মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৬২৯৩ টি

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৬১-[৪০] উম্মুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবুদ্ দারদা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি আবুল ক্বাসিমকে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ হে ’ঈসা! আমি তোমার পরে এমন এক উম্মাত পাঠাব, যারা তাদের পছন্দনীয় জিনিস পেলে আল্লাহর প্রশংসা করবে, আর বিপদে পড়লে সাওয়াবের আশা করবে ও ধৈর্যধারণ করবে। অথচ এ সময় তাদের কোন জ্ঞান ও ধৈর্যশক্তি থাকবে না। এ সময় তিনি [’ঈসা (আঃ)] নিবেদন করবেন, হে আমার রব! তাদের জ্ঞান ও ধৈর্য না থাকলে এটা কেমন করে হবে? তখন আল্লাহ বললেন, আমি আমার সহিষ্ণুতা ও জ্ঞান হতে তাদেরকে কিছু দান করব। (উপরের দু’টি হাদীসই বায়হাক্বীর শু’আবিল ঈমানে বর্ণিত হয়েছে)[1]

وَعَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ قَالَتْ: سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ يَقُولُ: سَمِعْتُ أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: يَا عِيسَى إِنِّي بَاعِثٌ مِنْ بَعْدِكَ أُمَّةً إِذَا أَصَابَهُمْ مَا يُحِبُّونَ حَمِدُوا اللَّهَ وَإِنْ أَصَابَهُمْ مَا يَكْرَهُونَ احْتَسَبُوا وَصَبَرُوا وَلَا حِلْمَ وَلَا عَقْلَ. فَقَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ يَكُونُ هَذَا لَهُمْ وَلَا حِلْمَ وَلَا عَقْلَ؟ قَالَ: أُعْطِيهِمْ مِنْ حِلْمِي وَعِلْمِي . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, সুখ শান্তির সময় আল্লাহর গুণগান গেতে হবে, বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং সাওয়াবের আশা রাখতে হবে। এর সাথে এ হাদীসে ‘ঈসা (আঃ) এর পরবর্তী উম্মাত তথা আমাদের মান-মর্যাদার কথা তুলে ধরা হযেছে।

হাদীসের মধ্যে امة এর অর্থ হল, বিরাট দল। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেককার উম্মাতগণ। আল্লাহ তা‘আলা ‘ঈসা (আঃ) কে বললেন, তোমার পরে এমন একটি জাতি আসবে তাদের কাছে যখন কোন সুসংবাদ আসবে এবং যখন তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন নি‘আমাতপ্রাপ্ত হবে তখন তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে। এজন্যে উম্মাতে মুহাম্মাদী সর্বদা আনন্দের সময় আল্লাহর গুণকীর্তন গায়।

আর যখন তাদের কাছে তাদের অপছন্দনীয় কোন সংবাদ আসবে তথা কোন বিপদ মেনে আসবে তখন তারা এর উপর ধৈর্য ধারণ করবে। আর আল্লাহর কাছে এর জন্য সাওয়াবের আশা করবে। অথচ তাদের কোন ধৈর্য ও জ্ঞান নেই। ‘ঈসা (আঃ) বললেন, হে আল্লাহ! এটা কি করে সম্ভব যে, তাদের ধৈর্য ও জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে ধৈর্য, কৌশল ও জ্ঞান দান করব।

এ হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ধৈর্য আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিরাট নি‘আমাত।

সর্বশেষ কথা হল, এ হাদীস ঐ ব্যক্তিকে ধৈর্যের প্রতি উৎসাহ দান করেছে, যে নিজের ব্যাপারে ও তার মালের ব্যাপারে বিপদের মধ্যে রয়েছে। এ হাদীস উম্মাতে মুহাম্মাদীর গুরুত্ব ও ফাযীলাতের কথা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

এ অধ্যায়ে কবর যিয়ারতের বৈধতা, এর গুরুত্ব ও ফাযীলাত এবং এর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।


১৭৬২-[১] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (কিন্তু এখন) তোমাদেরকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিচ্ছি। (ঠিক) এভাবে আমি তোমাদেরকে কুরবানীর মাংস (মাংস/গোসত) তিন দিনের বেশী জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যতদিন খুশী তা রাখতে পারো। আর আমি তোমাদেরকে ’নবীয (নামক শরাব) মশক ছাড়া অন্য কোন পাত্রে রেখে পান করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা তা যে কোন পাত্রে রেখে পান করতে পার। তবে সাবধান! নেশা এনে দেয় এমন কোন দ্রব্য কখনো পান করবে না। (মুসলিম)[1]

بَابُ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ

عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِي فَوْقَ ثَلَاثٍ فَأَمْسِكُوا مَا بَدَا لَكُمْ وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ النَّبِيذِ إِلَّا فِي سِقَاءٍ فَاشْرَبُوا فِي الْأَسْقِيَةِ كُلِّهَا وَلَا تشْربُوا مُسكرا» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি এ দিকে ইঙ্গিত বহন করছে যে, ইসলামের প্রথম দিকে কবর যিয়ারত করা বৈধ ছিল না। পরবর্তীতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরো এমন কতিপয় বিষয় সম্পর্কে এ হাদীসে বলা হয়েছে, যা ইসলামের প্রথম যুগে অবৈধ ছিল পরবর্তীতে তা বৈধ করা হয়েছে।

ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন এবং পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই কবর যিয়ারত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ নির্দেশ অনুমতি ও মুস্তাহাবের জন্য।

ইবনু ‘আবদুল বার কতিপয় ‘আলিমের বরাত দিয়ে বলেন, এ নির্দেশ ওয়াজিবের জন্য।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার ফাতহুল বারী কিতাবে বলেছেন, এ হাদীস কবর যিয়ারতের জায়িয বিধানকে সুস্পষ্ট করেছে। এ হাদীসের মাধ্যমে কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা রহিত করা হয়েছে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, আবদারী ও হাযিমীসহ অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন যে, পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত জায়িয তথা বৈধ। অনুরূপভাবে অনেকে এটাকে মাকরূহ বলেছেন।

ইবনু আবী শায়বাহ্ ইবনু সীরীন, ইবরাহীম নাখ‘ঈ ও শা‘বী থেকে বর্ণনা করেছেন, সাধারণভাবে কবর যিয়ারত করা মাকরূহ।

শা‘বী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কবর যিয়ারত করতে নিষেধ না করতেন তাহলে আমি আমার মেয়ের কবর যিয়ারত করতাম।

এর বিপরীতে ইবনু হাযম-এর কথা হল, জীবনে একবার হলেও কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।

মহিলাদের কবর যিয়ারত করার ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, নারী-পুরুষ সকলের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়িয। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট। সুস্পষ্ট বর্ণনা থেকে যেমনটি পাওয়া যায়।

ইসলামের প্রথম দিকে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ থাকার কারণ হল যে, তারা ইতোপূর্বে জাহিলী যুগের মধ্যে ছিল। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-আর্চনা করত। তাই কবর যিয়ারত এ আশঙ্কায় নিষেধ করা হল যে, তারা জাহিলী যুগের মতো কবরবাসীর কাছে কিছু প্রার্থনা করে না বসে। এছাড়া এ আশংকাও ছিল যে, যিয়ারতকারী কবরবাসীর ইবাদাতে লিপ্ত হতে পারে, বিপদ দূর করার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করতে পারে, তার কাছে প্রয়োজন মিটানোর জন্য প্রার্থনা করতে পারে। এ সব আশংকায় প্রথম দিকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়। অতঃপর যখন তারা তাওহীদের ব্যাপারে সুদৃঢ় হল, তখন তাদেরকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হল।

আল্লামা বাদরুদ্দীন আয়নী (রহঃ) বলেন, কবর যিয়ারত ইসলামের প্রথম দিকে নিষেধ ছিল। কেননা এ সকল লোক (মুসলিম) কিছু কাল আগে মূর্তি পূজায় অভ্যস্ত ছিল। তারা কবরকে ‘ইবাদাতখানা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অতঃপর যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হল ঈমানের পক্ষে মানুষের অন্তর দৃঢ় হল তখন কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা রহিত করা হল। কেননা কবর যিয়ারত আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেয় আর দুনিয়া ত্যাগী বানিয়ে দেয়।

