-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২১. তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।(১)
(১) অর্থাৎ ইসলামের পথে, দ্বীনে হকের পথে। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ তাওহীদের পথে, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁরই পছন্দকৃত শরীআতের উপর তাকে পরিচালিত করেছেন।
তাফসীরে জাকারিয়া(১২১) সে ছিল আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২২. আর আমরা তাকে দুনিয়ায় দিয়েছিলাম মঙ্গল। আর নিশ্চয় তিনি আখিরাতে সৎকর্মপরায়ণদের দলভুক্ত।(১)
(১) অর্থাৎ দুনিয়াতে একজন মুমিনের যা প্রয়োজন আমি তাকে তার সবই দান করেছিলাম। [ইবন কাসীর] মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ দুনিয়াতে কল্যাণ দানের অর্থঃ সৎ প্রশংসাসূচক বাণী। সবাই তার সম্মান করে, তাকে ভাল বলে জানে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২২) আমি তাকে ইহকালে দিয়েছিলাম মঙ্গল এবং নিশ্চয়ই পরকালেও সে হবে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২৩. তারপর আমরা আপনার প্রতি ওহী করলাম যে, আপনি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত (আদর্শ) অনুসরণ করুন; এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৩) অতঃপর আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর;[1] সে অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
[1] ملة এমন ধর্ম যা কোন নবী দ্বারা মানুষের জন্য বিধিবদ্ধ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। নবী (সাঃ) সকল আম্বিয়া সহ সকল মানুষের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছেন। যাতে ইবরাহীম (আঃ)-এর বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান স্পষ্ট হয়। অবশ্য নীতিগত দিক দিয়ে সকল নবীর শরীয়ত ও দ্বীন একই ছিল। যাতে রিসালাত সহ তাওহীদ ও পরকাল ছিল মৌলিক বিষয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২৪. শনিবার পালন তো শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করেছে। আর যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত আপনার রব তো অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের বিচার-মীমাংসা করে দেবেন।(১)
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ আমাদের পূর্বের জাতিসমূহকে শুক্রবার সম্পর্কে অজ্ঞতায় রেখেছিলেন। ফলে ইয়াহুদীগণ শনিবারকে গ্রহণ করে। আর নাসারাগণ রবিবারকে গ্রহণ করে। এভাবে তারা কিয়ামতের দিনও আমাদের পিছে থাকবে। আমরা দুনিয়াবাসীদের দিক থেকে সবশেষে হলেও কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির আগে বিচারকার্য সম্পন্নকৃত হবো। [মুসলিমঃ ৮৫৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৪) শনিবার পালন তো শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ বিষয়ে মতভেদ করত।[1] তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, তোমার প্রতিপালক অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মাঝে বিচার-ফায়সালা করে দেবেন।
[1] এই মতভেদ কি ছিল? এর ব্যাখ্যায় মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেন, মূসা (আঃ) তাদের জন্য শুক্রবার দিন নিদিষ্ট করেছিলেন; কিন্তু বানী ইস্রাঈলগণ তার বিরোধিতা করে শনিবারকে সম্মান ও ইবাদতের জন্য বেছে নেয়। মহান আল্লাহ বলেছিলেন, হে মূসা তারা যে দিন বেছে নিয়েছে তাই তাদের জন্য থাকতে দাও। আবার কেউ বলেন, মহান আল্লাহ তাদেরকে সপ্তাহে একটি দিন সম্মানের জন্য বেছে নিতে বলেন। দিনটি নির্দিষ্ট করায় তাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিল। অতঃপর ইয়াহুদীরা শনিবার ও খ্রিষ্টানরা রবিবার দিনকে বেছে নেয়। আর জুমআর দিনকে মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট করেন। আবার কিছু উলামা বলেন, খ্রিষ্টানরা রবিবারকে ইয়াহুদীদের বিরোধিতায় নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট করে, অনুরূপ ইবাদতের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে ইয়াহুদীদের থেকে আলাদা রাখার জন্য বায়তুল মুকাদ্দাসের পাথরের পূর্ব প্রান্তকে কিবলা হিসাবে বেছে নেয়। জুমআর দিনকে আল্লাহ কর্তৃক মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট করার কথা হাদীসে বর্ণিত আছে। (দেখুন বুখারীঃ জুমআহ অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২৫. আপনি মানুষকে দাওয়াত(১) দিন আপনার রবের পথে হিকমত(২) ও সদুপদেশ(৩) দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায়(৪) নিশ্চয় আপনার রব, তার পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশী জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।
(১) دعوة এর শাব্দিক অর্থ ডাকা, আমন্ত্রণ জানানো, আহবান করা। নবীগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে মানবজাতিকে আল্লাহর দিকে আহবান করা। এরপর নবী ও রাসূলগণের সমস্ত শিক্ষা হচ্ছে এ দাওয়াতেরই ব্যাখ্যা। কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ পদবী হচ্ছে- আল্লাহর দিকে আহবানকারী হওয়া। এক আয়াতে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- (وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا) [আল-আহযাবঃ ৪৬] এবং অন্য এক আয়াতে আরো বলা হয়েছে- (يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ) [আল-আহকাফঃ ৩১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদাংক অনুসরণ করে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের উপরও ফরয করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমে এ সম্বন্ধে বলা হয়েছে- (وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ) অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দেবে (অর্থাৎ) সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে। [আলে-ইমরানঃ ১০৪] অন্য আয়াতে আছে- (وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ) -অর্থাৎ কথা-বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়? [ফুসসিলাতঃ ৩৩]
(২) ‘হেকমত’ শব্দটি কুরআনুল কারীমে অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এস্থলে কোন কোন মুফাসসির হেকমতের অর্থ নিয়েছেন কুরআন, কেউ কেউ বলেছেন, কুরআন ও সুন্নাহ। [তাবারী] আবার কেউ কেউ অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ স্থির করেছেন। [ফাতহুল কাদীর] আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে বিশুদ্ধ ও মজবুত সহীহ কথাকে হেকমত বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর]
(৩) وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ) - وعظ – موعظة) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন শুভেচ্ছামূলক কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতিপক্ষের মন তা কবুল করার জন্য নরম হয়ে যায় [ফাতহুল কাদীর] উদাহরণতঃ তার কাছে কবুল করার সওয়াব ও উপকারিতা এবং কবুল না করার শাস্তি ও অপকারিতা বর্ণনা কর। [ইবন কাসীর] الْحَسَنَةِ এর অর্থ বর্ণনা ও শিরোনাম এমন হওয়া যে, প্রতিপক্ষের অন্তর নিশ্চিত হয়ে যায়, সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং অনুভব করে যে, এতে আপনার কোন স্বার্থ নেই- শুধু তার শুভেচ্ছার খাতিরে বলেছেন। موعظة শব্দ দ্বারা শুভেচ্ছামূলক কথা কার্যকর ভঙ্গিতে বলার বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। কিন্তু শুভেচ্ছামূলক কথা মাঝে মাঝে মর্মবিদারক ভঙ্গিতে কিংবা এমনভাবে বলা হয় যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করে। এ পস্থা পরিত্যাগ করার জন্য حسنة শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ দাওয়াত দেবার সময় দুটি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং দুই, সদুপদেশ। এ দুটিই মূলত: দাওয়াতের পদ্ধতি। কিন্তু কখনও কখনও দায়ী-র বিপক্ষকে যুক্তি-তর্কে নামাতে হয়। তাই কিভাবে সেটা করতে হবে তাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর]
(৪) (وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ) এখানে جادل শব্দটি مجادلة ধাতূ থেকে উদ্ভুত। مجادلة বলে এখানে তর্ক-বিতর্ক বোঝানো হয়েছে। (بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ) এর অর্থ এই যে, যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বিতর্কও উত্তম পন্থায় হওয়া দরকার। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা ও কমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এমন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে হবে, যা প্রতিপক্ষ বুঝতে সক্ষম হয়। কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, উত্তম পন্থায় তর্ক-বিতর্ক শুধু মুসলিমদের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং আহলে কিতাব সম্পর্কে বিশেষভাবে কুরআন বলে যে, (وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ) [আল-আনকুবৃতঃ ৪৬] অন্য আয়াতে মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালাম-কে (فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا) [ত্বা-হাঃ ৪৪] নির্দেশ দিয়ে আরো বলা হয়েছে যে, ফিরআওনের মত অবাধ্য কাফেরের সাথেও নম্র আচরণ করা উচিত।
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৫) তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সদ্ভাবে।[1] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে, তাও সবিশেষ অবহিত। [2]
[1] এখানে ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ, তা হবে হিকমত, সদুপদেশ ও নম্রতার উপর ভিত্তিশীল এবং আলোচনার সময় সদ্ভাব বজায় রাখা, কঠোরতা পরিহার করা ও নম্রতার পথ অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
[2] অর্থাৎ, তাঁর কাজ উল্লিখিত নীতি অনুসারে উপদেশ ও প্রচার করা। হিদায়াতের রাস্তায় পরিচালিত করা আল্লাহর আয়ত্তাধীন। আর তিনিই জানেন যে, কে হিদায়াত গ্রহণকারী, আর কে তা গ্রহণকারী নয়?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২৬. আর যদি তোমরা শাস্তি দাও(১), তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্য সেটা অবশ্যই উত্তম(২)।
(১) (وَإِنْ عَاقَبْتُمْ) বাক্যে প্রথমতঃ আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীদেরকে আইনগত অধিকার দেয়া হয়েছে যে, যারা নির্যাতন চালায়, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা আপনার জন্য বৈধ, কিন্তু এই শর্তে যে, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্যাতনের সীমা অতিক্রম করা যাবে না। যতটুকু যুলুম প্রতিপক্ষের তরফ থেকে করা হয়, প্রতিশোধ ততটুকুই গ্রহণ করতে হবে; বেশী হতে পারবে না। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী এক মেয়েকে দুই পাথরের মাঝে রেখে হত্যা করে, মৃত্যুর পূর্বে তাকে বিভিন্ন জনের জিজ্ঞাসা করা হলে সে এক ইয়াহুদীর প্রতি ইঙ্গিত করে। সে ইয়াহুদীকে নিয়ে আসা হলে সে তা স্বীকার করে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ইয়াহুদীকে দুই পাথরের মাঝখানে বেঁধে হত্যা করার আদেশ করেন। [বুখারীঃ ৬৮৮৪, মুসলিমঃ ১৬৭২]
(২) আয়াতের শেষে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, যদিও প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার রয়েছে, কিন্তু সবর করা উত্তম। উহুদ যুদ্ধে সত্তর জন সাহাবীর শাহাদাত বরণ এবং হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে হত্যার পর তার লাশের নাক-কান কর্তনের ঘটনা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দারুণভাবে মর্মাহত হলেন। সাহাবায়ে কেরাম (আনসারগণ) বললেনঃ আমরা যদি তাদের উপর জয়লাভ করি, তবে তাদেরকে দেখিয়ে দেব। তারপর যখন মক্কা বিজয়ের দিন আসল, তখন আল্লাহ নাযিল করলেন- “যদি শাস্তি দিতে চাও তবে ততটুকুই দেবে, যতটুকু তোমরা শাস্তি ভোগ করেছ। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, তবে তা ধৈর্যশীলদের জন্য অনেক উত্তম (কল্যাণকর)।” তখন এক লোক বললঃ আজকের পরে কুরাইশদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ চারজন ব্যতীত আর সবাইকে ছেড়ে দাও। [মুস্তাদরাকে হাকীমঃ ২/৩৫৮–৩৫৯, তিরমিযিঃ ৩১২৯, নাসায়ীঃ ২৯৯]
এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবর করেছিলেন। সম্ভবতঃ এ কারণেই কোন কোন রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, আলোচ্য আয়াতগুলো মক্কা বিজয়ের সময় নাযিল হয়েছিল। এটাও সম্ভব যে, আয়াতগুলো বার বার নযিল হয়েছিল। প্রথমে ওহুদ যুদ্ধের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে এবং পরে মক্কা বিজয়ের সময় পুনর্বার নাযিল হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৬) যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তাহলে ঠিক ততখানি করবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর, তাহলে অবশ্যই ধৈর্যশীলদের জন্য সেটাই উত্তম। [1]
[1] এর মধ্যে যদিও সীমা অতিক্রম না করে সমান সমান প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। সীমা অতিক্রম করলে সেও যালেম বলে গণ্য হবে। তবে ক্ষমা করে দেওয়া ও ধৈর্য ধারণ করা অতি উত্তম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২৭. আর আপনি ধৈর্য ধারণ করুন(১) আপনার ধৈর্য তো আল্লাহরই সাহায্যে। আর আপনি তাদের জন্য দুঃখ করবেন না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে আপনি মনঃক্ষুন্নও হবেন না।
(১) এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিশেষভাবে সম্বোধন করে সবর করতে উৎসাহ দান করা হয়েছে। কেননা, তার মহত্ত্ব ও উচ্চপদ হেতু অন্যের তুলনায় এটাই ছিল তার পক্ষে অধিকতর উপযোগী। তাই বলা হয়েছে (وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ) -অর্থাৎ আপনি তো প্রতিশোধের ইচ্ছাই করবেন না, সবরই করুন। সাথে সাথে একথাও বলা হয়েছে যে, আপনার সবর আল্লাহর সাহায্যে হবে। অর্থাৎ সবর করা আপনার জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশী ধৈর্যশীল ছিলেন। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বন্টন করছিলেন। এ সময় এক লোক এসে বললঃ আল্লাহর শপথ! এ ভাগ-বাটোয়ারায় আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য নয়। কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কঠিন ভাবে প্রতিক্রিয়া করল। তার চেহারার রং বদলে গেল। তিনি অত্যন্ত রাগাম্বিত হলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “মূসাকে এর চেয়েও বেশী কষ্ট দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি সবর করেছেন। [বুখারীঃ ৬১০০]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৭) তুমি ধৈর্যধারণ কর; আর তোমার ধৈর্য তো হবে আল্লাহরই সাহায্যে। তাদের (অবিশ্বাসের) জন্য তুমি দুঃখ করো না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না। [1]
[1] কারণ মহান আল্লাহ তাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মু’মিন, পরহেযগার ও সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন। আর আল্লাহ যাদের সঙ্গে থাকেন পৃথিবীর লোকেদের চক্রান্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। যেমন পরের আয়াতে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২৮. নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা মুহসিন।(১)
(১) এর সারমর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা'আলার সাহায্য তাদের সাথে থাকে, যারা দুটি গুণে গুণান্বিত। তাকওয়া ও ইহসান। তাকওয়ার অর্থ হারাম কাজ পরিত্যাগ করা এবং ইহসানের অর্থ সৎকাজ করা। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ যারা শরীআতের অনুসারী হয়ে নিয়মিত হারাম কাজ পরিত্যাগ করে, আর সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ্ তাআলা তাদের সঙ্গে আছেন। বলাবাহুল্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা'আলার সান্নিধ্য (সাহায্য) অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, তার অনিষ্ট সাধন করার সাধ্য কার? আল্লাহ তা'আলার এ সঙ্গ শুধুমাত্র মুমিনদের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট। এ সঙ্গের অর্থ সাহায্য-সহযোগিতা ও তাওফীক দান করা। [বাগভী] নতুবা তিনি আরশের উপরই আছেন। তিনি কারও গায়ের সাথে লেগে নেই। ঈমানদারগণ আল্লাহর সান্নিধ্য ও সঙ্গ দ্বারা ধন্য হওয়ার কথা আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এসেছে। [দেখুনঃ সূরা আল-আনফালঃ ১২, সূরা ত্বা-হাঃ ৪৬, সূরা আত-তাওবাহঃ ৪০, সূরা আস-শু'আরাঃ ৬২] এ ছাড়া আরেক ধরনের সঙ্গ আছে যা আল্লাহর সাথে সমস্ত সৃষ্টির সম্পর্ক। সেটার অর্থঃ তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও শক্তিতে তিনি সবার সাথে আছেন। সবাই তার মুঠোয়। কেউ তার আয়ত্ব ও জ্ঞানের আওতার বাইরে নয়। এ ধরনের সঙ্গ কোন প্রকার সম্মানের বিষয় নয়। এ বিষয়টিও আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছেন। [দেখুনঃ সূরা আল-হাদীদঃ ৪, সূরা আল-মুজাদালাহঃ ৭, সূরা ইউনুসঃ ৬১] [উসাইমীন, আল-কাওয়ায়িদুল মুসলা]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৮) নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে থাকেন, যারা সংযম অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান