক নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার বান্দা ও রসূল।)।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ঐ দিনে তার যে গুনাহ হবে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর সে যদি এ দু’আ সন্ধ্যায় পড়ে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ঐ রাতে যে গুনাহ সংঘটিত হবে তা ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ; ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেন)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ: اللَّهُمَّ أَصْبَحْنَا نُشْهِدُكَ وَنُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ إِلَّا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا أَصَابَهُ فِي يَوْمِهِ ذَلِكَ مِنْ ذَنْبٍ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন তবে কাবীরাহ্ গুনাহ তা থেকে আলাদা হবে। অর্থাৎ- কাবীরাহ গুনাহ ব্যতীত আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন। আর বান্দার অধিকারের সাথে সম্পর্কে গুনাহটাও কাবীরাহ্ গুনাহের অনুরূপ। তবে এখানে দিন বা রাতের সমস্ত গুনাহের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ মর্মে উৎসাহিত করার জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা শির্ক ব্যতীত সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৯-[১৯] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম বান্দা সন্ধ্যার সময় ও ভোরে উঠে তিনবার বলবে, ’’রযীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যান’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসেবে পেয়ে খুশি হয়েছি)- নিশ্চয়ই এ দু’আ কিয়ামতের দিন তাকে খুশী করানো আল্লাহর জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। (আহমদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَقُولُ إِذَا أَمْسَى وَإِذَا أَصْبَحَ ثَلَاثًا رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُرْضِيَهُ يَوْمَ الْقِيَامَة» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আত্ তিরমিযী’র শব্দে আবূ সালামাহ্ এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় বলবে- (رَضِيتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا) অর্থাৎ- রব বা প্রতিপালক হিসেবে আল্লাহ পেয়ে, দীন হিসেবে ইসলামকে পেয়ে এবং নাবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছি। তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও আল্লাহ তা‘আলার উপর কর্তব্য, আর আবী সালামাহ্ (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদিম থেকে বর্ণিত রয়েছে, সেখানে (وبمحمد رسولًا) বা রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি) নাবী’র পরিবর্তে রসূল বলা হয়েছে। ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) ‘আল আযকার’-এ দু’টি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেনঃ উভয় বর্ণনার মাঝে সমন্বয় করা মানুষের জন্য মুস্তাহাব।
অতএব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে (نبيًا رسولًا) (নাবিয়্যান রসূলান) বলতে হবে। তবে যদি এ দু’টোর একটি বলেন অর্থাৎ- نبيًا অথবা رسولًا তাহলে আলোচ্য হাদীসের উপর ‘আমল হবে। কারো মতে (نبيًا ورسولًا) বলা বিশুদ্ধ হবে। কারণ উভয় হাদীসের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘আমলে দু’টি গুণ সাব্যস্ত করাই হলো মূল উদ্দেশ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৩-[২৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযু বিওয়াজহিকাল কারীম, ওয়া কালিমা-তিকা তা-ম্মা-তি মিন্ শাররি মা- আন্তা আ-খিযুন বিনা-সিয়াতিহী, আল্ল-হুম্মা আন্তা তাকশিফুল মাগরামা, ওয়াল মা’সামা। আল্ল-হুম্মা লা- ইউহযামু জুনদুকা, ওয়ালা- ইউখলাফু ওয়া’দুকা ওয়ালা- ইয়ানফা’উ যালজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। সুবহা-নাকা, ওয়াবিহাম্দিকা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার অধীনে যা আছে আমি তার অনিষ্ট হতে তোমার মহান সত্তার ও তোমার পূর্ণ কালামের স্মরণ করে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমিই ঋণগ্রস্ততা ও গুনাহের ভার দূর করে দাও। হে আল্লাহ! তোমার দল পরাভূত হয় না, কক্ষনো তোমার ওয়া’দা ভঙ্গ হয় না এবং কোন সম্পদশালীর সম্পদ তাকে তোমা হতে রক্ষা করতে পারে না। তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ عِنْدَ مَضْجَعِهِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذٌ بناصيتهِ اللهُمَّ أَنْت تكشِفُ المغرمَ والمأْثمَ اللهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (إِنِّىْ أَعُوذُ بِوَجْهِكَ) অর্থাৎ- আপনার সত্তার সাথে, এখানে وجه বা চেহারা বলতে সত্তাকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার কথা- ‘‘তার চেহারা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল’’- (সূরা আল কাসাস ২৮ : ৮৮)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৪-[২৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিছানায় ঘুমানোর সময় তিনবার পড়বে, ’’আস্তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, তার কাছে আমি তওবা্ করি।)-
এ দু’আয় আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা অথবা বালুর স্তূপ অথবা গাছের পাতার সংখ্যা অথবা দুনিয়ার দিনগুলোর সংখ্যার চেয়েও বেশি হয়। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يَأْوِي إِلَى فِرَاشِهِ: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِله إِلا هوَ الحيَّ القيومَ وأتوبُ إِليهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبُهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ أَوْ عَدَدَ رَمْلِ عَالَجٍ أَوْ عَدَدَ وَرَقِ الشَّجَرِ أَوْ عَدَدَ أَيَّامِ الدُّنْيَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত জিকির তিনবার পাঠ করার মাধ্যমে পাঠক বা জিকিরকারীর গুনাহ মাফের ব্যাপারে বড় ফাযীলাত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। যদি অগণিতবার এটি পাঠ করা হয়, তবে আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত প্রশস্ত, আর তাকে সে অনুযায়ী অনেক সাওয়াব দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৫-[২৫] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম কুরআন মাজীদের যে কোন একটি সূরা পড়ে বিছানায় যাবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য অবশ্যই একজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত করে দেবেন। অতঃপর কোন ক্ষতিকারক জিনিস তার কাছে পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুম থেকে সে জেগে ওঠে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مَا من مُسْلِمٍ يَأْخُذُ مَضْجَعَهُ بِقِرَاءَةِ سُورَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ إِلَّا وَكَّلَ اللَّهُ بِهِ مَلَكًا فَلَا يَقْرَبُهُ شَيْءٌ يُؤْذِيهِ حَتَّى يَهُبَّ مَتَى هَبَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (...بِقِرَاءَةِ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা। (بِقِرَاءَةِ) মিশকাতের অধিকাংশ অনুলিপিতে অনুরূপ রয়েছে, মাসাবীহতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে, আর মিশকাতের কতিপয় অনুলিপিতে (يقرأ) অর্থাৎ- মুজারি দ্বারা রয়েছে এবং আত্ তিরমিযীতে অনুরূপ রয়েছে। আর জামি‘উল উসূলে (فيقرأ) অর্থাৎ- ‘ফা’ বৃদ্ধিতে মুজারি’র সিগাহ্’র মাধ্যমে রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৭-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু গন্নাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম থেকে) উঠে এ দু’আ পড়বে, ’’আল্ল-হুম্মা মা- আস্বাহা বী মিন্ নি’মাতিন, আও বিআহাদিম মিন খলকিকা, ফামিনকা ওয়াহদাকা লা- শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুকরু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! ভোরে আমার ওপর ও তোমার অন্য যে কোন সৃষ্টির ওপর যে নিয়ামত পৌঁছেছে তা একা তোমার পক্ষ থেকেই, এতে তোমার কোন শারীক নেই। সুতরাং তোমারই প্রশংসা ও তোমারই কৃতজ্ঞতা।)- সে ব্যক্তি তার ঐ দিনের কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে সন্ধ্যায় এ দু’আ পড়ল, সে তার ঐ রাতের কৃতজ্ঞতা আদায় করল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ غَنَّامٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: من قَالَ حِينَ يُصْبِحُ: اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ فَقَدْ أَدَّى شُكْرَ يَوْمِهِ وَمَنْ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ حِينَ يُمْسِي فَقَدْ أَدَّى شُكْرَ ليلته . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসে এ সকল সহজ শব্দগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আবশ্যকীয় কৃতজ্ঞতা আদায় করার বড় ফাযীলাত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। নিশ্চয় কেউ যদি সকালে উল্লেখিত দু‘আ পাঠ করে, তবে সে উক্ত দিনের শুকরিয়া আদায় করল। আর সন্ধ্যায় সেটা পাঠকারী রাতের শুকরিয়া আদায় করল। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা করো, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না’’- (সূরা ইব্রা-হীম ১৪ : ৩৪)। যখন তাঁর নিয়ামত গণনা করা সম্ভব হবে না, তখন বান্দা উক্ত নিয়ামতের উপর শুকরিয়াই বা কিভাবে পরিমাপ করবে? অতএব ‘ইলমের খুনি বা সাগর হতে সংগৃহীত এ মহা ফায়িদার জন্য প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১১-[৩১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলেন, হে আল্লাহর রসূল! (স্বপ্নের কারণে) রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। (এ কথা শুনে) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বিছানায় ঘুমাতে গেলে এ দু’আ পড়বে,
’’আল্ল-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তিস্ সাব্’ই, ওয়ামা- আযল্লাত, ওয়া রব্বাল আরযীনা ওয়ামা- আকল্লাত, ওয়া রব্বাশ্ শায়া-ত্বীনি ওয়ামা- আযল্লাত, কুল্লী জা-রম্ মিন্ শাররি খলকিকা কুল্লিহিম জামী’আন আই ইয়াফ্রুত্বা ’আলাইয়্যা আহাদুম্ মিনহুম আও আই ইয়াবগিয়া ’আযযা জা-রুকা ওয়া জাল্লা সানা-উকা, ওয়ালা- ইলা-হা গইরুকা, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! সাত আকাশের এবং এ সাত আকাশ যাকে ছায়া দিয়েছে তার রব! আর জমিনসমূহ ও তা যাকে ধারণ করেছে তার রব! সকল শয়তান ও তারা যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদের রব! তুমি আমাকে নিরাপত্তা দান কর, তোমার সকল সৃষ্টির অনিষ্ট হতে; তাদের কেউ যে আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করুক অথবা আমার ওপর অবিচার করুক তুমি আমাকে নিরাপত্তা দান করো। বিজয়ী সে যাকে তুমি নিরাপত্তা দান করেছ। মহান প্রশংসা তোমার, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসের সানাদ দুর্বল। কোন কোন হাদীস বিশারদ এর রাবী হাকাম ইবনু যুহায়র-কে মাতরূক বা পরিত্যাজ্য বলেছেন।)[1]
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: شَكَا خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُول الله مَا أَنَام من اللَّيْلَ مِنَ الْأَرَقِ فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَقُلْ: اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الْأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَيَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِالْقَوِيّ والحكَمُ بن ظُهيرٍ الرَّاوِي قد ترَكَ حديثَهُ بعضُ أهل الحَدِيث
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এর সানাদ য‘ঈফ। মুনযিরী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসের সানাদে দুর্বলতা রয়েছে। ত্ববারানী আল আওসাত গ্রন্থে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনা করেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেবো কি, যা তুমি ঘুমানোর সময় বলবে, তাহলে বলো- (...اَللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ) ‘আল্লামা মুনযিরী (রহঃ) বলেনঃ এটির সানাদ জাইয়্যিদ (‘আমলযোগ্য)।
‘আল্লামা আল হায়সামী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসের রাবীগুলো বিশুদ্ধ, তবে ‘আবদুর রহমান ইবনুস্ সাবিত ছাড়া, কারণ তিনি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ থেকে হাদীসটি শুনেননি।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১২-[৩২] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন যেন বলে,
"আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুল্কু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন। আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রা হা-যাল ইয়াওমি ফাত্হাহূ ওয়া নাসরাহূ, ওয়া নূরাহূ, ওয়া বারাকাতাহূ, ওয়া হুদা-হু। ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শার্রি মা- ফীহি, ওয়া মিন্ শার্রি মা- বা’দাহূ। সুম্মা ইযা- আমসা-, ফাল্ইয়াকুল মিসলা যা-লিকা"
(অর্থাৎ- আমরা ভোরে এসে উপনীত হলাম আর আল্লাহ রব্বুল ’আলামীনের উদ্দেশে রাজ্যও ভোরে এসে উপনীত হলো। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ দিনের কল্যাণ চাই, এর সফলতা ও সাহায্য, এর জ্যোতি, এর বারাকাত ও এর হিদায়াত এবং এতে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং এর পরে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে আশ্রয় চাই।)। অতঃপর সে সন্ধ্যায় উপনীত হলেও যেন অনুরূপ দু’আ করে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أَبِي مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَصْبَحَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذَا الْيَوْمِ فَتْحَهُ وَنَصْرَهُ وَنُورَهُ وَبِرْكَتَهُ وَهُدَاهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيهِ وَمِنْ شَرِّ مَا بَعْدَهُ ثُمَّ إِذَا أَمْسَى فَلْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে (فَتْحَه) বা তার বিজয় এবং তারপরের অংশ তার কথা خير هذا اليوم এর বর্ণনা।
এখানে فتح শব্দের অর্থ হলো বিজয় অর্জন করা, তা সন্ধির মাধ্যমে অথবা সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে হতে পারে। আর النصر-এর অর্থ হলো শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় এবং সাহায্য, আর এটাই শব্দ দু’টির মৌলিক অর্থ।
(وَمِنْ شَرِّ مَا بَعْدَه) মিশকাতের অধিকাংশ অনুলিপিতে অনুরূপ শব্দ রয়েছে। তবে কতিপয় অনুলিপিতে (وَمِنْ شَرِّ مَا بَعْدَه) উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ- (مِنْ) এর উল্লেখ ছাড়া, আবূ দাঊদেও অনুরূপ রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১৪-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে ঘুম হতে উঠে বলতেন,
"আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়াল হাম্দুলিল্লা-হি ওয়াল কিব্রিয়া-উ ওয়াল ’আযামাতু লিল্লা-হি ওয়াল খলক্বু ওয়াল আমরু ওয়াল্ লায়লু ওয়ান্ নাহা-রু ওয়ামা- সাকানা ফীহিমা- লিল্লা-হি আল্ল-হুম্মাজ্’আল আও্ওয়ালা হা-যান্ নাহা-রি সলা-হান ওয়া আওসাত্বাহূ নাজা-হান ওয়া আ-খিরাহূ ফালা-হান ইয়া- আর্হামার্ র-হিমীন"
(অর্থাৎ- আমরা ভোরে এসে উপনীত হলাম, আর ভোরে এসে উপনীত হলো আল্লাহরই উদ্দেশে আল্লাহর রাজ্য। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। আল্লাহরই জন্য সব অহংকার ও সম্মান। সমগ্র সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব, রাত ও দিন এবং এতে যা বসবাস করে সবই আল্লাহর। হে আল্লাহ! তুমি এ দিনের প্রথমাংশকে কল্যাণকর করো, মধ্যাংশকে সাফল্যের ওয়াসীলাহ্ করো, আর শেষাংশকে সাফল্যময় করো। হে সর্বাধিক রহমকারী।’’ (নাবাবী কিতাবুল আযকার- ইবনুস্ সুন্নী’র বর্ণনার দ্বারা)[1]
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَصْبَحَ قَالَ: «أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَالْكِبْرِيَاءُ وَالْعَظَمَةُ لِلَّهِ وَالْخَلْقُ وَالْأَمْرُ وَاللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَمَا سَكَنَ فِيهِمَا لِلَّهِ اللَّهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَ هَذَا النَّهَارِ صَلَاحًا وَأَوْسَطَهُ نَجَاحًا وَآخِرَهُ فَلَاحًا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ» . ذَكَرَهُ النَّوَوِيُّ فِي كِتَابِ الْأَذْكَارِ بِرِوَايَةِ ابْنِ السّني
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেন, আর এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
(قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ) (أُوْلٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ * الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ)
অর্থাৎ- ‘‘ঈমানদারগণ সফল হয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা শীতল ছায়াময় জান্নাতের উত্তরাধিকার লাভ করবে।’’ (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ১, ১০, ১১)
আর উল্লেখিত দু‘আর শেষে (يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ) ‘‘ইয়া- আরহামার্ র-হিমীন’’ উল্লেখ প্রসঙ্গে ‘আল্লামা আল কারী (রহঃ) বলেনঃ উল্লেখিত দু‘আ এ বাক্য দ্বারা এজন্যই শেষ করা হয়েছে, কারণ এটি দ্রুত দু‘আ কবূলের কারণ। যেমনটি হাদীসে এসেছে এবং ইমাম হাকিম (রহঃ) তাঁর মুসতাদরাকে আবী ‘উমামাহ্ থেকে মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি সহীহ বলেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার জন্যই রাজত্ব। যে ব্যক্তি বলবেঃ ‘‘ইয়া- আরহামার্ র-হিমীন’’। অতঃপর এটা তিনবার বলবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন- নিশ্চয় দয়াবানদের দয়াবান তোমার সামনে আগমন করেছে, অতএব তুমি চাও।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলোঃ এখানে তিন সংখ্যাটি নির্ধারণ করা হয়েছে এ কারণে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি এটা তিনবার বলে সে তার অন্তর ও কামনা রবের নিকট উপস্থিত করে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৩২-[১৭] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে দু’আ করতে শুনলেন, লোকটি বলছেনঃ ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা তামা-মান্ নি’মাহ্’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পূর্ণ নিয়ামত চাই)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পূর্ণ নিয়ামত কি? সে বললো, এই দু’আ দিয়ে আমি সম্পদ প্রাপ্তির (অধিক উত্তম বস্ত্ত) আশা করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পূর্ণ নিয়ামত তো হলো জান্নাতে প্রবেশ করা ও জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করা (দুনিয়াপ্রাপ্তি উদ্দেশ্য নয়)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ’’ইয়া- যাল জালা-লি ওয়াল ইক্র-ম’’ (অর্থাৎ- হে মহত্ব ও মর্যাদার অধিকারী)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার দু’আ কবূল করা হবে, তুমি দু’আ করো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, সে বলছে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাস্ সব্রা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ধৈর্যধারণের শক্তি চাই)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তো আল্লাহর কাছে বিপদ চাইলে, বরং তুমি তাঁর কাছে নিরাপত্তা প্রত্যাশা করো। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: سَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يَدْعُو يَقُولُ: اللهُمَّ إِني أسألكَ تمامَ النعمةِ فَقَالَ: «أيُّ شَيْءٍ تَمَامُ النِّعْمَةِ؟» قَالَ: دَعْوَةٌ أَرْجُو بِهَا خَيْرًا فَقَالَ: «إِنَّ مِنْ تَمَامِ النِّعْمَةِ دُخُولَ الْجَنَّةِ وَالْفَوْزَ مِنَ النَّارِ» . وَسَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ فَقَالَ: «قَدِ اسْتُجِيبَ لَكَ فَسَلْ» . وَسَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا وَهُوَ يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الصَّبْرَ فَقَالَ: «سَأَلْتَ اللَّهَ الْبَلَاءَ فَاسْأَلْهُ الْعَافِيَةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেনঃ সর্বোপরি কথা হলো লোকটি নিয়ামত দ্বারা দুনিয়ার নিয়ামত উদ্দেশ্য করেছে। যা আবশ্যকীয়ভাবে ধ্বংসশীল। আর দু‘আর মাঝে তার পূর্ণতা, অর্থাৎ- পূর্ণ নিয়ামত চাচ্ছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখ্যান করলেন এবং প্রমাণ দিলেন যে, আখিরাতের স্থায়ী নিয়ামত ছাড়া কোন (পূর্ণ) নিয়ামত নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৩৯-[২৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হবার সময় রাত হয়ে গেলে বলতেন,
’’ইয়া- আরযু রব্বী ওয়া রব্বুকিল্লা-হু আ’ঊযুবিল্লা-হি মিন শাররিকি ওয়া শাররি মা- ফীকি ওয়া শাররি মা- খুলিকা ফীকি ওয়া শাররি মা- ইয়াদিব্বু ’আলায়কি ওয়া আ’ঊযুবিল্লা-হি মিন্ আসাদিন ওয়া আস্ওয়াদা ওয়া মিনাল হাইয়্যাতি ওয়াল ’আকরাবি ওয়ামিন্ শাররি সা-কিনিল বালাদি ওয়ামিন্ ওয়া-লিদিন ওয়ামা- ওয়া-লিদ’’
(অর্থাৎ- হে জমিন! আমার প্রতিপালক ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। সুতরাং আমি তোমার অনিষ্ট হতে, তোমার মধ্যে যা আছে তার অনিষ্ট হতে, তোমার মধ্যে যা সৃষ্টি করা হয়েছে এর অনিষ্ট হতে এবং যা তোমার ওপর চলাফেরা করে তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আমি আল্লাহর কাছে আরো আশ্রয় চাই সিংহ, বাঘ, কালো সাপ ও সাপ-বিচ্ছু হতে, শহরের অধিবাসী ও পিতা-পুত্র হতে।)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَافَرَ فَأَقْبَلَ اللَّيْلُ قَالَ: «يَا أَرْضُ رَبِّي وَرَبُّكِ اللَّهُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّكِ وَشَرِّ مَا فِيكِ وَشَرِّ مَا خُلِقَ فِيكِ وَشَرِّ مَا يَدِبُّ عَلَيْكِ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ أَسَدٍ وَأَسْودَ وَمِنَ الْحَيَّةِ وَالْعَقْرَبِ وَمِنْ شَرِّ سَاكِنِ الْبَلَدِ وَمِنْ والدٍ وَمَا ولد» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (...إِذَا سَافَرَ) আহমাদ এবং হাকিম-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করতেন অথবা ভ্রমণ করতেন। অতঃপর রাত আসলে তিনি বলতেন। এখানে (يَا أَرْضُ) বলে জমিনকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তিনি তাকে প্রশস্ততার ভিত্তিতে এবং খাস করার উদ্দেশে আহবান করেছেন।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) এটা উল্লেখ করেছেন। কারো মতে (مِنْ شَرِّ سَاكِنِ الْبَلَدِ)-এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ মানুষ, এখানে তাদের নাম উল্লেখ করার কারণ হলোঃ বেশীরভাগ ভূ-খণ্ডে তারা বসবাস করে। অথবা তারা শহর নির্মাণ করে এবং তারা সেটা দেশ বানিয়ে নেয়। আবার কারো মতে তারা জিন্, যারা জমিনে বাস করে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৪৪-[২৯] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করবে সে যেন বলে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রল মাওলিজি ওয়া খয়রল মাখর-জি বিস্মিল্লা-হি ওয়ালাজনা- ওয়া ’আলাল্ল-হি রব্বিনা- তাওয়াক্কালনা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঘরে প্রবেশ ও ঘর হতে বের হওয়ার কল্যাণ চাই। তোমার নামেই আমি প্রবেশ করি (ও বের হই)। হে আমাদের বর! আল্লাহর নামে ভরসা করলাম।)। অতঃপর সে যেন নিজ পরিবারের লোকদেরকে সালাম দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا وَلَجَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ثُمَّ لْيُسَلِّمْ عَلَى أَهْلِهِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা : মিরকাতে ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে আল্লাহ তা‘আলার কথার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, তার শিক্ষার জন্য। হে পালনকর্তা! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে।
এখানে আয়াতে কারীমা সব ধরনের প্রবেশ ও বের হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করবে। যদিও আয়াতটি মক্কা বিজয়ের দিনে নাযিল হয়েছে। কেননা শিক্ষা তো ‘আম্ শব্দ দ্বারা সাব্যস্ত হয়, নির্দিষ্ট কোন কারণে নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৪৮-[৩৩] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি বড় দুশ্চিন্তায় আছি, আমার ঘাড়ে ঋণ চেপে আছে। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি কালাম (বাক্য) বলে দেবো না, যা পড়লে আল্লাহ তোমার চিন্তা দূর করবেন ও ঋণ পরিশোধ করবেন। সে বললো, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বলুন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়বে,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি, ওয়াল হুযনি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনাল ’আজযি, ওয়াল কাসালি ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল জুবনি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ গলাবাতিদ্ দায়নি ওয়া কহরির রিজা-ল’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি চাই। আশ্রয় চাই অপারগতা ও অলসতা এবং কৃপণতা ও কাপুরুষতা হতে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের কঠোরতা হতে।)।
সে বললো, পরিশেষে আমি তা-ই করলাম। আর আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা মুক্ত করে দিলেন এবং ঋণও পরিশোধ করে দিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: هُمُومٌ لَزِمَتْنِي وَدُيُونٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «أَفَلَا أُعَلِّمُكَ كَلَامًا إِذَا قُلْتَهُ أَذْهَبَ اللَّهُ هَمَّكَ وَقَضَى عَنْكَ دَيْنَكَ؟» قَالَ: قُلْتُ: بَلَى قَالَ: قُلْ إِذَا أَصْبَحْتَ وَإِذَا أَمْسَيْتَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ . قَالَ: فَفعلت ذَلِك فَأذْهب الله همي وَقضى عَن ديني. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একদিন মসজিদে প্রবেশ করলেন, দেখলেন আনসারী একজন লোক, যাকে আবূ উমামাহ্ বলা হত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ উমামাহ্! তোমার কি হয়েছে যে, আমি তোমাকে অসময়ে মসজিদে দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেনঃ চিন্তা এবং ঋণ আমায় বাধ্য করছে। অর্থাৎ- অসময়ে মসজিদে আমার বসে থাকার কারণ হলো চিন্তা এবং ঋণ। সুতরাং আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তারই ঘরে বসে মুক্তি চাই। এটা স্পষ্ট যে, নিশ্চয় হাদীসটি আবূ উমামার বর্ণনা এবং তার অনুরূপ কথা। তিনি বলেন, আমি তাই করলাম। অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা মতো এ দু‘আ পড়লাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাকে চিন্তা মুক্ত করলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৫১-[৩৬] কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর কাছে বিশ্বস্তসূত্রে খবর এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে এ বাক্যটি তিনবার বলতেন, ’’হিলা-লু খয়রিন ওয়া রুশদিন হিলা-লু খয়রিন ওয়া রুশদিন হিলা-লু খয়রিন ওয়া রুশদিন আ-মানতু বিল্লাযী খলাকক’’ (অর্থাৎ- কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হিদায়াতের চাঁদ। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তার ওপর আমি ঈমান আনলাম।)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী যাহাবা বিশাহরি কাযা- ওয়াজা-আ বিশাহরি কাযা-’’ (অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি [বিগত] মাস শেষ করলেন এবং এই মাস আনলেন)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن قَتَادَة: بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَأَى الْهِلَالَ قَالَ: «هِلَالُ خَيْرٍ وَرُشْدٍ هِلَالُ خَيْرٍ وَرُشْدٍ هِلَالُ خَيْرٍ وَرُشْدٍ آمَنْتُ بِالَّذِي خَلَقَكَ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ يَقُولُ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي ذَهَبَ بِشَهْرِ كَذَا وَجَاء بِشَهْر كَذَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: চাঁদ আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদাতের সাথে কিয়ামের সঠিক নির্দেশনা দেয় এবং তা হজ, সিয়াম ও অন্যান্য ‘ইবাদাতের সময় নির্ণয়ক। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ ‘‘তারা আপনাকে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস.....।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৯)
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) এর অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখতেন, তখন বলতেনঃ هِلَالُ خَيْرٌ وَّرُشْدٌ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ ‘‘চাঁদ কল্যাণকর ও সঠিক পথের দিশা।’’ এটি তিনবার বলতেন।
اٰمَنْتُ بِالَّذِىْ خَلَقَكَ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ ‘‘আমি ঈমান এনেছি ঐ সত্তার প্রতি যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’’, তিনবার বলতেন। অতঃপর বলতেনঃ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ جَاءَ بِالشَّهْرِ وَذَهَبَ بِالشَّهْرِ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি (নতুন) মাস নিয়ে এলেন এবং (বিগত) মাস নিয়ে গেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৫৫-[৪০] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খন্দক যুদ্ধের দিন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে কি কিছু বলবেন? আমাদের প্রাণ তো ওষ্ঠাগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ আছে। তোমরা বল, ’’আল্ল-হুম্মাসতুর ’আওর-তিনা- ওয়া আ-মিন রও’আ-তিনা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দোষ-ত্রুটিগুলো ঢেকে রাখো, আমাদের ভয়-ভীতি নিরাপত্তায় পরিণত করো। বর্ণনাকারী [আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] বলেন, অতএব আল্লাহ তা’আলা তার শত্রুদের ঝড়-ঝঞ্ঝা হাওয়া দিয়ে দমন করলেন এবং এ ঝড়-ঝঞ্ঝা হাওয়া দিয়েই তাদেরকে পরাজিত করলেন। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قُلْنَا يَوْمَ الْخَنْدَقِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ مِنْ شَيْءٍ نَقُولُهُ؟ فَقَدْ بَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ قَالَ: «نَعَمْ اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا» قَالَ: فَضَرَبَ اللَّهُ وُجُوهَ أَعْدَائِهِ بِالرِّيحِ وَهَزَمَ اللَّهُ بِالرِّيحِ. رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: আহযা-ব যুদ্ধের দিন মদীনায়, খন্দক খননের কারণ হলোঃ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে খবর পৌঁছল যে, মক্কাহ্বাসীরা যুদ্ধে প্রস্ত্ততি নিচ্ছে এবং তারা ‘আরবের মুশরিক ও আহলে কিতাব (ইয়াহূদী-নাসারা)-দের একত্রিত করছে, যাদের মুকাবিলা করার সামর্থ্য মুসলিমদের নেই। অতঃপর সহাবায়ে কিরামগণ পরামর্শ করলেন এবং সালমান আল ফারিসী খন্দক খননের পরামর্শ দিলেন, যা তিনি তার নিজ দেশ থেকে জেনেছেন। আর শত্রুদের ধারণা ছিল যে, তারা (মুসলিমরা) মদীনার চারপাশে তাদের মুকাবিলা করতে পারবে না, বিধায় তারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ওপর নিরাপত্তা চাইবে। অতঃপর তিনি ও তার সাথীগণ ১০ দিনের অধিক সময় ধরে খন্দক খনন করলেন। আর তারা সে খননের কাজে দেখতে পেতেন কষ্ট, ক্ষুধা ও অক্ষমতা, আর এজন্যই তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলছিলেন, আমাদের কিছু বলবেন? উল্লেখ্য যে, খন্দাকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪৫৬-[৪১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাজারে প্রবেশ করলে বলতেন,
’’বিস্মিল্লা-হি, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রা হা-যিহিস্ সূকি ওয়া খয়রা মা- ফীহা-, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররিহা- ওয়া শাররি মা- ফীহা-। আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা আন্ উসীবা ফীহা- সফক্বতান খ-সিরাতান’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে বাজারের কল্যাণ এবং এতে যা আছে তার কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই এর অকল্যাণ হতে এবং এতে যা আছে তার অকল্যাণ হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, এতে যেন কোন ক্ষয়-ক্ষতি ও ক্রয়-বিক্রয়ের ফাঁদে না পড়ি।)। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ السُّوقَ قَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ السُّوقِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُصِيبَ فِيهَا صَفْقَةً خَاسِرَةً» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِير
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা আল মানাবী (রহঃ) বলেনঃ নিশ্চয় (বাজারে গমনকারী ব্যক্তি) সে বাজারের কল্যাণ চাইবে এবং তার অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে তার অন্তর থেকে উদাসীনতা দূর করার জন্য। সুতরাং সে এ বাক্যগুলো পড়বে উদাসীন অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য। অতএব যে বাজারে প্রবেশ করবে তার জন্য এ কথাগুলো (উল্লেখিত দু‘আ) মুখস্থ করা মুস্তাহাব। যখন এতে প্রবেশকারীগণ এ কালিমাগুলো বলবে তখন অন্তরে যে উদাসীনতা ভর করবে তা দূর হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৬৮-[১২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আয়) বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাশ্ শিকা-কি, ওয়ান্ নিফা-কি ওয়া সূয়িল আখলা-ক’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি সত্যের বিরুদ্ধাচরণ, মুনাফিক্বী ও চরিত্রহীনতা হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই)। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الشِّقَاقِ وَالنِّفَاقِ وَسُوءِ الْأَخْلَاقِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (شِقَاقِ) ‘শিকা-ক’ বলতে এখানে সত্যের বিরোধিতা করাকে বুঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي عِزَّةٍ وَشِقَاقٍ
‘‘কিন্তু কাফিরগণ ঔদ্ধত্য ও বিরোধিতায় ডুবে আছে।’’ (সূরা সাদ ৩৮ : ০২)
(النِّفَاقِ) ‘‘আন্ নিফাক’’ অর্থ অন্তরে কুফরকে গোপন রেখে বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করা। এখানে ‘নিফাক’ বলতে বেশি বেশি মিথ্যা কথা বলা, আমানাতের খিয়ানাত করা, ওয়া‘দা ভঙ্গ করা, ঝগড়ার সময় গালি-গালাজ করাকেও বুঝানো হতে পারে।
‘‘চরিত্রের অসাধুতা’’ (سُوْءِ الْأَخْلَاقِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে উদারতা ও চেহারার প্রফুল্লতার বিপরীত কিছু। ইবনুল মালিক-এর মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সত্যানুসারীদের কষ্ট দেয়া, পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের কষ্ট দেয়া, তাদের ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে কঠোর আচরণ করা এবং তাদের থেকে কোন ভুল বা পাপ প্রকাশিত হলে তা ক্ষমাসুন্দর চোখে না দেখা।
উল্লেখ্য যে, অত্র হাদীসে উল্লিখিত প্রথম দু’টি বিষয়ও তৃতীয় বিষয়টির অন্তর্ভুক্ত মনে হলেও তৃতীয় বিষয়টি দ্বারা গোপন গুণাবলী বুঝানো হচ্ছে আর প্রথম দু’টি প্রকাশ্য খারাপ গুণ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৭৪-[১৮] মু’আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর কাছে লোভ-লালসা হতে আশ্রয় চাও, যে লোভ-লালসা মানুষকে দোষ-ত্রুটির দিকে এগিয়ে দেয়। (আহমাদ, বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَنْ مُعَاذٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أستعيذُ بِاللَّهِ مِنْ طَمَعٍ يَهْدِي إِلَى طَبَعٍ)
رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَيْهَقِيّ فِي الدَّعْوَات الْكَبِير
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে লালসা বলতে কোন জিনিসের প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক, আগ্রহ, লোভকে বুঝানো হয়েছে। এর থেকে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে এজন্যে যে, এ লালসা ব্যক্তিকে ক্রমশ প্রবৃত্তির অনুসরণ, দোষ-ত্রুটি, গুনাহের কাজ, গোপন খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়। যেমন- দুনিয়ার বিনয়ী হওয়া, মানুষকে শুনানোর জন্যে ও দেখানোর জন্যে কাজ করা ইত্যাদি যা মানুষ তার প্রবৃত্তির লোভের বশবর্তী হয়ে করে। এজন্যই বলা হয়, الطمع فساد الدين والورع صلاحه
অর্থাৎ- ‘‘লালসা দীনকে ধ্বংস করে আর পরহেজগারিতা দীনকে সংরক্ষণ করে।’’
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৭৬-[২০] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতা হুসায়নকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখন কতজন মা’বূদের পূজা করছো? আমার পিতা বললেন, সাতজনের- তন্মধ্যে ছয়জন মাটিতে আর একজন আকাশে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আশা-নিরাশার ও ভয়-ভীতির সময় কাকে মানো (কোন্ মা’বূদকে ডাকো)? আমার পিতা বললেন, যিনি আকাশে আছেন তাকে মানি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তবে শুন হুসায়ন! যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ করো, আমি তোমাকে দু’টি কালিমা শিখাবো, যা তোমার উপকারে (পরকালীন মুক্তি) আসবে। বর্ণনাকারী [’ইমরান (রাঃ)] বলেন, আমার পিতা হুসায়ন ইসলাম গ্রহণ করার পর বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে ঐ কালিমা দু’টি শিখিয়ে দিন, যার কথা আপনি আমাকে ওয়া’দা দিয়েছিলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি (সেই আসমানের মা’বূদকে) বলো, ’’আল্ল-হুম্মা আলহিম্নী রুশদী, ওয়া আ’ইযনী মিন শাররি নাফসী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে সত্য পথের সন্ধান দাও এবং আমার নাফসের অপকারিতা হতে রক্ষা করো)। (তিরমিযী)[1]
وَعَن عمرانَ بنِ حُصينٍ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لأبي: «يَا حُصَيْن كم تعبد الْيَوْم إِلَهًا؟» قَالَ أَبِي: سَبْعَةً: سِتًّا فِي الْأَرْضِ وواحداً فِي السَّماءِ قَالَ: «فَأَيُّهُمْ تَعُدُّ لِرَغْبَتِكَ وَرَهْبَتِكَ؟» قَالَ: الَّذِي فِي السَّمَاءِ قَالَ: «يَا حُصَيْنُ أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَسْلَمْتَ عَلَّمْتُكَ كَلِمَتَيْنِ تَنْفَعَانِكَ» قَالَ: فَلَمَّا أَسْلَمَ حُصينٌ قَالَ: يَا رسولَ الله علِّمني الكلمتينِ اللَّتينِ وَعَدتنِي فَقَالَ: «قل اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)-কে যে ছোট দু‘আটি শিক্ষা দিয়েছেন তার প্রথম অংশের (الرُشْدِ) ‘‘রুশ্দ’’ বলতে মূলত সত্যের পথকে শক্তভাবে ধরে তার উপর দৃঢ় থাকা। ‘আল্লামা কারী বলেনঃ প্রথম অংশের অর্থ হলোঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রুশ্দ তথা সততার অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
দু‘আটির দ্বিতীয় অংশের অর্থ হলো, ‘হে আল্লাহ! অন্তরের অনিষ্ট বা অপকারিতা থেকে আমাকে রক্ষা করো’, নিশ্চয়ই অন্তরই হচ্ছে সকল অনিষ্টের মূল বা উৎস। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘‘জাওয়ামি‘উল কালিম’’ (স্বল্প কথায় বেশি অর্থবোধক বাক্য)-এর অন্যতম। এ ছোট দু‘আটিতে তিনি রুশদ তথা সত্য পথের নির্দেশনা চেয়েছেন। যার মাধ্যমে সকল ভ্রান্তি, পথভ্রষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকা যায় এবং তিনি অন্তর থেকে উৎসারিত অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। যার মাধ্যমে অধিকাংশ আল্লাহদ্রোহী কাজ সংঘটিত হয়। আর অধিকাংশ আল্লাহদ্রোহী কাজ খারাপ কাজের আদেশদাতা অন্তর (النفس الأمارة بالسوء) ‘‘আন নাফ্সুল আম্মারাহ্ বিস্সূয়ি’’ এর দ্বারা প্ররোচনা লাভ করে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশ্রয় প্রার্থনা করা
২৪৮১-[২৫] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আ’ঊযুবিল্লা-হি মিনাল কুফরি ওয়াদ্দায়নি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী ও ঋণ হতে আশ্রয় চাই)। এটা শুনে জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো, হে আল্লাহ রসূল! আপনি ঋণকে কুফরীর সমান মনে করেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কুফরী ও পরমুখাপেক্ষিতা হতে আশ্রয় চাই)। তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! এ দু’টো কি সমান (এক বিষয়)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْكُفْرِ وَالدَّيْنِ» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَعْدِلُ الْكُفْرَ بِالدَّيْنِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ» . قَالَ رَجُلٌ: وَيُعْدَلَانِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: প্রশ্নকারী ব্যক্তি স্পষ্টভাবে বুঝতে চেয়েছেন যে, কুফরী ও ঋণকে কেন একসাথে উল্লেখ করা হলো? এ দু’টোর মধ্যে কি সমান অনিষ্ট বিরাজমান যা দু’টিকে সমান করেছে? ঋণের দায় কি এতই কঠিন যে, সেটা কুফরীর সমান হলো? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কৌতুহল দূর করে উত্তর বুঝিয়ে দিলেন, হ্যাঁ। ঋণ ঋণী ব্যক্তির জন্য কুফরীর মতো জান্নাতে প্রবেশের পথে স্থায়ী বাধা যতক্ষণ না ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি তা ঋণদাতাকে পরিশোধ না করে। (অর্থাৎ- ঋণী ব্যক্তি যতক্ষণ না ঋণদাতাকে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।)
ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি কাফির ও মুনাফিক্বের মতো। কারণ যখন ব্যক্তির ওপর ঋণের বোঝা থাকে তখন সে মিথ্যা বলে এবং ওয়া‘দা দিলে তা ভঙ্গ করে। এগুলো মুনাফিক্বের বৈশিষ্ট্য ও নিফাক্বের চিহ্ন। আর দরিদ্র ব্যক্তি (ফকীর) কখন অধৈর্য হয়ে যায়। ফলে তার দারিদ্র্যই তাকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। এর এটা ঋণী ব্যক্তির থেকেও খারাপ অবস্থা।