ইসলামের প্রথম দিকে কুরবানীর গোশ্‌ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) তিন দিনের বেশী রেখে খাওয়া নিষেধ ছিল। এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হল তখন অনেক অসহায় লোক মদীনায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করত। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করণার্থে এ নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছিল।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, তাদের জন্য নিষেধ ছিল কুরবানীর বাকী গোশ্‌ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) তিনদিনের বেশী রেখে খাওয়া। এর দ্বারা তাদের ওপর সদাক্বাকে ওয়াজিব করা হয়েছে। অতঃপর সমস্যা দূর হয়ে গেলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার নিজের মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশেপাশের লোকদেরকেও কাঁদালেন। তারপর বললেন, আমি আমার মায়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবরের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তাই তোমরা কবরের কাছে যাবে। কারণ কবর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: زَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهَ فَقَالَ: «اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَن أسْتَغْفر لَهَا فَلم يُؤذن لي ن وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আব্ওয়া নামক স্থানে স্বীয় মায়ের কবর যিয়ারত করেন। এটা ছিল মক্কা বিজয় সময়কার ঘটনা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মায়ের ক্ববরের পাশে কান্নার কারণ হল যে, তার মায়ের ওপর ‘আযাব হচ্ছিল। এ হাদীসটি কবরস্থানে কান্না করা জায়িযের ব্যাপারে দলীল। অর্থাৎ কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে কান্না করা জায়িয।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলেন, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দিলেন না। এ অনুমতি না দেয়ার কারণ সম্পর্কে ‘উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন মত পেশ করেছেন।

ইবনু মালিক (রহঃ) বলেন, কেননা তাঁর মা ছিলেন কাফির। আর কাফিরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাজায়িয। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এ ব্যাপারে দলীল যে, যারা ইসলামী আদর্শের বাইরে ইন্তিকাল করবে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা অবৈধ তথা নাজায়িয।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা কাফিরদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে নিষেধ করা হয়েছে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে স্বীয় মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দিলেন।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, মুশরিকদের সাথে তাদের জীবদ্দশায় সাক্ষাত করা জায়িয এবং মৃত্যুর পর কবর যিয়ারত করা জায়িয। কেননা যখন মৃত্যুর পর জায়িয তাহলে জীবিত অবস্থায় সাক্ষাত করাতো আরো উত্তম।

আল্লাহ তা‘আলা মাতা-পিতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘দুনিয়াতে তারা দু’জন সন্তানের জন্য উত্তম সাথী।’’ (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১ : ১৫)

গ্রন্থকার বলেন, আমি বলবঃ এ হাদীস এ কথা নির্দেশ করছে যে, তাঁর মা ইসলামের উপর মারা যাননি।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) ও ইবনু মাজাহ স্ব স্ব কিতাবে এ হাদীসকে যে অধ্যায়ের মধ্যে উল্লেখ করেছেন তার নাম করেছেন باب زيارة قبر المشرك অর্থাৎ মুশরিকের কবর যিয়ারত সংক্রান্ত অধ্যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৪-[৩] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গেলে এ দু’আ পড়তে শিখিয়েছেনঃ ’’আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূনা নাসআলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল ’আ-ফিয়াহ্’’ (অর্থাৎ হে কবরবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।)। (মুসলিম)[1]

بَابُ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ

وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে কবর যিয়ারতের নিয়ম-কানুন জানা যায়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কবরস্থানের উদ্দেশে বের হতেন, তখন তিনি সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিতেন অর্থাৎ কবরস্থানে পৌঁছে কি বলতে হবে তা শিক্ষা দিতেন। আর তা হল

 اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الدِّيَارِ... وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিতেন যে, কিভাবে কবরবাসীকে সালাম দিতে হবে। আর এটা এজন্য যে, জাহিলী যুগের লোকেরা আগে নাম বলত এবং পরে নাম বলত।

আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, মৃতের ওপর সালাম দিতে হবে সেভাবে, যেভাবে জীবিত ব্যক্তির ওপর সালাম দেয়া হয়। এ সালাম দু‘আ পাঠের পূর্বে। অর্থাৎ কবর যিয়ারত শুরু হবে সালাম দিয়ে। সালামের ক্ষেত্রে নাম পরে আসবে, সালাম আগে হবে। অর্থাৎ عَلَيْكَ سَّلَامُ اللهِ না হয়ে اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ হবে।

এ ব্যাপারে কুরআন মাজীদে একাধিক স্থানে দলীল পাওয়া যায়। সূরাহ্ হূদ-এর ৭৩ নং আয়াতে রয়েছে যে, رَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكتُهٗ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِ সূরাহ্ আস্ সা-ফ্ফা-ত এর ১৩০ নং আয়াতে রয়েছে سَلَامٌ عَلى اِلْ يَاسِيْنَ

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরবাসীকে اهل الديار বলার কারণ হল যে, আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত ব্যক্তি সাথে তুলনা করে তাদেরকে اهل الديار বলেছেন। অর্থাৎ জীবিতরা যেমন এক সাথে বাস করে, ঠিক তেমনি মৃতরাও কবরস্থানে একত্রে বসবাস করে।

এ হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, কবরবাসীদের মধ্যে মু’মিন ও মুসলিমের জন্য সালাম প্রযোজ্য। যদি এর মধ্যে কোন মুনাফিক্ব থাকে তাহলে তাকে সালাম দেয়া যাবে না।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব অর্থাৎ ইন্তিকালের মাধ্যমে তোমাদের সাথে কবর জগতে মিলিত হব। এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শর্ত যুক্ত করার কারণ হল, এর দ্বারা বারাকাত লাভ করা ও নিজেকে সোপর্দ করা। আর আল্লাহ তা‘আলা انشاء الله (ইনশা-আল্ল-হ) ছাড়া কোন কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব। এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় যে, কবরবাসীকে সালাম দেয়া এবং তাদের জন্য দু‘আ করা উভয়ই মুস্তাহাব কাজ। এ হাদীসটি মুসলিম ছাড়াও মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ কিতাবে বর্ণিত আছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৫-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) মদীনার কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কবরস্থানের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, ’’আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম ইয়া- আহলাল কুবূরি, ইয়াগফিরুল্ল-হু লানা- ওয়ালাকুম, আন্‌তুম সালাফুনা- ওয়ানাহনু বিল আসার’’ (অর্থাৎ হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর সালাম পেশ করছি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের ও তোমাদেরকে মাফ করুন। তোমরা আমাদের পূর্ববর্তী আর আমরা তোমাদের পশ্চাৎগামী)। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورٍ بِالْمَدِينَةِ فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মাধ্যমে উম্মাতের পথপ্রদর্শক ও শিক্ষক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতকে কবর যিয়ারতের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিয়েছেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গেলেন এবং কবরবাসীদের দিকে ফিরে সালাম দিলেন।

আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এদিকে নির্দেশ করছে যে, কবর যিয়ারতকারীদের ক্ববরের দিকে ফিরে সালাম দেয়া এবং তাদের জন্য দু‘আ করার সময় ক্ববরের দিকে ফেরা মুস্তাহাব। সমস্ত মুসলিমদের এর উপরই ‘আমল করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, দু‘আর সময় ক্বিবলামুখী হওয়ার সুন্নাত। যেমনিভাবে সাধারণ দু‘আর ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়।

মৃতদের উদ্দেশে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, তোমরা আমাদের অগ্রে চলে গেছ। যেহেতু তারা মৃত্যুর মাধ্যমে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের পূর্বে চলে যায়, তাই তাদেরকে সালাফ বলা হয়েছে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ونحن بالاثر অর্থাৎ আমরা তোমাদের পশ্চাদপদ অনুরসণ করব। অর্থাৎ আমরা পেছনে অনুসরণকারী হয়ে তোমাদের সাথে মিলিত হব। তোমরা যেমন মৃত্যুবরণ করে কবর জগতে চলে গেছ। সুতরাং আমরাও সে মৃত্যুর মাধ্যমে কবর জগতে তোমাদের সাথে মিলিত হব। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৬-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসতেন, সেদিন শেষ রাতে উঠে তিনি বাক্বী’তে (মদীনার কবরস্থান) চলে যেতেন। (ও স্থানে) তিনি বলতেন,

’’আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম দা-রা ক্বওমিন মু’মিনীন, ওয়া আতা-কুম মা- তূ’ইদূনা গাদান মুআজ্জালূনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লা-হিকূন, আল্ল-হুম্মাগফির লিআহলি বাক্বী’ইল গারক্বদ’’

(অর্থাৎ হে মু’মিনের দল! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদেরকে আগামীকালের (কিয়ামতের (কিয়ামতের)) যে প্রতিশ্রুতি (সাওয়াব অথবা শাস্তি) দেয়া হয়েছিল তা তোমরা কি পেয়ে গেছ? যে ব্যাপারে তোমাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত)। আর নিশ্চয়ই আমরাও আল্লাহ চাইলে তোমাদের সাথে মিলিত হবই। হে আল্লাহ! বাক্বী’ গারক্বদ্বাসীদেরকে মাফ করে দিন!)। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلَّمَا كَانَ لَيْلَتُهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ إِلَى الْبَقِيعِ فَيَقُولُ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَأَتَاكُمْ مَا تُوعِدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأهل بَقِيع الْغَرْقَد» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে শেষ রাতে দু‘আর ফাযীলাত ও কবর যিয়ারতের ফাযীলাত সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শেষাংশে বাক্বী‘তে যেতেন।

আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের উদ্দেশে বাকীতে যেতেন।

কেউ কেউ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যখন তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে রাত্রি যাপন করতেন, তখন রাতের শেষাংশে বাক্বী‘র উদ্দেশে বের হতেন। আর বাক্বী' হল- মদীনাবাসীদের কবরস্থান, যা অত্যন্ত প্রশস্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৭-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কবর যিয়ারতে আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি বলবে,

’’আস্‌সালা-মু ’আলা- আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ারহামুল্ল-হুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না- ওয়াল মুস্‌তা’খিরীনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূন’’

(অর্থাৎ সালাম বর্ষিত হোক মু’মিন মুসলিমের বাসস্থানের অধিবাসীদের প্রতি! আর আল্লাহ আমাদের রহম করুন যারা প্রথমে চলে গেছে আর যারা পরে আসবে তাদের উপর, ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব।)। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَيْفَ أَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ تَعْنِي فِي زِيَارَةِ الْقُبُورِ قَالَ: قُولِي: السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ للاحقون . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কবরবাসীকে সালাম দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জানতে চাইলেন যে, হে আল্লাহর রসূল! আমি কবরস্থানে গিয়ে কিভাবে কবরবাসীকে সালাম প্রদান করব। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- اَلسَّلُامَ عَلى اَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُوْمِنِيْنَ অর্থাৎ সমস্ত মু’মিন মুসলিম ঘরবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এখানে নারীর ওপর পুরুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর যারা মৃত্যু দ্বারা আমাদের আগে কবরবাসী হয়েছে এবং যারা আমাদের পরে হবে তাদের সকলের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা মৃত এবং যারা জীবিত সকলের ওপর আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। এ হাদীস ঐ ব্যক্তির স্বপক্ষে দলীল, যে নারীর অধিকার রক্ষার্থে শর্তসাপেক্ষে তাদের কবর যিয়ারতকে বৈধ বলে থাকেন। অর্থাৎ এ হাদীস মহিলাদের কবর যিয়ারতকে জায়িয করেছে। এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে এবং এটা নাসায়ী ও বায়হাক্বীতেও বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৮-[৭] মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ হাদীসের সানাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমু’আতে নিজ মাতা-পিতা অথবা তাদের দু’জনের বা একজনের কবর যিয়ারত করবে (সেখানে দু’আয়ে মাগফিরাত করবে) তাদের মাফ করে দেয়া হবে। (যিয়ারতকারী মাতা-পিতার সাথে) সদাচরণকারী হিসেবে গণ্য করা হবে। (বায়হাক্বী মুরসাল হাদীস হিসেবে শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেন।)[1]

وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ النُّعْمَانِ يُرْفَعُ الْحَدِيثَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ زَارَ قَبْرَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا فِي كُلِّ جُمُعَةٍ غُفِرَ لَهُ وَكُتِبَ بَرًّا» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان مُرْسلا

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মা-বাবার কবর যিয়ারতের ফাযীলাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান ইবনু বাশীর ছিলেন একজন বিশ্বস্ত তাবি‘ঈ। তিনি সাহাবী রাবীকে মাঝখান থেকে বাদ দিয়ে অথবা অন্য কাউকে বাদ দিয়ে তিনি সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ জাতীয় হাদীসকে হাদীসে মুরসাল বলা হয়।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমু‘আর দিন বা প্রতি সপ্তাহে পিতা-মাতা দু’জনের অথবা এক জনের কবর যিয়ারত করে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অর্থাৎ তার সাগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। জুমু‘আর দিনের হাদীসকে আবূ বাকর (রাঃ) হতে ইবনু ‘আদী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শক্তিশালী করেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, من زار قبر والديه او احدهما يوم الجمعة অর্থাৎ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মা-বাবা দু’জনের অথবা একজনের কবর যিয়ারত করে।

হাদীসে বলা হয়েছে كتب برا অর্থাৎ নেককার হিসেবে লেখা হয়। অর্থাৎ যে প্রতি জুমু‘আর দিনে মা-বাবার কবর যিয়ারত করে তার নাম নেককারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, প্রত্যেক জুমু‘আর দিন মা-বাবার কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব তথা উত্তম সাওয়াবের কাজ। যদিও হাদীসটি মুরসাল। আর এ ব্যাপারে যা কিছু বর্ণিত আছে, তার সবই দুর্বল।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৯-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন) তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কারণ কবর যিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وتذكر الْآخِرَة» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, কবর যিয়ারতের মধ্যে অনেক গুরুত্ব ও ফাযীলাত রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, كنت نهيتكم عن زيارة القبور অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। অর্থাৎ আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশংকা করেছিলাম যে, তোমরা কবর যিয়ারত করতে গিয়ে জাহিলী যুগের কাজ করে ফেল। আর তা হল- কবরবাসীর কাছে ক্রন্দন করা এবং তার কাছে এমন কিছু উল্লেখ করা যা ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় উচিত নয়, এখন তোমাদের মাঝে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তোমরা আল্লাহভীরু হয়েছ। তাই এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর।

এ হাদীসের মধ্যে ناسخ তথা রহিতকারী ও منسوخ তথা যাকে রহিত করা হয়েছে এক সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ কবর যিয়ারতের আদেশ দ্বারা কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞাকে রহিত করা হয়েছে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবর যিয়ারতের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া বিমুখ হয়। অর্থাৎ কবর যিয়ারতের মাধ্যমে দুনিয়া ত্যাগী হয়, দুনিয়ার প্রতি কোন লোভ, লালসা ও মোহ থাকে না। আর আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। ক্ববরের পাশে দাঁড়ালে জীবিতদের চিন্তা আসে এক সময় আমার অবস্থাও এমন হবে। অর্থাৎ ক্ববরে চলে যেতে হবে। এ হাদীসটি ইবনু মাজাহতে উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৭০-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। তিনি আরো বলেছেন, কোন কোন ’আলিমের ধারণা এ হাদীসটি কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ সময়ের। কিন্তু কবর যিয়ারতের অনুমতি দেবার পর পুরুষ মহিলা সকলেই এর মধ্যে গণ্য হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে কোন কোন ’আলিমের মতে, মহিলারা অপেক্ষাকৃত অধৈর্য, অসহিষ্ণু ও কোমলমতি বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সেখানে যাওয়া অপছন্দ করেছেন। তাই কবর যিয়ারতে যাওয়া মহিলাদের জন্য এখনো নিষিদ্ধ। ইমাম তিরমিযীর কথা পূর্ণ হলো।)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لعن زوارات الْقُبُورِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح
وَقَالَ: قَدْ رَأَى بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّ هَذَا كَانَ قبل أَن يرخص النَّبِي فِي زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَلَمَّا رَخَّصَ دَخَلَ فِي رُخْصَتِهِ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّمَا كَرِهَ زِيَارَةَ الْقُبُورِ لِلنِّسَاءِ لِقِلَّةِ صَبْرِهِنَّ وَكَثْرَةِ جَزَعِهِنَّ. تمّ كَلَامه

ব্যাখ্যা: বেশী বেশী কবর যিয়ারতের পরিণতি সম্পর্কে এ হাদীসে আলোকপাত করা হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারীকে লা‘নাত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, অধিক পরিমাণে কবর যিয়ারত করা।

আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ লা‘নাত তাদের জন্য যারা বেশী বেশী কবর যিয়ারত করে। কেননা زوارات শব্দটি আধিক্যতার অর্থ প্রদান করে। তাই এ লা‘নাত ঐ সকল নারীর জন্য যারা বেশী বেশী করে কবর যিয়ারত করে। হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাতে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস হাসান ও সহীহ। তিনি আরো বলেন, কতিপয় ‘আলিম বলেন, এ অভিশাপ ছিল ইসলামের প্রথম দিকে। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। তখন সেটা রহিত হয়ে গেছে।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, বক্তারা দলীল পেশ করে যে, যিয়ারতের ক্ষেত্রে নারীদের সম্পৃক্ততা পুরুষের সাথে ব্যাপকতার ভিত্তিতে।

ইমাম বুখারী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ সহীহুল বুখারীতে মহিলাদের কবর যিয়ারত নাজায়িয বলে প্রমাণ করেছেন। এ সংক্রান্ত হাদীস হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এক মহিলার কাছ থেকে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সে ক্ববরের পাশে বসে ক্রন্দন করছে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর।

আল্লামা বাদরুদ্দীন আয়নী (রহঃ) বলেন, নারীদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করার কারণ হল, তাদের ধৈর্য শক্তি কম এবং তাদের দুঃখ প্রবণতা বেশী অর্থাৎ অল্পতে তারা ভেঙ্গে পড়ে। সর্বোপরি কথা হল যে, নারীদের জন্য কবর যিয়ারত করা বৈধ নয়। সুতরাং যাবতীয় ফিতনাহ্ (ফিতনা) থেকে ইসলামী সমাজকে রক্ষা করতে হলে এর উপর ‘আমল করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৭১-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন সেই ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে আছেন তখন আমি আমার চাদর খুলে রাখতাম। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি তো আমার স্বামী, আর অপরজনও আমার পিতা। কিন্তু যখন ’উমার (রাঃ) কে এখানে তাঁদের সাথে দাফন করা হলো, আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি যখনই ঐ ঘরে প্রবেশ করেছি, ’উমারের কারণে লজ্জায় শরীরে চাদর পেঁচিয়ে রেখেছি। (আহমাদ)[1]

وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: كُنْتُ أَدْخُلُ بَيْتِيَ الَّذِي فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنِّي وَاضِعٌ ثَوْبِي وَأَقُولُ: إِنَّمَا هُوَ زَوْجِي وَأَبِي فَلَمَّا دُفِنَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَعَهُمْ فَوَاللَّهِ مَا دَخَلْتُهُ إِلَّا وَأَنَا مَشْدُودَةٌ عَلَيَّ ثِيَابِي حَيَاء من عمر. رَوَاهُ أَحْمد

ব্যাখ্যা: এ হাদীস মহিলাদের কবরস্থানে প্রবেশ করা জায়িযের দলীল। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সেই ঘরে প্রবেশ করলেন যেই ঘরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পিতা আবূ বাকর (রাঃ)-কে দাফন করা হয়েছিল। প্রবেশ করার পর তিনি উভয় ক্ববরের পাশে আলাদা আলাদাভাবে গেলেন। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের পাশে গিয়ে বললেন, এটা আমার স্বামীর কবর। আবার আবূ বাকর (রাঃ)-এর ক্ববরের পাশে গিয়ে বললেন, এটা আমার পিতার কবর। এরপর ‘উমার (রাঃ)-কে তাদের দু’জনের সাথে দাফন করা হয়।

এ হাদীসের দাবী হল, কবর যিয়ারতের সময় মৃত ব্যক্তিকে অনুরূপ সম্মান করতে হবে যেমন তাকে তার জীবদ্দশায় সম্মান করা হত।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি এ কথার উপর দলীল যে, কবরবাসীকে সম্মান করা ওয়াজিব। প্রত্যেক ক্ববরের কাছে গমন করতে হবে তাদের দুনিয়ায় যে মর্যাদা ছিল তার ধারাবাহিকতার আলোকে। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আগে গেলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের পাশে। তারপর আবূ বাকর-এর ক্ববরের পাশে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। এটা শারী’আতের একটি শক্তিশালী বিষয়। যে ব্যক্তি যাকাতের ফারযিয়্যাতকে অমান্য করবে সে কাফির হয়ে যাবে। যাকাতের লাগবী অর্থ বৃদ্ধি, বারাকাত ও পবিত্র করা। যাকাত আদায় করলে মাল বৃদ্ধি পায় ও মাল পবিত্র হয়। আর যাকাত আদায়কারী গুনাহ থেকে পবিত্র হয়। আর যাকাতের শার’ঈ অর্থ হলো নিসাব পূর্ণ সম্পদে এক বৎসর অতিবাহিত হলে তা ফকীর, মিসকীন ও অন্যান্যদের মাঝে নির্ধারিত পন্থায় আদায় করা। অতঃপর যাকাতের রুকন, কারণ হিকমাত ও শর্ত রয়েছে। তা ফরয হওয়ার কারণ হলো মালের মালিক হওয়া। যাকাতের শর্ত হলো (মালের ক্ষেত্রে) নিসাব পরিমাণ হওয়া, বৎসর পূর্ণ হওয়া এবং (ব্যক্তির ক্ষেত্রে) বালেগ ও স্বাধীন হওয়া। হিকমাত হলো দুনিয়ার কর্তব্য পালন হওয়া এবং আখিরাতের সাওয়াব ও দরজা অর্জন হওয়া। আর গুনাহ হতে পবিত্র হওয়া এবং কৃপণতার দায় থেকে বাঁচা।

প্রকাশ থাকে যে, অধিকাংশ ’উলামাদের মতে যাকাত হিজরতের পর ফরয হয়। তারা দ্বিতীয় হিজরীতে ফরয হওয়ার মত ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ বলেন, হিজরতের পূর্বে ফরয হয়েছে।


১৭৭২-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠাবার সময় বললেন, মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ তাদেরকে এ লক্ষ্যে দীনের প্রতি আহবান করবে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে এই ঘোষণা দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে, মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ: «إِنَّك تَأتي قوما من أهل الْكتاب. فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. فَإِنْ هُمْ أطاعوا لذَلِك. فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ. فَإِنْ هم أطاعوا لذَلِك فأعلمهم أَن الله قد فرض عَلَيْهِم صَدَقَة تُؤْخَذ من أغنيائهم فَترد فِي فُقَرَائِهِمْ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ. فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَين الله حجاب»

ব্যাখ্যা : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবালকে ইয়ামানে বিদায়ী হাজ্জের (হজ্জের/হজের) পূর্বে ১০ হিঃ প্রেরণ করেন। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) তার ‘‘ইসতিয়াব’’ গ্রন্থে বলেছেন, তিনি মু‘আযকে ইয়ামানের জুনদ প্রদেশে ক্বাযীরূপে এ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেন যে, তিনি মানুষদেরকে কুরআন, ইসলামের নিদর্শনাবলী শিক্ষা দিবেন এবং যাকাত আদায়কারীদের থেকে যাকাত গ্রহণ করবেন। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ব্যক্তির মাঝে ইয়ামানের দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তারা হলেন খালিদ বিন সা‘ঈদকে ‘সান্আ’র, মুহাজির বিন আবী উমাইয়্যাহ্-কে ‘কিনদার’, যিয়াদ বিন লাবিদকে ‘হাযরা মাওত’-এর, মু‘আযকে ‘জুনদ’-এর আর আবূ মূসাকে ‘যুবায়দ’, যুম্‘আহ্ আদন ও সাহিল’-এর দায়িত্ব। ইবনু হাজার বলেন, জুনদ-এ অদ্যাবধি মু‘আয-এর একটি প্রসিদ্ধ মাসজিদ রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আযকে মানুষদের সর্বপ্রথম শাহাদাতাইনের দিকে দা‘ওয়াত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তা হলো দীনের মৌলিক বিষয় যা ব্যতীত দীনের অন্যান্য বিষয় শুদ্ধ হবে না।

অতএব যদি কারো ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, সে নাস্তিক তাহলে তাকে উভয়টির শাহাদাহ্ দিতে হবে। আর যদি আস্তিক হয় তাহলে তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের শাহাদাহ্ দিয়ে উভয়টির মাঝে সমন্বয় করতে হবে। সেখানে আহলে কিতাবরা বসবাস করত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে প্রথমে তাওহীদের দিকে আহবান করতে বলেন। এটি গ্রহণ করলে তারপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে বলেন। অতঃপর তাদেরকে যাকাত ফারযের (ফরযের/ফরজের) কথা অবহিত করতে বলেন। আর যাকাত আদায়ের সময় যুলম করতে নিষেধ করেন। কারণ মাযলূমের দু‘আ তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে কবূল হয়। যদিও সে পাপী হয়, কেননা তার  পাপ তার নিজের উপর বর্তাবে।

শাহাদাতায়নের ব্যতীত শারী‘আতের অন্যান্য বিধানগুলোর ক্ষেত্রে কাফিররাও সম্বন্ধিত কিনা এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ বলেছেন, তারা অন্যান্য বিধানের ক্ষেত্রে সম্বন্ধিত নয়। কারণ এখানে প্রথমত তাদের শুধুমাত্র ঈমানের দিকে দাওয়াতের নির্দেশ এসেছে। অতপর ঈমান গ্রহণ করলে অন্যান্য বিধানের দিকে দা‘ওয়াতের নির্দেশ এসেছে। তবে অধিকাংশদের মতে, তারা বিশ্বাস স্থাপন এবং কার্যে প্রতিফলন উভয় দিক থেকে শরীয়াতের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে সম্বন্ধিত। হাদীসে বলা হয়েছে, ধনীদের থেকে যাকাতের মাল গ্রহণ করে তা তাদের দরিদ্রের মাঝে বিতরণ করবে ‘‘এ উক্তির আলোকে উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন যে, এক এলাকার যাকাতের সম্পদ অন্য এলাকায়/দেশে স্থানান্তর করা যাবে কি না? এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ বলেছেন, স্থানান্তর করা যাবে না। যেহেতু হাদীসে ইয়ামানবাসীদের উদ্দেশে এটি বলা হয়েছে যে, তাদের যারা ধনী তাদের থেকে নিয়ে সে এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করবে। আবূ হানীফা, ইমাম বুখারীসহ আরো অনেকের মতে স্থানান্তর করা যাবে। ইমাম মালেক, শাফেয়ী এবং আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর মতে তা স্থানান্তর করা যাবে না। তবে যদি সে এলাকা যাকাত গ্রহণ করার মত কেউ না থাকে। কিংবা স্থানান্তর করাতে অধিক কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে করা যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সোনা রূপার (নিসাব পরিমাণ) মালিক হবে অথচ তার হক (যাকাত) আদায় করবে না তার জন্য কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন (তা দিয়ে) আগুনের পাত বানানো হবে। এগুলোকে জাহান্নামের আগুনে এমনভাবে গরম করা হবে যেন তা আগুনেরই পাত। সে পাত দিয়ে তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। তারপর এ পাত পৃথক করা হবে। আবার আগুনে উত্তপ্ত করে তার শরীরে লাগানো হবে। আর লাগানোর সময়ের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। (এ অবস্থা চলবে) বান্দার (জান্নাত জাহান্নামের) ফায়সালা হওয়া পর্যন্ত।

তারপর তাকে নেয়া হবে জান্নাত অথবা জাহান্নামে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! উটের বিষয়টি (যাকাত না দেবার পরিণাম) কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উটের মালিক যদি এর হক (যাকাত) আদায় না করে- যেদিন উটকে পানি খাওয়ানো হবে সেদিন তাকে দুহানোও তার একটা হক- কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তিকে সমতল ভূমিতে উটের সামনে মুখের উপর উপুড় করে। তার সবগুলো উট গুণে গুণে (আনা হবে) মোটা তাজা একটি বাচ্চাও কম হবে না। এসব উট মালিককে নিজেদের পায়ের নীচে ফেলে পিষতে থাকবে, দাঁত দিয়ে কামড়াবে। এ উটগুলো চলে গেলে, আবার আর একদল উট আসবে। যেদিন এমন ঘটবে, সে দিনের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এমনকি বান্দার হিসাব-নিকাশ শেষ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে।

সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! গরু-ছাগলের যাকাত আদায় না করলে (মালিকদের) কি অবস্থা হবে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি গরু-ছাগলের মালিক হয়ে এর হক (যাকাত) আদায় করে না কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলা হবে। তার সব গরু ও ছাগলকে (ওখানে আনা হবে) একটুও কম-বেশি হবে না। গরু-ছাগলের শিং বাঁকা কিংবা ভঙ্গ হবে না। শিং ছাড়াও কোনটা হবে না। এসব গরু ছাগল শিং দিয়ে মালিককে গুতো মারতে থাকবে, খুর দিয়ে পিষবে। এভাবে একদলের পর আর একদল আসবে। এ সময়ের মেয়াদও হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এর মধ্যে বান্দার হিসাব-নিকাশ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামে তার গন্তব্য দেখতে পাবে।

সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ঘোড়ার অবস্থা কি হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঘোড়া তিন প্রকারের। প্রথমতঃ যা মানুষের জন্য গুনাহের কারণ হয়। দ্বিতীয়তঃ যা মানুষের জন্য পর্দা। আর তৃতীয়তঃ মানুষের জন্য সাওয়াবের কারণ।

গুনাহের কারণ ঘোড়া হলো ঐ মালিকের, যেগুলোকে সে মুসলিমদের ওপর তার গৌরব, অহংকার ও শৌর্যবীর্য দেখাবার জন্য পালন করে। আর যেগুলো মালিক-এর জন্য পর্দা হবে, সেগুলো ঐ ঘোড়া, যে সবের ঘোড়ার মালিক আল্লাহর পথে লালন পালন করে। সেগুলোর পিঠ ও গর্দানের ব্যাপারে আল্লাহর হক ভুলে যায় না। মানুষের জন্য সাওয়াবের কারণ ঘোড়া ব্যক্তির যে মালিক আল্লাহর পথের মুসলিমদের জন্য তা’ পালে। এদেরকে সবুজ মাঠে রাখে। এসব ঘোড়া যখন আসে ও চারণ ভূমিতে সবুজ ঘাস খায়, তখন ওই (ঘাসের সংখ্যার সমান) সাওয়াব তার মালিক-এর জন্য লিখা হয়। এমনকি এদের গোবর ও পেশাবের পরিমাণও তার জন্য সাওয়াব হিসেবে লিখা হয়। সেই ঘোড়া রশি ছিঁড়ে যদি এক বা দু’টি ময়দান দৌড়ে ফিরে, তখন আল্লাহ তা’আলা এদের কদমের চিহ্ন ও গোবরের (যা দৌড়াবার সময় করে) সমান সাওয়াব তার জন্য লিখে দেন। এসব ঘোড়াকে পানি পান করাবার জন্য নদীর কাছে নেয়া হয়, আর এরা নদী হতে পানি পান করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা ঘোড়াগুলোর পান করা পানির পরিমাণ সাওয়াব ওই ব্যক্তির জন্য লিখে দেন। যদি মালিক-এর পানি পান করাবার ইচ্ছা নাও থাকে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! গাধার ব্যাপারে কি হুকুম? তিনি বললেন গাধার ব্যাপারে আমার ওপর কোন হুকুম নাযিল হয়নি। সকল নেক কাজের ব্যাপারে এ আয়াতটিই যথেষ্ট ’’যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ নেক ’আমল করবে তা সে দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ বদ ’আমল করবে তাও সে দেখতে পাবে’’- (সূরাহ্ আয্ যিলযাল ৯৯: ৭-৮)। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وجبينه وظهره كلما بردت أُعِيدَتْ لَهُ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْإِبِلُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلْبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَت لَا يفقد مِنْهَا فصيلا وَاحِدًا تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أولاها رد عَلَيْهِ أخراها فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّار» قيل: يَا رَسُول الله فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ بَقْرٍ وَلَا غَنَمٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ وَلَا جَلْحَاءُ وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطِحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» . قِيلَ: يَا رَسُول الله فالخيل؟ قَالَ: الْخَيل ثَلَاثَةٌ: هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ. فَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الْإِسْلَامِ فَهِيَ لَهُ وِزْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي لَهُ سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللَّهِ فِي ظُهُورِهَا وَلَا رِقَابِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ الله لأهل الْإِسْلَام فِي مرج أَو رَوْضَة فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ الْمَرْجِ أَوِ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلَا تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا وأوراثها حَسَنَاتٍ وَلَا مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَا يُرِيدُ أَنْ يَسْقِيَهَا إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْحُمُرُ؟ قَالَ: مَا أُنْزِلَ عَلَيَّ فِي الْحُمُرِ شَيْءٌ إِلَّا هَذِهِ الْآيَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ (فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ)
الزلزلة. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীস হতে প্রমাণ হয় যে, স্বর্ণ ও রূপা যাকাত আদায় না করে জমা করে রাখলে, উক্ত মাল জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে মালিক-এর ললাটে, পার্শ্বদেশসমূহ এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে। অন্যান্য অঙ্গ থেকে এ তিনটি অঙ্গকে উল্লেখ করার কারণ হল, চেহারায় দাগ দিলে অধিক কদর্য দেখায় আর পার্শ্বদেশ এবং পিঠে দাগ দিলে অধিক ব্যথা অনুভূত হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, কারণ একজন ভিক্ষুক কোন কৃপণের নিকট চাইলে সর্বপ্রথম তার চেহারায় বিরক্তি, অপছন্দের ভাব পরিস্ফুটিত হয়, তার কপালে ভাজ পড়ে। আবার তাই চাইলে তার থেকে পার্শ্বদেশ পরিবর্তন করে। পুনরায় চাইতে গেলে সে তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যায়। এজন্য এ তিনটি অঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্-এ ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াতে এরই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতের অর্থঃ ‘‘হে মু’মিনগণ! অধিকাংশ ‘আলিম ও ধর্মযাজকগণ মানুষের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। আর তারা আল্লাহর রাস্তা হতে (মানুষকে) বাধা দেয়।

যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, (হে নাবী!) আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক এক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।

যেদিন জাহান্নামের আগুনে ঐগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর তা দ্বারা তাদের ললাটসমূহে, পার্শ্বদেশসমূহ এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে, (আর বলা হবে) এটা হচ্ছে ওটাই যা তোমরা নিজেদের জন্যে সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ করো।’

এভাবে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত তার ‘আযাব হতে থাকবে। অতঃপর হয় তার রাস্তা জান্নাত না হয় জাহান্নাম। এভাবে অন্য মালেও একই হুকুম জারি হবে।

হাদীসে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনকে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান বলা হয়েছে যা মূলত কাফিরদের ওপর। আর পাপীদের ওপর তাদের পাপানুপাতে দীর্ঘায়িত হবে। কিন্তু পরিপূর্ণ মু’মিনদের জন্য দিনটি ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সালাতের মতো দীর্ঘ মনে হবে। অর্থাৎ তাদের জন্য নির্দিষ্ট দিনটি কঠিন হবে না যেমনটি কাফিরদের জন্য।

আলওয়ালী আল ‘ইরাক্বী বলেন, مَرَجٌ হল উদ্ভিদ বা ঘাস বিশিষ্ট সেই প্রশস্ত ভূখন্ড যেখানে চতুষ্পদ জন্তু চরে বেড়ায় ইচ্ছামত যাতায়াত করতে পারে। আর رَوْضَةٌ (বাগান) হল অধিক পানি বিশিষ্ট স্থান যেখানে পর্যাপ্ত পানি থাকায় গোলাপ ফুলসহ আরো নানা ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। উভয়টির মাঝে পার্থক্য হল মারাজকে চতুষ্পদ জন্তু চরার জন্য প্রস্ত্তত করা হয় আর رَوْضَةٌ কে মানুষের বিনোদনের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৪-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে ঐ ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করেনি, সে ধন-সম্পদকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন টাকমাথা সাপে পরিণত হবে। এ সাপের দু’ চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে (অর্থাৎ বিষাক্ত সাপ)। এরপর ঐ সাপ গলার মালা হয়ে ব্যক্তির দু’ চোয়াল আঁকড়ে ধরে বলবে, আমিই তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত ধন-সম্পদ। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, অর্থাৎ ’’যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে এটা তাদের জন্য উত্তম বরং তা তাদের জন্য মন্দ। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন অচিরেই যা নিয়ে তারা কৃপণতা করছে তা তাদের গলার বেড়ী করে পরিয়ে দেয়া হবে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৮০) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي بشدقيه - يَقُولُ: أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ . ثُمَّ تَلَا هَذِه الْآيَة: (وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ من فَضله)
إِلَى آخر الْآيَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: যাদের আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দিয়েছেন অথচ যাকাত আদায় করে না, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিবস উক্ত সম্পদ বিষধর সাপে পরিণত হবে। সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান-এর ১৮০ নং আয়াতে এরই অর্থ বহন করে। বাদর (বদর) আদ দিমামীনী বলেন, شُجَاعٌ হল পুরুষ সর্প। কেউ কেউ বলেছেন, শুজা' মরুভূমির এমন সাপ যা লেজের ওপর দন্ডায়মান হয়ে অশ্বারোহী এবং পদাতিক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। আবার কখনো কখনো তা অশ্বারোহীর মাথা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। উক্ত সাপের মাথায় টাক পড়া থাকবে বয়স দীর্ঘ হওয়ার কারণে। কেউ বলেন, তার মাথায় চুল থাকবে না। আর চরম বিষের কারণে মাথার চামড়া বিলীন হয়ে যাবে। তার মাথায় দু’টি নোকতা থাকবে যা মালিকের গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সে তাকে আঁকড়ে ধরে বলবে, ‘‘আমি তোমার মাল। এ কথা বলার উপকারিতা হল তার অনুশোচনা এবং শাস্তি বৃদ্ধি করা, যেহেতু যে বিষয়ের যে কল্যাণের আশা করত তা তার নিকট অকল্যাণ হিসেবে এসেছে। তাই তার অনুশোচনা, চিন্তা বৃদ্ধি পাবে।

মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, সে সাপ থেকে পলায়নরত অবস্থায় যেখানেই যাবে সেখানেই সাপ তার পিছু নিবে। অবশেষে যখন সে দেখবে যে সাপ তার পিছু ছাড়বে না তখন সে তার মুখে হাত প্রবেশ করাবে। ফলে সাপ তার হাতকে চাবাবে যেমনটি উট চাবায়। আর ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় রয়েছে, হাত থেকে শুরু করে শরীর চিবাবে।

সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান এর ১৮০ নং এবং সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্-এর ৩৪ নং আয়াতের মাঝে কোন প্রকার বৈপরীত্য নেই, কারণ এটি খুব করে সম্ভব যে আল্লাহ তার কিছু প্রকারের সম্পদকে বেড়ি বানিয়ে গলায় পরাবেন আর কয়েক প্রকার দিকে দাগ দিবেন। অথবা একবার এই প্রকারের শান্তিত দিবেন আর একবার সেই প্রকারের শাস্তি দিবেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৫-[৪] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির উট, গরু ও ছাগল থাকবে, আর সে এসবের হক (যাকাত) আদায় করবে না। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এসব জন্তু খুব তরতাজা মোটাসোটা করে আনা হবে এবং তারা তাদের পা দিয়ে তাকে পিষবে। তাদের শিং দিয়ে গুতোবে। শেষ দলটি পিষে চলে যাবার পর আবার প্রথম দলটি আসবে হিসাব-নিকাশ হওয়া পর্যন্ত (এভাবে চলতে থাকবে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُونُ لَهُ إِبِلٌ أَوْ بَقَرٌ أَوْ غَنَمٌ لَا يُؤَدِّي حَقَّهَا إِلَّا أَتَى بِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أعظم مَا يكون وَأَسْمَنَهُ تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَنْطِحُهُ بِقُرُونِهَا كُلَّمَا جَازَتْ أُخْرَاهَا رُدَّتْ عَلَيْهِ أُولَاهَا حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاس»

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তির গরু বা ছাগল আছে যার যাকাত আদায় করে না তা নিয়ে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিবসে বেশী বড় ও মোটা হয়ে তার মালিক-কে পায়ের খুর দিয়ে আঘাত করতে থাকবে। যখন অতিক্রম শেষ হবে তখন আবারো প্রথম হতে খুরের আঘাত আরম্ভ করা হবে।

এরূপ শাস্তি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিবস বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। خُفٌّ (খুফ) বলা হয় উটের খুরকে। ظِلْفٌ (যিলফ) বলা হয় গরু, ছাগল এবং হরিণের খুরকে। حَافِرٌ (হা-ফির) বলা হয় ঘোড়া, গাধা এবং খচ্চরের খুরকে। قُرْنٌ (কুরন) বলা হয় গরু এবং ছাগলের খুরকে। আর মানুষের পায়ের পাতাকে বলা হয় قَدَمٌ (ক্বাদাম)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৬-[৫] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকাত আদায়কারী যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায় করতে আসে তখন যেন তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে (যাকাত উসূল করে) ফিরে যায়। আর তোমরাও যেন সন্তুষ্ট ও খুশী থাকো। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا أَتَاكُمُ الْمُصَدِّقُ فَلْيَصْدُرْ عَنْكُمْ وَهُوَ عَنْكُمْ رَاضٍ» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস হতে প্রমাণ হয় যে, যাকাত আদায়কারীকে যাকাত আদায় করার ব্যাপারে পূর্ণ সাহায্য করতে হবে ও তার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। যাতে সে তাদের কাছ থেকে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়। আর আবূ দাঊদ-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! যদিও আদায়কারীরা যুলম করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, যদিও তারা যুলম করে তবুও তাদেরকে খুশি করে বিদায় দাও।

ক্বাযী ‘আয়ায বলেন, মূলত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে নেতার আনুগত্য এবং তার বিরোধিতা না করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, হাদীসের উদ্দেশ্য হল, সৌভাগ্যের ওয়াসিয়্যাত করা, নেতার আনুগত্য করা, তার প্রতি সদ্ব্যবহার করা, মুসলিমদের ঐক্য ধরে রাখা এবং তাদের পারস্পরিক বিষয়ের সংশোধন করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৭-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ক্বওম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাদের যাকাত নিয়ে এলে তিনি বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা স-ল্লি ’আলা- আ-লি ফুলা-ন’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! অমুকের ওপর রহমত বর্ষণ করো)। আমার পিতাও যখন তার নিকট যাকাত নিয়ে এলেন তিনি বললেন, ’’আল্ল-হুম্মা সল্লি ’আলা- আ-লি আবী আওফা’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবূ আওফা ও তার বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করো)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যখন কোন ব্যক্তি তার নিজের যাকাত নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন, তিনি বলতেন, اَللّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ ’’হে আল্লাহ! এ ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষণ করো।’’

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَاهُ قَوْمٌ بِصَدَقَتِهِمْ قَالَ: «اللَّهُمَّ صلى على آل فلَان» . فَأَتَاهُ أبي بِصَدَقَتِهِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ صلى الله على آل أبي أوفى»
وَفِي رِوَايَة: إِذا أَتَى الرجل النَّبِي بِصَدَقَتِهِ قَالَ: «اللَّهُمَّ صلي عَلَيْهِ»

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ক্বওম বা ব্যক্তি যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) নিয়ে এলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য দু‘আ করতেন। যেমন- বর্ণিত হাদীসে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ আওফা-এর পরিবারের জন্য দু‘আ করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু‘আ করতেন সূরাহ্ আত্ তাওবার ১০৩ নং আয়াতের উপর ‘আমল করার জন্য সেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তুমি তাদের মাল হতে যাকাত গ্রহণ কর এবং তাদের জন্য দু‘আ কর। কেননা তোমার দু‘আ তাদের অন্তরের প্রশান্তি।’’

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সদাক্বার মাল গ্রহীতার জন্য মুস্তাহাব হল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দাতার জন্য দু‘আ করা। আহলে যাহের সহ আরো অনেক সূরা আত্ তাওবার ১০৩ নং আয়াতের আলোকে বলেছেন যে দু‘আ করা ওয়াজিব। তবে এ আবশ্যকতাটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট।

হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, নাবীগণ ব্যতীত স্বতন্ত্রভাবে অন্য কোন ব্যক্তির صلاة (সালাত) শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা বৈধ এবং সদাক্বাহ্ (সাদাকা) গ্রহীতা সদাক্বাদাতার জন্য এ দু‘আ করতে পারে। এটি ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর অভিমত। তাদের ভাষ্যমতে এখানে صلاة দ্বারা উদ্দেশ্য দু‘আ, বারাকাত কামনা, সম্মান বা মর্যাদা কামনা নয়। ইমাম বুখারী (রহঃ) ও সাধারণভাবে তা বৈধ বলে মনে করেন। আর ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, নাবী-রসূলগণ ব্যতীত অন্য কারো জন্য স্বতন্ত্রভাবে সালাত আদায় করা বৈধ নয় তবে তাবি‘ঈন বা নাবী-রসূলগণের পরে সকলের উপরে কারো নাম আসলে সেক্ষেত্রে তাদের সালাত আদায় করা জায়িয।

ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেন, পছন্দনীয় অভিমত হল, নাবীগণ ফেরেশতাগণ, নাবী-পত্নীগণ, নাবী-বংশধর, সন্তান-সন্ততি এবং আনুগত্যশীল ব্যক্তিদের ওপর সাধারণভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা যায়। আর নাবীগণ ব্যতীত অন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা অপছন্দনীয়। বিষয়টির সারাংশ হল আল্লাহ এবং আল্লারহ রাসূলের ক্ষেত্রে যে কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য صلاة শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা বৈধ। যেমনটি বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। আর আল্লাহ এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে কারো জন্য صلاة শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা বৈধ নয়। তবে তাব্‘আন (অনুসৃত) জায়িয।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়ের জন্য ’উমার (রাঃ)-কে পাঠালেন। কেউ এসে খবর দিলো যে, ইবনু জামিল, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ আর ’আব্বাস (রাঃ)যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইবনু জামিল এজন্য যাকাত দিতে অস্বীকার করেছেন যে, (প্রথম দিকে) গরীব ছিল। এরপর আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাকে সম্পদশালী করেছেন। আর খালিদ ইবনু ওয়ালীদ-এর ব্যাপার হলো, তোমরা তার ওপর যুলম্ করছ। সে তো তার যুদ্ধসামগ্রী আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিয়েছে (কাজেই তোমরা তার শুধু এ বছরই নয় বরং) এ রকম (আগামী বছর)ও। এরপর থাকে ’আব্বাস-এর বিষয়। তার এ বছরের যাকাত এবং এর সমপরিমাণ আমার দায়িত্বে। অতঃপর তিনি বললেন, হে ’উমার! তুমি কি জানো না কোন ব্যক্তির চাচা তার পিতার মতই। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَن أَبِي هُرَيْرَةَ. قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُمَرَ عَلَى الصَّدَقَةِ. فَقِيلَ: مَنَعَ ابْنُ جَمِيلٍ وَخَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ وَالْعَبَّاسُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا يَنْقِمُ ابْنُ جَمِيلٍ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ فَقِيرًا فَأَغْنَاهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ. وَأَمَّا خَالِدٌ فَإِنَّكُمْ تَظْلِمُونَ خَالِدًا. قَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. وَأَمَّا الْعَبَّاسُ فَهِيَ عَلَيَّ. وَمِثْلُهَا مَعَهَا» . ثُمَّ قَالَ: «يَا عُمَرُ أَمَا شَعَرْتَ أَن عَم الرجل صنوا أَبِيه؟»

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমার (রাঃ)-কে  আমেল হিসেবে ফরয যাকাত আদায় করতে পাঠান। তাঁকে বলা হলো যে, ইবনু জামিল, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ এবং ‘আব্বাস যাকাত আদায় করতে অস্বীকার করেছেন। অথচ তারা সাহাবী।

ইবনু জামিল-এর ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে গরীব ছিল পরে আল্লাহ তাকে ধনী বানিয়েছেন ফলে এর প্রতিশোধ গ্রহণকল্পে সে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু এটি প্রতিশোধ গ্রহণ করার মত কোন বিষয় নয়। অথবা সে মূলত কোন প্রকার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেনি। তাই তার উচিত আল্লাহ তা‘আলা তাকে যা দিয়েছেন তার যাকাত দেয়া এবং নি‘আমাতের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন না করা।

খালিদ-এর ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘সে তার বর্মসমূহ এবং যুদ্ধাস্ত্রগুলো আল্লাহর পথে জমা করে রেখেছে।’’ কয়েকভাবে এ উক্তির ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রথমতঃ যাকাত আদায়কারীগণ খালিদ-এর জমাকৃত বর্ম এবং যুদ্ধাস্ত্রের অর্থের যাকাত চাইলে এই ধারণায় যে তা ব্যবসার জন্য গচ্ছিত আছে যাতে যাকাত আবশ্যক। কিন্তু খালিদ তাদের বললেন, এতে তো যাকাত আবশ্যক নয়। তাই তারা এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বললেন, তোমরাতো তার প্রতি অবিচার করেছো। কারণ সে তো তা জমা করে আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে দিয়েছে। ফলে তাতে যাকাত আবশ্যক হয় না।

দ্বিতীয়তঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ-এর পক্ষ থেকে ওজর পেশ করেছেন এবং প্রত্যুত্তর করেছেন যে, খালিদ-এর ওপর যাকাত আবশ্যক হলে সে তা দিতে অস্বীকার করবে না। কেননা সে তো আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তার বর্ম এবং অস্ত্রগুলো আল্লাহর পথে জমা দিয়ে দিয়েছে যা তার প্রতি আবশ্যক ছিল না।

ফলে কিভাবে সে ফরয সদাক্বাহ্ (সাদাকা) প্রদানে অস্বীকৃতি জানাবে।

আর ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, ‘‘তার যাকাতের জামিন আমি এবং তার সাথে তার সমপরিমাণ এর অর্থ কয়েকটি হতে পারে।’’

প্রথমতঃ ‘আব্বাস (রাঃ)-এর প্রয়োজনের তাকিদে তিনি তার দু’ বছরের যাকাত বিলম্বিত করে নিজে তা আদায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেমনটি আবূ ‘উবায়দাহ্ বলেছেন।

দ্বিতীয়তঃ ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্তমান এবং আগামী দু’ বছরের অগ্রিম সদাক্বাহ্/যাকাত প্রদান করেছেন। ফলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আব্বাস-এর দুই বছরের সদাক্বাহ্ (সাদাকা) যা আমার কাছে রয়েছে আমি তা দিয়ে দিব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৯-[৮] আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের ইবনুল লুত্বিয়াহ্ নামক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার জন্য কর্মকর্তা নিযুক্ত করলেন। সে (যাকাত উসূল করে) মদীনায় ফিরে এসে (মুসলিমদের নিকট) বলতে লাগল, এ পরিমাণ সম্পদ তোমাদের (যাকাত হিসেবে উসূল হয়েছে, তোমরা এর হকদার)। আর এ পরিমাণ সম্পদ তুহফা হিসেবে আমাকে দেয়া হয়েছে (এটা আমার হক)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এসব কথা শুনে) লোকদের উদ্দেশে হামদ ও সানা পড়ে খুতবাহ্ দিলেন। তিনি (খুতবায়) বললেন, তোমাদের কিছু লোককে আমি ওসব কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছি যেসব কাজের জন্য আল্লাহ আমাকে হাকিম বানিয়েছেন। এখন তোমাদের এক ব্যক্তি এসে বলছে, এটা (যাকাত) তোমাদের জন্য, আর এটা হাদিয়্যাহ্। এ হাদিয়্যাহ্ আমাকে দেয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করো, সে ব্যক্তি তার পিতা অথবা মাতার বাড়ীতে বসে রইল না কেন? তখন সে দেখতো (তুহফা দানকারীরা) তাকে তার বাড়ীতেই তুহফা পৌঁছে দিয়ে যেত কিনা?

ঐ মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন। তোমাদের যে ব্যক্তি যে কোন জিনিস তদ্রূপ করবে তা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার গর্দানের উপর বহন করে নিয়ে আসবে। যদি তা উট হয় তাহলে তার আওয়াজ উটের আওয়াজ হবে। যদি তা গরু হয় তাহলে তার আওয়াজ গরুর আওয়াজ হবে। যদি তা বকরী হয় তাহলে বকরীর আওয়াজ হবে। (অর্থাৎ দুনিয়ায় কোন জিনিস অন্যায়ভাবে গ্রহণ করলে, তা কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে কথা বলতে থাকবে)। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দু’ হাত এতো উপরে উঠালেন যে, আমরা তার বগলের নীচের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি মানুষের কাছে কি তা পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি (তোমার কথা) কি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি? (বুখারী, মুসলিম)[1]

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ’’তাকে জিজ্ঞেস করো, সে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার বাড়ীতে বসে থাকল না কেন? তখন সে দেখত তুহফা তার বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে যায় কিনা?’’ এ সম্পর্কে খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এ বাণী এ কথারই দলীল যে, কোন হারাম কাজের জন্য যে জিনিসকে উপায় বা ওয়াসিলা বানানো হয় সে উপায়ে বা ওয়াসিলাও হারাম। আরো বলা যায়, কোন একটি ব্যাপারকে অন্য কোন ব্যাপারের সাথে (যেমন- বেচাকেনা, বিয়ে-শাদী ইত্যাদি) সম্পর্কিত করলে দেখতে হবে, সে ব্যাপারগুলোর কোন পৃথক পৃথক হুকুম এদের এক সাথে সম্পর্কিত হুকুমের সদৃশ কি-না। হলে তা জায়িয। আর না হলে না জায়িয। (শারহুস্ সুন্নাহ্)

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَن أبي حميد السَّاعِدِيّ: اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنَ الأزد يُقَال لَهُ ابْن اللتبية الأتبية عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ: هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِيَ لِي فَخَطَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأثْنى عَلَيْهِ وَقَالَ: أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَسْتَعْمِلُ رِجَالًا مِنْكُمْ عَلَى أُمُور مِمَّا ولاني الله فَيَأْتِي أحدكُم فَيَقُول: هَذَا لكم وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِي فَهَلَّا جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ بَيْتِ أُمِّهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى لَهُ أَمْ لَا؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْهُ شَيْئًا إِلَّا جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى رَقَبَتِهِ إِنْ كَانَ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقْرًا لَهُ خُوَارٌ أَوْ شَاة تَيْعر ثمَّ رفع يَدَيْهِ حَتَّى رَأينَا عفرتي إِبِطَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَل بلغت» . . قَالَ الْخَطَّابِيُّ: وَفِي قَوْلِهِ: «هَلَّا جَلَسَ فِي بَيْتِ أُمِّهِ أَوْ أَبِيهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى إِلَيْهِ أَمْ لَا؟» دَلِيلٌ عَلَى أَنَّ كُلَّ أَمْرٍ يُتَذَرَّعُ بِهِ إِلَى مَحْظُورٍ فَهُوَ مَحْظُورٌ وَكُلُّ دخل فِي الْعُقُودِ يُنْظَرُ هَلْ يَكُونُ حُكْمُهُ عِنْدَ الِانْفِرَادِ كَحُكْمِهِ عِنْدَ الِاقْتِرَانِ أَمْ لَا؟ هَكَذَا فِي شرح السّنة

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় যে, যাকাত আদায় করার সময় কোন প্রকার হাদিয়্যাহ্ গ্রহণ করা জায়িয নয়। প্রকৃতপক্ষে এ হুকুম সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা এরূপ হাদিয়্যাহ্ বা ঘুষ গ্রহণ করবে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে উক্ত হাদিয়্যার মাল কাঁধে করে বহন করবে। উক্ত লোকটি কে ছিলেন তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইয়ামানের আযদ গোত্রের। আবার কেউ কেউ বলেন, আসাদ গোত্রের। কোন কোন বর্ণনায় আছে, বানী আসাদ। কেউ কেউ বলেন, উক্ত গোত্রের নাম আযদও বলা হয় এবং আসাদও বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, তার নাম ইবনু লুতবিয়্যাহ্। হাফিয ইবনু হাজার বলেন যে, আমি তার নাম সম্পর্কে অবহিত হয়নি।

এ হাদীস থেকে কতগুলো উপকারিতা পাওয়া যায়। যথাঃ ১. ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীস থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যাকাত আদায়কারীদের গ্রহণকৃত উপঢৌকন হারাম এবং তা আমানাতের খিয়ানত।

২.  যাকাত আদায়কারী আমানতদার ব্যক্তিকে আত্মসমালোচনা করতে হবে। কেননা এটি তার আমানাতকে সঠিক ভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

৩. যাকাত আদায়কারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকনসমূহ বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত হবে। যাকাত আদায়কারী তার স্বত্বাধিকারী হবে না যদি না নেতা সন্তুষ্ট চিত্তে তা তাকে দেন।

৪. কোন ব্যক্তি পক্ষপাতমূলকভাবে কোন সম্পদ গ্রহণের জন্য যে সব পথ অবলম্বন করে তা বাতিল।

৫. যে ব্যক্তি কোন ব্যাখ্যা জানতে পারবে যা কেউ গ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তার ভুলটি মানুষদের মাঝে বর্ণনা করে দিবে, যাতে তারা এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সতর্ক হতে পারে।

৬. ভুলকারীকে ধমক/শাসন করা বৈধ এবং নেতৃত্ব, আমানাত রক্ষার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যক্তির বিদ্যমানে তার চেয়ে নিচু স্তরের লোক নিয়োগ দেয়া বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৮০-[৯] ’আদী ইবনু ’উমায়রাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাউকে কোন কাজের জন্য (যাকাত ইত্যাদি উসূল করার জন্য) নিয়োগ করলে, সে যদি একটি সূঁচ সমান অথবা এর চেয়ে ছোট বড় কোন জিনিস গোপন করে তা খিয়ানাত হবে। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তা (লাঞ্ছনা সহকারে) আনা হবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَدِيِّ بْنِ عُمَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُم على عمل فَكَتَمَنَا مِخْيَطًا فَمَا فَوْقَهُ كَانَ غُلُولًا يَأْتِي بِهِ يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: যাকাত আদায়কারীদের উচিত হবে যে, আদায়কৃত সকল মাল ছোট হোক আর বড় হোক আদায় করে দিবে। যদি কিছু গোপন করে তবে তা হবে খিয়ানাত ও হারাম।

অত্র হাদীসে যাকাত আদায়কারীদের আমানাত রক্ষার উপর উৎসাহিত করা হয়েছে এবং নগণ্য বস্ত্ত হলেও তার খিয়ানাত করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আর মুসলিমরা সকলেই একমত যে, আমানাতের খিয়ানাত করা হারাম যা কাবীরা গুনাহও বটে। আর কেউ যদি তা করে তাহলে তাকে তা ফেরত দিতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ ১৭৬১ থেকে ১৭৮০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৯৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 86 87 88 89 90 · · · 312 313 314 315 পরের পাতা »