জান্নাত বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৭৪ টি
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১২ فِیۡ جَنّٰتِ النَّعِیۡمِ ﴿۱۲﴾

তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে । আল-বায়ান

(তারা থাকবে) নি‘মাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে। তাইসিরুল

সুখ উদ্যানের। মুজিবুর রহমান

In the Gardens of Pleasure, Sahih International

১২. নি'আমতপূর্ণ উদ্যানে;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) তারা থাকবে সুখময় জান্নাতসমূহে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৩ ثُلَّۃٌ مِّنَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۱۳﴾

বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, আল-বায়ান

পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে বহু সংখ্যক। তাইসিরুল

বহু সংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে; মুজিবুর রহমান

A [large] company of the former peoples Sahih International

১৩. বহু সংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৪ وَ قَلِیۡلٌ مِّنَ الۡاٰخِرِیۡنَ ﴿ؕ۱۴﴾

আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। আল-বায়ান

আর পরবর্তীদের মধ্য হতে কম সংখ্যক। তাইসিরুল

এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে, মুজিবুর রহমান

And a few of the later peoples, Sahih International

১৪. এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।(১)

(১) ثلة শব্দের অর্থ দল অথবা বড় দল। আলোচ্য আয়াতসমূহে দু জায়গায় পূর্ববর্তীও পরবর্তীর বিভাগ উল্লেখিত হয়েছে - নৈকট্যশীলদের বর্ণনায় এবং সাধারণ মুমিনদের বর্ণনায়। নৈকট্যশীলদের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, অগ্রবতী নৈকট্যশীলদের একটি বড় দল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে এবং অল্প সংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে। সাধারণ মুমিনদের বর্ণনায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় জায়গায় ثلة শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এই যে, সাধারণ মুমিনদের একটি বড় দল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে এবং একটি বড় দল পরবর্তীদের মধ্য থেকেও হবে। এখন চিন্তা সাপেক্ষ বিষয় এই যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বলে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তফসীরবিদগণ দুরকম উক্তি করেছেন।

(এক) আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ব পর্যন্ত সব মানুষ পূর্ববর্তী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষ পরবর্তী।

(দুই) তফসীরবিদগণের দ্বিতীয় উক্তি এই যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বলে এই উম্মতেরই দুটি স্তর বোঝানো হয়েছে। পূর্ববর্তী বলে কুরুনে-উলা তথা সাহাবী, তাবেয়ী প্রমুখদের যুগকে এবং পরবর্তী বলে তাদের পরবর্তী কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে। অধিকাংশ মুফাসসির এই দ্বিতীয় উক্তিকেই অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

এ পক্ষের যুক্তির সমর্থনে বলা যায় যে, পবিত্র কুরআন থেকে সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায়, উম্মতে মুহাম্মদী পূর্ববর্তী সকল উম্মতের চাইতে শ্রেষ্ঠ। [সা’দী] বলাবাহুল্য কোন উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব তার ভিতরকার উচ্চস্তরের লোকদের সংখ্যাধিক্য দ্বারাই হয়ে থাকে। তাই শ্রেষ্ঠতম উম্মতের মধ্যে অগ্রবর্তী নৈকট্যশীলদের সংখ্যা কম হবে – এটা সুদূর পরাহত। যেসব আয়াত দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়, সেগুলো এইঃ (كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ) [সূরা আলে ইমরান: ১১০] এবং (وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ) [সূরা আল বাকারাহ: ১৪৩] তাছাড়া এক হাদীসে বলা হয়েছে, “তোমরা সত্তরটি উম্মতের পরিশিষ্ট হবে। তোমরা সর্বশেষে এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হবে।” [তিরমিযী: ৩০০১]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে - এতে তোমরা সন্তুষ্ট আছ কি? আমরা বললামঃ নিশ্চয় আমরা এতে সন্তুষ্ট। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে।” [বুখারী: ৩৩৪৮, মুসলিম: ২২২] অন্য হাদীসে এসেছে, জান্নাতীগণ মোট একশ বিশ কাতারে থাকবে তন্মধ্যে আশি কাতার এই উম্মতের মধ্য থেকে হবে এবং অবশিষ্ট চল্লিশ কাতারে সমগ্র উম্মত শরীক হবে। [তিরমিযী: ২৫৪৬, ইবনে মাজাহঃ ৪২৮৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/৪৫৩, ৫/৩৪৭, ৫/৩৫৫]

উপরোক্ত বর্ণনাসমূহে অন্যান্য উম্মতের তুলনায় এই উম্মতের জান্নাতীদের পরিমাণ কোথাও এক চতুর্থাংশ, কোথাও অর্ধেক এবং শেষ বর্ণনায় দুই তৃতীয়াংশ বলা হয়েছে। এতে বুঝা গেল যে, এ নৈকট্যপ্রাপ্তদের সংখ্যা এ উম্মতের মধ্যে কম হবার নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে[1]

[1] ثُلَّةٌ এমন বড় দলকে বলা হয়, যার গণনা সম্ভব নয়। বলা হয় যে, أوَّلِين (পূববর্তীগণ) থেকে উদ্দেশ্য হল, আদম (আঃ) থেকে নিয়ে নবী করীম (সাঃ) পর্যন্ত উম্মতের লোক। আর آخِرِين (পরবর্তীগণ) থেকে উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের ব্যক্তিবর্গ। অর্থ হল এই যে, পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে অগ্রবর্তী একটি বড় দল হবে। কেননা, তাদের যুগ সুদীর্ঘ, যাতে হাজার হাজার নবীদের অগ্রবর্তীগণ শামিল আছেন। এঁদের তুলনায় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের যুগ কিয়ামত পর্যন্ত অল্পই। তাই এদের মধ্যে অগ্রবর্তীদের সংখ্যা তুলনামূলক পূর্ববর্তীদের চাইতে কম হবে। কিন্তু একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, ‘‘আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে।’’ (মুসলিম ২০০নং) তবে এটা আয়াতে উল্লিখিত অর্থের পরিপন্থী নয়। কারণ, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের অগ্রবর্তীদেরকে এবং সাধারণ মু’মিনদেরকে মিলিয়ে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সংখ্যা অন্যান্য সমস্ত উম্মতের অর্ধেক হয়ে যাবে। অতএব পূর্ববর্তী উম্মতের কেবল অগ্রবর্তীদের সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়া হাদীসে বর্ণিত সংখ্যার বিপরীত নয়। তবে এই উক্তি (সঠিক কি না তা) যাচাই সাপেক্ষ। পক্ষান্তরে কেউ কেউ أوَّلِين এবং آخِرِين থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের লোকদেরই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, এই উম্মতের পূর্ববর্তীদের মধ্যে অগ্রবর্তীদের সংখ্যা বেশী এবং পরবর্তীদের মধ্যে অগ্রবর্তীদের সংখ্যা কম হবে। ইমাম ইবনে কাসীর এই দ্বিতীয় উক্তিটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর এটাকেই সর্বাধিক সঠিক মনে হচ্ছে। এই বাক্যটি فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ এবং عَلَى سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ এর মধ্যস্থলে একটি ‘মু’তারিযাহ’ (পূর্বাপরের সাথে সম্পর্কহীন বিচ্ছিন্ন) বাক্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৫ عَلٰی سُرُرٍ مَّوۡضُوۡنَۃٍ ﴿ۙ۱۵﴾

স্বর্ণ ও দামী পাথরখচিত আসনে! আল-বায়ান

(তারা থাকবে) মণিমুক্তা খচিত আসনে, তাইসিরুল

স্বর্ণ খচিত আসনে – মুজিবুর রহমান

On thrones woven [with ornament], Sahih International

১৫. স্বর্ণ- ও দামী পাথর খচিত আসনে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) স্বর্ণখচিত আসনে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৬ مُّتَّكِـِٕیۡنَ عَلَیۡهَا مُتَقٰبِلِیۡنَ ﴿۱۶﴾

তারা সেখানে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে মুখোমুখি অবস্থায়। আল-বায়ান

তাতে তারা হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখী হয়ে। তাইসিরুল

তারা হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখী হয়ে। মুজিবুর রহমান

Reclining on them, facing each other. Sahih International

১৬. তারা হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।(১)

(১) উপরোক্ত দু আয়াতে জান্নাতের আসনসমূহ কেমন হবে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে নৈকট্যপ্ৰাপ্তদের আসন কেমন হবে তার বর্ণনা এসেছে। জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ, তার বাগানসমূহে বসার জায়গা কিভাবে চিত্তাকর্ষকভাবে সাজানো হয়েছে পবিত্র কুরআনের বিভিন্নস্থানে তার বিবরণ এসেছে। এ আয়াতসমূহে মহান আল্লাহ বলেন, “স্বর্ণ-খচিত আসনে, ওরা হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখি হয়ে” অন্যত্র বলেন, “উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন শয্যা, প্রস্তুত থাকবে পানিপাত্র, সারি সারি উপাধান, এবং বিছানা গালিচা;” |সূরা আল-গাসিয়াহ: ১৩–১৬] আরও বলেন, “সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তর বিশিষ্ট ফরাশে, দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।” [সূরা আর-রাহমান: ৫৪] আরও বলেন, “তারা বসবে শ্রেণীবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে; আমি তাদের মিলন ঘটাব আয়তলোচনা হূরের সংগে;” [সূরা আত-তূর: ২০] এভাবে ঠেস লাগিয়ে বসে তারা পরস্পর ভাই ভাই হিসেবে অবস্থান করবে। মহান আল্লাহ্‌ বলেন, “আর আমরা তাদের অন্তর হতে বিদ্বেষ দূর করব; তারা ভাইয়ের মত পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে,” [সূরা আল-হিজর: ৪৭] “ ওরা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে।” [সূরা আর-রাহমান: ৭৬], “সেখানে সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম আশ্রয়স্থল!” [সূরা আল কাহাফ: ৩১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) তারা আসনে হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।[1]

[1] مَوْضُوْنَةٌ নির্মিত, খচিত। অর্থাৎ, উল্লিখিত জান্নাতীরা সোনার তার দিয়ে তৈরী করা এবং সোনা-মণি-রত্ন খচিত আসনে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে বালিশের উপর হেলান দিয়ে বসবে। অর্থাৎ, সামনা-সামনি, পরস্পর পিছন করে নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৭ یَطُوۡفُ عَلَیۡهِمۡ وِلۡدَانٌ مُّخَلَّدُوۡنَ ﴿ۙ۱۷﴾

তাদের আশ-পাশে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা, আল-বায়ান

তাদের চারপাশে ঘুর ঘুর করবে (সেবায় নিয়োজিত) চির কিশোররা। তাইসিরুল

তাদের সেবায় ঘোরাফিরা করবে চির কিশোরেরা – মুজিবুর রহমান

There will circulate among them young boys made eternal Sahih International

১৭. তাদের আশেপাশে ঘুরাফিরা করবে চির-কিশোরেরা(১)

(১) অর্থাৎ এই কিশোররা সর্বদা কিশোরই থাকবে। তাদের মধ্যে বয়সের কোন তারতম্য দেখা দেবে না। হূরদের ন্যায় এই কিশোরগণও জান্নাতেই পয়দা হবে এবং তারা জন্নাতীদের খেদমতগার হবে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, একজন জান্নাতীর কাছে হাজারো খাদেম থাকবে। [বাইহাকী আব্দুল্লাহ ইবনে আমরা থেকে] এই কিশোররা খুবই সুন্দর হবে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে কিশোরেরা, সুরক্ষিত মুক্তার মত। [সূরা আত-তূর: ২৪] আরও বলা হয়েছে, “তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে চিরকিশোরগণ, যখন আপনি তাদেরকে দেখবেন তখন মনে করবেন তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা।” [সূরা আল-ইনসান: ১৯] তাদের চলাফেরায় মনে হবে যেন মুক্তা ছড়িয়ে আছে। কোন কোন লোক মনে করে থাকে যে, ছোট ছোট বাচ্চারা যারা নাবালেগ অবস্থায় মারা যাবে তারা জান্নাতের খাদেম হবে। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ; ছোট ছোট বাচ্চারা তখন পরিণত বয়সের হবে এবং জান্নাতের অধিবাসী হবে। পক্ষান্তরে এ সমস্ত খাদেমদেরকে আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতেই সৃষ্টি করবেন। তাদের কাজই হবে খেদমত করা। তারা দুনিয়ার কোন অধিবাসী নয়। [ইবনে তাইমিয়্যা: মাজমু ফাতাওয়া ৪/২৭৯, ৪/৩১১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা--[1]

[1] অর্থাৎ, তারা বড় হয়ে বৃদ্ধ হয়ে যাবে না। না তাদের গাল বসবে, আর না শারীরিক গঠন ও কাঠামোতে কোন পরিবর্তন ঘটবে। বরং তারা কিশোর হয়ে একই বয়স ও একই অবস্থায় চিরদিন থাকবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৮ بِاَكۡوَابٍ وَّ اَبَارِیۡقَ ۬ۙ وَ كَاۡسٍ مِّنۡ مَّعِیۡنٍ ﴿ۙ۱۸﴾

পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, আল-বায়ান

পানপাত্র, কেটলি আর ঝর্ণার প্রবাহিত স্বচ্ছ সুরায় ভরা পেয়ালা নিয়ে, তাইসিরুল

পান-পাত্র, কুজা ও প্রস্রবন নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। মুজিবুর রহমান

With vessels, pitchers and a cup [of wine] from a flowing spring - Sahih International

১৮. পানপত্র, জগ ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে।(১)

(১) أَكْوَابٌ শব্দটি كُوْبٌ এর বহুবচন। অর্থ গ্রাসের ন্যায় পানিপাত্র। أَبَارِيقٌ শব্দটি إِبْرِيْقٌ এর বহুবচন। এর অর্থ কুজা। এ জাতীয় পাত্রে ধরার ও বের করার জায়গা থাকে। كَأس এর অর্থ সুরা পানের পেয়ালা। যদি পানীয় না থাকে তখন তাকে كَأس বলা হয় না। مَعِين এর উদ্দেশ্য এই যে, এই পানীয় একটি ঝর্ণা থেকে আনা হবে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; ইবন কাসীর] জান্নাতের পানিপাত্র, কুজা, পেয়ালা এ সবই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী হবে। নামে এক হলেও গুণাগুণে হবে আলাদা। তাদের এ সমস্ত সরঞ্জামাদি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত। মহান আল্লাহ বলেন, “স্বর্ণের থালা ও পানপত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে” [সূরা আয-যুখরুফ: ৭১] আরও বলেন, “তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রৌপ্যপাত্রে এবং স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানপাত্ৰে— রজতশুভ্র স্ফটিক পাত্রে, পরিবেশনকারীরা যথাযথ পরিমাণে তা পূর্ণ করবে।” [সূরা আল ইনসান: ১৫] হাদীসেও এ সমস্ত পাত্রের বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মুমিনের জন্য জান্নাতে এমন একটি তাঁবু থাকবে, যা এমন একটি মুক্তা দিয়ে তৈরী হয়েছে যে মুক্তার মাঝখানে খালি করা হয়েছে। ... আর রৌপ্যের দু'টি জান্নাত থাকবে সেগুলোর পেয়ালা ও অন্যান্য প্রসাধনী সবই রৌপ্যের। অনুরূপভাবে দু'টি স্বর্ণ নির্মিত জান্নাত থাকবে, যার পেয়ালা ও অন্যান্য প্রসাধনী সবই স্বর্ণের।” [বুখারী: ৪৮৭৮, মুসলিম: ১৮০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:১৯ لَّا یُصَدَّعُوۡنَ عَنۡهَا وَ لَا یُنۡزِفُوۡنَ ﴿ۙ۱۹﴾

তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে। আল-বায়ান

তা পান করলে মাথা ঘুরবে না, জ্ঞানও লোপ পাবে না তাইসিরুল

সেই সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবেনা, তারা জ্ঞানহারাও হবেনা। মুজিবুর রহমান

No headache will they have therefrom, nor will they be intoxicated - Sahih International

১৯. সে সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না, তারা জ্ঞানহারাও হবে না—(১)

(১) يُصَدَّعُونَ শব্দটি صدع থেকে উদ্ভুত। অর্থ মাথা ব্যথা। দুনিয়ার সুরা অধিক মাত্রায় পান করলে মাথাব্যথা ও মাথাঘোরা দেখা দেয়। জান্নাতের সুরা এই সুরা-উপসর্গ থেকে পবিত্র হবে। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী] আর يُنْزِفُون এর আসল অর্থ কুপের সম্পূর্ণ পানি উত্তোলন করা। এখানে অর্থ জ্ঞানবুদ্ধি হারিয়ে ফেলা, বা বিরক্তি বোধ করা। মহান আল্লাহ জান্নাতবাসীদের যে সমস্ত পানীয় দ্বারা সম্মানিত করবেন তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সুরা। কিন্তু সেগুলো কখনো দুনিয়ার মদের মত হবে না। দুনিয়ার মদ বিবেক নষ্ট করে, মাথা ব্যথা সৃষ্টি করে, পেট ব্যথার উদ্রেক করে, শরীর অসুস্থ করে, রোগ-ব্যাধি টেনে আনে। [ফাতহুল কাদীর] মহান আল্লাহ বলেন, “তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পাত্রে শুভ্ৰ উজ্জ্বল, যা হবে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। তাতে ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তাতে তারা মাতালও হবে না।” [সূরা আস-সাফফাত: ৪৫–৪৭] অন্য আয়াতে বলেছেন, “মুক্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্তঃ তাতে আছে নির্মল পানির নাহর, আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নিহর।” [সূরা মুহাম্মদ: ১৫]

তাছাড়া সেটা পান করে তারা জ্ঞানহারাও হবে না। আবার পান করতে বিরক্তি বোধও হবে না। বলা হয়েছে, “তারা তাতে মাতালও হবে না” [সূরা আস-সাফফাত: ৪৭] আলোচ্য সূরার আয়াতেও সে সুরার গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, “তাদের সেবায় ঘোরাফিরা করবে চির-কিশোরেরা, পানপত্র, কুজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, সে সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না, তারা জ্ঞানহারাও হবে না। [সূরা আল ওয়াকি'আহ: ১৭–১৯] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, দুনিয়ার মদের চারটি খারাপ গুণ রয়েছে। মাতলামী, মাথাব্যথা, বমি ও পেশাব। পক্ষান্তরে জান্নাতের সুরা এগুলো থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকবে। [কুরতুবী] অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ জন্নাতের সুরা সম্পর্কে বলেন যে, “তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় হতে পান করানো হবে; ওটার মোহর মিসকের, এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” [সূরা আল-মুতাফফিফীন: ২৫–২৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) সেই সুরা পানে তাদের মাথাব্যথা হবে না, তারা জ্ঞান-হারাও হবে না। [1]

[1] صُدَاعٌ এমন মাথা ব্যথাকে বলে, যা মদের নেশা ও মাদকতার কারণে হয়ে থাকে। إِنْزِافٌ এমন জ্ঞানশূন্যতা যা নেশাগ্রস্ততার ফলে হয়ে থাকে। পার্থিব মদ পানে এই উভয় ক্ষতিই ঘটে থাকে। পক্ষান্তরে পরকালের শারাব বা সুরাপানে আনন্দ ও তৃপ্তি তো অবশ্যই হবে, কিন্তু এসব মন্দ জিনিসের কোন কিছুই ঘটবে না। مَعِيْن প্রবহমান ঝরনা; যা শুকিয়ে যায় না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২০ وَ فَاكِهَۃٍ مِّمَّا یَتَخَیَّرُوۡنَ ﴿ۙ۲۰﴾

আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আল-বায়ান

আর নানান ফলমূল, ইচ্ছেমত যেটা তারা বেছে নেবে, তাইসিরুল

এবং তাদের পছন্দ মত ফলমূল – মুজিবুর রহমান

And fruit of what they select Sahih International

২০. আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফলমূল নিয়ে(১),

(১) জন্নাতের ফল-মূল দুনিয়ার ফল-মূলের নামে হলেও সেগুলোর স্বাদ ও গন্ধ হবে ভিন্ন প্রকৃতির। [সাদী] আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “যখনই তাদেরকে কোন ফল থেকে রিযিক দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, পূর্বেও তো আমাদের এই রিযিক দেয়া হয়েছিল, আর তাদেরকে অনুরূপ ফলই দেয়া হয়েছে”। [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫] সুতরাং দেখতে ও নামে এক প্রকার হলেও স্বাদ হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ সমস্ত ফলের গাছ বিভিন্ন ধরনের হবে। মহান আল্লাহ জানিয়েছেন যে, সে সমস্ত গাছের মধ্যে রয়েছে, আঙ্গুরের গাছ, খেজুর গাছ, রুম্মান বা বেদান গাছ, যেমন তাতে রয়েছে, বরই ও কলা গাছ। আল্লাহ বলেন, “মুত্তাকীদের জন্য তো আছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর”। [সূরা আন-নাবা: ৩১–৩২] “সেখানে রয়েছে ফলমূল—খেজুর ও আনার ” [সূরা আর-রাহমান: ৬৮] “আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, সেখানে আছে কাটাহীন কুলগাছ, কাদি ভরা কদলী গাছ, সম্প্রসারিত ছায়া, সদা প্রবাহমান পানি, ও প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না।” [সূরা আল-ওয়াকি আহ: ২৭–৩২]

জান্নাতের বাগানে যা থাকবে তার মধ্যে কুরআন যা বর্ণনা করেছে তা খুব সামান্যই। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ এ সমস্ত ফলমূলকে অন্যত্র একত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার”। [সূরা আর-রাহমান: ৫৩] জান্নাতের ফল-ফলাদির প্রাচুর্যের কারণে সেখানকার অধিবাসীরা যা ইচ্ছে তা দাবী করে নিবে আর যা ইচ্ছে তা পছন্দ করবে। “সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা বহুবিধ ফলমূল ও পানীয় চাইবে।” [সূরা সোয়াদ: ৫১] “এবং তাদের পছন্দমত ফলমূল”। [সূরা আল-ওয়াকি'আহ: ২০] মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে, তাদের বঞ্ছিত ফলমূলের প্রাচুর্যের মধ্যে। [সূরা আল-মুরসালাত: ৪১–৪২] মোটকথা: জান্নাতে সবধরনের যাবতীয় স্বাদের ফল-ফলাদি থাকবে যা তাদের আনন্দ দিবে ও যা তাদের মন চাইবে।

মহান আল্লাহ বলেন, “স্বর্ণের থালা ও পানিপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে রয়েছে সমস্ত কিছু, যা অন্তর চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৭১]। তাছাড়া জান্নাতের গাছসমূহের আরেকটি গুণ হলো যে, সেগুলো কখনো ফল-ফলাদি শূন্য হবে না। সবসময় সব ঋতুতে তাতে ফল থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, “মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার উপমা এরূপঃ তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী।” [সূরা আর-রা'দ: ৩৫] আরও বলেন, “আর প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না।” [সূরা আল-ওয়াকি'আহ: ৩৩–৩৪] এছাড়া জান্নাতের গাছসমূহ শাখা, কাণ্ডবিশিষ্ট ও বর্ধনশীল হবে। আল্লাহ বলেন, “আর যে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট” [সূরা আর-রাহমান: ৪৭–৪৯] আরও বলেন, “এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? ঘন সবুজ এ উদ্যান দুটি। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? [সূরা আর-রাহমান: ৬৩–৬৫]

এ সমস্ত গাছের ফলফলাদির আরো একটি গুণ হচ্ছে এই যে, এগুলো হাতের নাগালের মধ্যেই থাকবে, যাতে জান্নাতিদের কষ্ট না হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তর বিশিষ্ট ফারাশে, দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।” [সূরা আর-রাহমান: ৫৫] অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “সন্নিহিত গাছের ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং তার ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে।” [সূরা আল-ইনসান: ১৪] এছাড়া জান্নাতের গাছের ছায়া; তা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা; মহান আল্লাহ বলেন, “যারা ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র স্ত্রী থাকবে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করব।” [সূরা আন-নিসা: ৫৬] “সম্প্রসারিত ছায়া” [সূরা আল-ওয়াকি'আহ: ৩০] “মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে” [সূরা আল-মুরসালাত: ৪১]

তাছাড়া এ সমস্ত গাছের আরও কিছু বর্ণনা রাসূলের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীসে এসেছে যে, “জান্নাতের কোন কোন গাছ এমন হবে যে, যার নীচে দিয়ে সফরকারী তার সর্বশক্তি দিয়ে সফর করলেও তা অতিক্রম করতে একশত বছর লাগবে, তারপরও সে তা শেষ করতে পারবে না” [বুখারী: ৩২৫১, মুসলিম: ২৮২৮] অন্য হাদীসে এসেছে, “জান্নাতের গাছের কাণ্ড হবে স্বর্ণের”। [তিরমিযী: ২৫২৫] জান্নাতের গাছ বৃদ্ধি করার উপায় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইসরার রাত্রিতে আমি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মতকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে তারপর তাদের জানাবে যে, জান্নাতের মাটি অতি উত্তম। পানি অতি মিষ্ট। আর এটা হচ্ছে গাছবিহীন ভূমি। এখানকার গাছ হলো, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার” [তিরমিযী: ৩৪৬২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) এবং তাদের পছন্দ মত ফলমূল

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২১ وَ لَحۡمِ طَیۡرٍ مِّمَّا یَشۡتَهُوۡنَ ﴿ؕ۲۱﴾

আর পাখির গোশ্‌ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে। আল-বায়ান

আর পাখীর গোশত যেটা তাদের মনে চাইবে, তাইসিরুল

আর তাদের ঈস্পিত পাখীর গোশত দিয়ে; মুজিবুর রহমান

And the meat of fowl, from whatever they desire. Sahih International

২১. আর তাদের ঈপ্সিত পাখীর গোশত নিয়ে।(১)

(১) অর্থাৎ রুচিসম্মত পাখির গোশত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাউসার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এটা এমন এক নাহর যা আমাকে আল্লাহ্ জান্নাতে দান করেছেন। যার মাটি মিসকের, যার পানি দুধের চেয়েও সাদা, আর যা মধু থেকেও সুমিষ্ট। সেখানে এমন এমন উঁচু ঘাড়বিশিষ্ট পাখিসমূহ পড়বে যেগুলো দেখতে উটের ঘাড়ের মত। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো তো অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে। তিনি বললেন, যারা সেগুলো খাবে তারা তাদের থেকেও আকর্ষণীয়।” [মুসনাদে আহমাদ; ৩/২৩৬, তিরমিযী: ২৫৪২, আল-মুখতারাহ: ২২৫৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) আর তাদের পছন্দমত পাখীর গোশত নিয়ে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২২ وَ حُوۡرٌ عِیۡنٌ ﴿ۙ۲۲﴾

আর থাকবে ডাগরচোখা হূর, আল-বায়ান

আর (সেখানে থাকবে) ডাগর ডাগর উজ্জ্বল সুন্দর চোখওয়ালা সুন্দরীরা, তাইসিরুল

আর তাদের জন্য থাকবে আয়তলোচনা হুর – মুজিবুর রহমান

And [for them are] fair women with large, [beautiful] eyes, Sahih International

২২. আর তাদের জন্য থাকবে ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট হূর,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) আর (তাদের জন্য থাকবে) আয়তলোচনা হুর;

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৩ كَاَمۡثَالِ اللُّؤۡلُوَٴ الۡمَكۡنُوۡنِ ﴿ۚ۲۳﴾

যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা, আল-বায়ান

সযত্নে লুকিয়ে রাখা মুক্তোর মত, তাইসিরুল

সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ – মুজিবুর রহমান

The likenesses of pearls well-protected, Sahih International

২৩. যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা(১),

(১) আলোচ্য আয়াতে জান্নাতের নারীদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। জান্নাতে দু ধরনের নারী থাকবে।

এক. সে সমস্ত নারী যারা দুনিয়াতে ছিল। তারা সেখানে স্ত্রী হিসেবে থাকবে। এ সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো:

* দুনিয়াতে যারা যাদের স্ত্রী ছিল তারা আখেরাতে তাদের স্বামীরা যদি জান্নাতে যায় তখন তারাও তাদের স্ত্রী হিসেবে থাকবে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, “স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তানসন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও, এবং ফিরিশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে,” [সূরা আর-রাদ: ২৩] সুতরাং তারা জান্নাতে পরস্পর আনন্দে বসবাস করবে। মহান আল্লাহ বলেন, “তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ বলেন, “তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণগণ সানন্দে জান্নাতে প্ৰবেশ কর।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৭০]

* দুনিয়াতে যদি কোন মহিলা পরপর কয়েকজনের স্ত্রী ছিল, তারপর যদি সে সমস্ত পুরুষেরা সবাই জান্নাতে যায় এবং সবাই মহিলার জন্য সমপর্যায়ের হয়, তবে সে মহিলা তাদের মধ্যকার সর্বশেষ ব্যক্তিটির স্ত্রী হবে। কারণ মৃত্যুর কারণে তাদের পূর্বের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। স্বামীর জান্নাতে যাওয়ার কারণে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হবে যে, সে তার স্ত্রীর সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। সুতরাং মহিলা তার সর্বশেষ যে স্বামীর সাথে ঘর করা অবস্থায় মারা গেছে তার সাথে সে জান্নাতে থাকবে। এর প্রমাণ রাসূল এর বাণী; তিনি বলেন, যে মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পরে অন্য স্বামী গ্ৰহণ করেছে সে তার সর্বশেষ স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে। [ত্বাবরানী: আল-আওসাত: ৩/২৭৫, নং ৩১৩০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৪/২৭০]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী ছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে কঠোর ব্যবহার করতেন। আসমা তার পিতা আবু বকরের কাছে অভিযোগ করলে তিনি বললেন, বেটি! সবর করো, কোন মহিলা যদি তার স্বামীর সাথে থাকা অবস্থায় মারা যায় তারপর দু’জনই জান্নাতে যায় তবে আল্লাহ তাদের দু’জনকে জান্নাতেও এক সাথে রাখবেন। (বিশেষ করে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মানুষ) [তারিখে ইবনে আসাকির ১৯/১৯৩]

অনুরূপ অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার স্ত্রীকে মৃত্যুর সময় বলেন যে, তুমি যদি আখেরাতে আমার স্ত্রী হতে চাও তবে আমার পরে আর কারো সাথে বিয়ে করবেনা। কারণ; একজন মহিলা তার সর্বশেষ স্বামীর সাথেই জান্নাতে থাকবে। আর এজন্যই আল্লাহ তাঁর নবীর স্ত্রীদেরকে নবীর পরে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। [বাইহাকী: আস-সুনানুল কুবরা: ৭/৬৯–৭০, খতিব বাগদাদী: তারিখে বাগদাদ: ৯/৩২৮]

অনুরূপভাবে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পরে মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তার স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি এই বলে ফেরত দিলেন যে, আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বলেছেন যে, একজন মহিলা তার সর্বশেষ স্বামীর সাথেই জান্নাতে থাকবে। আমি আবুদ্দারদার পরিবর্তে কাউকে চাই না। [বুসীরী: ইতহাফুল খিয়ারাতুল মাহারাহ: ৪/৩৭ নং ৩২৬৪, ইবনে হাজার: আলমাতালিবুল আলিয়া: ২/১১০]

* আর যদি মহিলা কারও স্ত্রী হিসেবে সর্বশেষে ছিল না (যেমন তালাকপ্রাপ্ত ছিল), তখন সে তাদের মধ্যে যারা তার সাথে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী সুন্দর ব্যবহার করেছে তার সাথে থাকবে। অথবা তাকে যে কাউকে গ্ৰহণ করার এখতিয়ার দেয়া হবে। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এ ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায় (যদিও বর্ণনাগুলো দূর্বল)। এক বর্ণনায় এসেছে, উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মহিলাদের কেউ কেউ দুটি বা তিনটি স্বামীর ঘর করেছে সে  জন্নাতে কার থাকবে? তিনি উত্তরে বললেন, যার ব্যবহার-চরিত্র সবচেয়ে ভাল। [তাবরানী: মুজামুল কাবীর: ২৩/২২২]

কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, এ প্রশ্নটি উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা করেছিলেন, জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তাকে এখতিয়ার দেয়া হবে যে, যাকে ইচ্ছে বাছাই করে নাও। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে উম্মে সালামাহ! উত্তম ব্যবহার- চরিত্র দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিয়ে গেল। [তাবরানী: মুজামুল কাবীর ২৩/৩৬৭, হাইসামী: মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১১৯]

* জন্নাতে কোন কুমার থাকবে না। প্রত্যেক মুমিনের দু'জন স্ত্রী থাকবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রথম যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের চেহারার লাবন্য হবে পূর্নিমার রাত্রির চাঁদের চেয়েও বেশী। তারা থুথু নিক্ষেপকারী হবে না, শর্দি-কাশি সম্পন্ন হবে না, পায়খানা-পেশাব করবেনা, তাদের পেয়ালা হবে স্বর্ণের, চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের আগরকাঠ হবে উন্নতমানের উদকাঠ, ঘাম হবে মিসক, তাদের প্রত্যেকের থাকবে দু’জন করে স্ত্রী, যাদের সৌন্দর্যের প্রমাণ এত স্পষ্ট যে, তাদের হাড়ের ভিতরের মজ্জা গোস্ত ভেদ করে দেখা যাবে। [বুখারী: ৩০০৬, মুসলিম: ২৮৩৪]

* তবে দুনিয়াতে যদি কারও একাধিক স্ত্রী থাকে। তারপর তারা সবাই জান্নাতে যায় তবে তারা সবাই সে লোকের স্ত্রী হিসেবে থাকবে। এর প্রমাণ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।

* আর যদি কারও স্বামী জান্নাতী না হয় তখন তাকে আল্লাহ যার সাথে পছন্দ করেন তার সাথে জান্নাতে থাকতে দিবেন।

* জান্নাতী এ সমস্ত নারীরা তাদের দুনিয়ার অবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন হবে। তারা হবে সবদিক থেকে পবিত্ৰা। তারা হায়েয, নিফাস, থুথু, কাশি, পেশাব, পায়খানা এসব থেকে মুক্ত থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, “আর তাদের জন্য সেখানে থাকবে পবিত্ৰা স্ত্রীগণ, এবং তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫] তাছাড়া তাদের সৌন্দর্যও হবে চিত্তাকর্ষক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি জান্নাতী কোন মহিলা যমীনের অধিবাসীদের দিকে তাকাতো তবে আসমান ও যমীনের মাঝের অংশ আলোতে ভরপুর হয়ে যেত, সুগন্ধিতে ভরে দিত। এমনকি তার মাথাস্থিত। উড়না দুনিয়া ও তার মধ্যে যা আছে তা থেকে উত্তম।” [বুখারী: ২৬৪৩, ২৭৯৬]

দুই. সে সমস্ত নারী যাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে বলা হয় হূর। মহান আল্লাহ বলেন, “আর আমরা তাদেরকে বড় চোখবিশিষ্ট হূরদের সাথে বিয়ে দেব”। [সূরা আদ-দোখান: ৫৪] কুরআন ও হাদীসে তাদের কিছু গুণাগুণ বৰ্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে:

* তারা হবে অত্যন্ত শুভ্ৰ। আর এজন্যই তাদের নাম হয়েছে, হুর। কেননা, হূর শব্দ দ্বারা ঐ সমস্ত নারীদেরকে বোঝায় যাদের চোখের সাদা অংশ অত্যন্ত ফর্সা, কোন প্রকার খাদ নেই। আর যাদের চোখের কালো অংশ একেবারে কালো।

* তারা হবে প্রশস্ত চোখ বিশিষ্টা। তাদের এ দুটি গুণ আলোচ্য আয়াতেই বর্ণিত হয়েছে। [সূরা আল-ওয়াকি'আহ: ২২]

* তারা হবে সমবয়স্কা উদভিন্ন যৌবনা ও সুভাষিনী। আল্লাহ বলেন, “মুক্তাকীদের জন্য তো আছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর, সমবয়স্কা উদভিন্ন যৌবনা তরুণী” [সূরা আন-নাবা: ৩১–৩৩]

* তারা হবে কুমারী আর তারা হবে স্বামী সোহাগিনী, মহান আল্লাহ্‌ বলেন, “ওদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে–ওদেরকে করেছি কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা,”। [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৩৫–৩৭]

* তাদের দেখতে মনে হবে যেন মনি মুক্তা; আল্লাহ্‌ বলেন, “সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ” [সূরা আল-ওয়াকি আহঃ ২৩]

* তাদের দেখতে মনে হবে যেন, পরিষ্কার ডিম। আল্লাহ্‌ বলেন, “মনে হয় যেন তারা সুরক্ষিত ডিম্ব।” [সূরা আস-সাফফাত: ৪৯]

* তাদেরকে এর আগে কেউ স্পর্শ করেনি। আর তারাও আপনি স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকায় না। মহান আল্লাহ বলেন, “সেসবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না, যাদেরকে আগে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি।” [সূরা আর-রাহমান: ৫৬] অন্যত্র বলা হয়েছে, “তাদের সংগে থাকবে আয়তনয়না, আয়তলোচনা হুরীগণ।” [সূরা আস-সাফফাত: ৪৮] আরও বলা হয়েছে, “তারা হূর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।” [সূরা আর রাহমান: ৭১]

* তারা দেখতে মূল্যবান পাথরের মত সুন্দর ও মসৃন হবে। আল্লাহ বলেন, “তারা যেন পদ্মরাগ ও প্রবাল।” [সূরা আর-রাহমান: ৫৭]

* তাদের সৌন্দর্য এমন যে, তা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সার্বিকভাবে ফুটে উঠবে। আল্লাহ বলেন, “সে উদ্যানসমূহের মাঝে রয়েছে সুশীলা, সুন্দরীগণ।” [সূরা আর-রাহমান: ৭০]

* জান্নাতে তারা গানও গাইবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জান্নাতীদের স্ত্রীগণ (হুরগণও এতে শামিল) তারা এমন সুন্দর স্বরে গান ধরবে যা কোনদিন কেউ শুনেনি। তারা যা বলবে, “আমরা অনিন্দ সুন্দরী, সুশীলা, সন্মানিত লোকের স্ত্রী, যারা আমাদের দিকে চক্ষু শীতল করার জন্য তাকায়” তারা আরও বলবে, “আমরা চিরস্থায়ী সুতরাং আমরা কখনো মরবনা, আমরা নিরাপদ সুতরাং আমাদের ভয় নেই, আমরা স্থায়ী অধিবাসী সুতরাং আমরা চলে যাব না” [তাবরানী: মুজামুস সাগীর: ২/৩৫, নং: ৭৩৪, আল আওসাত: ৫/১৪৯, নং ৪৯১৭, মাজমাউয যাওয়ায়িদ; ১০/৪১৯]

* দুনিয়াতে কোন জান্নাতী পুরুষকে কোন নারী কষ্ট দিলে জান্নাতের হুরীরা সে জন্য কষ্টঅনুভব করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মহিলা যখনই কোন জান্নাতী পুরুষকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয় তখনি তার জান্নাতী হুর স্ত্রী বলতে থাকে, “তোমার ধ্বংস হোক, তুমি তাকে কষ্ট দিও না, সে তো তোমার কাছে সাময়িক অবস্থান করছে, অচিরেই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে”। [তিরমিযী: ১১৭৪, ইবনে মাজাহ: ২০১৪]

* সহীহ হাদীসের কোথাও একজন মুমিনের জন্য কতজন হূর থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। এটা আল্লাহর রহমত ও বান্দার আমলের উপর নির্ভরশীল। তবে শহীদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের জন্য নিজেদের স্ত্রী ছাড়াও সত্তরোর্ধ হূর থাকবে। [দেখুন, তিরমিযী: ১৬৬৩, মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৩১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ-[1]

[1] مَكْنُوْنٌ (সুরক্ষিত) যাকে গুপ্ত রাখা হয়েছে। তাতে না কারো হাতের স্পর্শ লাগে, আর না ধূলাবালি লাগে। এ ধরনের জিনিস একেবারে পরিষ্কার-পরিছন্ন এবং তার আসল অবস্থায় থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৪ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۴﴾

তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ। আল-বায়ান

তাদের কর্মের প্রতিদান হিসেবে! তাইসিরুল

তাদের কর্মের পুরস্কার স্বরূপ। মুজিবুর রহমান

As reward for what they used to do. Sahih International

২৪. তাদের কাজের পুরস্কারস্বরূপ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) তাদের কর্মের পুরস্কার স্বরূপ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৫ لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡهَا لَغۡوًا وَّ لَا تَاۡثِیۡمًا ﴿ۙ۲۵﴾

তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; আল-বায়ান

সেখানে তারা শুনবে না কোন অনর্থক কথাবার্তা, আর পাপের বুলি, তাইসিরুল

সেখানে তারা শুনবেনা কোন অসার অথবা পাপ বাক্য, মুজিবুর রহমান

They will not hear therein ill speech or commission of sin - Sahih International

২৫. সেখানে তারা শুনবে না কোন আসার বা পাপবাক্য(১),

(১) এটি জান্নাতের বড় বড় নিয়ামতের একটি। এসব নিয়ামত সম্পর্কে কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষের কান সেখানে কোন অনর্থক ও বাজে কথা, মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, অপবাদ, গালি, অহংকার ও বাজে গালগল্প বিদ্রুপ ও উপহাস, তিরস্কার ও বদনামমূলক কথাবার্তা শোনা থেকে রক্ষা পাবে। [যেমনঃ আল-গাশিয়াহঃ ১১, মার্‌ইয়ামঃ ৬২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপবাক্য।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৬ اِلَّا قِیۡلًا سَلٰمًا سَلٰمًا ﴿۲۶﴾

শুধু এই বাণী ছাড়া, ‘সালাম, সালাম’ আল-বায়ান

এমন কথা ছাড়া যা হবে শান্তিময়, নিরাপদ, তাইসিরুল

‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত। মুজিবুর রহমান

Only a saying: "Peace, peace." Sahih International

২৬. ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ছাড়া।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) সালাম-সালাম (শান্তি) বাণী ব্যতীত। [1]

[1] অর্থাৎ, পৃথিবীতে তো পরস্পর দন্ধ-বিবাদ হয়। এমনকি (আপন) ভায়ে-ভায়ে ও বোনে-বোনেও বিবাদ লেগে থাকে। এই ঝগড়া-বিবাদের ফলে অন্তরে জন্ম নেয় এমন ঘৃণা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা, যা একে অপরের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, গালি-গালাজ এবং গীবত ও চুগলী ইত্যাদি করার উপর উদ্বুদ্ধ করে। জান্নাত এ সমস্ত চারিত্রিক নোংরামি ও পঙ্কিলতা থেকে কেবল পবিত্রই হবে না, বরং সেখানে শুধু সালাম আর সালামেরই ধ্বনি মুখরিত হবে; ফিরিশতাদের পক্ষ থেকেও এবং জান্নাতবাসীদের পরস্পরের পক্ষ থেকেও। যার অর্থ হল, সেখানে সালাম-সম্ভাষণ তো হবে, কিন্তু অন্তর ও জিভের সেই নোংরামি থাকবে না, যা পৃথিবীতে ব্যাপকহারে বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি বড় বড় দ্বীনদার ব্যক্তিরাও এ জঘন্য অভ্যাস থেকে সুরক্ষিত নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৭ وَ اَصۡحٰبُ الۡیَمِیۡنِ ۬ۙ مَاۤ اَصۡحٰبُ الۡیَمِیۡنِ ﴿ؕ۲۷﴾

আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! আল-বায়ান

আর ডানদিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তাইসিরুল

আর ডান দিকের দল! কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! মুজিবুর রহমান

The companions of the right - what are the companions of the right? Sahih International

২৭. আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) আর ডান হাত-ওয়ালারা, কত ভাগ্যবান ডান হাত-ওয়ালারা! [1]

[1] এ পর্যন্ত অগ্রবর্তী (مُقَرَّبِيْنَ) নৈকট্যপ্রাপ্তদের আলোচনা ছিল। এবারে أَصْحَابُ الْيَمِيْنِ (ডান হাত-ওয়ালা) থেকে সাধারণ মু’মিনদের কথা আলোচনা হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৮ فِیۡ سِدۡرٍ مَّخۡضُوۡدٍ ﴿ۙ۲۸﴾

তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে, আল-বায়ান

তারা থাকবে কাঁটা বিহীন বরই গাছগুলোর মাঝে, তাইসিরুল

তারা থাকবে এক উদ্যানে, সেখানে আছে কন্টকহীন কুল বৃক্ষ, মুজিবুর রহমান

[They will be] among lote trees with thorns removed Sahih International

২৮. তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে(১) কাঁটাহীন কুলগাছ(২),

(১) অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের পরে তাদের কি কি নেয়ামত থাকবে তাই এখানে বর্ণিত হয়েছে। [তাবারী]

(২) জান্নাতের নেয়ামতসমূহ অসংখ্য, অদ্বিতীয় ও কল্পনাতীত। তন্মধ্যে কুরআন পাক মানুষের বোধগম্য, ও পছন্দসই বস্তুসমূহ উল্লেখ করেছে। হাদীসে এসেছে, এক বেদুঈন এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে একটি কষ্টদায়ক গাছের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি মনে করিনি যে, জান্নাতে কষ্ট দায়ক কিছু থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেটা কি? বেদুঈন বলল: বরই। কেননা তাতে কাঁটা রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সেটা হবে কাটাহীন বরই গাছ। প্রতিটি কাটার জায়গায় একটি করে ফল থাকবে। এটা শুধু ফলই উৎপাদন করবে। ফলের সাথে বাহাত্তরটি বাহারী রং থাকবে যার এক রং অন্য রংয়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে না।” [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৭৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) (তারা থাকবে এক বাগানে) সেখানে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:২৯ وَّ طَلۡحٍ مَّنۡضُوۡدٍ ﴿ۙ۲۹﴾

আর কাঁদিপূর্ণ কলাগাছের নিচে, আল-বায়ান

কলা গাছের মাঝে যাতে আছে থরে থরে সাজানো কলা, তাইসিরুল

কাঁদি ভরা কদলী বৃক্ষ, মুজিবুর রহমান

And [banana] trees layered [with fruit] Sahih International

২৯. এবং কাদি ভরা কলা গাছ,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) কাঁদি ভরা কলাগাছ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩০ وَّ ظِلٍّ مَّمۡدُوۡدٍ ﴿ۙ۳۰﴾

আর বিস্তৃত ছায়ায়, আল-বায়ান

বিস্তীর্ণ অঞ্চল-জুড়া ছায়ায়, তাইসিরুল

সম্প্রসারিত ছায়া, মুজিবুর রহমান

And shade extended Sahih International

৩০. আর সম্প্রসারিত ছায়া(১),

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে এমন গাছ থাকবে যার ছায়ায় ভ্ৰমণকারী একশত বছর ভ্ৰমণ করেও শেষ করতে পারবে না।” [বুখারী: ৪৮৮১, মুসলিম: ২১৭৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) সম্প্রসারিত ছায়া। [1]

[1] যেমন এক হাদীসে আছে যে, ‘‘জান্নাতের একটি গাছের ছায়া তলে একজন অশবারোহী একশ’ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে, তবুও সে ছায়া শেষ হবে না।’’ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা ওয়াকিআহ, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩১ وَّ مَآءٍ مَّسۡكُوۡبٍ ﴿ۙ۳۱﴾

আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে, আল-বায়ান

অবিরাম প্রবহমান পানির ধারে, তাইসিরুল

সদ্য প্রবাহমান পানি, মুজিবুর রহমান

And water poured out Sahih International

৩১. আর সদা প্রবাহমান পানি,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) সদা প্রবহমান পানি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১৮১ থেকে ২০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৭৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 7 8 9 10 11 12 13 14 পরের পাতা »