২৬৬৩

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা

২৬৬৩-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে ’পানি পান’ করানো হয় সেখানে এসে পানি চাইলেন। তখন (আমার পিতা) ’আব্বাস (আমার ভাইকে) বললেন, হে ফযল! তোমার মায়ের কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তার কাছ থেকে খাবার পানি নিয়ে আসো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে এখান থেকে পানি পান করাও। আমার পিতা তখন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এতে লোকেরা হাত দেয়। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে এখান থেকেই পানি পান করাও। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখান থেকেই পানি পান করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যমযমের কূপের কাছে গেলেন। তখনও তারা পানি পান করছিলেন। (এ অবস্থা দেখে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কাজ করতে থাকো, কেননা তোমরা নেক কাজে ব্যস্ত আছ। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি লোকেরা তোমাদেরকে পরাভূত করবে- এ আশংকা আমার না থাকতো তাহলে আমি সওয়ারী হতে নেমে এতে রশি নিতাম। (রাবী বলেন) এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের কাঁধের দিকেই ইশারা করলেন। (বুখারী)[1]

بَابٌ خُطْبَةُ يَوْمِ النَّحْرِ وَرَمْىِ أَيَّامِ التَّشْرِيْقِ وَالتَّوْدِيْعِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ إِلَى السِّقَايَةِ فَاسْتَسْقَى. فَقَالَ الْعَبَّاسُ: يَا فَضْلُ اذْهَبْ إِلَى أُمِّكَ فَأْتِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَرَابٍ مِنْ عِنْدِهَا فَقَالَ: «اسْقِنِي» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُمْ يَجْعَلُونَ أَيْدِيَهُمْ فِيهِ قَالَ: «اسْقِنِي» . فَشرب مِنْهُ ثُمَّ أَتَى زَمْزَمَ وَهُمْ يَسْقُونَ وَيَعْمَلُونَ فِيهَا. فَقَالَ: «اعْمَلُوا فَإِنَّكُمْ عَلَى عَمَلٍ صَالِحٍ» . ثُمَّ قَالَ: «لَوْلَا أَنْ تُغْلَبُوا لَنَزَلْتُ حَتَّى أَضَعَ الْحَبْلَ عَلَى هَذِهِ» . وَأَشَارَ إِلَى عَاتِقِهِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم جاء الى السقاية فاستسقى فقال العباس يا فضل اذهب الى امك فات رسول الله صلى الله عليه وسلم بشراب من عندها فقال اسقني فقال يا رسول الله انهم يجعلون ايديهم فيه قال اسقني فشرب منه ثم اتى زمزم وهم يسقون ويعملون فيها فقال اعملوا فانكم على عمل صالح ثم قال لولا ان تغلبوا لنزلت حتى اضع الحبل على هذه واشار الى عاتقه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ جَاءَ إِلَى السِّقَايَةِ) মুজমাল গ্রন্থকার (রহঃ) বলেন, সিক্বায়াহ্ বলা হয় ঐ স্থানকে যেখান থেকে হজ্জের মওসুমে পানীয় সরবরাহ করা হয়। সেকালে কিসমিস ক্রয় করে যমযম কূপের পানির মধ্যে সংমিশ্রণ করে মানুষদেরকে পান করার জন্য পরিবেশন করা হতো। আর জাহিলী যুগ ও ইসলাম উভয় যুগেই ‘আব্বাস তার দায়িত্বে ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সুতরাং এ দায়িত্ব কারো ছিনিয়ে নেয়া ঠিক হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ‘আব্বাস-এর বংশধরদের কেউ জীবিত থাকবেন।

(فَقَالَ الْعَبَّاسُ: يَا فَضْلُ اذْهَبْ إِلٰى أُمِّكَ) ফযল তিনি ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ছেলে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর ভাই আর তার মাতা হলেন উম্মু ফযল লুবাবাহ্ বিনতু হারিস আল হিলালিয়্যাহ্ (রাঃ) আর তিনিই ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এরও মাতা।

(يَجْعَلُونَ أَيْدِيَهُمْ فِيهِ) তারা তাদের হাতগুলো পানীয়ের মধ্যে ডুবিয়ে দিচ্ছে আর অধিকাংশই তাদের হাত থাকতো অপরিষ্কার। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদ ‘ইকরামার সূত্রে ত্ববারানীতে এ ব্যাপারে একটি হাদীস আছে, ‘আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন, ان هذا قد مرت অর্থাৎ- তাদের অপরিষ্কার হাত এখানে দেয়ার কারণে এ পানীয়ও অপরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।

আমি কি আপনাকে আমাদের ঘর থেকে পরিষ্কার পানি এনে দিব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, না বরং আমাকে সেখান থেকেই পানি দিন যেখান থেকে মানুষেরা পান করছে। ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে (১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৩২০, ৩৩৬) য‘ঈফ সনদে একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন সেটা হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল ‘আব্বাস-এর কাছে এসে বললেন, আমাকে পান করাও। তখন আল ‘আব্বাস  বললেন, এই নাবীয মিশ্রিত পানি তো ময়লা হয়ে গেছে আমরা কি আপনাকে দুধ বা মধু পান করতে দিব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, না আমাকে সেখান থেকে পান করাও যেখান থেকে মানুষেরা পান করছে।

হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটিতে অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ

১. অন্যের নিকটে পানীয় অন্বেষণ করা দোষের নয়।

২. কেউ যদি সম্মানের সাথে কোন জিনিস দেয় তাহলে তা ফেরত দেয়া ঠিক নয় তবে যদি সেটা ফেরত দেয়ার মধ্যে ফেরত না দেয়ার চেয়ে বৃহৎ কোন কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে ফেরত দেয়া যাবে। কেননা এ হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য আল ‘আব্বাস যে পানীয় নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন তা তিনি গ্রহণ করেননি বিনয়ীতার খাতিরে তাই তিনি বলেছেন আমাকে সেখান থেকেই পানি পান করাও যেখান থেকে মানুষেরা পান করছে।

৩. পানি পান করানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে বিশেষ করে যমযম কূপের পানি।

৪. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিনয় এবং এ বিষয়ে সাহাবীগণের অনুসরণ।

৫. যেখানে মানুষেরা হাত ডুবিয়ে দিয়েছিল তা অপবিত্র হয়নি কারণ অপবিত্র হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করতেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)