২ . আল-বাকারা
২:৭৪ ثُمَّ قَسَتۡ قُلُوۡبُكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ فَهِیَ كَالۡحِجَارَۃِ اَوۡ اَشَدُّ قَسۡوَۃً ؕ وَ اِنَّ مِنَ الۡحِجَارَۃِ لَمَا یَتَفَجَّرُ مِنۡهُ الۡاَنۡهٰرُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَشَّقَّقُ فَیَخۡرُجُ مِنۡهُ الۡمَآءُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕوَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۷۴﴾

অতঃপর তোমাদের অন্তরসমূহ এর পরে কঠিন হয়ে গেল যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত। আর নিশ্চয় পাথরের মধ্যে কিছু আছে, যা থেকে নহর উৎসারিত হয়। আর নিশ্চয় তার মধ্যে কিছু আছে যা চূর্ণ হয়। ফলে তা থেকে পানি বের হয়। আর নিশ্চয় তার মধ্যে কিছু আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে। আর আল্লাহ তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে গাফেল নন। আল-বায়ান

এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর কিংবা তদপেক্ষা কঠিন। কতক পাথরও এমন আছে যে তা হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয় এবং কতক এরূপ যে, ফেটে যাওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে এবং তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখেয়াল নন। তাইসিরুল

অতঃপর তোমাদের হৃদয় প্রস্তরের ন্যায় কঠিন, বরং ওর চেয়েও কঠিনতর হল এবং নিশ্চয়ই প্রস্তর হতেও প্রস্রবন নির্গত হয় এবং নিশ্চয়ই ওগুলির মধ্যে কোন কোনটি বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা হতে পানি নির্গত হয় এবং নিশ্চয়ই ঐগুলির মধ্যে কোনটি আল্লাহর ভয়ে পতিত হয় এবং তোমরা যা করছ তৎপ্রতি আল্লাহ অমনোযোগী নন। মুজিবুর রহমান

Then your hearts became hardened after that, being like stones or even harder. For indeed, there are stones from which rivers burst forth, and there are some of them that split open and water comes out, and there are some of them that fall down for fear of Allah. And Allah is not unaware of what you do. Sahih International

৭৪. এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, যেন পাথর কিংবা তার চেয়েও কঠিন। অথচ কোন কোন পাথর তো এমন যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়, আর কিছু এরূপ যে, বিদীর্ণ হওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়, আবার কিছু এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে(১), আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।

১. এখানে পাথরের তিনটি ক্রিয়া বর্ণিত হয়েছেঃ

(১) পাথর থেকে বেশী পানি প্ৰসরণ,

(২) কম পানির নিঃসরণ। এ দুটি প্রভাব সবারই জানা।

(৩) নীচে গড়িয়ে পড়া।

মুজাহিদ বলেন, এ সবগুলিই আল্লাহর ভয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, পাথরের উপর যে ক্রিয়াগুলো সংঘটিত হয় সেগুলো বাস্তব ঘটনা। প্রাণহীন জড়বস্তুর মধ্যেও আল্লাহ তা'আলা এ অবস্থা সৃষ্টি করে দেন। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এটা উহুদ পাহাড়, সে আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।” [মুসলিম: ১৩৬৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “আমি মক্কায় এক পাথরকে চিনি, যে পাথর আমি নবী হওয়ার পূর্ব হতেই আমাকে সালাম করত, আমি এখনও সেটাকে চিনি।” [মুসলিম: ২২৭৭] তবে পাথরের উপর সংঘটিত উপরোক্ত তিনটি অবস্থার মধ্যে তৃতীয় ক্রিয়াটি কারো কারো অজানা থাকতে পারে। অর্থাৎ কতক পাথরের প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা এত প্রবল যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে যায় এবং তা দ্বারা সৃষ্ট জীবের উপকার সাধিত হয়। কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তর এমন নয় যে, সৃষ্ট জীবের দুঃখ-দুর্দশায় অশ্রুসজল হবে। কতক পাথরের মধ্যে প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে সেগুলোর দ্বারা উপকারও কম হয়। এ ধরনের পাথর প্রথম ধরনের পাথরের তুলনায় কম নরম হয়।

কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তর এ দ্বিতীয় ধরনের পাথরের চেয়েও বেশী শক্ত। কতক পাথরের মধ্যে উপরোক্তরূপ প্রভাব না থাকলেও এতটুকু প্রভাব অবশ্যই আছে যে, আল্লাহর ভয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ে। এ পাথর উপরোক্ত দুই প্রকার পাথরের তুলনায় বেশী দুর্বল। কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তর এ দুর্বলতম প্রভাব থেকেও মুক্ত। উদ্দেশ্য এই যে, তারা এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ ও স্বার্থন্বেষী যে, তারা অন্যের সদুপদেশে কখনো মন্দ কাজ থেকে বিরত হবে না। আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে তাদের ‘কঠিন হৃদয়’ হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়নি। তবে অন্যান্য আয়াতে সেটা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, “সুতরাং তাদের অঙ্গীকার ভংগের জন্য আমরা তাদেরকে লা'নত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠিন করেছি, তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার এক অংশ ভুলে গেছে।” [সূরা আল-মায়েদাহঃ ১৩] “আর তারা যেন তাদের মত না হয় যাদেরকে আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল--- অতঃপর বহু কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদের অন্তর সমূহ কঠিন হয়ে পড়েছিল। [সূরা আল-হাদীদ: ১৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

