মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৬২৯৩ টি

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - (আবূ বাকর সিদ্দীক, ‘উমার ফারূক এবং উসমান গনী রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তিনজনের একত্রে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৩-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) ও আবূ বকর, ’উমার এবং উসমান (রাঃ)-সহ উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন, (খুশিতে) পাহাড় তাদেরকে নিয়ে দুলতে লাগল। তখন নবী (সা.) পা দ্বারা আঘাত করে বললেন, উহুদ স্থির থাক। কেননা একমাত্র তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَة)

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَعِدَ أُحُدًا وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ فَرَجَفَ بِهِمْ فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ فَقَالَ: «اثْبُتْ أُحُدُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (3686) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (مَازِلْنَاأعِزَّةًمُنْذُأَسْلَمَ) কেননা তিনি ছিলেন আল্লাহর আদেশ পালনে অবিচল ও দৃঢ়।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, “উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ ছিল সম্মান, হিজরত ছিল সাহায্য, শাসন ছিল দয়া। কারণ আল্লাহর শপথ ‘উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের আগ পর্যন্ত আমরা কা'বার চারপার্শ্বে প্রকাশ্যে সালাত আদায় করতে পারিনি।
(فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ فَقَالَ: اثْبُتْ أُحُدُ) মিরক্বাত ব্যাখ্যাকার বলেন: পাহাড়কে বলছেন আগন্তুকের কারণে তোমার পৃষ্ঠে কোন চিহ্ন প্রকাশ করো না, দৃঢ়চেতা ব্যক্তির ন্যায় অটল থাক। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। জুনায়দ নামক এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ভিতরগত কোন অবস্থা নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে বাহ্যিক কোন বিষয় শ্রবণের সময় তোমার মাঝে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়? তখন তিনি সূরাহ্ আন্ নামল-এর ৮৮নং আয়াত পাঠ করে শুনান। আয়াতটি হলো, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
(وَ تَرَی الۡجِبَالَ تَحۡسَبُهَا جَامِدَۃً وَّ هِیَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ) “তুমি পাহাড়কে দেখতে পাও অনঢ় অথচ তা মেঘমালার ন্যায় চলে।” (২৭:৮৮)
(فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ) মর্যাদাবান ও সম্মানিত সাথিগণ তার উপর উঠার কারণে পাহাড়কেও সকল প্রকার বিরক্তিভাব প্রকাশ করা হতে মুক্ত থাকা অবশ্যক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ৭/৩৬৮৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - (আবূ বাকর সিদ্দীক, ‘উমার ফারূক এবং উসমান গনী রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তিনজনের একত্রে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৪-[২] আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী (সা.) -এর সাথে মদীনার কোন একটি বাগানে ছিলাম। তখন এক লোক এসে (বাগানের) দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করল। নবী (সা.) বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। অতঃপর আমি দরজা খুলে দিতেই দেখলাম, তিনি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)। তখন আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথানুযায়ী (জান্নাতের) সুসংবাদ দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন।
অতঃপর আরেক লোক এসে দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করল। নবী (সা.) বললেন, আগন্তুক ব্যক্তির জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর। আমি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম, আগন্তুক “উমার ফারূক (রাঃ)। তখন আমি তাঁকে নবী (সা.) -এর দেয়া সুসংবাদটি জানালাম। তিনিও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খুলতে অনুরোধ করল। তখন নবী (সা.) আমাকে বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তার ওপর মারাত্মক বিপদের আগমনসহ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর। আমি দরজা খুলে দিতেই দেখলাম, তিনি হলেন উসমান গনী (রাঃ)।
আমি তাঁকে নবী (সা.) যা বলেছেন তা জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, আল্লাহই (আমার) সাহায্যকারী। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَة)

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ فَجَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَفْتَحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ» فَفَتَحْتُ لَهُ فَإِذَا أَبُو بَكْرٍ فَبَشَّرْتُهُ بِمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَفْتَحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ» . فَفَتَحْتُ لَهُ فَإِذا هُوَ عُمَرُ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ ثُمَّ اسْتَفْتَحَ رَجُلٌ فَقَالَ لِي: «افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ عَلَى بَلْوَى تُصِيبُهُ» فَإِذَا عُثْمَانُ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ ثمَّ قَالَ: الله الْمُسْتَعَان. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3693) و مسلم (28 / 2403)، (6212) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: ‘উমার (রাঃ) -এর সময়েও পরীক্ষা ছিল তবে ‘উসমান (রাঃ)-কে খাস করার কারণ হলো তার পরীক্ষা বড় ছিল। আর তার সময়ও বেশি ছিল, কিন্তু তার উত্তম সঙ্গী কম ছিল।
(فَحَمِدَ اللَّهَ ثمَّ قَالَ: الله الْمُسْتَعَان) অর্থাৎ যাবতীয় কাজে তার সহযোগিতা কামনা করেছেন। আর ঐ সকল বিপদাপদে ধৈর্য ধরার জন্য চেষ্টা করতে চেয়েছেন। এর ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করবেন। আর সে আল্লাহর নিকটে অবস্থানের সুযোগ লাভে ধন্য হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (আবূ বাকর সিদ্দীক, ‘উমার ফারূক এবং উসমান গনী রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তিনজনের একত্রে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৫-[৩] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জীবদ্দশায় আমরা বলতাম, আবূ বকর, ’উমার এবং উসমান (রাঃ), ’আল্লাহ তা’আলা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَة)

عَن ابْن عمر قَالَ: كُنَّا نَقُولُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيٌّ: أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ رَضِي الله عَنْهُم. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

صحیح ، رواہ الترمذی (3707 وقال : حسن صحیح غریب) [و اصلہ فی صحیح البخاری (3698)] ۔
(حسن صَحِيح)

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আবূ বাকর, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ) -এর ব্যাপারে অন্যান্য সাহাবীগণ আলোচনা করতেন যে, তাদের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন।
অত্র হাদীসের আরো একটি বর্ণনায় এসেছে যে, আমরা আল্লাহর রসূলের যুগেই তাদেরকে মর্যাদার দিক থেকে অগ্রাধিকার দিতাম। আমরা প্রথমে আবূ বাকর, তারপর ‘উমার, তারপর ‘উসমান (রাঃ)-কে গণ্য করতাম। আর এভাবে করাকে নবী (সা.) অপছন্দ করতেন না।
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আনসার ও মুহাজিরগণ একত্রিত হয়েছে যে, নবী (সা.) - এর পরে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন আবূ বাকর, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (আবূ বাকর সিদ্দীক, ‘উমার ফারূক এবং উসমান গনী রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তিনজনের একত্রে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৬-[8] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আজ রাতে পুণ্যবান একজন ভালো লোককে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, যেন আবূ বকর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে সংযুক্ত, ’উমার আবূ বকর-এর সাথে সংযুক্ত এবং উসমান ’উমার-এর সাথে সংযুক্ত।
জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছ হতে উঠে আসলাম, তখন আমরা নিজেদের ধারণানুযায়ী এ মন্তব্য করলাম যে, সেই পুণ্যবান লোক হলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) আর যাদের পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ঐ দীন-ইসলামের শাসনকর্তা, যে দীনসহ আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সা.)-কে পাঠিয়েছেন। (আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب مَنَاقِب هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَة)

عَن جابرن أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُرِيَ اللَّيْلَةَ رَجُلٌ صَالِحٌ كَأَنَّ أَبَا بَكْرٍ نِيطَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنِيطَ عُمَرُ بِأَبِي بَكْرٍ وَنِيطَ عُثْمَانُ بِعُمَرَ» قَالَ جَابِرٌ: فَلَمَّا قُمْنَا مِنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْنَا: أَمَّا الرَّجُلُ الصَّالِحُ فَرَسُولُ اللَّهِ وَأَمَّا نَوْطُ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ فَهُمْ وُلَاةُ الْأَمْرِ الَّذِي بَعَثَ اللَّهُ بِهِ نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

سندہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4636) [و صححہ الحاکم (3 / 71 ۔ 72) و وافقہ الذھبی] * الزھری مدلس و عنعن ولہ شاھد ضعیف تقدم (6057) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে তিনি বলেন, আমি আমার নিজেকে ও আবূ বাকর (রাঃ)-কে একই রশিতে বাঁধা দেখলাম। পরে তিনি নিজেকে মুক্ত করলেন, কেননা তিনি আল্লাহর রাসূল (সা.)। আর তার বন্ধু একজন সৎ লোক। তারপর রাসূল (সা.) আরেক ব্যক্তির জায়গা রাখলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৭-[১] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আলী (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে বলেছেন, মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে হারূন আলায়হিস সালাম-এর যে মর্যাদা ছিল, তুমিও আমার কাছে সে পর্যায়ে রয়েছ। তবে তারতম্য এটা যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

عَن سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3706) و مسلم (30 / 2404)، (6217) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى) অর্থাৎ আখিরাতে আর মর্তবায় তাঁর নিকটবর্তী হবে। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে নবী (সা.) এ কথাটি বলেছিলেন তাবুকের যুদ্ধে বের হওয়াকে কেন্দ্র করে। তিনি ‘আলী (রাঃ)-কে তাঁর পরিবারের নিকটে ছেড়ে যান এবং সেখানে থাকতে বলেন। এদিকে মুনাফিকরা তাঁকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়াতে লাগল যে, তাঁকে তিনি (সা.) ছেড়ে গেছেন। কারণ তিনি তাকে ভারী মনে করেছিলেন। এটা তার জন্য বিপদের কারণ জেনে তিনি তাকে ছেড়ে গেছেন। এ কথা শুনে তিনি তার তরবারি বের করে যুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন। তখন নবী (সা.) জুরফ নামক স্থানে ছিলেন। তিনি নবী (সা.) -এর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, মুনাফিকরা এই এই কথা বলছে। তখন নবী (সা.) তাকে সান্তনা দিতে গিয়ে বলেন, তারা মিথ্যা কথা বলেছে। আমি তোমাকে আমার পিছনে রেখে এসেছি যাতে তুমি আমার অনুপস্থিতে আমার স্থলাভিষিক্ত হতে পার। তুমি আমার ও তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও। হে ‘আলী! তুমি কি পছন্দ কর না যে, তুমি আমার স্থানে থাক যেভাবে হারূন আলায়হিস সালাম মূসা আলায়হিস সালাম-এর জায়গায় ছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

এ হাদীস দ্বারা ‘আলী (রাঃ) নবী (সা.) -এর পরে খলীফাহ্ হবেন এরূপ বুঝায় না; বরং তিনি তাঁর কাছের লোক। তাকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসেন এটাই বুঝায়। (সম্পাদকীয়)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৮[২] যির ইবনু হুবায়শ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাঃ) বলেছেন, সেই মহান পবিত্র সত্তার শপথ। যিনি বীজ ফাটিয়ে অঙ্কুর বের করেন এবং বীর্য হতে প্রাণী সৃষ্টি করেন, নবীয়ে উম্মী - আমাকে এ অসিয়ত করেছেন যে, মু’মিনই আমাকে ভালোবাসবে এবং মুনাফিকই আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ: أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مؤمنٌ وَلَا بيغضني إِلَّا مُنَافِق. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (131 / 78)، (240) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ) অর্থাৎ নবী (সা.) তা গুরুত্বারোপ করেছেন ও আর তা আমার কাছে পৌছেছেন যেন তিনি আমাকে অঙ্গীকার করেছেন।
(إِلَّا مؤمنٌ) অর্থাৎ পূর্ণ ঈমানদার নয়। যেমন কেউ যদি তাকে ভালোবাসে আর শায়খায়ন তথা আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)-কে ঘৃণা করে, তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তাহলে সেও পূর্ণ মু'মিন নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যির ইবন হুবায়শ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৮৯-[৩] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের সময় বললেন, আগামীকাল আমি এ পতাকা এমন এক লোকের হাতে প্রদান করব, যার হাতে আল্লাহ তা’আলা (খায়বার দূর্গ) জয় করাবেন, যিনি আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসেন। অতঃপর ভোর হতেই লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে উপস্থিত হলো। তারা প্রত্যেকেই (মনে মনে) এ আশা পোষণ করছিল যে, পতাকা তাকেই প্রদান করা হবে। কিন্তু নবী (সা.)- প্রশ্ন করলেন, ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব কোথায়? লোকজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাঁর চোখে অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। তিনি (সা.) বললেন, তাঁকে ডেকে আনার জন্য কাউকে পাঠাও। অতঃপর আলী (রাঃ)-কে আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন। তাতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন তার চোখে কোনরূপ রোগ-ব্যথাই ছিল না।
অতঃপর তিনি (সা.) পতাকা তাঁর হাতেই প্রদান করলেন। পতাকা হাতে নিয়ে ’আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের (শত্রুদের) বিরুদ্ধে আমি সেই অবধি লড়ে যাব যে পর্যন্ত তারা আমাদের মতো (মুসলিম) না হবে। নবী (সা.) বললেন, তুমি ধীরে-সুস্থে চল, এমনকি যখন তুমি তাদের অঞ্চলে পৌছবে, তখন সর্বপ্রথম তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবে এবং ইসলামের মধ্যে আল্লাহর সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবে। আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা যদি একটি লোককেও আল্লাহ তা’আলা হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল রঙের উট অপেক্ষাও অধিকতর উত্তম হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আর ’আলী (রাঃ)-এর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে ’আলী (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে বলেছিলেন- (أَنْت مني وَأَنا مِنْك) “তুমি ’আমর এবং আমি তোমার” بَاب «بُلُوغ الصَّغِير» ’শিশুর বয়ঃপ্রাপ্তি অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ خَيْبَرَ: «لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهَ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ» . فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كلهم يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا فَقَالَ: «أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ؟» فَقَالُوا: هُوَ يَا رَسُولَ اللَّهِ يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ. قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ» . فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ فَقَالَ عَلِيٌّ: يَا رَسُولَ الله أقاتلهم حَتَّى يَكُونُوا مثلنَا؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ فِيهِ فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِي اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَذكر حَدِيث الْبَراء قَالَ لعَلي: «أَنْت مني وَأَنا مِنْك» فِي بَاب «بُلُوغ الصَّغِير»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2942) و مسلم (34 / 2406)، (6223) 0 حدیث البراء تقدم (3377) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে ‘আলী (রাঃ)-এর মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি চোখের অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকার পরও নবী (সা.) তাকে ডেকে এনে খায়বার যুদ্ধের পতাকা দিয়ে দিলেন। আর তার হাতে খায়বার বিজয়ের সুসংবাদও আগাম বলে দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) মু'জিযাহ্ দেখিয়ে তার চোখে থুথু লাগিয়ে তার চোখের সমস্যা সমাধান করে দিলেন। সুবহা-নাল্ল-হ! তারপরে তাকে যুদ্ধের কিছু নীতিমালা শিখিয়ে তাকে মানুষকে হত্যা করার আগে তাদেরকে দা'ওয়াত দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আর দাওয়াতি কাজের ফলাফল বর্ণনা করেন। (সম্পাদকীয়)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯০-[৪] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: ’আলী আমার হতে আর আমি ’আলী হতে। আর সে প্রত্যেক মুমিনের বন্ধু। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ عَلِيًّا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ وَهُوَ وَلِيُّ كُلِّ مُؤْمِنٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3712 وقال : غریب) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (إِنَّ عَلِيًّا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ) অর্থাৎ বংশের সূত্রে, বৈবাহিক সূত্রে, অগ্রগামিতার দিক থেকে, ভালোবাসার দিক থেকে ও অন্যান্য দিক থেকে। এটা কেবলমাত্র তার আত্মীয় দিক থেকে নিকটবর্তী নয়। তাহলে এ বিষয়ে অনেকেই তাঁর শরীক হয়ে যাবে।
(وَهُوَ وَلِيُّ كُلِّ مُؤْمِنٍ) অর্থাৎ তার প্রিয়। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা মহান আল্লাহর বাণীর প্রতি ইঙ্গিত আছে, তা হলো-
(اِنَّمَا وَلِیُّکُمُ اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ هُمۡ رٰکِعُوۡنَ) “তোমাদের অভিভাবক কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এবং যারা ঈমান এনেছে, সালাত কায়িম করে ও যাকাত দেয় এবং যারা রুকু করে”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ ৫: ৫৫)।
তাফসীরে কাশশাফে বলা হয়ে হয়েছে, এ আয়াতটি ‘আলী (রাঃ)-এর ব্যাপারে নাযিল করা হয়েছে। যদি তুমি বল, এটা কিভাবে সঠিক যে তা ‘আলী (রাঃ)-এর ব্যাপারে নাযিল হয়েছে? এখানে তো বহুবচনের শব্দ এসেছে। আমি বলব, তার কাজের মতো করে মানুষকে উৎসাহ দেয়ার জন্য এটা এসেছে। যেন তারা তার সাওয়াবের মত সাওয়াব লাভ করতে পারে। আর মু'মিন ব্যক্তির আগ্রহ এমনটাই হওয়া চায় সৎ ও কল্যাণের কাজে। বায়যাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা রুকূ'কারী অর্থাৎ তারা তাদের সালাতে ও যাকাতে বিনয়ী। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৯ম খণ্ড, হা. ৩৭১, মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯১-[৫] যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.)-বলেছেন: আমি যার বন্ধু, ’আলীও তার বন্ধু। (আহমাদ ও তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَن زيد بن أَرقم أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ

اسنادہ صحیح ، رواہ احمد (4 / 368 ح 19494) و الترمذی (3713 وقال : حسن غریب) * و للحدیث طریق کثیرۃ جدًا فھو من الاحادیث المتواترۃ ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: আমি যাকে ভালোবাসি ‘আলীও তাকে ভালোবাসে। আর আমি যাকে ঘৃণা করি ‘আলীও তাকে ঘৃণা করে। আর আমি যার দায়িত্ব নেই ‘আলীও তার দায়িত্ব নেয়। আলী (রাঃ)-এর সাথে যারা ইয়ামানে ছিল তারা তার সম্পর্কে কিছু বলল, নবী (সা.) যখন হজ্জ আদায় করলেন তখন খুত্ববাহ দিয়ে সতর্ক করলেন। যারা তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললেন, তিনি (সা.) তাদেরকে খণ্ডন করলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯২-[৬] হুবশী ইবনু জুনাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ’আলী আমা হতে, আর আমি ’আলী হতে। আর আমার তরফ হতে কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারবে না, আমি অথবা ’আলী ছাড়া। [তিরমিযী, আর ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি জুনাদাহ হতে বর্ণনা করেছেন।]

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَن حبشِي بن جُنَادَة قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلِيٌّ مِنِّي وَأَنَا مِنْ عَلِيٍّ وَلَا يُؤَدِّي عني إِلَّا أَنا وَعلي» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَرَوَاهُ أَحْمد عَن أبي جُنَادَة

حسن ، رواہ الترمذی (3719 وقال : حسن غریب صحیح) و احمد (4 / 164 ح 17645) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (عَلِيٌّ مِنِّي وَأَنَا مِنْ) অর্থাৎ ‘আরবদের অভ্যাস ছিল যদি তাদের মাঝে কোন ওয়াদা ভঙ্গ করা, কোন কথা, কোন চুক্তি, কোন ওয়াদা ভঙ্গ করার সময় হয় তখন তা কেবল ভঙ্গ করতে পারে সে সম্প্রদায়ের নেতা। অথবা যে তার খুব নিকটাত্মীয় বা কাছের লোক। তার থেকে ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। যে বছর রাসূল (সা.) আবূ বাকর (রাঃ)-কে হজ্জ সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন তার পিছনে পিছনে ‘আলী (রাঃ) কে পাঠালেন মুশরিকদের সাথে করা চুক্তিকে ভঙ্গ করার জন্য। তিনি তাদের সামনে সূরাহ্ আত্ তাওবার আয়াত পাঠ করলেন।
(اِنَّمَا الۡمُشۡرِکُوۡنَ نَجَسٌ فَلَا یَقۡرَبُوا الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هٰذَا) “মুশরিকরা অপবিত্র, তারা যেন এ বছরের পর আর মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয়”(সূরাহ আত্ তাওবাহ ৯: ২৮)। এছাড়াও অন্যান্য বিধানাবলী দ্বারা তাকে পাঠানো হয়েছিল। এটা ছিল ‘আলী (রাঃ)-এর বিরাট বড় একটা মর্যাদা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৩-[৭] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতত্ব স্থাপন করেন। এ সময় ’আলী (রাঃ) অশ্রুসজল চোখে এসে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল!) আপনি আপনার সাহাবীদের পরস্পরে মাঝে ভ্রাতত্ব বন্ধন স্থাপন করলেন, অথচ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করলেন না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, ইহকাল ও পরকালে উভয় স্থানেই তুমি আমার ভাই। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও গরীব]।

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: آخَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ عَلِيٌّ تَدْمَعُ عَيْنَاهُ فَقَالَ: آخَيْتَ بَيْنَ أَصْحَابِكَ وَلم تُؤاخِ بَيْنِي وَبَيْنَ أُحُدٍ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْتَ أَخِي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3720) * حکیم بن جبیر : ضعیف رمی بالتشیع ، و جمیع بن عمیر : ضعیف ضعفہ الجمھور ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: নবী (সা.) সব সাহাবীদের মাঝে ভ্রাতত্ব স্থাপন করে দিলে ‘আলী (রাঃ) তাকে বললেন, আমাকে কারো সাথে ভাই বানিয়ে দিলেন না কেন? নবী (সা.) তখন বললেন, তুমি কি জান আমি তোমাকে কারো সাথে ভাই বানিয়ে দেয়নি কেন? আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তুমি আমার ভাই আর আমি তোমার ভাই। যদি তোমাকে কেউ বলে তবে তুমি বল, আমি আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রসূলের ভাই। আর আমার পরে যদি কেউ তা দাবী করে তবে সে হবে মহা মিথ্যুক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৪-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) -এর সামনে (খাওয়ার জন্য) একটি (ভুনা) পাখি রাখা ছিল। তখন তিনি (সা.) (দু’আয়) বললেন, হে আল্লাহ! তোমার সৃষ্টিজীবের মাঝে যে লোকটি তোমার কাছে অধিকতর প্রিয়, তাকে তুমি পাঠিয়ে দাও, যেন সে আমার সাথে এ পাখিটি (’র মাংস) খেতে পারে। এর পরক্ষণেই ’আলী (রাঃ) আসলেন এবং তাঁর সাথে খেলেন। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব]

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَيْرٌ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ ائْتِنِي بِأَحَبِّ خَلْقِكَ إِلَيْكَ يَأْكُلُ مَعِي هَذَا الطَّيْرَ» فجَاء عَلِيٌّ فَأَكَلَ مَعَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

حسن ، رواہ الترمذی (3721) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (كَانَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَيْرٌ) অর্থাৎ নবী (সা.) -এর নিকট একটি ভুনা বা রান্না করা পাখি ছিল যা তাকে হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছিল। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) -কে এক আনসারী মহিলা দু’টি পাখি হাদিয়্যাহ্ দিয়েছিল।
আমরা ‘আলী (রাঃ)-এর মর্যাদাকে অস্বীকার করি না। তিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূল (সা.) -এর অধিক নিকটবর্তী ছিলেন তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে। তিনি কয়েক দিক থেকে নবী (সা.) -এর আত্মীয় হতেন। আর তিনি তার দীনী ভাইও ছিলেন। আর তিনি (সা.) তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তবে মূর্খরা তাঁর মর্যাদা নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি করে তা হতে তিনি মুক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৫-[৯] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে যখন কোন কিছু চাইতাম, তিনি আমাকে তা দান করতেন। আর যখন চুপ থাকতাম, তখন নিজের তরফ হতে দিতেন। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব]।

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ إِذَا سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَانِي وَإِذَا سَكَتُّ ابْتَدَأَنِي. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ «حَسَنٌ غَرِيبٌ»

سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3722) * عبداللہ بن عمرو بن ھند لم یسمع من علی رضی اللہ عنہ ، وجاء فی المستدرک (3 / 125 ح 463) قال :’’ سمعت علیًا رضی اللہ عنہ ‘‘ !! ۔
(ضَعِيفٌ)

ব্যাখ্যা: (وَإِذَا سَكَتُّ ابْتَدَأَنِي) অর্থাৎ কথা বলা বা দানের ক্ষেত্রে। এর মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে, উত্তম আদব হলো চুপ থাকা। আর অধিক সম্মানিত ব্যক্তিকে আগে সুযোগ দেয়া। আর একে শক্তিশালী করে অন্য একটি হাদীস তা হলো- যাকে আমার কাছে চাওয়া থেকে আমার স্মরণে ব্যস্ত রাখবে আমি তাকে আমার কাছে প্রার্থনাকারীর চেয়ে বেশি দিয়ে থাকি। আলী (রাঃ)-এর দুনিয়াবিমুখতার কথা উল্লেখ করেছেন অনেক জীবনী লেখকগণ। তারা ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার স্মরণ আছে যে, আমি নবী (সা.)-এর সাথে ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে পাথর বেঁধেছিলাম, আর আজ আমি যাকাত দিচ্ছি চল্লিশ হাজার। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর আজ আমার সম্পদের যাকাত পৌছেছে চল্লিশ হাজার দীনার। হাদীস দুটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।

সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদিন ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)- ফাতিমাহ্ (রাঃ) -এর কাছে গিয়ে হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে কান্নারত পেয়ে তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করেন। তখন ফাতিমাহ্ (রাঃ) বলেন, তাঁরা ক্ষুধার জ্বালায় কান্না করছে। ‘আলী (রাঃ), ঘর থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়ে পতিত অবস্থায় একটি দীনার পেলেন। তিনি দীনারটি ফাতিমাহ (রাঃ)-এর কাছে নিয়ে এসে বিষয়টি তাকে জানালেন। ফাতিমা (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি দীনারটি নিয়ে অমুক ইয়াহুদীর কাছে গিয়ে আমাদের জন্য আটা ক্রয় করুন। অতঃপর আলী (রাঃ) ইয়াহূদীর কাছে গিয়ে আটা ক্রয় করলেন। ইয়াহুদী বলল, আপনি তো ঐ লোকের জামাতা, যিনি নিজেকে আল্লাহর রাসূল দাবী করেন। তখন ‘আলী (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন ইয়াহুদী বলল, আপনি দীনারটি ফেরত নিন এবং এই আটাও নিয়ে যান (আটার মূল্য দিতে হবে না)।
আলী (রাঃ) আটা নিয়ে ফাতিমা (রাঃ)-এর কাছে এসে তাকে বিষয়টি জানালেন। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আপনি উমুক কসাইয়ের কাছে গিয়ে আমাদের জন্য এক দিরহামের গোশত ক্রয় করুন। তিনি সেখানে গিয়ে দীনারটি বন্ধক রেখে এক দিরহাম মূল্যের গোশত কিনে ঘরে ফিরলেন।

ফাতিমাহ্ (রাঃ) আটা দিয়ে রুটি বানালেন এবং গোশত রান্না করলেন। নবী (সা.) তাদের কাছে আসলে ফাহিমাহ্ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে ঘটনাটি খুলে বলছি। আপনি যদি এটা আমাদের জন্য হালাল মনে করেন তাহলে আমরা তা খাবো এবং আমাদের সাথে আপনিও খাবেন। ঘটনা এরূপ, তিনি (সা.) বললেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাও। তারা যখন খাচ্ছিলেন তখন এক যুবক আল্লাহ ও ইসলামের নামে শপথ উচ্চারণ করে দীনারটি খুঁজছিল। তখন রাসূল (সা.) -এর নির্দেশ মোতাবেক তাকে ডেকে দীনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। সে বলল, দীনারটি আমার নিকট থেকে বাজারে পড়ে গেছে।
নবী (সা.) বললেন: হে ‘আলী! তুমি কসাইয়ের নিকট গিয়ে বল, আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনাকে দীনারটি আমার কাছে ফেরত দিতে বলেছেন। আর তিনি আপনার দিরহাম দিয়ে দিবেন। অতঃপর কসাই তা ফেরত দিলে রাসূল (সা.) সেটি ঐ যুবককে ফিরিয়ে দিলেন- (আবূ দাউদ ১৭১৬: হাসান)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৬-[১০] উক্ত রাবী [’আলী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি বিদ্যার ঘর আর ’আলী হলেন সে গৃহের দরজা।

[ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।
তিনি আরো বলেছেন, কোন কোন বর্ণনাকারী হাদীসটি শারীক নামক বর্ণনাকারী হতে বর্ণনা করেছেন। তারা তাতে সুনাবিহী বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি এবং শারীক ছাড়া অন্য কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হতে এ হাদীস আমরা জানতে পারিনি।]

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَقَالَ: رَوَى بَعْضُهُمْ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ شَرِيكٍ وَلَمْ يَذْكُرُوا فِيهِ عَنِ الصُّنَابِحِيِّ وَلَا نَعْرِفُ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ أَحَدٍ مِنَ الثِّقَاتِ غَيْرَ شَرِيكٍ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3723) * شریک القاضی مدلس و عنعن ولم یثبت تصریح سماعہ فی ھذا الحدیث و للحدیث شواھد ضعیفۃ ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ) অন্য বর্ণনায় আছে, (أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ) মাসাবীহ-এর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, (أَنَا دَارُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا) অর্থাৎ আমি ‘ইলমের ঘর আর ‘আলী (রাঃ) হলো তার দরজা।
অন্য আরেকটি বর্ণনায় অতিরিক্ত এসেছে, (فَمَنْ أَرَادَالْعِلْمَ فَلْيَأْتِهِ مِنْ بَابِهِ) অর্থাৎ যে ‘ইলম চায় সে যেন তার কাছে তার দরজা দিয়ে আসে। এর অর্থ হলো, ‘আলী (রাঃ) তার দরজাসমূহ থেকে একটি দরজা। তবে এখানে নির্দিষ্ট করা মানে এক প্রকার সম্মান দেয়া। তাঁর দিকে সম্পৃক্ত করার কারণ হলো তিনি কতিপয় সাহাবীর চেয়ে বেশি সম্মানিত ও জ্ঞানী ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৭-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ত্বায়িফ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ’আলী (রাঃ)- কে কাছে ডেকে চুপে চুপে কিছু কথা বললেন। লোকেরা বলল, রাসূলুল্লাহ (সা.) যে তার চাচার পুত্রের সাথে দীর্ঘসময় অবধি চুপে চুপে কথাই বলছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, চুপে চুপে আমি কথা বলিনি, বরং স্বয়ং আল্লাহই তার সাথে চুপে চুপে কথা বলেছেন। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا يَوْمَ الطَّائِفِ فَانْتَجَاهُ فَقَالَ النَّاسُ: لَقَدْ طَالَ نَجْوَاهُ مَعَ ابْنِ عَمِّهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا انْتَجَيْتُهُ وَلَكِنَّ اللَّهَ انْتَجَاهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3726 وقال : حسن غریب ) * ابو الزبیر مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (فَقَالَ النَّاسُ) অর্থাৎ মুনাফিকগণ, অথবা সাধারণ সাহাবীগণ গোপন বৈঠক করেছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৮-[১২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, হে আলী! আমি ও তুমি ছাড়া এ মসজিদে জুনুবী (নাপাকী) অবস্থায় অন্য কারো প্রবেশ করা বৈধ নয়।
(অধস্তন বর্ণনাকারী) আলী ইবনুল মুনযির বলেন, আমি যিরার ইবনু সুরাদ-কে হাদীসটির ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নাপাকী অবস্থায় আমি ও তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য এই মসজিদের ভিতর দিয়ে পথ অতিক্রম করা বৈধ নয়। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও গরীব]।

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «يَا عَلِيُّ لَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ يُجْنِبُ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ غَيْرِي وَغَيْرَكَ» قَالَ عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ: فَقُلْتُ لِضِرَارِ بْنِ صُرَدٍ: مَا مَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ؟ قَالَ: لَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ يَسْتَطْرِقُهُ جُنُبًا غَيْرِي وَغَيْرَكَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3727) * فیہ عطیۃ العوفی : ضعیف ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: এখানে তাদের দুজনের বিষয়টি খাস করার অর্থ হলো, তাদের দুজনের ঘরের দরজা মসজিদের ভেতর দিয়ে ছিল। নবী (সা.)-এর ঘরের দরজা তো মসজিদের ভিতর দিকে ছিল। তার ঘরের দরজা খুললেই মসজিদ তার সামনে পড়ত। অনুরূপ ‘আলী (রাঃ)-এর ঘরের দরজাও ছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৯৯-[১৩] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন এক অভিযানে সেনাদল পাঠালেন। তাদের মধ্যে ’আলী (রাঃ)-ও ছিলেন। উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেন, সেনাদল পাঠাবার পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আমি দুই হাত তুলে এরূপ দু’আ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! ’আলীকে আবার আমাকে না দেখাবার আগ পর্যন্ত তুমি আমার মৃত্যু দান করো না। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَن أم عطيَّة قَالَتْ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَيْشًا فِيهِمْ عَلِيٌّ قَالَتْ: فَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ رَافِعٌ يَدَيْهِ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ لَا تُمِتْنِي حَتَّى تُرِيَنِي عليّاً» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3737 وقال : حسن) * ام شراحیل و ابو الجراح المھری : مجھولا الھال ، لم یوثقھما غیر الترمذی ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: নবী (সা.) ‘আলী (রাঃ)-কে কোন একটি সফরে সৈন্যবাহিনীর সাথে পাঠিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) তাকে পাঠানোর সময় বা তাঁর ফিরে আসা নিশ্চিত করতে তাঁর দু’হাত উঁচু করে বলেন, “হে আল্লাহ! ‘আলীকে দেখার আগে আমার মৃত্যু দিও না।”
নবী (সা.) যখন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করছিলেন তখন তার ডানদিকে জিবরাইল আর মীকাঈল তার বামদিকে ছিলেন। আর তিনি তার বিজয় নিশ্চিত না করে ফিরে যাননি- (আহমাদ)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১০০-[১৪] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোন মুনাফিক ’আলী-কে ভালোবাসে না এবং কোন মু’মিন ’আলী-এর প্রতি বিদ্বেষ রাখে না। [আহমাদ ও তিরমিযী এবং ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীসটি হাসান এবং সনদের দিক দিয়ে গরীব]

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُحِبُّ عَلِيًّا مُنَافِقٌ وَلَا يُبْغِضُهُ مُؤْمِنٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب إِسْنَادًا

ضعیف ، رواہ احمد (6 / 282 ح 27040) و الترمذی (2 / 3717 و حسنہ و سندہ ضعیف) * مساور الحمیری مجھول و حدیث الترمذی (3736) و مسلم (78) یغنی عنہ ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: ‘আলী (রাঃ)-কে পূর্ণ মু'মিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ ভালোবাসে না, আর পূর্ণ মুনাফিক ছাড়া কেউ তাকে ঘৃণা করে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১০১-[১৫] উক্ত রাবী [উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে লোক ’আলীকে গালি দিল, সে যেন আমাকে গালি দিল। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَبَّ عَلِيًّا فَقَدْ سَبَّنِي» . رَوَاهُ أَحْمد

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (6 / 323 ح 27284) [و صححہ الحاکم (3 / 121) و وافقہ الذھبی] * ابو اسحاق مدلس و عنعن ، و روی ابو یعلی (7013) من حدیث السدی (اسماعیل بن عبد الرحمن) عن ابی عبداللہ الجدلی قال :’’ قالت ام سلمۃ : ایسب رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم علی المنابر ؟ قلت : و انی ذلک ؟ قالت : الیس یسب علی و من یحبہ ؟ فاشھد ان رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم کان یحبہ ‘‘ و سندہ حسن ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ‘আলী (রাঃ)-কে গালি দিল সে যেন নবী (সা.) -কে গালি দিল। কারণ তিনি তার বংশের লোক। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে, ‘আলী (রাঃ)-কে গালি দেয়া কুফরী কাজ। আর এ কাজটি যেন ধমক ও সতর্কতাস্বরূপ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে তবারানী বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদেরকে গালি দিবে, তার ওপর আল্লাহর লা'নাত, মালায়িকাহ’র (ফেরেশতাদের) লা'নাত ও সকল মানুষের লা'নাত।
‘আলী (রাঃ) থেকে তবারানী-এর এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি নবীদের গালি দিবে তাকে হত্যা করা হবে, আর যে সাহাবীদেরকে গালি দিবে তাকে বেত্রাঘাত করা হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১০২-[১৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমার মাঝে ঈসা আলায়হিস সালাম-এর সাদৃশ্য রয়েছে। ইয়াহূদীরা তাঁর প্রতি এমনভাবে বিদ্বেষ রাখে যে, তাঁর মায়ের উপর অপবাদ রচনা করে ছাড়ে। অপরদিকে খ্রিষ্টানরা তাকে ভালোবাসতে গিয়ে তাকে এমন স্থানে পৌছিয়ে দেয়, যা তার জন্য শোভনীয় নয়। অতঃপর ’আলী (রাঃ) বললেন, আমার ব্যাপারে দুই দল ধ্বংস হবে। (একদল) অতি ভক্তিকারী বন্ধু যারা আমার ক্ষেত্রে এমন উচ্চ প্রশংসা করে যা আমার মধ্যে নেই। হিংসুকের দল, যারা আমার প্রতি হিংসার বশীভূত হয়ে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রচনা করবে। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَى أَبْغَضَتْهُ الْيَهُودُ حَتَّى بَهَتُوا أُمَّهُ وَأَحَبَّتْهُ النَّصَارَى حَتَّى أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَتْ لَهُ» . ثُمَّ قَالَ: يَهْلِكُ فِيَّ رَجُلَانِ: مُحِبٌّ مُفْرِطٌ يُقَرِّظُنِي بِمَا لَيْسَ فِيَّ وَمُبْغِضٌ يَحْمِلُهُ شَنَآنِي عَلَى أَنْ يَبْهَتَنِي. رَوَاهُ أَحْمَدُ

اسنادہ ضعیف ، رواہ [عبداللہ] احمد (1 / 160 ح 1376) * فیہ الحکم بن عبد الملک : ضعیف ۔
(ضَعِيفٌ)

ব্যাখ্যা: ‘আলী (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে যে দু’দল লোকে পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা হলেন, রাফেযী ও খারেযী। নুসায়রিয়্যাহ সম্প্রদায় ‘আলী (রাঃ)-কে সকল সাহাবীর ওপর তাকে মর্যাদা দেয়। আলী (রাঃ) বলেন, আমাকে কিছু লোক ভালোবাসে আর এ ভালোবাসা তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে, আর আমাকে কিছু লোক ঘৃণা করে আর এ কারণে তারা জাহান্নামে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


দেখানো হচ্ছেঃ ৬০৮১ থেকে ৬১০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৯৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 302 303 304 305 306 · · · 312 313 314 315 পরের পাতা »