নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। আল-বায়ান
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই অস্থির-মনা করে, তাইসিরুল
মানুষতো সৃষ্টি হয়েছে অতিশয় অস্থির চিত্ত রূপে। মুজিবুর রহমান
Indeed, mankind was created anxious: Sahih International
১৯. নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অতিশয় অস্থিরচিত্তরূপে।(১)
(১) هلوع এর শাব্দিক অর্থ ভীষণ লোভী ও অতি ভীরু ব্যক্তি। [কুরতুবী] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এখানে অর্থ নিয়েছেন সেই ব্যক্তি, যে হারাম ধন-সম্পদ লোভ করে। সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এর অর্থ কৃপণ। মুকাতিল বলেন, এর অর্থ সংকীর্ণমনা ব্যক্তি। এসব অর্থ কাছাকাছি। স্বয়ং আল্লাহই কুরআনে এর পরবর্তী দু' আয়াতে এ শব্দের ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। [বাগাভী] এখানে মানুষের খারাপ কর্মকাণ্ড ও স্বভাব উল্লেখ করে বলেন যে, সে “যখন দুঃখ কষ্ট সম্মুখীন হয়, তখন হা-হুতাশ শুরু করে দেয়। পক্ষান্তরে কোন সুখ শান্তি ও আরাম লাভ করে, তখন কৃপণ হয়ে যায়।”। অতঃপর সাধারণ মানুষদের এই বদ-অভ্যাস থেকে সৎকর্মী সালাত আদায়কারী মুমিনদের ব্যতিক্রম প্রকাশ করে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এরূপ সৎকর্ম করে, তারা অতিশয় ভীরু ও লোভী নয়। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৯) মানুষ তো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থিরচিত্তরূপে। [1]
[1] অত্যধিক লোভী এবং বেশী হা-হুতাশকারীকে هَلُوعٌ বলা হয়। কেননা, এমন ব্যক্তিই কৃপণ ও লোভী হয় এবং খুব বেশী হা-হুতাশ করে। পরের আয়াতে তারই গুণ বর্ণিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকন্ঠিত। আল-বায়ান
বিপদ তাকে স্পর্শ করলে সে হয় উৎকণ্ঠিত, তাইসিরুল
যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা হুতাশকারী। মুজিবুর রহমান
When evil touches him, impatient, Sahih International
২০. যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হয় হা-হুতাশকারী।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে তখন সে হয়ে পড়ে অতিশয় কৃপণ। আল-বায়ান
কল্যাণ তাকে স্পর্শ করলে সে হয়ে পড়ে অতি কৃপণ, তাইসিরুল
আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে তখন সে হয় অতি কৃপণ। মুজিবুর রহমান
And when good touches him, withholding [of it], Sahih International
২১. আর যখন কল্যাণ তাকে সম্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) আর যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে হয় অতি কৃপণ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসালাত আদায়কারীগণ ছাড়া, আল-বায়ান
তবে নামায আদায়কারীরা এ রকম নয়, তাইসিরুল
তবে সালাত আদায়কারী ব্যতীত। মুজিবুর রহমান
Except the observers of prayer - Sahih International
২২. তবে সালাত আদায়কারীগণ ছাড়া(১),
(১) আয়াতে সালাত আদায়কারীদের গুণাবলী বৰ্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে সালাত আদায়কারী সর্বদা সালাত প্রতিষ্ঠাকারী। এখানে সালাত প্রতিষ্ঠার অর্থ ইবনে মাসউদ, মাসরুক ও ইবরাহীম নাখায়ী এর মতে, সালাতকে তার ওয়াক্তে ফরয-ওয়াজিব খেয়াল রেখে আদায় করা। কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে সালাত প্রতিষ্ঠার অর্থ, সমগ্ৰ সালাতেই সালাতের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখা; এদিক সেদিক না তোকানো। সাহাবী ওকবা ইবনে আমের বলেন, উদ্দেশ্য এই যে, যে ব্যক্তি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সালাতের দিকেই নিবিষ্ট থাকে এবং ডানে বামে ও আগে পিছে তাকায় না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) অবশ্য নামাযীগণ এর ব্যতিক্রম;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযারা তাদের সালাতের ক্ষেত্রে নিয়মিত। আল-বায়ান
যারা তাদের নামাযে স্থির সংকল্প তাইসিরুল
যারা তাদের সালাতে সদা নিষ্ঠাবান। মুজিবুর রহমান
Those who are constant in their prayer Sahih International
২৩. যারা তাদের সালাতে সর্বদা প্রতিষ্ঠিত(১),
(১) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে প্রবেশ করে এক মহিলা দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলা কে? তিনি বললেন, অমুক (অন্য বর্ণনায় এসেছে, তার নাম ছিল হাওলা বিনতে তুয়াইত) তারপর তিনি তার প্রচুর সালাত আদায়ের কথা বলছিলেন - তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, থাম, তোমরা যা (সব সময়) করতে সক্ষম হবে ততটুকুই নিজের উপর ঠিক করে নিবে। আল্লাহর শপথ, যতক্ষণ তোমরা নিজেরা ক্লান্ত হবে না। ততক্ষণ আল্লাহও দিতে ক্ষান্ত হবেন না।” আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সেই কাজটি সবচেয়ে প্রিয় ছিল যা কেউ সব সময় করে। [বুখারী: ৪৩, মুসলিম: ৭৮৫, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৫১, ২৩১]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা'বান মাস ব্যতীত আর কোন মাসে এত বেশী সাওম পালন করতেন না। তিনি পুরো শা'বান মাসই সাওম পালন করতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা যে কাজ (সর্বদা) করতে সক্ষম হবে তাই করবে: কেননা, তোমরা বিরক্ত হলেও আল্লাহ্ (প্রতিদান প্রদানে) ক্ষান্ত হন না।” (অথবা হাদীসের অর্থ, তোমরা বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ বিরক্ত হন না। তখন বিরক্ত হওয়া আল্লাহর একটি গুণ হিসেবে বিবেচিত হবে, তবে যেভাবে তা তাঁর সম্মানের সাথে উপযোগী সেভাবে তা সাব্যস্ত করতে হবে। [মাজুমু ফাতাওয়া ইবন উসাইমীন: ১/১৭৪]) আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে সালাতই সবচেয়ে প্রিয় ছিল যার আদায়কারী তা সর্বক্ষণ করতে থাকত। যদিও তার পরিমাণ কম হয়। তিনি নিজেও কোন কাজ করলে সেটা সব সময় করতেন।” [বুখারী: ১৯৭০]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) যারা তাদের নামাযে সদা নিষ্ঠাবান,[1]
[1] এ থেকে পরিপূর্ণ মু’মিন ও তাওহীদবাদীকে বুঝানো হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লিখিত চারিত্রিক দুর্বলতা থাকে না। বরং এরা প্রশংসনীয় গুণে গুণান্বিত হয়। ‘নামাযে সদা নিষ্ঠাবান’ কথার মানে হল, তারা নামাযের ব্যাপারে অবহেলা করে না। প্রতিটি নামাযকে তার সঠিক সময়ে বড়ই যত্নের সাথে আদায় করে। কোন ব্যস্ততা তাদেরকে নামায থেকে বিরত রাখতে পারে না এবং দুনিয়ার কোন স্বার্থ তাদেরকে নামায হতে উদাসীন করতে পারে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান