পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১১-[৫৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: ইহকাল ঐ ব্যক্তির ঘর, যার (আখিরাতে) ঘর নেই এবং ঐ ব্যক্তিরই সম্পদ, যার (আখিরাতে) কোন সম্পদ নেই। আর ইহকালে সে ব্যক্তিই সঞ্চয় করে যার বুদ্ধি নেই। (আহমাদ ও বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الدُّنْيَا دَارُ مَنْ لَا دَارَ لَهُ وَمَالُ مَنْ لَا مَالَ لَهُ وَلَهَا يَجْمَعُ مَنْ لَا عَقْلَ لَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (6 / 71 ح 24923) و البیھقی فی شعب الایمان (10638 ، نسخۃ محققۃ : 10154) [و ابن ابی الدنیا فی ذم الدنیا (182) و احمد (6 / 71)] * ابو اسحاق مدلس و عنعن فی السند علۃ أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দার’ বা ঘর দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় সুখ ও শান্তিতে অবস্থান বা বসবাস করা তাহলে তো দুনিয়ার ঘর সুখ-শান্তি থেকে মুক্ত, তাকে শান্তির ঘর নাম দেয়া যথাযথ নয়, অতএব দুনিয়া যাদের ঘর (আখিরাতে) তার কোন ঘর নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেন : (وَ اِنَّ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ لَهِیَ الۡحَیَوَانُ ۘ لَوۡ کَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ) “নিশ্চয় পরকালের জীবনই সত্যিকারের জীবন যদি তারা জানত। (সূরাহ্ আল আনকাবূত ২৯ : ৬৪)
হাদীসের বাণী : (وَمَالُ مَنْ لَا مَالَ لَهُ) “দুনিয়ার সম্পদ তার জন্যই যার আখিরাতে কোন সম্পদ নেই।” এখানে মাল-সম্পদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কল্যাণকর কাজে ও রাস্তায় খরচ করা। আর যে তার প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের জন্য তা ক্ষয় করে তার ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য যে, তার দুনিয়ার এই সম্পদ প্রকৃত সম্পদ নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ) “দুনিয়ার জীবন ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়”। (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩:১৮৫)।
অতএব এই ধোঁকার দুনিয়া লাভের জন্য যারা উঠে পড়ে লাগে তারা নির্বোধ। আর যারা আখিরাতের ঘর সমৃদ্ধ করার জন্য পাথেয় সংগ্রহে লিপ্ত তারা প্রশংসিত। আল্লাহ বলেন :
(وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫) “তোমরা (হাজ্জের জন্য) পাথেয় সংগ্রহ কর, আর উত্তম পাথেয় হলো তাক্বওয়া।” (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২: ১৯৭)
সার কথা হলো দুনিয়ার অস্থায়ী ঘরকে প্রকৃত ঘর বলে ধরবে না। বরং তাকে একেবারেই গৌন করে দেখবে। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; সিরাজুল মুনীর ৩য় খণ্ড, ১৬২ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১২-[৫৮] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে তার খুত্ববায় বলতে শুনেছি, মদ হলো পাপের সমষ্টি। নারী সম্প্রদায় শয়তানের ফাঁদ। দুনিয়ার মুহাব্বাত সকল গুনাহের মূল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে এটাও বলতে শুনেছি; তোমরা নারীদেরকে পিছনে সরিয়ে রাখো, যেভাবে আল্লাহ তাদেরকে পিছনে রেখেছেন। (রযীন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي خُطْبَتِهِ: «الْخَمْرُ جِمَاعُ الْإِثْمِ وَالنِّسَاءُ حَبَائِلُ الشَّيْطَانِ وَحُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ» قَالَ: وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «أَخِّرُوا النِّسَاءَ حَيْثُ أَخَّرَهُنَّ اللَّهُ» . رَوَاهُ رزين
لم اجدہ ، رواہ رزین (لم اجدہ) * و للحدیث شاھد عند الدارقطنی (4 / 247 ح 4564) وغیرہ من حدیث زید بن خالد بہ و سندہ ضعیف ، فیہ عبداللہ بن مصعب و ابوہ مجھولان ۔ 0 قولہ :’’ أخر و النساء حیث أخرھن اللہ ‘‘ رواہ عبدالرزاق (3 / 194 ح 5115 موقوفًا) عن ابن مسعود رضی اللہ عنہ و سندہ ضعیف و للاثر شاھد ضعیف منقطع عند الطبرانی فی الکبیر (9 / 342 ح 9485) ۔
(لاأصل لَهُ مَرْفُوعا)
ব্যাখ্যা : (خَمْرُ) ‘খমর বা মদ সকল পাপের সমষ্টি, যা সকল পাপকে একত্র করে এবং সকল পাপের বাহন। ত্ববারানীর এক মারফু হাদীসে এসেছে, (لْخَمْرُأُمٌُ الْفَوَاحِشِ وَأَكْبَرُ الْكَبَائِرِ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ تَرَكَ الصَّلَاةَوَوَقَعَ عَلَى أُمِّهٖ وَعَمَّتِهٖ وَخَالَتِهٖ) মদ্যপান হলো সকল কুকর্মের জননী এবং বড় ধরনের কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যে তা পান করে, সালাত বর্জন করে এবং তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, ফুপীর সাথে এবং খালার সাথেও। (জামি'উস্ সগীর ২/২৫২ পৃ., হা, ৪১৪১)
বায়হাক্বীর এক বর্ণনায় রয়েছে, “যে মদ্যপান করে সে সালাত বর্জন করে এবং মা, খালা ও ফুপুর ওপর উদগত হয়।” (জামিউস্ সগীর হা, ৪১৪২)
হাদীসের বাণী, “নারী জাতি শয়তানের রশি”, শয়তান নারীদের দ্বারাই তার অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে থাকে। পৃথিবীর বড় বড় যুদ্ধ-বিগ্রহের মূলে শায়ত্বন এই নারীকে ব্যবহার করেছে। বলা হয়ে থাকে ইবলীস যখন বানী আদাম-এর পিছনে প্রাণন্তকর পরিশ্রম করেও নিরাশ হয়ে যায় তখন নারীদের মাধ্যমে অবতীর্ণ হয় এবং সফলতা লাভ করে।
হাদীসের বাণী : (حب الدُّنْيَا رَأس كل خَطِيئَ) “দুনিয়াপ্রীতি সকল পাপের শিরোমনি।” এ কথার মাফহুম হলো, তার বিপরীতটি বুঝানো অর্থাৎ (تَرْكُ الدُّنْيَا رَأَسُ كُلِّ عِبَادَةٍ) দুনিয়া বর্জন হলো সকল ‘ইবাদাতের শিরোমণি। বলা হয়ে থাকে যে, ব্যক্তি দুনিয়ার ভালোবাসায় লিপ্ত কোন প্রদর্শকই তাকে হিদায়াতের পথ দেখাতে পারেনি। আর যে দুনিয়া ত্যাগ করতে পেরেছে কোন পথভ্রষ্টকারীই তাকে বিপন্থগামী করতে পারেনি।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : তিনটি বাক্যের প্রত্যেকটি বাক্যই জাওয়ামিউল কালিম-এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা প্রত্যেকটি কথাই এককভাবে পাপ ও লোকসানের ক্ষেত্রে আসল বা মূলভিত্তি।
মহিলাদের পিছনে রাখার অর্থ হলো- আল্লাহ যেমন তাদের আলোচনা, তাদের হুকুম এবং মরতবা পরে এনেছেন অনুরূপ তোমরাও তাদের পরে রাখ। সালাতে তারা পিছনের কাতারে থাকবে, ঈদের খুত্ববায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের পরে নাসীহাত করতেন। যুদ্ধের ময়দানে তাদের ফ্রন্টে রাখা হবে না বরং পিছনে থাকবে। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; কাশফুল খফায়ি ১ম খণ্ড, ৪৩৪ পৃ.)
পিছনের আরেকটি অর্থ হলো- তাদের পর্দার অন্তরালে রাখা।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৪-[৬০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি আমার উম্মতের ওপর দু’ ব্যাপারে খুব বেশি ভয় করি। প্রবৃত্তির কামনা আর দীর্ঘ হায়াতের আকাঙ্ক্ষা। অতঃপর প্রবৃত্তি সত্য থেকে বাধা দেয় আর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা পরকালকে ভুলিয়ে দেয়। এই যে দুনিয়া! এটা প্রবহমান প্রস্থানকারী এবং ঐ আখিরাত! তা প্রবহমান আগমনকারী। আর এদের প্রত্যেকটির সন্তানাদিও রয়েছে। অতএব যদি তোমার সাধ্য হয়, দুনিয়ার সন্তান না হওয়ার তোমাদের সাধ্যে কুলায় তবে তাই করো। কেননা আজ তোমরা ’আমলের গৃহে রয়েছ, (এখানে কোন হিসাব-কিতাব নেই) আর আগামীকাল তোমরা পরকালের অধিবাসী হবে, আর তথায় কোন ’আমল নেই। (বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وسم: «إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِي الْهَوَى وَطُولُ الْأَمَلِ فَأَمَّا الْهَوَى فَيَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ وَأما طول الأمل فيُنسي الْآخِرَةَ وَهَذِهِ الدُّنْيَا مُرْتَحِلَةٌ ذَاهِبَةٌ وَهَذِهِ الْآخِرَةُ مُرْتَحِلَةٌ قَادِمَةٌ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ فَإِنِ اسْتَطَعْتُم أَن لَا تَكُونُوا بَنِي الدُّنْيَا فَافْعَلُوا فَإِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي دَارِ الْعَمَلِ وَلَا حِسَابَ وَأَنْتُمْ غَدًا فِي دَارِ الْآخِرَةِ وَلَا عَمَلَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10616 ، نسخۃ محققۃ : 10132) * فیہ علی بن ابی علی اللھبی : منکر الحدیث متروک ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : নফস্ বা প্রবৃত্তির খাহেশাত অনেকটাই মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। এটা যখন বিপথে পরিচালিত হয় তখন সেটা হয় নিন্দনীয় এবং আল্লাহর অনভিপ্রেত, দীর্ঘ আশাও মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এটাও যখন হয় হিদায়াত শূন্য এবং দুনিয়ার ভোগ-বিলাস সর্বস্ব তখন সেটাও হয় নিন্দনীয়।
নফস্ বা প্রবৃত্তি মানুষকে সত্যগ্রহণ ও তার আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে রাখে। আর দীর্ঘ আশা আল্লাহর স্মরণ ও তার আনুগত্য থেকে দূরে রাখে। যেমন- অনেক মুসলিমকে বাড়ী-ঘর নির্মাণে ব্যস্ত অবস্থায় সালাতে ডাকলে উত্তর দেয় মসজিদে যাওয়ার সময় নেই, ফকীর ভিক্ষা চাইলে বলে ব্যস্ত আছি দেখ না? দুনিয়া এবং আখিরাতের দৃষ্টান্ত হলো চলমান দুটি বাহনের ন্যায়। তবে এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো দুনিয়া তোমার নিকট থেকে তোমার হায়াতকে নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে আর আখিরাত তোমার নিকট দ্রুত চলে আসছে। এ দুনিয়ার পোষ্য সন্তান রয়েছে, সে সন্তান হলো মানুষ। অর্থাৎ যে দুনিয়ার পিছনে দৌড়ায়, তা কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আখিরাত ভুলে যায় সেই দুনিয়ার সন্তান। পক্ষান্তরে যারা প্রকৃত মুমিন তারা হবে আখিরাতমুখী, এদের জন্য দুনিয়া হলো ‘আমলের গৃহমাত্র।
নাবী (সা.)-এর বাণী : (فَإِنِ اسْتَطَعْتُم أَن لَا تَكُونُوا بَنِي الدُّنْيَا فَافْعَلُو) “যদি তোমার সাধ্য হয়, দুনিয়ার সন্তান না হওয়ায় তবে তাই কর।” এ বাক্যে দুনিয়া বর্জনের পরিপূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। এবং আখিরাত গ্রহণের অধিকতর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অতএব মু'মিন আখিরাতই কামনা করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন : “যে পরকালের ক্ষেত্রে পুণ্যফল কামনা করে আমি তাকে তার ক্ষেত্রে উন্নতি দান করি, আর যে দুনিয়ার ক্ষেত্র কামনা করে আমি তাকে দুনিয়ার কিছু অংশ প্রদান করি কিন্তু পরকালে তার জন্য কোনই অংশ নেই।” (সূরা আশ শূরা- ৪২ : ২০)
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী : (فَإِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي دَارِ الْعَمَلِ) “তোমরা আজ ‘আমলের ঘরে রয়েছে।” অর্থাৎ দুনিয়ায় আজ তোমরা এমন অবস্থানে রয়েছে যে, আখিরাতে তোমাদের নিকট এই দিনের ‘মাল তলব করা হবে। অতএব দুনিয়ার দায়িত্ব পালনের জায়গা মৃত্যু আসার আগেই গ্রহণ কর। তোমার অবস্থান দুনিয়ায় এক ঘণ্টা মাত্র, তাই উচিত তাকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করা ।
হাদীসের বাণী : “আগামীকাল তোমরা এমন ঘরে যাবে যেখানে কোন ‘আমাল নেই।” আগামীকালের ঘর হলো আখিরাতের ঘর। সেখানে হিসাব দিয়ে সাওয়াব অথবা শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। সেখানে কোন ‘আমল করার সুযোগ নেই। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ দৃষ্টান্ত দ্বারা দুনিয়ার তুচ্ছতা এবং দ্রুত ধ্বংস হওয়ার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আখিরাতের প্রতি তা'যীম ও প্রস্তুতির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা আখিরাতের ঘর চিরস্থায়ী এবং চির সুন্দর। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ আন্ হাকায়িকিস্ সুনান ১০ম খণ্ড, ৩৩০২ পৃ., লু'আতুত্ তানকীহ ৮ম খণ্ড, ৪৪২ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৭-[৬৩] শাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, [রসূল (সা.) বলেছেন] হে লোক সকল! দুনিয়া একটি অস্থায়ী সম্পদ। তা হতে পুণ্যবান ও পাপী উভয়ে ভোগ করে থাকে। আর পরকাল একটি সত্য প্রতিশ্রুতি। সেখানে বিচার করবেন ন্যায়পরায়ণ সর্বসময় শক্তির অধিকারী বাদশাহ। তিনি (নিজ ফায়সালায়) সত্যকে বহাল রাখবেন এবং বাতিলকে মুছে ফেলবেন। অতএব তোমরা পরকালের সন্তান হও, ইহকালের সন্তান হয় না। কেননা প্রত্যেক মাতার সন্তান তার অনুগামী হয়ে থাকে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ شَدَّادٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ الدُّنْيَا عَرَضٌ حَاضِرٌ يَأْكُلُ مِنْهَا الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ وَإِنَّ الْآخِرَةَ وَعْدٌ صَادِقٌ يَحْكُمُ فِيهَا مَلِكٌ عَادِلٌ قَادِرٌ يُحِقُّ فِيهَا الْحَقَّ وَيُبْطِلُ الْبَاطِلَ كُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا فَإِنَّ كل أم يتبعهَا وَلَدهَا»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ ابو نعیم فی حلیۃ الاولیاء (1 / 264 ، 265) * فیہ ابو مھدی سعید بن سنان : متروک متھم ۔
(ضَعِيف)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৯-[৬৫] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হাদীসটি নবী (সা.) পর্যন্ত পৌছিয়ে বলেছেন: যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলেন, (এ ব্যক্তি) পরকালের জন্য অগ্রিম কী পাঠিয়েছে? আর আদম সন্তান (ওয়ারিসগণ) বলে, সে কী রেখে গেছে? (বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَبْلُغُ بِهِ قَالَ: إِذَا مَاتَ الْمَيِّتُ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ: مَا قَدَّمَ؟ وَقَالَ بَنُو آدَمَ: مَا خَلَّفَ؟ «. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي» شعب الْإِيمَان
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10475 ، نسخۃ محققۃ : 9992) * الاعمش مدلس و عنعن و کذا عبد الرحمن بن محمد المحاربی من المدلسین و فیہ علۃ أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : হাদীসের বাণী (إِذَا مَاتَ الْمَيِّتُ) বাক্যটি (مَجَازِ) (রূপকার্থে) বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জীবিত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে থাকে। কিন্তু যা অনিবার্যভাবেই হতে যাচ্ছে তা তার আগেই সেই নামে প্রকাশ করা কুরআন হাদীসে অনেক ব্যবহার বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন (اِنَّکَ مَیِّتٌ وَّ اِنَّهُمۡ مَّیِّتُوۡنَ) “আপনি মাইয়্যিত তারাও মাইয়্যিত।” (সূরা আয যুমার ৩৯ : ৩০)।
মালাক (ফেরেশতা) বলে সে কী আগে পাঠিয়েছে? অর্থাৎ সে কী কী নেক আমল করে পরকালের জন্য পাঠিয়েছে? পক্ষান্তরে মানুষ মৃত ব্যক্তির বাড়ী এসে বলে সে সহায় সম্পদ কী রেখে গেছে?
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মালায়িকার জিজ্ঞেস হলো ‘আমল সম্পর্কে, যাতে তার জন্য সাওয়াব ও তার প্রতিদান দেয়া যায় অথবা গুনাহের কারণে তার জন্য শাস্তি নির্ধারিত হয়। পক্ষান্তরে ওয়ারিস বা প্রতিবেশীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার সম্পদ, যাতে তারা তাতে ভাগ বসাতে পারে এবং নিজ নিজ অংশ সংগ্রহ করতে পারে। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ লিত্ব ত্বীবী ১০ম খণ্ড, ৩৩০৫ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২২০-[৬৬] মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। লুকমান ’আলায়হিস সালাম নিজ পুত্রকে লক্ষ্য করে বললেন: হে বৎস! মানুষের সাথে যে সমস্ত বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে, (যথা- মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ, পুরস্কার বা শাস্তি) তার দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর তারা পরকালের দিকে অতি দ্রুত চলে যাচ্ছে। হে বৎস! তুমি যেদিন জন্ম নিয়েছ সেদিন হতে তুমি দুনিয়াকে পিছনে ছেড়ে আসছ এবং ক্রমশ পরকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর নিশ্চয় যে ঘরের দিকে (পরকালের দিকে) তুমি যাচ্ছ, তা ঐ ঘর অপেক্ষা তোমার অতি নিকটবর্তী, যে ঘর হতে তুমি বের হচ্ছ (দুনিয়া হতে)। (রযীন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ لُقْمَانَ قَالَ لِابْنِهِ: «يَا بُنَيَّ إِنَّ النَّاسَ قَدْ تَطَاوَلَ عَلَيْهِمْ مَا يُوعَدُونَ وَهُمْ إِلَى الْآخِرَةِ سرَاعًا يذهبون وَإنَّك قداستدبرت الدُّنْيَا مُنْذُ كُنْتَ وَاسْتَقْبَلْتَ الْآخِرَةَ وَإِنَّ دَارًا تسيرإليها أقربُ إِليك من دارٍ تخرج مِنْهَا» . رَوَاهُ رزين
لم اجدہ ، رواہ رزین (لم اجدہ) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : আরবী ভাষায় ছোট ছেলেকে (يَا بُنَىَّ) বলে ডাকা হয়, এ ডাকে রয়েছে স্নেহবাৎসল্য ও অত্যধিক ভালোবাসা। ইয়াকূব আলায়হিস সালাম তার ছেলেকে বলেছিলেন, (یٰبُنَیَّ لَا تَقۡصُصۡ رُءۡیَاکَ عَلٰۤی اِخۡوَتِکَ) “হে বৎস! তুমি তোমার স্বপ্নের কথা ভাইদের কাছে প্রকাশ করো না...”- (সূরাহ্ ইউসুফ ১২ : ৫)। আল্লাহ তা'আলা এ ভাষাকে আল কুরআনে চয়ন করেছেন, অতএব এটি এখন কুরআনী ভাষা।
আদাম 'আলায়হিস সালাম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের নিকট আল্লাহর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতির মেয়াদ দীর্ঘ হয়ে গেছে। তাদের প্রতি প্রতিশ্রুত বিষয়গুলো হলো পুনরুত্থান, হিসাব, হিসাবান্তে তার বিনিময় (সাওয়াব কিংবা শাস্তি)।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : যে বিষয়ে তাদের ওয়াদা দেয়া ছিল তা দীর্ঘ হয়ে গেছে। আর তারা আখিরাতের দিকে দ্রুত রওয়ানা হয়েছে কিন্তু তাদের সে অনুভূতি নেই।
হাদীসের বাণী : (وَهُمْ إِلَى الْآخِرَةِ سرَاعًا) বাক্যটির ব্যাখ্যা হলো, “প্রতিশ্রুতির পর মানুষের দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেছে আর প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে, প্রত্যেকেই দ্রুত সেদিকে দৌড়ে চলছে কিন্তু নৌকার আরোহীর মতো ভ্রমণরত কাফেলার সে অনুভূতি নেই।” লুকমান 'আলাইহিস সালাম আরো বলেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি এ দুনিয়া ধরার জন্য যে দৌড় দিচ্ছ তাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকে পিছনেই ফেলে আসছ। আর ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তুমি এগিয়ে যাচ্ছ আখিরাতের দিকে। তুমি আরো জেনে রেখ, তোমার সামনের ঘর অতি নিকটে আর পিছনের ঘর অনেক দূরে পড়ে গেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ লিত্ব ত্বীবী ১০ম খণ্ড, ৩৩০৫ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২২৩-[৬৯] মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট এ সংবাদ পৌছেছে যে, লুকমান হাকীম আলায়হিস সালাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা আপনাকে যে মর্যাদায় দেখছি, সে মর্যাদায় আপনি কিভাবে পৌছেছেন? তিনি বললেন: সত্য কথা বলা, আমানাত যথাযথ পরিশোধ করা এবং অর্থহীন কাজ বর্জন করার মাধ্যমে। (মুওয়াত্ত্বা)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: بَلَغَنِي أَنَّهُ قِيلَ لِلُقْمَانَ الْحَكِيمِ: مَا بَلَغَ بِكَ مَا ترى؟ يَعْنِي الْفَضْلَ قَالَ: صِدْقُ الْحَدِيثِ وَأَدَاءُ الْأَمَانَةِ وَتَرْكُ مَا لَا يَعْنِينِي. رَوَاهُ فِي «الْمُوَطَّأِ»
اسنادہ ضعیف ، رواہ مالک فی الموطا (2 / 990 ح 1926 بدون سند) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত প্রথম (مَا) টি ইস্তিফাহাম বা প্রশ্নবোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বাক্যটি এভাবে হয় : (أَيُّ شَيْءٍ أَوْصَلَكَ هٰذِهِ الْمَرْتَبَةِ الَّتِي نَرَ اهَا فِياكَ مَنَ الْفَضِياَةِ الزَّائِدَةِعَلٰ غَيْرِكَ) অন্য সকলের ওপর তোমার যে বিশেষ মর্যাদা আমরা তোমার মধ্যে প্রত্যক্ষ করছি কোন জিনিস তোমাকে এই মর্যাদার স্থানে পৌঁছিয়েছে?
উত্তরে তিনি বললেন, (صِدْقُ الْحَدِيثِ) বা সত্যবচন, এ সত্য নিজের কথার ক্ষেত্রে যেমন অন্যের কথা নকল করার ক্ষেত্রেও তেমন। অনুরূপ আমানত আদায় করাটাও। পূর্বের হাদীসের মতোই সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর সকল প্রকার অনর্থক কাজ ও কথা-বার্তা ত্যাগ করা। অর্থাৎ যা উপকার দেয় না তা যে স্তরেই। হোক না কেন লুকমান তা বর্জন করে চলতেন। এসব গুণাবলি তাকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ মুওয়াত্ত্বা মালিক ৯ম খণ্ড, হা. ১৮০৩; আল লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৪৮ পৃ.; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৬ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২২৪-[৭০] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কিয়ামত দিবসে) আমালসমূহ উপস্থিত হবে। (সর্বপ্রথম) “সলাত” এসে বলবে : হে আমার প্রভু! আমি সলাত। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি কল্যাণময়। অতঃপর সাদাকা এসে বলবে, হে আমার প্রভু! আমি সাদাকা। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি কল্যাণময়। অতঃপর সিয়াম এসে বলবে, হে আমার প্রভু! আমি “সিয়াম”। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমিও কল্যাণময়। অতঃপর অন্যান্য ’আমালসমূহ এরূপ আসবে এবং আল্লাহ। তা’আলাও বলবেন, তুমি কল্যাণময়। তারপর “ইসলাম” এসে বলবে, হে রব! তোমার এক নাম সালাম। আর আমি হলাম “ইসলাম”। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমিও কল্যাণময়। নিশ্চয় আজ আমি তোমার কারণেই পাকড়াও করব এবং তোমার ওয়াসীলায় সাওয়াব দান করব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবে বলেছেন : (وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ) “এবং যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন অন্বেষণ করে, তার থেকে তা কক্ষনোই গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”- (সূরাহ্ আ-লি “ইমরান ৩: ৮৫)।”
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَجِيء الْأَعْمَال فتجيء الصَّلَاة قتقول: يارب أَنَا الصَّلَاةُ. فَيَقُولُ: إِنَّكِ عَلَى خَيْرٍ. فَتَجِيءُ الصَّدَقَة فَتَقول: يارب أَنَا الصَّدَقَةُ. فَيَقُولُ: إِنَّكِ عَلَى خَيْرٍ ثُمَّ يَجِيء الصّيام فَيَقُول: يارب أَنَا الصِّيَامُ. فَيَقُولُ: إِنَّكَ عَلَى خَيْرٍ. ثُمَّ تَجِيءُ الْأَعْمَالُ عَلَى ذَلِكَ. يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: إِنَّكِ عَلَى خَيْرٍ. ثُمَّ يَجِيءُ الْإِسْلَامُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَنْتَ السَّلَامُ وَأَنَا الْإِسْلَامُ. فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: إِنَّكَ عَلَى خَيْرٍ بِكَ الْيَوْمَ آخُذُ وَبِكَ أُعْطِي. قَالَ اللَّهُ تَعَالَى فِي كِتَابِهِ: (وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَة من الحاسرين)
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 362 ح 8727) * عباد بن راشد صدوق لکنہ وھم فی قولہ :’’ الحسن ثنا ابو ھریرۃ ‘‘ و الصواب ان الحسن لم یسمع من ابی ھریرۃ رضی اللہ عنہ ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : মানুষের ‘আমালসমূহ কিয়ামত দিবসে আকৃতি ধারণ করে আল্লাহর সমীপে হাযির হবে। নেক আমল মালিকের পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ পেশ করে সুপারিশ করবে। পক্ষান্তরে আমলের বিরুদ্ধাচারী ও আমল বর্জনকারীদের বিরুদ্ধে বিতর্কে লিপ্ত হবে।
সলাত তার কথা বলার ভাষায় বলবে অথবা উপস্থিত তাকে যে বলার শক্তি দেয়া হবে সেই যবানে কথা বলবে। কেউ কেউ বলেছেন, আমলের দেহ বা আকৃতি ধারণের অর্থ হলো তার আসার বা চিহ্ন প্রকাশ হওয়া।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সলাত বলবে- আমার শাফা'আতের অধিকার রয়েছে, কেননা আমি হলাম দীনের স্তম্ভ। এভাবে বিভিন্ন আমাল এসে আল্লাহর সমীপে বান্দার পক্ষে কথা বলবে। আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেকটি আ'মালেরই কথার জওয়াব দিবেন। সর্বশেষে ইসলাম এসেও আল্লাহর সাথে কথা বলবে। আল্লাহ তা'আলা তার কথারও উত্তর দিবেন। ইসলাম বলবে- হে আল্লাহ তা'আলা! তুমি সালাম আর আমি ইসলাম। আমাদের উভয়ের মাঝে ইসমে ইস্তিকাক তথা গঠন রূপান্তরের সম্পর্ক ও চিহ্নগত মিল রয়েছে।
অতএব সেই ভিত্তি আমাকে প্রতিষ্ঠাকারীকে দারুস সালাম তথা জান্নাতে প্রবেশের দাবী রাখে।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলবেন, হ্যাঁ, আজ তোমার কারণেই আমি শাস্তির জন্য পাকড়াও করব এবং তোমার কারণেই সম্মানিত করব ও পুরস্কার দেব। এরপর কুরআনের উক্ত আয়াত পাঠ করবেন। আয়াতের মধ্যে ইশারা রয়েছে যারা ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে তারা চিরস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে না বরং সফলকামী ও মুক্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ প্রাগুক্ত, আল লুম্'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৪৯ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২২৮-[৭৪] ইবনু মাস্উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করলেন : (فَمَنۡ یُّرِدِ اللّٰهُ اَنۡ یَّهۡدِیَهٗ یَشۡرَحۡ صَدۡرَهٗ لِلۡاِسۡلَامِ) “আল্লাহ তা’আলা যাকে হিদায়াত দান করার ইচ্ছা করেন, তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন”- (সূরাহ্ আল আ’আম ৬ : ১২৫)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : হিদায়াতের আলো যখন হৃদয়ে প্রবেশ করে তখন তা (ইসলামের বিধানসমূহ গ্রহণ করার জন্য) উন্মুক্ত হয়ে যায়। তখন জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! সে অবস্থা জানার কোন চিহ্ন বা নিদর্শন আছে কি যার দ্বারা তাকে চেনা যাবে? তিনি (সা.) বললেন : হ্যা, আছে। প্রতারণার ঘর (দুনিয়া) হতে দূরে সরে থাকা ও চিরস্থায়ী ঘর (আখিরাত)-এর প্রতি ঝুঁকে পড়া এবং মৃত্যু আসার পূর্বে মৃত্যর জন্য প্রস্তুত থাকা।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ) فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ النُّورَ إِذَا دَخَلَ الصَّدْرَ انْفَسَحَ» . فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِتِلْكَ مِنْ عِلْمٍ يُعْرَفُ بِهِ؟ قَالَ: «نَعَمْ التَّجَافِي مِنْ دَارِ الْغُرُورِ وَالْإِنَابَةُ إِلَى دَارِ الْخُلُودِ وَالِاسْتِعْدَادُ لِلْمَوْتِ قبل نُزُوله»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10552 ، نسخۃ محققۃ : 10068) * عدی بن الفضل : متروک ۔
(ضَعِيف)
ব্যখ্যা : (إِنَّ النُّورَ إِذَا دَخَلَ الصَّدْرَ انْفَسَحَ) যখন অন্তরে হিদায়াতের নূর প্রবেশ করে তখন তা প্রশস্ত এ উন্মুক্ত হয়ে যায়। এ বাক্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার অন্তর এমনভাবে প্রশস্ত হয়ে যায় যে, ইসলামের বিধানাবলী সে অতি সহজে গ্রহণ করে নেয় এবং এগুলো অনুশীলনে এক স্বর্গীয় স্বাদ অনুভব করে।
হিদায়াতের নূরে আলোকিত এবং উন্মুক্ত অন্তরের চিহ্ন হলো :
১. প্রতারণার ঘর থেকে দূরে থাকা। প্রতারণার ঘর হলো দুনিয়া। আল্লাহ বলেন : (فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا) “অতঃপর দুনিয়ার জীবন তোমাদেরকে যেন ধোঁকায় না ফেলে....।” (সূরা লুকমান ৩১ : ৩৩)
২. চিরস্থায়ী ঘরের দিকে ঝুঁকে পড়া। অর্থাৎ পরিপূর্ণ এবং একান্তভাবে আখিরাতমুখী হওয়া।
৩. আর মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া, এর অর্থ হলো মৃত্যুর পূর্বেই তাওবা-ইস্তিগফার এবং “ইবাদতের প্রতিযোগিতায় সাধ্যমত সময় ব্যয় করা। মৃত্যুর পূর্ব হলো বার্ধক্য, অসুস্থতা ইত্যাদি যে সময় স্বাভাবিক ‘ইবাদাত-বন্দেগী করা সম্ভব হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৮ পৃ.; আল লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৫২ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২২৯-[৭৫], ৫২৩০-[৭৬] আবু হুরায়রাহ্ ও আবূ খল্লাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যখন তোমরা কোন বান্দাকে দেখবে যে, তাকে দুনিয়ার প্রতি অনাকাঙ্খী ও স্বল্পালাপী (এ দুটি গুণ) দান করা হয়েছে, তার সহচার্য লাভ করো। কেননা তাকে সূক্ষ্ম জ্ঞান দেয়া হয়েছে। (উপরের হাদীস দু’টি ইমাম বায়হাক্বী’র “শুআবুল ঈমানে” রিওয়ায়াত করেছেন)৭৫
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي خَلَّادٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الْعَبْدَ يُعْطِي زُهْدًا فِي الدُّنْيَا وَقِلَّةَ مَنْطِقٍ فَاقْتَرِبُوا مِنْهُ فَإِنَّهُ يلقى الْحِكْمَة» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (4985 ، نسخۃ محققۃ : 4631 من حدیث ابی ھریرۃ رضی اللہ عنہ) * سندہ ضعیف ، فیہ ابن لھیعۃ وھو ضعیف لاختلاطہ و للحدیث طریق آخر عند ابن ماجہ (4101) من حدیث ابی خلاد بہ و سندہ ضعیف و للحدیث طریق موضوع فی حلیۃ الاولیاء (7 / 317) !! ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (زُهْدً) -এর অর্থ (قِلَّةَ رَغْبَةٍ) তথা দুনিয়ার প্রতি খুব হালকা আশা, দুনিয়াবিমুখ, সংসারত্যাগী ইত্যাদি।
(قِلَّةَ مَنْطِقٍ) হলো কম কথা বলা, অনর্থক এবং প্রবৃত্তির চাহিদামত কথা না বলা। (فَاقْتَرِبُوا مِنْهُ) তার নৈকট্য অর্জন কর, অর্থাৎ তার সংস্বর্গে যাওয়ার চেষ্টা কর এবং তার মাজলিসে বস।
(حِكْمَةٌ) অর্থ জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রজ্ঞা। এখানে অর্থ বুঝানো হয়েছে (الْمَوْعِظَةُالْحَسَنَةُ) উত্তম নাসীহাত, কিতাব ও সুন্নাহর ওয়াজ।
মিরক্বাত গ্রন্থকার বলেন, (حِكْمَةٌ) শব্দের অর্থ হলো ‘ইলম ও ‘আমালে ইসলামী শরীআতের উৎকর্ষ সাধন। আল্লাহ বলেন, (مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرً) “যাকে হিকমাহ্ (কুরআন সুন্নাহর ‘ইলম) দান করা হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।” (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬৯)
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৮ পৃ.; লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৫৩ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৭-[১৭] উমাইয়্যাহ্ ইবনু খালিদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আসীদ (রহিমাহুল্লাহ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) গরীব মুহাজিরদের ওয়াসীলায় বিজয় কামনা করতেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أُمَيَّةَ بْنِ خَالِدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بن أسيد عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ كَانَ يَسْتَفْتِحُ بِصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 264 ح 4062) * السند مرسل و سفیان الثوری و ابو اسحاق مدلسان و عنعنا ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : বর্ণনাকারী উমাইয়্যাহ্ ইবনু খালিদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ (সা.) (সা.)-এর সাথে তার সাহচর্য' সাব্যস্ত নয়।” মূলত হাদীসটি মুরসাল। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, তবে এটি মুরসালুত তাবিঈ, আর মুরসালু তাবিঈ জামহূরের নিকট দলীলযোগ্য।
(يَسْتَفْتِحُ) “তিনি বিজয় প্রার্থনা করতেন”, অর্থাৎ তিনি কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় প্রার্থনা করতেন (بِصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ) দুর্বল, রিক্তহস্ত মুহাজিরীন সাহাবীদের মাধ্যমে। তাদের সাথে নিয়ে তিনি (সা.) আল্লাহর দরবারে দু'আ করতেন অথবা তাদের দ্বারা দু'আ করাতেন। ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, এভাবে বলতেন, (اَللّٰهُمَّ انْصُرْنَاعَلَى الْأَعْدَاءِبِحَقٌِ عِبَادِكَ الْفُقَرَاءِالْمُهَاجِرِينَ) ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে তোমার বান্দা গরীব মুহাজিরদের মাধ্যমে সাহায্য কর।'
এতে গরীবদের সম্মান এবং মর্যাদা প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের দু'আর প্রতিও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাদের প্রতি এ তাগিদ এজন্য যে, তারা ছিলেন একাধারে ফকীর, গরীব, মাযলুম, মুজাহিদ, মুজতাহিদ। অতএব তাদের দু'আর প্রভাব সর্বসাধারণের দু'আর উপর বেশি আশা করা যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ লিত্ ত্বীবী ১০ম খণ্ড, হা. ৩৩১৪, ১৫ পৃ.; মাত্বালিউল আনোয়ার লি ইবরাহীম ইবনু ইউসুফ ৫ম খণ্ড, ১৮৮ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৮-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা কোন পাপীর ধন-সম্পদ দেখে ঈর্ষায় পতিত হয়ো না। কারণ তুমি জানো না মৃত্যুর পর সে কি অবস্থার মুখোমুখি হবে। নিশ্চয় তার জন্য আল্লাহর কাছে এমন সংহারকারী রয়েছে যার মৃত্যু নেই তথা (জাহান্নামের) আগুন। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَغْبِطَنَّ فَاجِرًا بِنِعْمَةٍ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا هُوَ لَاقٍ بَعْدَ مَوْتِهِ إِنَّ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ قَاتِلًا لَا يَمُوتُ» . يَعْنِي النَّارَ. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 294 ۔ 295 ح 4103) * فیہ جھم بن اوس : لایعرف و عبداللہ بن ابی مریم : لم یوثقہ غیر ابن حبان ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : (فَاجِرً) শব্দের অর্থ পাপাচারী, লম্পট। এখানে উদ্দেশ্য কাফির ফাসিক, বেদীন। (نِعْمَة) দ্বারা উদ্দেশ্য দীর্ঘ জীবন, অধিক সন্তান-সন্ততি এবং অঢেল সহায় সম্পদ।
(لَاتَغْبِطَنَّ) তোমরা গিবত্বা করবে না; গিবত্বা হলো অপরের সম্পদ দেখে তা নিজের মধ্যে হওয়ার আশা করা। এটা বৈধ, কিন্তু যারা পাপাচারী কাফির তাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত নি'আমাতসমূহ দেখে তা পাওয়ার আশা করো না। কেননা তারা এসব নি'আমাতের যথার্থ শুকরিয়া আদায় না করার কারণে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন না করার কারণে মৃত্যুর পর এমন এক কঠিন প্রতিশোধ এবং কষ্ট-ক্লেশ অর্থাৎ জাহান্নামের মধ্যে নিগৃহীত অবস্থায় পতিত হবে যেখান থেকে আর কখনো বের হতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৫ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৪৯-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুনিয়া হলো মুমিনদের জন্য কয়েদখানা ও দুর্ভিক্ষ (স্থান), আর যখন সে দুনিয়া ত্যাগ করল তখন সে জেলখানা ও দুর্ভিক্ষ উভয়টি মুক্ত হল। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَسَنَتُهُ وَإِذَا فَارَقَ الدُّنْيَا فَارَقَ السجنَ والسنةَ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 297 ح 4106) [و احمد (2 / 197 ح 6855) و الحاکم (4 / 315)] * عبداللہ بن جنادۃ المعافری : لم یوثقہ غیر ابن حبان ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা'তালা মু'মিনের জন্য আখিরাতে যে নি'আমাতাজি এবং প্রতিদান তৈরি করে রেখেছেন তার তুলনায় দুনিয়া হলো কয়েদখানা ও দুর্ভিক্ষের স্থান। কয়েদখানায় মানুষ যেমন জীবন বাঁচানোর তাগিদে কোন মতো নগণ্য স্বাদযুক্ত খাদ্য খেয়ে থাকে, দুনিয়াও মু'মিনের জন্য তাই। তাছাড়া জেলখানায় যেমন স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তা পাওয়া এবং খাওয়া যায় না, মু'মিনের জন্য দুনিয়া ঠিক অনুরূপ। একই মতো দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ যেমন যথেচ্ছা খাদ্য পায় না, মু'মিনের জন্য দুনিয়া ঠিক অনুরূপ। কিন্তু কাফিরদের জন্য দুনিয়া হলো জান্নাত, এজন্যই দুনিয়াকে কাফিরদের জান্নাত বলা হয়ছে। যথেচ্ছা ঘুরে ফিরে যা ইচ্ছা তাই খাওয়ার মত। তাদের হালাল হারামের কোন পরোয়া নেই, বাধা দেয়ারও কেউ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ লিত্ ত্বীবী ১০ম খণ্ড, ৩৩১৫ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫২-[২২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক ব্যক্তি নাবী (সা.) -এর কাছে এসে বলল: (হে আল্লাহর নবী!) আমি আপনাকে মুহাব্বাত করি। তিনি (সা.) বললেন: একবার ভেবে দেখো তুমি কী বলছ! সে আবার বলল: আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে ভালোবাসি। এভাবে সে তিনবার বলল। এবার তিনি বললেন: যদি তুমি তোমার এ কথায় সত্যবাদী হও, তবে দরিদ্রতার বর্ম প্রস্তুত করে রাখো। কেননা যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে, দরিদ্রতা তার কাছে বন্যার গতি অপেক্ষা তার দিকে অতি দ্রুত পৌছে। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন: এ হাদীসটি গরীব।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّكَ. قَالَ: «انْظُرْ مَا تَقُولُ» . فَقَالَ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. قَالَ: «إِنْ كُنْتَ صَادِقًا فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافًا لَلْفَقْرُ أسرعُ إِلى من يحبُّني من السَّيْل إِلَى مُنْتَهَاهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2350) * روح بن اسلم ضعیف ضعفہ الجمھور و للحدیث شواھد ضعیفۃ عند البغوی (شرح السنۃ : 4067) وغیرہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: প্রত্যেক সহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ভালোবাসতেন, কিন্তু অত্র হাদীসে বর্ণিত সাহবীর ভালোবাসার দাবী ছিল পরিপূর্ণ এবং প্রভাবপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাকে সে ভালোবাসার দাবীর প্রতি ভালো করে চিন্তা-ভাবনা করে বলার পরামর্শ দেন, কারণ সে যে দাবী করছে এটি এক মহা দাবী এবং বিশাল প্রস্তাব, এর জন্য রয়েছে জীবনের নানা ঝুঁকি।
হাদীসের শব্দ (تِجْفَافًا) এর অর্থ যুদ্ধ বর্ম এবং ঢাল। পাশ্চাত্য ভাষায় (هُوَشَيْءٌيُلْبَسُ عَلَى الْخَيْلِ عِنْدَالْحَرْبِ،كَأَنَّهٗ دِرْعٌ) এটা এমন একটি বস্তু যা যুদ্ধের সময় যুদ্ধের ঘোড়াকে পরিধান করানো হয়, যা বর্ম হিসেবে কাজ করে। কামূস অভিধানবিদ বলেন, ওটা এমন একটি যুদ্ধাস্ত্র যা ঘোড়া এবং মানুষ উভয়েই যুদ্ধকালে পরিধান করে থাকে। অতএব হাদীসের অর্থ আসে এই যে, “তুমি যদি তোমার ভালোবাসার দাবীতে সত্যবাদীই হয়ে থাক তাহলে ক্ষুধা, দারিদ্রতা, বিপদ-মুসীবাত, শূন্যতা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও সবরের পোষাক পরে তার মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।”
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমাকে যে মুহাব্বাত করে তার নিকট এসব পরীক্ষা এবং কষ্টসমূহ প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত বন্যার পানির মতো তরঙ্গায়িত হবে। কেননা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিপদ মুসীবাত এসেছে নবীদের ওপর, এরপর তুলনামুলক তার নীচের লোকেদের ওপর। এদের মধ্যে শেষ নবীর ওপর বেশি বালা-মুসীবাত আপতিত হয়েছে, তার অনুসারীদের ওপর এরই তুলনামূলক অংশ প্রযোজ্য হবে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৫০; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৬-১৭ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৫৬-[২৬] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: দু’টি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান আছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল লোকেদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন। (প্রথমত) দীনী ব্যাপারে যে লোক নিজের চাইতে উত্তম ও উচ্চমানের তার প্রতি দৃষ্টি রেখে তার অনুকরণ করে। (দ্বিতীয়ত) দুনিয়াবী ব্যাপারে সে এমন লোকের দিকে দৃষ্টি রাখে, যে তার চাইতে নিম্নস্তরের। অতএব সে আল্লাহর প্রশংসা করে যে আল্লাহ তাকে এ ব্যক্তির ওপর সম্মান দান করেছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে শোকরগুজার ও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর যে লোক দীনদারীর ব্যাপারে এমন লোকের দিকে তাকায়, যে তার অপেক্ষা নিম্নস্তরের আর পার্থিব ব্যাপারে সে এমন লোকের দিকে তাকায়, যে তার অপেক্ষা উচ্চপর্যায়ের এবং সে আক্ষেপ করতে থাকে ঐ সকল বস্তুর জন্য যা তার হাতছাড়া হয়েছে। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ শোকরগুজার ও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন না। (তিরমিযী)
আবু সাঈদ-এর বর্ণিত হাদীস (أَبْشِرُوايَامَعْشَرَصَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ) ফাযায়িলে কুরআন-এর পরের অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَصْلَتَانِ مَنْ كَانَتَا فِيهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شاكراً: مَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَاقْتَدَى بِهِ وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ فَحَمِدَ اللَّهَ عَلَى مَا فَضَّلَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شَاكِرًا صَابِرًا. وَمَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَأَسِفَ عَلَى مَا فَاتَهُ مِنْهُ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ شَاكِرًا وَلَا صَابِرًا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي سَعِيدٍ: «أَبْشِرُوا يَا مَعْشَرَ صَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ» فِي بَابٍ بَعْدَ فَضَائِلِ الْقُرْآنِ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2512) * مثنی بن الصباح : ضعیف ۔ 0 حدیث ابی سعید تقدم (2198) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : সবর এবং শোকর ঈমানের পূর্ণতার গুণ। অর্থাৎ যে এ দু'টি গুণ অর্জন করে সে পূর্ণ ঈমান লাভ করে। হাদীসে বর্ণিত আছে “ঈমান আধা-আধিভাবে বিভক্ত, অর্ধেক ধৈর্য আর অর্ধেক শোকর। (বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান ৭/১২৩ পৃ, হা. ৯৭১৫)
জামি' গ্রন্থে আরো উল্লেখ আছে যার মধ্যে এ দু'টি গুণ নেই আল্লাহ তা'আলা তাকে কৃতজ্ঞ এবং ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন না।
ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা গুণ দু’টি অর্জনের বৈশিষ্ট্য হলো দীনের ক্ষেত্রে উপরের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা এবং দুনিয়ার ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে নীচের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা। অর্থাৎ দীন পালনে তোমার চেয়ে যে বেশি পরহেযগার ও ‘আমলকারী তুমি তার প্রতি লক্ষ্য কর পক্ষান্তরে দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও আরাম-আয়েশের উপকরণের ক্ষেত্রে যে তোমার চেয়ে নীচের অবস্থানে আছে তুমি তার প্রতি লক্ষ্য কর। তুমি যতটুক পেয়েছ তার উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, আর তোমার যা নেই তাতে ধৈর্য অবলম্বন কর। এতে আল্লাহ তোমাকে পূর্ণ মুমিন হিসেবে গণ্য করবেন।
যারা দীনের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ আমলে-আখলাকে, পরহেজগারিতায় তার চেয়ে নিম্নমানের লোকেদের সাথে নিজের তুলনা করে নিজেকে তাদের চেয়ে ভালো মনে করে বেশি বেশি ‘আমল থেকে বিমুখ হয়ে থাকে আর দুনিয়ার ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উপরের অর্থাৎ সম্পদশালী লোকেদের সম্পদ ও বিলাস-ব্যসনের প্রতি লক্ষ্য করে এবং নিজের কাছে এরূপ ধন-সম্পদ না থাকায় পরিতাপ করে আল্লাহ তা'আলা তাদের শোকরগুজার এবং ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন না।
আল্লাহ তা'আলা বলেন : (لِّکَیۡلَا تَاۡسَوۡا عَلٰی مَا فَاتَکُمۡ وَ لَا تَفۡرَحُوۡا بِمَاۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ) “এটা এজন্য বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তজ্জন্যে উল্লাসিত হও।” (সূরা আল হাদীদ ৫৭:২৩)।
হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে দুনিয়া না পাওয়ায় যে পরিতাপ করে জাহান্নাম তার এক হাজার বছরের নিকটে হয়ে যায়, পক্ষান্তরে যে, আখিরাতের কোন কিছু হারানোর কারণে পরিতাপ করে সে জান্নাতের এক হাজার বছরের পথ নিকটে হয়ে যায়। (জামিউস্ সগীর ২/৫১৩ পৃ., হা. ৮৪৩২)।
দুনিয়ার সম্পদের প্রতি অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা এবং দীনের কর্মে উদাসীনতা এটা কাফির মুশরিকদের স্বভাব। মুমিনের কর্তব্য হবে অপরের বেশি সম্পদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা বরং অপরের বেশি ঈমান-আমাল দেখে নিজে ঐরূপ ‘আমালকারী হওয়ার চেষ্টা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহঃ তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৫১২)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৬০-[৩০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার মধ্য হতে তিনটি জিনিসকে ভালোবাসতেন- খাদ্য, নারী ও সুগন্ধি। এর মধ্যে দু’টি তো তিনি অর্জন করেছেন, আর একটি লাভ করেননি। লাভ করেছেন নারী ও সুগন্ধি। আর (পর্যাপ্ত পরিমাণ) খাদ্য লাভ করেননি। (আহমাদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ مِنَ الدُّنْيَا ثَلَاثَةٌ الطَّعَامُ وَالنِّسَاءُ وَالطِّيبُ فَأَصَابَ اثْنَيْنِ وَلَمْ يُصِبْ وَاحِدًا أَصَابَ النِّسَاءَ وَالطِّيبَ وَلَمْ يُصِبِ الطَّعَامَ. رَوَاهُ أَحْمد
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (6 / 72 ح 24944) * فیہ رجل : مجھول و الحدیث الآتی (5261) یغنی عنہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দুনিয়ার পছন্দনীয় তিনটি বস্তু ভোগ্য এবং জৈবিক চাহিদার উদ্দেশে ছিল
১) খাদ্য পছন্দনীয় ছিল দেহের সুস্থতা রক্ষা এবং ‘ইবাদতে শক্তি অর্জনের জন্য। সুখাদ্য সকল মানুষের মৌলিক অধিকারও বটে, অতএব এটাই ছিল তার প্রিয় হওয়ার কারণ।
২) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট নারী পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। জাহিলী যুগে নারীর মাতৃত্বের অথবা স্ত্রীত্বের কোনই মর্যাদা ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) যথাস্থানে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে নারীকে তার সঠিক আসনে অধিষ্ঠিত করাই এ ভালোবাসার উদ্দেশ্য। অন্যথায় তিনি আরবের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী নারীদের বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বহু সন্তানের জননী বিধবা নারী পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী খাদীজাকে বিবাহ করে যৌবন ও জীবনের বৃহৎ অংশ অতিবাহিত করতেন না। সর্বোপরি হীন ও ঘৃণ্য ইচ্ছার অবলুপ্তি ঘটিয়ে উত্তম ও পবিত্র বস্তুর মাধ্যমে পার্থিব প্রশান্তি লাভ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
৩) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট সুগন্ধি পছন্দনীয় ছিল। কতিপয় চিকিৎসাবিদের মতে এটা হলো মস্তিষ্ক সুস্থতার অন্যতম উপকরণ। উচ্চ মর্যাদা, ভদ্রতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতীক হলো সুগন্ধি ব্যবহার, এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তা পছন্দ করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খাদ্য ছাড়া অন্য দুটি পেয়েছেন, এর অর্থ তিনি নারীকে তার আসনে পৌছাতে সক্ষম হয়েছেন এবং উচ্চ মর্যাদা ও ভদ্রতার প্রকৃত রূপরেখা তৈরি করে এক পরিচ্ছন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রচুর সম্পদও পেয়েছেন কিন্তু তিনি তা জমিয়ে রাখেননি, বরং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে দিয়েছেন। তাই তাকে দরিদ্র মনে করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩১৯-২০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৬৩-[৩৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর তরফ থেকে অল্প রিযকের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আল্লাহ তার অল্প ’আমলে সন্তুষ্ট হন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ رَضِيَ مِنَ اللَّهِ بِالْيَسِيرِ مِنَ الرِّزْقِ رَضِيَ الله مِنْهُ بِالْقَلِيلِ من الْعَمَل»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (4585 ، نسخۃ محققۃ : 4265) * اسحاق بن محمد الفروی ضعیف ضعفہ الجمھور و الراوی شک فی سماعہ من ابیہ و السند منقطع ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : হাদীসের শব্দ (مَنْ رَضِيَ) অর্থ হলো : (مَنْ قَنَعَ،مِنْهُ بِقَلِيلٍ مِنَ الطَّعَامِ) “যে আল্লাহর দেয়া সামান্য জীবিকা পেয়েই পরিতুষ্ট; এতে সে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ-অনুযোগ করে না, কারো কাছে কিছু চায় না এবং ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার সাথে জীবন নির্বাহ করে থাকে আল্লাহ তা'আলা তার অল্প ‘আমলেই সন্তুষ্ট হন। প্রকৃতপক্ষে বান্দার সন্তুষ্টি প্রথমত আল্লাহর সন্তুষ্টিরই প্রভাব, অতঃপর শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি তার জাতি সন্তুষ্টির চূড়ান্ত রূপ, আর তা হলো তার পুরস্কার। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৬৫-[৩৫] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা তাঁর ঈমানদার, গরীব, পরিবারের বোঝা বহনকারী, অবৈধ উপায় থেকে মুক্ত- এমন বান্দাকে ভালোবাসেন। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ عَبْدَهُ الْمُؤْمِنَ الْفَقِيرَ الْمُتَعَفِّفَ أَبَا الْعِيَالِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (4121) * فیہ موسی بن عبیدۃ ضعیف و القاسم بن مھران لم یثبت سماعہ من عمران و فیہ علۃ أخری ولہ شاھد ضعیف جدًا ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। আল্লামাহ্ মুল্লা ‘আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : (الْمَعْنٰى أَنَّهٗ مَعَ كَوْحِبَ الْعِيَالِ وَفَقِيرَ الْحَالِ وَكَسِيرَ الْبَالِ تَعَفَّفَ عَنِ السُّؤَالِ،فَهُوَ الْمُؤْمِنُ عَلٰى وَجَهِ الْكَمَلِ، فَلِذَاأَحَبَّهٗ ذُوالْجَلَالِ وَالْجَمَالِ) ‘দরিদ্র মুমিন বান্দার” অর্থ হলো দরিদ্রতার সাথে সাথে সে অধিক পোষ্যের অধিকারী, ফকীরী হালাত ও ভগ্ন জীবন, কিন্তু অপরের নিকট কিছু চাওয়া থেকে মুক্ত থাকে, সেই হলো পূর্ণমাত্রায় মু'মিন। এজন্য আল্লাহু যুল জালাল ওয়াল জামাল তাকে ভালোবাসেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন
৫২৬৬-[৩৬] যায়দ ইবনু আসলাম (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’উমার (রাঃ), পান করার জন্য পানি চাইলেন। তখন তাঁর কাছে এমন পানি আনা হলো যাতে মধু মিশ্রিত ছিল। তখন তিনি বললেন : এটা বড়ই সুস্বাদু বটে। তবে আমি আল্লাহ তা’আলাকে এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর দোষারোপ করতে শুনেছি যারা নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : তোমরা তোমাদের পার্থিব জীবনেই তোমাদের প্রাপ্ত নি’আমাতের স্বাদ উপভোগ করেছ। অতএব আমি আশঙ্কা করছি (অনুরূপভাবে আমাদেরকেও আগে-ভাগে দুনিয়াতে দ্রুতবেগে আমাদের ভালো কাজের প্রতিদান দেয়া হচ্ছে কিনা? এ বলে তিনি আর তা পান করলেন না। (রযীন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)
وَعَن زيدِ بنِ أسلمَ قَالَ: اسْتَسْقَى يَوْمًا عُمَرُ فَجِيءَ بِمَاءٍ قَدْ شيبَ بعسلٍ فَقَالَ: إِنَّه لطيِّبٌ لكني أَسْمَعُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ نَعَى عَلَى قَوْمٍ شَهَوَاتِهِمْ فَقَالَ (أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَا) فَأَخَافُ أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا فَلَمْ يشربْه. رَوَاهُ رزين
لم اجدہ ، رواہ رزین (لم اجدہ) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : মধুমিশ্রিত পানির ব্যাপারে ‘উমার (রাঃ) বলেন, (الَطَيِّب) ‘উত্তম’ শব্দটি সুন্দর, পবিত্র, সুস্বাদ ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এ উত্তম বা সুস্বাদু যে অর্থেই ব্যবহৃত হোক না কেন তা প্রকৃতিগতভাবে, শারই দিক থেকে, উপকারিতা এবং গুণগত মানের দিক থেকেও শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে।
‘উমার (রাঃ) -এর কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে কিছু শব্দ ও বাক্য উহ্য রয়েছে আর তা হলো : (أنَّهٗ لَطَيِّبٌ أَشَتَهِيهِ لَكِنِّي أعْرِ ضُ عَنّهُ، لأَنِّي سَمِعَتُ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ...) (আমি জানি এ মধুমিশ্রিত) পানি বা শরবত অবশ্যই সুস্বাদু এবং পবিত্র, কিন্তু আমি তা বর্জন করেছি এজন্য যে, আল্লাহ এমন এক জাতিকে অপছন্দ করেছেন বা দোষারোপ করেছেন যারা তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা চরিতার্থ করার জন্যই নানা প্রকার সুখাদ্য ও পানীয়ের স্বাদ উপভোগ করেছে। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছেন তোমরা দুনিয়ার জীবনেই তোমাদের স্বাদের বস্তুগুলো উপভোগ করেছ, আখিরাতের সঞ্চয় তোমাদের কিছুই নেই। আল্লাহ বলেন : “যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।” (সূরাহ্ ইসরা ১৮ : ১৮)
‘উমার (রাঃ)-এর মধুমিশ্রিত পানি বা শরবত গ্রহণ না করা ছিল স্বীয় প্রবৃত্তির বিরোধিতার জন্য এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৮২-[১৫] সুফইয়ান আস্ সাওরী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : খসখসে মোটা পোশাক পরিধান করা এবং স্বাদবিহীন খাদ্য খাওয়া পরহেজগারি নয়; বরং প্রকৃত পরহেজগারি হলো দুনিয়ার প্রতি মোহকে খাটো রাখা। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ - (بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ قَالَ: لَيْسَ الزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا بِلُبْسِ الْغَلِيظِ وَالْخَشِنِ وَأَكْلِ الْجَشِبِ إِنَّمَا الزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا قِصَرُ الْأَمَلِ. رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 286 بدون سند ولم اجد مسندًا) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (الزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا) হলো দুনিয়াবিরাগী হওয়া, এটা ইসলামের প্রশংসনীয় গুণাবলির একটি অন্যতম গুণ। এটাকে আমরা পরহেজগারি বলতে পারি। এ গুণ আত্মিক বিষয়, এতে লৌকিকতা বা প্রদর্শনীর কিছু নেই। কিছু মানুষ নিজের দরবেশী প্রকাশের জন্য মোটা এবং অমসৃণ কাপড় পরিধান করে থাকে, সুস্বাদু তরকারী বর্জন করে শুকনো মোটা রুটি খেয়ে জীবন নির্বাহ করে থাকে। অত্র হাদীসে তাদের কথাই বলা হয়েছে যে, এটা দুনিয়াবিরাগী বা পরহেজগারি নয়, বরং পরহেজগারি হলো (قِصَرُ الْأَمَلِ) দুনিয়ার মোহকে খাটো রাখা। হাদীসে উল্লেখিত বাক্য : (إِنَّمَا الزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا قِصَرُ الْأَمَلِ) “নিশ্চয় দুনিয়াবিরাগী বা পরহেজগারি হলো দুনিয়ার মোহকে খাটো রাখা” এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা ‘আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (أَيِ: اقْتِصَارُالْأَمَلِ وَالِاسْتِعْدَادُلِلْأَ جَلِ بَالْمُسَارَعَةِ إِلَىالتَّوْبَةِ وَالْعِلْمِ وَالْعَماَلِ، وَحَاصِلُهٗ أَنَّ الزُّهُدَ الْحَقِيَّ هُوَ مَا يَكُونُ فِي الْحَالِ الْقَلْبِيِّ مِنْ عُزُوفِ النَّفْسِ عَنِ الدُّنْيَا وَمَيْلِهَا إِلَى الْعُقُبٰى.) অর্থাৎ, দুনিয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মোহকে খাটো করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং সে লক্ষে “ইলম, আমল ও তওবার জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া। অতএব সারকথা হলো প্রকৃত দুনিয়াবিরাগী ও পরহেজগারি অন্তরের বিষয় বা অবস্থা যা স্বীয় কলব বা অন্তরকে দুনিয়ার মোহ-মায়া হতে পবিত্র রাখে এবং আখিরাতের দিকে ঝুকিয়ে দেয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩২৬ পৃ.)