কুরআন তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে তুমি তোমার জিহবাকে দ্রুত আন্দোলিত করো না। আল-বায়ান
(এ সূরাহ অবতীর্ণ হওয়ার সময় আল্লাহর রসূল তা মুখস্থ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে আল্লাহ অভয় দিয়ে বললেন) তুমি তাড়াতাড়ি ওয়াহী আয়ত্ত করার জন্য তোমার জিভ নাড়াবে না। তাইসিরুল
তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত্ব করার জন্য তুমি তোমার জিহবা দ্রুততার সাথে সঞ্চালন করনা। মুজিবুর রহমান
Move not your tongue with it, [O Muhammad], to hasten with recitation of the Qur'an. Sahih International
১৬. তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি তা নিয়ে আপনার জিহ্বাকে দ্রুত সঞ্চালন করবেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা ওর সাথে সঞ্চালন করো না। [1]
[1] জিবরীল (আঃ) যখন অহী নিয়ে আসতেন, তখন নবী (সাঃ)ও তাঁর সাথে সাথে তাড়াতাড়ি করে পড়ে যেতেন। যাতে কোন শব্দ যেন ভুলে না যান। আল্লাহ তাঁকে ফিরিশতার সাথে এইভাবে পড়তে নিষেধ করলেন। (বুখারীঃ সূরা কিয়ামার তফসীর) এ বিষয় পূর্বেও আলোচিত হয়েছে। وَلَا تَعْجَلْ بِِالقُرْآنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ (সূরা ত্বাহা ১১৪ আয়াত দ্রঃ) সুতরাং এই নির্দেশের পর রসূল (সাঃ) চুপ করে কেবল শুনতেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয়ই এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমার দায়িত্বে। আল-বায়ান
এর সংরক্ষণ ও পড়ানোর দায়িত্ব আমারই। তাইসিরুল
ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। মুজিবুর রহমান
Indeed, upon Us is its collection [in your heart] and [to make possible] its recitation. Sahih International
১৭. নিশ্চয় এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমাদেরই।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) নিশ্চয় এটার সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। [1]
[1] অর্থাৎ, তোমার বক্ষে তা সংরক্ষণ করে দেওয়া এবং জবানে তার পঠন কাজ চালু করে দেওয়া হল আমার দায়িত্ব। যাতে তার কোন অংশ তোমার স্মরণচ্যুত না হয় এবং কোন কিছু তোমার স্মৃতি থেকে মুছে না যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর যখন আমি তা পাঠ করি তখন তুমি তার পাঠের অনুসরণ কর। আল-বায়ান
কাজেই আমি যখন তা পাঠ করি, তখন তুমি সে পাঠের অনুসরণ কর। তাইসিরুল
সুতরাং যখন আমি উহা পাঠ করাই তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। মুজিবুর রহমান
So when We have recited it [through Gabriel], then follow its recitation. Sahih International
১৮. কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) সুতরাং যখন আমি ওটা (জিব্রাঈলের মাধ্যমে) পাঠ করি,[1] তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর।[2]
[1] অর্থাৎ, ফিরিশতা [জিবরীল (আঃ)] এর দ্বারা যখন আমি তোমার উপর এর পঠন কাজ সম্পূর্ণ করে নিই।
[2] অর্থাৎ, তার যাবতীয় বিধি-বিধান লোকদেরকে পাঠ করে শুনাও এবং তার অনুসরণও কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানপড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। আল-বায়ান
পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তাইসিরুল
তুমি পাঠ কর তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। মুজিবুর রহমান
Recite in the name of your Lord who created - Sahih International
১. পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন(১)—
(১) শুধু বলা হয়েছে, “সৃষ্টি করেছেন” কাকে সৃষ্টি করেছেন তা বলা হয়নি। এ থেকে আপনা-আপনিই এ অর্থ বের হয়ে আসে, সেই রবের নাম নিয়ে পড় যিনি স্রষ্টা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের, সমগ্র সৃষ্টিজগতের। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া১। তুমি পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। [1]
[1] এটাই সর্বপ্রথম অহী যা নবী (সাঃ)-এর উপর ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন তিনি হিরা গুহায় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। ফিরিশতা (জিবরীল) তাঁর নিকট এসে বললেন, ‘পড়।’ তিনি বললেন, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ ফিরিশতা তাঁকে জড়িয়ে ধরে শক্তভাবে চেপে ধরলেন এবং বললেন, ‘পড়।’ তিনি পুনর্বার একই উত্তর দিলেন। এইভাবে ফিরিশতা তিনবার করলেন। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুনঃ সহীহ বুখারী অহী অধ্যায়, মুসলিম ঈমান অধ্যায় ও অহীর প্রারম্ভিক সূচনার পরিচ্ছেদ।)
اِقْرَأْ অর্থাৎ, যা আপনার প্রতি অহী করা হয়েছে তা পড়। خَلَق শব্দের অর্থ হল যিনি সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে 'আলাক' থেকে। আল-বায়ান
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে। তাইসিরুল
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। মুজিবুর রহমান
Created man from a clinging substance. Sahih International
২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে।(১)
(১) পূর্বের আয়াতে সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টির বর্ণনা ছিল। এ আয়াতে সৃষ্টিজগতের মধ্য থেকে বিশেষ করে মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, মানুষকে ‘আলাক’ থেকে সৃষ্টি করেছেন। ‘আলাক’ হচ্ছে ‘আলাকাহ’ শব্দের বহুবচন। এর মানে জমাট বাঁধা রক্ত। সাধারণভাবে বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টির কথা বলার পর বিশেষ করে মানুষের কথা বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কেমন হীন অবস্থা থেকে তার সৃষ্টিপর্ব শুরু করে তাকে পূর্ণাংগ মানুষে রূপান্তরিত করেছেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া২। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। [1]
[1] এই আয়াতে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ করে মানুষের জন্মের কথা উল্লেখ হয়েছে; যাতে মানুষের মর্যাদা স্পষ্ট।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানপড়, আর তোমার রব মহামহিম। আল-বায়ান
পাঠ কর, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। তাইসিরুল
পাঠ করঃ আর তোমার রাব্ব মহা মহিমান্বিত, মুজিবুর রহমান
Recite, and your Lord is the most Generous - Sahih International
৩. পড়ুন, আর আপনার রব মহিমান্বিত(১)
(১) এখানে পড়ার আদেশের পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, প্রথম আদেশটি নিজে পাঠ করার আদেশ, আর দ্বিতীয়টি অন্যকে পাঠ করানো বা অন্যের নিকট প্রচারের নির্দেশ। [ফাতহুল কাদীর] অতঃপর মহান রব আল্লাহর সাথে أَكْرَم বিশেষণ যোগ করার মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টি করা এবং তাদের শিক্ষাদান করার নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার নিজের কোন স্বার্থ ও লাভ নেই; বরং এগুলো তাঁরই অনুগ্রহ, তাঁরই দান। তিনি সর্বমহান দানশীল ও মহামহিমান্বিত। [আদওয়াউল বায়ান, মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। তুমি পড়। আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। [1]
[1] এ বাক্যটি তাকীদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ দ্বারা বড় অলঙ্কারপূর্ণ ভঙ্গিমায় নবী (সাঃ) এর ওযরের জওয়াব দেওয়া হয়েছে, যা তিনি ‘আমি পড়তে জানি না’ বলে পেশ করেছিলেন। আল্লাহ বললেন, আল্লাহ মহামহিমান্বিত; তুমি পড়। অর্থাৎ, মানুষের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা তাঁর বিশেষ গুণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। আল-বায়ান
যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে, তাইসিরুল
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। মুজিবুর রহমান
Who taught by the pen - Sahih International
৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন(১)-
(১) মানব সৃষ্টির কথা বর্ণনার পর এখানে মানুষের শিক্ষার প্রসঙ্গটি উল্লেখিত হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি মানুষকে কলমের মাধ্যমে তথা লেখার শিক্ষা দান করেছেন। তা না হলে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের উন্নতি, বংশানুক্রমিক ক্ৰমবিকাশ সম্ভব হত না। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পূর্ববর্তদের জীবন-কাহিনী, আসমানী-কিতাব সব কিছুই সংরক্ষিত হয়েছে লেখনির মাধ্যমে। কলম না থাকলে, দ্বীন এবং দুনিয়ার কোন কিছুই পূর্ণরূপে গড়ে উঠত না। [ফাতহুল কাদীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা'আলা যখন প্রথম সবকিছু সৃষ্টি করেন, তখন আরশে তার কাছে রক্ষিত কিতাবে একথা লিপিবদ্ধ করেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল থাকবে।” [বুখারী: ৩১৯৪, ৭৫৫৩, মুসলিম: ২৭৫১] হাদীসে আরও বলা হয়েছে, “আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার নির্দেশ দেন। সেমতে কলম কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখে ফেলে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩১৭]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। [1]
[1] قَلم অর্থ হল কাটা, চাঁছা বা ছিলা। পূর্ব যুগে লোকেরা কেটে বা চেঁছে কলম তৈরী করত। এই জন্য লেখার যন্ত্রকে কলম বলা হয়। কিছু ইলম (জ্ঞান) তো মানুষের স্মৃতিতে থাকে, কিছু আবার জিহবা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, আর কিছু ইলম মানুষ কলম দ্বারা কাগজে লিখে হিফাযত করে থাকে। মস্তিষ্ক ও স্মৃতিতে যা থাকে তা মানুষের সাথে চলে যায়। জিহ্বা দ্বারা যা প্রকাশ করা হয়, তাও সংরক্ষিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। আল-বায়ান
শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না, তাইসিরুল
তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতনা। মুজিবুর রহমান
Taught man that which he knew not. Sahih International
৫. শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।(১)
(১) পূর্বের আয়াতে ছিল কলমের সাহায্যে শিক্ষা দানের বর্ণনা। এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রকৃত শিক্ষাদাতা আল্লাহ তা'আলা। মানুষ আসলে ছিল সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন। আল্লাহর কাছ থেকেই সে যা কিছু জ্ঞান লাভ করেছে। [সা’দী] কলমের সাহায্যে যা শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তিনি এমন সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা মানুষ জানত না। কেউ কেউ বলেন, এখানে মানুষ বলে আদম আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাকে বিভিন্ন বস্তুর নাম ও গুণাগুণ শিক্ষা দিয়েছেন। যেমনটি সূরা আল-বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান