পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪৩-[৭৬] হিযাম ইবনু হিশাম তাঁর পিতার মাধ্যমে, তিনি তাঁর দাদা উম্মু মা’বাদ-এর ভাই হুবায়শ ইবনু খালিদ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কাহ্ হতে বহিস্কৃত হলেন, তখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস ’আমির ইবনু ফুহায়রাহ্ এবং পথপ্রদর্শক ’আবদুল্লাহ আল লায়সী। পথ অতিক্রমকালে তাঁরা উম্মু মা’বাদ (রাঃ) হতে মাংস এবং খেজুর ক্রয় করতে চাইলেন, কিন্তু তার কাছে এর কিছুই পাননি। মূলত সে সময় লোকেরা অনাহার ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত ছিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁবুর এক পার্শ্বের একটি বকরি দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন কররেন, হে উম্মু মা’বাদ! এ বকরিটির কি হয়েছে? সে বলল, এটা এতই দুর্বল যে, দলের বকরিগুলোর সাথে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, এতে কি দুধ আছে? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) বলল, সে নিজেই বিপদগ্রস্তা; অতএব দুধ দেবে কিভাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি আমাকে এ অনুমতি দেবে যে, আমি তার দুধ দোহন করি? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) আগ্রহের সাথে বলল, আমার পিতামাতা আপনার ওপর উৎসর্গ হোক! আপনি যদি তার স্তনে দুধ দেখতে পান, তাহলে তা দোহন করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বকরিটিকে কাছে আনলেন, তারপর বকরিটির স্তনে হাত বুলালেন এবং বিসমিল্লা-হ পড়ে উম্মু মা’বাদ-এর জন্য তার বকরির বিষয়ে (বরকতের) দুআ করলেন। তখন বকরিটি দোহনের জন্য নিজের রান দুটি প্রশস্ত করে রাসূল (সা.) -এর সামনে দাঁড়িয়ে জাবর কাটতে লাগল। এদিকে দুধ দোহনের জন্য নবী (সা.) - এত বড় একটি পাত্র চাইলেন, যা দ্বারা একদল লোক তুষ্টির সাথে পান করতে পারে। প্রবাহিত ঢলের মতো তিনি তাতে দুধ দোহন করলেন, এমনকি তার উপর ফেনাও জমে গেল। অতঃপর তিনি উম্মু মা’বাদ-কে পান করতে দিলেন। সে তুষ্ট হয়ে পান করল। পরে তিনি (সা.) সাথিদেরকে পান করালেন, তারাও পরিতৃপ্তি লাভ করলেন এবং সকলের শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে পান করলেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) - দ্বিতীয়বার দোহন করলেন, এমনকি সেই পাত্রটি এবারও দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি সেই দুধ উম্মু মা’বাদ-এর কাছে রেখে দিলেন। (যেন তার স্বামীও নবী (সা.) -এর মু’জিযাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে) এবং উম্মু মা’বাদ-এর তরফ হতে ইসলামের বায়’আত গ্রহণ করে তাঁরা সামনের দিকে যাত্রা করলেন।
(শারহুস সুন্নাহ; আর ইবনু আবদুল বার ইস্তী’আব গ্রন্থে এবং ইবনু জাওযী আল-ওয়াফা কিতাবে বর্ণনা করেছেন এবং অত্র হাদীসটির মধ্যে আরো কিছু ঘটনা রয়েছে)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَقد يرقى إِلَى الْحسن بِتَعَدُّد طرقه) وَعَن حَازِم بْنِ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ حُبَيْشِ بن خَالِد - وَهُوَ أَخُو أمِّ مَعْبَد - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أُخْرِجَ مِنْ مَكَّةَ خَرَجَ مُهَاجِرًا إِلَى الْمَدِينَةِ هُوَ وَأَبُو بَكْرٍ وَمَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ وَدَلِيلُهُمَا عَبْدُ اللَّهِ اللَّيْثِي مَرُّوا عَلَى خَيْمَتَيْ أُمِّ مَعْبَدٍ فَسَأَلُوهَا لَحْمًا وَتَمْرًا لِيَشْتَرُوا مِنْهَا فَلَمْ يُصِيبُوا عِنْدَهَا شَيْئًا من ذَلِك وَكَانَ الْقَوْمُ مُرْمِلِينَ مُسْنِتِينَ فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَاةٍ فِي كِسْرِ الْخَيْمَةِ فَقَالَ: «مَا هَذِهِ الشَّاةُ يَا أُمَّ معبد؟» قَالَتْ: شَاةٌ خَلَّفَهَا الْجَهْدُ عَنِ الْغَنَمِ. قَالَ: «هَلْ بِهَا مِنْ لَبَنٍ؟» قَالَتْ: هِيَ أَجْهَدُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «أَتَأْذَنِينَ لِي أَنْ أَحْلِبَهَا؟» قَالَتْ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي إِنْ رَأَيْتَ بِهَا حَلباً فاحلبها. فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَسَحَ بِيَدِهِ ضَرْعَهَا وَسَمَّى اللَّهَ تَعَالَى وَدَعَا لَهَا فِي شَاتِهَا فتفاجت عَلَيْهِ وَردت وَاجْتَرَّتْ فَدَعَا بِإِنَاءٍ يُرْبِضُ الرَّهْطَ فَحَلَبَ فِيهِ ثجَّاً حَتَّى علاهُ الْبَهَاءُ ثُمَّ سَقَاهَا حَتَّى رَوِيَتْ وَسَقَى أَصْحَابَهُ حَتَّى رَوُوا ثُمَّ شَرِبَ آخِرَهُمْ ثُمَّ حَلَبَ فِيهِ ثَانِيًا بَعْدَ بَدْءٍ حَتَّى مَلَأَ الْإِنَاءَ ثُمَّ غَادَرَهُ عِنْدَهَا وَبَايَعَهَا وَارْتَحَلُوا عَنْهَا. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» وَابْنُ عَبْدِ الْبَرِّ فِي «الِاسْتِيعَابِ» وَابْنُ الْجَوْزِيِّ فِي كِتَابِ «الْوَفَاءِ» وَفِي الحَدِيث قصَّةٌ
حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 261 ح 3704) و ابن عبدالبر فی الاستیعاب (4 / 495 ۔ 498 مع الاصابۃ) [و صححہ الحاکم (3 / 9 ، 10 و وافقہ الذھبی] * و للحدیث شواھد
ব্যাখ্যা: উম্মু মা'বাদ এক-এর আসল নাম ‘আতিকাহ্ বিনতু খালিদ আল খুযাইয়্যাহ্। রাসূল (সা.) হিজরতকালীন সময়ে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে কথিত আছে, তিনি মদীনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(وَفِي الحَدِيث قصَّةٌ) “অত্র হাদীসের মধ্যে আরো কিছু ঘটনা আছে। আর তা হলো, আর যখন রাসূল (সা.) উম্মু মা'বাদ -এর তাবু অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হলেন এবং উম্মু মা'বাদ (রাঃ) তাঁর স্বামী আবূ মা'বাদ (রাঃ)-কে সম্পূর্ণ ঘটনা অত্যধিক সুন্দর বাচনভঙ্গিতে রাসূল (সা.) -এর মর্যাদা ও গুণাগুণসহ বর্ণনা করে বলেন, এক মহান বরকতপূর্ণ ব্যক্তি আমাদের তাঁবুতে এসেছিলেন এবং এ দুধ তাঁর আগমনেরই নিদর্শন। আবূ মা'বাদ (রাঃ) এসব শুনে বলেন, নিশ্চয় ঐ মহান ব্যক্তি কুরায়শ বংশীয় তিনিই যার অনেক গুণাবলির কথা আমি মক্কায় শুনেছি। যদি আমি যেতে সক্ষম হই তাহলে আল্লাহর শপথ! আমি ঐ মহান ব্যক্তির দরবারে উপস্থিত হওয়ার এবং সঙ্গত্ব লাভের ইচ্ছা পোষণ করেছি।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূল (সা.) যখন হিজরতের জন্য আবূ বাকর (রাঃ) -কে সাথে নিয়ে মদীনার পথে রওয়ানা হন এবং মক্কাবাসীরা রাসূল (সা.) -এর গতিবিধি ও গন্তব্যস্থল সম্পর্কে অবগত হতে বিফল হয় তখন এক মুসলিম জিন্ আবূ কুবায়স পাহাড়ে আরোহণ করে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল আর মক্কাবাসীরা বিস্ময়ের সাথে তা শ্রবণ করল। সে আওয়াজ তাদের কানে পরিষ্কারভাবে আসছিল কিন্তু উক্ত আওয়াজ যেদিক থেকে আসছিল সেদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। উক্ত কবিতাগুলোর মধ্য হতে দু’টি কবিতা হলো এই –
جزي الله رب الناس خير جزائه * رفيقين حلا خيمتى أم معبد
هما نزلا بالهدى واهتديت به * فقد فازمن امسى رفيق محمد
অর্থাৎ সকল মানুষের রব আল্লাহ তা'আলা ঐ দুই সাথিকে উত্তম প্রতিদান দান করেছেন যারা উম্মু মা'বাদ-এর তাবুতে অবতরণ করেছেন। তাঁরা দুজন হিদায়াতের আলোকরশ্মি নিয়ে অবতরণ করেছেন আর উম্মু মা'বাদ সেই হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ঐ সকল ব্যক্তিরাই সফলকাম হয়েছেন যাঁরা মুহাম্মাদ (সা.) -এর সাথি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
কারামাত শব্দের অর্থ সম্মানিত হওয়া, মর্যাদাবান হওয়া, মহৎ হওয়া ও উদার হওয়া।
পরিভাষায় ঐ অলৌকিক কর্মকে কারামাত বলা হয় যা নেককার মু’মিনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, কিন্তু তা নুবুওয়্যাতের দাবির সাথে হবে না এবং তার উদ্দেশ্য কাফির ও মুশরিকদের বিরোধিতা ও মোকাবেলায়ও হবে না। কেননা যে অলৌকিক কর্ম নুবুওয়্যাতের দাবীর সাথে হয় এবং তার উদ্দেশ্য কাফির ও মুশরিকদের বিরোধিতা ও মোকাবেলা হয়, তাকে মু’জিযা বলা হয়। এর দ্বারা মু’জিযাহ্ ও কারামাতের পার্থক্য গেল বুঝা গেল। ওয়ালীদের কারামাতসমূহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের নিকট প্রমাণিত। আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের ’আক্বীদাহ হলো ওয়ালীদের কারামাতের প্রতি ঈমান রাখা। আর তা সত্য। এটা এমন একটা বিষয় যা আল্লাহ তার কোন কোন বান্দাকে যখন দরকার তখন অথবা তার শত্রুদেরকে দেখানোর জন্য ও তাঁর দীনকে বিজয়ী করার জন্য দিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন তাদের খাদ্য দরকার তখন খাবার দান, পিপাসিত হলে পানি দান; তারা জানে না যে, তা কোথা থেকে আসলো অথবা অনেক দূর থেকে খাবার আসা, এ জাতীয় অনেক কিছু সংঘটিত হওয়া। অথবা খাবারে বরকত হওয়া। এটা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে হতে পারে। তবে সে আল্লাহর ওয়ালীকে অবশ্যই আল্লাহর ও তাঁর রসূলের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।
আর যদি সে লোক ইসলামী শারী’আতের পাবন্দি না করে, তবে তাঁর কর্ম কারামাত বলে পরিগণিত হবে না। এটা তখন শয়তানের কর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে। আর তা শয়তানদের ফিতনাহ্। কারামাত প্রকাশিত হয় কেবল আল্লাহর মুমিন বান্দাদের নিকট থেকে। যারা আল্লাহর দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ও তাঁর শারী’আতের অনুসারী বলে জানা যায়। এদের দ্বারা আল্লাহ যে বিশেষ কর্ম সম্পাদন করিয়ে নেন তাকে কারামাত বলে।
(ইমাম ইবনু বায, নূরুন ’আলাদ দারব, কওলু আহলিস্ সুন্নাতি ওয়াল জামা’আতি ফিল কারামাত)
৫৯৪৪-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন উসায়দ ইবনু হুযায়র ও ’আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ) তাঁদের কোন এক প্রয়োজনে দীর্ঘ রাত্র অবধি নবী (সা.) -এর সাথে কথাবার্তা বলতে থাকেন। রাত্রটি ছিল ঘোর অন্ধকার। অতঃপর যখন তারা (বাড়ির উদ্দেশে) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছ হতে যাত্রা করলেন এ সময় তাদের প্রত্যেকের হাতে ছোট এক একটি লাঠি ছিল। পথে বের হওয়ার পর তাদের একজনের লাঠিটি প্রদীপের মতো আলো দিতে লাগল। আর তারা সে লাঠির আলোয় পথ চলতে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের উভয়ের পথ পৃথক পৃথক হলো, তখন অপরজনের লাঠিটিও আলোকিত হয়ে উঠল। অবশেষে তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ লাঠির আলোয় নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الكرامات)
عَن أَنس أَنَّ أُسَيْدَ بْنَ حُضَيْرٍ وَعَبَّادَ بْنَ بِشْرٍ تَحَدَّثَا عِنْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَاجَةٍ لَهُمَا حَتَّى ذَهَبَ مِنَ اللَّيْلِ سَاعَةٌ فِي لَيْلَةٍ شَدِيدَةِ الظُّلْمَةِ ثُمَّ خَرَجَا مِنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ينقلبان وبيد كل مِنْهُمَا عُصَيَّةٌ فَأَضَاءَتْ عصى أَحَدِهِمَا لَهُمَا حَتَّى مَشَيَا فِي ضَوْئِهَا حَتَّى إِذَا افْتَرَقَتْ بِهِمَا الطَّرِيقُ أَضَاءَتْ لِلْآخَرِ عَصَاهُ فَمَشَى كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا فِي ضَوْءِ عَصَاهُ حَتَّى بلغ أَهله رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3805) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: সহীহুল বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ঐ দু’জন সাহাবী ঘোর অন্ধকার রাতে রাসূল (সা.) -এর নিকট হতে উঠে বাইরে আসলেন, সে সময় মনে হলো যেন তাদের সাথে দু'টি প্রদীপ আছে, যা তাদের পথকে আলোকিত করে তাদের সাথে চলছে। অতঃপর যখন সাহাবীদ্বয় এমন স্থানে পৌছালেন যেখান থেকে তাদের বাড়ির পথ পৃথক পৃথক তখন তারা একজন অন্যজন থেকে পৃথক হলেন। তখন দেখা গেল যে, তাদের উভয়ের সাথে এক একটি প্রদীপ রয়েছে। এভাবেই তারা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে পৌছে গেলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৫-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধ সমাগত হলে আমার পিতা (আবদুল্লাহ) রাত্রের বেলায় আমাকে ডেকে বললেন, আমার মনে হয় নবী (সা.) -এর সাথিদের মধ্যে যারা নিহত হবেন, আমিই হব তাঁদের মধ্যে প্রথম নিহত লোক এবং একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া তোমার চেয়ে প্রিয় লোক আর কাউকেও আমি রেখে যাচ্ছি না; আর আমি ঋণগ্রস্ত। অতএব আমার ঋণগুলো পরিশোধ করে দেবে এবং তোমার বোনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। জাবির (রাঃ) বলেন, পরের দিন সকাল হলে দেখলাম, তিনিই প্রথম শহীদ লোক এবং তাকে অন্য আরেক লোকের সাথে একই কবরে দাফন করলাম। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الكرامات)
وَعَن جَابر قَالَ: لَمَّا حَضَرَ أُحُدٌ دَعَانِي أَبِي مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ مَا أُرَانِي إِلَّا مَقْتُولًا فِي أَوَّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنِّي لَا أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزَّ عَلَيَّ مِنْكَ غَيْرَ نَفْسِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنَّ عَلَيَّ دَيْنًا فَاقْضِ وَاسْتَوْصِ بِأَخَوَاتِكَ خَيْرًا فَأَصْبَحْنَا فَكَانَ أَوَّلَ قَتِيلٍ وَدَفَنْتُهُ مَعَ آخَرَ فِي قبر رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (1351) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: জাবির (রাঃ)-এর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) যে উহুদের যুদ্ধে শহীদ হবেন এবং তিনিই হবেন প্রথম শহীদ এটা তাকে পূর্বেই জানিয়ে দেয়াই হলো তাঁর কারামাত। জাবির (রাঃ)-এর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে একই কবরে যাকে দাফন করা হয়েছিল তার নাম ‘আমর ইবনুল জুমহ। তিনি জাবির (রাঃ) এর পিতার বন্ধু তাঁর বোনের স্বামী ছিলেন।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে দলীল আছে যে, একই কবরে প্রয়োজনে দুজনকে দাফন করা যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৬-[৩] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) বর্ণনা করেন। আসহাবে সুফফাগণ ছিলেন দরিদ্র লোক। এজন্য নবী (সা.) বলেছেন: যার কাছে দু’জনের খাদ্য আছে, সে যেন তৃতীয় লোক হিসেবে (আসহাবে সুফফাহ হতে) একজনকে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের খাদ্য আছে সে যেন পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ লোককে নিয়ে যায়। এটা শুনে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) তিনজনকে এবং নবী (সা.) দশজনকে নিয়ে গেলেন। এদিকে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) নবী (সা.) -এর ঘরের রাত্রের খাবার গ্রহণ করে ঐখানেই দেরি করলেন। এমনকি ’ইশার সালাত আদায়ের পর আবার তিনি নবী (সা.)-এর ওখানে ফিরে গেলেন এবং নবী (সা.) -এর খাওয়া শেষ করা অবধি সেখানেই অবস্থান করলেন। তারপর অনেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি বাড়ি ফিরলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে প্রশ্ন করলেন, তোমাকে তোমার মেহমান হতে কিসে আটকে রাখল? আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) বললেন, তুমি কি তাদেরকে রাতের খাবার দাওনি? স্ত্রী বললেন, তুমি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেছে। এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো খাব না। তার স্ত্রীও শপথ করলেন যে, তিনিও উক্ত খানা খাবেন না। এদিকে মেহামনগণও শপথ করে বললেন যে, তারাও এ খানা খাবেন না। অতঃপর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) বললেন, এটা (না খাওয়ার শপথ) শয়তানের তরফ হতে। এই বলে তিনি খাবার আনিয়ে নিলেন, অতঃপর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) খেলেন এবং তাঁরাও খেতে লাগলেন। তারা যখনই কোন লোমা উঠাতেন, তখন সাথে সাথেই তার নিচের দিক হতে ঐ পরিমাণ অপেক্ষা বেড়ে যেত।
তখন আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বানী ফিরাস-এর ভগ্নি! এটা কি? তখন তিনি [আবূ বকর (রাঃ)-এর স্ত্রী] বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! নিঃসন্দেহে এগুলো আগের তুলনায় তিনগুণ অধিক হয়ে গেছে। অতঃপর তারা সকলে খেলেন এবং খাবারের অবশিষ্টাংশ নবী (সা.) -এর জন্য পাঠিয়ে দিলেন। এ প্রসঙ্গে এটা বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবী (সা.) ও তা হতে খেয়েছেন। (বুখারী মুসলিম)
আর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত (كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَامِ) “আমরা খাবারের তাসবীহ পাঠ করা শুনতাম” মু’জিযার অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
الفصل الاول ( بَاب الكرامات)
وَعَن عبد الرَّحْمَن بن أبي بكر إِنَّ أَصْحَابَ الصُّفَّةِ كَانُوا أُنَاسًا فَقُرَاءَ وَإِنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ عِنْده طَعَام اثْنَيْنِ فليذهب بثالث وَإِن كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ أَرْبَعَةٍ فَلْيَذْهَبْ بِخَامِسٍ أَوْ سادس» وَأَن أَبَا بكر جَاءَ بِثَلَاثَة فَانْطَلق النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَشَرَةٍ وَإِنَّ أَبَا بكر تعَشَّى عِنْد النبيِّ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَبِثَ حَتَّى صُلِّيَتِ الْعِشَاءُ ثُمَّ رَجَعَ فَلَبِثَ حَتَّى تَعَشَّى النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ الله. قَالَت لَهُ امْرَأَته: وَمَا حَبسك عَن أضيافك؟ قَالَ: أوما عَشَّيْتِيهِمْ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ فَغَضِبَ وَقَالَ: لَا أَطْعَمُهُ أَبَدًا فَحَلَفَتِ الْمَرْأَةُ أَنْ لَا تَطْعَمَهُ وَحَلَفَ الْأَضْيَافُ أَنْ لَا يَطْعَمُوهُ. قَالَ أَبُو بَكْرٍ: كَانَ هَذَا مِنَ الشَّيْطَانِ فَدَعَا بِالطَّعَامِ فَأَكَلَ وَأَكَلُوا فَجَعَلُوا لَا يَرْفَعُونَ لُقْمَةً إِلَّا رَبَتْ مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرَ مِنْهَا. فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: وَقُرَّةِ عَيْنِي إِنَّهَا الْآنَ لَأَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِثَلَاثِ مِرَارٍ فَأَكَلُوا وَبَعَثَ بِهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذُكِرَ أَنَّهُ أَكَلَ مِنْهَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَذُكِرَ حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَام فِي «المعجزات»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3581) و مسلم (176 / 2057)، (5365) 0 حدیث ابن مسعود تقدم (5910) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: আসহাবে সুফফাহ্ হলেন দরিদ্র মানুষ। যারা ছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর সাহাবী। আবূ নু’আয়ম তার “হিলইয়াতুল আওলিয়া” কিতাবে তাদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কতিপয় সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা হলেন- আবূ যর গিফারী (রাঃ), ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ), সালমান আল ফারসী (রাঃ), সুহায়ব (রাঃ), বিলাল (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), খব্বাব ইবনুল আরাত (রাঃ), হুযায়ফাহ্ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ), আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ), বিশর ইবনুল খসাসিয়্যাহ্ (রাঃ), আবূ মু'আবিয়াহ্ (রাঃ) যিনি রাসূল (সা.) -এর মুক্তদাস ছিলেন, এছাড়াও আরো অনেকে ছিলেন। আর তাদের ব্যাপারে নাযিল হয়োছিল -
(وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡهَهٗ) “আর আপনি তাদের সাথে ধৈর্য ধরে থাকুন যারা তাদের রবকে সকাল-সন্ধ্যায় ডাকে, আর তারা তার (আল্লাহর) সন্তুষ্ট চায়”- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮: ২৮)।
আর আসহাবে সুফফাগণ মাসজিদে অবস্থান করত যার ছাদ ছিল খেজুরের পাতার। এই দরিদ্র সাহাবীগণ সেখানেই তাদের থাকার জায়গা ও রাত কাটানোর জায়গা পেয়েছিল। অতএব তাদেরকে তার সাথেই সম্পর্কিত করা হয়। আর যখন ভিন্ন শহর থেকে কোন লোকে আগমন করত, আর সেখানে তার কোন পরিচিত লোক থাকত, তাহলে সে ব্যক্তি তার সেই পরিচিতের বাসায় উঠত। আর যদি তার পরিচিত কোন লোক না থাকত তবে সে সুফফার মেহমান হত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আবূ বাকর (রাঃ) নবী (সা.) -এর নিকট রাতের খাবার খেয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি নবী (সা.) -এর সাথে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। অথবা তাঁর মেহমানের সাথে রাতের খাবার খেয়েছিলেন, অথবা নবী (সা.) -এর বাড়ীতে আবূ বাকর (রাঃ) -এর মেয়ে ‘আয়িশাহ্ (রঃ) -এর কাছে একাকী খেয়েছিলেন।
(وَقُرَّةِ عَيْنِي) অর্থ- আমার চক্ষু শীতলকারীর শপথ! এ বাক্যে উম্মু রূমান (রাঃ)-এর কসম করার কারণ হলো, তিনি আবূ বাকর (রাঃ) -এর কারণে যে বরকতের কারামাত লক্ষ্য করলেন তার কারণে কসম করলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি এটা দিয়ে নবী (সা.) -কে বুঝিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৭-[8] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (হাবশার তথা আবিসিনিয়ার রাজা) নাজাশীএর মৃত্যুর পর আমরা একে অপরের বলাবলি করতাম, তাঁর কবরে সর্বদা আলো দেখা যাচ্ছে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الكرامات)
عَن عَائِشَة قَالَتْ: لَمَّا مَاتَ النَّجَاشِيُّ كُنَّا نَتَحَدَّثُ أَنَّهُ لَا يَزَالُ يُرَى عَلَى قَبْرِهِ نُورٌ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (2523)
ব্যাখ্যা: বর্তমান আফ্রিকার ইথিওপিয়াই ইসলামের ইতিহাসে হাবশাহ্ রাষ্ট্র নামে প্রসিদ্ধ। সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের উপাধি ছিল নাজাশী। নাজাশী দ্বারা সেই বাদশাহ উদ্দেশ্য যিনি নবী (সা.) -এর নুবুওয়্যাত প্রাপ্তির সময় স্বীয় দেশের ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি ইতোপূর্বে খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিলেন। অতঃপর রাসূল (সা.) -এর ওপর ঈমান এনে খাঁটি মুসলিম হয়ে যান। তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের অনেক সহায়তা করেছিলেন। তিনি রাসূল (সা.) -এর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। হাবশায় তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাসূল (সা.) খুবই ব্যথিত হন এবং সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে তিনি মদীনায় গায়িবানা জানাযাহ্ আদায় করেন। তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার কথা মা আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, মদীনাতে এ কথা ছাড়িয়ে পড়েছিল যে, বাদশাহ নাজ্জাশীর কবরে সর্বদা নূর দেখা যাচ্ছে। কেননা যেসব সাহাবী মদীনায় যাওয়া আসা করতেন তারা সেখানে তাঁর কবর দেখে মদীনায় এসে এ সংবাদ দিয়েছিলেন। আর যেহেতু সকল লোকের একটি মিথ্যা কথার উপর একমত হওয়া সম্ভব ছিল না, তাই এ কথা খবরে মুতাওয়াতিরের পর্যায়ের। তবে কথা হলো, নূর দেখা যাচ্ছে দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে তো মনে হচ্ছে, বাদশাহ নাজ্জাশীর কবরে নূর এমনভাবে স্বচক্ষে পরিদৃষ্ট হচ্ছিল যেমন প্রদীপ, চাঁদ ও সূর্যের আলো পরিদৃষ্ট হয়। তথাপি এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, নূর পরিদৃষ্ট হওয়া মূলত ঐ উজ্বলতা, সতেজতা ও অন্তরের প্রশান্তির ব্যাখ্যা যা উক্ত কবর যিয়ারতকারী অনুভব করে। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৮-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পর সাহাবীগণ যখন তাঁকে গোসল দেয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তাঁরা বললেন, আমরা কি অন্যান্য মৃতের ন্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর গায়ের জামা খুলে গোসল দেব? নাকি তাঁর ওপর নিজ জামাকাপড় রেখে গোসল দেব? এ ব্যাপারে যখন মতবিরোধ চরমে উঠল, তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁদের ওপর নিদ্রা চাপিয়ে দিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে এমন একজন লোকও বাকি ছিল না, যার থুতনি নিজের বুকের সাথে গিয়ে লাগেনি। অতঃপর ঘরের এক পার্শ্বে হতে জনৈক উক্তিকারী বলে উঠলেন, তোমরা নবী (সা.) -কে নিজ জামাকাপড় পরিহিত অবস্থায় গোসল দাও। সে উক্তিকারীকে লোকেরা তাকে চিনতে পারেননি। অতঃপর তারা উঠে নবী (সা.) -কে জামাসহ গোসল দিলেন। তাঁরা জামার উপর দিয়ে পানি ঢেলে দিলেন এবং জামা দ্বারা শরীরে মলে দিলেন। (বায়হাক্বী’র দালায়িলুন্ নুবুওয়্যাহ্ গ্রন্থে)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الكرامات)
وَعَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا أَرَادُوا غُسْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا: لَا نَدْرِي أَنُجَرِّدُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ ثِيَابه كَمَا تجرد مَوْتَانَا أَمْ نُغَسِّلُهُ وَعَلَيْهِ ثِيَابُهُ؟ فَلَمَّا اخْتَلَفُوا أَلْقَى اللَّهُ عَلَيْهِمُ النَّوْمَ حَتَّى مَا مِنْهُمْ رجل إِلَّا وذقته فِي صَدْرِهِ ثُمَّ كَلَّمَهُمْ مُكَلِّمٌ مِنْ نَاحِيَةِ الْبَيْتِ لَا يَدْرُونَ مَنْ هُوَ؟ اغْسِلُوا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ ثِيَابُهُ فَقَامُوا فَغَسَّلُوهُ وَعَلَيْهِ قَمِيصُهُ يَصُبُّونَ الْمَاءَ فَوْقَ الْقَمِيصِ وَيُدَلِّكُونَهُ بِالْقَمِيصِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ»
اسنادہ حسن ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (7 / 242) [و ابوداؤد (3141) و ابن ماجہ (1464) ببعضہ و احمد (6 / 267 ح 26837)] ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: ইবনুল হুমাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূল (সা.) - যে কাপড় পরিধান করা অবস্থায় মারা যান তাকে সেই কাপড়েই গোসল করানো হয়েছিল। তাহলে গোসল করানোর পরে ভিজা কাপড় থাকা অবস্থায় কিভাবে তাকে কাফন পরানো হয়েছিল? আমি বলছি তাকে ভিজা কাপড় থাকা অবস্থায় কাফনের কাপড় পরানো হয়নি। এ হাদীস থেকে এটা বুঝা যায় না। বরং সতর ঢাকা অবস্থায় তার থেকে গোসলের কাপড় সরিয়ে তারপর তার কাফনের কাপড় পরানো হয়েছিল। আল্লাহ তা'আলা ভালো জানেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৯-[৬] ইবনুল মুনকাদির (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মুক্ত দাস সাফীনাহ্ (রাঃ) রোম এলাকায় মুসলিম সেনাদল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, অথবা শত্রুরা তাঁকে বন্দি করে ফেলেছিল। অতঃপর তিনি পালিয়ে সেনাদলের খোঁজাখুজি করতে লাগলেন। এমন সময় হঠাৎ তিনি একটি সিংহের সম্মুখীন হলেন। তখন তিনি সিংহটিকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূল হারিস! আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুক্ত দাস। আর আমার ব্যাপার হলো এই এই (অর্থাৎ কাফিররা আমাকে বন্দি করেছিল। এখন আমি তাদের কবল থেকে ছুটে এসে আমার সেনাদলের পথ হারিয়ে ফেলেছি) এ কথা শুনে সিংহটি (আনুগত্যের ভঙ্গিতে) স্বীয় লেজ নাড়তে নাড়তে তার সামনে অগ্রসর হয়ে পার্শ্বে এসে দাঁড়াল। সিংহটি যখন কোন ভীতিজনক আওয়াজ শুনতে পেত, তখন সেদিকে ছুঁটে যেত। অতঃপর ফিরে এসে সাফীনার পাশে পাশে চলত। অবশেষে তাঁকে সেনাদলের কাছে পৌছিয়ে দিয়ে সিংহটি ফিরে চলে গেল। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الكرامات)
وَعَنْ ابْنِ الْمُنْكَدِرِ أَنَّ سَفِينَةَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْطَأَ الْجَيْشَ بِأَرْضِ الرُّومِ أَوْ أُسِرَ فَانْطَلَقَ هَارِبًا يَلْتَمِسُ الْجَيْشَ فَإِذَا هُوَ بِالْأَسَدِ. فَقَالَ: يَا أَبَا الْحَارِثِ أَنَا مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ مِنْ أَمْرِي كَيْتَ وَكَيْتَ فَأَقْبَلَ الْأَسَدُ لَهُ بَصْبَصَةٌ حَتَّى قَامَ إِلَى جَنْبِهِ كُلَّمَا سَمِعَ صَوْتًا أَهْوَى إِلَيْهِ ثُمَّ أَقْبَلَ يَمْشِي إِلَى جَنْبِهِ حَتَّى بَلَغَ الْجَيْشَ ثُمَّ رَجَعَ الْأَسَدُ. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 313 ح 3732) [و صححہ الحاکم (3 / 606) و و افقہ الذھبی] * محمد بن المنکدر لم یثبت سماعہ من سفینۃ رضی اللہ عنہ فالسند معلل
ব্যাখ্যা: সাফীনাহ্ রাসূল (সা.) -এর মুক্তদাস। কথিত আছে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ এর মুক্তদাস ছিলেন। তিনি তাকে এ শর্তে মুক্ত করেন যে, সে আজীবন নবী (সা.) -এর সেবা করবে। কেউ কেউ বলেন, তার নামটা মতভেদপূর্ণ। কেউ বলেন, তার নাম রবাহ বা মিহরান বা রোমান। সাফীনাহ্ হলো তার উপাধি। কথিত আছে যে, একদিন কোন এক সফরে তিনি নবী (সা.) -এর সাথে ছিলেন, তার সঙ্গীদের মধ্যে কোন এক ব্যক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়লে সে তার তলোয়ার, ঢাল ও তীর ইত্যাদিসহ অনেক জিনিস তার মাথায় তুলে দিলে সে তা বহন করে চলল। তাকে দেখে আল্লাহর রাসূল (সা.) কৌতুক করে বললেন, তুমি তো সাফীনাহ্। সাফীনাহ্ অর্থ নৌকা। তখন থেকে তিনি এ নামেই প্রসিদ্ধ হয়ে গেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
অবশেষে যখন তিনি সৈন্যদলের সাথে মিশলেন তখন সিংহ চলে গেল: হাদীসের এ অংশটুকু থেকে গেল বুঝা গেল, যেন সিংহটি তার রাস্তা দেখাচ্ছিল। আর তার সাথিদের কাছে পৌছানোর জন্য নিরাপত্তা দিচ্ছিল। তাই তো এক কবি বলেন –
ومن تكن برسول الله نصرته ... إن تلقه الأ سد في اجامهاتجمِ
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আল্লাহর রসূলের তথা আল্লাহর দীনের সাহায্য করে, হিংস্র জন্তু দ্বারাও আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫০-[৭] আবূল জাওযা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মদীনাবাসীগণ ভীষণ অনাবৃষ্টির কবলে পতিত হলেন, তখন তাঁরা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এ বিপদের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, তোমরা নবী (সা.) -এর কবরে যাও এবং তাঁর হুজরার ছাদের আকাশের দিকে কয়েকটি ছিদ্র করে দাও, যেন তার এবং আকাশের মাঝখানে কোন আড়াল না থাকে। অতঃপর লোকেরা গিয়ে তাই করল। তাতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ হলো। এমনকি জমিনে প্রচুর ঘাস জন্মাল এবং উটগুলো খুব মোটাতাজা ও চর্বিদার হয়ে উঠল। এ কারণে লোকেরা সে বছরকে ’আমাল ফাতক (পশুপালের হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার বছর) নামে আখ্যায়িত করল। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الكرامات)
وَعَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ قَالَ: قُحِطَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ قَحْطًا شَدِيدًا فَشَكَوْا إِلَى عَائِشَةَ فَقَالَتْ: انْظُرُوا قبر النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فاجعلوا مِنْهُ كُوًى إِلَى السَّمَاءِ حَتَّى لَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ سَقْفٌ فَفَعَلُوا فَمُطِرُوا مَطَرًا حَتَّى نَبَتَ الْعُشْبُ وَسَمِنَتِ الْإِبِلُ حَتَّى تَفَتَّقَتْ مِنَ الشَّحْمِ فَسُمِّيَ عَامَ الْفَتْقِ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 43 ۔ 44 ح 93) * فیہ عمرو بن مالک النکری ، رواہ عن ابی الجوزاء وقال ابن عدی :’’ یحدث عن ابی الجوزاء ھذا ایضًا عن ابن عباس قدر عشرۃ احادیث غیر محفوظۃ ‘‘ (الکامل 1 / 401 ، نسخۃ أخری 2 / 108) و ھذا جرح خاص فالسند ضعیف معلل ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: যখন মদীনায় অনাবৃষ্টি শুরু হলো তখন লোকজন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে পরামর্শ দিলেন যে, তারা যেন রাসূল (সা.) -এর কবর এর উপর সামান্য ফাকা করে দেয় যাতে করে সরাসরি আসমান দেখা যায়। বৃষ্টি হওয়ার কারণ স্বরূপ বলা হয়েছে যে, রাসূল (সা.) -এর কবর যখন আসমান দেখল তখন সে তা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। আকাশ কাঁদতে শুরু করল। আকাশ কাঁদার কথা কুরআন দ্বারা স্বীকৃত বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন, (فَمَا بَکَتۡ عَلَیۡهِمُ السَّمَآءُ وَ الۡاَرۡضُ) “আসমান জমিন তাদের জন্য কাঁদেনি”- (সূরাহ আদ দুখান ৪৪: ২৯)।
এখানে কাফিরদের অবস্থার কথা বলা হয়েছে। এর বিপরীত অবস্থা হলো ঈমানদারদের জন্য আসমান ও জমিন কাঁদে।
কথিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর জীবদ্দশায় তো লোকেরা রাসূল (সা.) -এর পবিত্র সত্তা হতে বৃষ্টির প্রার্থনাকারী হত এখন যেহেতু রাসূল (সা.) -এর মৃত্যু হয়ে গেছে তাই মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, কবরের উপর থেকে ছাদ খুলে দেয়া হোক যাতে আল্লাহর রহমত প্রবল হোক এবং ফলশ্রুতিতে পানি বর্ষিত হয়। যেন তিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে কবরকে বৃষ্টি প্রার্থনার মাধ্যম বানিয়েছেন। তবে রাসূল (সা.) -এর কবর উন্মোচনের কারণে তার কবর আর আসমানের মধ্যে কোন ধরনের পর্দা নেই। এর কারণ হলো উক্ত বৃষ্টি প্রার্থনাকে অধিক ফলদায়ক করা এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের অস্থিরতাকে প্রকাশ করা। আর আকাশ তো দু'আর কিবলাহ এবং অভাবীদের খাদ্যের জায়গা। মহান আল্লাহ বলেন, (وَ فِی السَّمَآءِ رِزۡقُکُمۡ وَ مَا تُوۡعَدُوۡنَ) “আর আসমানে তোমাদের রিযক বা খাদ্য আছে”- (সূরাহ আয যা-রিয়া-ত: ২২)। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক্ শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৮৪-১৮৫ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫১-[৮] সা’ঈদ ইবনু ’আবদুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাররাহ’র ফিতনার সময় তিন দিন তিন রাত নবী (সা.) -এর মাসজিদে সালাতের আযানও হয়নি এবং ইকামাতও দেয়া হয়নি। সে সময় (প্রসিদ্ধ তাবিঈ) সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহিমাহুল্লাহ) মসজিদে নাবাবীর ভিতরে আটকা পড়েছিলেন এবং তিনি সালাতের সময় ঠিক করতেন কেবলমাত্র নবী (সা.) -এর কবরের ভিতর হতে নির্গত একটি গুনগুন শব্দ দ্বারা, যা তিনি শুনতে পেতেন। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الكرامات)
وَعَن سعيد بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ قَالَ: لَمَّا كَانَ أَيَّامُ الْحَرَّةِ لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثًا وَلَمْ يُقَمْ وَلَمْ يَبْرَحْ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ وَكَانَ لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
اسنادہ ضعیف * فیہ سعید بن عبد العزیز : لم یثبت سماعہ من سعید بن المسیب رحمہ اللہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: “হাররার দিন”- ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা ইসলামের ইতিহাসে একটি প্রসিদ্ধ দিন। ইয়াযীদ ইবনু মু'আবিয়াহ্-এর সিরিয়া থেকে আগত সেনাবাহিনী মদীনায় হামলা করেছিল মদীনায় থাকা সাহাবী ও তাবিঈদেরকে হত্যা করার জন্য। তাঁর সেনাপতি ছিল মুসলিম ইবনু ‘উয়াইনাহ আল মুরুরী। আর এ ঘটনা ঘটেছিল হিজরী ৬৩ সনের যিলহজ্জ মাসে। এ ঘটনার পরপরই ইয়াযীদ মারা গিয়েছিল। এ ঘটনাটি ঘটেছিল মদীনার হাররাহ্ এলাকায় যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো অনেক পাথর ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫২-[৯] আবূ খলদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূল ’আলিয়াহ্-কে প্রশ্ন করলাম, আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে কোন হাদীস শুনেছেন কি? তিনি বললেন, তিনি তো দশটি বছর তাঁর সেবা করেছেন। নবী (সা.) তাঁর জন্য দু’আ করেছেন। তার একটি বাগান ছিল, তাতে বছরে দু’বার ফল আসত এবং তাতে এমন কিছু ফল ছিল, যা হতে মিশক কস্তুরীর ঘ্রাণ আসত। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الكرامات)
وَعَنْ أَبِي خَلْدَةَ قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي الْعَالِيَةِ: سَمِعَ أَنَسٌ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: خَدَمَهُ عَشْرَ سِنِينَ وَدَعَا لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ لَهُ بُسْتَانٌ يَحْمِلُ فِي كُلِّ سَنَةٍ الْفَاكِهَةَ مَرَّتَيْنِ وَكَانَ فِيهَا رَيْحَانٌ يَجِيءُ مِنْهُ رِيحُ الْمِسْكِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3833) و اخطا من ضعفہ
ব্যাখ্যা: আবূ খলদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস লাজ-এর ব্যাপারে আবূল ‘আলিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) থেকে যে প্রশ্ন করেছেন তার উদ্দেশ্য ছিল যে, আনাস (রাঃ) যে সকল হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি কি রাসূল (সা.) থেকে কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি শুনেছেন, নাকি এগুলো মুরসাল বর্ণনা? এ প্রশ্ন হতে পরোক্ষভাবে এ কথা বুঝা যায় যে, রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুর পর কিছু মানুষ আনাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করে। আবূল ‘আলিয়াহ্ যিনি বয়োজৈষ্ঠ তাবিঈ ছিলেন তিনি তার জবাব সরাসরি না দিয়ে বরং তিনি ঐ কথার সংবাদ দিলেন যাতে আনাস (রাঃ)-এর মান-মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)- দশ বছর বয়সে মতান্তরে আট বছর বয়সে নবী (সা.) -এর খিদমাতে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি একাধারে দশ বছর নবী (সা.) -এর খিদমাত করেছিলেন। আর তার আন্তরিকতাপূর্ণ খিদমাতে খুশি হয়ে নবী (সা.) তাঁর হায়াত ও সম্পদে বরকতের জন্য দু'আ করেছিলেন। ঐ দু'আর বরকতে তিনি ১০৩ বছর হায়াত পেয়েছিলেন।
আর আল্লাহ তাঁর সন্তানে এত বরকত দান করেছিলেন যে তা একশ’ জনে পৌছেছিল। তার মধ্যে ছেলে ছিল ৭৩ জন আর মেয়ে ২৭ জন। তাঁর সম্পদে বরকতের অবস্থা ছিল এই যে, অন্যদের বাগানে ফসল ফলত বছরে একবার, আর তাঁর বাগানে বছরে দু'বার ফসল আসত। তাঁর উচ্চ মান-মর্যাদার পরিমাপ এভাবেই করা যায় যে, তার বাগানের ফুল হতে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ আসত। এতএব সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, যে মহান ব্যক্তি এমন সম্মানের অধিকারী ছিলেন, যিনি দীর্ঘ সময় রসূলে কারীম (সা.) -এর খিদমাতের সৌভাগ্য লাভ করার পর তিনি তাঁর (রাসূল (সা.) -এর) থেকে সরাসরি হাদীস কিভাবে না শুনে থাকবেন এবং ঐ সকল হাদীস কিভাবে বর্ণনা না করে থাকবেন! (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫৩-[১০] ’উরওয়াহ্ ইবনুয যুবায়র (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। আরওয়া বিনতু আওস মারওয়ান ইবনু হাকাম-এর কাছে সা’ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ’আমর ইবনু নুফায়ল-এর বিরুদ্ধে মুকাদ্দামাহ দায়ের করে এবং সে দাবি করে যে, তিনি তার কিছু ভূমি দখল করে নিয়েছেন। সাঈদ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে এ বিষয়ে একটি হাদীস শুনার পরও আমি কি তার জমিনের কিছু অংশ দখল করতে পারি? তখন মারওয়ান বললেন, সে হাদীসটি কি আপনি যা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন? সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে লোক কারো এক বিঘত পরিমাণ ভূমি অন্যায়ভাবে কেড়ে নেবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সাত তবক অবধি বেড়ি বানিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেবেন। এ কথা শুনে মারওয়ান তাঁকে বললেন, এ হাদীস শুনার পর আমি আর কোন প্রমাণ আপনার কাছ হতে চাব না। অতঃপর সাঈদ (রাঃ) দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! এ মহিলাটি যদি তার দাবিতে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে আপনি তার চোখ অন্ধ করে দেন এবং উক্ত ভূমিতেই তাকে ধ্বংস করুন। বর্ণনাকারী উরওয়া বলেন, মৃত্যুর আগেই সে মহিলাটি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং একদিন সে উক্ত ভূমিতে হাঁটছিল, হঠাৎ সে সেখানে একটি গর্তে পড়ে মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)
আর মুসলিমের এক বর্ণনাতে আছে, যা মুহাম্মাদ ইবনু যায়দ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে উক্ত হাদীসের মর্মার্থ বর্ণিত, তিনি উক্ত মহিলাটিকে অন্ধ অবস্থায় দেখেছেন, সে দেয়াল হাতড়িয়ে চলত এবং বলত আমার উপর সাঈদের বদদোয়া লেগেছে। অতঃপর একদিন উক্ত মহিলাটি তার গৃহের সে বিবাদময় ভূমির একটি কূপের কাছ দিয়ে যেতেই তাতে পড়ে গেল এবং তা-ই তার কবর হলো।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب الكرامات)
عَن عُرْوَة بن الزبير أَنَّ سَعِيدُ بْنُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ خاصمته أروى بنت أويس إِلَى مَرْوَانَ بْنِ الْحَكَمِ وَادَّعَتْ أَنَّهُ أَخَذَ شَيْئًا مِنْ أَرْضِهَا فَقَالَ سَعِيدٌ أَنَا كُنْتُ آخُذُ مِنْ أَرْضِهَا شَيْئًا بَعْدَ الَّذِي سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وماذا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا طُوِّقَهُ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ فَقَالَ لَهُ مَرْوَانُ لَا أَسْأَلُكَ بَيِّنَةً بَعْدَ هَذَا فَقَالَ اللَّهُمَّ إِن كَانَت كَاذِبَة فَعم بَصَرَهَا وَاقْتُلْهَا فِي أَرْضِهَا قَالَ فَمَا مَاتَتْ حَتَّى ذهب بصرها ثمَّ بَينا هِيَ تَمْشِي فِي أَرْضِهَا إِذْ وَقَعَتْ فِي حُفْرَةٍ فَمَاتَتْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بِمَعْنَاهُ وَأَنَّهُ رَآهَا عَمْيَاءَ تَلْتَمِسُ الْجُدُرَ تَقُولُ: أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعِيدٍ وَأَنَّهَا مَرَّتْ على بئرٍ فِي الدَّار الَّتِي خاصمته فَوَقَعت فِيهَا فَكَانَت قبرها
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3198) و مسلم (139 ، 136 / 1610)، (4132 و 4134) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে জমিনের সাতটি স্তর আছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
(اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ وَّ مِنَ الۡاَرۡضِ مِثۡلَهُنَّ) “আর আল্লাহ হলেন তিনি যিনি সাত আসমান অনুরূপ জমিনকে সৃষ্টি করেছেন”- (সূরাহ আত্ব ত্বলাক্ব ৬৫: ১২)। আর যারা বলেন, সাতটি অঞ্চল তারা ভুল করেন। আর যদি তা অনুরুপ হত তবে তিনি যালিম ব্যক্তির গলায় জমিনের স্তর ব্যতীত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এক বিঘত করে ঝুলিয়ে দিতেন। আর তিনি সাত জমিন থেকে তার গলায় ঝুলিয়ে দিবেন তার কারণ হলো বাকী জমিন গুলো এই জমিনের অনুগামী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
নেককার মানুষের দু'আ যে বিফলে যায় না আলোচ্য হাদীসটি তার জাজ্বল্য প্রমাণ। সা'ঈদ ইবনু (রাঃ)-আশারায়ে মুবাশশিরাহ্ তথা যে দশজন সাহাবী দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদের একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন ‘উমার (রাঃ)-এর ভগ্নিপতি। যেহেতু আলোচ্য হাদীসে জনৈক মহিলা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল, তাই আল্লাহ দুনিয়াতেই সা'ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর দু'আ কবুল করে উক্ত মহিলাকে লাঞ্ছিত করেছিলেন। আর এটা সা'ঈদ (রাঃ)-এর একটি বড় কারামাত ছিল। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫৪-[১১] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার ’উমার (রাঃ) একদল সৈন্য অভিযানে প্রেরণ করলেন। আর সারিয়াহ্ (ইবনু যানীম) নামক এক লোককে সে দলের প্রধান নিযুক্ত করলেন। তখন একদিন ’উমার (রাঃ) মসজিদে নাবাবীতে খুৎবা দিচ্ছিলেন। আকস্মাৎ তিনি খুত্ববার মাঝখানে খুব উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, “হে সারিয়া আল জাবাল!’ এ ঘটনার কয়েকদিন পরে উক্ত সেনাদলের পক্ষ হতে একজন বার্তাবাহক মদীনায় আগমন করে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমরা শত্রুদের মুখোমুখি হলে (প্রথমে) তারা আমাদেরকে পরাজিত করে। এমন সময় হঠাৎ জনৈক ঘোষণাকারীর ’হে সারিয়া আল জাবাল উচ্চ শব্দ শুনতে পাই, তৎক্ষণাৎ আমরা (নিকটস্থ) পাহাড়টিকে পশ্চাতে রেখে শত্রুর সাথে লড়তে থাকি। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরাস্ত করেন। (বায়হাক্বী’র দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্ গ্রন্থে)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب الكرامات)
وَعَن ابْن عمر أَنَّ عُمَرَ بَعَثَ جَيْشًا وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلًا يُدْعَى سَارِيَةَ فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَقِيَنَا عَدُوُّنَا فَهَزَمُونَا فَإِذَا بِصَائِحٍ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ الْجَبَلَ. فَأَسْنَدْنَا ظُهُورَنَا إِلَى الْجَبَلِ فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 380) * فیہ محمد بن عجلان مدلس و عنعن ولہ طرق عند ابن عساکر (تاریخ دمشق 22 / 18 ، 19) وغیرہ و کلھا ضعیفۃ و مرسلۃ ، لا یصح منھا شیٔ و اخطا من صححہ اوحسنہ !
ব্যাখ্যা: এটা ছিল নাহারাওয়ান্দ যুদ্ধের ঘটনা।
(فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ) একদিন ‘উমার (রাঃ) খুৎবা দিচ্ছিলেন। অর্থাৎ, তিনি মাসজিদে নববীতে খুৎবা দিচ্ছিলেন উপস্থিত জনতার সম্মুখে যেখানে বড় বড় সম্মানিত সাহাবী ও তাবিঈগণ ছিলেন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উসমান (রাঃ), ‘আলী (রাঃ), ঘটনাটি ছিল তার একটা সুস্পষ্ট কারামাত এবং তার খিলাফাত যে সত্য তার একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ।
তিনি যুদ্ধক্ষেত্র দেখে সেনাপতিকে ডেকে বললেন, হে সারিয়াহ্! পাহাড়ের দিকটা দেখ। আর তাকে পিছন দিকে রেখে যুদ্ধ কর। তার এ ডাক সকল যোদ্ধা শুনে সতর্ক হয়ে যুদ্ধ করেছিল। ফলে বিজয় পেয়েছিলেন মুসলিমগণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫৫-[১২] নুবায়হাহ ইবনু ওয়াহব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। একদিন কা’ব (রহিমাহুল্লাহ) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর কাছে গেলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে আলোচনা হতে থাকলে কা’ব (রহিমাহুল্লাহ) বললেন, এমন কোন দিন অতিবাহিত হয় না, যেদিন ভোরে সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) আকাশ হতে অবতরণ করেন না। এমনকি তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কবরকে ঘেরাও করে নিজেদের পাখাকে বিছিয়ে দেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে থাকেন। অবশেষে সন্ধ্যা হলে তাঁরা উর্ধ্বে গমন করেন। আবার সে পরিমাণ মালাক (ফেরেশতা) অবতরণ করেন এবং তাঁরাও ঐরূপ করেন। অবশেষে যখন মদীনাহ ফেটে যাবে, তখন তিনি কবর হতে সত্তর হাজার ফেরেশতার সমারোহে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবেন। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب الكرامات)
وَعَنْ نُبَيْهَةَ بْنِ وَهْبٍ أَنَّ كَعْبًا دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ فَذَكَرُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ كَعْبٌ: مَا مِنْ يَوْمٍ يَطْلُعُ إِلَّا نَزَلَ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنَ الْمَلَائِكَةِ حَتَّى يَحُفُّوا بِقَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضْرِبُونَ بِأَجْنِحَتِهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا أَمْسَوْا عَرَجُوا وَهَبَطَ مِثْلُهُمْ فَصَنَعُوا مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا انْشَقَّتْ عَنْهُ الْأَرْضُ خَرَجَ فِي سَبْعِينَ أَلْفًا مِنَ الْمَلَائِكَةِ يَزُفُّونَهُ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 44 ح 95) * فی سماع نبیھۃ بن وھب من کعب نظر ولم یدرک عائشۃ ایضًا فالسند منقطع ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: কা'ব হলেন একজন বড় তাবি'ঈ। লেখক বলেন, তিনি হলেন কা'ব ইবনু মাতি। তাঁর উপনাম হলো আবূ ইসহাক। তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন কা'ব আল আহবার নামে। তিনি নবী (সা.) -এর যুগ পেয়েছিলেন কিন্তু তার সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেননি। তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর যামানায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাদীস বর্ণনা করেন ‘উমার (রাঃ), সুহায়ব (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে। তিনি হিমসে ৩২ হিজরীতে ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালে মারা যান।
মালায়িকার (ফেরেশতাদের) অবতরণের কথা কা'ব (রহিমাহুল্লাহ) হয়তো পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণী হতে জেনেছিলেন, কিংবা পূর্বযুগের বয়োবৃদ্ধ ও আসমানী কিতাবের ‘আলিমদের থেকে শুনে থাকবেন, অথবা কারামাত দ্বারা অবগত হয়েছেন। আর শেষের সম্ভাবনাটাই অধিক বিশুদ্ধ মনে হয়। কেননা এতে তাঁর কারামাত প্রকাশ পায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৬-[১] বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর সাহাবীদের মাঝে সর্বপ্রথম যারা হিজরত করে মদীনায় আমাদের কাছে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন মুসআব ইবনু উমায়র এবং (আবদুল্লাহ) ইবনু উম্ম মাকতুম (রাঃ)। তাঁরা দুজন এসেই আমাদেরকে কুরআন মাজীদ শিক্ষা দিতে আরম্ভ করলেন। এরপর আসলেন ’আম্মার, বিলাল ও সাদ (রাঃ)। তারপর আসলেন ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) যিনি নবী (সা.) -এর বিশজন সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর (সর্বশেষ) আসলেন নবী (সা.)।
নবী (সা.) -এর আগমনে আমি মদীনাবাসীকে এত বেশি খুশি হতে দেখেছি যে, অন্য কোন জিনিসে তাদেরকে ততটা আনন্দিত হতে আর কখনো দেখিনি। এমনকি আমি দেখেছি, মদীনার ছোট ছোট মেয়ে এবং ছেলেরা পর্যন্ত খুশিতে বলতে লাগল, ইনিই তা সেই আল্লাহর রাসূল (সা.), যিনি আমাদের মাঝে আগমন করেছেন। বারা (রাঃ) বলেন, তিনি আসার আগেই আমি “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-” (সূরাহ আ’লা-) ও অনুরূপ আরো কতিপয় ছোট ছোট সূরাহ্ শিখে ফেলেছিলাম। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
عَن الْبَراء قَالَ: أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ فَجَعَلَا يُقْرِآنِنَا الْقُرْآنَ ثُمَّ جَاءَ عَمَّارٌ وَبِلَالٌ وَسَعْدٌ ثُمَّ جَاءَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فِي عِشْرِينَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَرِحُوا بِشَيْءٍ فَرَحَهُمْ بِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْوَلَائِدَ وَالصِّبْيَانَ يَقُولُونَ: هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ جَاءَ فَمَا جَاءَ حَتَّى قرأتُ: [سبِّح اسْم ربِّك الْأَعْلَى] فِي سُوَرٍ مِثْلِهَا مِنَ الْمُفَصَّلِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (4941) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সূরাহ আ'লা মক্কায়,নাযিল হয়েছে। কোন কোন ‘আলিম প্রশ্ন তোলেন যে, উক্ত সূরার দু'টি আয়াত قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی ﴿ۙ۱۴﴾ وَ ذَکَرَ اسۡمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰی ﴿ؕ۱۵﴾
যেহেতু সদাকায়ে ফিত্বরের ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে, আর সদাকাতুল ফিত্বর ও ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসাবে গণ্য করা হয় ২য় হিজরীতে। তাই সূরাহ আ'লাকে মাক্কী সূরাহ্ বলাতে প্রশ্ন হতে পারে। অবশ্য যদি এটা বলা হয় যে, আলোচ্য দুটি আয়াত ছাড়া অবশিষ্ট পূর্ণ সূরাহ্ মক্কায় নাযিল হয়েছে তাহলে উল্লেখিত প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু বাস্তব কথা হলো, এখানে আলোচ্য প্রশ্ন বা তার সম্ভাবনা কোনটিই সঠিক নয়। কেননা বিশুদ্ধ বর্ণনা অনুসারে এ সূরাহ্ তার সকল আয়াত সহকারে মক্কায় নাযিল হয়েছে। অতঃপর মদীনায় এসে যখন সদাকাতুল ফিত্বর ও ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসেবে গণ্য করা হলো তখন রাসূল (সা.) আলোচ্য দুটি আয়াতের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন যে, এ দু’টি আয়াতের মূল বিষয়বস্তু মূলত সদাকায়ে ফিত্বর ও ঈদের সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনার সাথে সম্পৃক্ত। এভাবেও বলা যায় যে, আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে শুধুমাত্র আর্থিক ও শারীরিক ‘ইবাদত তথা সদাকাহ্, যাকাত ও সালাতের নির্দেশ ও উৎসাহ রয়েছে, যাতে মূল উদ্দেশ্যের বিবরণ নেই। এ মূল উদ্দেশ্যকে পরবর্তীতে হাদীসের মাধ্যমে ঐ সময় বর্ণনা করা হয়েছে যখন সদাকাতুল ফিত্বর ও ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৯৩-১৯৪ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৭-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) (তার অন্তিমকালে) মিম্বারের উপর বসে বললেন, আল্লাহ তা’আলা তার কোন বান্দাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আল্লাহ কাছে রক্ষিত নি’আমাত, এ দুটির মধ্যে ইখতিয়ার দিয়েছেন। তখন ঐ বান্দা আল্লাহর নিকট (রক্ষিত) নি’আমাতকে পছন্দ করেছেন। (রাবী বলেন,) এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমাদের পিতা ও মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। রাবী বলেন, আমরা অবাক হলাম এবং লোকেরা বলতে লাগল, এই বৃদ্ধের প্রতি দৃষ্টি দাও, রাসূলুল্লাহ (সা.) তো কোন একজন বান্দা সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস অথবা আল্লাহর কাছে রক্ষিত নি’আমাত- এ দুটি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়েছেন আর এ লোক বলছেন, আমরা আমাদের পিতামাতাকে আপনার ওপর কুরবান করছি। (রাবী বলেন,) আর পরে আমরা বুঝতে পারলাম, সে ইচ্ছা স্বাধীনতা বান্দা ছিলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) আর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন আমাদের সকলের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ» . فَبَكَى أَبُو بَكْرٍ قَالَ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتنَا فعجبنا لَهُ فَقَالَ النَّاس: نظرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ يُخْبِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ وَهُوَ يَقُولُ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْمُخَير وَكَانَ أَبُو بكر هُوَ أعلمنَا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3904) و مسلم (2 / 2382)، (6170) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত ঘটনাটি ঘটেছিল নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পূর্বে। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, এ ঘটনা ছিল নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পাঁচ রাত পূর্বের।
তিনি ছিলেন আল্লাহর এক মহান বান্দা যাকে তিনি মৃত্যুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তাঁর সুদীর্ঘ হায়াত ও দুনিয়ায় বেঁচে থেকে তার আরাম-আয়েশ ভোগ করার জন্য যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন। অতএব তিনি এ দুনিয়ার অস্থায়ী সুখ-শান্তির উপর প্রাধান্য দেন সে সব নি'আমাকে যা আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন তাঁর প্রিয় বান্দার জন্য। আর যে নি'আমাত চিরস্থায়ী। নবী (সা.) -এর মুখে এ বর্ণনা শুনে আবূ বাকর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, কারণ তিনি তার পরিপূর্ণ বুঝ ও জ্ঞানের কারণে নবী (সা.) -এর বিচ্ছেদের ব্যাপারে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কারণ তাঁর অসুস্থতা তখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তিনি অসুস্থতা দেখে অনুমান করতে পেরেছিলেন অথবা তিনি দুনিয়ার চাকচিক্যের উপর আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছেন- এ কথা দ্বারা তিনি অনুমান করেছেন যে, তিনি নবী (সা.)-ই হবেন। কারণ এটি কেবল একজন আল্লাহর ওয়ালীই পারেন। আর নবী (সা.) তো হলেন নবীগণের নেতা। তাই তিনি দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এ ভোগ-বিলাসের উপর আখিরাতের স্থায়ী সুখ-শান্তিকে বাছাই করে নিয়েছেন। নবী (সা.) -এর ইশারা দ্বারাই আবূ বাকর (রাঃ) বুঝতে পারলেন যে, নবী (সা.) শুধু এ দুনিয়ার উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৮-[৩] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) উহুদ যুদ্ধে নিহত শহীদদের ওপর আট বছর পর (জানাযার) সালাত আদায় করলেন। সেদিনের সালাতে মনে হলো তিনি (সা.) যেন জীবিত এবং মৃতদেরকে বিদায় করছেন। অতঃপর তিনি মিম্বারে আরোহণ করে বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখে অগ্রবর্তী লোক এবং আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী এবং তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাতের স্থান হলো হাওযে কাওসার। আমি এখন আমার এ স্থানে দাঁড়িয়েও হাওযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। আর পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ অবশ্যই আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি তোমাদের ওপর এই আশঙ্কা করি না যে, আমার পরে তোমরা সকলে শিরকে লিপ্ত হয়ে যাবে; বরং আমি দুনিয়ার বিষয়ে তোমাদের প্রতি আশঙ্কা করি যে, তোমরা তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। কোন কোন বর্ণনাকারী এর সাথে এ বাক্যগুলোও বৃদ্ধি করেছেন, অতঃপর তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে এবং এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে, যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَتْلَى أحد بعد ثَمَانِي سِنِينَ كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ ثُمَّ طَلَعَ الْمِنْبَرَ فَقَالَ: «إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ من مَقَامِي هَذَا وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ وَإِنِّي لَسْتُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بعدِي وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا» . وَزَادَ بَعْضُهُمْ:: «فَتَقْتَتِلُوا فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ من كَانَ قبلكُمْ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4042) و مسلم (30 / 2296 و الزیادۃ لہ 31 / 2296)، (5976) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উহুদের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদের জানাযার সালাত আদায় করান আট বছর পরে। অর্থাৎ তাদের দাফন করার আট বছর পরে। কথিত আছে যে, নবী (সা.) তাদের জানাযার সালাত আদায় করেন। এটা নবী (সা.) -এর ও উহুদের শহীদদের বৈশিষ্ট্য ছিল। ইমাম শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে জানাযার সালাত বলতে দু'আ উদ্দেশ্য।
(كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ) “তার এ সালাত যেন জীবিত ও মৃতদের জন্য বিদায়ী সালাত।”
মুহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ নবী (সা.) তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন, আর তাদের জন্য তার ইস্তিগফার করা হলো তাঁর মৃত্যুর সময় কাছে আসা।
(إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ) “আমি তোমাদের সম্মুখে (হাশরের মাঠের দিকে) অগ্রগামী ব্যক্তি।”
ঐ ব্যক্তিকে ‘আরবীতে ফারাত্ব বলা হয়, যে কাফেলাকে পিছনে ফেলে রেখে নিজে সবার আগে পৌছে যায়, যাতে সেখানে কাফেলার জন্য পূর্ব হতেই থাকা, খাওয়া ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থা করতে পারে। অতএব নবী (সা.) -এর এ ঘোষণার মাধ্যমে যেন তার ইচ্ছা ছিল তিনি তাদের জন্য সুপারিশকারী হবেন, কারণ তিনি তাদের আগে যাচ্ছেন। আর সুপারিশকারী ব্যক্তি সুপারিশপ্রাপ্তের অগ্রগামী হয়।
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর আশ শামায়িলে বর্ণনা করেছেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূল (সা.) -কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি দুটি সন্তানকে আগে প্রেরণ করবে সে ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তখন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি আপনার উম্মতের কোন ব্যক্তি একটিকে আগে প্রেরণ করে তবে? যদি কোন কেউ একটি প্রেরণ করে তবুও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তখন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি কোন অগ্রগামীই না থাকে তবে? তখন নবী (সা.) বলেন, তখন আমিই আমার উম্মতের জন্য অগ্রগামী হয়ে যাব। তারা আমার মতো আর কোন সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে না।
(وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ) “আর আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।” অর্থাৎ আমি তোমাদের ছেড়ে যদিও যাচ্ছি; কিন্তু তোমাদের অবস্থা ও ব্যাপার হতে সম্পর্কহীন ও অবগত থাকব না, কেননা তোমাদের ‘আমল ও অবস্থাদি সেখানে আমার সামনে পেশ করা হবে। অথবা আমি তোমাদের সাক্ষী। আমি সেখানে তোমাদের আনুগত্য এবং তোমাদের ইসলাম গ্রহণের সাক্ষ্য দিব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ) “তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাতের স্থান হবে হাওযে কাওসার।”
অর্থাৎ আখিরাতের হাওযে কাওসারে যেখানে পৌছে ভালো ও মন্দ এবং মু'মিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য সূচিত হবে। তদ্রুপ তোমাদেরকে হাশরের ময়দানে যে বিশেষ শাফা'আতের ওয়াদা আমি করেছি তা হবে হাওযে কাওসারে। সেখানে শুধুমাত্র মুমিন বান্দাদের আমার সুপারিশের মাধ্যমে হাওযে কাওসার হতে পরিতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।
(وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ) “আর অবশ্যই আমাকে পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ প্রদান করা হয়েছে।” অর্থাৎ আমার পরে আমার উম্মতের মুজাহিদদের হাতে যে সকল বড় বড় এলাকা ও শহর বিজয় হবে এবং সেখানকার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করবে, সে সকল এলাকার ধনভাণ্ডার আমার উম্মতের আয়ত্বে এসে যাবে।
(وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا) “তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করি তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।” এর দ্বারা রাসূল (সা.) এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, আমার পরেও তোমরা ইনশা-আল্ল-হ ঈমান ও দীনের উপর স্থির থাকবে। তবে তোমরা দুনিয়ার মূল্যবান জিনিসের প্রতি সম্পূর্ণরূপেই ঝুকে পড়বে। তোমাদের কর্তব্য ছিল তার প্রতি সম্পূর্ণরূপে না ঝুকা। কারণ অস্থায়ী নি'আমাতকে নিয়ে কখনো প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত নয়। বরং প্রতিযোগিতা হওয়া চাই স্থায়ী জিনিসকে নিয়ে। যেমন- মহান আল্লাহ বলেছেন, (وَ فِیۡ ذٰلِکَ فَلۡیَتَنَافَسِ الۡمُتَنَافِسُوۡنَ) “আর নি'আমাতের প্রত্যাশীদের অর্থাৎ ঈমানদারদের জন্য উচিত যে, তারা তারই (আখিরাতের) নি'আমাতের প্রত্যাশী ও আগ্রহী হবে।” (সূরা আল মুত্বাফফিফীন ৮৩: ২৬)
(فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ من كَانَ قبلكُمْ) “তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে, যেরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে আগের লোকেরা।” অর্থাৎ সম্পদ নিয়ে তাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে রাসূল (সা.) -এর মু'জিযাহ্ আছে। কারণ তিনি এটা সংবাদ দিয়েছিলেন যে, তার উম্মাত পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের মালিক হবে, আর তা হয়েছে। আর তারা কখনো মুরতাদ হয়ে যাবে না। আর আল্লাহ তাদেরকে মুরতাদ হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। আর তারা দুনিয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী হবে ও প্রতিযোগিতা করবে। বাস্তবেও তাই ঘটেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক্ শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৯৬-১৯৭ পৃষ্ঠা)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৯-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে, আমার পালার দিন এবং আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে হেলান দেয়া অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। আর তাঁর ইন্তিকালের আগ মুহূর্তে আল্লাহ তা’আলা আমার মুখের লালার সাথে তাঁর মুখের লালাও মিশিয়ে দিয়েছেন। আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর মিসওয়াক হাতে আমার কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন আমার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ মিসওয়াকটির দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। অতএব আমি বললাম, আমি কি মিসওয়াকটি আপনার জন্য নেব? তিনি (সা.) মাথা নেড়ে হা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব আমি মিসওয়াকটি তার কাছ হতে নিয়ে তাঁকে দিলাম। তা তার জন্য কষ্টকর হলো। তখন বললাম, আমি কি তাকে আপনার জন্য নরম করে দেব? তিনি (সা.) মাথা হেলিয়ে হ্যা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব তখন আমি তাকে নরম করে দিলাম। অতঃপর তিনি (সা.) তা ব্যবহার করলেন। আর তাঁর সামনে একটি পাত্রে পানি রাখা ছিল। তাতে তিনি (সা.) উভয় হাত ঢুকিয়ে হাত দুটি দ্বারা আপন চেহারা মাসেহ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি (সা.) বলছিলেন- লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, অবশ্য মৃত্যুর যন্ত্রণা ভীষণ। অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকলেন- ’ফি রফীকিল আলা-’ অর্থাৎ- উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত কর), এ কথা বলতে বলতে তিনি ইন্তিকাল করেন এবং তাঁর হাত নিচে নেমে আসে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ مِنْ نِعَمِ اللَّهِ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُوِفِّيَ فِي بَيْتِي وَفِي يَوْمِي وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي وَإِنَّ اللَّهَ جَمَعَ بَيْنَ رِيقِي وَرِيقِهِ عِنْدَ مَوْتِهِ دَخَلَ عَلَيَّ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ وَبِيَدِهِ سِوَاكٌ وَأَنَا مُسْنِدَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَيْتُهُ يَنْظُرُ إِلَيْهِ وَعَرَفْتُ أَنَّهُ يُحِبُّ السِّوَاكَ فَقُلْتُ: آخُذُهُ لَكَ؟ فَأَشَارَ بِرَأْسِهِ أَنْ نَعَمْ فَتَنَاوَلْتُهُ فَاشْتَدَّ عَلَيْهِ وَقُلْتُ: أُلَيِّنُهُ لَكَ؟ فَأَشَارَ بِرَأْسِهِ أَنْ نَعَمْ فَلَيَّنْتُهُ فَأَمَرَّهُ وَبَيْنَ يَدَيْهِ رَكْوَةٌ فِيهَا مَاءٌ فَجَعَلَ يُدْخِلُ يَدَيْهِ فِي الْمَاءِ فَيَمْسَحُ بِهِمَا وَجْهَهُ وَيَقُولُ: «لَا إِلَهَ إِلَّا الله إِنَّ للموتِ سَكَراتٍ» . ثمَّ نصب يَده فَجَعَلَ يَقُولُ: «فِي الرَّفِيقِ الْأَعْلَى» . حَتَّى قُبِضَ ومالت يَده. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (4449) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (وَفِي يَوْمِي) আমার দিনে'। অর্থাৎ আমার পালার দিনে যাতে করে আমি তার খিদমাত করে সম্মানিত হতে পারি। “জামিউল উসূল” গ্রন্থে এসেছে, যেদিন রাসূল (সা.) -এর মৃত্যু রোগের সূচনা মাথা ব্যথার মাধ্যমে হয়, সেদিন তিনি মা আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। অতঃপর যেদিন মাথাব্যথা ও অসুস্থতা বেড়ে গেল সেদিন তিনি মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। সে সময় রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীগণের নিকট অসুস্থতার দিনগুলো মা আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে অবস্থানের জন্য সম্মতি ও আগ্রহ প্রকাশ করলে তারা সকলে তাকে অনুমতি প্রদান করেন। মৃত্যুরোগের তীব্রতা ১২ দিন ছিল। আর নবী (সা.) -এর মৃত্যু রবীউল আওয়াল মাসের সোমবার দিন চাশতের সময় হয়েছে। তারিখের ব্যাপারে কেউ কেউ ২ রবীউল আওয়াল বর্ণনা করেছেন। আবার বলা হয়েছে, তিনি ১২ রবীউল আওয়াল মৃত্যু বরণ করেছেন এবং অধিকাংশ বর্ণনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয়। (মিরক্কাতুল মাফাতীহ)
(وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي) “আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে।” অর্থাৎ যখন রাসূল (সা.) -এর পবিত্র আত্মা তাঁর পবিত্র দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন তিনি মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে মাথা রেখে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, সাহার হলো পেটের উপরিভাগে কণ্ঠনালির সাথে সংযুক্ত স্থানকে। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নাহার হলো বুকের উপরিভাগে হার ঝুলানোর স্থান। ইবনু হাজার বলেন, আস সাও হলো বক্ষ। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, আমার বক্ষ ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে অর্থাৎ নবী (সা.) এই মৃত্যুবরণ করার সময় তার মাথা আমার বক্ষ ও গলার মাঝে ছিল। হাকিম ও ইবনু সা'দ-এর বর্ণনা যে, সে সময় রাসূল (সা.) -এর মাথা ‘আলী (রাঃ)-এর কোলে ছিল উক্ত বর্ণনার বিরোধী নয়। কেননা প্রথমত তারা দুজন যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে উক্ত রিওয়ায়াতকে বর্ণনা করেছেন তন্মধ্যে হতে কোন পদ্ধতিই এমন নয় যে, তা কোন ত্রুটি হতে মুক্ত। এ মত পোষণ করেন হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। দ্বিতীয়ত যদি উক্ত পদ্ধতিকে সঠিক মেনে নেয়াও হয় তাহলে তার এ ব্যাখ্যা করা হবে যে, রাসূল (সা.) -এর মাথা ‘আলী (রাঃ)-এর কোলে তার মৃত্যুর পূর্বে ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(إِنَّ للموتِ سَكَراتٍ) “নিশ্চয় মৃত্যুর কষ্ট ভীষণ।” অর্থাৎ মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই কষ্টের যে কোন মানুষের জন্য। তা নবী রাসূলদের জন্যও কষ্টের। অতএব তোমরা সেই ভীষণ কষ্টের মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। আর আল্লাহর কাছে সহজ মৃত্যু কামনা কর। শামায়িলে তিরমিযীতে মা আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, মৃত্যুর সময় আমি রাসূল (সা.)-কে দেখলাম যে, তিনি ব্যস্ত আছেন তার পাশে রাখা পানির পাত্র থেকে দু’হাতে পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মাসেহ করছেন আর বলছেন, হে আল্লাহ! আমাকে খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করুন। অথবা তিনি বলেন, মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে। আর তার এ কষ্টের কারণে তার মর্যাদা আরো বেশি করা হয়। তিনি তার হাতকে উঁচু করে দু'আ করার মতো করে অথবা ইশারা করার মতো করে আকাশের দিকে তুলে ছিলেন। আর বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে মিলিত করুন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
(وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا) “আর তারা বন্ধু হিসেবে কতই না উত্তম”- (সূরা আন্ নিসা ৪: ৬৯)। বন্ধু হলো পথের সাথি। বলা হয় যে, আমার জন্য উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান নির্ধারণ করে দিন। আর সে স্থান বলতে তার জন্য নির্ধারিত মাকামে মাহমূদ উদ্দেশ্য। যার অর্থ আমাকে প্রতিষ্ঠিত থেকে যেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিন। জাওহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আর রফীকিল আ'লা হলো, 'আল জান্নাত'। এ কথা বলেছেন ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। আর তা উচ্চ স্থান হওয়া থেকে খালি নয়। বলা হয়ে থাকে যে, আর রফীকিল আ'লা বলতে বুঝানো হয়েছে, আল্লাহর নামসমূহকে। কারণ তার মধ্যে নম্রতা ও দয়া আছে। এখানে (فعيل) শব্দটি (فاعل) অর্থে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়াশীল। আর এখানে (في) শব্দটি যোগ করেছেন। অধিক নিকটবর্তী হওয়ার জন্য। এখানে তার রবের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও রবের একাত্মতার ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬০-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক নবীকেই তার মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দুনিয়া ও পরকালের মাঝে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) - যখন তাঁর অন্তিম রোগে আক্রান্ত হলেন, তখন তিনি কঠিন শ্বাসরুদ্ধ অবস্থার মুখোমুখী হন। সে সময় আমি তাকে কুরআনের এ আয়াত পড়তে শুনলাম, অর্থাৎ সে সমস্ত লোকেদের সাথে যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন, যথা- নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালিহীনগণ।’ তাতে আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁকে সেই ইচ্ছা স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «مامن نَبِيٍّ يَمْرَضُ إِلَّا خُيِّرَ بَيْنَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» . وَكَانَ فِي شَكْوَاهُ الَّذِي قُبِضَ أَخَذَتْهُ بُحَّةٌ شَدِيدَةٌ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ من الصديقين والنبيين وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ. فَعَلِمْتُ أَنَّهُ خُيِّرَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4586) و مسلم (86 / 2444)، (6295) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (إِلَّا خُيِّرَ بَيْنَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ) “দুনিয়া ও আখিরাতের কোন একটিকে গ্রহণ করার ইখতিয়ার দেয়া হয়।” অর্থাৎ তাকে দুনিয়াতে আরো কিছুকাল বেঁচে থাকার সুযোগ গ্রহণ করার। অথবা আখিরাতের জীবনের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সকল নবীই আল্লাহর কাছে যাওয়ার সুযোগকে পছন্দ করেছেন। কারণ এটা উত্তম ও চিরস্থায়ী। কাজেই সকল নবী-রাসূলগণই এটাই পছন্দ করেছেন।
(الَّذِي قُبِضَ أَخَذَتْهُ بُحَّةٌ شَدِيدَةٌ) “রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তার অন্তিম রোগে আক্রান্ত হলেন, তখন তিনি কঠিন শাসরুদ্ধ অবস্থার সম্মুখীন হন।” অর্থাৎ তাঁর কণ্ঠস্বরও মোটা হয়ে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা এমন রোগ যা কণ্ঠনালীতে হয়, আর স্বর পরিবর্তিত হয়ে মোটা হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, এখানে এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কাশি। কামূসে আছে, কাশি হলো এমন ঝাকি যা ফুসফুস ও তার আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কষ্ট দেয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬১-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর রোগ যখন বৃদ্ধি পেল এবং তিনি বেহুঁশ হতে লাগলেন, তখন ফাতিমাহ (রাঃ) বললেন, আহা! কত কষ্ট পাচ্ছেন আমার আব্বাজান। এ কথা শুনে তিনি (সা.) বললেন, আজকের পর তোমার আব্বাজানের ওপর আর কোন কষ্ট নেই। অতঃপর যখন তিনি (সা.) মৃত্যুবরণ করলেন, তখন ফাতিমা (রাঃ) বলতে লাগলেন, ’ওগো আমার আব্বাজান! রব আপনাকে আহ্বান করেছেন এবং তাতে সাড়া দিয়ে আপনিও তাঁর সান্নিধ্যে চলে গেলেন। ওগো আমার আব্বাজান! জান্নাতুল ফিরদাওস আপনার স্থান। হায় আমার আব্বাজান! আপনার তিরোধানের খবর আমি জিবরীলকে শুনাচ্ছি।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে যখন দাফন করা হলো, তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেন, হে আনাস! তোমাদের অন্তর এটা কিভাবে সহ্য করল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর তোমরা মাটি ঢাললে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَن أنس قَالَ: لما ثقل النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ يَتَغَشَّاهُ الْكَرْبُ. فَقَالَتْ فَاطِمَةُ: وَاكَرْبَ آبَاهْ فَقَالَ لَهَا: «لَيْسَ عَلَى أَبِيكِ كَرْبٌ بَعْدَ الْيَوْمِ» . فَلَمَّا مَاتَ قَالَتْ: يَا أَبَتَاهُ أَجَابَ رَبًّا دَعَاهُ يَا أَبَتَاهُ مَنْ جَنَّةُ الْفِرْدَوْسِ مَأْوَاهُ يَا أَبَتَاهُ إِلَى جِبْرِيلَ نَنْعَاهُ. فَلَمَّا دُفِنَ قَالَتْ فَاطِمَةُ: يَا أَنَسُ أَطَابَتْ أَنْفُسُكُمْ أَنْ تَحْثُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التُّرَابَ؟ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (4462) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ عَلَى أَبِيكِ كَرْبٌ بَعْدَ الْيَوْمِ) “তোমার আব্বাজানের ওপর আজকের পর আর কোন কষ্ট নেই।” অর্থাৎ কষ্ট ছিল কঠিন ব্যথা ও খুব যন্ত্রণার কারণে। আর আজকের দিনের পর থেকে তা থাকবে না। কারণ কষ্ট ব্যথা মানুষের শরীরের সাথে সম্পর্কিত। আর আজকের পর থেকে সব গঠনগত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। আর মৃত্যুর পর রূহের কোন সমস্যা বা দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। তিরমিযী বৃদ্ধি করেছেন, তোমার পিতার কাছে এমন জিনিস পৌছেছে যার থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কোন কেউ পালাতে পারে না।
আলোচ্য হাদীসটি থেকে বুঝা যায় যে, নবী (সা.) হায়াতুন্ নবী নন। বরং তাকে সাহাবীরা কবর দিয়েছিলেন এমতাবস্থায় যে, তিনি মৃত। তার দুনিয়ার জীবন শেষ হয়েছিল। তাইতো ফাতিমাহ্ (রাঃ) বলেন, হে আনাস! তোমরা কিভাবে আমার পিতার বুকের উপর মাটি চাপাতে পেরেছ! (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬২-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন হাবশী লোকেরা তাঁর আগমনে উৎফুল্ল হয়ে নিজ বর্শা দিয়ে খেল-তামাশা প্রদর্শন করল। (আবূ দাউদ)
দারিমীর এক বর্ণনাতে আছে, আনাস (রাঃ) বলেন: যেদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) (মদীনায়) আমাদের মাঝে আগমন করলেন, সেদিনের তুলনায় অধিক উত্তম ও উজ্জ্বলতম দিন আমি কখনো দেখতে পাইনি এবং যেদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইন্তিকাল করেছেন, সেদিনের তুলনায় অধিক মন্দ ও তিমিরময় দিন আমি দেখতে পাইনি।
তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যেদিন মদীনায় আগমন করেছেন, সেদিন তার সবকিছু আলোকিত হয়ে যায়। আর যেদিন তিনি ইন্তিকাল করেছেন, সেদিন তার সবকিছু আধারে ঢেকে যায়। (তিনি আরো বলেছেন,) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে দাফন করে আমরা আমাদের হাত হতে মাটি ঝেড়ে না নিতেই আমরা স্বীয় অন্তরে উদাসীনতা অনুভব করতে লাগলাম।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
عَن أَنَسٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ لَعِبَتِ الْحَبَشَةُ بِحِرَابِهِمْ فَرَحًا لِقُدُومِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَفِي رِوَايَةِ الدَّارِمِيِّ (صَحِيح) قَالَ: مَا رَأَيْتُ يَوْمًا قَطُّ كَانَ أَحْسَنَ وَلَا أَضْوَأَ مِنْ يَوْمٍ دَخَلَ عَلَيْنَا فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا رَأَيْت يَوْمًا كَانَ أقبح وأظلم مِنْ يَوْمٍ مَاتَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ قَالَ: لَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ أَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ أَظْلَمَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ وَمَا نَفَضْنَا أَيْدِيَنَا عَنِ التُّرَابِ وَإِنَّا لَفِي دَفْنِهِ حَتَّى أَنْكَرْنَا قُلُوبنَا
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (4923) و الدارمی (1 / 41 ح 89) و الترمذی (3618 وقال : صحیح غریب) * سند ابی داود صحیح علی شرط الشیخین و سند الدارمی صحیح و سند الترمذی : حسن ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: নবী (সা.) -এর মদীনায় আগমনের কারণে মদীনাবাসী খুব খুশি হয়েছিলেন। আর তাদের শহর আনন্দে আলোকিত হয়ে উঠেছিল। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই আলোকিত হওয়াটা ছিল অনুভূত আলো। তারা তাদের মন দিয়ে অনুভব করেছিল।
আর নবী (সা.) যেদিন মারা যান সেদিন তাদের সবকিছু অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কারণ নবী (সা.) - এর নুবুওয়্যাতের আলো ছিল বাহ্যিক ও গোপনভাবে সারা পৃথিবীর আলোস্বরূপ, আর মদীনাবাসী ছিল সেই আলোর সব থেকে কাছে।
“আমরা আমাদের অন্তরে উদাসীনতা অনুভব করতে লাগলাম।” অর্থাৎ রাসূল (সা.) -এর মৃত্যুর কারণে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হতে লাগল। আর আমাদের মধ্যে এক ধরনের অন্ধকার অনুভূত হতে লাগল। ওয়াহীর বন্ধের কারণে আমরা আমাদের হৃদয়ে নম্রতা, দয়া ও আমাদের অন্তরে থাকা নূরকে খুঁজে পাচ্ছিলাম।
আর আমরা তার উপস্থিত থাকার বরকতকে হারিয়ে ফেললাম। তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা তাদের হৃদয়ে যে বিশুদ্ধতা ও দয়া ওয়াহী চলাকালীন সময়ে পেত তা হারিয়ে ফেলল। দীর্ঘদিন ধরে রাসূল (সা.) -এর যে শিক্ষা ও শক্তি ছিল তা তারা হারিয়ে ফেলল। আর তিনি এটা বলেননি যে, তারা যে সত্যের উপর ছিলেন তা তারা পাননি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)