পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৬১-[৫] হামনাহ্ বিনতু জাহশ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি গুরুতরভাবে ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ অবস্থার কথা বলতে ও এর মাস্আলাহ্ জানতে আসলাম। আমি তাঁকে আমার বোন যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর ঘরে পেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি ইস্তিহাযার গুরুতর রোগে ভুগছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? এ কারণে আমি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)-সিয়াম ঠিকমত করতে পারছি না। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাকে সেখানে পট্টি দিতে উপদেশ দিচ্ছি, তা রক্ত রোধ করবে। হামনাহ্ (রাঃ)বললেন, তা তো এ দিয়ে থামবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি তার উপর কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে নিবে। তিনি বলেন, তা এর চেয়েও অধিক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি পট্টির নীচে কাপড়ের লেঙ্গট বেঁধে নিবে। তিনি বললেন, হে আল্লাহ রসূল! এটা আরো বেশী গুরুতর। আমার পানির স্রোতের ন্যায় রক্তক্ষরণ হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তোমাকে আমি দু’টি নির্দেশ দিচ্ছি। এর যে কোন একটিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যদি তুমি দু’টোই করতে পারো তাহলে তুমিই অধিক বুঝবে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, চিন্তা করবে না, এটা শায়ত্বনের (শয়তানের) অনিষ্ট সাধনের চেষ্টার একটি অনিষ্ট সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রথম নির্দেশ- তুমি তোমার এ সময়ের ছয়দিন অথবা সাতদিন হায়য হিসেবে ধরবে। প্রকৃত বিষয়, আল্লাহর জানা আছে। অতঃপর গোসল করবে। শেষে যখন তুমি মনে করবে, তুমি পাক ও পবিত্র হয়ে গেছ, মাসের বাকী তেইশ রাত-দিন অথবা চবিবশ রাত-দিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকবে এবং সিয়ামও পালন করবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর এভাবে প্রতি মাসে তুমি হিসাব করে চলবে যেভাবে অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা তাদের হায়যের সময়কে ’হায়য’ ও তুহুর-এর সময়কে গণ্য করে।
দ্বিতীয় নির্দেশ- আর তুমি যদি সক্ষম হও, যুহরকে পিছিয়ে দিতে ও ’আসরকে এগিয়ে আনতে তাহলে এক গোসলে যুহর ও ’আসরকে একত্রে আদায় করবে। এভাবে মাগরিবকে পিছিয়ে নিবে ও ’ইশাকে এগিয়ে আনবে, তারপর একই গোসলের মাধ্যমে উভয় সালাতকে একসাথে আদায় করবে। আর ফজরের (ফজরের) জন্যও গোসল করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করবে এবং সওমও রাখবে। সারকথা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তিন গোসলে আদায় করবে। তারপর দু’ ওয়াক্ত সালাতকে একত্রে আদায় করবে। তুমি যদি এ নিয়মে করতে পারো, তাহলে তা-ই করবে। হামনাহ্ বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর শেষ নির্দেশটা আমার নিকট তোমার জন্য বেশী পছন্দনীয়। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَن حمْنَة بنت جحش قَالَتْ: كُنْتُ أُسْتَحَاضُ حَيْضَةً كَثِيرَةً شَدِيدَةً فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْتَفْتِيهِ وَأُخْبِرُهُ فَوَجَدْتُهُ فِي بَيْتِ أُخْتِي زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُسْتَحَاضُ حَيْضَةً كَثِيرَةً شَدِيدَةً فَمَا تَأْمُرُنِي فِيهَا؟ قَدْ مَنَعَتْنِي الصَّلَاةَ وَالصِّيَامَ. قَالَ: «أَنْعَتُ لَكِ الْكُرْسُفَ فَإِنَّهُ يُذْهِبُ الدَّمَ» . قَالَتْ: هُوَ أَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «فَتَلَجَّمِي» قَالَتْ هُوَ أَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «فَاتَّخِذِي ثَوْبًا» قَالَتْ هُوَ أَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ إِنَّمَا أَثُجُّ ثَجًّا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَآمُرُكِ بِأَمْرَيْنِ أَيَّهُمَا صَنَعْتِ أَجَزَأَ عَنْكِ مِنَ الْآخَرِ وَإِنْ قَوِيتِ عَلَيْهِمَا فَأَنت أعلم» فَقَالَ لَهَا: إِنَّمَا هَذِهِ رَكْضَةٌ مِنْ رَكَضَاتِ الشَّيْطَانِ فتحيضي سِتَّة أَيَّام أَو سَبْعَة أَيَّام فِي عِلْمِ اللَّهِ ثُمَّ اغْتَسِلِي حَتَّى إِذَا رَأَيْتِ أَنَّكِ قَدْ طَهُرْتِ وَاسْتَنْقَأْتِ فَصَلِّي ثَلَاثًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً أَوْ أَرْبَعًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً وَأَيَّامَهَا وصومي وَصلي فَإِن ذَلِك يجزئك وَكَذَلِكَ فافعلي كَمَا تَحِيضُ النِّسَاءُ وَكَمَا يَطْهُرْنَ مِيقَاتُ حَيْضِهِنَّ وَطُهْرِهِنَّ وَإِنْ قَوِيتِ عَلَى أَنْ تُؤَخِّرِينَ الظُّهْرَ وتعجليين الْعَصْر فتغتسلين وتجمعين الصَّلَاتَيْنِ: الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَتُؤَخِّرِينَ الْمَغْرِبَ وَتُعَجِّلِينَ الْعِشَاءَ ثُمَّ تَغْتَسِلِينَ وَتَجْمَعِينَ بَيْنَ الصَّلَاتَيْنِ فَافْعَلِي وَتَغْتَسِلِينَ مَعَ الْفَجْرِ فَافْعَلِي وَصُومِي إِنْ قَدَرْتِ عَلَى ذَلِكَ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَهَذَا أَعْجَبُ الْأَمْرَيْنِ إِلَيَّ» . رَوَاهُ أَحْمَدَ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, ইস্তিহাযাহ্ রক্ত খুবই বেশী নির্গত হলে কাপড়ের পট্টি বেঁধে নেবে। আর যুহর ও ‘আসরের সালাতের জন্য গোসল করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জমা করবে এবং মাগরিব ও ‘ইশার জন্য গোসল করবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জমা করবে। আর ফাজরের (ফজরের) সালাতের জন্য গোসল করে সালাত আদায় করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৬২-[৬] আসমা বিনতু ’উমায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ফাত্বিমাহ্ বিনতু আবূ হুবায়শ (রাঃ)-এর এত দিন ধরে ইস্তিহাযাহ্ হচ্ছে এবং সে (এটাকে হায়য মনে করে) সালাত আদায় করছে না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’সুবহা-নাল্ল-হ’ পড়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করা তো শায়ত্বনের (শয়তানের) প্ররোচনা। সে যেন একটি গামলায় পানি ভরে ওতে বসে যায়, তারপর যখন পানি পীত রং দেখে, তখন (অন্য পানি দ্বারা) গোসল করে যুহর ও ’আসরের সালাত আদায় করে। মাগরিব ও ’ইশার সালাতের জন্য এভাবে একবার গোসল করবে। আর ফজরের (ফজরের) জন্য পৃথক একবার গোসল করবে। এর মাঝখানে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নিবে। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن أَسمَاء بنت عُمَيْس قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ أَبِي حُبَيْشٍ اسْتُحِيضَتْ مُنْذُ كَذَا وَكَذَا فَلَمْ تُصَلِّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ إِنَّ هَذَا مِنَ الشَّيْطَانِ لِتَجْلِسَ فِي مِرْكَنٍ فَإِذَا رَأَتْ صُفَارَةً فَوْقَ الْمَاءِ فَلْتَغْتَسِلْ لِلظُّهْرِ وَالْعَصْرِ غُسْلًا وَاحِدًا وَتَغْتَسِلْ لِلْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ غُسْلًا وَاحِدًا وَتَغْتَسِلْ لِلْفَجْرِ غُسْلًا وَاحِدًا وَتَوَضَّأُ فِيمَا بَيْنَ ذَلِكَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَقَالَ:
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, মুসতাহাযা মহিলার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জন করা শায়ত্বনের (শয়তানের) অনুসরণ করার শামিল। আর মুস্তাহাযার রং হলুদ বর্ণের হয়। আর দু’ ওয়াক্ত সালাতের জন্য একটি গোসল করতে হবে। আর প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুন করে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে। সালাত জমা করার হাদীসটি হানাফী মাযহাবের খেলাফ। তাদের নিকট সেটা জমা করা জায়িয নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৬৩-[৭] বর্ণনাকারী বলেন, মুজাহিদ (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ফাত্বিমাহ্ (রাঃ)-এর প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করা কঠিন হয়ে পড়লে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক গোসলে দুই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) একত্রে আদায় করতে নির্দেশ দিলেন।[1]
رَوَى مُجَاهِدٌ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: لَمَّا اشْتَدَّ عَلَيْهَا الْغُسْلُ أَمَرَهَا أَنْ تَجْمَعَ بَيْنَ الصَّلَاتَيْنِ
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
হিজরতের পূর্বে মি’রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। এর পূর্বে দু’ ওয়াক্ত সালাত ফরয ছিল। সূর্যোদয়ের পূর্বে অর্থাৎ- ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আর সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ- ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ’’সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করো’’- (সূরাহ্ আল গাফির/মু’মিন ৪০: ৫৫)।
’সালাত’ শব্দটি কোন ধাতু (মূল শব্দ) হতে উদগত এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তা সালাত তথা রহমত শব্দ থেকে উদগত। কারো মতে তা সালাত তথা দু’আ থেকে উদগত। আবার কারো মতে তা الصلوين থেকে উদগত যার অর্থ ঐ দু’টি রগ সালাত আদায়ের সময় যা বক্র হয়। আবার কারো মতে الصلى (অগ্নিতে প্রবেশ) শব্দ হতে উদগত। ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ গ্রন্থে এ সম্পর্কে সুহায়লী (রহঃ) থেকে সুন্দর কথা বর্ণনা করেছেন। কেউ ইচ্ছা করলে তা দেখে নিতে পারেন।
৫৬৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্ হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ لَمَّا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِر» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটির বাহ্যিক দিক হতে আমরা এটাই বুঝতে পারছি যে, মানুষ সালাত-সিয়াম পালন করার সাথে সাথে যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে বাঁচতে পারে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সগীরাহ্ গুনাহগুলো সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে ক্ষমা করে দিবেন।
ইমাম নাবাবী বলছেন যে, উক্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে এই যে, সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা হয় এবং কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের জন্য তাওবাহ্ শর্ত।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৫-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ. قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
ব্যাখ্যা: এখানে বর্ণিত হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে পবিত্রতা লাভের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ যেমনভাবে শারীরিকভাবে অপবিত্র হয় তেমনভাবে পাপের কারণে হৃদয় ও মন পংকিল হয়ে যায়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে উক্ত পাপের মোচনকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত পাপ দ্বারা শুধুমাত্র সগীরাহ্ গুনাহ উদ্দেশ্য। কেননা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে মুক্ত হতে তাওবাহ্ করা আবশ্যক।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৬-[৩] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমু দিয়েছিল। তারপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বিষয়টি বললো। এ সময়ে আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করেনঃ
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّاتِ
’’সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ কাজকে দূর করে দেয়’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি আমার জন্য? তিনি বললেন, এটি আমার সকল উম্মতের জন্য। অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে তিনি বলেছিলেন, "আমার উম্মাহর মধ্যে যারা এটি মেনে চলে তাদের জন্যও।"
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا أَصَابَ مِنِ امْرَأَةٍ قُبْلَةً فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْل إِن الْحَسَنَات يذْهبن السَّيِّئَات)
فَقَالَ الرَّجُلُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِي هَذَا؟ قَالَ: «لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لِمَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ أُمَّتِي»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত লোকটির নাম ছিল কা‘ব ইবনু ‘আমর আল আনসারী আস সুলামাহ্। তবে কেউ কেউ বলেছেনঃ খেজুর বিক্রেতার নাবহান। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, তিনি হলেন আবুল ইয়াসার। হাদীসে বর্ণিত ‘‘সৎ কর্মসমূহ’’ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকেই বুঝানো হয়েছে।
মুহাদ্দিসীনে কিরাম উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, কোন মহিলাকে চুমু দেয়া ও স্পর্শ করার কারণে কারো ওপর ‘‘হাদ্দ’’ কার্যকর করা আবশ্যক নয়। আর কেউ এরূপ করে অনুতপ্ত হলে ও তাওবাহ্ করলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৭-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি ’হাদ্দ’যোগ্য-এর কাজ (অপরাধ) করে ফেলেছি। আমার ওপর তা প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। বরং সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। লোকটিও রসূলের সাথে সালাত আদায় করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষ করলে লোকটি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদ্দ-এর কাজ করেছি। আমার ওপর আল্লাহর কিতাবের নির্দিষ্ট হাদ্দ জারী করুন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করনি। লোকটি বলল, হ্যাঁ, করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (এ সালাতের মাধ্যমে) আল্লাহ তোমার গুনাহ বা হাদ্দ মাফ করে দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فأقمه عَليّ قَالَ وَلم يسْأَله عَنهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاة قَامَ إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فأقم فِي كتاب الله قَالَ أَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ أَو قَالَ حدك
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত ব্যাপারটি জানতে চাননি। কেননা তা অপরের গোপন বিষয়ের অনুসন্ধান সম্পর্কিত যা নিষিদ্ধ অথবা তার দোষ গোপন করার জন্যও তিনি তা জানতে চাননি। ইমাম খাত্ত্বাবী, নাবাবী ও কতিপয় ইমামের মতে, তাঁর দ্বারা কতিপয় সগীরাহ্ গুনাহ সংঘটিত হয়েছিল যা সালাতের মাধ্যমেই মিটে যায়। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করেননি। ইমাম ইবনু হাজার-এর মতে, কেউ যদি তার দোষ স্বীকার করে তবে তা বিস্তারিত বর্ণনা না করে তাওবাহ্ করে, সেক্ষেত্রে শাসকের জন্য উক্ত শাস্তি প্রয়োগ করা ওয়াজিব নয়। বরং তা ইচ্ছাধীন।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৮-[৫] [’আবদুল্লাহ (রাঃ)] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ কাজ (’আমল) আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সঠিক সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। রাবী [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এসব উত্তর দিলেন। আমি যদি আরও জিজ্ঞেস করতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে আরও কথা বলতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَي الْأَعْمَال أحب إِلَى الله قَالَ: «الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا» قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ: «بِرُّ الْوَالِدَيْنِ» قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ: «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قَالَ حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ استزدته لزادني
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে সর্বোত্তম ‘আমল বলতে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কে বুঝানো হয়েছে। এ কথা জেনে রাখা আবশ্যক যে, সালাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় সিদ্ধ হবে না। তবে সর্বসম্মত মত অনুসারে প্রথম ওয়াক্তে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাই সর্বোত্তম ‘আমল।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৯-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ ترك الصَّلَاة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটি দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করে যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জন কুফরীকে অনিবার্য করে দেয়। সকল মুসলিম মনীষীর ঐকমত্যে, বিশ্বাস সহকারে কেউ সালাত বর্জন করলে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে সালাত আদায় ওয়াজিব মনে করে ও অলসতাবশত কেউ সালাত বর্জন করলে তার কুফরীর ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭০-[৭] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لوقتهن وَأتم ركوعهن خشوعهن كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَرَوَى مَالك وَالنَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: এখানে সালাতকে জান্নাতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তা হতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে এবং তা উত্তমভাবে আদায়ের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। সুফ্ইয়ান সাওরী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতে একাগ্রতা পোষণ করলো না, তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে গেল।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭১-[৮] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ওপর ফরয করা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা মাসটির সিয়াম (রোযা) পালন কর, আদায় কর তোমাদের ধন-সম্পদের যাকাত এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تدْخلُوا جنَّة ربكُم» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) খুৎবায় পেশ করেছিলেন। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ হলো তোমরা তোমাদের পূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করো।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭২-[৯] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তার পিতার মাধ্যমে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমার সন্তানদের বয়স সাত বছরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। আর (সালাত আদায় করার জন্য) তাদের শাস্তি দিবে যখন তারা দশ বছরে পৌঁছবে এবং তাদের ঘুমানোর স্থান পৃথক করে দিবে। (আবূ দাঊদ)[1]
শারহুস্ সুন্নাহ-তে এভাবে রয়েছে।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ سِنِين وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَا رَوَاهُ فِي شرح السّنة عَنهُ
ব্যাখ্যা: যেহেতু সাত বছর বয়সেই বাচ্চাদের ভালো-মন্দের পার্থক্যের জ্ঞান বিকশিত হয় সেহেতু এ বয়সেই ইসলামের বিধানাবলী প্রতিপালনের নিমিত্তে অভিভাবককে তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব সচেতন করা হয়েছে। তবে এখানে প্রহার করা দ্বারা হালকা প্রহার বুঝানো হয়েছে। বেদম প্রহার নয়। এর দ্বারা শুধুমাত্র ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষা দেয়াই উদ্দেশ্য। সাত বছর বয়সে নির্দেশ প্রদান করতে হবে আর ১০ বছর বয়সে প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে। সেই সাথে বিছানাও পৃথক করে দিতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৩-[১০] কিন্তু মাসাবীহ-তে সাবরাহ্ ইবনু মা’বাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَفِي المصابيح عَن سُبْرَة بن معبد
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৪-[১১] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করলো (অর্থাৎ- কাফির হয়ে যাবে)। (তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে সালাতকে মুসলিম ও কাফিরের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসলামে একমাত্র সালাতকেই সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপণকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল-এর মতে, উপরোক্ত হাদীসের আলোকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জনকারী কাফির। তবে সর্বসম্মতমতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জনকারী কাফির হলেও মুসলিম মিল্লাতের বাইরে নয়। আল্লাহই প্রকৃত সত্য অবগত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৫-[১২] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি মদীনার উপকণ্ঠে এক মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর সব রসাস্বাদন করেছি। আমি আপনার দরবারে উপস্থিত, তাই আমার প্রতি এ অপরাধের কারণে যা শাস্তি বিধান করার তা আপনি করুন। ’উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার অপরাধ ঢেকে রেখেছিলেন। তুমি নিজেও তা ঢেকে রাখতে (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে, তবে তা উত্তম হতো)। বর্ণনাকারী [’আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার কোন উত্তর দিলেন না। তাই লোকটি উঠে চলে যেতে লাগলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিছনে লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং তার সামনে এ আয়াত পাঠ করলেন- (অর্থ) ’’সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ বদ কাজকে দূর করে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা একটা উপদেশ’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)। এ সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর নবী! এ হুকুম কি বিশেষভাবে তার জন্য। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, না, বরং সকল মানুষের জন্যই। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي عَالَجْتُ امْرَأَةً فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَإِنِّي أَصَبْتُ مِنْهَا مَا دُونَ أَنْ أَمَسَّهَا فَأَنَا هَذَا فَاقْضِ فِيَّ مَا شِئْتَ. فَقَالَ عُمَرَ لَقَدْ سَتَرَكَ اللَّهُ لَو سترت نَفْسِكَ. قَالَ وَلَمْ يَرُدَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ شَيْئًا فَقَامَ الرَّجُلُ فَانْطَلَقَ فَأَتْبَعَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا فَدَعَاهُ وتلا عَلَيْهِ هَذِه الْآيَة (أقِم الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَات يذْهبن السَّيِّئَات ذَلِك ذكرى لِلذَّاكِرِينَ)
فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ يَا نَبِيَّ اللَّهِ هَذَا لَهُ خَاصَّة قَالَ: «بل للنَّاس كَافَّة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, একজন সাহাবীর অন্তরে আল্লাহর ভয় ও পরকালীন শাস্তির ভয়ের পরিমাণ কত বেশী ছিল যে, সামান্য একটু পাপের কারণে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন এবং তৎক্ষণাৎ পবিত্র হওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সুতরাং প্রতিটি মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর ‘আযাবের ভয় এ রকমই থাকতে হবে। সামান্যতম পাপ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তাওবাহ্ করে নিতে হবে। হাদীসের মধ্যে উল্লিখিত আয়াত হতে এ কথা বুঝে আসে যে, আল্লাহ তা‘আলার দয়ার সাগর শুধুমাত্র ঐ সমস্ত বান্দাগণের জন্য যারা ঈমান আনার পর নেক কাজসমূহ সম্পাদন করেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৬-[১৩] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক শীতের সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগলো। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে, তার জীবন থেকে তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَرَجَ زَمَنَ الشِّتَاءِ وَالْوَرَقُ يَتَهَافَتُ فَأَخَذَ بِغُصْنَيْنِ مِنْ شَجَرَةٍ قَالَ فَجَعَلَ ذَلِكَ الْوَرَقُ يَتَهَافَتُ قَالَ فَقَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ» قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «إِنَّ العَبْد الْمُسلم ليصل الصَّلَاة يُرِيد بهَا وَجه الله فتهافت عَنهُ ذنُوبه كَمَا يتهافت هَذَا الْوَرَقُ عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে শুধুমাত্র ঐ সালাতের ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে যা কোন ইহকালীন স্বার্থের জন্য নয়, বরং এক আল্লাহকে ভয় করে শুধু তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা হয়েছে। তা না হলে ফাযীলাত তো নেই, বরং কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৭-[১৪] যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা করে দিবেন। (আহমাদ ও বায়হাক্বী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن زيد بن خَالِد الْجُهَنِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ لَا يَسْهُو فِيهِمَا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
ব্যাখ্যা: হাদীসের মধ্যে ঐ সালাতের ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে, যে সালাতের মধ্যে মুসল্লী স্বীয় মন ও মস্তিষ্ককে ইহকালীন যাবতীয় খেয়াল ও চিন্তা হতে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মহত্বকে ধারণ করে আখিরাতের কথা স্মরণপূর্বক পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এরূপ সালাতের প্রতিদান হবে বান্দার ধারণাতীত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৮-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযাত করবে, তা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযাত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির কারণ হবে না। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে ক্বারূন, ফির্’আওন, হামান ও উবাই বিন খালাফ-এর সাথে থাকবে। (আহমাদ, দারিমী ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ: «مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمن لم يحافظ عَلَيْهَا لم يكن لَهُ نور وَلَا برهَان وَلَا نجاة وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যা: হাদীসের মধ্যে এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জান্নাত লাভ পরিপূর্ণরূপে নির্ভর করছে সালাতের উপর। শুধু তাই নয় বরং সালাতের ব্যাপারে উদাসীন ব্যক্তি হাদীসের মধ্যে উল্লিখিত চারজন গুরুতর অপরাধীর সাথে অবস্থান করবে।
এখানে কিছু মনীষী একটি সূক্ষ্ম বিষয় বুঝিয়েছেন যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগকারী ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয়ে যায় এবং হাদীসের মধ্যে বর্ণিত চারজন মহা অপরাধীর সাথে চির জাহান্নামী হবে। কারণ মুসলিম হয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করা আল্লাহর দৃষ্টিতে একটি বড় মাপের প্রতারণা।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৯-[১৬] ’আবদুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছাড়া অন্য কোন ’আমল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن عبد الله بن شَقِيق قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَركه كفر غير الصَّلَاة. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে প্রকাশ্য দলীল রয়েছে যে, সাহাবায়ি কিরাম সকলেই এক বাক্যে ফাতাওয়া দিচ্ছেন যে, অলসতাবশত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করাও কুফরী। তাছাড়া ইমাম ইবনু হাযম বলছেন যে, অসংখ্য সাহাবায়ি কিরামের পক্ষ হতে ফাতাওয়া পাওয়া গেছে যে, অলসতাবশত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগকারী ব্যক্তি কাফির মুরতাদ।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৮০-[১৭] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়; (২) ইচ্ছা করে কোন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে না, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে তার ওপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে; (৩) মদ পান করবে না, কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। (ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن أبي الدَّرْدَاء قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي أَنْ لَا تُشْرِكَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوبَة مُتَعَمدا فَمن تَركهَا مُتَعَمدا فقد بَرِئت مِنْهُ الذِّمَّةُ وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كل شَرّ. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এ হাদীস মানবজাতিকে এ শিক্ষা প্রদান করে যে, শির্ক যেহেতু মানব বিবেকের বিপরীত কাজ এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করা যাবতীয় নেক কাজ ত্যাগ করার শামিল এবং মদ পান যাবতীয় অন্যায়ের মূল। সেজন্য এ তিনটি কাজকে একত্রে বর্ণনা করে জানানো হলো যে, শির্ক, সালাত ত্যাগ ও মদ পান করলে মানুষ ইহ-পরকালের যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকবে।
প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশে সাময়িকের জন্য শির্কী বাক্য উচ্চারণ করা যেতে পারে কিন্তু তা না করে শহীদ হতে পারলে আল্লাহর নিকট একটি বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যাবে।