পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০১-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা ছাড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এবং হারাম ধন-সম্পদের দান-খয়রাত কবূল হয় না। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ» . رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০২-[৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার অত্যধিক ’মাযী’ বের হত। কিন্তু আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যার (ফাত্বিমার) স্বামী, তাই এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কিছু জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করতাম। তাই আমি মাস্আলাটি জানার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করতে মিক্বদাদকে বললাম। সে (নাম প্রকাশ ব্যতীত) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ অবস্থায় সে প্রথমে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে ও তারপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নিবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَن عَليّ قَالَ: كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً فَكُنْتُ أَسْتَحْيِي أَنْ أَسْأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَكَانِ ابْنَتِهِ فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ فَسَأَلَهُ فَقَالَ: «يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيتَوَضَّأ»
ব্যাখ্যা: مَذِىٌ (মাযী) বলা হয় সাদা পাতলা আঠালো ধরনের একপ্রকার পানি যা স্ত্রীর সাথে প্রেমালাপ, চুম্বন, সহবাসের স্মরণ বা পুনরায় সহবাসের ইচ্ছা হলে স্ত্রী-পুরুষের গোপন অঙ্গ থেকে বের হয়। আবার কখনো কখনো এর বের হওয়াটা অনুভূত হয় না।
مَذِىٌ (মাযী) সম্পর্কে জিজ্ঞেসের কারণ সেটি গোসল আবশ্যককারী নাপাকী কিনা তা জানা। মিক্বদাদ (রাঃ) কারো নাম উল্লেখ ছাড়াই এর হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যা শুধুমাত্র ‘আলীর জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এ বিষয়ে প্রশ্নকারী নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন এ বর্ণনায় মিক্বদাদ (রাঃ)-এর কথা আবার নাসায়ীর বর্ণনায় ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথা এবং ইবনু হিব্বান ও তিরমিযীর বর্ণনায় ‘আলী (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ হয়েছে। ইবনু হিব্বান এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘আলী (রাঃ) প্রথমত আম্মার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করতে বলেন। পরবর্তীতে মিক্বদাদ (রাঃ)-কে বলেন। পরে তিনি নিজেই প্রশ্ন করেন। কিন্তু ইবনু হিব্বান পরক্ষণে উল্লেখ করেন যে, ‘আলী (রাঃ)-এর উক্তি ‘‘আমি লজ্জায় তাঁকে প্রশ্ন করতে পারিনি’’ এটি প্রমাণ করে তিনি স্বয়ং প্রশ্ন করেননি।
قَوْلُهٗ (يَغْسِلُ ذَكَرَةٌ) (মাযী বের হলে সে তার গোপন অঙ্গ ধৌত করবে) যেহেতু মাযী অপবিত্র তাই তা আগে অপসারণ করতে হবে। তারপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু)। গোপনাঙ্গের কতটুকু ধুইতে হবে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সর্বাধিক প্রাধান্যযোগ্য অভিমত হলো মাযী বের হওয়ার স্থানটুকু ধৌত করাই যথেষ্ট, সবটুকু নয়। তবে সাবধানতা অবলম্বনার্থে মাযী ছড়িয়ে পড়া স্থানসমূহ ধৌত করা উত্তম। হাদীসের বাহ্যিক ভাষ্যমতে মাযী বের হলে পানি দ্বারা ধৌত করাই নির্দিষ্ট। হাদীসের শেষাংশ থেকে প্রতীয়মান হয় মাযীতে শুধু উযূই ভঙ্গ হয়। অতএব তাতে গোসল ওয়াজিব হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৩-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আগুন দিয়ে পাকানো কোন জিনিস খেলে তোমরা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নিবে। (মুসলিম)[1]
ইমাম মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের হুকুম ইবনু ’আব্বাস-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «توضؤوا مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
قَالَ الشَّيْخُ الإِمَام الْأَجَل محيي السّنة C: هَذَا مَنْسُوخ بِحَدِيث ابْن عَبَّاس:
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৪-[৫] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর রানের (পাকানো) মাংস (মাংস/গোসত) খেয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন কিন্তু উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেননি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ كَتِفَ شَاةٍ ثُمَّ صلى وَلم يتَوَضَّأ
ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ ( تَوَضُؤا وَمِمَّا مَسَّتِ النَّارُ) (তোমরা আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ করবে) পাকানো, ভাজা বা আগুন যাতে প্রভাব বিস্তার করে এমন খাদ্য হলো আগুনে পাকানো খাদ্য। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) দ্বারা উদ্দেশ্য সালাতের উযূ। এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, আগুনে পাকানো খাবার খাওয়া উযূ ভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ। তবে এ মাসআলাতে ‘উলামার মতভেদ রয়েছে।
* পূর্ব ও পরবর্তী অধিকাংশ ‘উলামার মতে এটি উযূ ভঙ্গের কোন কারণ নয়।
* আর একদলের মতে আগুনে পাকানো খাবার খেলে শার‘ঈ উযূ করা আবশ্যক। তাদের দলীল আবূ - হুরায়রার এ হাদীসসহ এ বিষয়ে বর্ণিত আরো কতিপয় হাদীস। তবে প্রথম মতাবলম্বীরা বিভিন্নভাবে এ হাদীসের ব্যাখ্যা বা উত্তর দিয়েছেন। যথাঃ
(১) হাদীসে উযূ দ্বারা উদ্দেশ্য মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ধোয়া। তবে তাদের এ কথাটি প্রত্যাখ্যাত। কেননা প্রতিটি শব্দের শার‘ঈ অর্থ অন্য অর্থের উপর প্রাধান্যযোগ্য।
(২) এ হাদীসে ‘আমরটি মুসতাহাব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ওয়াজিব অর্থে নয়। তাদের এ দাবীও প্রত্যাখ্যাত। কেননা ‘আমর-এর আসল অর্থ হলো وجوب বা কোন কিছু আবশ্যক হওয়া।
যখন এ বিষয়ে বর্ণিত পরস্পর বিপরীত হাদীসগুলোর অগ্রাধিকার যোগ্যতা সুস্পষ্ট নয় তখন আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরবর্তী খুলাফায়ি রাশিদীনের ‘আমলের মাধ্যমে একটি দিককে প্রাধান্য দিব। ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ) (شرح المهذب) গ্রন্থে এটিকে সন্তোষজনক অভিমত হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে ইমাম বুখারীর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের ভূমিকায় তিন খলীফাহ্ হতে বর্ণিত আসার নিয়ে আমার রহস্যও উন্মোচিত হয়। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ বিষয়ে সাহাবী তাবি‘ঈদের মাঝের মতবিরোধটা অতি সুপরিচিত। অতঃপর আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য সাব্যস্ত হয়েছে।
(৩) এ হাদীসটি আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
ভাষ্যকার বলেনঃ আমার নিকট তৃতীয় উত্তরটি অধিক শক্তিশালী। কারণ নাসখের দাবীর চেয়ে ঢের উত্তম। আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে আগুনে পাকানো খাদ্যের ব্যাপারে উযূ করার আদেশ প্রদানের রহস্য হলো তারা (মুসলিমরা) অজ্ঞতার যুগে অল্পই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকত। অতঃপর ইসলামে যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি স্বীকৃতি ও ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ করলো, তখন মু’মিনদের প্রতি সহজকরণার্থে সে আদেশ রহিত করা হয়।
আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে শার‘ঈ উযূ আবশ্যক হওয়ার বর্ণনাটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা রহিতকরণের উপর এ বলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, রহিতকরণের দাবি তখনই সঠিক হবে যখন একটি আরেকটির পূর্বে ঘটেছে বলে ইতিহাস থেকে জানা যাবে। এর উত্তরে বলা হয়েছেঃ বায়হাক্বী থেকে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর বর্ণনামতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মক্কা বিজয়ের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচর্যে এসেছেন যা মুহাম্মাদ বিন ‘আমর বিন ‘আত্বা হতে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়। অতএব ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি পরের।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত সহীহ হাদীসটি অধিক সুস্পষ্ট যেখানে বলা হয়েছে كاَنَ أَخِرُ الْاَمْرَيْنِ مِنْ رَّسُوْله وَسَلَّمَِ (অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ ‘আমল ছিল আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে উযূ না করা)। হাদীসটি সহীহ হলেও কেউ কেউ এটির একটি ত্রুটি বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন, যে চেষ্টাকে মুসনাদে আহমাদে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসটি বাতিল করে দেয়, যেখানে বলা হয়েছে ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে খাওয়া শেষে প্রস্রাব করার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে যুহর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর আবার সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে খেয়ে বিনা উযূতে ‘আসর সালাত আদায় করলেন।’’ এ হাদীস থেকে সুস্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে উযূ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৫-[৬] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলো, আমরা কি বকরীর মাংস (মাংস/গোসত) খেলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে করতে পারো, না চাইলে না কর। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, উটের মাংস খাবার পর কি উযূ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, উটের মাংস খাবার পর উযূ কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলো, বকরী থাকার স্থানে কি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পারো। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, উটের বাথানে কি সালাত আদায় করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَن جَابر بن سَمُرَة أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْغَنَمِ؟ قَالَ: «إِنْ شِئْتَ فَتَوَضَّأْ وَإِنْ شِئْتَ فَلَا تَتَوَضَّأْ» . قَالَ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ؟ قَالَ: «نَعَمْ فَتَوَضَّأْ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ» قَالَ: أُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: أُصَلِّي فِي مبارك الْإِبِل؟ قَالَ: «لَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি উটের গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) খাওয়ার ফলে সর্বাবস্থায় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই তা কাঁচা হোক বা পাকানো হোক।
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ছাগলের গোয়ালে সাধারণত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা বৈধ। আর এটিই সঠিক বক্তব্য যদিও ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও শাফি‘ঈ (রহঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেছেন।
উট বসার স্থানে সালাত আদায় করা হারাম। ইমাম আহমাদ এবং ইবনু হাযম এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। আর এটিই সঠিক মত। তবে জমহূরের মতে যদি স্থানে নাজাসাত বা অপবিত্রতা না থাকে তাহলে সালাত আদায় করা মাকরূহ বা অপছন্দীয় আর যদি অপবিত্রতা থাকে তাহলে সালাত আদায় করা হারাম। জমহূরের এ উক্তিটি সঠিক হতো যদি নিষেধের কারণ নাজাসাত বা অপবিত্রতা হতো মূলত যা এখানে উটের পেশাব-পায়খানা কিন্তু এ কথা প্রমাণিত যে, যে সকল প্রাণীর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) হালাল তার পেশাব-পায়খানাও হালাল। যদি উটের পেশাব-পায়খানা নাজাসাত হাওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া হয় তারপরেও সেটিকে নিষেধের কারণ বানানো সঠিক হবে না। কেননা যদি নাজাসাতই কারণ হতো তাহলে উট এবং ছাগলের হুকুম ভিন্ন হতো না যেহেতু উভয়ের পেশাব-পায়খানার হুকুম একই।
মালিকী ও শাফি‘ঈগণের মতে নিষেধের কারণ উটের পলায়ন করার যে স্বভাব রয়েছে তা। কিন্তু এটিই যদি কারণ হতো তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট গোয়ালে উপস্থিত থাকা এবং না থাকার মাঝে পার্থক্য করতেন না, বরং সর্বাবস্থায় যেখানে সালাত আদায় করা হারাম বলতেন চাই তা উপস্থিত থাক আর না থাক। এছাড়াও অনেকে আরও অন্যান্য কারণ উল্লেখ করেছেন যেগুলো বর্ণনা করার পর ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ নিষেধের কারণের ক্ষেত্রে এ মতবিরোধ জানার পর এ কথা স্পষ্ট হলো যে দাবী তাহরীম তথা (কোন কিছু হারাম সাব্যস্ত করা) এর উপর ক্ষান্ত থাকাই হলো সঠিক বক্তব্য, এখানে এর কারণ অন্বেষণের কোন অবকাশ নেই। যেমনটি ইমাম আহমাদ ও দাঊদ যাহিরী বলেছেন। তবে এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাহনকে সুত্রাহ্ (সুতরা) বানিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার হাদীসটি এর বিপরীত নয়। কারণ তা ছিল সফরে প্রয়োজনীয় অবস্থায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৬-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্যে কিছু (বায়ু) শব্দ পায় এবং এরপর তার সন্দেহ হয় যে, তার পেট হতে কিছু (বায়ু) বের হয়েছে কিনা, তাহলে সে যেন (উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে মাসজিদ হতে বের না হয়, যে পর্যন্ত সে (বায়ু বের হবার দরুন) কোন শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায়। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا وَجَدَ أَحَدُكُمْ فِي بَطْنِهِ شَيْئًا فَأَشْكَلَ عَلَيْهِ أَخَرَجَ مِنْهُ شَيْءٌ أَمْ لَا فَلَا يَخْرُجَنَّ مِنَ الْمَسْجِدِ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ (حَتّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَو يَجِدَ رِيْحًا) (যতক্ষণ না সে বায়ু বের হওয়ার শব্দ বা নির্গত বায়ুর গন্ধ পাবে ততক্ষণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে আসবে না)। এর অর্থ হলো যতক্ষণ না সে শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া বা অন্য যে কোন পন্থায় তার বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় ততক্ষণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করবে না বা ছেড়ে আসবে না। তবে এতে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়াটিই শর্ত নয়।
এ হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, শারী‘আতের কোন বিষয়ে সন্দেহের মাধ্যমে সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হয়ে যাবে না। অতএব যার সন্দেহ হবে বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা তবে সে তার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে। নিশ্চিত না হাওয়া পর্যন্ত এ সন্দেহ তার কোন ক্ষতি করবে না। আর এটি অন্যান্য বিষয়েও সমভাবে প্রযোজ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৭-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করলেন। অতঃপর কুলি করলেন এবং বললেন, দুধের মধ্যে চর্বি থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرِبَ لَبَنًا فَمَضْمَضَ وَقَالَ: «إِنَّ لَهُ دسما»
ব্যাখ্যা: دَسَمٌ (দাসাম) অর্থ দুধের উপর প্রকাশিত চর্বি। এটি দুধ খেয়ে কুলি করার কারণের বর্ণনা। আর এটি প্রমাণ করছে প্রত্যেক চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে কুলি করা উত্তম। যাতে মুখের অবশিষ্ট চর্বি মুসল্লীর মনকে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) থেকে অন্যদিকে না নিয়ে যায়। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, পরিষ্কার-পরিছন্নতার স্বার্থে চুর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হস্তদ্বয় ধৌত করা ভালো। অধ্যায়ের সাথে হাদীসের সামঞ্জস্য হলো উল্লিখিত কুলিটা উযূর পরিপূরক।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৮-[৯] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন এক উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-তে কয়েক ওয়াক্তের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং মোজার উপর মাসাহ করলেন। ’উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আজ আপনি এমন কিছু করলেন যা পূর্বে কখনো করেননি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে ’উমার! আমি ইচ্ছা করেই এরূপ করেছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَنْ بُرَيْدَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الصَّلَوَات يَوْم الْفَتْح بِوضُوء وَاحِد وَمسح عل خُفَّيْهِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: لَقَدْ صَنَعْتَ الْيَوْمَ شَيْئًا لَمْ تَكُنْ تَصْنَعُهُ فَقَالَ: «عَمْدًا صَنَعْتُهُ يَا عمر» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: সাহাবীর বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা যায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ ‘আমল আদৌ করতেন না। মূলত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ কাজে অভ্যস্ত ছিলেন না বটে। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইতোপূর্বে এরূপ ‘আমল মাঝে মাঝে করতেন মর্মে প্রমাণিত রয়েছে। এ হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়।
প্রথমত, সর্বোত্তম হলো প্রতি সালাতের জন্য আলাদা আলাদা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভ্যস্ত ছিলেন।
দ্বিতীয়ত এক উযূ দ্বারা অনেক ফরয এবং নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাও বৈধ, মাকরূহ নয়। তবে প্রস্রাব-পায়খানার চাপ সৃষ্টি করলে তা সম্পূর্ণ করে নতুনভাবে উযূ করে নিবে। আর এটিই অধিকাংশ ‘উলামার অভিমত। তবে এটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী ‘‘যখনই তোমরা সালাত সম্পাদনের ইচ্ছা করবে তখন উযূ কর’’ এর সাথে সংঘর্ষিক মনে হয় যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক সালাতের জন্য উযূ করার আদেশ দিয়েছেন। এর সমাধানকল্পে অনেক মতের সৃষ্টি হয়েছে। জমহূরের মতে আয়াতে অর্থ হলো إذَا قُمْتُمْ إلى الصَّلَاةِ مُحْدِيْثِيْنَ (যখন তোমরা উযূ বিহীনবস্থায় সালাত সম্পাদনের ইচ্ছা করবে) অর্থাৎ- অযু অবস্থায় থাকলে পুনরায় উযূ করতে হবে না।
যদিও আয়াতটি বাহ্যিকভাবে পবিত্র অপবিত্র সকলের উযূ করার বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই জমহূরের মতানুযায়ী আয়াত দ্বারা উযূ বিহীন ব্যক্তির উযূ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। এটিই সঠিক অভিমত। আবার কেউ কেউ বলেনঃ আয়াতে আদেশ দ্বারা উত্তম উদেশ্য। অর্থাৎ- প্রত্যেকের জন্য প্রতিটি সালাতের প্রারম্ভে উযূ করা ভালো। আর উযূহীন ব্যক্তির ওপর উযূ আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। আবার কেউ কেউ বলেন আয়াত দ্বারা সকলের ওপর উযূ আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি শুরুতে কার্যকর থাকলেও পরে তা রহিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৯-[১০] সুওয়াইদ ইবনু নু’মান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খায়বার যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তাঁরা খায়বারের অতি নিকটে ’সহবা’ নামক স্থানে যখন পৌঁছলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর আহার পরিবেশন করতে বললেন, কিন্তু ছাতু ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। তিনি নির্দেশ দিলেন। তাই পানি দিয়ে ছাতু নরম করা হলো। এ ছাতু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও খেলেন আমরাও খেলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাগরিবের সালাতের জন্য দাঁড়ালেন এবং শুধু কুলি করলেন। আর আমরাও কুলি করলাম। এ অবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন, অথচ নতুনভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন না। (বুখারী)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
وَعَن سُوَيْد ابْن النُّعْمَان: أَنَّهُ خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ خَيْبَرَ حَتَّى إِذَا كَانُوا بالصهباء وَهِي أَدْنَى خَيْبَرَ صَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ دَعَا بِالْأَزْوَادِ فَلَمْ يُؤْتَ إِلَّا بِالسَّوِيقِ فَأَمَرَ بِهِ فَثُرِيَ فَأَكَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَكَلْنَا ثُمَّ قَامَ إِلَى الْمَغْرِبِ فَمَضْمَضَ وَمَضْمَضْنَا ثمَّ صلى وَلم يتَوَضَّأ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতীয়মান হয়। প্রথমত সফরকালে খাদ্য বহন করা আল্লাহর ওপর ভরসার পরিপন্থী নয়। দ্বিতীয়ত মুহাম্মাদের মতে সরকারের জন্য খাদ্য সংকটের সময় খাদ্য গুদামজাতকারীদের পাকড়াও করে ক্রেতাদের নিকট সে গুদামজাতকৃত খাদ্য বিক্রয় করতে বাধ্য করা বৈধ। তৃতীয়ত চর্বিবিহীন কোন খাবার দাঁতের মাঝে আবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে কুলি করা মুস্তাহাব বা ভালো। চতুর্থত আগুনে পাকানো খাবার গ্রহণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের কোন কারণ নয় এবং উযূ ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্তের সালাতের জন্য নতুনভাবে উযূ করা ওয়াজিব নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১০-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (বায়ু নির্গত হবার) শব্দ কিংবা গন্ধ পেলেই কেবল উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে হবে। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا وُضُوءَ إِلَّا مِنْ صَوْتٍ أَوْ رِيحٍ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের একটি কারণ হলো গুহ্যদ্বারে বায়ু নির্গত হওয়া।’’ কোন ব্যক্তি যদি এমন সন্দেহে নিপতিত হয় যে, তার বায়ু নির্গত হলো কি-না সে বুঝতে পারছে না। সেক্ষেত্রে বিধান এই যে, সন্দেহের কারণে তার উযূ ভঙ্গ হবে না। বরং বায়ু নির্গত হওয়ার শব্দ অথবা বায়ু নির্গত হওয়ার দুর্গন্ধ পেলে তার উযূ ভঙ্গ হয়েছে বলে সে নিশ্চিত হবে, নচেৎ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১১-[১২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’মাযী’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ’মাযীর’ কারণে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) আর ’মানীর’ কারণে গোসল করতে হবে। (তিরমিযী)[1]
وَعَن عَلِيٍّ قَالَ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ الْمَذْيِ فَقَالَ: «مِنَ الْمَذْيِ الْوُضُوءُ وَمِنَ الْمَنِيِّ الْغسْل» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতীয়মান হয়। প্রথমত মাযী বের হলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ওয়াজিব হয়, গোসল নয়। আর মানী সম্পর্কে প্রশ্ন করা না হলেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সম্পর্কে বলেছেন যে, মানী বের হলে গোসল ওয়াজিব। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুধাবন করেছেন যে, মানুষ এ বিষয়ে মুখপেক্ষী হবে। আর বালাগাতের পরিভাষায় এটিকে أُسْلُوْبُ الحَكْيْمِ বলা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১২-[১৩] উক্ত রাবী [’আলী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের চাবি হলো ’উযূ (ওযু/ওজু/অজু), আর সালাতের ’তাহরীম’ হলো ’তাকবীর’ (অর্থাৎ- আল্লা-হু আকবার বলা) এবং তার ’তাহলীল’ হলো (সালাতের শেষে) সালাম ফিরানো। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও দারিমী)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: সালাতের চাবি হলো (উযূ, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে) পবিত্রতা অর্জন করা সক্ষম ব্যক্তির জন্য পানি দ্বারা আর পানি ব্যবহারে অক্ষমের জন্য মাটি দ্বারা। এখানে রূপকার্থে তাকবীর এবং সালামকে সালাতের হারাম ও হালাল সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যথায় প্রকৃত হালাল-হারামকারী হলো আল্লাহ তা‘আলা। হারাম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলা সালাতের মধ্যে যে সকল কথা কাজ হারাম করেছেন তা তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে হারাম হওয়া আর হালাল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলা সালাতের বাইরে যে সকল কথাকর্ম হালাল করেছেন তা সালামের মাধ্যমে হালাল হওয়া।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৩-[১৪] ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটিকে ’আলী ও আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنْهُ وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৪-[১৫] ’আলী ইবনু ত্বলক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারও যখন বায়ু বের হয়, তখন সে যেন আবার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নেয়। আর তোমরা নারীদের গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করবে না। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عَليّ بن طلق قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا فسا أحدكُم فَليَتَوَضَّأ وَلَا تأتو النِّسَاءَ فِي أَعْجَازِهِنَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: যখন কারো পিছনের রাস্তা দিয়ে শব্দহীন বাতাস বের হয় যা শোনা যায় না চাই তা ইচ্ছাকৃত বের হোক বা অনিচ্ছাকৃত তখন সে যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে ফিরে যায় এবং উযূ করে পুনরায় তা আদায় করে। আর মহিলাদের পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করা হরাম। এখানে উভয় বাক্যের মাধ্যমে সামঞ্জস্য বিধান হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়ুর বিষয়টি উল্লেখ করলেন যা পিছনের রাস্তা দিয়ে বের হয় এবং পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকে দূরীভূত করে দেয় তখন সাথে সাথে সে বিষয়েরও উল্লেখ করলেন যা পবিত্রতা দূরীকরণে আরো কঠোর। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, পিছনের রাস্তা দিয়ে বায়ু বের হওয়া উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৫-[১৬] মু’আবিয়াহ্ ইবনু আবী সুফ্ইয়ান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চোখ দু’টো হলো গুহ্যদ্বারের ফিতা-বন্ধন স্বরূপ। সুতরাং চোখ যখন ঘুমায় ফিতা (ঢাকনা) তখন খুলে যায়। (দারিমী)[1]
وَعَن مُعَاوِيَة بن أبي سُفْيَان أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ: «إِنَّمَا الْعَيْنَانِ وِكَاءُ السَّهِ فَإِذَا نَامَتِ الْعَيْنُ اسْتطْلقَ الوكاء» . رَوَاهُ الدِّرَامِي
ব্যাখ্যা: এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عَيْنٌ (চক্ষু) দ্বারা জাগ্রত অবস্থা বুঝিয়েছেন। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তির অবলোকন করতে সক্ষম কোন চক্ষু থাকে না। তিনি জাগ্রত অবস্থাকে মশকের বাঁধনের ন্যায় নিতম্বের বাধন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যেমনিভাবে মশকের মালিকের ইচ্ছায় রশি দ্বারা যেমনভাবে তা সর্বদায় বাঁধা থাকে ঠিক তেমনিভাবে মানুষের ইচ্ছায় জাগ্রত অবস্থার মাধ্যমে তার নিতম্বটি কোন কিছু বের হওয়া থেকে সংরক্ষিত থাকে। এর অর্থ হলো জাগ্রত অবস্থাটা নিতম্বের বাঁধনস্বরূপ বা কোন কিছু বের হওয়া থেকে সংরক্ষক। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত থাকে ততক্ষণ পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে বুঝতে পারে কিন্তু যখনই সে ঘুমিয়ে পড়ে তখন তা আর বুঝতে পারে না। ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুমের কারণে নিজের ওপর কর্তৃত্ব হারায়। ফলে অধিকাংশ সময় তার পিছনের রাস্তা দিয়ে বায়ু বের হয়ে যায় যা সে বুঝতেই পারে না। যার ফলে শারী‘আত এ প্রবল বিষয়টিকে ইয়াকিনের স্থলাভিষিক্ত করে তার উপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) আবশ্যক করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৬-[১৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুহ্যদ্বারের ফিতা বা ঢাকনা হলো চক্ষুদ্বয়। তাই যে ব্যক্তি ঘুমাবে সে যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। [আবূ দাঊদ[1];
আর শায়খ ইমাম মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেন, যারা বসে ঘুমায় তারা ব্যতীত অন্যদের জন্য এ আদেশ প্রযোজ্য]
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وِكَاءُ السَّهِ الْعَيْنَانِ فَمَنْ نَامَ فَليَتَوَضَّأ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
قَالَ الشَّيْخ الإِمَام محيي السّنة C: هَذَا فِي غير الْقَاعِد لما صَحَّ:
ব্যাখ্যা: এ হাদীস এবং পরবর্তী হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, শুধুমাত্র ঘুমই উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের কারণ নয় বরং ভেঙ্গে যায়। আর এজন্য এর হুকুম থেকে যে ঘুমকে বের করে দেয়া হয়েছে যা জমিনের উপর উপবিষ্ট হয়ে পাতা সম্ভব। অর্থাৎ- এ প্রকারের ঘুমে উযূ ভাঙ্গবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৭-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ ’ইশার সালাতের জন্য বসে অপেক্ষা করতেন। এমনকি ঘুমের আমেজে তাদের মাথা নীচের দিকে ঝুঁকে পড়তো। এরপর তারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, অথচ নতুন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন না। (আবূ দাঊদ)[1] তবে ইমাম তিরমিযী ’’ইশার সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকতেন’’- এর জায়গায় ’’ঘুম যেতেন’’ শব্দ উল্লেখ করেছেন।
عَن أنس قَالَ: كَانَ أَصَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْتَظِرُونَ الْعشَاء حَتَّى تخفق رؤوسهم ثمَّ يصلونَ وَلَا يتوضؤون. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ إِلَّا أَنه ذكرفيه: ينامون بدل: ينتظرون الْعشَاء حَتَّى تخفق رؤوسهم
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়। প্রথমত যে ব্যক্তি শুয়ে বা চিৎ হয়ে ঘুমায় এর দ্বারা তার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যাবে। দ্বিতীয়ত যে ব্যক্তি জমিনের উপর তার নিতম্ব রেখে বসে বসে ঘুমায়, অতঃপর জাগ্রত হয়ে দেখে যে, সে তার নিতম্ব বা বসন আগের অবস্থায় রয়েছে তাহলে এর দ্বারা তার উযূ বাতিল হবে না। তৃতীয়ত কেউ কেউ বলেনঃ এ হাদীসটি হালকা ঘুমের ক্ষেত্রে উযূ ভঙ্গ হয় না। তেমনিভাবে নাক ডাকা এবং জাগ্রতকারটিও। কারণ কেউ কেউ গভীর ঘুমে যাওয়ার পূর্বে ঘুমের সাথে সাথেই নাক ডাকা শুরু করে, আবার কাউকে এ অবস্থায় জাগিয়ে তুলতে হয় যাতে সে গভীর ঘুমে তন্ময় না হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৮-[১৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সে ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব যে কাত হয়ে ঘুমায়। কারণ কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْوُضُوءَ عَلَى مَنْ نَامَ مُضْطَجِعًا فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ اسْتَرْخَتْ مفاصله. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ঘুমের মাধ্যমে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের বিষয়ে ‘উলামাহ্ আটটি অভিমতে বিভক্ত হয়েছে যেগুলোকে তিনটিতে সীমিত করা যায়। যথা-
১ম অভিমতঃ সর্বাস্থায় ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে, চাই ঘুম কম হোক বা বেশি হোক।
২য় অভিমতঃ কোন অবস্থাতেই ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হবে না।
৩য় অভিমতঃ হালকা এবং গভীর ঘুমের মাঝে পার্থক্যকরণ। (অর্থাৎ- হালকা ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হবে না আর গভীর ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হবে।) এটি প্রধান সহাবা (সাহাবা), তাবি‘ঈ ফুকহায়ূল ইমাম চতুষ্টয়ের অভিমত। আর এটি সঠিক অভিমত। অতএব, শুধুমাত্র ঘুমই উযূ ভঙ্গের কারণ নয় বরং এজন্য যে, ঘুম বায়ুর নিগর্মন নিয়ন্ত্রণকারী বা রোধকারী গ্রন্থীসমূহ শিথিল হওয়াই কারণ।
৩য় মতাবলম্বীরা আবার ঘুম কম বেশির পরিমাণ বর্ণনা, উযূ ভঙ্গের ক্ষেত্রে বিবেচিত বা গ্রহণযোগ্য ঘুম নির্ধারণ এবং সেই ঘুমের পরিমাণ নির্দিষ্টকরণে অনেক মতবিরোধ করেছেন যা গ্রন্থিসমূহ শিথিল হওয়ার কারণ এবং অনুভূতি চেতনা লোপ হওয়ার কারণ।
ভাষ্যকার ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, আমার নিকট প্রাধান্যযোগ্য মত হলো যে ঘুমের মাধ্যমে চেতনা লোপ পায়, সেই গভীর ঘুমই উযূ ভঙ্গের কারণ, চাই তা যে ধরনের ঘুমই হোক না কেন। তাই চেতনা লোপ পাওয়াটাই আমার নিকট ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গের শর্ত। অতএব, যখন চেতনা বা অনুভূতি লোপ পায় তখন ঘুমন্ত ব্যক্তি যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন তার উযূ ভেঙ্গে যাবে। আর হুকুমটি শুধুমাত্র গা এলিয়ে শায়িত ব্যক্তির সাথে সীমিত নয় যেমনটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি প্রমাণ করে। কারণ এ হাদীসটি য‘ঈফ। আর শায়িত ব্যক্তির হালকা ঘুমের মাধ্যমে তার উযূ বাতিল হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৯-[২০] বুসরাহ্ বিনতু সফ্ওয়ান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে হবে। (মুওয়াত্ত্বা মালিক, আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]
وَعَن بسرة قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مَسَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে যে সব মাস্আলাহ্ সাব্যস্ত হয় তা হলোঃ
কোন ব্যক্তি (পুরুষ) স্বহস্তে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করা তা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ হবে। এখানে স্পর্শ দ্বারা উদ্দেশ্য হাতের তালুর উপর বা নিম্নভাগ দ্বারা কোন প্রকার আবরণ ছাড়াই স্পর্শ করা। আর এটিই সহাবা (সাহাবা) ও তাবি‘ঈগণের একটি দল, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর প্রসিদ্ধ অভিমত।
অনুরূপভাবে কোন মহিলা যদি হাতের তালুর উপরিভাগ বা নিম্নভাগ দ্বারা স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে তারও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাতিল হযে যাবে। যা মুসনাদে আহমাদ ও বায়হাক্বীতে ‘আমর বিন শু‘আয়ব কর্তৃক তার পিতা, তার দাদা থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَيُّمَا رَجُلٍ مَسَّ فَرْجَهُ فَلْيَتَوَضَّأَ، وَأَيَّمَا اِمْرَأَةً مَسَّتْ فَرْجَهَا فَلْتَتَوَضَّأَ (অর্থাৎ- কোন পুরুষ তার লজ্জাস্থান কোন আবরণ) ছাড়া স্পর্শ করবে সে যেন উযূ করে। আর কোন মহিলা কোন আবরণ ছাড়া স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সেও যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। ইমাম তিরমিযী اَلْعِلَلُ (আল ‘ইলাল) গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে এ হাদীসটি সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। আর এ হাদীসটি এই বিষয়ে মহিলা পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য না থাকার স্পষ্ট প্রমাণ।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩২০-[২১] ত্বলক্ব ইবনু ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার পর কেউ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে এর হুকুম কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা তো মানুষের শরীরেরই একটা অংশবিশেষ। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসটি মানসূখ (রহিত)। কেননা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ত্বলক্ব-এর মদীনাহ্ আগমনের পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
وَعَن طلق بن عَليّ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ مَسِّ الرَّجُلِ ذَكَرَهُ بَعْدَمَا يَتَوَضَّأُ. قَالَ: «وَهَلْ هُوَ إِلَّا بَضْعَةٌ مِنْهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ نَحوه قَالَ الشَّيْخُ الْإِمَامُ مُحْيِي السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللَّهُ: هَذَا مَنْسُوخٌ لِأَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ أَسْلَمَ بَعْدَ قدوم طلق
ব্যাখ্যা: বাহ্যিকভাবে এ হাদীস থেকে লজ্জাস্থান স্পর্শ করায় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়টিই প্রমাণিত হয়। আর হানাফীগণ এ মতাবলম্বী। তারা (নিজের মত প্রতিষ্ঠাকল্পে বুসরাহ্ বিনতু সফ্ওয়ান-এর হাদীসের দশটির বেশি উত্তর দিয়ে তা খণ্ডন করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছেন যার সবগুলোই ভিত্তিহীন ও প্রত্যাখ্যাত। শায়খ ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী পাঁচটি তুহফাতে প্রতিউত্তর উল্লেখ করেছেন। অবশিষ্টগুলো এখানে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) তারা বলেন যে, বুসরাহ্ বিনতু সফ্ওয়ান-এর হাদীসটি মারওয়ান থেকে ‘উরওয়াহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত, আর মারওয়ান তার অপকর্মের কারণে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। অথবা হাদীসটি মারওয়ান-এর দেহরক্ষী থেকে ‘উরওয়াহ্-এর সূত্রে বর্ণিত যে, একজন অপরিচিত রাবী। (অতএব হাদীসটি সহীহ নয়)
‘উরওয়ার উক্তির মাধ্যমেই এর উত্তর দেয়া যায়, তিনি বলেনঃ ‘‘মারওয়ানকে হাদীস বর্ণনায় অভিযুক্ত করা হতো না।’’ এছাড়াও তার থেকে সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম মালিক তাঁর হাদীসের উপর আস্থা রেখেছেন। ইমাম বুখারীও তাঁর সহীহ গ্রন্থে হাদীস নিয়ে এসেছেন। আর ‘উরওয়াহ্ তার থেকে এ হাদীসটি তার অপকর্ম এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশের পূর্বে গ্রহণ করেছেন। ইবনু হাযম (রাহঃ) বলেনঃ ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরোধিতা করার পূর্বে মারওয়ান-এর কোন ত্রুটি আমরা জানি না। আর সে সময়েই তার সাথে ‘উরওয়ার সাক্ষাৎ ঘটেছে।
অপরদিকে এটিও প্রমাণিত যে, ‘উরওয়াহ্ বুসরাহ্ থেকে কারো মাধ্যম ছাড়াই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যা ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান, হাকিমসহ আরও অনেক মুহাদ্দিস নিশ্চিত করে বলেছেন। আর বুসরার হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম তাদের উভয়ের গ্রন্থে সংকলন না করায় এটা প্রমাণিত হয় না যে, ‘উরওয়াহ্ বুসরাহ্ থেকে হাদীসটি শ্রবণ করেননি। কারণ তাদের শর্তানুপাতে অনেক সহীহ হাদীসই তারা তাদের কিতাবে সংকলন করেননি। উপরন্তু ‘আলী ইবনুল মাদীনী ইয়াহ্ইয়া ইবনু মা‘ঈন-এর সাথে তর্কে ইয়াহ্ইয়া এর উক্তি (ثُمَّ لَمْ يَقْنَعُ ذلِكَ عُرْوَةً حَتّى أَتى بُسْرَةَ نَسْأَلُهَا وَشَافَهْتُهُ بِالْحَدِيْثِ) (অর্থাৎ- ‘উরওয়াহ্ মারওয়ান থেকে হাদীসটি বর্ণনা করে সন্তুষ্ট হতে না পেরে সরাসরি বুসরার কাছে এসে এ হাদীস সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে তিনি [বুসরাহ্] তাকে তা মুখে মুখে বর্ণনা করেন) এর প্রতিউত্তর করেননি বা খণ্ডন করেননি। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-ও হাদীসটি এ সানাদে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সঠিক বলেছেন। অতএব, উক্ত ইমামের নিকট ‘উরওয়ার হাদীসটি বুসরাহ্ থেকে সরাসরি শ্রবণের বিষয়টি প্রমাণিত। এজন্যই আহমাদ এবং ইবনু মা‘ঈন বুসরার হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (তাই তাদের এ দাবীটি একেবারে ভিত্তিহীন)
(২) তারা বলেনঃ বুসরার হাদীসের সানাদটি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। কারণ কিছু রাবী তা বুসরাহ্ থেকে মারওয়ান-এর মাধ্যমে ‘উরওয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছে, আবার কেউ কেউ বুসরাহ্ থেকে কারো মাধ্যমে ছাড়াই ‘উরওয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছে। (অতএব, হাদীসটি সহীহ নয়)
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) বর্ণনাকারীদের এ ভিন্নতাটি সে পর্যায়ের কোন ত্রুটি নয় যার মাধ্যমে হাদীসটি য‘ঈফ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। কারণ ‘উরওয়াহ্ হাদীসটি প্রথমত মারওয়ান-এর মাধ্যমে বুসরাহ্ হতে শ্রবণ করেছেন। অতঃপর বুসরার নিকট এসে সরাসরি তার মুখ থেকে কোন মাধ্যম ছাড়াই তা শুনেছেন এবং তাদের কাছ থেকে অন্যরা হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে কখনো মারওয়ান-এর মাধ্যমে বুসরাহ্ থেকে ‘উরওয়ার সূত্রে আবার কখনো মারওয়ান-এর মাধ্যম ছাড়াই বুসরাহ্ থেকে সরাসরি ‘উরওয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছেন আর এটি সে ধরনের কোন ভিন্নতা বা বৈপরীত্য নয় যা হাদীসের বিশুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। (তাই তাদের এ দাবীও ভিত্তিহীন)
(৩) তারা বলেনঃ এ হাদীসের রাবী হিশাম তার পিতা থেকে হাদীসটি শ্রবণ করেননি যা ত্ববারানীর বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। (অতএব হাদীসের সানাদে বিছিন্নতা থাকায় তা য‘ঈফ)
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) নিশ্চয় মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী এবং হাকিম-এর বর্ণনাটি এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন যে, হিশাম হাদীসটি তার পিতা থেকে শ্রবণ করেছেন। আর যদি এ ত্রুটিটি সঠিকও হয়ে থাকে তারপরেও তা এ হাদীসের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ হিশাম ছাড়াও ‘আবদুল্লাহ বিন আবূ বাকর, তার পিতা আবূ বাকর-এর মতো বিশ্বস্ত রাবীগণ হাদীসটি ‘উরওয়াহ্ থেকে সরাসরি শ্রবণ করে বর্ণনা করেছেন। যা মুয়াত্ত্বা মালিক, মুসনাদে আহমাদ এবং ইবনু জারূদ-এর বর্ণনা প্রমাণ করে। (অতএব তাদের এ দাবীটিও ভিত্তিহীন)
(৪) তারা বলেনঃ হাদীসটি মহিলা সাহাবী থেকে বর্ণিত অথচ বিধান পুরুষ সম্পর্কিত। অতএব, কিভাবে তা কেবলমাত্র মহিলারাই বর্ণনা করতে পারে? (তাই তা সঠিক নয়, নইলে পুরুষেরাও বর্ণনা করত)।
(আমরা তাদের প্রতিউত্তরে বলব) এর বিষয়ের হাদীস শুধুমাত্র মহিলারাই বর্ণনা করেননি বরং তা পুরুষেরাও বর্ণনা করেছেন। যেমনটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত পরবর্তী হাদীসটি।
(৫) তারা বলেনঃ যে মাস্আলাহ্ কষ্টকে অন্তর্ভুক্ত করে সে ধরনের মাস্আলার ক্ষেত্রে খবরে ওয়াহিদ গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশেষত এ ধরনের খবর।
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) সহীহ হাদীসসমূহকে প্রত্যাখ্যানের উদ্দেশে হানাফীগণ কর্তৃক উদ্ভাবিত এ নিয়মটি অবান্তর, বাতিল। যা ইমাম শাওকানী أِرْشَادُ الفُحُوْلِ আর ইবনু হাযম তাঁর الاَحْكَامُ فِى أُصُولِ الاَحْكَامَ এবং ইবনু কুদামাহ্ তাঁর جَنَّةُ الْمَنَاظِرِ গ্রন্থে বাতিল ঘোষণা করেছেন। আর যদিও এ নিয়মটি মেনে নেয়া হয় তারপরেও তা এ হাদীসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ এ হাদীসটি খবরে ওয়াহিদ পর্যায়ের নয় বরং তা নাবীয (খেজুর ভেজানো পানি) দ্বারা উযূর হাদীসের চেয়েও প্রসিদ্ধ এবং তা সতেরজন সহাবা (সাহাবা) কর্তৃক বর্ণিত।
(৬) তারা বলেনঃ হাদীসটির বিশুদ্ধতা মেনে নেয়া হলেও তাতে এ বিষয়ে কোন দলীল নেই। কারণ সকলের নিকট সর্বসম্মতিক্রমে তা বাহ্যিকভাবে বর্জিত। কেননা لَمْسٌ শব্দের আভিধানিক অর্থ সাধারণ স্পর্শ। আর তারা এটিকে কামভাবের সাথে বা হাতের নিম্নভাগ দ্বারা বা কোন আবরণ ছাড়া সহ আরও যেসব শর্ত দ্বারা করেছে তা এ হাদীসের মুতলাক্ব অর্থের সীমাবদ্ধকরণ আর এটাও সুস্পষ্ট যে, তারা হাদীসের কথা বলে না।
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) নিশ্চয় স্পর্শ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হাত দ্বারা স্পর্শ করা চাই তা হাতের উপরিভাগ হোক বা নিম্নভাগ। কিন্তু তা আবরণ ছাড়াই হতে হবে যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীসটি প্রমাণ করে। আর একটি বর্ণনা অন্য একটি বর্ণনার ব্যাখ্যাস্বরূপ। অতএব আমরা এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসের কথাই বলছি এবং তার উপরই ‘আমল করছি। কিন্তু অন্যান্য যে সকল শর্তের কথা ফুকাহায়ে শাফি‘ঈসহ অন্যরা বলেছেন আমরা সেদিকে দৃষ্টিপাত করবো না। কেননা হাদীসের সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই।
(৭) তারা বলেনঃ বুসরার হাদীস প্রমাণে বা সত্যায়নে বিনা আবরণে (লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা) উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার পক্ষের প্রবক্তারা অনেকগুলো মত এবং বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন যার সংখ্যা প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি যা ইবনুল ‘আরাবী তিরমিযীর শারাহতে বর্ণনা করেছেন। একটি বর্ণনার প্রমাণে তাদের মতবিরোধটি এর দলীল গ্রহণে সন্দেহের জন্ম দেয় যা প্রমাণ করে যে, তা তাদের নিকটই প্রমাণিত নয় এবং হাদীসের প্রয়োগের ক্ষেত্রটি নির্দিষ্ট নয়। অতএব, যদি হাদীসটি সহীহ হয় এবং ত্বলক্ব-এর হাদীসের উপর তার অগ্রাধিকার পাওয়াটি প্রমাণিত হয় তাহলে হাদীসটি মুজমাল হওয়াটাও সহীহ যার উদ্দেশ্য এর প্রবক্তাদের নিকট স্পর্শ হয়নি। পক্ষান্তরে লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা উযূ ভাঙ্গার বিপক্ষের প্রবক্তাদের মাঝে তা নিয়ে কোন মতবিরোধ নেই। (তাই তাদের মতটি গ্রহণযোগ্য নয়)
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) নিশ্চয়ই হাদীসের অর্থ স্পষ্ট, তার প্রমাণ বা সত্যায়নও প্রকাশিত ও এর প্রয়োগের ক্ষেত্রটিও সুনির্দিষ্ট। কিন্তু এটি সুন্নাহ দরদী লেখকদের নিকটে। আর প্রতিষ্ঠিত ও সহীহ হাদীসগুলো প্রত্যাখ্যানের জন্য কৌশল অবলম্বনকারী স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিরাই সর্বদা এই ধরনের ভিত্তিহীন বাতিল গাদ্দারীতে লেগে থাকে। এছাড়া মালিকী, শাফি‘ঈ সহ অন্যরা হাদীসের অর্থ বর্ণনায় যে মতবিরোধ করেছেন- আমাদের নিকট তা ধর্তব্য নয়। অতএব হাদীসটির অর্থ সুস্পষ্ট, যা মুজমাল নয়।
(৮) তারা বলেনঃ লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা প্রসবের পরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জনের দিকে ইঙ্গিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অধিকাংশ সময় প্রস্রাবের পরে অপবিত্রতা বের হয়ে থাকে। ফলে লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা এটি বর্ণনা করা হয়েছে আর যেসব ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করাটা খারাপ মনে হয় সেসব ক্ষেত্রে এই ধরনের ইঙ্গিতমূলক উল্লেখ করা রয়েছে।
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) প্রথমত নিশ্চয়ই এ সম্ভাবনাটি অনেক দূরবর্তী বরং তা বাতিল, যাকে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীসটি প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিতীয়ত সহাবা (সাহাবা), তাবি‘ঈসহ সালফে সলিহীনদের কারো মনে এ সম্ভাবনার উদয় ঘটেনি এবং তাদের কেউ এ কথা বলেননি বরং তাদের সকলেই একে তার বাহ্যিক অর্থেই বুঝেছেন যেদিকে ব্রেন দ্রুত ধাবিত হয়।
(৯) তারা বলেনঃ হাদীসটি সেই সময়ের শর্তযুক্ত যখন লজ্জাস্থান থেকে কোন কিছু বের হয়।
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) এই শর্তারোপের উপর কোন প্রমাণ নেই। অতএব, তা প্রত্যাখ্যাত।
(১০) তারা বলেনঃ হাদীসে مَسٌّ ক্রিয়ার কর্মটি লুক্বায়িত রয়েছে যা উল্লেখ করাটা খারাপ মনে করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাদীসের অর্থ হলোঃ مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ بِفَرْجِ اِمْرَأتِه فَلْيَتَوَضَأَ (অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থানকে স্বীয় স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গের সাথে স্পর্শ করাবে সে যেন উযূ করে)
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) এটি হাদীসের বিকৃতি করা যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি প্রত্যাখ্যান করেছে। যেখানে বলা হয়েছে اَنْضى بِيَدِه (তার হাত নিয়ে যায় লজ্জাস্থানের কাছে)।
তাদের কেউ কেউ বলেনঃ বুসরার হাদীসের অর্থের দাবী অনুপাতে রাবী হাদীসটি রিওয়ায়াত বিল মা‘না করেছেন।
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি রিওয়ায়াত বিল মা‘না হওয়ার দাবী করাটা মাযহাবের পক্ষপাতিত্বকরণ মস্তিষ্ক এবং শ্রবণশক্তি যাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কারণ বিষয়টি যদি এমনই হয় তাহলে হাদীসের বর্ণনাসমূহের বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা, নিশ্চয়তা সব উঠে যাবে।
তাদের কেউ কেউ আবার বলেনঃ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি এভাবে তা‘বিল করা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তি নিজ হাত দ্বারা লজ্জাস্থানকে স্ত্রীর লজ্জাস্থানে পৌঁছাবে সে যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। কারণ إنضاء ক্রিয়াটি কর্ম দাবী করে আর হাততো কেবলমাত্র একটি উপকরণ বা অস্ত্র। তাই পরবর্তীটুকু এর কর্ম।
এটি মূলত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের সাথে কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয় যার উত্তর দানের প্রয়োজন নেই। কারণ এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের চূড়ান্ত বিকৃতকরণ।
তারা আরও বলেনঃ বুসরার হাদীসের ‘আমর বা নির্দেশ দ্বারা মুসতাহাব উদ্দেশ্য।
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) প্রথমত ‘আমর-এর মূল অর্থ হচ্ছে ওয়াজিব হওয়া। দ্বিতীয়ত মুসনাদে আহমাদ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটিও এ কথা প্রত্যাখ্যান করছে যেখানে বলা হয়েছেঃ (مَنْ أَنْضَى بِيَدِه إِلى ذَكَرَهُ لَيْسَ دَوْنَه سَتْرٌ فَقَدْ وَجَبَ عَلَيْهِ الْوَضُوْءَ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি কোন আবরণ ছাড়াই নিজ হাতকে লজ্জাস্থানের কাছে নিয়ে গিয়ে তা স্পর্শ করলো তার ওপর উযূ ওয়াজিব হয়ে গেল। তৃতীয়ত দারাকুত্বনীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিও তাদের এ দাবীকে প্রত্যাখ্যান করছে যেখানে বলা হয়েছে (وَيْلُ لِّلَّذِيْنَ يَمَسُّوْنَ فُرُوْجَهُمْ وَلَا يَتَوَضُّوْنَ) অর্থাৎ- ‘যারা নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করে উযূ করে না তাদের জন্য দুর্ভোগ’। আর অকল্যাণ শুধুমাত্র ওয়াজিব পরিত্যাগ করার ফলে হয়ে থাকে।
আর প্রাধান্যযোগ্য কথা হলো ত্বলক্ব-এর এ হাদীসটি হাসান স্তরের হলেও বুসরার হাদীসটি তার চেয়ে কয়েক কারণে অধিক সহীহ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। প্রথমত ত্বলক্ব-এর হাদীসের কোন রাবী দ্বারা বুখারী মুসলিম দলীল পেশ করেননি। পক্ষান্তরে বুসরার হাদীসের সকল রাবী দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। দ্বিতীয়ত বুসরার হাদীসের অনেকগুলো সানাদ ও শাহিদ বর্ণনা থাকার সাথে সাথে একে সহীহ হিসেবে আখ্যায়িতকারী মুহাদ্দিসের সংখ্যাও অধিক। আঠারজনের মতো সাহাবী বুসরার হাদীসের অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন যাদের মধ্যে ত্বলক্ব বিন ‘আলী (রাঃ) অন্যতম। তৃতীয়ত বুসরাহ্ (রাঃ) হাদীসটি মুহাজির আনসারপূর্ণ তাদের কেন্দ্রে বর্ণনা করলেও কেউ তার বিরোধিতা করেননি বরং কেউ কেউ একে সমর্থন করেছেন। [অতএব, বুসরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি ত্বলক্ব-এর হাদীসের উপর অগ্রাধিকার যোগ্য।]