১১১ . আল-মাসাদ (লাহাব)
১১১:৫ فِیۡ جِیۡدِهَا حَبۡلٌ مِّنۡ مَّسَدٍ ﴿۵﴾

তার গলায় পাকানো দড়ি। আল-বায়ান

আর (দুনিয়াতে তার বহনকৃত কাঠ-খড়ির পরিবর্তে জাহান্নামে) তার গলায় শক্ত পাকানো রশি বাঁধা থাকবে। তাইসিরুল

তার গলদেশে খেজুর বাকলের রজ্জু রয়েছে। মুজিবুর রহমান

Around her neck is a rope of [twisted] fiber. Sahih International

৫. তার গলায়(১) পাকানো রশি।(২)

(১) তার গলার জন্য “জীদ” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় গলাকে জীদ বলা হয়। পরবর্তীতে যে গলায় অলংকার পরানো হয়েছে তার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে। [আত-তাহরীর ওয়াত-তানওয়ীর] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব বলেন, সে একটি অতি মূল্যবান হার গলায় পরতো এবং বলতো, লাত ও উযযার কসম, এ হার বিক্রি করে আমি এর মূল্য বাবদ পাওয়া সমস্ত অর্থ মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কাজ করার জন্য ব্যয় করবো। [ইবন কাসীর] এ কারনে জীদ শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাঙ্গার্থে। অর্থাৎ এ অলংকার পরিহিত সুসজ্জিত গলায়, যেখানে পরিহিত হার নিয়ে সে গর্ব করে বেড়ায়, কিয়ামতের দিন সেখানে রশি বাধা হবে। [আত-তাহরীর ওয়াত-তানওয়ীর]

(২) বলা হয়েছে, তার গলায় বাঁধা রশিটি ‘মাসাদ’ ধরনের। ‘মাসাদ’ এর অর্থ নির্ণয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। তার একটি হচ্ছে, খুব মজবুত করে পাকানো রশিকে ‘মাসাদ’ বলা হয়। [বাগাবী] দ্বিতীয় বক্তব্য হচ্ছে, খেজুর গাছের (ডালের) ছাল/আঁশ থেকে তৈরি শক্ত পাকানো খসখসে রশি ‘মাসাদ’ নামে পরিচিত। [মুয়াস্‌সার] এর আরেকটি অর্থ, খেজুরের ডালের গোড়ার দিকের মোটা অংশ থেতলে যে সরু আশ পাওয়া যায় তা দিয়ে পাকানো রশি অথবা উটের চামড়া বা পশম দিয়ে তৈরি রশি। [কুরতুবী] মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এর অর্থ লোহার তারের পাকানো রশি বা লোহার বেড়ি। কোন কোন মুফাসসির বলেন, তার গলায় আগুনের রশি পরানো হবে। তা তাকে তুলে আগুনের প্রান্তে উঠবে। আবার তাকে এর গর্তদেশে নিক্ষেপ করবে। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৫। তার গলদেশে খেজুর আঁশের পাকানো রশি। [1]

[1] جِيدٌ অর্থ হল গর্দান, ঘাড়। আর مَسَد অর্থ হল মজবুত রশি; চাহে তা কোন ঘাস অথবা খেজুরের আঁশ বা ছিলকার অথবা লোহার তার পাকানো হোক; যেমন এক এক মুফাসসির এর এক এক রকম অর্থ বর্ণনা করেছেন। কিছু উলামার মতে, সে দুনিয়াতে ঐ রশি নিজ ঘাড়ে বা গলদেশে ঝুলিয়ে রাখত। কিন্তু সবচেয়ে বেশী সঠিক বলে মনে হয় যে, জাহান্নামে তার গলায় যে বেড়ি হবে, তা হবে লোহার তারের পাকানো রশি। مَسَد শব্দ দ্বারা উপমা দিয়ে রশির মজবুতী ও শক্ত অবস্থার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১২ . আল-ইখলাস
১১২:১ قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ ۚ﴿۱﴾

বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল-বায়ান

বল, তিনি আল্লাহ, এক অদ্বিতীয়, তাইসিরুল

বলঃ তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়। মুজিবুর রহমান

Say, "He is Allah, [who is] One, Sahih International

১. বলুন(১), তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়(২),

(১) বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ তা'আলার বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জওয়াবে এই সূরা নাযিল হয়। [তিরমিযী: ৩৩৬৪, মুসনাদে আহমাদ: ৫/১৩৪, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫৪০] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, মুশরিকরা আরও প্রশ্ন করেছিল- আল্লাহ তা'আলা কিসের তৈরী, স্বর্ণরৌপ্য অথবা অন্য কিছুর? এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে। [আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী: ৬/৩৭০, তাবরানী: মুজামুল আওসাত: ৩/৯৬, মুসনাদে আবি ইয়া'লা: ৬/১৮৩, নং ৩৪৬৮, আদ-দিনাওয়ারী: আল-মুজালাসা ও জাওয়াহিরুল ইলম, ৩/৫২৮, নং ১১৪৫] এখানে ‘বলুন’ শব্দটির মাধ্যমে প্রথমত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ তাকেই প্রশ্ন করা হয়েছিল। আপনার রব কে? তিনি কেমন? আবার তাকেই হুকুম দেয়া হয়েছিল, প্রশ্নের জবাবে আপনি একথা বলুন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিরোধানের পর এ সম্বোধনটি প্রত্যেক মুমিনের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে কথা বলার হুকুম দেয়া হয়েছিল এখন সে কথা প্রত্যেক মুমিনকেই বলতে হবে।

(২) এ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে, তিনি (যার সম্পর্কে তোমরা প্রশ্ন করছে) আল্লাহ, একক অদ্বিতীয়। তাঁর কোন সমকক্ষ, সদৃশ, স্ত্রী, সন্তান, অংশীদার কিছুই নেই। একত্ব তাঁরই মাঝে নিহিত। তাই তিনি পূর্ণতার অধিকারী, অদ্বিতীয়-এক। সুন্দর নামসমূহ, পূর্ণ শ্রেষ্ঠ গুণাবলী এককভাবে শুধুমাত্র তারই। [কুরতুবী, সা’দী]] আর أَحَد শব্দটি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কেননা তিনিই গুণাবলী ও কার্যাবলীতে একমাত্র পরিপূর্ণ সত্তা। [ইবন কাহীর] মোটকথা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে একক, তার কোন সমকক্ষ, শরীক নেই। এ সূরার শেষ আয়াত “আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই” দ্বারা তিনি এর ব্যাখ্যা করেছেন। মূলত সমগ্র কুরআন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত এমনকি সকল নবী-রাসূলদের রিসালাতের আগমন হয়েছিলো এ একত্ব ঘোষণা ও প্রতিষ্ঠার জন্যই। আল্লাহ ব্যতীত কোন হক মাবুদ বা ইলাহ নেই- সমগ্র সৃষ্টিজগতেই রয়েছে এর পরিচয়, আল্লাহর একত্বের পরিচয়। কুরআনে অগণিত আয়াতে এ কথাটির প্রমাণ ও যুক্তি রয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

১। বল, তিনিই আল্লাহ একক (অদ্বিতীয়)।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১২ . আল-ইখলাস
১১২:২ اَللّٰهُ الصَّمَدُ ۚ﴿۲﴾

আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আল-বায়ান

আল্লাহ কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন, সবই তাঁর মুখাপেক্ষী, তাইসিরুল

আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন। মুজিবুর রহমান

Allah, the Eternal Refuge. Sahih International

২. আল্লাহ হচ্ছেন সামাদ(১) (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী);

(১) صمد শব্দের অর্থ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের অনেক উক্তি আছে। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, ইকরামা বলেছেনঃ সামাদ হচ্ছেন এমন এক সত্তা, যার কাছে সবাই তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য পেশ করে থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবু ওয়ায়েল শাকীক ইবনে সালামাহ বলেছেন, তিনি এমন সরদার, নেতা, যার নেতৃত্ব পূর্ণতা লাভ করেছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে সরদার তার নেতৃত্ব, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, ধৈর্য, সংযম, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা তথা শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার সমস্ত গুণাবলিতে সম্পূর্ণ পূর্ণতার অধিকারী তিনি সামাদ। যায়েদ ইবন আসলাম বলেন, এর অর্থ, নেতা। হাসান ও কাতাদা বলেন, এর অর্থ, যিনি তার সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে গেলেও অবশিষ্ট থাকবেন।

হাসান থেকে অন্য বর্ণনায়, তিনি ঐ সত্বা, যিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক, যার কোন পতন নেই। অন্য বর্ণনায় ইকরিমা বলেন, যার থেকে কোন কিছু বের হয়নি এবং যিনি খাবার গ্রহণ করেন না। রবী ইবন আনাস বলেন, যিনি জন্ম গ্ৰহণ করেননি এবং জন্ম দেননি। সম্ভবত তিনি পরবর্তী আয়াতকে এ আয়াতের তাফসীর হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তবে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব, মুজাহিদ, ইবন বুরাইদা, আতা, দাহহাক সহ আরো অনেকে এর অর্থ বলেছেন, যার কোন উদর নেই। শা'বী বলেন, এর অর্থ যিনি খাবার খান না। এবং পানীয় গ্রহণ করেন না। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদাহ বলেন, এর অর্থ, যিনি এমন আলো যা চকচক করে। এ বর্ণনাগুলো ইমাম ইবন জারীর আত-তাবারী, ইবন আবী হাতেম, বাইহাকী, তাবারানী প্রমূখগণ সনদসহ বর্ণনা করেছেন। [দেখুন: তাবারী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

বস্তুত: উপরে বর্ণিত অর্থগুলোর সবই নির্ভুল। এর মানে হচ্ছে, আসল ও প্রকৃত সামাদ হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। সৃষ্টি যদি কোন দিক দিয়ে সামাদ হয়ে থাকে তাহলে অন্য দিক দিয়ে তা সামাদ নয় কারণ তা অবিনশ্বর নয় একদিন তার বিনাশ হবে। কোন কোন সৃষ্টি তার মুখাপেক্ষী হলেও সে নিজেও আবার কারো মুখাপেক্ষী। তার নেতৃত্ব আপেক্ষিক, নিরংকুশ নয়। কারো তুলনায় সে শ্রেষ্ঠতম হলেও তার তুলনায় আবার অন্য কেউ আছে শ্রেষ্ঠতম। কিছু সৃষ্টির কিছু প্রয়োজন সে পূর্ণ করতে পারে। কিন্তু সবার সমস্ত প্রয়োজন পূর্ণ করার ক্ষমতা কোন সৃষ্টির নেই। বিপরীতপক্ষে আল্লাহর সামাদ হবার গুণ অর্থাৎ তাঁর মুখাপেক্ষীহীনতার গুণ সবদিক দিয়েই পরিপূর্ণ। সারা দুনিয়া তাঁর মুখাপেক্ষী তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিস নিজের অস্তিত্ব, স্থায়ীত্ব এবং প্রয়োজন ও অভাব পূরণের জন্য সচেতন ও অবচেতনভাবে তাঁরই শরণাপন্ন হয়। তিনিই তাদের সবার প্রয়োজন পূর্ণ করেন।

তিনি অমর, অজয়, অক্ষয়। তিনি রিযিক দেন, নেন না। সমগ্ৰ বিশ্ব জাহানের ওপর তাঁর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই তিনি “আস-সামাদ।” অর্থাৎ তিনিই একমাত্র সত্তা যিনি অমুখাপেক্ষিতার গুণাবলীর সাথে পুরোপুরি সংযুক্ত। আবার যেহেতু তিনি “আস-সামাদ” তাই তার একাকী ও স্বজনবিহীন হওয়া অপরিহার্য। কারণ এ ধরনের সত্তা একজনই হতে পারেন, যিনি কারো কাছে নিজের অভাব পূরণের জন্য হাত পাতেন না, বরং সবাই নিজেদের অভাব পূরণের জন্য তাঁর মুখাপেক্ষী হয়। দুই বা তার চেয়ে বেশী সত্তা সবার প্রতি অমুখাপেক্ষী ও অনির্ভরশীল এবং সবার প্রয়োজন পূরণকারী হতে পারে না। তাছাড়া তাঁর “আস-সামাদ” হবার কারণে তাঁর একক মাবুদ হবার ব্যাপারটিও অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ মানুষ যার মুখাপেক্ষী হয় তারই ইবাদাত করে। আবার তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, “আস-সামাদ” হবার কারণে এটাও অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ, যে প্রয়োজন পূরণ করার ক্ষমতা ও সামর্থই রাখে না, কোন সচেতন ব্যক্তি তার ইবাদাত করতে পারে না। এভাবে আমরা উপরোক্ত অর্থগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারি।

তাফসীরে জাকারিয়া

২। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। [1]

[1] অর্থাৎ, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১২ . আল-ইখলাস
১১২:৩ لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ ۙ﴿۳﴾

তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আল-বায়ান

তিনি কাউকে জন্ম দেন না, আর তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। তাইসিরুল

তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন, মুজিবুর রহমান

He neither begets nor is born, Sahih International

৩. তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি(১),

(১) যারা আল্লাহর বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, এটা তাদের জওয়াব। সন্তান প্ৰজনন সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য- স্রষ্টার নয়। অতএব, তিনি কারও সন্তান নন এবং তাঁর কোন সন্তান নেই। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, “আদম সন্তান আমার উপর মিথ্যারোপ করে অথচ এটা তার জন্য উচিত নয়। আর আমাকে গালি দেয়, এটাও তার জন্য উচিত নয়। তার মিথ্যারোপ হচ্ছে, সে বলে আমাকে যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন সেভাবে তিনি কখনও আমাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন না। অথচ দ্বিতীয় সৃষ্টি প্রথম সৃষ্টির চেয়ে কোনভাবেই কঠিন নয়। আর আমাকে গালি দেয়ার ব্যাপারটি হলো, সে বলে আল্লাহ সন্তান গ্ৰহণ করেছেন। অথচ আমি একক, সামাদ, জন্মগ্রহণ করিনি এবং কাউকে জন্মও দেইনি। আর কেউই আমার সমকক্ষ নেই।” [বুখারী: ৪৯৭৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

৩। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন। [1]

[1] অর্থাৎ, জনক নন এবং জাতকও নন। তাঁর থেকে কিছু উদ্ভূত নয় এবং তিনিও কিছু থেকে উদ্ভূত নন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১২ . আল-ইখলাস
১১২:৪ وَ لَمۡ یَكُنۡ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ ﴿۴﴾

আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। আল-বায়ান

তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়। তাইসিরুল

এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই। মুজিবুর রহমান

Nor is there to Him any equivalent." Sahih International

৪. এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।(১)

(১) মূলে বলা হয়েছে ‘কুফু’। এর মানে হচ্ছে, নজীর, সদৃশ, সমান, সমমর্যাদা সম্পন্ন ও সমতুল্য। আয়াতের মানে হচ্ছে, সারা বিশ্ব-জাহানে আল্লাহর সমকক্ষ অথবা তাঁর সমমর্যাদাসম্পন্ন কিংবা নিজের গুণাবলী, কর্ম ও ক্ষমতার ব্যাপারে তাঁর সমান পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে এমন কেউ কোন দিন ছিল না এবং কোন দিন হতেও পারবে না। এবং আকার-আকৃতিতেও কেউ তাঁর সাথে সামঞ্জস্য রাখে না। এক হাদীসে এসেছে, বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন এক লোক সালাত আদায় করছে এবং বলছে, اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ بِأَنِّى أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ الَّذِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِى لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, এ লোকটি আল্লাহকে তাঁর এমন মহান নামে ডাকল যার অসীলায় চাইলে তিনি প্ৰদান করেন। আর যার দ্বারা দোআ করলে তিনি কবুল করেন” [আবু দাউদ: ১৪৯৩, তিরমিযী: ৩৪৭৫, ইবনে মাজহ: ৩৮৫৭, মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৫০]

মুশরিকরা প্রতি যুগে মাবুদদের ব্যাপারে এ ধারণা পোষণ করে এসেছে যে, মানুষের মতো তাদেরও একটি জাতি বা শ্রেণী আছে। তার সদস্য সংখ্যাও অনেক। তাদের মধ্যে বিয়ে-শাদী এবং বংশ বিস্তারের কাজও চলে। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেও এ জাহেলী ধারণা মুক্ত রাখেনি। তাঁর জন্য সন্তান সন্ততিও ঠিক করে নিয়েছে। তারা ফেরেশতাদেরকে মহান আল্লাহর কন্যা গণ্য করতো। যদিও তাদের কেউ কাউকে আল্লাহর পিতা গণ্য করার সাহস করেনি। কিন্তু তারা তাদের কোন কোন ব্যক্তি বা নবীকে আল্লাহর সন্তান মনে করতে দ্বিধা করেনি। এ সবের উত্তরেই এ সূরায় বলা হয়েছে, তিনি কাউকে জন্ম দেননি। আর তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। যদিও মহান আল্লাহকে “আহাদ” ও “আস-সামাদ” বললে এসব উদ্ভট ধারণা-কল্পনার মুলে কুঠারাঘাত করা হয়, তবুও এরপর “না তাঁর কোন সন্তান আছে, না তিনি কারো সন্তান” একথা বলায় এ ব্যাপারে আর কোন প্রকার সংশয় সন্দেহের অবকাশই থাকে না।

তারপর যেহেতু আল্লাহর মহান সত্তা সম্পর্কে এ ধরনের ধারণাকল্পনা শিরকের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর অন্তর্ভুক্ত, তাই মহান আল্লাহ শুধুমাত্র সূরা ইখলাসেই এগুলোর দ্ব্যর্থহীন ও চূড়ান্ত প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। এভাবে লোকেরা সত্যকে পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ নীচের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করা যেতে পারে, “আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র ইলাহ। কেউ তাঁর পুত্র হবে, এ অবস্থা থেকে তিনি মুক্ত-পাক-পবিত্র। যা কিছু, আকাশসমূহের মধ্যে এবং যা কিছু যমীনের মধ্যে আছে, সবই তার মালিকানাধীন।” [সূরা আন-নিসা: ১৭১] “জেনে রাখো, এরা যে বলছে আল্লাহর সন্তান আছে, এটা এদের নিজেদের মনগড়া কথা। আসলে এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা।” [সূরা আস-সাফফাত: ১৫১–১৫২] “তারা আল্লাহ ও জিনদের মধ্যে বংশীয় সম্পর্কে তৈরি করে নিয়েছে অথচ জিনেরা ভালো করেই জানে এরা (অপরাধী হিসেবে) উপস্থাপিত হবে।” [সূরা আস-সাফফাত: ১৫৮] “লোকেরা তার বান্দাদের মধ্য থেকে কাউকে তার অংশ বনিয়ে ফেলেছে। আসলে মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।” [সূরা আয-যুখরুফ: ১৫]

“আর লোকেরা জিনদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছে। অথচ তিনি তাদের স্রষ্টা। আর তারা না জেনে বুঝে তার জন্য পুত্ৰ-কণ্যা বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তারা যে সমস্ত কথা বলে তা থেকে তিনি মুক্ত ও পবিত্র এবং তার ঊর্ধ্বে তিনি অবস্থান করছেন। তিনি তো আকাশসমূহ ও পৃথিবীর নির্মাতা। তাঁর পুত্র কেমন করে হতে পারে যখন তাঁর কোন সঙ্গিনী নেই? তিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আল-আন’আম: ১০০–১০১] “আর তারা বললো, দয়াময় আল্লাহ কাউকে পুত্ৰ বানিয়েছেন। তিনি পাক-পবিত্র। বরং (যাদেরকে এরা তাঁর সন্তান বলছে) তারা এমন সব বান্দা যাদেরকে মৰ্যদা দান করা হয়েছে।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ২৬]

“লোকেরা বলে দিয়েছে, আল্লাহ কাউকে পুত্র বানিয়েছেন আল্লাহ পাক-পবিত্ৰ! তিনি তো অমুখাপেক্ষী। আকাশসমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তার মালিকানাধীন। এ বক্তব্যের সপক্ষে তোমাদের প্রমাণ কি? তোমরা কি আল্লাহর সম্পর্কে এমন সব কথা বলছো, যা তোমরা জানো না?” [সূরা ইউনুস: ৬৮] “আর হে নবী! বলে দিন। সেই আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা যিনি না কাউকে পুত্র বানিয়েছেন না বাদশাহীতে কেউ তাঁর শরীক আর না তিনি অক্ষম, যার ফলে কেউ হবে তাঁর পৃষ্ঠপোষক।” [সূরা আল-ইসরা: ১১১] যারা আল্লাহর জন্য সন্তান গ্রহণ করার কথা বলে, এ আয়াতগুলোতে সর্বতোভাবে তাদের এহেন আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিবাদ করা হয়েছে। এ আয়াতগুলো এবং এ বিষয়বস্তু সম্বলিত অন্য যে সমস্ত আয়াত কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়, সেগুলো সূরা ইখলাসের অতি চমৎকার ব্যাখ্যা।

তাফসীরে জাকারিয়া

৪। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ­ই নেই। [1]

[1] কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়; না তাঁর সত্তায়, না তাঁর গুণাবলীতে এবং না তাঁর কর্মাবলীতে। ‘‘তাঁর মত কোন কিছুই নেই।’’ (সূরা শুরা ১১ নং আয়াত)

হাদীসে ক্বুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ আমাকে গালি দেয়; অর্থাৎ, আমার সন্তান আছে বলে। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে না জন্ম দিয়েছি; না কারো হতে জন্ম নিয়েছি। আর না কেউ আমার সমতুল্য আছে। (সহীহ বুখারী সূরা ইখলাসের তফসীর অধ্যায়।)

এই সূরা ঐ সকল লোকদের বিশ্বাস খন্ডন করে, যারা একাধিক উপাস্যে বিশ্বাসী, যারা মনে করে আল্লাহর সন্তান আছে, যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক স্থাপন করে এবং যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১৩ . আল-ফালাক
১১৩:১ قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ ۙ﴿۱﴾

বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, আল-বায়ান

বল, ‘আমি আশ্রয় চাচ্ছি সকাল বেলার রব-এর, তাইসিরুল

বলঃ আমি আশ্রয় চাচ্ছি ঊষার স্রষ্টার। মুজিবুর রহমান

Say, "I seek refuge in the Lord of daybreak Sahih International

১. বলুন(১), আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি(২) ঊষার রবের(৩)

(১) জনৈক ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরীল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইয়াহুদী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গ্রন্থি ছিল। তিনি গ্রন্থিগুলো খুলে দেয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন। জিবরীল ইয়াহুদীর নাম বলে দিয়েছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে চিনতেন। কিন্তু তিনি আজীবন এই ইয়াহুদীকে কিছু বলেননি, এমনকি তার উপস্থিতিতে মুখমণ্ডল কোনরূপ অভিযোগের চিহ্নও প্রকাশ করেননি। কপটবিশ্বাসী হওয়ার কারণে ইয়াহুদী রীতিমত দরবারে হাযির হত। [নাসায়ী: আল-কুবরা, ৩৫৪৩, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩৬৭]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর জনৈক ইয়াহুদী জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বললেন, আমার রোগটা কি, আল্লাহ তা’আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল; একজন শিয়রের কাছে এবং অন্যজন পায়ের কাছে বসল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তার অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্ৰস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করল? অন্যজন বলল, লাবীদ ইবন আসাম (বনু যুরাইকের এক ইহুদী মুনাফিক ব্যক্তি)। আবার প্রশ্ন হল: কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, তা কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘যরওয়ান’ কূপে একটি পাথরের নীচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে কূপে গেলেন এবং বললেন, স্বপ্নে আমাকে সেই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর বস্তুটি সেখান থেকে বের করে আনলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনি ঘোষণা করলেন না কেন? (যে, অমুক ব্যক্তি আমার উপর জাদু করেছে)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে রোগমুক্ত করেছেন। আর মানুষের মাঝে প্রতিক্রিয়া হোক, তা আমি চাইনি। [বুখারী: ৫৭৬৫]

তবে এটা মনে রাখা জরুরী যে, জাদুগ্ৰস্ত হওয়া নবুওয়তের পরিপন্থী নয়। যারা জাদুর স্বরূপ সম্পর্কে অবগত নয়, তারা বিস্মিত হয় যে, আল্লাহর রাসূলের উপর জাদু কিরূপে ক্রিয়াশীল হতে পারে। এখানে এতটুকু জানা জরুরী যে, জাদুর ক্রিয়াও অগ্নি, পানি ইত্যাদি স্বাভাবিক কারণাদির ক্রিয়ার ন্যায়। অগ্নি দহন করে অথবা উত্তপ্ত করে, পানি ঠাণ্ডা করে এবং কোন কোন কারণের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বর আনে। এগুলো সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। রাসূলগণ এগুলোর ঊর্ধ্বে নন। জাদুর প্রতিক্রিয়াও এমনি ধরনের একটি ব্যাপার। কাজেই তাদের জাদুগ্ৰস্ত হওয়া অবাস্তব নয়। [আদওয়াউল বায়ান]

(২) মুমিন ব্যক্তি কোন জিনিসের ভীতি অনুভব করলে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে। মারইয়াম সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন অকস্মাৎ নির্জনে আল্লাহর ফেরেশতা একজন মানুষের বেশ ধরে তার কাছে এলেন (তিনি তাকে আল্লাহর ফেরেশতা বলে জানতেন না) তখন তিনি বললেন, “যদি তোমার আল্লাহর ভয় থাকে, তাহলে আমি দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।”। [সূরা মারইয়াম: ১৮] নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে আবেদন জানালেন, “হে আমার রব! যে জিনিস সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই তেমন কোন জিনিস আপনার কাছে চাওয়া থেকে আমি আপনার পানাহ চাই।” [সূরা হূদ: ৪৭] মূসা আলাইহিস সালাম যখন বনী ইসরাঈলদের গাভী যবেহ করার হুকুম দিলেন এবং তারা বলল, আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন? তখন তিনি তাদের জবাবে বললেন, “আমি মুর্খ-অজ্ঞদের মতো কথা বলা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৬৭] হাদীস গ্রন্থগুলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেসব “তাআউউয” উদ্ধৃত হয়েছে সবগুলো তাও অনুরূপ আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়েছে। যেমন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো'আর সময় বলতেন, হে আল্লাহ! আমি যেসব কাজ করেছি এবং যেসব কাজ করিনি তার অনিষ্ট থেকে তোমার পানাহ চাচ্ছি। [মুসলিম: ২৭১৬]

অর্থাৎ কোন খারাপ কাজ করে থাকলে তার খারাপ ফল থেকে পানাহ চাই এবং কোন কাজ করা উচিত ছিল কিন্তু তা আমি করিনি, যদি এমন ব্যাপার ঘটে থাকে তাহলে তার অনিষ্ট থেকেও তোমার পানাহ চাই। অথবা যে কাজ করা উচিত নয় কিন্তু তা আমি কখনো করে ফেলবো, এমন সম্ভবনা থাকলে তা থেকেও তোমার আশ্রয় চাই। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দো'আ ছিল, “হে আল্লাহ! তোমার যে নিয়ামত আমি লাভ করেছি তা যাতে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে না নেয়া হয়, তোমার কাছ থেকে যে নিরাপত্তা আমি লাভ করেছি তা থেকে যাতে আমাকে বঞ্চিত না করা হয়, তোমার গযব যাতে অকস্মাৎ আমার ওপর আপতিত না হয় সে জন্য এবং তোমার সব ধরনের অসন্তুষ্টি থেকে আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি”। [মুসলিম: ২৭৩৯]

অনুরূপভাবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলতেন, “যে ইলম উপকারী নয়, যে হৃদয় তোমার ভয়ে ভীত নয়, যে নফস কখনো তৃপ্তি লাভ করে না এবং যে দো'আ কবুল করা হয় না, আমি সেসব থেকে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি”। [মুসলিম: ২৭২২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে যেভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন তা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, প্রতিটি বিপদ আপদ ও অনিষ্টকারিতার মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াটাই মুমিনের কাজ, অন্য কারো কাছে নয়। তাছাড়া আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও অনির্ভর হয়ে নিজের ওপর ভরসা করাও তার কাজ নয়।

(৩) “ফালাক” শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে ফাটানো, চিরে ফেলা বা ভেদ করা। অন্য এক আয়াতে আল্লাহর গুণ (فَالِقُ الْإِصْبَاحِ) [সূরা আল-আন’আম: ৯৬] বর্ণনা করা হয়েছে। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। একটি হল, প্রভাত; রাতের অন্ধকার চিরে প্রভাতের শুভ্রতা বেরিয়ে আসার কারণে এরূপ নামকরণ। কুরআন ব্যাখ্যাদাতাদের বিপুল সংখ্যক অংশ শব্দটির এ অর্থই গ্ৰহণ করেছেন। ইবনে কাসীর বলেন, এটিই বিশুদ্ধমত, ইমাম বুখারী এ মতটি অবলম্বন করেছেন। “ফালাক” শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে সৃষ্টি। [ইবন কাসীর, তাবারী] আবার কোন কোন মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে ফালাক বলতে আল্লাহ যেসব বস্তু একটি অপরটি থেকে চিরে বা ভেদ করে বের করেছেন, তা সবই উদ্দেশ্য। যেমন, দিবস বের হয় রাতের আবরণ চিরে; বীজের বুক চিরে সব ধরনের গাছ ও উদ্ভিদের অংকুর বের হয়; জমীন থেকে তরু-লতা, ফসল ইত্যাদি বের করা হয়; সব ধরনের প্রাণী মায়ের গর্ভাশয় চিরে অথবা ডিম ফুটে কিংবা অন্য কোন আবরণ ভেদ করে বের হয়; বৃষ্টির ধারা মেঘের স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে নামে। ইমাম তাবারী বলেন, আল্লাহ এখানে আয়াতকে অনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, নির্দিষ্ট কোন অর্থে বেধে দেননি। তাই এখানে ফালাক বলতে যা বুঝায় তার সবই উদ্দেশ্য হবে। [আদওয়াউল বায়ান, তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

১। বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার প্রতিপালকের কাছে।[1]

[1] الفَلَق এর সহীহ অর্থ হল, ঊষা বা প্রভাতকাল। এখানে বিশেষ করে ‘ঊষার প্রতিপালক’ এই জন্য বলা হয়েছে যে, যেমন আল্লাহ তাআলা রাতের অন্ধকারকে দূরীভূত করে দিনের উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে পারেন, তেমনি তিনি ভয় ও আতঙ্ক দূর করে আশ্রয় প্রার্থীকে নিরাপত্তা দান করতে পারেন। অথবা মানুষ যেমন রাত্রে এই অপেক্ষা করে যে, সকালের উজ্জ্বলতা এসে উপস্থিত হবে, ঠিক তেমনিভাবে ভীত মানুষ আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে (নিরাপত্তা লাভে) সফলতার প্রভাত উদয়ের আশায় থাকে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১৩ . আল-ফালাক
১১৩:২ مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ ۙ﴿۲﴾

তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আল-বায়ান

তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, তাইসিরুল

তিনি যা সৃষ্টি করেছেন উহার অনিষ্টতা হতে। মুজিবুর রহমান

From the evil of that which He created Sahih International

২. তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে(১),

(১) আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রাহেমাহুল্লাহ বলেন, شر শব্দটি দু'প্রকার বিষয়বস্তুকে শামিল করে- (এক) প্রত্যক্ষ অনিষ্ট ও বিপদ, যা দ্বারা মানুষ সরাসরি কষ্ট পায়, (দুই) যা মুসীবত ও বিপদাপদের কারণ হয়ে থাকে, যেমন কুফর ও শির্ক। কুরআন ও হাদীসে যেসব বস্তু থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা আছে, সেগুলো এই প্রকারদ্বয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেগুলো হয় নিজেই বিপদ, না হয় কোন বিপদের কারণ।

এখানে লক্ষণীয় যে, আয়াতে বলা হয়েছে, “তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।” এ বাক্যে অনিষ্টকারিতা সৃষ্টির ব্যাপারটিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা হয়নি। বরং সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। আর অনিষ্টকারিতাকে সম্পর্কিত করা হয়েছে সৃষ্টির সাথে। অর্থাৎ একথা বলা হয়নি যে, আল্লাহ যে অনিষ্টকারিতাসমূহ সৃষ্টি করেছেন সেগুলো থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। এ থেকে জানা যায়, মহান আল্লাহ কোন সৃষ্টিকে অনিষ্টকারিতার জন্য সৃষ্টি করেননি। বরং তাঁর প্রত্যেকটি কাজ কল্যাণকর এবং কোন না কোন কল্যাণমূলক প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যই হয়ে থাকে। তবে সৃষ্টির মধ্যে তিনি যেসব গুণ সমাহিত করে রেখেছেন, যেগুলো তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজন, সেগুলো থেকে অনেক সময় এবং অনেক ধরনের সৃষ্টি থেকে প্রায়ই অনিষ্টকারিতার প্রকাশ ঘটে। [বাদায়ে'উল ফাওয়ায়িদ: ২/৪৩৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

২। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট হতে। [1]

[1] এটি একটি ব্যাপকার্থবোধক বাক্য। এতে শয়তান ও তার বংশধর, জাহান্নাম এবং ঐ সমস্ত জিনিস হতে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে, যার দ্বারা মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১৩ . আল-ফালাক
১১৩:৩ وَ مِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ۙ﴿۳﴾

আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, আল-বায়ান

আর অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তাইসিরুল

অনিষ্টতা হতে রাতের, যখন ওটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। মুজিবুর রহমান

And from the evil of darkness when it settles Sahih International

৩. আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়(১),

(১) পূর্বোক্ত আয়াতের ভাষায় সমগ্র সৃষ্টির অনিষ্টই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই আশ্রয় গ্রহণের জন্যে এ বাক্যটিই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু এস্থলে আরও তিনটি বিষয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রায়ই বিপদ ও মুসীবতের কারণ হয়ে থাকে। প্রথমে বলা হয়েছে, (وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ) এখানে غسق শব্দের অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া। কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ নিয়েছেন রাত্রি। وقب এর অর্থ অন্ধকার পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পাওয়া বা ছেয়ে যাওয়া। আয়াতের অর্থ এই যে, আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তার অন্ধকার গভীর হয়। রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে বিশেষ করে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দেবার কারণ হচ্ছে এই যে, রাত্ৰিবেলায় জিন, শয়তান, ইতরপ্রাণী কীট-পতঙ্গ ও চোর-ডাকাত বিচরণ করে এবং অপকার করতে পারে। তাই রাতের বেলা যেসব অনিষ্টকারিতা ও বিপদ-আপদ নাযিল হয় সেগুলো থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান, সা’দী]

সহীহ হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এক রাতে আকাশে চাঁদ ঝলমল করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে তার দিকে ইশারা করে বললেন, আল্লাহর কাছে পানাহ চাও: هٰذَا الغَاسِقُ إذا وَقَبَ অর্থাৎ এ হচ্ছে সেই গাসেক ইযা ওয়াকাব [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৬১, তিরমিযী: ৩৩৬৬]। চাঁদের উদয় যেহেতু রাতের বেলায়ই হয়ে থাকে এবং দিনের বেলা চাঁদ আকাশের গায়ে থাকলেও উজ্জ্বল থাকে না, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্তির অর্থ হচ্ছে এর (অর্থাৎ চাঁদের) আগমনের সময় অর্থাৎ রাত থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাও। [ইবন কাসীর]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন সূর্য ডুবে যায়, তখন শয়তানরা সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই শিশুদেরকে তখন ঘরের মধ্যে রাখো এবং নিজেদের গৃহপালিত পশুগুলোও বেঁধে রাখে। যতক্ষণ রাতের আধার খতম না হয়ে যায়৷” [বুখারী: ৩২৮০, ৩৩১৬, মুসলিম: ২০১২]।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩। অনিষ্ট হতে রাত্রির, যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। [1]

[1] রাতের অন্ধকারেই হিংস্র জন্তু, ক্ষতিকর প্রাণী ও পোকা-মাকড়; অনুরূপভাবে অপরাধপ্রবণ হিংস্র মানুষ নিজ নিজ জঘন্য ইচ্ছা পূরণের আশা নিয়ে বাসা হতে বের হয়। এই বাক্য দ্বারা সে সকল অনিষ্টকর জীব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।

 غَاسِق শব্দের অর্থ হল রাত্রিকাল এবং وَقَب শব্দের অর্থ হল প্রবেশ করে, ছেয়ে যায় প্রভৃতি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১৩ . আল-ফালাক
১১৩:৪ وَ مِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الۡعُقَدِ ۙ﴿۴﴾

আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, আল-বায়ান

এবং (জাদু করার উদ্দেশে) গিরায় ফুৎকারকারিণীদের অনিষ্ট হতে, তাইসিরুল

এবং ঐ সব নারীর অনিষ্টতা হতে যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়, মুজিবুর রহমান

And from the evil of the blowers in knots Sahih International

৪. আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুক দেয়(১),

(১) দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, (وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ) এখানে نفث এর অর্থ ফুঁ দেয়া। عُقَد শব্দটি عقدة এর বহুবচন। অর্থ গ্রন্থি। যারা জাদু করে, তারা ডোর ইত্যাদিতে গিরা লাগিয়ে তাতে জাদুর মন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয়। এখানে نَفَّاثَاتِ লিঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে। বাহ্যত এটি নারীর বিশেষণ। এটি খারাপ আত্মাকেও বুঝাতে পারে। তখন অর্থ হবে ফুঁকদানকারী খারাপ আত্মা থেকে আমি আশ্রয় চাচ্ছি। আবার এটা ফুঁ দানকারীদের সমষ্টিকেও নির্দেশ করতে পারে, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়ই দাখিল আছে। [আদওয়াউল বায়ান, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৪। এবং ঐসব আত্মার অনিষ্ট হতে, যারা (যাদু করার উদ্দেশ্যে) গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়। [1]

[1] النَّفَّاثَات শব্দটি হল স্ত্রীলিঙ্গ, যা النُّفُوس উহ্য বিশেষ্যর বিশেষণ। مِن شَرِّ النفوس النَّفَّثَات অর্থাৎ, গ্রন্থি বা গিরাতে ফুৎকারকারী আত্মার অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, যাদুর মত জঘন্য কর্মের কর্তা নর ও নারী উভয়ই। মোটকথা, এ দিয়ে যাদুকরের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া হয়েছে। যাদুকর মন্ত্র পড়ে পড়ে ফুঁক মেরে গিরা দিতে থাকে। সাধারণতঃ যাকে যাদু করা হয়, তার চুল অথবা কোন ব্যবহূত জিনিস সংগ্রহ করে তাতে যাদু করা হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১৩ . আল-ফালাক
১১৩:৫ وَ مِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ ﴿۵﴾

আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। আল-বায়ান

এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে। তাইসিরুল

এবং অনিষ্টতা হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে। মুজিবুর রহমান

And from the evil of an envier when he envies." Sahih International

৫. আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের(১), যখন সে হিংসা করে।(২)

(১) তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, حسد যার শাব্দিক অর্থ হিংসা। হিংসার মানে হচ্ছে, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ যে অনুগ্রহ, শ্রেষ্ঠত্ব বা গুণাবলী দান করেছে তা দেখে কোন ব্যাক্তি নিজের মধ্যে জ্বালা অনুভব করে এবং তার থেকে ওগুলো ছিনিয়ে নিয়ে এ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে দেয়া হোক, অথবা কমপক্ষে তার থেকে সেগুলো অবশ্যি ছিনিয়ে নেয়া হোক- এ আশা করা। তবে কোন ব্যক্তি যদি আশা করে অন্যের প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে তার প্রতিও তাই করা হোক, তাহলে এটাকে হিংসার সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। সুতরাং, হিংসার মূল হলো, কারও নেয়ামত ও সুখ দেখে দগ্ধ হওয়া ও সে নেয়ামতের অবসান কামনা করা। হিংসার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ইহুদীরা জাদু করেছিল, হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তাছাড়া ইহুদী, মুশরিক ও মুনাফিকরা মুসলিমদের ইসলামের নেয়ামত পাওয়া দেখে হিংসার অনলে দগ্ধ হত। তাই এ সূরা যেন কুরআনের শেষের দিকে এসেছে মুসলমানদেরকে তাদের নেয়ামত এবং এ নেয়ামতের কারণে তাদের প্রতি হিংসুকদের হিংসা করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যেই এসেছে। [আদওয়াউল বায়ান]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি হিংসা পোষনকারীর সংখ্যা জগতে অনেক। এ কারণেও বিশেষভাবে হিংসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে নির্দেশ প্ৰদান করা হয়েছে। [তাবারী] এই হিংসা হারাম ও মহাপাপ। এটাই আকাশে কৃত সর্বপ্রথম গোনাহ এবং এটাই পৃথিবীতে কৃত সর্বপ্রথম গোনাহ। আকাশে ইবলীস আদম আলাইহিস সালাম এর প্রতি এবং পৃথিবীতে আদমপুত্র তার ভাইয়ের প্রতি হিংসা করেছিল। [কুরতুবী]

(২) এখানে বলা হয়েছে, “হিংসুক যখন হিংসা করে” অর্থাৎ তার মনের আগুন নিভাবার জন্য নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে কোন পদক্ষেপ নেয়, তার হিংসাকে প্রকাশ করে, সেই অবস্থায় তার অনিষ্টকারিতা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৫। এবং অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে। [1]

[1] হিংসা তখন হয়, যখন হিংসাকারী হিংসিত ব্যক্তির নিয়ামতের ধ্বংস কামনা করে। সুতরাং তা থেকেও পানাহ চাওয়া হয়েছে। কেননা, হিংসাও এক জঘন্যতম চারিত্রিক ব্যাধি; যা মানুষের পুণ্যরাশিকে ধ্বংস করে ফেলে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৬২২১ থেকে ৬২৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »