মান্যবর, সেখানে সে বিশ্বস্ত। আল-বায়ান
সেখানে মান্য ও বিশ্বস্ত। তাইসিরুল
যাকে সেখানে মান্য করা হয় এবং যে বিশ্বাসভাজন। মুজিবুর রহমান
Obeyed there [in the heavens] and trustworthy. Sahih International
২১. সে মান্য সেখানে, বিশ্বাসভাজন।(১)
(১) অর্থাৎ এই কুরআন একজন সম্মানিত দূতের আনীত কালাম। তিনি শক্তিশালী, আরশের অধিপতির কাছে মর্যাদাশীল। তিনি ফেরেশতাদের নিকট মান্য। সমস্ত ফেরেশতা তাকে মান্য করে। তিনি আল্লাহর বিশ্বাসভাজন; পয়গাম আনা নেয়ার কাজে তার তরফ থেকে বিশ্বাসভঙ্গ ও কম বেশী করার সম্ভাবনা নেই। নিজের পক্ষ থেকে তিনি কোন কথা আল্লাহর অহীর সাথে মিশিয়ে দেবেন না। বরং তিনি এমন পর্যায়ের আমানতদার যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু বলা হয় সেগুলো তিনি হুবহু পৌছিয়ে দেন। [মুয়াস্সার, সাদী]
তাফসীরে জাকারিয়া২১। যে সেখানে মান্যবর এবং বিশ্বাসভাজন। [1]
[1] অর্থাৎ, ফিরিশতাবর্গের মাঝে তাঁর আনুগত্য করা হয়। তিনি হলেন ফিরিশতাবর্গের সর্দার ও মান্যবর। এ ছাড়া অহীর ব্যাপারেও তিনি আমানতদার।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর নিশ্চয় তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ রয়েছে। আল-বায়ান
অবশ্যই তোমাদের উপর নিযুক্ত আছে তত্ত্বাবধায়কগণ; তাইসিরুল
অবশ্যই রয়েছে তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ; মুজিবুর রহমান
And indeed, [appointed] over you are keepers, Sahih International
১০. আর নিশ্চয় নিয়োজিত আছেন তোমাদের উপর সংরক্ষকদল;
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০। অবশ্যই তোমাদের উপর (নিযুক্ত আছে) সংরক্ষকগণ;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসম্মানিত লেখকবৃন্দ। আল-বায়ান
সম্মানিত লেখকগণ (যারা লিপিবদ্ধ করছে তোমাদের কার্যকলাপ), তাইসিরুল
সম্মানিত লেখকবর্গ; মুজিবুর রহমান
Noble and recording; Sahih International
১১. সম্মানিত লেখকবৃন্দ;
-
তাফসীরে জাকারিয়া১১। সম্মানিত (আমল) লেখকবর্গ (ফিরিশতা);
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা জানে, যা তোমরা কর। আল-বায়ান
তারা জানে তোমরা যা কর। তাইসিরুল
তারা অবগত হয় যা তোমরা কর। মুজিবুর রহমান
They know whatever you do. Sahih International
১২. তারা জানে তোমরা যা কর।(১)
(১) অর্থাৎ ফেরেশতারা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। সব জায়গায় সব অবস্থায় সকল ব্যক্তির সাথে তারা এমনভাবে লেগে আছে যে, তারা জানতেই পারছে না যে, কেউ তাদের কাজ পরিদর্শন করছে। কোন ব্যক্তি কোন নিয়তে কি কাজ করেছে তাও তারা জানতে পারে। তাই তাদের তৈরি করা রেকর্ড একটি পুর্ণাঙ্গ রেকর্ড। এই রেকর্ডের বাইরে কোন কথা নেই। এ সম্পর্কেই সূরা কাহাফের ৪৯ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ “কিয়ামতের দিন অপরাধীরা অবাক হয়ে দেখবে তাদের সামনে যে আমলনামা পেশ করা হচ্ছে তার মধ্যে তাদের ছোট বড় কোন একটি কাজও অলিখিত থেকে যায়নি। যা কিছু তারা করেছিল সব হুবহু ঠিক তেমনিভাবেই তাদের সামনে আনা হয়েছে।” [করতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া১২। তারা জানে, যা তোমরা করে থাক। [1]
[1] অর্থাৎ, তোমরা তো প্রতিদান ও শাস্তিকে অস্বীকার কর। কিন্তু তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, তোমাদের প্রতিটি কথা ও কর্মকে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। আল্লাহর তরফ হতে তোমাদের জন্য ফিরিশতা প্রহরী হিসাবে নিযুক্ত আছে; যারা তোমাদের প্রতিটি কথাকে জানে, যা তোমরা করছ। এটা হল মানুষের জন্য সতর্কবার্তা যে, প্রত্যেক কর্ম করা ও প্রত্যেক কথা বলার পূর্বে চিন্তা-ভাবনা করে দেখ, এটা ভুল নয় তো। আর এটি হল সেই কথা, যা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে, (عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْد، مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلاَّ لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْد) অর্থাৎ, এক ফিরিশতা (মানুষের) ডাইনে ও অন্য এক ফিরিশতা (তার) বামে বসে আছে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, (তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য) তার কাছে তৎপর প্রহরী প্রস্তুত রয়েছে। (সূরা ক্বাফ ১৭-১৮ নং) অর্থাৎ, লিখার জন্য বলা হয়, একজন ফিরিশতা নেকী ও অন্য একজন ফিরিশতা বদী লিখে থাকেন। আর হাদীস ও আসার দ্বারা বোঝা যায় যে, দিনে তার জন্য দুই ফিরিশতা এবং রাত্রে দুই ফিরিশতা পৃথক পৃথক নির্দিষ্ট থাকেন। পরবর্তীতে নেকী এবং বদী উভয়ের উল্লেখ করা হচ্ছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননৈকট্যপ্রাপ্তরাই তা অবলোকন করে। আল-বায়ান
আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত (ফেরেশতারা) তার তত্ত্বাবধান করে। তাইসিরুল
আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্তরা ওটা প্রত্যক্ষ করবে। মুজিবুর রহমান
Which is witnessed by those brought near [to Allah]. Sahih International
২১. (আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্তরাই তা অবলোকন করে।(১)
(১) يشهد শব্দটি شهود থেকে উদ্ভূত। شهود এর এক অর্থ প্রত্যক্ষ করা, তত্ত্বাবধান করা। তখন আয়াতের উদ্দেশ্য হবে এই যে, সৎকর্মশীলদের আমলনামার প্রতি আসমানের নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ দেখবে অর্থাৎ তত্ত্বাবধান ও হেফাযত করবে। [ইবন কাসীর] তাছাড়া شهود এর আরেক অর্থ উপস্থিত হওয়া। [উসাইমীন, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম]। তখন يشهده এর সর্বনাম দ্বারা ইল্লিয়্যীন বোঝানো হবে। আর এর অর্থ হবে, প্রতি আসমানের নৈকট্যপ্রাপ্তগণ সেখানে হাজির হবেন এবং সেটাকে হেফাযত করবেন; কেননা এটা নেক আমলকারীর জন্য জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা পত্র এবং জান্নাতে যাওয়ার সফলতার গ্যারান্টি। [আইসারুত তাফসীর]
এটা ঐ সময়ই হবে, যখন ইল্লিয়্যীন দ্বারা আমলনামা বোঝানো হবে। আর যদি ইল্লিয়্যীন দ্বারা নৈকট্যপ্রাপ্তদের রূহের স্থান ধরা হয়, তখন আয়াতের অর্থ হবে, নৈকট্যশীলগণের রূহ এই ইল্লিয়্যীন নামক স্থানে উপস্থিত হবে। সে হিসেবে ইল্লিয়্যীন ঈমানদারদের রুহের আবাসস্থল; যেমন সিজ্জীন কাফেরদের রূহের আবাসস্থল। এর স্বপক্ষে একটি হাদীস থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শহীদগণের রূহ আল্লাহর সান্নিধ্যে সবুজ পাখিদের মধ্যে থাকবে এবং জান্নাতের বাগ-বাগিচা ও নহরসমূহে ভ্রমণ করবে। তাদের বাসস্থানে আরশের নিচে ঝুলন্ত প্ৰদীপ থাকবে।” [মুসলিম: ১৮৮৭]
এ থেকে বোঝা গেল যে, শহীদগণের রূহ আরশের নিচে থাকবে এবং জান্নাতে ভ্ৰমণ করতে পারবে। তাছাড়া পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ) এ থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহার সন্নিকটে। সিদরাতুল মুনতাহা যে সপ্তম আকাশে, এ কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই আত্মার স্থান ইল্লিয়্যীন জান্নাতের সংলগ্ন এবং আত্মাসমূহ জান্নাতের বাগিচায় ভ্ৰমণ করে। অতএব, আত্মার স্থান জান্নাতও বলা যায়। তাই কোন কোন মুফাস্সির ইল্লিয়্যীন এর ব্যাখ্যা করেছেন জান্নাত। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া২১। আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত (ফিরিশতা)গণ তা প্রত্যক্ষ করে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানপ্রত্যেক জীবের উপরই সংরক্ষক রয়েছে। আল-বায়ান
প্রত্যেক আত্মার সাথে একজন সংরক্ষক আছে। তাইসিরুল
প্রত্যেক জীবের উপরই সংরক্ষক রয়েছে। মুজিবুর রহমান
There is no soul but that it has over it a protector. Sahih International
৪. প্রত্যেক জীবের উপরই তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।(১)
(১) এটা শপথের জওয়াব। حَافِظٌ শব্দের অর্থ তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা। আকাশ ও নক্ষত্রের শপথ করে বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের ওপর তত্ত্বাবধায়ক বা আমলনামা লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। সে তার সমস্ত কাজকর্ম ও নড়াচড়া দেখে, জানে। [ফাতহুল কাদীর] এর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের চিন্তা করা উচিত যে, সে দুনিয়াতে যা কিছু করছে, তা সবই কেয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের জন্যে আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই কোন সময় আখেরাত ও কেয়ামতের চিন্তা থেকে গাফেল হওয়া অনুচিত। এখানে حَافِظٌ শব্দ একবচনে উল্লেখ করা হলেও তারা যে একাধিক তা অন্য আয়াত থেকে জানা যায়। অন্য আয়াতে আছে (وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ٭ كِرَامًا كَاتِبِينَ) “নিশ্চয় তোমাদের উপর নিয়োজিত রয়েছে তত্ত্বাবধায়করা, সম্মানিত লেখকরা”। [সূরা আল-ইনফিতার; ১০–১১]
তাছাড়া حافظ এর অপর অর্থ আপদ-বিপদ থেকে হেফাযতকারীও হয়ে থাকে। [ইবন কাসীর] আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক মানুষের হেফাযতের জন্যে ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তারা দিন-রাত মানুষের হেফাযতে নিয়োজিত থাকে। তবে আল্লাহ তা'আলা যার জন্যে যে বিপদ অবধারিত করে দিয়েছেন, তারা সে বিপদ থেকে হেফাযত করে না। অন্য এক আয়াতে একথা পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে, (لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ) অর্থাৎ মানুষের জন্যে পালাক্রমে আগমনকারী পাহারাদার ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। তারা আল্লাহর আদেশে সামনে ও পেছনে থেকে তার হেফাযত করে। [সূরা আর-রাদ: ১১]
অথবা হেফাযতকারী বলতে এখানে আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] তিনি আকাশ ও পৃথিবীর ছোট বড় সকল সৃষ্টির দেখাশুনা, তত্ত্বাবধান ও হেফাযত করছেন। তিনিই সব জিনিসকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনিই সবকিছুকে টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি সব জিনিসকে ধারণ করেছেন বলেই প্রত্যেকটি জিনিস তার নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত আছে। তিনি সব জিনিসকে তার যাবতীয় প্ৰায়োজন পূর্ণ করার এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত বিপদমুক্ত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টির জন্য আকাশের ও রাতের অন্ধকারে আন্তঃপ্রকাশকারী প্রত্যেকটি গ্রহ ও তারকার কসম খাওয়া হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া৪। প্রত্যেক জীবের জন্য একজন সংরক্ষক রয়েছে। [1]
[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক জীবের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন। যাঁরা তার নেকী-বদী লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কোন কোন আলেম বলেন, তা হল মানুষের হিফাযতকারী ফিরিশতা; যেমন সূরা রা’দের ১১নং আয়াত থেকে জানা যায় যে, মানুষের হিফাযতের জন্যেও তার সামনে-পিছনে ফিরিশতা মোতায়েন থাকেন; যেমন তার কথা ও কাজ নোট করার জন্য ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানকখনো নয়, যখন যমীনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে পরিপূর্ণভাবে। আল-বায়ান
এটা মোটেই ঠিক নয়, যখন পৃথিবীকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে বালি বানিয়ে দেয়া হবে, তাইসিরুল
এটা সংগত নয়। পৃথিবীকে যখন চূর্ণ বিচূর্ণ করা হবে, মুজিবুর রহমান
No! When the earth has been leveled - pounded and crushed - Sahih International
২১. কখনো নয়।(১) যখন যমীনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে(২),
(১) অর্থাৎ তোমাদের কাজ এরকম হওয়া উচিত নয়। [ফাতহুল কাদীর]
(২) কাফেরদের মন্দ অভ্যাসসমূহ বৰ্ণনার পর আবার আখেরাতের আলোচনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, যখন ভূকম্পনের মত হয় সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে; তখন কার কি অবস্থা হবে একটু চিন্তা করা দরকার।
তাফসীরে জাকারিয়া২১। না এটা সঙ্গত নয়! [1] যখন পৃথিবীকে ভেঙ্গে পূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে।
[1] অথবা তোমাদের আমল এমন হওয়া উচিত নয় যেমন উল্লেখ হয়েছে। কেননা, এক সময় আসবে ‘‘যখন ------।’’
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। আল-বায়ান
আর যখন তোমার প্রতিপালক আসবেন আর ফেরেশতারা আসবে সারিবদ্ধ হয়ে, তাইসিরুল
এবং যখন তোমার রাব্ব আগমন করবেন, আর সারিবদ্ধভাবে মালাইকা/ফেরেশতাগণও সমুপস্থিত হবে – মুজিবুর রহমান
And your Lord has come and the angels, rank upon rank, Sahih International
২২. আর যখন আপনার রব আগমন করবেন ও সারিবদ্ধভাবে ফেরেশতাগণও(১),
(১) মূলে বলা হয়েছে (وَجَاءَ رَبُّكَ) এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, “আপনার রব আসবেন।” এখানে ‘হাশরের মাঠে আল্লাহর আগমন’ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি (আল্লাহ) অবশ্যই হাশরের মাঠে বিচার ফয়সালা করার জন্য স্বয়ং আসবেন। [ইবন কাসীর] আল্লাহ তা'আলা হাশরের মাঠে আগমন করবেন এটা সত্য। যেভাবে আসা তাঁর জন্য উপযুক্ত তিনি সেভাবে আসবেন। এই আগমনের অর্থ আমরা বুঝি কিন্তু তিনি কিভাবে আগমন করবেন তা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আলেমদের বিশ্বাস। দুনিয়ায় কোন বাদশাহর সমগ্র সেনাদল এবং তার মন্ত্রণাপরিষদ ও সভাসদদের আগমনে ঠিক ততটা প্রভাব ও প্রতাপ সৃষ্টি হয় না যতটা বাদশাহর নিজের দরবারে আগমনে সৃষ্টি হয়। এই বিষয়টিই এখানে বুঝানো হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া২২। এবং যখন তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন আর সারিবদ্ধভাবে ফিরিশতাগণও (সমুপস্থিত হবে)। [1]
[1] বলা হয় যে, কিয়ামতের দিন যখন ফিরিশতাগণ আসমান হতে নিচে অবতরণ করবেন, তখন প্রত্যেক আসমানের ফিরিশতাদের আলাদা আলাদা কাতার বা সারি হবে। এইরূপ সাতটি কাতার হবে যাঁরা সারা পৃথিবীকে বেষ্টন করে নেবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর সেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু সেই স্মরণ তার কী উপকারে আসবে? আল-বায়ান
আর জাহান্নামকে সেদিন (সামনাসামনি) আনা হবে। সেদিন মানুষ উপলব্ধি করবে, কিন্তু তখন এ উপলব্ধি তার কী কাজে আসবে? তাইসিরুল
সেদিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে এবং সেদিন মানুষ উপলদ্ধি করবে, কিন্তু এই উপলদ্ধি তার কি করে কাজে আসবে? মুজিবুর রহমান
And brought [within view], that Day, is Hell - that Day, man will remember, but what good to him will be the remembrance? Sahih International
২৩. আর সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে(১) সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, তখন এ স্মরণ তার কি কাজে আসবে?(২)
(১) অর্থাৎ সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে বা সামনে উপস্থিত করা হবে। হাদীসে এসেছে, “জাহান্নামকে ফেরেশতারা টেনে নিয়ে আসবে, সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, প্রতি লাগামে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে।” [মুসলিম: ২৮৪২, তিরমিযী: ২৫৭৩]
(২) মূলে বলা হয়েছে يَتَذَكَّرُ এর দু'টি অর্থ হতে পারে। এক. يَتَذَكَّرُ এর অর্থ এখানে বুঝে আসা। সুতরাং সেদিন মানুষ সচেতন হবে। সে উপদেশ গ্রহণ করবে। সে বুঝতে পারবে, নবীগণ তাকে যা কিছু বলেছিলেন তাই ছিল সঠিক এবং তাদের কথা না মেনে সে বোকামি করেছে। কিন্তু সে সময় সচেতন হওয়া, উপদেশ গ্ৰহণ করা এবং নিজের ভুল বুঝতে পারায় কী লাভ? [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] দুই. অথবা يَتَذَكَّرُ অর্থ স্মরণ করা। অর্থাৎ সেদিন মানুষ দুনিয়ায় যা কিছু করে এসেছে তা স্মরণ করবে এবং সেজন্য লজ্জিত হবে। কিন্তু তখন স্মরণ করায় এবং লজ্জিত হওয়ায় কোন লাভ হবে না। [দেখুন: ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া২৩। সেদিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে[1] এবং সেদিন মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে; কিন্তু তার উপলব্ধি কি কোন কাজে আসবে? [2]
[1] ৭০ হাজার লাগামে জাহান্নাম বাঁধা থাকবে। আর প্রতিটি লাগামে ৭০ হাজার করে ফিরিশতা নিযুক্ত থাকবেন এবং সেদিন তাঁরা তা টেনে আনয়ন করবেন। (সহীহ মুসলিম জান্নাতের বিবরণ অধ্যায়, জাহান্নামে অগ্নির উষ্ণতা ও গভীরতার পরিচ্ছেদ)
জাহান্নামকে আরশের বাম দিকে উপস্থিত করা হবে। তা দেখে সকল নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা ও আম্বিয়া (‘আলাইহিমুস সালাম)-গণ হাঁটু গেড়ে লুটিয়ে পড়বেন। আর ‘ইয়া রাব্ব! নাফসী নাফসী’ বলতে থাকবেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[2] অর্থাৎ, এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে মানুষের চোখ খুলে যাবে এবং নিজ কুফর ও কৃতপাপের জন্য লজ্জিত হবে। কিন্তু সেদিন লজ্জিত হয়ে, উপলব্ধি করে উপদেশ গ্রহণ করলেও কোন উপকার হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅচিরেই আমি ডেকে নেব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে। আল-বায়ান
আমিও ‘আযাবের ফেরেশতাদেরকে ডাকব, তাইসিরুল
আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে। মুজিবুর রহমান
We will call the angels of Hell. Sahih International
১৮. শীঘ্রই আমরা ডেকে আনব যাবানিয়াদেরকে।(১)
(১) এখানে যাবানিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাহান্নামের প্রহরী কঠোর ফেরেশতাগণ। কাতাদাহ বলেন, আরবী ভাষায় الزبانية ‘যাবানিয়াহ’ শব্দের অর্থই হলো প্রহরী পুলিশ। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি আরবী ভাষায় বিশেষ বাহিনীর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর যাবান’ শব্দের আসল মানে হচ্ছে, ধাক্কা দেয়া। সে হিসেবে ‘যাবানিয়াহ’ এর অন্য অর্থ, প্ৰচণ্ডভাবে পাকড়াওকারী, প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়ে নিক্ষেপকারী। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া১৮। আমিও অচিরে আহবান করব (জাহান্নামের) প্রহরীবর্গকে।[1]
[1] হাদীসে এসেছে যে, একদা নবী (সাঃ) কা’বাগৃহের পাশে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় আবু জাহল তাঁর পাশ দিয়ে পার হয়ে বলল, ‘ওহে মুহাম্মাদ! আমি কি তোমাকে নামায পড়া হতে নিষেধ করিনি?’ অনুরূপ সে আরো তাঁর সাথে কঠিনভাবে ধমক দিয়ে কথা বলল। নবী (সাঃ) তার কথার কড়া জওয়াব দিলেন। তখন সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাচ্ছ? আল্লাহর কসম! এই উপত্যকায় সব থেকে আমার পারিষদ ও পৃষ্ঠপোষক বেশী আছে।’ তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি আবু জাহল নিজের পারিষদবর্গকে আহবান করত, তাহলে তাদেরকে তখনই শাস্তিদাতা ফিরিশতাগণ পাকড়াও করতেন। (তিরমিযী, তাফসীর সূরা ইকরা পরিচ্ছেদ, মুসনাদে আহমাদ ১/৩২৯ ও তাফসীর ইবনে জারীর)
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এইভাবে রয়েছে যে, সে অগ্রসর হয়ে তাঁর গর্দানে পা রাখার মনস্থ করেছিল। ইতি অবসরে সে উল্টা পা ফিরে গেল এবং নিজ হাত দ্বারা নিজেকে বাঁচাতে লাগল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি ব্যাপার? সে বলল, ‘আমার ও মুহাম্মাদের মাঝে আগুনের পরিখা, ভয়ংকর দৃশ্য এবং বহু পাখা দেখলাম!’ রসূল (সাঃ) বললেন, ‘‘যদি সে আমার নিকটবর্তী হত, তাহলে ফিরিশতাগণ তার এক একটা অঙ্গকে নুচে নিত।’’ (কিয়ামতের বিবরণ অধ্যায়)
الزَّبَانِية শব্দের অর্থ হল দারোগা এবং পুলিশ (বা প্রহরী)। অর্থাৎ, এমন শক্তিশালী সৈন্য যার কেউ মুকাবিলা করতে পারে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। আল-বায়ান
এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ তাদের রব-এর অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। তাইসিরুল
ঐ রাতে (মালাইকা) ফিরিশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। মুজিবুর রহমান
The angels and the Spirit descend therein by permission of their Lord for every matter. Sahih International
৪. সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রূহ নাযিল হয়(১) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত(২) নিয়ে।
(১) الروح বলে কি বুঝানো হয়েছে মতপার্থক্য থাকলেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো এর দ্বারা জিবরীলকে বোঝানো হয়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তার উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরীলের সাথে ফেরেশতারাও সে রাত্ৰিতে অবতরণ করে। [ফাতহুল কাদীর] হাদীসে আছে, “লাইলাতুল-কদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশী।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫১৯, মুসনাদে তায়ালাসী: ২৫৪৫]
(২) সকল সিদ্ধান্ত বা প্রত্যেক হুকুম বলতে অন্যত্র বর্ণিত “আমরে হাকীম” (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) [সূরা আদ-দোখান: ৪] বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ শবে-কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কোন কোন তাফসীরবিদ একে سلام এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এ অর্থ করেছেন যে, এ রাত্রিটি যাবতীয় অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে শান্তিস্বরূপ। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। ঐ রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। [1]
[1] এখানে ‘রূহ’ বলে জিবরীল (আঃ)-কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জিবরীল (আঃ) সহ ফিরিশতাগণ এই রাতে ঐ সকল কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, যা আল্লাহ এক বছরের জন্য ফায়সালা করে থাকেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান