بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২৮/ আল-কাসাস | Al-Qasas | سورة القصص আয়াতঃ ৮৮ মাক্কী
২৮ : ৫১ وَ لَقَدۡ وَصَّلۡنَا لَهُمُ الۡقَوۡلَ لَعَلَّهُمۡ یَتَذَكَّرُوۡنَ ﴿ؕ۵۱﴾
و لقد وصلنا لهم القول لعلهم یتذكرون ﴿۵۱﴾
• আর আমি তো তাদের কাছে একের পর এক বাণী পৌঁছে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

-আল-বায়ান

• আমি তাদের কাছে ক্রমাগত বাণী পৌঁছে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

-তাইসিরুল

• আমিতো তাদের নিকট উপর্যুপরি বাণী পৌঁছে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

-মুজিবুর রহমান

• And We have [repeatedly] conveyed to them the Qur'an that they might be reminded.

-Sahih International

৫১. আর অবশ্যই আমরা তাদের কাছে পরপর বাণী পৌঁছে দিয়েছি(১); যাতে তারা উপদেশ গ্রহন করে।

(১) وَصَّلْنَا শব্দটি توصيل থেকে উদ্ভূত। এর আসল আভিধানিক অর্থ রশির সূতায় আরো সূতা মিলিয়ে রশিকে মজবুত করা। [ফাতহুল কাদীর] উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা কুরআনে একের পর এক হেদায়াত অব্যাহত রেখেছেন এবং অনেক উপদেশমূলক বিষয়বস্তুর বার বার পুনরাবৃত্তিও করা হয়েছে, যাতে শ্রোতারা প্রভাবান্বিত হয়। [কুরতুবী]

এ থেকে জানা গেল যে, সত্য কথা উপর্যুপরি বলা ও পৌঁছাতে থাকা নবীগণের তাবলীগ তথা দ্বীন-প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। মানুষের অস্বীকার ও মিথ্যারোপ তাদের কাজে ও কর্মসক্তিতে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি করতে পারত না। সত্যকথা একবার না মানা হলে দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ও চতুৰ্থবার তারা পেশ করতে থাকতেন। কারও মধ্যে প্রকৃত অন্তর সৃষ্টি করে দেয়ার সাধ্য তো কোন সহৃদয় উপদেশদাতার নেই। কিন্তু নিজের অক্লান্ত প্ৰচেষ্টা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তারা ছিলেন আপোষহীন। আজকালও যারা দাওয়াতের কাজ করেন, তাদের এ থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করা উচিত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫১) আর আমি অবশ্যই ওদের নিকট বার বার আমার বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি;[1] যাতে ওরা উপদেশ গ্রহণ করে। [2]

 [1] অর্থাৎ, রসূলের পর রসূল, কিতাবের পর কিতাব আমি প্রেরণ করেছি আর এভাবে ধারাবাহিকরূপে আমি আমার বাণী মানুষের নিকট পৌঁছাতে থেকেছি।

[2] অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য ছিল, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের অশুভ পরিণতিকে ভয় করে এবং আমার উপদেশ গ্রহণ করে ঈমান আনবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫২ اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰهُمُ الۡكِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِهٖ هُمۡ بِهٖ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۵۲﴾
الذین اتینهم الكتب من قبلهٖ هم بهٖ یؤمنون ﴿۵۲﴾
• এর পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম তারা এর প্রতি ঈমান আনে।

-আল-বায়ান

• এর পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম তারা (অর্থাৎ তাদের কতক লোক) তাতে বিশ্বাস করে।

-তাইসিরুল

• এর পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম তারা এতে বিশ্বাস করে।

-মুজিবুর রহমান

• Those to whom We gave the Scripture before it - they are believers in it.

-Sahih International

৫২. এর আগে আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা এতে ঈমান আনে।(১)

(১) এ আয়াতে সেসব আহলে কিতাবের কথা বলা হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত ও কুরআন নাযিলের পূর্বেও তাওরাত ও ইঞ্জীল প্রদত্ত সুসংবাদের ভিত্তিতে কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতে বিশ্বাসী ছিল। এরপর যখন প্রেরিত হন, তখন সাবেক বিশ্বাসের ভিত্তিতে কালবিলম্ব না করে মুসলিম হয়ে যায়। [ইবন কাসীর]। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি, তাদের মধ্যে যারা যথাযথভাবে তা তিলাওয়াত করে, তারা তাতে ঈমান আনে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১২১]

কোন কোন ঐতিহাসিক ও জীবনীকার এ ঘটনাকে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বরাত দিয়ে নিন্মোক্তভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “আবিসিনিয়ায় হিজরাতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্ৰাপ্তি এবং তার দাওয়াতের খবর যখন সেই দেশে ছড়িয়ে পড়লো তখন সেখান থেকে প্রায় ২০ জনের একটি খৃষ্টান প্রতিনিধি দল প্রকৃত অবস্থা অনুসন্ধানের জন্য মক্কায় এলো। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে হারামে সাক্ষাৎ করলো। কুরাইশদের বহু লোকও এ ব্যাপার দেখে আশপাশে দাঁড়িয়ে গেলো। প্রতিনিধি দলের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু প্রশ্ন করলেন। তিনি সেগুলোর জবাব দিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং কুরআন মজীদের আয়াত তাদের সামনে পাঠ করলেন।

কুরআন শুনে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলো। তারা একে আল্লাহর বাণী বলে অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনলেন। মজলিস শেষ হবার পর আবু জাহল ও তার কয়েকজন সাথী প্রতিনিধিদলের লোকদেরকে পথে ধরলো এবং তাদেরকে যাচ্ছে তাই বলে তিরস্কার করলো। তাদেরকে বললো, তোমাদের সফরটাতো বৃথাই হলো। তোমাদের স্বধৰ্মীয়রা তোমাদেরকে এজন্য পাঠিয়েছিল যে, এ ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে তোমরা যথাযথ অনুসন্ধান চালিয়ে প্রকৃত ও যথার্থ ঘটনা তাদেরকে জানাবে। কিন্তু তোমরা সবেমাত্র তার কাছে বসেছিলে আর এরি মধ্যেই নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে তার প্রতি ঈমান আনলে? তোমাদের চেয়ে বেশী নির্বোধ কখনো আমরা দেখিনি। একথায় তারা জবাব দিল, ভাইয়েরা, তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সাথে জাহেলী বিতর্ক করতে চাই না। আমাদের পথে আমাদের চলতে দাও এবং তোমরা তোমাদের পথে চলতে থাকো। আমরা জেনেবুঝে কল্যাণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে পারি না।” [সীরাতে ইবনে হিশাম, ২/৩২, এবং আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহঃ ৩/৮২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫২) এর পূর্বে আমি যাদেরকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম, তারাও এতে বিশ্বাস করে। [1]

[1] এখানে ঐ সকল ইয়াহুদীদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। যেমন, আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) ইত্যাদি। অথবা ঐ সকল খ্রিষ্টান যারা হাবশা হতে নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়েছিল এবং তাঁর পবিত্র মুখে কুরআনের বাণী শুনে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৩ وَ اِذَا یُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِهٖۤ اِنَّهُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا مِنۡ قَبۡلِهٖ مُسۡلِمِیۡنَ ﴿۵۳﴾
و اذا یتلی علیهم قالوا امنا بهٖ انه الحق من ربنا انا كنا من قبلهٖ مسلمین ﴿۵۳﴾
• আর যখন তাদের নিকট তা তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, ‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় তা সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আমরা এর পূর্বেও আত্মসমর্পণকারী ছিলাম’।

-আল-বায়ান

• তাদের নিকট যখন তা আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বলে- আমরা এতে বিশ্বাস করি, এ সত্য আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে (আগত), এর পূর্বেই আমরা আত্মসমর্পণকারী ছিলাম।

-তাইসিরুল

• যখন তাদের নিকট এটি আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বলেঃ আমরা এতে ঈমান এনেছি, এটি আমাদের রাব্ব হতে আগত সত্য। আমরাতো পূর্বেও আত্মসমর্পনকারী ছিলাম।

-মুজিবুর রহমান

• And when it is recited to them, they say, "We have believed in it; indeed, it is the truth from our Lord. Indeed we were, [even] before it, Muslims [submitting to Allah]."

-Sahih International

৫৩. আর যখন তাদের কাছে এটা তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, আমরা এতে ঈমান আনি, নিশ্চয় এটা আমাদের রব হতে আসা সত্য। আমরা তো আগেও আতাসমৰ্পণকারী(১) ছিলাম;

(১) অর্থাৎ আহলে কিতাবের এই আলেমগণ বললঃ আমরা তো কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বেই মুসলিম ছিলাম। এর এক অর্থ, আমরা পূর্ব থেকেই তাওহীদপন্থী ছিলাম। অথবা আমরা এটার উপর ঈমানদার ছিলাম যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে পাঠানো হবে, আর তার উপর কুরআন নাযিল হবে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) যখন তাদের নিকট এ আবৃত্তি করা হয়, তখন তারা বলে, ‘আমরা এতে বিশ্বাস করি, এ আমাদের প্রতিপালক হতে আগত সত্য। অবশ্যই আমরা পূর্ব হতেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলাম।’[1]

[1] এখানে ঐ বাস্তবতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। আর তা এই যে, যুগে যুগে আল্লাহর প্রেরিত নবীগণ যে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে এসেছেন তা হল ইসলাম। ঐ সব নবীদের প্রতি ঈমান আনয়নকারীদেরকে ‘মুসলিম’ বলা হত। ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান প্রভৃতি পরিভাষা মানব-রচিত; যা পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে। এই হিসাবেই নবী (সাঃ)-এর প্রতি যেসব ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা ঈমান এনেছিল তারা বলেছিল, আমরা তো আগে হতেই মুসলিম ছিলাম। অর্থাৎ, পূর্ববর্তী নবীদের মান্যকারী ও তাঁদের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী (এবং আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী) ছিলাম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৪ اُولٰٓئِكَ یُؤۡتَوۡنَ اَجۡرَهُمۡ مَّرَّتَیۡنِ بِمَا صَبَرُوۡا وَ یَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۵۴﴾
اولٓئك یؤتون اجرهم مرتین بما صبروا و یدرءون بالحسنۃ السیئۃ و مما رزقنهم ینفقون ﴿۵۴﴾
• তাদেরকে দু’বার প্রতিদান দেয়া হবে। এ কারণে যে, তারা ধৈর্যধারণ করে এবং ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।

-আল-বায়ান

• তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক দু’বার দেয়া হবে যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছে এবং তারা ভাল দিয়ে মন্দের প্রতিহত করে আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাত্থেকে তারা ব্যয় করে।

-তাইসিরুল

• তাদেরকে দু’বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে; কারণ তারা ধৈর্যশীল এবং তারা ভাল দ্বারা মন্দের মুকাবিলা করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে তারা ব্যয় করে।

-মুজিবুর রহমান

• Those will be given their reward twice for what they patiently endured and [because] they avert evil through good, and from what We have provided them they spend.

-Sahih International

৫৪. তাদেরকে দু’বার প্রতিদান দেয়া হবে(১); যেহেতু তারা ধৈর্যশীল এবং তারা ভাল দিয়ে মন্দের মুকাবিলা করে।(২) আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

(১) অর্থাৎ আহলে কিতাবের মুমিনদেরকে দুইবার পুরস্কৃত করা হবে। পবিত্র কুরআনে এমনি ধরনের প্রতিশ্রুতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্ৰা স্ত্রীগণের সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, (وَمَنْ يَقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُؤْتِهَا أَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ) “তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হবে ও সৎকাজ করবে তাকে আমরা পুরস্কার দেব দু’বার” [সূরা আল-আহযাবঃ ৩১] অনুরূপভাবে এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তিন ব্যক্তির জন্য দু’বার পুরস্কার রয়েছে ১। যে কিতাবধারী পূর্বে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারপর এই নবীর প্রতি ঈমান এনেছে। ২। যে অপরের মালিকানাধীন দাস মনিব এবং তার মূল প্ৰভু রাব্বুল আলমীনের আনুগত্য করে ৩। যার মালিকানায় কোন যুদ্ধ-লব্ধ দাসী ছিল সে তাকে গোলামী থেকে মুক্ত করে বিবাহিতা স্ত্রী করে নিল৷ [বুখারীঃ ৯৭]

এখানে চিন্তাসাপেক্ষ বিষয় এই যে, এই কয়েক প্রকার লোককে দুবার পুরস্কৃত করার কারণ কি? এর জওয়াবে বলা যায় যে, তাদের প্রত্যেক আমল যেহেতু দুটি, এই যে, সে পূর্বে এক নবীর প্রতি ঈমান এনেছিল, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান এনেছে। পবিত্র স্ত্রীগণের দুই আমল এই যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য ও মহব্বত রাসূল হিসেবেও করেন, আবার স্বামী হিসেবেও করেন। গোলামের দুই আমল তার দ্বিমুখী আনুগত্য, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং তার মালিকের আনুগত্য। বাদীকে মুক্ত করে যে বিবাহ করে, তার এক আমল মুক্ত করা, আর দ্বিতীয় আমল বিবাহ করা। [কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ তারা মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয়। বরং ভালো দিয়ে দেয়। মিথ্যার মোকাবিলায় মিথ্যা নয় বরং সত্য নিয়ে আসে। যুলুমকে যুলুম দিয়ে নয় বরং ইনসাফ দিয়ে প্রতিরোধ করে। দুষ্টামির মুখোমুখি দুষ্টামির সাহায্যে নয় বরং ভদ্রতার সাহায্যে হয়। এই মন্দ ও ভাল বলে কি বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে অনেক উক্তি বর্ণিত আছেঃ কেউ বলেন, ভাল বলে ইবাদত এবং মন্দ বলে গোনাহ বোঝানো হয়েছে। কেননা, পুণ্য কাজ অসৎ কাজকে মিটিয়ে দেয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গোনাহের পর নেক কাজ কর। নেককাজ গোনাহকে মিটিয়ে দেবে”। [তিরমিযীঃ ১৯৮৭] কেউ কেউ বলেন, ভাল বলে জ্ঞান ও সহনশীলতা এবং মন্দ বলে অজ্ঞতা ও অসহনশীলতা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তারা অপরের অজ্ঞতার জওয়াব জ্ঞান ও সহনশীলতা দ্বারা দেয়। [বাগভী] প্রকৃতপক্ষে এসব উক্তির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কেননা, এগুলো সবই ভাল ও মন্দের অন্তর্ভুক্ত।

এ আয়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ হেদায়াত রয়েছেঃ এক. কারও দ্বারা কোন গোনাহ হয়ে গেলে তার প্রতিকার এই যে, এরপর সৎকাজে সচেষ্ট হতে হবে। সৎকাজ গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। দুই. কেউ কারও প্রতি উৎপীড়ন ও মন্দ আচরণ করলে শরীয়তের আইনে যদিও সমান সমান হওয়ার শর্তে প্ৰতিশোধ নেয়া জায়েয আছে, কিন্তু প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে মন্দের প্রত্যুত্তরে ভাল এবং উৎপীড়নের প্রত্যুত্তরে অনুগ্রহ করাই উত্তম। এটা উৎকৃষ্ট চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তর। দুনিয়া ও আখেরাতে এর উপকারিতা অনেক। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “ভাল ও মন্দ একসমান হতে পারে না। মন্দ ও যুলুমকে উৎকৃষ্ট পন্থায় প্রতিহত কর। (যুলুমের পরিবর্তে অনুগ্রহ কর)। এরূপ করলে যে ব্যক্তি ও তোমার মধ্যে শক্ৰতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। [সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৪) ওদেরকে দু’বার পুরস্কৃত করা হবে, কারণ ওরা ধৈর্যশীল।[1] ওরা ভালোর দ্বারা মন্দকে দূর করে[2] এবং আমি ওদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে।

[1] ‘ধৈর্যশীলতা’ বলতে সর্বাবস্থায় আম্বিয়া ও আল্লাহর কিতাবের উপর ঈমান আনা এবং তার উপর দৃঢ়তার সাথে অবিচলিত থাকা। যারা পূর্ববর্তী নবী ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান এনেছেন এবং তারপর পরবর্তী নবী ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান আনেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ডবল পুরস্কার। হাদীসেও তাঁদের এই মর্যাদা বর্ণনা করে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তিন শ্রেণীর লোককে দ্বিগুণ সওয়াব দান করা হবে। ওদের মধ্যে এক শ্রেণীর লোক হল, সেই ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান; যে নিজ নবীর উপর ঈমান এনেছিল, তারপর আমার উপর ঈমান আনল।

(বুখারীঃ শিক্ষা অধ্যায়, মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়)

[2] অর্থাৎ, অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণে অন্যায় করে না (ইট খেয়ে পাটকেল ছুঁড়ে না); বরং ক্ষমা করে দেয় ও উপেক্ষা করে চলে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৫ وَ اِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡهُ وَ قَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَ لَكُمۡ اَعۡمَالُكُمۡ ۫ سَلٰمٌ عَلَیۡكُمۡ ۫ لَا نَبۡتَغِی الۡجٰهِلِیۡنَ ﴿۵۵﴾
و اذا سمعوا اللغو اعرضوا عنه و قالوا لنا اعمالنا و لكم اعمالكم سلم علیكم لا نبتغی الجهلین ﴿۵۵﴾
• আর তারা যখন অনর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তা থেকে বিমুখ হয় এবং বলে, ‘আমাদের আমল আমাদের জন্য, আর তোমাদের আমল তোমাদের জন্য। তোমাদের প্রতি ‘সালাম’। আমরা অজ্ঞদের সাহচর্য চাই না’।

-আল-বায়ান

• তারা যখন নিরর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তাত্থেকে ফিরে থাকে আর বলে- আমাদের কাজের ফল আমরা পাব, তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে, তোমাদের প্রতি সালাম, অজ্ঞদের সাথে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই।

-তাইসিরুল

• তারা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন তা উপেক্ষা করে চলে এবং বলেঃ আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্য এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্য; তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাইনা।

-মুজিবুর রহমান

• And when they hear ill speech, they turn away from it and say, "For us are our deeds, and for you are your deeds. Peace will be upon you; we seek not the ignorant."

-Sahih International

৫৫. আর তারা যখন অসার বাক্য শুনে তখন তা উপেক্ষা করে চলে এবং বলে, আমাদের আমল আমাদের জন্য এবং তোমাদের আমল তোমাদের জন্য; তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়াতে চাই না।(১)

(১) অর্থাৎ তাদের একটি উৎকৃষ্ট চরিত্র এই যে, তারা কোন অজ্ঞ শত্রুর কাছ থেকে নিজেদের সম্পর্কে যখন অর্থহীন ও বাজে কথাবার্তা শোনে, তখন তার জওয়াব দেয়ার পরিবর্তে একথা বলে দেয়, আমার সালাম গ্ৰহণ কর। আমি অজ্ঞদের সাথে জড়াতে চাই না। ইমাম জাসসাস বলেন, সালাম দুই প্রকারঃ এক. মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত অভিবাদনমূলক সালাম। দুই. সন্ধি ও বর্জনামূলক সালাম। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে বলে দেয়া যে, আমি তোমার আসার আচরণের প্রতিশোধ নেব না। এখানে এ অর্থই বোঝানো হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৫) ওরা যখন অসার বাক্য[1] শ্রবণ করে, তখন ওরা তা পরিহার করে চলে এবং বলে, আমাদের কাজের জন্য আমরা দায়ী এবং তোমাদের কাজের জন্য তোমরা দায়ী; তোমাদের প্রতি সালাম।[2] আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না।

[1] এখানে ‘অসার বাক্য’ বলতে উদ্দেশ্য সেই গাল-মন্দ ও দ্বীনের সাথে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ যা মুশরিকরা করত।

[2] এখানে ‘সালাম’ বলতে অভিবাদন বা সাক্ষাতের সালাম নয়; বরং বিদায় বা সঙ্গ ত্যাগ করার সালাম বুঝানো হয়েছে। যার অর্থ আমরা তোমাদের মত মূর্খদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করার লোক নই। যেমন বলা হয়, ‘দুর্জনেরে পরিহারি, দূরে থেকে সালাম করি।’ অর্থাৎ তার সঙ্গে কথাবার্তা না বলা, তাকে পরিহার, বর্জন ও উপেক্ষা করা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৬ اِنَّكَ لَا تَهۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ یَهۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ ﴿۵۶﴾
انك لا تهدی من احببت و لكن الله یهدی من یشآء و هو اعلم بالمهتدین ﴿۵۶﴾
• নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন।

-আল-বায়ান

• তুমি যাকে ভালবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না, বরং আল্লাহ্ই যাকে চান সৎ পথে পরিচালিত করেন, সৎপথপ্রাপ্তদের তিনি ভাল করেই জানেন।

-তাইসিরুল

• তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবেনা। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনেন এবং তিনিই ভাল জানেন কারা সৎ পথ অনুসরণকারী।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, [O Muhammad], you do not guide whom you like, but Allah guides whom He wills. And He is most knowing of the [rightly] guided.

-Sahih International

৫৬. আপনি যাকে ভালবাসেন ইচ্ছে করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না। বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছে সৎপথে আনয়ন করেন এবং সৎপথ অনুসারীদের সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।(১)

(১) ‘হেদায়াত’ শব্দটি কয়েক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক, শুধু পথ দেখানো। এর জন্য জরুরী নয় যে, যাকে পথ দেখানো হয় সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতেই হবে। দুই, পথ দেখিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌছে দেয়া। প্রথম অর্থের দিক থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং সমস্ত নবীগণ যে হাদী বা পথপ্রদর্শক ছিলেন এবং হেদায়াত যে তাদের ক্ষমতাধীন ছিল, তা বলাই বাহুল্য। কেননা, এই হেদায়াতই ছিল তাদের পরম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটা তাদের ক্ষমতাধীন না হলে তারা নবুওয়াত ও রিসালাতের কর্তব্য পালন করবে কীরূপে? আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিদায়াতের উপর ক্ষমতাশীল নন। এতে দ্বিতীয় অর্থের হেদায়াত বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ গন্তব্যস্থলে পৌছে দেয়া।

উদ্দেশ্য এই যে, প্রচার ও শিক্ষার মাধ্যমে আপনি কারও অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে দিবেন এবং মুমিন বানিয়ে দিবেন, এটা আপনার কাজ নয়। এটা সরাসরি আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতাধীন। এ সংক্রান্ত আলোচনা সূরা আল-ফাতিহার তাফসীরে উল্লেখিত হয়েছে। হাদীসে এসেছে, এই আয়াত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবু তালিব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আন্তরিক বাসনা ছিল যে, সে কোনরূপেই ইসলাম গ্ৰহণ করুক। এর প্রেক্ষাপটে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হয়েছে যে, কাউকে মুমিন-মুসলিম করে দেয়া আপনার ক্ষমতাধীন নয়। [দেখুন: বুখারী ৩৬৭১, মুসলিমঃ ২৪]।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) কাকেও প্রিয় মনে করলে তুমি তাকে সৎপথে আনতে পারবে না, তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনিই ভাল জানেন কারা সৎপথের অনুসারী। [1]

[1] এই আয়াত ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন নবী (সাঃ)-এর হিতাকাঙ্ক্ষী চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে। তখন তিনি চেষ্টা করলেন যাতে চাচা একবার নিজ মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাণী উচ্চারণ করুক, যাতে পরকালে আল্লাহর সামনে তার ক্ষমার জন্য সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু সেখানে কুরাইশ নেতাদের উপস্থিতির কারণে আবূ তালেব ঈমান আনয়নের সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত থাকে এবং কুফরের উপরই তার মৃত্যু হয়। নবী (সাঃ) এর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। এই সময় মহান আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করে স্পষ্ট করে দিলেন যে, তোমার কাজ কেবলমাত্র পৌঁছিয়ে দেওয়া ও আহবান করা। আর হিদায়াত দান করা আমার কাজ। হিদায়াত সেই ব্যক্তিই লাভ করে থাকে, যাকে আমি হিদায়াত দান করি। তুমি যাকে হিদায়াতের উপর দেখতে পছন্দ কর, সে হিদায়াত পায় না। (বুখারীঃ সূরা কাস্বাসের তাফসীর পরিচ্ছেদ, মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৭ وَ قَالُوۡۤا اِنۡ نَّتَّبِعِ الۡهُدٰی مَعَكَ نُتَخَطَّفۡ مِنۡ اَرۡضِنَا ؕ اَوَ لَمۡ نُمَكِّنۡ لَّهُمۡ حَرَمًا اٰمِنًا یُّجۡبٰۤی اِلَیۡهِ ثَمَرٰتُ كُلِّ شَیۡءٍ رِّزۡقًا مِّنۡ لَّدُنَّا وَ لٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۷﴾
و قالوا ان نتبع الهدی معك نتخطف من ارضنا او لم نمكن لهم حرما امنا یجبی الیه ثمرت كل شیء رزقا من لدنا و لكن اكثرهم لا یعلمون ﴿۵۷﴾
• আর তারা বলে, ‘আমরা যদি তোমার সাথে হিদায়াতের অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করা হবে’। আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘হারাম’ এর সুব্যবস্থা করিনি? সেখানে সব ধরনের ফলমূল আমদানী করা হয়, আমার পক্ষ থেকে রিয্কস্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

-আল-বায়ান

• তারা বলে- ‘আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথের অনুসরণ করি তাহলে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হব।’ আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘হারাম’ প্রতিষ্ঠিত করিনি যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূলের নজরানা আসে আমার পক্ষ থেকে রিযক স্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

-তাইসিরুল

• তারা বলেঃ আমরা যদি তোমার সাথে সৎ পথ অনুসরণ করি তাহলে আমাদেরকে দেশ হতে উৎখাত করা হবে। (আল্লাহ বলেন) আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘‘হারাম’’ প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সর্ব প্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমার দেয়া রিয্ক স্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা জানেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And they say, "If we were to follow the guidance with you, we would be swept from our land." Have we not established for them a safe sanctuary to which are brought the fruits of all things as provision from Us? But most of them do not know.

-Sahih International

৫৭. আর তারা বলে, আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করা হবে।(১) আমরা কি তাদের জন্য এক নিরাপদ হারাম প্রতিষ্ঠা করিনি, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমাদের দেয়া রিযিকস্বরূপ?(২) কিন্তু তাদের বেশীর ভাগই এটা জানে না।

(১) মক্কার কাফেররা তাদের ঈমান কবুল না করার এক কারণ এই বর্ণনা করল যে, আপনার শিক্ষাকে সত্য মনে করি, কিন্তু আমাদের আশংকা এই যে, আপনার পথনির্দেশ মেনে আমরা আপনার সাথে একাতা হয়ে গেলে সমগ্র আরব আমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করে দেয়া হবে। আরবের সমস্ত উপজাতি মিলে আমাদের মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য করবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, তাদের এই অজুহাত বাতিল। কারণ, আল্লাহ তা'আলা বিশেষভাবে মক্কাবাসীদের হেফাযতের জন্যে একটি স্বাভাবিক ব্যবস্থা পূর্ব থেকেই করে রেখেছেন। তা এই যে, তিনি মক্কার ভূখণ্ডকে নিরাপদ হারাম করে দিয়েছেন। তাছাড়া জগতের অন্যান্য কাফির সম্প্রদায়ের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত কর। কুফর ও শিরকের কারণে তারা কীভাবে নিপাত হয়েছে। তাদের বসত-বাড়ি, সুদৃঢ় দুর্গ ও প্রতিরক্ষামূলক সাজ-সরঞ্জাম মাটিতে মিশে গেছে। অতএব কুফার ও শির্কই হচ্ছে প্রকৃত আশঙ্কার বিষয়। এটা ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে। তাওহীদ অনুসরণের মাধ্যমে ধ্বংসের ভয় নেই। [দেখুন: ইবন কাসীর]

(২) মক্কা মোকার্‌রামা, যাকে আল্লাহ্ তা'আলা নিজ গৃহের জন্যে সারা বিশ্বের মধ্য থেকে মনোনীত করেছেন, এটা এমন একটি স্থান যে, এখানে পার্থিব জীবনোপকরণের কোন বস্তু সহজে পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু মক্কার এসব বস্তুর প্রাচুর্য দেখে বিবেকবুদ্ধি বিমুঢ় হয়ে পড়ে। প্রতি বছর হজ্জের মওসুমে মক্কায় লাখ লাখ লোক একত্রিত হয়। কিন্তু কখনও শোনা যায়নি যে, সেখানে কোন প্রকার অভাব হয়েছে। এ হচ্ছে মক্কার কাফেরদের অজুহাতের জওয়াব যে, যিনি তোমাদের কুফর ও শির্ক সত্বেও তোমাদের প্রতি এতসব অনুগ্রহ করেছেন, তোমাদের দেশকে যাবতীয় বিপদাশঙ্কা থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন এবং এদেশে কোন কিছুই উৎপন্ন না হওয়া সত্বেও সারা বিশ্বের উৎপাদিত দ্ৰব্য-সামগ্ৰী এখানে এনে সমাবেশ করেছেন, সেই বিশ্বস্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে এসব নেয়ামত হাতছাড়া হয়ে যাবে-এরূপ আশংকা করা চূড়ান্ত নির্বুদ্ধিতা বৈ নয়। [দেখুন: ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৭) ওরা বলে, ‘আমরা যদি তোমার পথ ধরি, তবে আমাদের দেশ হতে আমাদেরকে উৎখাত করা হবে।’[1] আমি কি ওদেরকে (মক্কায়) এক নিরাপদ হারামে (পবিত্র স্থানে) প্রতিষ্ঠিত করিনি;[2] যেখানে আহারের জন্য আমার নিকট থেকে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়?[3] কিন্তু ওদের অধিকাংশই তা জানে না।

[1] অর্থাৎ, আমরা যেখানে বসবাস করছি সেখানে আমাদেরকে বসবাস করতে দেওয়া হবে না এবং আমাদেরকে নানা দুঃখ-কষ্ট অথবা বিরোধীদের সঙ্গে যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে। এ ছিল কিছু কাফেরদের ঈমান না আনার খোঁড়া ওজর। আল্লাহ তাদের উত্তরে বললেন, ‘‘আমি কি---।’’

[2] অর্থাৎ, তাদের এই ওজর যুক্তিগ্রাহ্য নয়। কারণ, যে শহরে তারা বাস করে, সে শহরকে আল্লাহ নিরাপত্তা ও শান্তির শহর বানিয়েছেন। যদি এই শহর তাদের কুফরী ও শিরক সত্ত্বেও শান্তির হয়ে থাকে, তাহলে ঈমান আনার পর কি এই শহর শান্তির থাকবে না?

[3] এটি মক্কার এমন এক বৈশিষ্ট্য; যা লক্ষ লক্ষ হজ্জ ও উমরাহ আদায়কারীগণ প্রত্যক্ষ করে থাকেন। মক্কায় উৎপাদন না হওয়া সত্ত্বেও সমস্ত রকমের ফলমূল ও পৃথিবীর নানান আসবাব-পত্র সেখানে পাওয়া যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৮ وَ كَمۡ اَهۡلَكۡنَا مِنۡ قَرۡیَۃٍۭ بَطِرَتۡ مَعِیۡشَتَهَا ۚ فَتِلۡكَ مَسٰكِنُهُمۡ لَمۡ تُسۡكَنۡ مِّنۡۢ بَعۡدِهِمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا ؕ وَ كُنَّا نَحۡنُ الۡوٰرِثِیۡنَ ﴿۵۸﴾
و كم اهلكنا من قریۃ بطرت معیشتها فتلك مسكنهم لم تسكن من بعدهم الا قلیلا و كنا نحن الورثین ﴿۵۸﴾
• আর আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা তাদের জীবন উপকরণ নিয়ে দম্ভ করত! এগুলো তো তাদের বাসস্থান। তাদের পরে (এখানে) সামান্যই বসবাস করা হয়েছে। আর আমিই চূড়ান্ত মালিকানার ওয়ারিস।

-আল-বায়ান

• আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি যারা তাদের (ভোগবিলাসপূর্ণ) জীবনে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছিল। এই তো তাদের বাসস্থান, তাদের পর এগুলোতে খুব অল্প লোকই বসবাস করেছে, অবশেষে আমিই মালিক রয়েছি।

-তাইসিরুল

• কত জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ সম্পদের দম্ভ করত। এগুলিইতো তাদের ঘরবাড়ী, তাদের পরে এগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করেছে; আর আমিতো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।

-মুজিবুর রহমান

• And how many a city have We destroyed that was insolent in its [way of] living, and those are their dwellings which have not been inhabited after them except briefly. And it is We who were the inheritors.

-Sahih International

৫৮. আর আমরা বহু জনপদকে ধ্বংস করেছি যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের অহংকার করত! এগুলোই তো তাদের ঘরবাড়ী; তাদের পর এগুলোতে লোকজন সামান্যই বসবাস করেছে।(১) আর আমরাই তো চূড়ান্ত ওয়ারিশ (প্রকৃত মালিক)!

(১) এখানে অর্থ হবে এই যে, অতীত সম্প্রদায়সমূহের যেসব জনপদকে আল্লাহর আযাব দ্বারা বিধ্বস্ত করা হয়েছিল, এখন পর্যন্ত সেগুলোতে মানুষ সামান্যই মাত্র বাস করছে। এই ‘সামান্য’র অর্থ যদি যৎসামান্য বাসস্থান কিংবা আবাস নেয়া হয়, তবে উদ্দেশ্য হবে এই যে, সামান্য সংখ্যক বাসগৃহ ব্যতীত এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদসমূহের কোন বাসগৃহ পুনরায় আবাদ হয়নি। কিন্তু আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘সামান্য’র অর্থ সামান্যক্ষণ বা সামান্য সময় অর্থাৎ এসব জনপদে কেউ থাকলেও সামান্যক্ষণ থাকে; যেমন কোন পথিক অল্পক্ষণের জন্যে কোথাও বিশ্রাম নেয়। একে জনপদের আবাদী বলা যায় না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) কত জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি যার অধিবাসীরা নিজেদের ভোগ-সম্পদের জন্য গর্বিত ছিল। এগুলিই তো ওদের ঘরবাড়ী; ওদের পর এগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করেছে।[1] আর আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী! [2]

[1] এখানে মক্কাবাসীদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে যে, তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে যারা তার কৃতজ্ঞতা করেনি, তাদের পরিণতি কি হয়েছে? আজ-কাল তাদের অধিকাংশ আবাদী ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে বা তাদের নাম শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে। এখন কোন যাত্রী তার যাত্রাপথে সেই সব জায়গায় হয়তো একটু জিরিয়ে নেয়। কিন্তু অশুভ পরিণামের কারণে সেখানে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায় না।

[2] অর্থাৎ, তাদের কেউ বেঁচে ছিল না, যে তাদের ঘর-বাড়ি ও ধন সম্পদের উত্তরাধিকারী হত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৫৯ وَ مَا كَانَ رَبُّكَ مُهۡلِكَ الۡقُرٰی حَتّٰی یَبۡعَثَ فِیۡۤ اُمِّهَا رَسُوۡلًا یَّتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِنَا ۚ وَ مَا كُنَّا مُهۡلِكِی الۡقُرٰۤی اِلَّا وَ اَهۡلُهَا ظٰلِمُوۡنَ ﴿۵۹﴾
و ما كان ربك مهلك القری حتی یبعث فی امها رسولا یتلوا علیهم ایتنا و ما كنا مهلكی القری الا و اهلها ظلمون ﴿۵۹﴾
• আর তোমার রব কোন জনপদকে ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না তিনি তার মূল ভূখন্ডে রাসূল প্রেরণ করেন, যে তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে। আর কোন জনপদের অধিবাসীরা যালিম না হলে আমি তাদেরকে ধ্বংস করি না।

-আল-বায়ান

• তোমার প্রতিপালক কোন জনপদ ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না তিনি তার কেন্দ্রে রসূল প্রেরণ না করেন যে তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে; আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করি না যতক্ষণ না তার বাসিন্দারা অত্যাচারী হয়।

-তাইসিরুল

• তোমার রাব্ব জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, ওর কেন্দ্রে তাঁর আয়াত আবৃত্তি করার জন্য রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন ওর বাসিন্দারা যুল্‌ম করে।

-মুজিবুর রহমান

• And never would your Lord have destroyed the cities until He had sent to their mother a messenger reciting to them Our verses. And We would not destroy the cities except while their people were wrongdoers.

-Sahih International

৫৯. আর আপনার রব জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, সেখানকার কেন্দ্রে তাঁর আয়াত তিলাওয়াত করার জন্য রাসূল প্রেরণ না করে এবং আমরা জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন এর বাসিন্দারা যালিম হয়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) তোমার প্রতিপালক তাঁর বাক্য আবৃত্তি করার জন্য প্রধান জনপদে রসূল প্রেরণ না করে জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না[1] এবং তিনি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করেন যখন এর অধিবাসীরা সীমালংঘন করে। [2]

[1] অর্থাৎ, প্রমাণ পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে কাউকেও ধ্বংস করি না। أُمِّهَا (প্রধান) শব্দ দ্বারা জানা গেল যে, সমস্ত ছোট-বড় এলাকায় নবী আসেননি; বরং এলাকার প্রধান শহরে নবী আসতেন এবং ছোট ছোট এলাকার জনপদ তার অধীনস্থ হত।

[2] নবী পাঠানোর পর যদি গ্রামবাসীরা ঈমান না আনত এবং কুফরী ও শিরকের উপর অটল থাকত, তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করা হত। এ কথা সূরা হূদের ১১৭নং আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ : ৬০ وَ مَاۤ اُوۡتِیۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَمَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتُهَا ۚ وَ مَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۶۰﴾
و ما اوتیتم من شیء فمتاع الحیوۃ الدنیا و زینتها و ما عند الله خیر و ابقی افلا تعقلون ﴿۶۰﴾
• আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ ও সৌন্দর্য মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তাই উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বুঝবে না?

-আল-বায়ান

• তোমাদেরকে যে সব বস্তু দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু ও তার শোভা মাত্র। আর আল্লাহর নিকট যা কিছু আছে তা সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?

-তাইসিরুল

• তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে তাতো পার্থিব জীবনের ভোগ শোভা এবং যা আল্লাহর নিকট রয়েছে তা উত্তম এবং স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করবেনা?

-মুজিবুর রহমান

• And whatever thing you [people] have been given - it is [only for] the enjoyment of worldly life and its adornment. And what is with Allah is better and more lasting; so will you not use reason?

-Sahih International

৬০. আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো দুনিয়ার জীবনের ভোগ ও শোভামাত্র। আর যা আল্লাহর কাছে আছে তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করবে না?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬০) তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা তো পার্থিব জীবনের ভোগ ও সৌন্দর্য এবং যা আল্লাহর নিকট আছে, তা উত্তম এবং স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করবে না? [1]

[1] অর্থাৎ, তোমাদের এই বাস্তবিকতা কি অজানা যে, এই পৃথিবী ও তার চাকচিক্য ক্ষণস্থায়ী ও তুচ্ছ। আর মহান আল্লাহ ঈমানদারদের জন্য এমন নিয়ামত ও সুখ-শান্তি রেখেছেন যা চিরস্থায়ী ও উত্তম। হাদীসে এসেছে, ‘‘আল্লাহর শপথ! আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার মূল্য এমন যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে একটি আঙ্গুল ডুবিয়ে বের করে নিয়ে দেখুক সমুদ্রের তুলনায় তার আঙ্গুলে কতটা পানি লেগেছে। (মুসলিমঃ জান্নাতের বিবরণ অধ্যায়, দুনিয়া ধ্বংস ও হাশরের বর্ণনা পরিচ্ছেদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 পরের পাতা »