মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৬২৯৩ টি

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৪২১-[১৬] উক্ত রাবী [বুরায়দাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বলল ’আমি ইসলাম হতে বিচ্ছিন্ন’ যদিও সে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলেও সে যা বলছে তা-ই। আর যদি সে সত্যবাদী হয়, তবুও সে নিশ্চিন্ত-নিরাপদে কক্ষনো ইসলামে ফিরে আসতে পারবে না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ: إِنِّي بَرِيءٌ مِنَ الْإِسْلَامِ فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا فَهُوَ كَمَا قَالَ وَإِنْ كَانَ صَادِقًا فَلَنْ يَرْجِعَ إِلَى الْإِسْلَامِ سَالِمًا . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ

ব্যাখ্যা: (فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا) সে যদি কসমে মিথ্যাবাদী হয়। (فَهُوَ كَمَا قَالَ) যেরূপ বলেছে ‘তা-ই হবে’ বাক্যটি অধিকভাবে ধমকানো উদ্দেশ্য। ইবনু ‘আব্বাস, আবূ হুরায়রাহ্, ‘আত্বা, কাতাদাহ ও বিভিন্ন অঞ্চলের জুমহূর ফুকাহার মতে, এ ধরনের কসমে যদি অন্তর হতে বলে, তাহলে কাফির হবে।

আর আওযা‘ঈ, সাওরী, আবূ হানীফাহ্, আহমাদ ও ইসহক-এর মতে তা কসম এবং কাফফারা অবশ্যই লাগবে। ইবনু মুনযির বলেনঃ প্রথম অভিমতই অধিক সহীহ। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : (مَنْ حَلَف بِاَللَّاتِي وَالْعُزّٰى فَلْيَقُلْ لَا إِلٰه إِلَّا اللّٰه) যে ব্যক্তি লাত ও ‘উয্যার কসম খায় সে যেন لَا إِلٰه إِلَّا اللّٰه বলে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফ্ফারার কথা বলেননি। অন্য কেউ বদ্ধি করে বলেছেন এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (مَنْ حَلَف بِاَللَّاتِي وَالْعُزّٰى فَلْيَقُلْ لَا إِلٰه إِلَّا اللّٰه) যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের কসম করে সে যেরূপ বলেছেন তাই হবে। মূলত এর দ্বারা উদ্দেশ্য কঠোরতা আরোপ করা কসমের ব্যাপারে যাতে অন্য কেউ এ ধরনের পদক্ষেপ না নেয়। খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, যে ব্যক্তি ইসলাম হতে বিচ্ছিন্ন কসম খায় সে গুনাহগার হবে আর এর জন্য তার ওপর কাফফারা লাগবে না। কেননা শাস্তি তার দীনদারীতে করা হয়েছে মালের উপর কোনো কিছু আরোপ করা হয়নি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩২৫৫)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৪২২-[১৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কসমের উপর অটল থাকতে চাইতেন, তখন বলতেন, ’লা- ওয়াল্লাযী নাফসু আবিল ক-সিমি বিয়াদিহী’’ অর্থাৎ- এরূপ নয়! সে পবিত্র সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আবুল কাসিম (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রাণ। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اجْتَهَدَ فِي الْيَمِينِ قَالَ: «لَا وَالَّذِي نفس أَبُو الْقَاسِم بِيَدِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (إِذَا اجْتَهَدَ فِى الْيَمِينِ) কসমে যখন আরও অধিক দৃঢ় করতে চাইতেন।

(وَالَّذِىْ نَفْسُ أَبُو الْقَاسِمِ) তথা তার রূহ ও সত্তা। (بِيَدِه) তার হস্তক্ষেপ, যথেচ্ছভাব ক্ষমতা ও তার ইচ্ছার অধীনে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩২৬১)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৪২৩-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো শপথ করলে বলতেন, ’লা- ওয়া আসতাগফিরুল্লা-হ’ অর্থাৎ- এটা নয়, এবং আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: كَانَتْ يَمِينُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَلَفَ: «لَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: (وَأَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ) ‘‘আর আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি’’ যদি বিষয়টি এটার বিপরীত হয় ‘‘আস্থাগফিরুল্লাহ’’ বাক্যটি শপথ বাক্য নয়। অতএব তার দ্বারা কসম হয় না শুধুমাত্র কসমের সাথে সাদৃশ্যের কারণে এ ধরনের উক্তিকে কসম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩২৬২)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৪২৪-[১৯] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কসম করে এবং ইনশা-আল্লা-হ বলে, তখন সে ঐ কসমের বিপরীত করলে গুনাহগার হবে না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1] তবে ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, জুমহূর ’উলামাগণের একটি দল হাদীসটিকে ইবনু ’উমার-এর ওপর মাওকূফ করেছেন (অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেনি)।

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

مَرْفُوع وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله ليه وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَقَالَ: إِنْ شَاءَ اللَّهُ فَلَا حِنْثَ عَلَيْهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَذَكَرَ التِّرْمِذِيُّ جَمَاعَةً وَقَفُوهُ عَلَى ابْنِ عُمَرَ

ব্যাখ্যা: (عَلٰى يَمِينٍ) যার ওপর কসম খাওয়া হয়েছে তা করুক আর না করুক কসমে ইনশা-আল্লা-হ সংযুক্ত হলে ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, আল্লাহর ইচ্ছা সংযোজনে কসম সংঘটিত হওয়াতে বাধা দেয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩২৫৮)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৪২৫-[২০] আবুল আহ্ওয়াস ’আওফ ইবনু মালিক তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের নিকট প্রয়োজনবশত কিছু (সাহায্য) চাই, তখন সে আমাকে কিছুই দেয় না এবং এমনকি সদ্ব্যবহারও করে না- এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ করেন? অতঃপর যখন সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে আমার কাছে এসে কিছু চায়, অথচ আমি এ কসম করেছিলাম যে, তাকে কিছুই দেব না এবং তার সাথে সদ্ব্যবহারও করব না। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নির্দেশ করলেন, আমি যেন সে কাজটিই করি যা উত্তম এবং আমার কসমের কাফফারা আদায় করে দেই। (নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]

অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি [ইমাম মালিক (রহঃ)] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার চাচাতো ভাই আমার নিকট কিছু চাইলে তখন আমি এই বলে কসম করি যে, আমি তাকে (কিছুই) দেব না এবং তার সাথে সদ্ব্যবহারও করব না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার কসমের কাফফারা দিয়ে দাও।

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَن أَبِي الْأَحْوَصِ
عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ ابْنَ عَم لي آتيه فَلَا يُعْطِينِي وَلَا يَصِلُنِي ثُمَّ يَحْتَاجُ إِلَيَّ فَيَأْتِينِي فَيَسْأَلُنِي وَقَدْ حَلَفْتُ أَنْ لَا أُعْطِيَهُ وَلَا أَصِلَهُ فَأَمَرَنِي أَنْ آتِيَ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَأُكَفِّرَ عَنْ يَمِينِي. رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ يَأْتِينِي ابْنُ عَمِّي فَأَحْلِفُ أَنْ لَا أُعْطِيَهُ وَلَا أَصِلَهُ قَالَ: «كَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ»

ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী বলেনঃ কোনো কল্যাণ নেই আধিক্যের দৃষ্টিতে বরং অর্থটি প্রযোজ্য আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন ও কল্যাণসূচক কার্য হতে বিরত থাকা এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা এবং তাদেরকে দেয়া।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ প্রদান করেছেন তার বাণী: صِلْ مَنْ قَطَعَكَ، وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ، وَاعْفُ عَمَّنْ ظَلَمَكَ যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তা সাথে সুসম্পর্ক রাখ, যে তোমাকে বঞ্চিত করে তাকে দাও, যে তোমার ওপর জুলুম করে তাকে ক্ষমা করে দাও। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুল আহওয়াস (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪২৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ ও ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মানৎ করো না। কেননা মানৎ তাকদীরের কোনই পরিবর্তন করতে পারে না। অবশ্য এর দ্বারা কৃপণের ব্যয়-নির্বাহ হয় মাত্র। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَنْذُرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لَا يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ من الْبَخِيل»

ব্যাখ্যা: (إِنَّه لَا يَرُدُّ مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا) মানৎ তাকদীরের কিছু্ পরিবর্তন করতে পারে না। মাযিরী বলেনঃ বাক্যটি নেতিবাচক বলার উদ্দেশ্য। সম্ভবত মানৎ করলে ব্যক্তির জন্য পূরণ অপরিহার্য হয়ে উঠে। ফলে উৎসাহ ব্যতিরেকে তার জন্য তা বাস্তবায়ন করা খুবই কষ্টকর হয়। এও সম্ভাবনা রয়েছে, নেকির উদ্দেশ্যই মানৎকে নিজের জন্য অপরিহার্য করেছে কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই, ফলে প্রতিদান কম হয়। আর ‘ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য হয়।

সম্ভবনা রয়েছে মানৎ না করার অনেক অজ্ঞ ব্যক্তি মনে করে মানতের দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হয় এবং তাকদীর অর্জনে বাধা দান করে- অজ্ঞদের এই ভ্রান্ত ‘আক্বীদার আশঙ্কায় এটার কারণে মূলত নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসের ভাষ্য এটার সমর্থন করে। [আল্লাহই বেশী ভালো জানেন] (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৪০)

 


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪২৭-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের মানৎ করে, সে যেন অবশ্যই তা আদায় করে। আর যে ব্যক্তি তাঁর নাফরমানীর মানৎ করে, সে যেন অবশ্যই তা না করে। (বুখারী)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: (قَالَ : مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللّٰهَ فَلْيُطِعْهُ) যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানৎ করে সে যেন অবশ্যই তা করে, মানৎ ব্যতিরেকেই আল্লাহর আনুগত্য ওয়াজিব। সুতরাং মানৎকে যখন দৃঢ় করে নিবে সঠিকভাবে তা ওয়াজিব হবে না।

শারহুস্ সুন্নাতে রয়েছে, যে হাদীস দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হয়, যে আনুগত্য করার মানৎ করে তা বাস্তবায়ন করা আবশ্যিক হয়ে উঠে যদিও কোনো কিছুর সংশ্লিষ্ট না হয় আর যে পাপের মানৎ করে তা পুরা করা বৈধ না আর কাফফারা আদায় করা আবশ্যিক না যদি তাতে কাফফারা থাকে। তবে আমি ভাষ্যকার বলি, কাফফারা সাব্যস্ত হওয়া না হওয়াতে হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় না, হুকুম ‘আম্ভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুসলিম-এর হাদীসে كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ মানতের কাফফারা হলো কসমের কাফ্ফারার মতো।

আরও সুস্পষ্ট হাদীস যা আবূ দাঊদ, তিরমিযী নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। «لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةٍ وَكَفَّارَتُه كَفَّارَةُ يَمِينٍ» পাপ কাজে কোনো মানৎ নেই এবং তার কাফ্ফারা কসমের কাফ্ফারার মতো, এর উপর ভিত্তি করে কেউ যদি মানৎ করে ঈদের দিনে সওম পালন করবে তার ওপর কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না।

কেউ যদি তার সন্তানকে কুরবানী করার মানৎ করে তা বাতিল বলে গণ্য হবে- এ মতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশাল সংখ্যক সাহাবী গেছেন আর এটা মালিক ও শাফি‘ঈ-এরও বক্তব্য। আর যে কেউ মানৎ করে ‘আম্ভাবে সে বলে আমার ওপর মানৎ বা আমি মানৎ করলাম আর কোনো কিছু উল্লেখ করল না তার ওপর কসমের কাফফারা হবে। যেমন ‘উমার বিন ‘আমির-এর হাদীস,

 قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ - ﷺ- : كَفَّارَةُ النَّذْرِ إِذَا لَمْ يُسَمِّ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ

মানতের কাফফারা যখন তা উল্লেখ করা হয় না তা কসমের কাফফারা হবে।

অনুরূপ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, مَنْ نَذَرَ وَلَمْ يُسَمِّه، فَكَفَّارَتُه كَفَّارَةُ يَمِينٍ، وَمَنْ نَذَرَ شَيْئًا لَا يُطِيقُه فَكَفَّارَتُه كَفَّارَةُ يَمِينٍ যে মানৎ করে এবং তা উল্লেখ করল না তার কাফফারা হলো কসমের কাফ্ফারার মতো আর সে কোনো মানৎ করল আর তা বাস্তবায়নে সক্ষম না, তার কাফফারা কসমের কাফ্ফারার মতো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪২৮-[৩] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহর কাজের মানৎ পূরণ করতে নেই। আর যে জিনিসের মালিক বান্দা নয়, এরূপ জিনিসের মানৎ করলে তাও পূর্ণ করতে হয় না। (মুসলিম)[1]

অপর বর্ণনায় আছে, আল্লাহর নাফরমানী হয় এমন প্রত্যেক কাজে মানৎ বাস্তবায়িত হয় না।

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةٍ وَلَا فِيمَا لَا يَمْلِكُ الْعَبْدُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ: «لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيّة الله»

ব্যাখ্যা: গুনাহ হয় এমন কাজের মানৎ পুরা করতে নেই, কেননা তা মানতেই সংঘটিত হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪২৯-[৪] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানতের কাফফারা শপথের কাফফারার ন্যায়। (মুসলিম)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَن عقبَة بن عَامر عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

ব্যাখ্যা: (كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ) ‘‘মানতের কাফফারা হলো শপথের কাফ্ফারার মতো’’ বাক্যটির উদ্দেশে ‘উলামারা মতানৈক্য করেছেন। জুমহূরের ভাষ্য হলো, এটা জিদের মানতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন কোনো মানুষ মায়েদের সাথে কথা না বলার ইচ্ছা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ আমি যদি যায়দ-এর সাথে কথা বলি, তাহলে আমার ওপর অমুক বিষয় বর্তাবে। অতঃপর সে কথা বলল তাহলে তার ইচ্ছাধীন রয়েছে ইচ্ছা করলে কসমের কাফফারা আদায় করবে অথবা সে নিজের যা ধার্য করেছে তা আদায় করবে। আর এটাই আমাদের নিকট সহীহ মাযহাব। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৪৫)


পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩০-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা প্রদান করছিলেন। এমন সময় দেখলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। লোকেরা বলল, তিনি আবূ ইসরাঈল। সে মানৎ করেছে যে, দাঁড়িয়ে থাকবে বসবে না, ছায়ায় থাকবে না এবং কথাবার্তা বলবে না এবং সিয়ামরত থাকবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে বলে দাও, সে যেন অবশ্যই কথা বলে এবং ছায়ায় থাকে ও বসে, আর সিয়াম পালন করে। (বুখারী)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: بَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ إِذا هُوَ بِرَجُل قَائِم فَسَأَلَهُ عَنْهُ فَقَالُوا: أَبُو إِسْرَائِيلَ نَذَرَ أَنْ يَقُومَ وَلَا يَقْعُدَ وَلَا يَسْتَظِلَّ وَلَا يَتَكَلَّمَ وَيَصُومَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্যমতে, বৈধ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা আল্লাহর আনুগত্য নয়। আবূ দাঊদ-এর হাদীস ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, (صمت يَوْم إِلَى اللَّيْلِ) দিন হতে রাত্রি পর্যন্ত নিরবতা থাকা বৈধ না। আর আবূ বাকর সিদ্দীক নির্দিষ্ট একজন মহিলাকে বলেছিলেন, নিশ্চুপ থাকা জাহিলী প্রথা। হাদীসে আরও সাব্যস্ত হয়, মানুষ যা কিছু দ্বারা কষ্ট পায় যেমন খালি পায়ে হাঁটা, রৌদ্রে বসে থাকা আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এটা দ্বারা মানৎ বাস্তবায়ন হবে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ইসরাঈল-কে অন্যান্য কাজগুলো ছাড়া সওম পুরা করতে বলেছেন। কেননা তাতে তার কষ্ট হবে না, আর আদেশ করেছেন বসতে, কথা বলতে এবং ছায়া গ্রহণ করতে।

কুরতুবী বলেনঃ জুমহূরদের জন্য এ হাদীসটি সুস্পষ্ট দলীল পাপের কাজে এবং এমন কাজে অনুগত্য নেই তাতে মানৎ করতে কাফফারা ওয়াজিব করে না। ইমাম মালিক বলেনঃ আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাফ্ফারার আদেশের বিষয়টি পাইনি। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৭০৪)


পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩১-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধকে দেখলেন যে, তার দুই পুত্রের কাঁধে ভর দিয়ে চলছে। তখন জিজ্ঞেস করলেন, লোকটির কি হয়েছে? লোকেরা বলল, সে মানৎ করেছে যে, পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাবে। এতদশ্রবণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই লোককে কষ্ট দেয়া আল্লাহ তা’আলার নিষ্প্রয়োজন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সওয়ারীতে আরোহণের নির্দেশ দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ: «مَا بَالُ هَذَا؟» قَالُوا: نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ إِلَى بَيت الله قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفسه لَغَنِيّ» . وَأمره أَن يركب

ব্যাখ্যা: (أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ رَأَى شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন, এক বৃদ্ধ তার দুই পুত্রের কাঁধের উপর ভর করে চলছে। ত্বীবী বলেন, এই বৃদ্ধ লোকটি হলো আবূ ইসরাঈল। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৮৬৫)


পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩২-[৭] মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ বৃদ্ধকে বললেন, হে বৃদ্ধ! তুমি সওয়ারীতে আরোহণ কর। কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমার ও তোমার মানতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: «ارْكَبْ أَيُّهَا الشَّيْخُ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْكَ وَعَن نذرك»


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৩-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফতোয়া জানতে চাইলেন যে, তার মা একটি মানৎ করেছিল, কিন্তু তা আদায় করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফতোয়া দিলেন, তাঁর পক্ষ থেকে তুমি তা আদায় করে দাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ سَعْدَ بن عبَادَة رَضِي الله عَنْهُم اسْتَفْتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَذْرٍ كَانَ عَلَى أُمِّهِ فَتُوُفِّيَتْ قَبْلَ أَنْ تَقْضِيَهُ فَأَفْتَاهُ أَنْ يَقْضِيَهُ عَنْهَا

ব্যাখ্যা: হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে তার অধিকার আদায় করা ওয়াজিব। সুতরাং মালের অধিকার তার পক্ষ হতে আদায় করা সর্বসম্মত ইজমা। শারীরিক ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে। অন্যত্র আমরা এই কিতাবে আলোচনা করেছি।

শাফি‘ঈ মাযহাব ও অন্যান্যদের নিকট মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে মালের অধিকার আদায় করা ওয়াজিব যেমন যাকাত, কাফফারা, মানৎ ইত্যাদি চাই তা ওয়াসিয়্যাত করুক বা নাই করুক। মানুষের ঋণের মতো। মালিক, আবূ হানীফাহ্ ও তাদের সাথীদের মতে যদি ওয়াসিয়্যাত করে না যায় তাহলে কোনো কিছু আদায় করা ওয়াজিব না।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ উম্মু সা‘দ-এর মানতের বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কারও মতে ‘আম্ মানৎ ছিল, কারও মতে সওম, আবার কেউ বলেন গোলাম আযাদ, আবার কেউ বলেন সাদাকার ব্যাপারে ছিল। আর প্রত্যেকেই উম্মু সা‘দ-এর হাদীসের ঘটনাকেই দলীল হিসেবে পেশ করেছে, তবে অধিকতর শক্তিশালী মত হলো তার মানৎ ছিল মালের ব্যাপারে যা দারাকুত্বনীর বর্ণনাকে শক্তিশালী করে।

(حَدِيثِ مَالِكٍ فَقَالَ لَه يَعْنِي النَّبِيَّ ﷺ اسق عنها الماء) মালিক-এর হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তার পক্ষ হতে পানির ব্যবস্থা কর তথা করুণার ব্যবস্থা কর। সওমের হাদীসে ব্যাপারে সানাদ ও মাতানের দিক হতে মতানৈক্য রয়েছে। আর অন্য গোলাম আযাদ করব এটা মালের সাথে সামঞ্জস্য রাখে, কেননা গোলাম আযাদের বিষয়টি অর্থের সাথে জড়িত। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৩৮)


পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৪-[৯] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! নিশ্চয় আমার তাওবার মধ্যে এটাও রয়েছে যে, আমি সম্পূর্ণরূপে আমার ধন-সম্পদ হতে পৃথক হয়ে যাব, যা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য সাদাকা হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্পদের কিয়দংশ তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। সেটাই হবে তোমার জন্য উত্তম। আমি (কা’ব) বললাম, তাহলে আমি আমার খায়বারের অংশটি নিজের জন্য রেখে দেই। উল্লেখিত বর্ণনাটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ فِى النُّذُوْرِ

وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمْسِكْ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» . قُلْتُ: فَإِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيْبَر. وَهَذَا طرف من حَدِيث مطول

ব্যাখ্যা: কা‘ব বিন মালিক তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি ছিলেন, যিনি তিনজনের একজন ছিলেন যারা তাবূকের যুদ্ধে খাওয়া হতে নিজেদেরকে বিরত রেখেছিলেন আর তিনজন হলেন কা‘ব বিন মালিক, হিলাল বিন উমাইয়্যাহ্, মুররাহ্ বিন রাবী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(أَمْسِكْ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ) তুমি কিছু অংশ নিজের ওপর রেখে দাও, দৃশ্যত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ ছিল কিছু সম্পদ বের করা ও কিছু সম্পদ রেখে দেয়া। তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে আর হাদীস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে, সমস্ত সম্পদ সাদাকা করা ঘৃণিত। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ‘যাকাত অধ্যায়ে’ আলোচনা হয়ে গেছে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৫৭)


পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৫-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ সংক্রান্ত কাজে কোনো মানৎ নেই। আর তার কাফফারা হলো শপথের কাফফারার ন্যায়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী)[1]

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةٍ وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী (রহঃ) ‘‘মা‘আলিম’’ গ্রন্থে বলেন, যদি হাদীস সহীহ হয় তাহলে কাফফারা অবশ্যই ওয়াজিব হবে। তবে গুনাহের কাজের মানৎ করলে তা আদায় করতে হবে না। যদিও হাদীসের গবেষকরা হাদীসটি মাকতূ‘ হিসেবে মন্তব্য করেছেন তথা য‘ঈফ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৩৬)


পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৬-[১১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো অমূলক জিনিসের মানৎ করল, তার কাফফারা কসমের কাফফারার ন্যায়। আর যে কোনো গুনাহের কাজের মানৎ করল, তার কাফফারাও কসমের কাফফারার ন্যায়। আর যে এমন কাজের মানৎ করল যা আদায় করার সে সামর্থ্য রাখে না, তার কাফফারাও কসমের কাফ্ফারার ন্যায়। আর যে ব্যক্তি এমন কাজের মানৎ করল যা আদায় করার সামর্থ্য রাখে, তাহলে সে যেন অবশ্যই তা আদায় করে। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ; কোনো কোনো রাবী এ হাদীসটিকে ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর ওপর মাওকূফ করেছেন)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ نَذَرَ نَذْرًا لم يسمه فَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ. وَمَنْ نَذَرَ نَذْرًا لَا يُطِيقُهُ فَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ. وَمَنْ نَذَرَ نَذْرًا أَطَاقَهُ فَلْيَفِ بِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَه وَوَقفه بَعضهم على ابْن عَبَّاس

ব্যাখ্যা: (مَنْ نَذَرَ نَذْرًا لَمْ يُسَمِّه) তথা মানৎকারী বলল, আমি মানৎ করলাম এবং কোনো মানৎ নির্দিষ্ট করল না তার সওম না অন্য কিছু। হাদীসে প্রমাণিত হয়, যে মানৎ উল্লেখ হয় না তার কাফফারা কসমের কাফফারার ন্যায়। ইমাম নববী বলেন, হাদীসের মর্মার্থের ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। জুমহূরদের মতে এটা প্রযোজ্য জিদ বা একগুয়েমীর ক্ষেত্রে মানৎকারী ইচ্ছা করলে মানৎ পুরা করতে পারে, আবার কাফফারাও দিতে পারে।

ইমাম মালিক এবং অনেকে মানৎ দ্বারা ‘আম্ মানৎ পোষণ করেছেন। আর ফুকাহায়া সকল প্রকার মানৎকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তারা বলেন, সকল প্রকার মানতে মানৎকারীর স্বাধীনতা রয়েছে ইচ্ছা করলে পুরা করবে অথবা কসমের কাফফারা দিবে।

ইমাম শাওকানী বলেনঃ দৃশ্যত হাদীসের ভাষ্য এমন মানতের ক্ষেত্রে উল্লেখ হয়নি। আর নামীয় মানৎ যদি আনুগত্যশীল হয় তবে বাস্তবায়নে অসাধ্য হয় তাহলে কসমের কাফফারা হবে। আর যদি সাধ্যের মধ্যে হয় তাহলে সে মানৎ পুরা করা ওয়াজিব, চাই তা শারীরিকের মাধ্যমে হোক বা অর্থের মাধ্যমে হোক। আর যদি নামীয় মানৎ পাপমুক্ত হয় তা পুরো করতে হবে ও বাস্তবায়নও হবে না এবং কাফ্ফারাও অপরিহার্য হবে না। আর যদি মানৎ মুবাহ তথা বৈধ হয় এবং সাধ্যের মধ্যে তাহলে অধিকতর সঠিক মত হলো তা বাস্তবায়ন হবে। আর যদি সাধ্যের বাইরে হয় তাহলে কাফফারা লাগবে। আর এটাই সহীহ হাদীসগুলোর মর্মার্থ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৩৬)


পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৭-[১২] সাবিত ইবনুয্ যহহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে বুওয়ানাহ্ নামক স্থানে একটি উট যাবাহ করার মানৎ করল। অতঃপর সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, জাহিলিয়্যাত যুগে কি সেখানে কোনো প্রতিমার পূজা-অর্চনা হত? সাহাবীগণ বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো জিজ্ঞেস করলেন, সে অঞ্চলে কি কাফিরদের কোনো মেলা বসত। সাহাবীগণ বললেন, না। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার মানৎ আদায় কর। কেননা, যে কাজে আল্লাহ তা’আলার নাফরমানী হয়, এমন মানৎ পূরণ করতে নেই এবং আদম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয়, সেই জিনিসের মানৎ করলে তা পূর্ণ করতে হয় না। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ثَابت بن الضَّحَّاك قَالَ: نَذَرَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَهَلْ كَانَ فِيهِ عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟» قَالُوا: لَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أوف بِنَذْرِك فَإِنَّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلَا فِيمَا لَا يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِىْ مَعْصِيَةِ اللّٰهِ) যে কাজে আল্লাহর নাফরমানী হয় এমন মানৎ পুরা করতে নেই। হাদীস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে বৈধ ক্ষেত্রে মানৎ করা বিশুদ্ধ যখন পাপ কাজে মানৎ নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং এটা ব্যতিরেকে অন্য স্থানে বৈধ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩০৩)


পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৮-[১৩] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে দাদা [’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণনা করেন। জনৈকা মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মানৎ করেছি যে, (আপনি জিহাদ শেষে আগমনকালে) আমি আপনার সামনে দফ বাজাব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মানৎ পুরো কর। (আবূ দাঊদ)[1]

আর রযীন আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেন। মহিলাটি বলল, জাহিলিয়্যাত যুগে লোকেরা যেখানে পশু যাবাহ করত আমি সে সকল অঞ্চলে পশু যাবাহ করার মানৎ করেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, জাহিলিয়্যাত যুগে সে সকল স্থানে কি কোনো দেব-দেবী ছিল? যেগুলোর পূজা-অর্চনা করা হতো। তখন মহিলাটি বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো জিজ্ঞেস করলেন, সেখানে কি কাফিরদের কোনো মেলা আয়োজন হতো? মহিলাটি বলল, না। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তোমার মানৎ আদায় করতে পার।

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جده رَضِي الله عَنهُ أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي نَذَرْتُ أَنْ أَضْرِبَ عَلَى رَأْسِكَ بِالدُّفِّ قَالَ: «أَوْفِي بِنَذْرِكِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَزَادَ رَزِينٌ: قَالَتْ: وَنَذَرْتُ أَنْ أَذْبَحَ بِمَكَانِ كَذَا وَكَذَا مَكَانٌ يَذْبَحُ فِيهِ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ: «هَلْ كَانَ بِذَلِكِ الْمَكَانِ وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ؟» قَالَتْ: لَا قَالَ: «هَلْ كَانَ فِيهِ عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟» قَالَتْ: لَا قَالَ: «أَوْفِي بِنَذْرِك»

ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী বলেনঃ দফ বাজানো ‘ইবাদাতের কাজ নয় যা মানতের সাথে সংশ্লিষ্ট, বরং এটা একটি মুবাহ কাজ (দফ এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র দেখতে অনেকটা গোল চালনীর মতো, যা একদিক হতে আওয়াজ করা বা বাজানো যায়)।

আর বিশেষ করে দফ বাজানো হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে, যখন তিনি যুদ্ধের ময়দান হতে বিজয়বেশে ফিরে আসতেন আনন্দ প্রকাশের জন্য আর তা কাফিরদের জন্য ছিল কষ্টকর এবং মুনাফিকদের জন্য ছিল লাঞ্ছনার। এজন্য বিবাহের অনুষ্ঠানে দফ বাজানোকে মুস্তাহাব করা হয়েছে বৈধ আনন্দোৎসব প্রকাশের জন্য অবৈধ লাম্পট্য হতে মুক্তির জন্য। আর এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ব্যক্তবের সাথে সাদৃশ্য রাখে। (اهْجُوا قُرَيْشًا ; فَإِنَّهُ أَشَدُّ عَلَيْهِمْ مِنْ رَشْقِ النَّبْلِ) তোমরা কাফিরদের ব্যঙ্গনবিশ বা ব্যঙ্গাত্মক কর, কারণ এটা তীর নিক্ষেপের চেয়েও তাদের ওপর কঠিন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৩৯-[১৪] আবূ লুবাবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমার পূর্ণাঙ্গ তওবা্ এটাই হবে যে, আমি আমার বংশীয় আবাসস্থল পরিত্যাগ করব, যে ঘরে আমি এ পাপকার্যে লিপ্ত হয়েছি এবং আমি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ সাদাকাস্বরূপ প্রদান করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য এক-তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। (রযীন)[1]

وَعَن أبي لبَابَة: أَنَّهُ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَهْجُرَ دَارَ قَوْمِي الَّتِي أَصَبْتُ فِيهَا الذَّنْبَ وَأَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي كُلِّهِ صَدَقَةً قَالَ: «يُجْزِئُ عَنْكَ الثُّلُثُ» . رَوَاهُ رزين

ব্যাখ্যা: আবূ লুবাবাহ্, তিনি হলেন কিফায়াহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযীর আল আনসারী আল আওসী, তিনি তার উপনাম আবূ লুবাবাহ্ নামে বেশী পরিচিত ছিলেন, তিনি  বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন, কারও মতে অংশগ্রহণ করেননি।

হাদীসের ভাষ্যে ঘটনার বিবরণ, আবূ লুবাবাহ্ আল আনাসারী -এর পরিবার-পরিজন ও বিষয়-সম্পত্তি ইয়াহূদী এলাকায় ছিল বলে তার উক্ত সম্প্রদায়ের সাথে বাহ্যিক হৃদ্যতা ছিল যে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায়যাকে ২৫ দিন ধরে অবরোধ করে রেখেছিলেন। তখন তারা ভীত হলো এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আবূ লুবাবাকে আমাদের কাছে পাঠান, আমরা তার সাথে পরামর্শ করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাদের কাছে পাঠালেন, তারা আবূ লুবাবাকে কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করল, যদি আমরা নিজেদেরকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সোপর্দ করি তাহলে তিনি আমাদের সঙ্গে কি আচরণ করবেন? তখন আবূ লুবাবাহ্ নিজের গলার উপর হাত বুলে এদিকে ইঙ্গিত করলেন যে, তিনি তোমাদের যাবাহ (হত্যা) করবেন। এই গোপনীয়তা প্রকাশ করতেই তার মনে জাগল যে, তিনি তো বিরাট আমানাতের খিয়ানাত করে ফেলেছেন এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত হলেন আর বললেন, সে আল্লাহর ও রসূলের খিয়ানাত করেছে- এ প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে, يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوا لَا تَخُونُوا اللّٰهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা খিয়ানাত করো না আল্লাহর সাথে ও রসূলের সাথে এবং খিয়ানাত করো না নিজেদের পারস্পারিক আমানাতে জেনে শুনে’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ২৭)।

এ ঘটনার পর আবূ লুবাবাহ্ মসজিদের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং নিজকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে নিলেন যতদিন পর্যন্ত আমার তাওবাহ্ কবুল না করেন আল্লাহ ততদিন পর্যন্ত, খানাপিনা আমার জন্য হারাম এভাবে যতদিন থাকলেন। অতঃপর বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন আর আল্লাহ তার তাওবাহ্ কবুল করলেন, তাকে বলা হলো আপনার তাওবাহ্ আল্লাহ কবুল করেছেন নিজকে মুক্ত করুন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম আমি নিজকে বাঁধনমুক্ত করব না যতক্ষণ না বাঁধনমুক্ত করেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এসে তার বন্ধন খুলে দিলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথাটি বলেছিলেন যা হাদীসে বর্ণিত।
(‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩০৯)

হাদীসে দলীল প্রমাণিত হয় যে, মানৎকারীর ওপর তার সকল সম্পদ সাদাকা করা আবশ্যিক হয় না।


পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ

৩৪৪০-[১৫] জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি মক্কা বিজয়ের দিন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট এই মানৎ করেছি যে, আল্লাহ তা’আলা যদি আপনাকে মক্কা বিজয় দান করেন, তাহলে আমি বায়তুল মাকদিসে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখানে (মসজিদুল হারামে) সালাত আদায় করে নাও। লোকটি পুনরায় আবেদন করল। এবারও বললেন, এ জায়গায় সালাত আদায় করে নাও। লোকটি তৃতীয়বারও সে কথার পুনরাবৃত্তি করল। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মনোষ্কামনা পূরণ কর। (আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]

وَعَن جَابر بن عبد الله: أَنَّ رَجُلًا قَامَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَقَالَ: يَا رَسُول الله لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكَ مَكَّةَ أَنْ أُصَلِّيَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ رَكْعَتَيْنِ قَالَ: «صلى الله عَلَيْهِ وَسلم هَهُنَا» ثمَّ عَاد فَقَالَ: «صل هَهُنَا» ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ فَقَالَ: «شَأْنَكَ إِذًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي

ব্যাখ্যা: (قَالَ : صَلِّ هٰهُنَا) তুমি এখানে তথা মক্কার মসজিদে হারামে সালাত আদায় কর, কেননা এটা অধিক ফযীলতপূর্ণ। এতদসত্ত্বেও এখানে সালাত আদায় করা সহজ।
إِذًا জওয়াব এবং প্রতিদান। যখন তুমি এখানে সালাতে আদায় করতে অস্বীকার করছ তাহলে তুমি তাই কর যা মানৎ করেছ বায়তুল আকসায় সালাত আদায় করতে।
হিদায়াহ্ ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলা হয়েছে, যদি কেউ মানৎ করে মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করবে আর সে যদি মসজিদে হারামে সালাত আদায় করে তাহলে তার মানৎ আদায় হবে তবে যদি মসজিদে আকসা মানৎ আদায় করে তাহলে মানৎ আদায় হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هٰذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ) আমরা এই মসজিদে সালাত আদায় অন্য মসজিদের চেয়ে এক হাজার গুণ, তবে মসজিদে হারাম ব্যতিরেকে। হ্যাঁ যদি মসজিদে হারামে সালাত আদায় করার মানৎ করে আর মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করে তাহলে মানৎ আদায় হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


দেখানো হচ্ছেঃ ৩৪২১ থেকে ৩৪৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৯৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 169 170 171 172 173 · · · 312 313 314 315 পরের পাতা »