আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা (সব কিছুই দেখেন) বিষয়ক আয়াতসমূহ ৩৫ টি
২৫ আল-ফুরকান
২৫:২০ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا قَبۡلَكَ مِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّاۤ اِنَّهُمۡ لَیَاۡكُلُوۡنَ الطَّعَامَ وَ یَمۡشُوۡنَ فِی الۡاَسۡوَاقِ ؕ وَ جَعَلۡنَا بَعۡضَكُمۡ لِبَعۡضٍ فِتۡنَۃً ؕ اَتَصۡبِرُوۡنَ ۚ وَ كَانَ رَبُّكَ بَصِیۡرًا ﴿۲۰﴾

আর তোমার পূর্বে যত নবী আমি পাঠিয়েছি, তারা সবাই আহার করত এবং হাট-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের একজনকে অপরজনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। তোমরা কি ধৈর্যধারণ করবে? আর তোমার রব সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান

আমি তোমার পূর্বে যে সব রসূল পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত, আর হাট-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের এককে অপরের জন্য করেছি পরীক্ষাস্বরূপ (কাউকে করেছি ধনী, কাউকে গরীব, কাউকে সবল, কাউকে দুর্বল, কাউকে রুগ্ন, কাউকে সুস্থ), দেখি, তোমরা (নিজ নিজ অবস্থার উপর) ধৈর্য ধারণ কর কিনা। তোমার প্রতিপালক সব কিছু দেখেন। তাইসিরুল

তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছি তারা সবাই আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফিরা করত। হে লোক সকল! আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? তোমার রাব্ব সব কিছু দেখেন। মুজিবুর রহমান

And We did not send before you, [O Muhammad], any of the messengers except that they ate food and walked in the markets. And We have made some of you [people] as trial for others - will you have patience? And ever is your Lord, Seeing. Sahih International

২০. আর আপনার আগে আমরা যে সকল রাসূল পাঠিয়েছি তারা সকলেই তো খাওয়া-দাওয়া করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।(১) এবং (হে মানুষ!) আমরা তোমাদের এক-কে অন্যের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? আর আপনার রব তো সর্বদ্ৰষ্টা।

(১) কাফেরদের দ্বিতীয় কথা ছিল এই যে, তিনি নবী হলে সাধারণ মানুষের মতই পানাহার করতেন না এবং জীবিকা উপার্জনের জন্য হাটবাজারে চলাফেরা করতেন না। এই আপত্তির ভিত্তি, অনেক কাফেরের এই ধারণা যে, আল্লাহর রাসূল মানব হতে পারেন না- ফিরিশতাই রাসূল হওয়ার যোগ্য। কুরআনুল করীমের বিভিন্ন স্থানে এর উত্তর দেয়া হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে এই উত্তর দেয়া হয়েছে যে, যেসব নবীকে তোমরা নবী ও রাসূল বলে স্বীকার কর, তারাও তো মানুষই ছিলেন; তারা মানুষের মত পানাহার করতেন এবং হাটে বাজারে চলাফেরা করতেন। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) তোমার পূর্বে আমি যে সব রসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই তো আহার করত[1] ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।[2] আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি।[3] তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? তোমার প্রতিপালক সমস্ত কিছুর সম্যক দ্রষ্টা। [4]

[1] অর্থাৎ, তাঁরা মানুষ ছিলেন এবং খাদ্যের মুখাপেক্ষী ছিলেন।

[2] অর্থাৎ, হালাল রুযী সংগ্রহ করার মানসে উপার্জন ও বাণিজ্য করতেন। যার অর্থ হল এসব বিষয় নবুঅতী মর্যাদার পরিপন্থী নয়, যেমন কিছু লোক মনে করে।

[3] অর্থাৎ, আমি ঐসব নবীদের এবং তাদের মাধ্যমে তাদের অনুসারীদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যাতে আসল ও নকলের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। অতএব যারা পরীক্ষায় ধৈর্য ও সহনশীলতাকে আঁকড়ে ধরে থেকেছে, তারা হয়েছে সফলকাম এবং অন্যরা হয়েছে অসফল। সেই জন্য পরে বলা হয়েছে, তোমরা ধৈর্যধারণ করবে কি?

[4] অর্থাৎ, তিনি জানেন, অহী ও রিসালাতের উপযুক্ত ও অনুপযুক্ত কে? {اللهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ} (124) سورة الأنعام আর হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আমাকে এই এখতিয়ার দিয়েছিলেন যে, আমি বাদশাহ নবী হব অথবা দাস রসূল? আমি দাস রসূল হওয়া পছন্দ করেছি। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩১ লুকমান
৩১:২৮ مَا خَلۡقُكُمۡ وَ لَا بَعۡثُكُمۡ اِلَّا كَنَفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ ﴿۲۸﴾

তোমাদের সৃষ্টি ও তোমাদের পুনরুত্থান কেবল একটি প্রাণের (সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের) মতই। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, দ্রষ্টা। আল-বায়ান

তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একজন মানুষের (সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের) মতই। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। তাইসিরুল

তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের অনুরূপ। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

Your creation and your resurrection will not be but as that of a single soul. Indeed, Allah is Hearing and Seeing. Sahih International

২৮. তোমাদের সবার সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই মত।[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

[1] অর্থাৎ, তাঁর ক্ষমতা এত বিশাল যে, তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা বা কিয়ামতের দিন পুনর্জীবিত করা একটি মাত্র আত্মা বা প্রাণীকে জীবিত করা বা সৃষ্টি করার মতই। কারণ তিনি যা চান, তা كُن (হয়ে যাও) বলতেই চোখের পলকে অস্তিত্ব লাভ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:৩১ وَ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡكَ مِنَ الۡكِتٰبِ هُوَ الۡحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِیۡرٌۢ بَصِیۡرٌ ﴿۳۱﴾

আর আমি যে কিতাবটি তোমার কাছে ওহী করেছি তা সত্য, এটা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত, সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান

আমি যে কিতাবটি হতে তোমার প্রতি ওয়াহী করেছি তা সত্য, পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের সম্পর্কে অবশ্যই সব খবর রাখেন এবং সব দেখেন। তাইসিরুল

আমি তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি তা সত্য। এটা পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সব কিছু জানেন ও দেখেন। মুজিবুর রহমান

And that which We have revealed to you, [O Muhammad], of the Book is the truth, confirming what was before it. Indeed, Allah, of His servants, is Acquainted and Seeing. Sahih International

৩১. আর আমরা কিতাব হতে আপনার প্রতি যে ওহী করেছি তা সত্য, এর আগে যা রয়েছে তার প্রত্যয়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত, সর্বদ্ৰষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) আমি তোমার প্রতি যে গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি তা সত্য,[1] তা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সমর্থক।[2] নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দাসদের সমস্ত কিছু জানেন ও দেখেন। [3]

[1] যার উপর তোমার ও তোমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আমল অপরিহার্য।

[2] তাওরাত ও ইঞ্জীল ইত্যাদির। এই কথাটি প্রমাণ করে যে কুরআন কারীম সেই আল্লাহরই অবতীর্ণ করা গ্রন্থ যিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করেছিলেন। তবেই না গ্রন্থসমূহ পরস্পরকে সমর্থন ও সত্যায়ন করে।

[3] এটা তাঁর জানা ও দেখার ফল যে, তিনি নতুন গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। কারণ তিনি অবগত আছেন যে, পূর্বে নাযিলকৃত সকল গ্রন্থ বিকৃতি ও পরিবর্তনের শিকার হয়েছে এবং বর্তমানে তা সুপথ প্রদর্শনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:৪৫ وَ لَوۡ یُؤَاخِذُ اللّٰهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوۡا مَا تَرَكَ عَلٰی ظَهۡرِهَا مِنۡ دَآبَّۃٍ وَّ لٰكِنۡ یُّؤَخِّرُهُمۡ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ فَاِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِعِبَادِهٖ بَصِیۡرًا ﴿۴۵﴾

আর যদি আল্লাহ মানুষদেরকে তারা যা অর্জন করেছে তার জন্য পাকড়াও করতেন, তাহলে যমীনের উপর একটি প্রাণীকেও তিনি ছেড়ে দিতেন না। কিন্তু তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদেরকে বিলম্বিত করে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে যায় (তখন তিনি তাদের পাকড়াও করেন), কেননা আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

আল্লাহ মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে চাইলে ভূপৃষ্ঠের একটি প্রাণীকেও রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি তাদের জন্য একটা নির্ধারিত কাল পর্যন্ত সময় বিলম্বিত করেন। অতঃপর তাদের সে নির্ধারিত সময় যখন এসে যায়, (তখন আল্লাহর ফয়সালা কার্যকরী হতে এক মুহূর্তও বিলম্ব ঘটে না), কারণ আল্লাহ (প্রতিটি মুহূর্তে) তাঁর বান্দাহদের পর্যবেক্ষণকারী। তাইসিরুল

আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূপৃষ্ঠের কোন জীব জন্তুকেই রেহাই দিতেনন।, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে গেলে আল্লাহ হবেন তাঁর বান্দাদের সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

And if Allah were to impose blame on the people for what they have earned, He would not leave upon the earth any creature. But He defers them for a specified term. And when their time comes, then indeed Allah has ever been, of His servants, Seeing. Sahih International

৪৫. আর আল্লাহ্‌ মানুষদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করলে, ভূ-পৃষ্ঠে কোন প্রাণীকেই তিনি রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় এসে যাবে, তখন তো আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা।(১)

(১) যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আল্লাহ্‌ যদি মানুষকে তাদের সীমালঙ্ঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহুর্তকাল আগাতে বা পিছাতে পারে না।” [সূরা আন-নাহল: ৬১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করলে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না।[1] কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।[2] সুতরাং তাদের নির্দিষ্ট সময় যখন এসে পড়বে, তখন অবশ্যই আল্লাহ তাঁর দাসদের ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। [3]

[1] মানুষকে তো তাদের পাপের কারণে এবং জীব-জন্তুকে মানুষের পাপাচরণের কারণে। অথবা উদ্দেশ্য এই যে, পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল বস্তুকে ধ্বংস করে দিতেন; মানুষকেও এবং যে সকল জীব-জন্তুর তারা মালিক তাদেরকেও। অথবা উদ্দেশ্য এই যে, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দিতেন, যার ফলে পৃথিবীর উপর বিচরণশীল সকল প্রাণী ও উদ্ভিদই মারা যেত।

[2] এই ‘নির্দিষ্ট কাল’ পৃথিবীতেও হতে পারে এবং কিয়ামতের দিন তো বটেই।

[3] অর্থাৎ, সেই দিন তাদের হিসাব নেবেন এবং সকলকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রাপ্য প্রদান করবেন; ঈমানদার ও অনুগতদেরকে নেকী ও সওয়াব এবং কাফের ও অবাধ্য ব্যক্তিদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য সান্ত্বনা ও কাফেরদের জন্য শাস্তির ধমক।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪০ গাফির (আল মু'মিন)
৪০:২০ وَ اللّٰهُ یَقۡضِیۡ بِالۡحَقِّ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ لَا یَقۡضُوۡنَ بِشَیۡءٍ ؕ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۲۰﴾

আর আল্লাহ সঠিকভাবে ফয়সালা করেন এবং তাঁকে বাদ দিয়ে তারা যাদের ডাকে তারা কোন কিছুর ফয়সালা করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান

আল্লাহ হক্ব বিচার করেন। তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকে তারা মোটেই বিচার করতে পারে না। আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন। তাইসিরুল

আল্লাহ বিচার করেন সঠিকভাবে; আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা বিচার করতে অক্ষম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

And Allah judges with truth, while those they invoke besides Him judge not with anything. Indeed, Allah - He is the Hearing, the Seeing. Sahih International

২০. আর আল্লাহ ফয়সালা করেন যথাযথ ভাবে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা কোন কিছুর ফয়সালা করতে পারে না। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) আল্লাহ সঠিকভাবে ফায়সালা করেন, আল্লাহর পরিবর্তে ওরা যাদেরকে আহবান করে, তারা কিছুরই ফায়সালা করে না।[1] নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

[1] কারণ, তারা না কোন কিছুর জ্ঞান রাখে, আর না কোন কিছুর উপর ক্ষমতা। তারা বেখবর ও এখতিয়ারহীনও। অথচ ফায়সালার জন্য জ্ঞান ও এখতিয়ার উভয় জিনিসই অত্যাবশ্যক। আর উভয় গুণের একমাত্র অধিকারী হলেন মহান আল্লাহ। ফলে ফায়সালা করার অধিকার কেবল তাঁরই এবং তিনি অবশ্যই ন্যায় বিচার করবেন। কেননা, তিনি না কাউকে ভয় করেন, আর না আছে তাঁর কোন লোভ-লালসা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪০ গাফির (আল মু'মিন)
৪০:৫৬ اِنَّ الَّذِیۡنَ یُجَادِلُوۡنَ فِیۡۤ اٰیٰتِ اللّٰهِ بِغَیۡرِ سُلۡطٰنٍ اَتٰهُمۡ ۙ اِنۡ فِیۡ صُدُوۡرِهِمۡ اِلَّا كِبۡرٌ مَّا هُمۡ بِبَالِغِیۡهِ ۚ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۵۶﴾

নিশ্চয় যারা তাদের নিকট আসা কোন দলীল- প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বিতর্ক করে, তাদের অন্তরসমূহে আছে কেবল অহঙ্কার, তারা কিছুতেই সেখানে (সাফল্যের মনযিলে) পৌঁছবে না। কাজেই তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান

কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ না পেয়েই যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে তর্ক করে, তাদের বুকের ভিতর আছে কেবল অহংকার, কিন্তু তারা তা (অর্থাৎ প্রকৃত বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহর দয়া ছাড়া) কক্ষনো অর্জন করতে পারে না। কাজেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, (কারণ) তিনি সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন। তাইসিরুল

যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয় তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। অতএব আল্লাহর শরণাপন্ন হও, তিনিতো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who dispute concerning the signs of Allah without [any] authority having come to them - there is not within their breasts except pride, [the extent of] which they cannot reach. So seek refuge in Allah. Indeed, it is He who is the Hearing, the Seeing. Sahih International

৫৬. নিশ্চয় যারা নিজেদের কাছে কোন দলীল না থাকলেও আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, তারা এ ব্যাপারে সফলকাম হবে না। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চান; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) যারা নিজেদের নিকট আগত কোন দলীল ছাড়াই আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, ওদের অন্তরে আছে কেবল অহংকার যা সফল হওয়ার নয়।[1] অতএব তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর; নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

[1] অর্থাৎ, যারা আল্লাহ-প্রদত্ত কোন দলীল ছাড়াই তর্ক-বিতর্ক ও হুজ্জত করে। এরা কেবল অহংকারবশতঃ এ রকম করে। তবে এ থেকে তাদের যে বাতিলকে সবল ও হককে দুর্বল করার উদ্দেশ্য, তা তারা অর্জন করতে পারবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৪০ اِنَّ الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ اٰیٰتِنَا لَا یَخۡفَوۡنَ عَلَیۡنَا ؕ اَفَمَنۡ یُّلۡقٰی فِی النَّارِ خَیۡرٌ اَمۡ مَّنۡ یَّاۡتِیۡۤ اٰمِنًا یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِعۡمَلُوۡا مَا شِئۡتُمۡ ۙ اِنَّهٗ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۴۰﴾

নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহ বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। যে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে সে কি উত্তম, না যে কিয়ামত দিবসে নিরাপদভাবে উপস্থিত হবে? তোমাদের যা ইচ্ছা আমল কর। নিশ্চয় তোমরা যা আমল কর তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

যারা আমার আয়াতসমূহের অর্থকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে, তারা আমার থেকে লুক্কায়িত নয়। যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে সেই উত্তম না ঐ ব্যক্তি যে ক্বিয়ামতের দিন সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে হাজির হবে? তোমাদের যা ইচ্ছে হয় করতে থাক। তোমরা যা কর তা তিনি (খুব ভালভাবেই) দেখেন। তাইসিরুল

যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয়। শ্রেষ্ঠ কে? যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে, নাকি যে কিয়ামাত দিবসে নিরাপদে থাকবে সে? তোমাদের যা ইচ্ছা তা কর; তোমরা যা কর তিনি তার দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who inject deviation into Our verses are not concealed from Us. So, is he who is cast into the Fire better or he who comes secure on the Day of Resurrection? Do whatever you will; indeed, He is Seeing of what you do. Sahih International

৪০. নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহে ইলাহাদ করে, তারা আমার অগোচরে নয়। যে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে সে কি শ্ৰেষ্ঠ, না যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে উপস্থিত হবে সে? তোমরা যা ইচ্ছে আমল কর। তোমরা যা আমল কর, নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহে বক্রপথ অবলম্বন করে[1] তারা আমার অগোচর নয়।[2] যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ; না যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে উপস্থিত হবে সে?[3] তোমাদের যা ইচ্ছা কর,[4] নিশ্চয় তোমরা যা কর, তিনি তার দ্রষ্টা।

[1] অর্থাৎ, সেগুলোকে মানে না, বরং সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তা মিথ্যা ভাবে। ইবনে আববাস (রাঃ) إلحاد  এর অর্থ করেছেন, বিকৃত বা অপব্যাখ্যা করা। যার ভিত্তিতে এতে সেই ভ্রষ্ট দলগুলোও চলে আসে, যারা নিজেদের ভ্রান্ত আকীদা ও মতবাদকে সাব্যস্ত করার জন্য আল্লাহর আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যা করে এবং তার অর্থে বিকৃতি সাধন ও হেরফেরও করে।

[2] এটা হল আল্লাহর আয়াতে সর্বপ্রকার বাঁকাপথ অবলম্বনকারীদের জন্য কঠিন ধমক।

[3] অর্থাৎ, এরা উভয়ে কি সমান হতে পারে? না, কক্ষনো না। তাছাড়াও এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বাঁকাপথ অবলম্বনকারীরা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং ঈমানদাররা কিয়ামতের দিন নিরাপদে ভয়শূন্য থাকবে।

[4] এ বাক্য আজ্ঞা ও সম্মতিসূচক, কিন্তু এর উদ্দেশ্য ভয় দেখানো ও ধমকি দেওয়া। এতে কুফরী, শিরক এবং পাপাচরণের অনুমতি ও তার বৈধতার ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:১১ فَاطِرُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ جَعَلَ لَكُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِكُمۡ اَزۡوَاجًا وَّ مِنَ الۡاَنۡعَامِ اَزۡوَاجًا ۚ یَذۡرَؤُكُمۡ فِیۡهِ ؕ لَیۡسَ كَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۱۱﴾

তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা; তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে জোড়া বানিয়েছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকেও জোড়া বানিয়েছেন, (এভাবেই) তিনি তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান

আকাশসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে যুগল সৃষ্টি করেছেন, চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যেও সৃষ্টি করেছেন জোড়া, এভাবেই তিনি তোমাদের বংশধারা বিস্তৃত করেন, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন। তাইসিরুল

তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং আন‘আমের জোড়া; এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন; কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

[He is] Creator of the heavens and the earth. He has made for you from yourselves, mates, and among the cattle, mates; He multiplies you thereby. There is nothing like unto Him, and He is the Hearing, the Seeing. Sahih International

১১. তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং গৃহপালিত জন্তুর মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন জোড়া। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন; কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন[1] এবং পশুদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন পশুদের জোড়া;[2] এভাবে তিনি ওতে তোমাদের বংশ বিস্তার করেন।[3] কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।[4] তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ।

[1] অর্থাৎ, এটা তাঁর অনুগ্রহ যে, তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া বানিয়ে দিয়েছেন। কারণ, তোমাদের স্ত্রীদেরকে যদি মানুষের মধ্য থেকে না বানিয়ে অন্য কোন সৃষ্টি থেকে বানানো হত, তবে তোমরা এই প্রশান্তি লাভ করতে পারতে না, যা নিজেদের মধ্য থেকে এবং নিজেদের মতনই হওয়ার কারণে পারছ।

[2] অর্থাৎ, এই জোড়া (নর-নারী) বানানোর ধারা চতুষ্পদ জীব-জন্তুর মধ্যেও রেখেছি। আর চতুষ্পদ জন্তু বলতে সেই আট প্রকার নর ও মাদী জন্তু; যার উল্লেখ সূরা আনআমে করা হয়েছে।

[3] يَذْرَؤُكُمْ এর অর্থ, বিস্তার করা অথবা সৃষ্টি করা। অর্থাৎ, তিনি অধিকহারে তোমাদেরকে বিস্তার করছেন। অথবা বংশ পরম্পরায় সৃষ্টি করছেন। মানববংশ এবং চতুষ্পদ জীব-জন্তুর বংশকেও। فِيْهِ অর্থাৎ, فِي ذَلِكَ الْخَلْقِ عَلىَ هَذِه الصِّفَةِ সৃষ্টি করার এই পদ্ধতিতে তোমাদেরকে তিনি প্রথম থেকেই সৃষ্টি করে আসছেন। অথবা فِيْهِ এর অর্থ, গর্ভাশয়ে কিংবা পেটে। বা فِيْهِ এখানে بِهِ অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, তোমাদেরকে জোড়া জোড়া বানানোর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সৃষ্টি করছেন অথবা বিস্তার করছেন। কারণ, এই জোড়াই হল বংশ বৃদ্ধির একমাত্র উপায়। (ফাতহুল ক্বাদীর ও ইবনে কাসীর)

[4] না তাঁর সত্তায় এবং না তাঁর গুণাবলীতে। তাঁর সদৃশ তিনিই। তিনি অতুল, অনুপম, একক ও অমুখাপেক্ষী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:২৭ وَ لَوۡ بَسَطَ اللّٰهُ الرِّزۡقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ لٰكِنۡ یُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا یَشَآءُ ؕ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِیۡرٌۢ بَصِیۡرٌ ﴿۲۷﴾

আর আল্লাহ যদি তার বান্দাদের জন্য রিয্ক প্রশস্ত করে দিতেন, তাহলে তারা যমীনে অবশ্যই বিদ্রোহ করত। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণে যা ইচ্ছা নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ণ অবগত, সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

আল্লাহ যদি তাঁর সকল বান্দাহদের জন্য রিযক পর্যাপ্ত করে দিতেন, তাহলে তারা অবশ্যই যমীনে বিদ্রোহ সৃষ্টি করত; কিন্তু তিনি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে যতটুকু ইচ্ছে নাযিল করেন। তিনি তাঁর বান্দাহ্দের সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল, তিনি তাদের প্রতি সর্বদা দৃষ্টি রাখেন। তাইসিরুল

আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জীবনোপকরণের প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছা মত সঠিক পরিমানেই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সম্যক জানেন ও দেখেন। মুজিবুর রহমান

And if Allah had extended [excessively] provision for His servants, they would have committed tyranny throughout the earth. But He sends [it] down in an amount which He wills. Indeed He is, of His servants, Acquainted and Seeing. Sahih International

২৭. আর যদি আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের রিযিক প্রশস্ত করে দিতেন, তবে তারা যমীনে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছেমত পরিমাণেই নাযিল করে থাকেন। নিশ্চয় তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত ও সর্বদ্ৰষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) আল্লাহ তাঁর সকল দাসকে রুযীতে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত;[1] কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর দাসদেরকে সম্যক জানেন এবং দেখেন।

[1] অর্থাৎ, যদি মহান আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমানভাবে প্রয়োজনেরও বেশী রুযীর উপায়-উপকরণসমূহ দান করতেন, তবে তার ফল এই হত যে, কেউ কারো পরাধীনতা স্বীকার করত না। প্রত্যেক ব্যক্তি ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি এবং সীমালঙ্ঘন করার ব্যাপারে অন্যের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকত। আর এইভাবে পৃথিবী বিপর্যয়ে ভরে যেত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৯ আল-হুজুরাত
৪৯:১৮ اِنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ غَیۡبَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اللّٰهُ بَصِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸﴾

নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব সম্পর্কে অবগত আছেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

আসমান ও যমীনের গোপন বিষয়ের খবর আল্লাহই জানেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। তাইসিরুল

আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah knows the unseen [aspects] of the heavens and the earth. And Allah is Seeing of what you do. Sahih International

১৮. নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব সম্পর্কে অবগত। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) নিশ্চয় আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৭ আল-হাদীদ
৫৭:৪ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡهَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡهَا ؕ وَ هُوَ مَعَكُمۡ اَیۡنَ مَا كُنۡتُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۴﴾

তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আরশে উঠেছেন। তিনি জানেন যমীনে যা কিছু প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা কিছু বের হয়; আর আসমান থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয় এবং তাতে যা কিছু উত্থিত হয়। আর তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

তিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি জানেন যা যমীনে প্রবেশ করে, আর যা তাত্থেকে বের হয়, আর যা আকাশ থেকে অবতীর্ণ হয়, আর যা তাতে উঠে যায়, তোমরা যেখানেই থাকো তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যে কাজই কর না কেন, আল্লাহ তা দেখেন। তাইসিরুল

তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে এবং যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। মুজিবুর রহমান

It is He who created the heavens and earth in six days and then established Himself above the Throne. He knows what penetrates into the earth and what emerges from it and what descends from the heaven and what ascends therein; and He is with you wherever you are. And Allah, of what you do, is Seeing. Sahih International

৪. তিনি ছয় দিনে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি জানেন যা কিছু যমীনে প্রবেশ করে এবং যা কিছু তা থেকে বের হয়, আর আসমান থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয় এবং তাতে যা কিছু উত্থিত হয়।(১) আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন—তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা।(২)

(১) অন্য কথায় তিনি শুধু সামগ্রিক জ্ঞানের অধিকারী নন, খুঁটি-নাটি বিষয়েও জ্ঞানের অধিকারী। এক একটি শস্যদানা ও বীজ যা মাটির গভীরে প্রবিষ্ট হয়, এক একটি ছোট পাতা ও অংকুর যা মাটি ফুড়ে বের হয়, বৃষ্টির এক একটি বিন্দু যা আসমান থেকে পতিত হয় এবং সমুদ্র ও খাল-বিল থেকে যে বাষ্পরাশি আকাশের দিকে উত্থিত হয়, তার প্রতিটি মাত্ৰা তার জানা আছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(২) অর্থাৎ তোমরা কোন জায়গায়ই তাঁর জ্ঞান, তাঁর অসীম ক্ষমতা, তাঁর শাসন কর্তৃত্ব এবং তাঁর ব্যবস্থাপনার আওতা বহির্ভূত নও। মাটিতে, বায়ুতে, পানিতে অথবা কোন নিভৃত কোণে যেখানেই তোমরা থাক না কেন সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ জানেন তোমরা কোথায় আছো। [ইবন কাসীর] ইমাম আহমাদ রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, ‘সম্যক দ্রষ্টা’ যা প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের বাইরে থেকেও সবকিছু দেখছেন। তাই এখানে সঙ্গে থাকার অর্থ, সৃষ্টির সাথে লেগে থাকার অর্থ নয়, বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা তাঁর দৃষ্টি ও শক্তির অধীন। তাঁর দৃষ্টি ও শক্তি তোমাদের সঙ্গে আছে। [দেখুন: আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ ওয়ায যানাদিকাহ: ১৫৪–১৫৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।[1] তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে[2] ও যা কিছু তা হতে বের হয়[3] এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে[4] ও আকাশে যা কিছু উত্থিত হয়।[5] তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন,[6] তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন।

[1] এই অর্থেরই কিছু আয়াত সূরা আ’রাফ ৫৪, সূরা ইউনুস ৩ এবং সূরা আলিফ লা-ম মীম সাজদাহ ৪ প্রভৃতি স্থানে রয়েছে। সেগুলোর টীকা দ্রষ্টব্য।

[2] অর্থাৎ, যমীনে বৃষ্টির যে ফোঁটাগুলো এবং শস্য ও ফল-মূলের যে বীজগুলো প্রবেশ করে, তার পরিমাণ-মাত্রা এবং ধরণ-গঠন তিনিই জানেন।

[3] যে গাছ-পালা, চাহে তা ফলের হোক বা শস্যাদির হোক কিংবা সৌন্দর্য ও সাজের গাছ বা সুগন্ধ ফুলের গাছ হোক, এগুলো যত পারিমাণে ও যেভাবে বের হয়ে আসে, সব কিছুই আল্লাহর জ্ঞানে থাকে। যেমন, অন্যত্র বলেছেন,

{وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلاَ حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلاَ رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ}

অর্থাৎ, তাঁরই নিকট অদৃশ্যের চাবি রয়েছে; তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত। তাঁর অজ্ঞাতসারে (বৃক্ষের) একটি পাতাও পড়ে না, মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণা অথবা রসযুক্ত কিম্বা শুষ্ক এমন কোন বস্তু পড়ে না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা আনআমঃ ৫৯)

[4] বজ্র, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বরফ, বরকত, ভাগ্য এবং সেই সব বিধানাবলী, যা ফিরিশতাগণ নিয়ে অবতরণ করেন।

[5] অর্থাৎ, ফিরিশতাগণ মানুষের যে আমল নিয়ে ওপরে ওঠেন। যেমন হাদীসে আছে যে, ‘‘রাতের আমল দিনের পূর্বে এবং দিনের আমল রাতের পূর্বে আল্লাহর নিকট উঠে যায়।’’

(মুসলিম, কিতাবুল ঈমান)

[6] অর্থাৎ, তোমরা স্থলে থাক বা জলে, রাত হোক অথবা দিন, গৃহে থাক অথবা মরুভূমিতে, প্রত্যেক স্থানে সদা-সর্বদা তিনি তাঁর জ্ঞান ও দর্শন দ্বারা তোমাদের সঙ্গে থাকেন। অর্থাৎ, তোমাদের প্রতিটি কাজকে তিনি দেখেন। তোমাদের প্রতিটি কথা তিনি জানেন ও শোনেন। এ­ই বিষয়টা সূরা হূদের ৫নং এবং সূরা রা’দের ১০নং আয়াত সহ অন্যান্য আয়াতেও বর্ণনা করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৮ আল-মুজাদালা
৫৮:১ قَدۡ سَمِعَ اللّٰهُ قَوۡلَ الَّتِیۡ تُجَادِلُكَ فِیۡ زَوۡجِهَا وَ تَشۡتَكِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ٭ۖ وَ اللّٰهُ یَسۡمَعُ تَحَاوُرَكُمَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ ﴿۱﴾

আল্লাহ অবশ্যই সে রমনীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছিল আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিল। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান

আল্লাহ তার কথা শুনেছেন যে নারী (খাওলাহ বিনত সা‘লাবাহ) তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের দু’জনের কথা শুনছেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। তাইসিরুল

(হে রাসূল) আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করেছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

Certainly has Allah heard the speech of the one who argues with you, [O Muhammad], concerning her husband and directs her complaint to Allah. And Allah hears your dialogue; indeed, Allah is Hearing and Seeing. Sahih International

১. আল্লাহ অবশ্যই শুনেছেন সে নারীর কথা; যে তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর কাছেও ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।(১)

(১) শরীআতের পরিভাষায় এই বিশেষ মাসআলাটিকে ‘যিহার’ বলা হয়। এই সূরার প্রাথমিক আয়াতসমূহে যিহারের শরীআতসম্মত বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আল্লাহ তা’আলা খাওলা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ফরিয়াদ শুনে তার জন্য তার সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন। তার খাতিরে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে এসব আয়াত নাযিল করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ সেই সত্তা পবিত্র, যার শোনা সবকিছুকে শামিল করে। যিনি সব আওয়ায ও প্রত্যেকের ফরিয়াদ শুনেন; খাওলা বিনতে সালাবাহ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে তার স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করছিল, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এত নিকটে থাকা সত্বেও আমি তার কোনো কোনো কথা শুনতে পারিনি। অথচ আল্লাহ তা’আলা সব শুনেছেন এবং বলেছেনঃ (قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ) [বুখারী: ৭৩৮৫, নাসায়ী: ৩৪৬০]।

তাই সাহাবায়ে কেরাম এই মহিলার প্রতি অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করতেন। একদিন খলীফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদল লোকের সাথে গমনরত ছিলেন। পথিমধ্যে এই মহিলা সামনে এসে দণ্ডায়মান হলে তিনি দাঁড়িয়ে তার কথাবার্তা শুনলেন। কেউ কেউ বললঃ আপনি এই বৃদ্ধার খাতিরে এতবড় দলকে পথে আটকিয়ে রাখলেন। খলিফা বললেনঃ জান ইনি কে? এ সেই মহিলা, যার কথা আল্লাহ তা’আলা সপ্ত আকাশের উপরে শুনেছেন। অতএব, আমি কি তার কথা এড়িয়ে যেতে পারি? আল্লাহর কসম, তিনি যদি স্বেচ্ছায় প্রস্থান না করতেন, তবে আমি রাত্রি পর্যন্ত তার সাথে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতাম। [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) (হে রসূল!) অবশ্যই আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন।[1] নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

[1] এখানে খাওলা বিনতে মালেক বিন সা’লাবা (রাঃ) র ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাঁর স্বামী তাঁর সাথে ‘যিহার’ করেছিল। ‘যিহার’ মানে স্ত্রীকে এই বলা যে, ‘তুমি আমার কাছে আমার মায়ের পিঠের মত।’ জাহেলী যুগে যিহারকে তালাক গণ্য করা হত। সুতরাং খাওলা (রাঃ)  বড়ই অস্থির হয়ে পড়েন। আর তখন যিহারের ব্যাপারে কোন বিধান অবতীর্ণ হয়নি। ফলে তিনি রসূল (সাঃ)-এর কাছে এলেন। তিনিও এ ব্যাপারে একটু নীরবতা অবলম্বন করলেন এবং খাওলা (রাঃ)  তাঁর সাথে বাদানুবাদ করেই যাচ্ছিলেন। ঠিক এ সময়ই এই আয়াতগুলো নাযিল হয়। এতে যিহারের মাসআলা, তার বিধান এবং তার কাফফারার কথা বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। (আবূ দাউদ তালাক অধ্যায়ঃ যিহার পরিচ্ছেদ) আয়েশা (রাঃ)  বলেন, মহান আল্লাহ কিভাবে মানুষের কথা শুনে থাকেন যে, একটি মহিলা রসূল (সাঃ)-এর সাথে বাদানুবাদ করছিল এবং তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করছিল। আমি তার কথা শুনতে পাইনি, কিন্তু মহান আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে তার কথা শুনে নিয়েছেন। (ইবনে মাজাহঃ ভূমিকা, বুখারীতেও বিনা সনদে সংক্ষিপ্তভাবে তাওহীদ অধ্যায়ে এ বর্ণনা রয়েছে)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬০ আল-মুমতাহিনা
৬০:৩ لَنۡ تَنۡفَعَكُمۡ اَرۡحَامُكُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُكُمۡ ۚۛ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ۚۛ یَفۡصِلُ بَیۡنَكُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۳﴾

কিয়ামত দিবসে তোমাদের আত্নীয়তা ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের কোন উপকার করতে পারবে না। তিনি তোমাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের আত্মীয়-স্বজন ও সন্তানাদি তোমাদের কোনই উপকারে আসবে না। (নিজ নিজ ‘আমালের ভিত্তিতে) আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। তাইসিরুল

তোমাদের অত্মীয়-স্বজন ও সন্তান-সন্ততি কিয়ামাত দিবসে কোন কাজে আসবেনা। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফাইসালা করে দিবেন; তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। মুজিবুর রহমান

Never will your relatives or your children benefit you; the Day of Resurrection He will judge between you. And Allah, of what you do, is Seeing. Sahih International

৩. তোমাদের আত্মীয়-স্বজন ও সন্তান-সন্ততি কিয়ামতের দিন কোন উপকার করতে পারবে না। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) তোমাদের আত্মীয়-স্বজন ও সন্তান-সন্ততি কিয়ামতের দিন কোনই কাজে আসবে না।[1] আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। [2] আর তোমরা যা কর, তিনি তা দেখেন।

[1] অর্থাৎ, যে সন্তান-সন্ততিদের জন্য তোমরা কাফেরদের প্রতি ভালবাসা দেখাচ্ছ তারা তো তোমাদের কোন উপকারে আসবে না। তাহলে তাদের জন্য কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট কেন করছ? কিয়ামতের দিন যে জিনিস উপকারে আসবে, তা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য। অতএব এর প্রতি যত্নবান হও।

[2] এর দ্বিতীয় অর্থ হল, আল্লাহ তোমাদেরকে পৃথক পৃথক করে দেবেন। অর্থাৎ, আনুগত্যকারীদেরকে জান্নাতে এবং অবাধ্যজনদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। কেউ কেউ বলেন, পৃথক হওয়ার অর্থ হল, এক অপরের কাছ থেকে পালাবে। যেমন, আল্লাহ বলেন, يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ যেদিন (কঠিন ভয়াবহতার কারণে) ভাই ভাই থেকে পালাবে। (আবাসাঃ ৩৪)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬৪ আত-তাগাবুন
৬৪:২ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ فَمِنۡكُمۡ كَافِرٌ وَّ مِنۡكُمۡ مُّؤۡمِنٌ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۲﴾

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কতক কাফির এবং কতক মু’মিন। আর তোমরা যে আমল করছ আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির, কেউ মু’মিন; তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। তাইসিরুল

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেহ হয় কাফির এবং কেহ মু’মিন। তোমরা যা কর আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

It is He who created you, and among you is the disbeliever, and among you is the believer. And Allah, of what you do, is Seeing. Sahih International

২. তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ হয় কাফির এবং তোমাদের মধ্যে কেউ হয় মুমিন।(১) আর তোমরা যে আমল করা আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা।

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি মানুষই সেটার উপরই পুনরুত্থিত হবে, যার উপর তার মৃত্যু হয়। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৯০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ হয় অবিশ্বাসী এবং কেউ বিশ্বাসী। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। [1]

[1] অর্থাৎ, মানুষের জন্য ভাল-মন্দ, নেকী-বদী এবং কুফরী ও ঈমানের রাস্তাসমূহ পরিক্ককার বাতলে দেওয়ার পর মহান আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও এখতিয়ারের যে স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারই ভিত্তিতে কেউ কুফরী এবং কেউ ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে। তিনি কাউকে কোন কিছুর উপর বাধ্য করেননি। তিনি বাধ্য করলে, কোন ব্যক্তি কুফরী ও অবাধ্যতার রাস্তা অবলম্বন করতে সক্ষম হত না। কিন্তু এইভাবে মানুষকে পরীক্ষা করা সম্ভব হত না। অথচ আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা হল মানুষকে পরীক্ষা করা। الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا (الملك: ২) অতএব যেমন কাফেরের স্রষ্টা আল্লাহ, তেমনি কুফরীর স্রষ্টাও তিনিই। কিন্তু এই কুফরী এই কাফেরের নিজের উপার্জিত। সে স্বেচ্ছায় তা অবলম্বন করেছে। অনুরূপ মু’মিন ও ঈমানের স্রষ্টা আল্লাহই, কিন্তু ঈমান এই মু’মিনের নিজের উপার্জন করা জিনিস। সে স্বেচ্ছায় এটা অবলম্বন করছে। আর এই উপার্জনের ভিত্তিতে উভয়কেই তাদের আমল অনুযায়ী বদলাও দেওয়া হবে। কারণ, তিনি সবারই আমল দেখছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬৭ আল-মুলক
৬৭:১৯ اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اِلَی الطَّیۡرِ فَوۡقَهُمۡ صٰٓفّٰتٍ وَّ یَقۡبِضۡنَ ؔۘؕ مَا یُمۡسِكُهُنَّ اِلَّا الرَّحۡمٰنُ ؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَیۡءٍۭ بَصِیۡرٌ ﴿۱۹﴾

তারা কি লক্ষ্য করেনি তাদের উপরস্থ পাখিদের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদেরকে স্থির রাখে না। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

তারা কি তাদের উপর দিকে পাখীগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না যারা ডানা মেলে দেয় আবার গুটিয়ে নেয়? দয়াময় ছাড়া অন্য কেউই তাদেরকে (উপরে) ধরে রাখে না। তিনি সবকিছুর সম্যক দ্রষ্টা। তাইসিরুল

তারা কি লক্ষ্য করেনা তাদের উর্ধ্বদেশে বিহঙ্গকূলের প্রতি, যারা পক্ষ বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

Do they not see the birds above them with wings outspread and [sometimes] folded in? None holds them [aloft] except the Most Merciful. Indeed He is, of all things, Seeing. Sahih International

১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উপরে পাখিদের প্রতি, যারা পাখা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহ্‌ই তাদেরকে স্থির রাখেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছুর সম্যক দ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের ঊর্ধ্বদেশে পক্ষীকুলের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে?[1] পরম দয়াময়ই তাদেরকে স্থির রাখেন।[2] নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।

[1] পাখীরা যখন হাওয়াতে উড়তে থাকে, তখন তারা পাখা মেলে দেয়। কখনো আবার উড়ন্ত অবস্থায় নিজের পাখা গুটিয়ে নেয়। এই পাখা মেলাকে صفّ আর গুটিয়ে নেওয়াকে قَبض বলা হয়।

[2] অর্থাৎ, কোন্ সত্তা এই উড়ন্ত পাখীকে (আকাশে) স্থির রাখেন, তাকে যমীনে পড়তে দেন না? এটা দয়াবান আল্লাহর মহাশক্তির এক নিদর্শন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2