৭৪। এর পরও তোমাদের হূদয় কঠিন হয়ে গেল; (1) তা পাষাণ কিংবা তার থেকেও কঠিনতর, কিছু পাথর এমন আছে যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয় এবং কিছু পাথর এমন আছে যে, বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার কিছু পাথর এমন আছে, যা আল্লাহর ভয়ে ধসে পড়ে। (2) বস্তুতঃ তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ উদাসীন নন।

(1) অর্থাৎ, বিগত মুজিযাসমূহ এবং হতকে পুনরায় জীবিত করার এই জলজ্যান্ত ঘটনা দেখার পরও তোমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তনের উৎসাহ এবং তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার আগ্রহ সৃষ্টি না হয়ে উলটো তোমাদের হূদয় পাথরের মত কঠিন বরং তার চেয়েও শক্ত হয়ে গেল! আর হূদয় কঠিন হয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও উম্মতের জন্য বড়ই ক্ষতিকর। অন্তর কঠিন হওয়া এই কথারই নিদর্শন যে, সেই অন্তর থেকে প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার যোগ্যতা এবং সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। এরপর তার সংশোধনের আশা কম, বরং সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ারই আশঙ্কা বেশী থাকে। এই জন্যই ঈমানদারদেরকে তাগিদ করা হয়েছে যে, {وَلا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ} ‘‘তারা (ঈমানদারগণ) তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলে তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে।’’ (সূরা আল-হাদীদ : ১৬)

(2) এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পাথর কঠিন ও শক্ত হওয়া সত্ত্বেও তা থেকে উপকার পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং এক প্রকার চেতনা ও অনুভূতি শক্তি তার মধ্যেও বিদ্যমান থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

{تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ} (الاسراء:৪৪)

অধিক জানার জন্য সূরা বানী-ইস্রাঈলের ৪৪নং আয়াতের পাদটীকা দ্রষ্টব্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৭৫ اَفَتَطۡمَعُوۡنَ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡا لَكُمۡ وَ قَدۡ كَانَ فَرِیۡقٌ مِّنۡهُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ كَلٰمَ اللّٰهِ ثُمَّ یُحَرِّفُوۡنَهٗ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا عَقَلُوۡهُ وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۷۵﴾

তোমরা কি এই আশা করছ যে, তারা তোমাদের প্রতি ঈমান আনবে? অথচ তাদের একটি দল ছিল যারা আল্লাহর বাণী শুনত অতঃপর তা বুঝে নেয়ার পর তা তারা বিকৃত করত জেনে বুঝে। আল-বায়ান

তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত ও বুঝার পর জেনে শুনে তা বিকৃত করত। তাইসিরুল

তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়েছে যারা আল্লাহর কালাম শুনত, অতঃপর উহা বুঝার পর উহাকে বিকৃত করত, অথচ তারা জানত। মুজিবুর রহমান

Do you covet [the hope, O believers], that they would believe for you while a party of them used to hear the words of Allah and then distort the Torah after they had understood it while they were knowing? Sahih International

৭৫. তোমরা কি এ আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্ৰবণ করে, তারপর তারা তা অনুধাবন করার পর বিকৃত করে, অথচ তারা জানে।(১)

১. এখানে আল্লাহর বাণী অর্থ তাওরাত। শ্রবণ করা অর্থ নবীদের মাধ্যমে শ্রবণ করা। পরিবর্তন করা অর্থ কোন কোন বাক্য অথবা তার অর্থ অথবা উভয়টিকে বিকৃত করে ফেলা। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলে যেসব ইয়াহুদী ছিল, তাদের দ্বারা উল্লেখিত কোন কুকর্ম যদি সংঘটিত নাও হয়ে থাকে, তবুও পূর্ববতীদের এসব দুস্কর্মকে তারা অপছন্দ ও ঘৃণা করতো না। এ কারণে তারাও কার্যতঃ পূর্ববতীদেরই মত। কিন্তু কারা এবং কিভাবে তাদের কিতাবকে বিকৃত করত, তা এখানে বলা হয়নি। মুফাসসিরগণের মধ্যে মুজাহিদ বলেন, এ বিকৃত করা ও গোপন কিতাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সমস্ত গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোকে স্থানচ্যুত করে বিকৃত করত। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

কাতাদাহ বলেন, আয়াতে বর্ণিত লোকগুলো হচ্ছে, ইয়াহুদরা। তারা আল্লাহর বাণী শুনত; তারপর সেগুলো বুঝে-শুনে বিকৃত করত। তারা আল্লাহর বিধানেও পরিবর্তন সাধন করত, হাদীসে এসেছে, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল যে, তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী ব্যভিচার করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বললেন, তোমরা তাওরাতে “রাজম” বা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে কি কিছু পাও?

তারা বলল, আমরা তদেরকে শাস্তি হিসেবে তাদেরকে লজ্জিত করি এবং বেত্ৰাঘাত করা হবে। অর্থাৎ তারা ‘রাজম’ অস্বীকার করল। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে ‘রাজম’ এর কথা আছে। তখন তারা তাওরাত নিয়ে আসল এবং সেটা মেলে ধরল। তখন তাদের একজন রাজম’ এর আয়াতের উপর হাত রেখে এর আগে এবং পরের অংশ পড়ল। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বললেন, তুমি তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, সেখানে ‘রাজম এর আয়াত রয়েছে। তখন তারা বলল, মুহাম্মদ সত্য বলেছে। এতে রজম এর আয়াত রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর রজম করা হলো। আব্দুল্লাহ বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে লোকটি মহিলার উপর বাঁকা হয়ে তাকে পাথরের আঘাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল৷ [বুখারী ৩৬৩৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

৭৫। (হে বিশ্বাসিগণ) তোমরা কি এখনো আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা বিশ্বাস করবে (ঈমান আনবে)? অথচ তাদের মধ্যে একদল লোক আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত এবং বুঝার পর জেনেশুনে তা বিকৃত করত। (1)

(1) ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করে ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, তোমরা কি তাদের ঈমান আনার আশা পোষণ কর, অথচ তাদের পূর্বের লোকেদের মধ্যে একটি দল এমনও ছিল, যারা জেনে-শুনে আল্লাহর কালামের (শাব্দিক ও আর্থিক) হেরফের ঘটাত? এখানে জিজ্ঞাসাটা আসলে অস্বীকৃতিসূচক; অর্থাৎ এমন লোকের ঈমান আনার কোনই আশা নেই। অর্থ হল, দুনিয়ার স্বার্থে এবং জাতিগত পক্ষপাতিত্বের কারণে আল্লাহর বাণী বিকৃত করতে যাদের বাধে না, তারা ভ্রষ্টতার এমন পঙ্কে ফেঁসে গেছে যে সেখান থেকে বের হতে পারে না। উম্মতে মুহাম্মাদীর বহু উলামা ও মাশায়েখও দুর্ভাগ্যবশতঃ ক্বুরআন ও হাদীসের মধ্যে হেরফের ও বিকৃতি সাধনের কাজে জড়িত। আল্লাহ তাআলা এই অন্যায় থেকে আমাদেরকে হিফাযতে রাখুন! (দ্রষ্টব্যঃ সূরা নিসা ৭৭ নং আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৭৬ وَ اِذَا لَقُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚۖ وَ اِذَا خَلَا بَعۡضُهُمۡ اِلٰی بَعۡضٍ قَالُوۡۤا اَتُحَدِّثُوۡنَهُمۡ بِمَا فَتَحَ اللّٰهُ عَلَیۡكُمۡ لِیُحَآجُّوۡكُمۡ بِهٖ عِنۡدَ رَبِّكُمۡ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۷۶﴾

আর যখন তারা মুমিনদের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। আর যখন একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয় তখন বলে, ‘তোমরা কি তাদের সাথে সে কথা আলোচনা কর, যা আল্লাহ তোমাদের উপর উম্মুক্ত করেছেন, যাতে তারা এর মাধ্যমে তোমাদের রবের নিকট তোমাদের বিরুদ্ধে দলীল পেশ করবে? তবে কি তোমরা বুঝ না’? আল-বায়ান

যখন তারা মু’মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি’। আবার যখন তারা নিভৃতে একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, ‘আল্লাহ তোমাদের কাছে যা (তাওরাতে) ব্যক্ত করেছেন [মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে] তোমরা কি তা তাদেরকে বলে দাও যাতে এর দ্বারা তারা তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে তোমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ করবে? তোমরা কি বুঝ না’? তাইসিরুল

যখন তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয় তখন বলেঃ আমরা ঈমান এনেছি; আর যখন তাদের কেহ কারও (ইয়াহুদীর) নিকট গোপনে যায় তখন তারা বলেঃ তোমরা কি মুসলিমদেরকে এমন কথা বলে দাও যা আল্লাহ তোমাদের নিকট প্রকাশ করেছেন? পরিণামে তারা তোমাদেরকে তর্কে পরাজিত করবে (এই বলে) যে, এ বিষয়টি রবের নিকট হতে তোমাদের কিতাবে রয়েছে, তোমরা কি বুঝনা? মুজিবুর রহমান

And when they meet those who believe, they say, "We have believed"; but when they are alone with one another, they say, "Do you talk to them about what Allah has revealed to you so they can argue with you about it before your Lord?" Then will you not reason? Sahih International

৭৬. আর তারা যখন মুমিনদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তারা গোপনে একে অন্যের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, তোমরা কি তাদেরকে তা বলে দাও, যা আল্লাহ তোমাদের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন(১); যাতে তারা এর মাধ্যমে তোমাদের রব-এর নিকট তোমাদের বিরুদ্ধে দলীল পেশ করবে? তবে তোমরা কি বুঝ না?(২)

১. এখানে ‘যা আল্লাহ তোমাদের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন’ বলে কি বোঝানো হয়েছে তা নিয়ে কয়েকটি অভিমত রয়েছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য মুমিনদের সাথে ইয়াহুদীদের সাক্ষাৎ হলে তারা মুমিনদের বলত আমরা বিশ্বাস করি যে, তোমাদের সাথী আল্লাহর রাসূল। তবে তিনি শুধু তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন, আমাদের প্রতি নয়। আবার শুধু তারা নিজেরা একত্রিত হলে একদল আরেক দলকে বলত- সাবধান! আরবদের কাছে তাও প্রকাশ করো না। কারণ, এর আগে তোমরা এই মুহাম্মদের সাহায্যে তাদের উপর বিজয়ী হওয়ার কথা বলতে। এখন সে-ই তো তাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হয়েছে। [ইবনে কাসীর]

২. অর্থাৎ তারা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনায় বলত, এ নবী সম্পর্কে তাওরাত ও অন্যান্য আসমানী গ্রন্থসমূহে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখিত হয়েছে অথবা আমাদের পবিত্র কিতাবসমূহে আমাদের বর্তমান মনোভাব ও কর্মনীতিকে অভিযুক্ত করার মত যে সমস্ত আয়াত ও শিক্ষা রয়েছে, সেগুলো মুসলিমদের সামনে বিবৃত করো না। অন্যথায় তারা আল্লাহর সামনে এগুলোকে তোমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে পেশ করবে। আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ-মূর্খ ইয়াহুদীদের বিশ্বাস এভাবে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তারা যেন মনে করত, দুনিয়ায় যদি তারা আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত করে ও সত্য গোপন করে তাহলে এজন্য আখেরাতে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা চলবে না। তাই পরবর্তী বাক্যে বলা হয়েছে, তোমরা কি আল্লাহকে বেখবর মনে কর? [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৭৬। আর তারা যখন মু’মিন (বিশ্বাসী)দের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি (বিশ্বাস করেছি)’,(1) আবার যখন তারা নিভৃতে (নিজ দলে) একে অন্যের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যা ব্যক্ত করেছেন তোমরা কেন তা তাদের নিকট বলে দিচ্ছ? তারা (মুসলিমরা) যে তোমাদের প্রভুর সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দাঁড় করাবে তোমরা কি তা বুঝতে পারছ না?’

(1) এখানে কিছু ইয়াহুদী মুনাফিকদের মুনাফিকী কার্যকলাপের পর্দা উন্মোচন করা হচ্ছে। এরা মুসলিমদের মাঝে এসে ঈমানের কথা প্রকাশ করত, কিন্তু আপোসে যখন একত্রিত হত, তখন একে অপরকে এই বলে তিরস্কার করত যে, তোমরা মুসলিমদেরকে নিজেদের কিতাবের এমন কথাগুলো কেন বল, যার দ্বারা রসূলের সত্যতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়। এইভাবে তোমরা নিজেরাই এমন হুজ্জত তাদের হাতে তুলে দিচ্ছ যে, তারা তা তোমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সামনে পেশ করবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৭৭ اَ وَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ اَنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ مَا یُسِرُّوۡنَ وَ مَا یُعۡلِنُوۡنَ ﴿۷۷﴾

তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, তা আল্লাহ জানেন? আল-বায়ান

তাদের কি জানা নেই যে, যা তারা গোপন রাখে অথবা প্রকাশ করে অবশ্যই আল্লাহ তা জানেন? তাইসিরুল

তারা কি জানেনা যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা প্রকাশ করে, আল্লাহ সবই জানেন? মুজিবুর রহমান

But do they not know that Allah knows what they conceal and what they declare? Sahih International

৭৭. তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা ব্যক্ত করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৭৭। তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে কিংবা প্রকাশ করে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা জানেন? (1)

(1) মহান আল্লাহ বলছেন, তোমরা বল আর না বল, আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে অবগত। তোমরা না বললেও তিনি এই কথাগুলো মুসলিমদের জন্য প্রকাশ করে দিতে পারেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৭৮ وَ مِنۡهُمۡ اُمِّیُّوۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ الۡكِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِیَّ وَ اِنۡ هُمۡ اِلَّا یَظُنُّوۡنَ ﴿۷۸﴾

আর তাদের মধ্যে আছে নিরক্ষর, তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া কিতাবের কোন জ্ঞান রাখে না এবং তারা শুধুই ধারণা করে থাকে। আল-বায়ান

তাদের মাঝে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে, যাদের মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিতাবের কোন জ্ঞানই নেই, তারা কেবল অলীক ধারণা পোষণ করে। তাইসিরুল

এবং তাদের মধ্যে অনেক অশিক্ষিত লোক আছে যারা প্রবৃত্তি ব্যতীত কোন গ্রন্থ অবগত নয় এবং তারা শুধু কল্পনাসমূহ রচনা করে থাকে। মুজিবুর রহমান

And among them are unlettered ones who do not know the Scripture except in wishful thinking, but they are only assuming. Sahih International

৭৮. আর তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে যারা মিথ্যা আশা(১) ছাড়া কিতাব সম্পর্কে কিছুই জানে না, তারা শুধু অমূলক ধারণা পোষণ করে(২)।

১. أَمَانِيَّ শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে, মিথ্যা আশা। এ অর্থের পক্ষে অন্যান্য আয়াতও সাক্ষ্য দেয়। যেমন বলা হয়েছে, “আর তারা বলে, ইয়াহুদী অথবা নাসারা ছাড়া অন্য কেউ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এটা তাদের মিথ্যা আশা”। [সূরা আল-বাকারাহ: ১১১] আরও এসেছে, “তোমাদের আশা-আকাংখা ও কিতাবীদের আশা-আকাংখা অনুসারে কাজ হবে না” (সূরা আন-নিসা ১২৩] উপরোক্ত দুই আয়াতেও أَمَانِيَّ শব্দ মিথ্যা আশা-আকাংখা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কোন কোন তাফসীরকার এর আরও একটি অর্থ করেছেন, তা হচ্ছে, লেখাপড়া না জানা। অর্থাৎ ইয়াহুদীদের মধ্যে এক গোষ্ঠী আছে যারা কোন লেখা পড়া জানে না। তাদের কাজ হলো অন্যের অন্ধ অনুসরণ করা। কিন্তু বাক্যের প্রথমে أُمِّيُّونَ শব্দের উল্লেখ থাকায় এ অর্থটি খুব বেশী উপযুক্ত নয়। [আদওয়াউল বায়ান]

২. লক্ষণীয় যে, আল্লাহ্ তা'আলা ৭৫-৭৮ আয়াতসমূহে ইয়াহুদীদের তিন শ্রেণীর লোকের উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে, আলেম সম্প্রদায় তাদের কাজ হলো আল্লাহর কালাম বিকৃত করা। আরেক দল হচ্ছে মুনাফিক। তারা মুমিনদের কাছে নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে পেশ করে। আরেক শ্রেণী হচ্ছে, জাহেল মূৰ্খ গোষ্ঠী। তারা পড়ালেখা জানে না। তারা কেবল অন্যদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৭৮। তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে, মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া যাদের কিতাব (ঐশীগ্রন্থ) সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু কল্পনা করে মাত্র। (1)

(1) ইয়াহুদী আলেম ও শিক্ষিত লোকদের আলোচনার পর এখানে তাদের নিরক্ষর, অশিক্ষিত ও মূর্খ লোকদের কথা বলা হচ্ছে যে, তারা তাদের কিতাবের (তাওরাতের) ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল। কিন্তু তারা আশা অবশ্যই রাখত এবং তাদের আলেমরা তাদেরকে বিভিন্ন শুভ কল্পনা ও ধারণার মধ্যেই নিমজ্জিত রেখেছিল। যেমন, তাদের ধারণা ছিল, আমরা তো আল্লাহর প্রিয়পাত্র, আমরা জাহান্নামে গেলেও তা কিছু দিনের জন্য হবে, পরে আমাদের বুযুর্গরা ক্ষমা করিয়ে নেবেন ইত্যাদি। যেমন আজকের মূর্খ মুসলিমদেরকেও তথাকথিত কিছু পীর, উলামা ও মাশায়েখরা অনুরূপ সুন্দর জালে এবং প্রতারণামূলক অঙ্গীকারে ফাঁসিয়ে রেখেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৭৯ فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ یَكۡتُبُوۡنَ الۡكِتٰبَ بِاَیۡدِیۡهِمۡ ٭ ثُمَّ یَقُوۡلُوۡنَ هٰذَا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ لِیَشۡتَرُوۡا بِهٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ فَوَیۡلٌ لَّهُمۡ مِّمَّا كَتَبَتۡ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ وَیۡلٌ لَّهُمۡ مِّمَّا یَكۡسِبُوۡنَ ﴿۷۹﴾

সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস। আল-বায়ান

সুতরাং অভিসম্পাত তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং নিকৃষ্ট মূল্য লাভের জন্য বলে এটা আল্লাহর নিকট হতে, তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের শাস্তি অবধারিত এবং তারা যা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি রয়েছে। তাইসিরুল

তাদের জন্য আক্ষেপ যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে, যারা বলে যে, এটা আল্লাহর নিকট হতে সমাগত! এর দ্বারা তারা সামান্য মূল্য অর্জন করছে, তাদের হস্ত যা লিপিবদ্ধ করেছে তজ্জন্য তাদের প্রতি আক্ষেপ! এবং তারা যা উপার্জন করছে তজ্জন্যও তাদের প্রতি আক্ষেপ! মুজিবুর রহমান

So woe to those who write the "scripture" with their own hands, then say, "This is from Allah," in order to exchange it for a small price. Woe to them for what their hands have written and woe to them for what they earn. Sahih International

৭৯. কাজেই দুর্ভোগ(১) তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে অতঃপর সামান্য মূল্য পাওয়ার জন্য বলে, “এটা আল্লাহর কাছ থেকে। অতএব, তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের ধ্বংস এবং যা তারা উপার্জন করেছে তার জন্য তাদের ধ্বংস।(২)

১. وَيْلٌ শব্দটি পবিত্র কুরআনে এখানেই প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে। ওপরে এর অর্থ করা হয়েছে, দূর্ভোগ। এছাড়া এর এক তাফসীর আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এটি জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম, যদি পাহাড়ও এতে নিয়ে ফেলা হয় তবে তার তাপে তাও মিইয়ে যাবে’। [ইবনুল মুবারকের আয-যুহদ, নং ৩৩২] আবু আইয়াদ আমর ইবনে আসওয়াদ আল-আনাসী বলেন, وَيْلٌ হচ্ছে জাহান্নামের মূল অংশ থেকে যে পুঁজ বয়ে যাবে তার নাম [তাবারী] মোটকথা: সব রকমের শাস্তি ও ধ্বংস তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

২. ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘তোমরা কোন ব্যাপারে কিতাবীদেরকে কেন জিজ্ঞেস কর? অথচ তোমাদের কাছে রয়েছে তোমাদের রাসূলের কাছে নাযিলকৃত আল্লাহর কিতাব। যা সবচেয়ে আধুনিক, (আল্লাহর কাছ থেকে আসার ব্যাপারে) নবীন। তোমরা সেটা পড়ছ। আর সে কিতাবে আল্লাহ জানিয়েছেন যে, কিতাবীরা সে কিতাব লিপিবদ্ধ করে বলেছে যে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তোমাদের কাছে এ সমস্ত জ্ঞান আসার পরও তা তোমাদেরকে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা থেকে নিষেধ করছে না। না, আল্লাহর শপথ! তাদের একজনকেও দেখিনি যে, সে তোমাদেরকে তোমাদের কাছে কি নাযিল হয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। [বুখারী: ৭৩৬৩] সুতরাং আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কোন কিছুতেই ইয়াহুদী-নাসারাদের কোন বর্ণনার প্রয়োজন আমাদের নেই।

তাফসীরে জাকারিয়া

৭৯। সুতরাং তাদের জন্য দুর্ভোগ (ওয়াইল দোযখ), যারা নিজ হাতে গ্রন্থ রচনা করে এবং অল্প মূল্য পাবার জন্য বলে, ‘এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে।’ তাদের হাত যা রচনা করেছে, তার জন্য তাদের শাস্তি এবং যা তারা উপার্জন করেছে তার জন্যও তাদের শাস্তি (রয়েছে)। [1]

[1] এখানে ইয়াহুদীদের আলেমদের দুঃসাহসিকতা এবং তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিলুপ্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তারা নিজেরাই মনগড়া বিধান তৈরী করে বড় ধৃষ্টতার সাথে বুঝাতো যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। হাদীস অনুযায়ী 'ওয়াইল' জাহান্নামের এক উপত্যকা যার গভীরতা এত বেশী যে, একজন কাফেরকে তার তলদেশে পড়তে চল্লিশ বছর সময় লাগবে! (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে হিববান, হাকেম, ফাতহুল ক্বাদীর) কোন কোন আলেমগণ এই আয়াতের ভিত্তিতে ক্বুরআন বিক্রি করা নাজায়েয বলেছেন। কিন্তু এই আয়াত থেকে এ রকম দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়। এই আয়াতের লক্ষ্য কেবল তারা, যারা দুনিয়া অর্জনের জন্য আল্লাহর কালামের মধ্যে হেরফের করে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৮০ وَ قَالُوۡا لَنۡ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدَۃً ؕ قُلۡ اَتَّخَذۡتُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ عَهۡدًا فَلَنۡ یُّخۡلِفَ اللّٰهُ عَهۡدَهٗۤ اَمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۰﴾

আর তারা বলে, ‘গোনা-কয়েকদিন ছাড়া আগুন আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করবে না’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর নিকট ওয়াদা নিয়েছ, ফলে আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করবেন না? নাকি আল্লাহর উপর এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’? আল-বায়ান

তারা বলে, ‘গুটি কয়েক দিন ছাড়া আগুন কক্ষনো আমাদেরকে স্পর্শ করবে না’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে প্রতিশ্রুতি নিয়েছো যে প্রতিশ্রুতি আল্লাহ ভঙ্গ করবেন না? কিংবা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’। তাইসিরুল

এবং তারা বলেঃ নির্ধারিত দিনসমূহ ব্যতীত (জাহন্নামের) আগুন আমাদেরকে স্পর্শ করবেনা। তুমি বলঃ তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছ যে, পরে আল্লাহ কখনই স্বীয় অঙ্গীকারের অন্যথা করবেননা? অথবা আল্লাহ সম্বন্ধে যা জানোনা তোমরা তা’ই বলছ? মুজিবুর রহমান

And they say, "Never will the Fire touch us, except for a few days." Say, "Have you taken a covenant with Allah? For Allah will never break His covenant. Or do you say about Allah that which you do not know?" Sahih International

৮০. তারা বলে, সামান্য কিছদিন ছাড়া আগুন আমাদেরকে কখনও স্পর্শ করবে না। বলুন, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে এমন কোন অঙ্গীকার নিয়েছ; যে অংগীকারের বিপরীত আল্লাহ কখনও করবেন না? নাকি আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না?’

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৮০। আর তারা বলে, ‘গণা কয়েকটি দিন ছাড়া (দোযখের) আগুন কখনো আমাদেরকে স্পর্শ করবে না।’ (হে মুহাম্মাদ, তুমি) বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর নিকট থেকে এমন কোন অঙ্গীকার[1] পেয়েছ যে, আল্লাহ সে অঙ্গীকার কখনো ভঙ্গ করবেন না? অথবা তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলছ, যা তোমরা জান না।’ [2]

[1] ইয়াহুদীরা বলত যে, দুনিয়ার বয়স হল সাত হাজার বছর। আর প্রত্যেক হাজার বছরের পরিবর্তে আমরা একদিন জাহান্নামে থাকব। অতএব এই হিসেবে আমরা কেবল সাত দিন জাহান্নামে থাকব। কেউ কেউ বলতো, আমরা কেবল চল্লিশ দিন বাছুরের পূজা করেছি, অতএব এই চল্লিশ দিন জাহান্নামে থাকব। মহান আল্লাহ বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ? এটাও অস্বীকৃতিসূচক জিজ্ঞাসা। অর্থাৎ, এরা ভুল বলছে, আল্লাহর সাথে এই ধরনের কোন অঙ্গীকার তাদের নেই।

[2] অর্থাৎ, তোমাদের এই দাবী যে, আমরা জাহান্নামে গেলেও কেবল কিছু দিনের জন্য তা হবে, এটা তোমাদের নিজের পক্ষ থেকে মনগড়া কথা এবং এই ধরনের অনেক কথাবার্তা তোমরা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ, যা তোমদের নিজেদেরই জানা নেই। এরপর মহান আল্লাহ তাঁর সেই মূলনীতির কথা উল্লেখ করছেন, যার ভিত্তিতে কিয়ামতের দিন তিনি ভাল ও মন্দজনদেরকে তাদের ভাল-মন্দের প্রতিদান ও প্রতিফল দেবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৮১ بَلٰی مَنۡ كَسَبَ سَیِّئَۃً وَّ اَحَاطَتۡ بِهٖ خَطِیۡٓــَٔتُهٗ فَاُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۸۱﴾

হাঁ, যে মন্দ উপার্জন করবে এবং তার পাপ তাকে বেষ্টন করে নেবে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী। আল-বায়ান

তবে হাঁ, যারা পাপ কাজ করে এবং যাদের পাপরাশি তাদেরকে ঘিরে ফেলে তারাই জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তাইসিরুল

হ্যাঁ, যারা অনিষ্ট অর্জন করেছে এবং স্বীয় পাপের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছে তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা সদা অবস্থান করবে। মুজিবুর রহমান

Yes, whoever earns evil and his sin has encompassed him - those are the companions of the Fire; they will abide therein eternally. Sahih International

৮১. হ্যাঁ, যে পাপ উপার্জন করেছে এবং তার পাপরাশি তাকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৮১। অবশ্যই, যে ব্যক্তি পাপ করেছে এবং যার পাপরাশি তাকে পরিবেষ্টন করেছে, তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৮২ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۸۲﴾

আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তারা জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী। আল-বায়ান

আর যারা ঈমান আনে ও নেক ‘আমাল করে তারাই জান্নাতবাসী, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। তাইসিরুল

এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎ কাজ করছে তারাই জান্নাতবাসী, তন্মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। মুজিবুর রহমান

But they who believe and do righteous deeds - those are the companions of Paradise; they will abide therein eternally. Sahih International

৮২. আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই জান্নাতবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৮২। পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস করেছে (মু’মিন হয়েছে) এবং সৎকাজ করেছে, তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। [1]

[1] এখানে ইয়াহুদীদের দাবী খন্ডন করে জান্নাত ও জাহান্নামে যাওয়ার মূলনীতির কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। যার আমলনামায় কেবল পাপ আর পাপই থাকবে; অর্থাৎ, কুফরী ও শির্ক, (এই কুফরী ও শির্কীয় কর্ম সম্পাদনের কারণে তাদের অনেক ভাল কাজও কোন উপকারে আসবে না) সে তো চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী হবে এবং যে ঈমান ও নেক আমলের ভূষণে ভূষিত হবে, সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে মুমিন পাপী হবে, তার ব্যাপার আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে, তিনি ইচ্ছা করলে স্বীয় অনুগ্রহ ও দয়ায় তাকে ক্ষমা করে দেবেন অথবা শাস্তি স্বরূপ কিছু দিন জাহান্নামে রেখে নবী করীম (সাঃ)-এর সুপারিশে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এ কথা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং আহলে সুন্নাহর এটাই আক্বীদা ও বিশ্বাস।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:৮৩ وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ لَا تَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا اللّٰهَ ۟ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ ذِی ‌الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰكِیۡنِ وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا وَّ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوۃَ ؕ ثُمَّ تَوَلَّیۡتُمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡكُمۡ وَ اَنۡتُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ ﴿۸۳﴾

আর স্মরণ কর, যখন আমি বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তোমরা সকলে উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিলে। আল-বায়ান

আর স্মরণ কর, যখন বানী ইসরাঈলের শপথ নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত করবে না, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, অনাথ ও দরিদ্রদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সদালাপ করবে, নামায কায়িম করবে এবং যাকাত দিবে। কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া তোমরা অগ্রাহ্যকারী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে। তাইসিরুল

আর যখন আমি বানী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আর কারও ইবাদাত করবেনা এবং মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে ও আত্মীয়দের, পিতৃহীনদের ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা লোকের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত প্রতিষ্ঠিত করবে ও যাকাত প্রদান করবে; অতঃপর তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই বিমুখ হয়েছিলে, যেহেতু তোমরা ছিলে অগ্রাহ্যকারী। মুজিবুর রহমান

And [recall] when We took the covenant from the Children of Israel, [enjoining upon them], "Do not worship except Allah; and to parents do good and to relatives, orphans, and the needy. And speak to people good [words] and establish prayer and give zakah." Then you turned away, except a few of you, and you were refusing. Sahih International

৮৩. আর স্মরণ কর, যখন আমরা ইসরাঈল-সন্তানদের নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড় আর কারো ইবাদত করবে না, মাতা-পিতা(১), আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও দরিদ্রের(২) সাথে সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সদালাপ করবে(৩)। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে, তারপর তোমাদের মধ্য হতে কিছুসংখ্যক লোক ছাড়া(৪) তোমরা সকলেই অবজ্ঞা করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে।

১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, “সময়মত সালাত আদায় করা”। বললেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, “পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার" বললেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা”। [বুখারী ৫২৭, মুসলিম: ৮৫]

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মিসকীন সে নয়, যে এক খাবার বা দুই খাবারের জন্য ঘুরে বেড়ায় বরং মিসকীন হচ্ছে, যার সামর্থ নেই অথচ সে লজ্জায় কারও কাছে চায় না। অথবা মানুষকে আগলে ধরে কোন কিছু চায় না।” [বুখারী: ১৪৭৬, মুসলিম: ১০৩৯]

৩. আয়াতে এমন কথাকে বুঝানো হয়েছে, যা সৌন্দর্যমণ্ডিত। এর অর্থ এই যে, যখন মানুষের সাথে কথা বলবে, নম্রভাবে হাসিমুখে ও খোলামনে বলবে। তবে দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য অথবা কারো মনোরঞ্জনের জন্য সত্য গোপন করবে না। কারণ, আল্লাহ্ তা'আলা যখন মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালাম-কে নবুয়ত দান করে ফিরআউনের প্রতি পাঠিয়েছিলেন, তখন এ নির্দেশ দিয়েছিলেন, “তোমরা উভয়েই ফিরআউনকে নরম কথা বলবে।" [সূরা ত্বা-হাঃ ৪৪] আজ যারা অন্যের সাথে কথা বলে, তারা মূসা আলাইহিস সালাম-এর চাইতে উত্তম নয় এবং যার সাথে কথা বলে, সেও ফিরআউন অপেক্ষা বেশী মন্দ বা পাপিষ্ঠ নয়। সুতরাং সবার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। হাদীসে এসেছে, “তোমরা সৎকাজের সামান্যতম কিছুকে খাটো করে দেখ না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করা।” [মুসলিম: ২৬২৬] তাছাড়া মানুষের সাথে সদালাপের অর্থ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে যে, তা হচ্ছে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

৪. অল্প কয়েকজন অর্থ, তারাই যারা তাওরাতের পুরোপুরি অনুসরণ করত, তাওরাত রহিত হওয়ার পূর্বে তারা মূসা আলাইহিস সালাম প্রবর্তিত শরীআতের অনুসারী ছিল এবং তাওরাত রহিত হওয়ার পর ইসলামী শরীআতের অনুসারী হয়ে যায়। আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, একত্ববাদে ঈমান, এবং পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন, ইয়াতীম বালক-বালিকা ও দীন-দরিদ্রের সেবাযত্ন করা, মানুষের সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বলা, সালাত আদায় করা ও যাকাত দেয়া ইসলামী শরীআতসহ পূর্ববর্তী শরীআতসমূহেও ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ সেগুলো ত্যাগ করে।

তাফসীরে জাকারিয়া

৮৩। আর (স্মরণ কর সেই সময়ের কথা) যখন বনী ইস্রাইলের কাছ থেকে আমি অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করবে না, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্রের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সদালাপ করবে, নামাযকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং যাকাত প্রদান করবে। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তোমরা সকলে অগ্রাহ্য ক’রে (এ প্রতিজ্ঞা পালনে) পরাঙ্খমুখ হয়ে গেলে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৮১ থেকে ৯০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 6 7 8 9 10 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »