তারা বলবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো’? (তাদেরকে বলা হবে) ‘এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুনাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন’। আল-বায়ান
তারা বলবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমাদেরকে আমাদের ঘুমের জায়গা থেকে কে উঠালো? (তাদেরকে জবাব দেয়া হবে) ‘‘এটা হল তাই- দয়াময় আল্লাহ যার ও‘য়াদা দিয়েছিলেন, আর রসূলগণও সত্য কথাই বলেছিলেন।’ তাইসিরুল
তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল হতে উঠালো? দয়াময় (আল্লাহ) তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। মুজিবুর রহমান
They will say, "O woe to us! Who has raised us up from our sleeping place?" [The reply will be], "This is what the Most Merciful had promised, and the messengers told the truth." Sahih International
৫২. তারা বলবে, হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ্ তো এরই প্ৰতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫২) ওরা বলবে, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল?’[1] এ হল তা-ই, পরম দয়াময় যার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।
[1] কবরকে নিদ্রাস্থল বলার উদ্দেশ্য এ নয় যে, কবরে তাদের আযাব হবে না। বরং তখন যে ভয়ানক দৃশ্য এবং শাস্তির কঠিনতা দেখবে, তার তুলনায় তাদেরকে কবরের জীবন একটি নিদ্রাস্থল বলে মনে হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ, ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের সকলকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে। আল-বায়ান
মাত্র একটা প্রচন্ড শব্দ হবে, তক্ষুণি তাদের সব্বাইকে আমার সামনে হাজির করা হবে। তাইসিরুল
এটা হবে শুধুমাত্র এক মহানাদ; তখনই তাদের সকলকে উপস্থিত করা হবে আমার সম্মুখে। মুজিবুর রহমান
It will not be but one blast, and at once they are all brought present before Us. Sahih International
৫৩. এটা হবে শুধু এক বিকট শব্দ; তখনই এদের সকলকে উপস্থিত করা হবে আমাদের সামনে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৩) এ হবে এক মহাগর্জন; তখনই ওদের সকলকে আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসুতরাং আজ কাউকেই কোন যুলম করা হবে না এবং তোমরা যা আমল করছিলে শুধু তারই প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে। আল-বায়ান
আজ কারো প্রতি কোন যুলম করা হবে না, তোমরা যে ‘আমাল করছিলে তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেয়া হবে। তাইসিরুল
আজ কারও প্রতি কোন যুলম করা হবেনা এবং তোমরা যা করতে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে। মুজিবুর রহমান
So today no soul will be wronged at all, and you will not be recompensed except for what you used to do. Sahih International
৫৪. অতঃপর আজ কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করতে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) এবং বলা হবে, আজ কারও প্রতি কোন জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করতে কেবল তারই প্রতিফল দেওয়া হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর [বলা হবে] ‘হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও’। আল-বায়ান
(সে দিন বলা হবে) ‘হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।’ তাইসিরুল
আর হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও। মুজিবুর রহমান
[Then He will say], "But stand apart today, you criminals. Sahih International
৫৯. আর হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।(১)
(১) হাশরের ময়দানে প্রথমে মানুষ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় সমবেত হবে। অন্য আয়াতে এ অবস্থার চিত্ৰ বৰ্ণনা করে বলা হয়েছে, “তারা হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মত” [সূরা আল কামার: ৭] কিন্তু পরে কর্মের ভিত্তিতে তাদের পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত করা হবে। এর দু'টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, অপরাধীরা সৎকর্মশীল মুমিনদের থেকে ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যাও। কারণ দুনিয়ায় তোমরা তাদের সম্প্রদায়, পরিবার ও গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত থাকলে থাকতে পারো, কিন্তু এখানে এখন তোমাদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ফলে কাফের, মুমিন, সৎকর্মী ও অসৎকর্মী লোকগণ পৃথক পৃথক জায়গায় অবস্থান করবে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আর যখন আত্মাসমূহকে জোড়া জোড়া করা হবে।” [সূরা আত-তাকওয়ীর: ৭] আলোচ্য আয়াতেও এ পৃথকীকরণ ব্যক্ত হয়েছে।
অনুরূপভাবে এ পৃথকীকরণের কথা কুরআনের অন্যান্য সূরায়ও বর্ণিত হয়েছে, যেমন: সূরা ইউনুস: ৩৮, সূরা আর-রূম: ১৪, ৪৩, সূরা আস-সাফফাত: ২২–২৩। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেদের মধ্যে আলাদা হয়ে যাও। এখন তোমাদের কোন দল ও জোট থাকতে পারে না। তোমাদের সমস্ত দল ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তোমাদের সকল প্রকার সম্পর্ক ও আত্মীয়তা খতম করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে এখন একাকী ব্যক্তিগতভাবে নিজের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৯) আর (বলা হবে,) ‘হে অপরাধিগণ! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।’ [1]
[1] অর্থাৎ, মু’মিনদের থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়াও। অর্থাৎ, হাশরের ময়দানে মু’মিন ও অনুগত এবং কাফের ও অবাধ্যকে আলাদা আলাদা করে দেওয়া হবে। যেমন অন্য স্থানে মহান আল্লাহ বলেন
(وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَّتَفَرَّقُوْنَ (يَوْمَئِذٍ يَّصَّدَّعُوْنَ) أي :يَصِيْرُوْنَ صَدْعَيْنِ فِرْقَتَيْنِ
অর্থাৎ, সেই দিন মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। (সূরা রূম ১৪, ৪৩ আয়াত) দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল যে, পাপীদেরকেই বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেওয়া হবে। যেমন ইয়াহুদীদের দল, খ্রিষ্টানদের দল, বেদ্বীনদের দল, অগ্নিপূজকদের দল, ব্যভিচারীদের দল, মদ্যপায়ীদের দল ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, ‘তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’? আল-বায়ান
‘হে আদাম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়ত্বানের ‘ইবাদাত করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন? তাইসিরুল
হে বানী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শাইতানের দাসত্ব করনা, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? মুজিবুর রহমান
Did I not enjoin upon you, O children of Adam, that you not worship Satan - [for] indeed, he is to you a clear enemy - Sahih International
৬০. হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদাত করো না(১), কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
(১) অর্থাৎ সমস্ত মানুষ এমনকি, জিনদেরকেও কেয়ামতের দিন বলা হবে, আমি কি তোমাদেরকে দুনিয়াতে শয়তানের ইবাদত না করার আদেশ দেইনি? এখানে প্রশ্ন হয় যে, কাফেররা সাধারণত শয়তানের এবাদত করত না, বরং দেবদেবী অথবা অন্যকোন বস্তুর পূজা করত। কাজেই তাদেরকে শয়তানের ইবাদত করার অভিযোগে কেমন করে অভিযুক্ত করা যায়? এর জওয়াব হচ্ছে, এখানে আল্লাহ “ইবাদত” কে আনুগত্য অর্থে ব্যবহার করেছেন। প্রত্যেক কাজে ও প্রত্যেক অবস্থায় কারও আনুগত্য করার নামই ইবাদত। শয়তানকে নিছক সিজদা করাই নিষিদ্ধ নয় বরং তার আনুগত্য করা এবং তার হুকুম মেনে চলাও নিষিদ্ধ। কাজেই আনুগত্য হচ্ছে ইবাদাত। শয়তানের ইবাদাত করার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। কখনো এমন হয়, মানুষ একটি কাজ করে এবং তার অংগ-প্রত্যংগের সাথে সাথে তার কণ্ঠও তার সহযোগী হয় এবং মনও তার সাথে অংশ গ্ৰহণ করে। আবার কখনো এমনও হয়, অংগ-প্রত্যংগের সাহায্যে মানুষ একটি কাজ করে কিন্তু অন্তর ও কণ্ঠ সে কাজে তার সহযোগী হয় না।
এ হচ্ছে নিছক বাইরের অংগ-প্রত্যংগের সাহায্যে শয়তানের ইবাদাত। আবার এমন কিছু লোকও আছে যারা ঠাণ্ডা মাথায় অপরাধ করে এবং মুখেও নিজেদের এ কাজে আনন্দ ও সন্তোষ প্রকাশ করে। এরা ভিতরে বাইরে উভয় পর্যায়ে শয়তানের ইবাদতকারী। তারা চিরকাল শয়তানী শিক্ষার অনুসরণ করেছিল বিধায় তাদেরকে শয়তানের ইবাদতকারী বলা হয়েছে। সে অনুসারেই যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কিংবা অসন্তুষ্টির তোয়াক্কা না করে অর্থের মহব্বতেএমন সবকাজ করে, যদ্দারা অর্থ বৃদ্ধি পায় এবং স্ত্রীর মহব্বতেএমন সবকাজ করে যদ্দারা স্ত্রী সন্তুষ্ট হয়, হাদীসে তাদেরকে অর্থের দাস ও স্ত্রীর দাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। [দেখুন: বুখারী: ২৮৮৬, তিরমিযী: ২৩৭৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬০) হে আদম সন্তান-সন্ততিগণ! আমি কি তোমাদের কাছে অঙ্গীকার নিইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না,[1] কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু,[2]
[1] অর্থাৎ, আমি কি তোমাদের কাছে আরো অঙ্গীকার নিইনি যে, তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে এবং আমার ইবাদতে কাউকে শরীক করবে না।
[2] অর্থাৎ, শুধু এক আল্লাহরই ইবাদত করবে, এটাই সেই সরল ও সঠিক পথ, যার প্রতি রসূলগণ মানুষকে আহবান করতেন এবং এটাই বাঞ্ছিত গন্তব্যস্থানে অর্থাৎ জান্নাতে পৌঁছবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ। আল-বায়ান
আর আমারই ‘ইবাদাত কর, এটাই সরল সঠিক পথ। তাইসিরুল
আর আমার ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ? মুজিবুর রহমান
And that you worship [only] Me? This is a straight path. Sahih International
৬১. আর আমারই ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬১) এবং আমারই দাসত্ব কর।[1] এটিই সরল পথ। [2]
[1] এখানে উদ্দেশ্য হল ঐ অঙ্গীকার যা আদম (আঃ)-এর পিঠ থেকে বের করার পর তাঁর সন্তানদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। (সূরা আ’রাফ ১৭২ আয়াত দ্রঃ) অথবা ঐ অসিয়ত যা পয়গম্বরদের মুখে মানুষকে করা হয়েছে। অনেকের নিকট সেই সকল জ্ঞান ও বিবেকভিত্তিক প্রমাণপুঞ্জ যা আকাশ ও পৃথিবীতে মহান আল্লাহ ছড়িয়ে রেখেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[2] অর্থাৎ, তোমাদেরকে শয়তানের ইবাদত এবং তার কুমন্ত্রণা গ্রহণ করা থেকে এই জন্য নিষেধ করা হয়েছে যে, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু এবং সে তোমাদেরকে সব রকমভাবে পথভ্রষ্ট করার শপথ করে রেখেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? আল-বায়ান
(কিন্তু তোমাদেরকে সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও) শয়ত্বান তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে, তবুও কি তোমরা বুঝ না? তাইসিরুল
শাইতানতো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল, তবুও কি তোমরা বুঝনি? মুজিবুর রহমান
And he had already led astray from among you much of creation, so did you not use reason? Sahih International
৬২. আর শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল, তবুও কি তোমরা বুঝনি?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬২) শয়তান তো তোমাদের পূর্বে বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছে; তবুও কি তোমরা বোঝ না? [1]
[1] অর্থাৎ, তোমাদের এতটুকুও জ্ঞান ও বুঝ নেই যে, শয়তান তোমাদের শত্রু, তার আনুগত্য করা উচিত নয় এবং আমি তোমাদের প্রভু, আমিই তোমাদেরকে অন্ন দান করি এবং আমিই দিবারাত্রি তোমাদের হিফাযত করি। সুতরাং আমার অবাধ্যতা করা তোমাদের উচিত নয়। তোমরা শয়তানের শত্রুতা এবং আমার ইবাদতের অধিকারকে না বুঝে নেহাতই নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞানতার পরিচয় দিচ্ছ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএটি সেই জাহান্নাম যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। আল-বায়ান
এটা সেই জাহান্নাম যে বিষয়ে তোমাদেরকে ভয় দেখানো হয়েছিল। তাইসিরুল
এটা সেই জাহান্নাম যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। মুজিবুর রহমান
This is the Hellfire which you were promised. Sahih International
৬৩. এটাই সে জাহান্নাম, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৩) এটিই জাহান্নাম, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। আল-বায়ান
আজ তাতে প্রবেশ কর, কেননা তোমরা এটাকে অবিশ্বাস করেছিলে।’ তাইসিরুল
আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর; কারণ তোমরা একে অবিশ্বাস করেছিলে। মুজিবুর রহমান
[Enter to] burn therein today for what you used to deny." Sahih International
৬৪. তোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে দগ্ধ হও।(১)
(১) যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “যেদিন তাদেরকে ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের আগুনের দিকে এটাই সে আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে। এটা কি তবে জাদু? না কি তোমরা দেখতে পাচ্ছ না!” [সূরা আত-তূরঃ ১৩–১৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৪) তোমাদের অবিশ্বাস (কুফরী) করার কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। [1]
[1] অর্থাৎ, এখন সেই নির্বুদ্ধিতার ফল ভোগ কর এবং নিজেদের কুফরীর কারণে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির মজা আস্বাদন কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত। আল-বায়ান
আজ আমি তাদের মুখে সীল মোহর লাগিয়ে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে, আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পাগুলো সাক্ষ্য দেবে। তাইসিরুল
আমি আজ এদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিব। এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দিবে এদের কৃতকর্মের। মুজিবুর রহমান
That Day, We will seal over their mouths, and their hands will speak to Us, and their feet will testify about what they used to earn. Sahih International
৬৫. আমরা আজ এদের মুখ মোহর করে দেব, এদের হাত কথা বলবে আমাদের সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের।(১)
(১) হাশরে হিসাব-নিকাশের জন্য উপস্থিতির সময় প্রথমে প্রত্যেকেই যা ইচ্ছা ওযর বর্ণনা করার স্বাধীনতা পাবে। মুশরিকরা সেখানে কসম করে কুফর ও শিরক অস্বীকার করবে। তারা বলবে, “আল্লাহর শপথ আমরা মুশরিক ছিলাম না” [সূরা আল-আন’আম: ২৩] তাদের কেউ বলবে, আমাদের আমলনামায় ফেরেশতা যা কিছু লিখেছে, আমরা তা থেকে মুক্ত। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের মুখে মোহর এটে দেবেন, যাতে তারা কোন কিছুই বলতে না পারে। অতঃপর তাদেরই হাত, পা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে রাজসাক্ষী করে কথা বলার যোগ্যতা দান করা হবে। তারা কাফেরদের যাবতীয় কার্যকলাপের সাক্ষ্য দেবে। আলোচ্য আয়াতে হাত ও পায়ের কথা উল্লিখিত হয়েছে। অন্য আয়াতে মানুষের কর্ণ, চক্ষু ও চার্মের সাক্ষ্য দানের উল্লেখিত রয়েছে। [যেমন, সূরা ফুসসিলাত: ২১–২২, সূরা নূর: ২৪]।
এখানে এ প্রশ্ন দেখা দেয় যে, একদিকে আল্লাহ বলেন, আমি এদের কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেবো এবং অন্যদিকে সূরা নূরের আয়াতে বলেন, এদের কণ্ঠ সাক্ষ্য দেবে এ দু'টি বক্তব্যের মধ্যে কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করা যাবে? এর জবাব হচ্ছে, কণ্ঠ রুদ্ধ করার অর্থ হলো, তাদের কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া। এরপর তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের মর্জি মাফিক কথা বলতে পারবে না। আর কণ্ঠের সাক্ষ্যদানের অর্থ হচ্ছে, পাপিষ্ঠ লোকেরা তাদেরকে কোন কোন কাজে লাগিয়েছিল, তাদের মাধ্যমে কেমন সব কুফরী কথা বলেছিল, কোন ধরনের মিথ্যা উচ্চারণ করেছিল, কতপ্রকার ফিতনা সৃষ্টি করেছিল এবং কোন কোন সময় তাদের মাধ্যমে কোন কোন কথা বলেছিল। সেসব বিবরণ তাদের কণ্ঠ স্বতস্ফূৰ্তভাবে দিয়ে যেতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিভিন্ন হাদীসে এ ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা এসেছে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ছিলাম। এমন সময় তিনি এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জানো আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ কিয়ামতের দিন বান্দা তার প্রভুর সাথে যে ঝগড়া করবে তা নিয়ে হাসছি। সে বলবে, হে রব, আমাকে কি আপনি যুলুম থেকে নিরাপত্তা দেননি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, তখন সে বলবে, আমি আমার বিরুদ্ধে নিজের ছাড়া অন্য কারও সাক্ষ্য গ্ৰহণ করবো না। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি নিজেই তোমার হিসেবের জন্য যথেষ্ঠ। আর সম্মানিত লেখকবৃন্দকে সাক্ষ্য বানাব। তারপর তার মুখের উপর মোহর মেরে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হবে। ফলে সেগুলো তাদের কাজের বিবরণ দিবে। তারপর তাদেরকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে তখন তারা বলবে, তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমাদের জন্যই তো আমি প্রতিরোধ করছিলাম। [মুসলিম: ২৯৬৯]
অন্য হাদীসে এসেছে, তোমাদেরকে মূক করে ডাকা হবে। তারপর প্রথম তোমাদের উরু এবং দু’হাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/৪৪৬, ৪৪৭, ৫/৪–৫] অন্য হাদীসে এসেছে। ... তারপর তৃতীয় জনকে ডাকা হবে। আর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কে? সে বলবে: আমি আপনার বান্দা, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার নবী ও কিতাবাদির প্রতিও। আর আপনার জন্য সালাত, সাওম, সাদাকাহ ইত্যাদি ভাল কাজের প্রশংসা করে তা আদায় করার দাবী করবে। তখন তাকে বলা হবে, আমরা কি তোমার জন্য আমাদের সাক্ষীকে উপস্থাপন করব না? তখন সে চিন্তা করবে যে, এমন কে আছে যে, তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়? আর তখনই তার মুখের উপর মোহর এটে দেয়া হবে এবং তার উরুকে বলা হবে, কথা বল। তখন তার উরু, গোস্ত, হাঁড় যা করেছে তার সাক্ষ্য দিবে। আর এটাই হলো মুনাফিক। এটা এজন্যই যাতে তিনি (আল্লাহ) নিজের ওজর পেশ করতে পারেন এবং তার উপরই আল্লাহ অসন্তুষ্ট। [মুসলিম: ২৯৬৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৫) আমি আজ এদের মুখে মোহর মেরে দেব, এদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং এদের পা এদের কৃতকর্মের সাক্ষী দেবে।[1]
[1] এই মোহর লাগানোর প্রয়োজন এই জন্য হবে যে, কিয়ামতের দিন প্রথম দিকে মুশরিকরা মিথ্যা বলবে এবং বলবে, (واللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ) অর্থাৎ, ঐ আল্লাহর শপথ যিনি আমাদের প্রভু, আমরা মুশরিক ছিলাম না। (সূরা আনআম ২৩ আয়াত) সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন, ফলে তারা কথা বলার শক্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ তাআলা মানুষের শরীরের অন্য অঙ্গকে কথা বলার শক্তি প্রদান করবেন। সুতরাং হাত বলবে, ‘আমার দ্বারা সে এই এই কর্ম করেছিল’ এবং পা তার সাক্ষী দেবে। ঠিক এইভাবে স্বীকার ও সাক্ষী, উভয় পর্যায় পার হয়ে যাবে। এ ছাড়া কথা বলতে সক্ষম বস্তুর মোকাবেলায় কথা বলতে অক্ষম বস্তুর কথা বলে সাক্ষ্য দেওয়া, দলীল ও প্রমাণ হিসাবে অধিক প্রভাবশালী হয়; যেহেতু তাতে অলৌকিক বিষয় পাওয়া যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর) মুখ ছাড়া অন্য অঙ্গের কথা বলার বিষয়টি হাদীসসমূহেও বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুয্ যুহদ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যদি আমি চাইতাম তবে তাদের চোখসমূহ অন্ধ করে দিতাম। তখন এরা পথের অন্বেষণে দৌড়ালে কী করে দেখতে পেত? আল-বায়ান
আমি ইচ্ছে করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত করে দিতাম। তখন তারা পথের দিকে দৌঁড়ে দেখতে চাইলে কীভাবে তারা দেখতে পেত? তাইসিরুল
আমি ইচ্ছা করলে এদের চক্ষুগুলিকে লোপ করে দিতে পারতাম, তখন এরা পথ চলতে চাইলে কি করে দেখতে পেত? মুজিবুর রহমান
And if We willed, We could have obliterated their eyes, and they would race to [find] the path, and how could they see? Sahih International
৬৬. আর আমরা ইচ্ছে করলে অবশ্যই এদের চোখগুলোকে লোপ করে দিতাম, তখন এরা পথ অন্বেষণে দৌড়ালে(১) কি করে দেখতে পেত!
(১) অর্থাৎ জান্নাতের দিকে যেতে হলে যে পথ পাড়ি দিতে হবে, যদি তাদের অন্ধ করে দেয়া হয় তবে সে পুলসিরাত তারা কিভাবে পার হতে পারবে? [সা’দী] অথবা আমরা যদি তাদেরকে সৎপথ থেকে অন্ধ করে দেই, তারা কিভাবে সৎপথ পাবে? [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৬) আমি ইচ্ছা করলে এদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারতাম। তখন এরা পথ চলতে চাইলে কি করে দেখতে পেত। [1]
[1] অর্থাৎ, দৃষ্টিশক্তি থেকে বঞ্চিত করার পর তারা কিভাবে পথ দেখত? কিন্তু এটা তো আমার সহনশীলতা ও দয়া যে, আমি তা করিনি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি যদি চাইতাম তবে তাদের স্ব স্ব স্থানে তাদেরকে বিকৃত করে দিতাম। ফলে তারা সামনেও এগিয়ে যেতে পারত না এবং পিছনেও ফিরে আসতে পারত না। আল-বায়ান
আমি ইচ্ছে করলে তাদের নিজ নিজ জায়গাতেই তাদের আকৃতি পরিবর্তন করে দিতাম, তখন তারা না সামনের দিকে চলতে পারত, আর না পারত পেছনে ফিরে যেতে। তাইসিরুল
এবং আমি ইচ্ছা করলে এদেরকে স্ব স্ব স্থানে বিকৃত করে দিতে পারতাম, ফলে এরা চলতে পারতো না এবং ফিরেও আসতে পারতো না। মুজিবুর রহমান
And if We willed, We could have deformed them, [paralyzing them] in their places so they would not be able to proceed, nor could they return. Sahih International
৬৭. আর আমরা ইচ্ছে করলে অবশ্যই স্ব স্ব স্থানে এদের আকৃতি পরিবর্তন করে দিতাম, ফলে এরা এগিয়েও যেতে পারত না এবং ফিরেও আসতে পারত না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৭) এবং আমি ইচ্ছা করলে এদের স্ব-স্ব স্থানে এদের আকার বিকৃত করে দিতে পারতাম, ফলে এরা আগে বাড়তে পারত না এবং ফিরেও আসতে পারত না। [1]
[1] অর্থাৎ, না সামনে আসতে পারত আর না পিছনে ফিরে যেতে পারত, বরং পাথরের মত একই স্থানে পড়ে থাকত। مسخ এর অর্থ হল সৃষ্টির আমূল বিকৃতি সাধন, অর্থাৎ মানুষকে পাথর বা জন্তুর রূপে পরিবর্তন করে দেওয়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতা হবে কেবল এক আওয়াজ আর তৎক্ষণাৎ তারা দেখতে পাবে। আল-বায়ান
ওটা (হবে) মাত্র একটা প্রচন্ড শব্দ, আর তখনই তারা স্বচক্ষে (সব কিছু) দেখতে পাবে। তাইসিরুল
ওটা একটি মাত্র প্রচন্ড শব্দ। আর তখনই তারা প্রত্যক্ষ করবে। মুজিবুর রহমান
It will be only one shout, and at once they will be observing. Sahih International
১৯. অতঃপর তা তো একটিমাত্ৰ প্ৰচণ্ড ধমক—আর তখনই তারা দেখবে।(১)
(১) زجرة শব্দের একাধিক অর্থ হয়ে থাকে। এর এক অর্থ, ‘প্রচণ্ড ধমক’ বা ‘ভয়ানক শব্দ’। এখানে মৃতদেরকে জীবিত করার উদ্দেশ্যে ইসরাফীল আলাইহিস সালাম এর শিংগায় দ্বিতীয় ফুৎকার বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৯) মাত্র একটি প্রচন্ড শব্দ হবে;[1] তখন ওরা প্রত্যক্ষ করবে। [2]
[1] অর্থাৎ, তারা আল্লাহ তাআলার একই আদেশ এবং ইস্রাফীল (আঃ)-এর শৃঙ্গায় এক (দ্বিতীয়) ফুৎকারে কবর থেকে জীবিত হয়ে বের হয়ে আসবে।
[2] অর্থাৎ, তাদের সম্মুখে কিয়ামতের ভয়ানক দৃশ্য এবং হাশরের ময়দানের কঠিন অবস্থা হবে; যা তারা প্রত্যক্ষ করবে। زجرة এর আসল অর্থঃ ধমক। এখানে ফুৎকার বা বিকট আওয়াজকে زجرة বলা হয়েছে, কারণ এর উদ্দেশ্য হল ধমক দেওয়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তারা বলবে, ‘হায় আমাদের ধ্বংস, এ তো প্রতিদান দিবস’! আল-বায়ান
তারা আরো বলবে- ‘‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! এটাই তো কর্মফলের দিন।’ তাইসিরুল
এবং তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! এটাইতো কর্মফল দিন। মুজিবুর রহমান
They will say, "O woe to us! This is the Day of Recompense." Sahih International
২০. এবং তারা বলবে, হায়, দুর্ভোগ আমাদের! এটাই তো প্রতিদান দিবস।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) এবং ওরা বলবে, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! এটিই তো কর্মফল দিবস।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএটি ফয়সালা করার দিন যা তোমরা অস্বীকার করতে। আল-বায়ান
এটাই ফয়সালার দিন যাকে তোমরা মিথ্যে বলে অস্বীকার করতে। তাইসিরুল
এটাই ফাইসালার দিন যা তোমরা অস্বীকার করতে। মুজিবুর রহমান
[They will be told], "This is the Day of Judgement which you used to deny." Sahih International
২১. এটাই ফয়সালার দিন, যার প্রতি তোমরা মিথ্যা আরোপ করতে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) (ওদের বলা হবে,) ‘এটিই সেই ফায়সালার দিন, যা তোমরা মিথ্যা মনে করতে।’ [1]
[1] ويل শব্দটি ধ্বংসের সময় বলা হয়। অর্থাৎ শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর তাদের নিজেদের ধ্বংস পরিষ্কার দেখতে পাবে। এ কথার উদ্দেশ্য হল, তাদের লাঞ্ছনার প্রকাশ এবং নিজেদের ত্রুটি ও অবহেলার স্বীকারোক্তি। কিন্তু সেই সময় লাঞ্ছনা প্রকাশ ও দোষ-স্বীকার করায় কোন লাভ হবে না। যার ফলে তাদের উত্তরে ফিরিশতা ও মু’মিনগণ বলবেন, এটা সেই ফায়সালার দিন যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। এটাও হতে পারে যে, তারা আপোসে এই কথা একে অপরকে বলবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, ‘শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে’। আল-বায়ান
স্মরণ কর আমার বান্দা আইয়ূবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে ডেকে বলেছিল- শয়ত্বান আমাকে কষ্ট আর ‘আযাবে ফেলেছে (অর্থাৎ আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে আমাকে আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দাহ বানানোর জন্য কুমন্ত্রণা দিয়ে চলেছে)। তাইসিরুল
স্মরণ কর আমার বান্দা আইয়ুবকে! যখন সে তার রাব্বকে আহবান করে বলেছিলঃ শাইতানতো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। মুজিবুর রহমান
And remember Our servant Job, when he called to his Lord, "Indeed, Satan has touched me with hardship and torment." Sahih International
৪১. আর স্মরণ করুন, আমাদের বান্দা আইউবকে, যখন তিনি তার রবকে ডেকে বলেছিলেন, শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) স্মরণ কর, আমার দাস আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। [1]
[1] আইয়ুব (আঃ)-এর রোগ ও তাতে তাঁর ধৈর্য ধারণ করার কাহিনী একটি প্রসিদ্ধ বিষয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ ধ্বংস করে এবং রোগ দ্বারা তাঁকে পরীক্ষা করেছিলেন। এই সময় তিনি কয়েক বছর রোগাক্রান্ত ছিলেন, এমনকি (তাঁর স্ত্রীগণও তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন) তাঁর সাথে মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন, যিনি সকাল-সন্ধ্যা তাঁর সেবা-শুশ্রূষা করতেন এবং কোথাও কাজ-কর্ম করে তাঁর জন্য কোন রকম আহারের ব্যবস্থা করতেন। এই বিষয়ে বিভিন্ন বিস্তারিত রেওয়ায়াত বর্ণনা করা হয়। কিন্তু তার মধ্যে কতটা সহীহ ও কতটা সহীহ নয়, তা জানার কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। نُصُبٍ দ্বারা শারীরিক কষ্ট এবং عَذَابٍ দ্বারা ধন-সম্পদ ধ্বংস বুঝানো হয়েছে। আসলে সব কিছু করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। এর পরেও তার সাথে শয়তানের সম্পর্কের কথা এই জন্য বলা হয়েছে যে, সম্ভবতঃ শয়তানের কুমন্ত্রণাই তাঁকে এমন কর্মে লিপ্ত করেছিল, যার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই পরীক্ষা এসেছিল অথবা সম্পর্কের কথা আদবের দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভালোকে আল্লাহর সাথে এবং মন্দকে নিজের বা শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান[আমি বললাম], ‘তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর, এ হচ্ছে গোসলের সুশীতল পানি আর পানীয়’। আল-বায়ান
(আমি তাকে নির্দেশ দিলাম) তুমি তোমার পা দিয়ে যমীনে আঘাত কর, এই তো ঠান্ডা পানি, গোসলের জন্য আর পানের জন্য। তাইসিরুল
আমি তাকে বললামঃ তুমি তোমার পা দ্বারা ভূমিতে আঘাত কর, এইতো গোসলের সুশীতল পানি ও পান করার পানীয়। মুজিবুর রহমান
[So he was told], "Strike [the ground] with your foot; this is a [spring for] a cool bath and drink." Sahih International
৪২. (আমি তাকে বললাম) আপনি আপনার পা দ্বারা ভূমিতে আঘাত করুন, এই তো গোসলের সুশীতল পানি ও পানীয়।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে মাটিতে পায়ের আঘাত করতেই একটি পানির ঝরণা প্রবাহিত হলো। এর পানি পান করা এবং এ পানিতে গোসল করা ছিল আইয়ুবের জন্য তার রোগের চিকিৎসা। সম্ভবত আইয়ুব কোন কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। [দেখুন: মুয়াস্সার, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) (আমি তাকে বললাম,) ‘তুমি তোমার পা দিয়ে মাটিতে আঘাত কর, এ হল গোসলের ঠান্ডা পানি ও পানীয় পানি।’ [1]
[1] আল্লাহ তাআলা আইয়ুব (আঃ)-এর দু’আ কবুল করলেন এবং তাঁকে তাঁর পা দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে আদেশ করলেন, যাতে একটি ঝরনা নির্গত হল। সেই ঝরনার পানি পান করার ফলে আভ্যন্তরিক রোগ এবং গোসল করার ফলে বাহ্যিক রোগ দূরীভূত হল। অনেকে বলেন যে, ঝরনা দু’টি ছিল; একটিতে গোসল করেছিলেন ও অপরটির পানি পান করেছিলেন। কিন্তু কুরআনের শব্দ দ্বারা প্রথম কথারই (একটি ঝরনা) সমর্থন হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারপর কিয়ামতের দিন নিশ্চয় তোমরা তোমাদের রবের সামনে ঝগড়া করবে। আল-বায়ান
অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে বাদানুবাদ করবে। তাইসিরুল
অতঃপর কিয়ামাত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের রবের সামনে বাকবিতন্ডা করবে। মুজিবুর রহমান
Then indeed you, on the Day of Resurrection, before your Lord, will dispute. Sahih International
৩১. তারপর কিয়ামতের দিন নিশ্চয় তোমরা তোমাদের রবের সামনে পরস্পর বাক-বিতণ্ডা করবে।(১)
(১) এ আয়াত নাযিল হলে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে আমরা যে ঝগড়া করছি সেটা কি আবার আখেরাতেও হবে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তখন যুবাইর বললেন, বিষয়টি তাহলে ভয়াবহ। [তিরমিযীঃ ৩২৩৬] ইবন উমর বলেন, আমরা এ আয়াত নাযিল হয়েছে জানতাম কিন্তু কেন নাযিল হলো বুঝতে পারিনি। আমরা বলতাম, কার সাথে আমরা ঝগড়া করব? আমাদের মধ্যে এবং আহলে কিতাবদের মধ্যে তো কোন ঝগড়া নেই। অবশেষে যখন মুসলিমদের মাঝে ফেতনা শুরু হলো তখনই বুঝতে পারলাম যে, এটাই আমাদের রবের পক্ষ থেকে যে ঝগড়ার ওয়াদা করা হয়েছিল তা। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) অতঃপর কিয়ামতের দিনে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে বাক-বিতন্ডা করবে। [1]
[1] অর্থাৎ, হে নবী! তুমি ও তোমার বিরোধী সকলেই মৃত্যুবরণ করে আখেরাতে আমার নিকট উপস্থিত হবে। পৃথিবীতে তোমাদের মাঝে তাওহীদ ও শিরকের ফায়সালা সম্ভব হয়নি এবং তুমি এই বিষয়ে ঝগড়া করতেই থেকেছ। কিন্তু আমি এখানে তার ফায়সালা করব এবং মুখলিস ও একত্ববাদে বিশ্বাসীদেরকে জান্নাতে এবং মুশরিক (অংশীবাদী), অস্বীকারকারী এবং মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব। উক্ত দুটি আয়াত দ্বারা নবী (সাঃ)-এর মৃত্যুর কথা প্রমাণ হয়। যেমন সূরা আলে ইমরানের ১৪৪নং আয়াতেও সে কথা প্রমাণ হয়। এই সব আয়াতসমূহ থেকে দলীল নিয়ে আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) লোকেদের মাঝে নবী (সাঃ)-এর মৃত্যুর কথা প্রমাণ করেছিলেন। অতএব নবী (সাঃ) সম্পর্কে এই বিশ্বাস রাখা যে, তিনি পৃথিবীতে যেমন জীবন পেয়েছিলেন, বারযাখী জীবন (কবরে)ও অনুরূপ জীবিত আছেন, কুরআনের স্পষ্ট দলীলের পরিপন্থী। তিনিও অন্যান্য মানুষের মত মৃত্যুবরণ করেছেন, ফলে তাঁকেও দাফন করা হয়েছে এবং কবরে তিনি অবশ্যই বারযাখী জীবন পেয়েছেন। তবে তা কেমন তার জ্ঞান আমাদের নেই। কিন্তু এ কথা নিঃসন্দেহ যে কবরে তাঁকে পৃথিবীর মত জীবন দেওয়া হয়নি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামেই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়? আল-বায়ান
যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে আর সত্য সমাগত হওয়ার পর তা অস্বীকার করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে? (এমন) কাফিরদের আবাসস্থল কি জাহান্নামে নয়? তাইসিরুল
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা বলে এবং সত্য আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করে সে অপেক্ষা যালিম আর কে? কাফিরদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়? মুজিবুর রহমান
So who is more unjust than one who lies about Allah and denies the truth when it has come to him? Is there not in Hell a residence for the disbelievers? Sahih International
৩২. সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা বলে এবং সত্য আসার পর তাতে মিথ্যারোপ করে তার চেয়ে বেশী যালিম আর কে? কাফিরদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা বলে[1] এবং তার নিকট আগত সত্যকে মিথ্যাজ্ঞান করে,[2] তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে? অবিশ্বাসীদের আবাসস্থল জাহান্নাম নয় কি?
[1] অর্থাৎ, দাবী করে যে, আল্লাহর সন্তান-সন্ততি অথবা তাঁর শরীক আছে কিংবা তাঁর স্ত্রী আছে, অথচ তিনি এই সমস্ত জিনিস থেকে পাক ও পবিত্র।
[2] যাতে আছে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব), (দ্বীনের) বিধি-বিধান ও ফরয কার্যাদি, পুনরুত্থান সম্পর্কীয় আকীদা ও বিশ্বাস, হারাম কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ এবং মু’মিনদের জন্য সুসংবাদ ও কাফেরদের জন্য ধমক ও শাস্তির কথা। এ হল সেই দ্বীন ও শরীয়ত, যা মুহাম্মাদ (সাঃ) নিয়ে আগমন করেছেন। এটাকে তারা মিথ্যা মনে করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা যুলম করেছে, যদি যমীনে যা আছে তা সব এবং এর সমপরিমাণও তাদের জন্য হয়; তবে কিয়ামতের দিন কঠিন আযাব থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিপণস্বরূপ তারা তা দিয়ে দেবে। সেখানে আল্লাহর কাছে থেকে তাদের জন্য এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা কখনো কল্পনাও করত না। আল-বায়ান
যারা অন্যায়কারী দুনিয়াতে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু যদি তাদেরই হয়, আর তার সাথে আরো অত পরিমাণ হয়, তারা ক্বিয়ামতের কঠিন ‘আযাব থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিপণ স্বরূপ দিতে চাইবে। সেখানে আল্লাহর নিকট থেকে তারা এমন কিছুর সম্মুখীন হবে যা তারা কক্ষনো অনুমানও করেনি। তাইসিরুল
যারা যুল্ম করেছে, যদি তাদের দুনিয়ায় যা আছে তা সম্পূর্ণ এবং এর সম পরিমাণ সম্পদও থাকে তাহলে কিয়ামাত দিবসে কঠিন শাস্তি হতে মুক্তিপণ স্বরূপ সকল বিষয় সম্পত্তি তারা দিয়ে দিবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট হতে এমন কিছু প্রকাশিত হবে যা তারা কল্পনাও করেনি। মুজিবুর রহমান
And if those who did wrong had all that is in the earth entirely and the like of it with it, they would [attempt to] ransom themselves thereby from the worst of the punishment on the Day of Resurrection. And there will appear to them from Allah that which they had not taken into account. Sahih International
৪৭. আর যারা যুলুম করেছে, যদি যমীনে যা আছে তা সম্পূর্ণ এবং তার সাথে এর সমপরিমাণও তাদের হয়, তবে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হতে মুক্তিপণস্বরূপ তার সবটুকুই তারা দিয়ে দেবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু প্রকাশিত হবে যা তারা ধারণাও করেনি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) যারা সীমালংঘন করেছে; যদি তাদের পৃথিবীর সমস্ত কিছু এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও কিছু থাকত, তাহলে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্ট শাস্তি হতে মুক্তির জন্য পণ স্বরূপ তা প্রদান করত।[1] তাদের সামনে আল্লাহর নিকট হতে এমন কিছু প্রকাশ হবে, যা ওরা কল্পনাও করেনি।[2]
[1] তবুও তা গৃহীত হতো না। যেমন, অন্যত্র আরো পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِمْ مِلءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدَى بِهِ (آل عمران: ৯১) ‘‘যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ সোনাও তার পরিবর্তে দেওয়া হয়, তবুও তা কবুল করা হবে না।’’ কারণ, وَلاَ يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ (البقرة: ৪৮) ‘‘সেখানে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না।’’
[2] অর্থাৎ, আযাবের কঠিনতা, ভয়াবহতা এবং তা এত প্রকারের হবে যে, তা হয়তো কোনদিন তাদের ধারণা ও কল্পনাতেও আসেনি। (অথবা যে সকল কাজ তারা ভালো মনে করে করেছিল তা তাদের সামনে আল্লাহর নিকট খারাপ রূপে প্রকাশ পাবে; যা ওরা কল্পনাও করেনি যে, তা আসলে খারাপ কাজ।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান