৩৭ সূরাঃ আস-সাফফাত | As-Saffat | ٱلصَّافَّات - আয়াত নং -৮৯ - মাক্কী

৩৭ : ৮৯ فَقَالَ اِنِّیۡ سَقِیۡمٌ ﴿۸۹﴾

তারপর বলল, ‘আমি তো অসুস্থ’। আল-বায়ান

তারপর বলল, ‘‘আমি অসুস্থ।’’ তাইসিরুল

এবং বললঃ আমি অসুস্থ। মুজিবুর রহমান

And said, "Indeed, I am [about to be] ill." Sahih International

৮৯. এবং বললেন, নিশ্চয় আমি অসুস্থ।(১)

(১) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার জীবনে তিনটি মিথ্যা বলেছিলেন বলে যে কথা বলা হয়ে থাকে এটি তার একটি। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে অসুস্থ বলে বোঝানো হয়েছে যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। কারণ, আরবী ভাষায় فعيل এর পদবাচ্য বহুল পরিমাণে ভবিষ্যৎ কালের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্র কুরআনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে (إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ) [সূরা আয-যুমার: ৩০] এর বাহ্যিক অর্থ আপনিও মৃত এবং তারাও মৃত। কিন্তু এখানে এরূপ অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং অর্থ হল, আপনিও মৃত্যুবরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে। এমনিভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম سقيم এর অর্থ নিয়েছিলেন যে, “আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব”। এ কথা বলার কারণ এই যে, মৃত্যুর পূর্বে প্রত্যেক মানুষের অসুস্থ হওয়া স্থির নিশ্চিত।

কোন কোন মুফাস্‌সির বলেন, এতে তার উদ্দেশ্য ছিল মানসিক সংকোচ; যা স্বগোত্রের মুশরিকসুলভ কাণ্ডকীর্তি দেখে তার মনে সৃষ্টি হচ্ছিল। ‘আমার মন খারাপ’ বলেও এ অর্থ অনেকটা ব্যক্ত করা যায়। বলা বাহুল্য, এ বাক্যে ‘মানসিক সংকোচ’ অর্থেরও পুরোপুরি অবকাশ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর একথাটিকে মিথ্যা বা বাস্তববিরোধী বলার জন্য প্রথমে কোন উপায়ে একথা জানা উচিত যে, সে সময় ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কোন প্রকারের কোন কষ্ট ও অসুস্থতা ছিল না এবং তিনি নিছক বাহানা করে একথা বলেছিলেন। যদি এর কোন প্রমাণ না থেকে থাকে, তাহলে অযথা কিসের ভিত্তিতে একে মিথ্যা গণ্য করা হবে?

হতে পারে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তখন বাস্তবিকই কিছুটা অসুস্থ ছিলেন; তবে উৎসবে যোগদানে প্রতিবন্ধক হতে পারে, এমন অসুস্থতা ছিল না। তিনি তার মামুলি অসুস্থতার কথাই এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন, যাতে শ্রোতারা মনে করে নেয় যে, তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কাজেই মেলায় যাওয়া সম্ভবপর নয়। আলেমগণ এটাকেই তাওরিয়াহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যা বাহ্যিক আকার-আকৃতিতে মিথ্যা মনে হয়, কিন্তু বক্তার উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য করলে মিথ্যা হয় না। অর্থাৎ যার বাহ্যিক অৰ্থ বাস্তবের প্রতিকূলে এবং বক্তার উদ্দিষ্ট অর্থ বাস্তবের অনুকূলে। [দেখুন: তাবারী; ফাতহুল কাদীর]

এ ব্যাখ্যা সর্বাধিক যুক্তিযুক্ত এবং সন্তোষজনক কারণ, এক হাদিসে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর উক্তি (فَقَالَ إِنِّي سَقِيمٌ) এর জন্যে كذب (মিথ্যা) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। [বুখারী: ৩৩৫৮] এ হাদীসেরই কোন কোন বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, “এগুলোর মধ্যে কোন মিথ্যা এরূপ নয়; যা আল্লাহর দ্বীনের প্রতিরক্ষা ও সমর্থনে বলা হয়নি”। [তিরমিযী: ৩১৪৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৯) এবং বলল, ‘আমি অসুস্থ।’[1]

[1] তিনি চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন; যেমন অনেকে এরূপ করে থাকে। অথবা নিজ সম্প্রদায় যারা জগতের কাজ-কারবারে তারকারাজির পরিভ্রমণকে প্রভাবশালী মনে করত, তাদেরকে ভুল ধারণা দেওয়ার জন্য এরূপ (হেত্বাভাস ব্যবহার) করেছিলেন। এ ঘটনাটি ঐ দিনের যেদিন তাঁর জাতি  শহর  ছেড়ে বাইরে গিয়ে খুশী ও জাতীয় উৎসব পালন করত। জাতির মানুষ তাঁকেও সাথে যাওয়ার জন্য বলল। কিন্তু ইবরাহীম (আঃ) একাকী হওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন, যাতে তাদের মূর্তির ঝামেলা চুকিয়ে দেওয়া যায়। সুতরাং তিনি এটিকে একটি সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করলেন যে, আগামী কাল সম্প্রদায়ের সমস্ত লোক বাইরে উৎসবে চলে গেলে আমি আমার ইচ্ছা পূরণ করেই ছাড়ব। সুতরাং ওজর পেশ করে তিনি বললেন, ‘আমি অসুস্থ।’ অথবা আকাশের (তারকারাজির) রাশিচক্র বলছে যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। তাঁর এই কথা মিথ্যা ছিল না, কারণ প্রায় সময়ে প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন অসুখ থেকেই থাকে। তাছাড়া সম্প্রদায়ের শিরকী কর্মকান্ড ইবরাহীম (আঃ)-এর মানসিক পীড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যা দেখে তিনি বড় কষ্ট পেতেন। আসলে ইবরাহীম (আঃ) ‘তাওরিয়া’ ব্যবহার করেছিলেন। (তাওরিয়া হল, এমন দ্ব্যর্থবোধক বাক্যে কথা বলা, যার বাহ্যিক অর্থ বাস্তবের প্রতিকূল এবং বক্তার উদ্দিষ্ট অর্থ বাস্তবের অনুকূল হয়।) যা প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা নয়, কিন্তু যার উদ্দেশ্যে বলা হয়, সে বাহ্যিক আকারে ভুল ধারণার শিকার হয়। যার ফলে তিন মিথ্যা কথার যে হাদীস, তাতে এই কথাকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা আম্বিয়ার ৬৩নং আয়াতের টীকায় করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান