بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | ٱلْمَائِدَة আয়াতঃ ১২০ মাদানী

৫ : ৮১

وَ لَوۡ كَانُوۡا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ النَّبِیِّ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مَا اتَّخَذُوۡهُمۡ اَوۡلِیَآءَ وَ لٰكِنَّ كَثِیۡرًا مِّنۡهُمۡ فٰسِقُوۡنَ ﴿۸۱﴾

و لو كانوا یؤمنون بالله و النبی و ما انزل الیه ما اتخذوهم اولیآء و لكن كثیرا منهم فسقون ﴿۸۱﴾
আর যদি তারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি এবং যা তার নিকট নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে ফাসিক।

-আল-বায়ান

তারা যদি আল্লাহর, নাবীর ও তার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার উপর ঈমান আনতো তবে তাদেরকে (অর্থাৎ কাফিরদেরকে) বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না, কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসিক।

-তাইসিরুল

আর যদি তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতো এবং নাবীর প্রতি এবং ঐ কিতাবের (তাওরাতের) প্রতি যা তাঁর নাবীর নিকট প্রেরিত হয়েছিল, তাহলে তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) কখনও বন্ধু রূপে গ্রহণ করতনা, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই ফাসিক।

-মুজিবুর রহমান

And if they had believed in Allah and the Prophet and in what was revealed to him, they would not have taken them as allies; but many of them are defiantly disobedient.

-Sahih International

৮১. আর তারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি এবং তার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে ঈমান আনলে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না, কিন্তু তাদের অনেকেই ফাসিক।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮১) তারা আল্লাহতে, (মুহাম্মাদ) নবীতে ও তার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস করলে, ওদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের অনেকে সত্যত্যাগী।[1]

[1] এর ভাবার্থ এই যে, যার মধ্যে প্রকৃতার্থে ঈমান আছে, সে কষ্মিনকালেও কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮২

لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَۃً لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الۡیَهُوۡدَ وَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَكُوۡا ۚ وَ لَتَجِدَنَّ اَقۡرَبَهُمۡ مَّوَدَّۃً لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّا نَصٰرٰی ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّ مِنۡهُمۡ قِسِّیۡسِیۡنَ وَ رُهۡبَانًا وَّ اَنَّهُمۡ لَا یَسۡتَكۡبِرُوۡنَ ﴿۸۲﴾

لتجدن اشد الناس عداوۃ للذین امنوا الیهود و الذین اشركوا و لتجدن اقربهم مودۃ للذین امنوا الذین قالوا انا نصری ذلك بان منهم قسیسین و رهبانا و انهم لا یستكبرون ﴿۸۲﴾
তুমি অবশ্যই মুমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় অধিক কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং যারা শিরক করেছে তাদেরকে। আর মুমিনদের জন্য বন্ধুত্বে তাদের মধ্যে নিকটতর পাবে তাদেরকে, যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’। তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পন্ডিত ও সংসারবিরাগী আছে এবং তারা নিশ্চয় অহঙ্কার করে না।

-আল-বায়ান

যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি মানুষের মধ্যে ইয়াহূদ ও মুশরিকদেরকে তুমি অবশ্যই সবচেয়ে বেশি শত্রুতাপরায়ণ দেখতে পাবে, আর যারা বলে ‘‘আমরা নাসারা’’ তাদেরকে তুমি যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য বন্ধুত্বে নিকটতর দেখতে পাবে, কেননা তাদের মধ্যে ‘ইবাদাতকারী ‘আলিম ও সংসার বিরাগী আছে আর তারা অহংকারও করে না।

-তাইসিরুল

তুমি মানবমন্ডলীর মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলিমদের সাথে অধিক শক্রতা পোষণকারী পাবে, আর তন্মধ্যে মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব রাখার অধিকতর নিকটবর্তী ঐ সব লোককে পাবে যারা নিজেদেরকে নাসারাহ্ (খৃষ্টান) বলে; এটা এ কারণে যে, তাদের মধ্যে বহু আলিম এবং বহু দরবেশ রয়েছে; আর এ কারণে যে, তারা অহংকারী নয়।

-মুজিবুর রহমান

You will surely find the most intense of the people in animosity toward the believers [to be] the Jews and those who associate others with Allah; and you will find the nearest of them in affection to the believers those who say, "We are Christians." That is because among them are priests and monks and because they are not arrogant.

-Sahih International

৮২. অবশ্যই মুমিনদের মধ্যে শক্রতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকেই আপনি সবচেয়ে উগ্র দেখবেন। আর যারা বলে ‘আমরা নাসারা’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই আপনি মুমিনদের কাছাকাছি বন্ধুত্বে দেখবেন, তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসারবিরাগী রয়েছে। আর এজন্যেও যে, তারা অহংকার করে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮২) অবশ্যই বিশ্বাসীদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদী ও অংশীবাদীদেরকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখবে[1] এবং মানুষের মধ্যে যারা বলে, ‘আমরা খ্রিষ্টান’, তাদেরকেই তুমি সম্প্রীতির ব্যাপারে বিশ্বাসীদের নিকটতর দেখবে। কারণ, তাদের মধ্যে অনেক পন্ডিত ও সংসার-বিরাগী আছে। আর তারা অহংকারও করে না। [2]

[1] এই জন্য যে, ইয়াহুদীদের মধ্যে একগুঁয়েমি, হঠকারিতা, হক থেকে বিমুখতা, দাম্ভিকতা ও গর্ব এবং জ্ঞানী ও ঈমানদারদের অবজ্ঞা করার প্রবণতা ব্যাপক প্রচলিত। আর এ জন্যেই নবীগণকে হত্যা ও তাঁদেরকে মিথ্যাজ্ঞান করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। এমনকি কয়েক বার তারা মহানবী (সাঃ)-কে হত্যা করার কুচক্রান্ত করে। তাঁকে যাদু করে এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি সাধন করার মত জঘন্য অপচেষ্টাও করে। অনুরূপ কুকীর্তি মুশরিকদেরও।

[2] رهبان এর ভাবার্থ; সৎ, আবেদ, সংসার-বিরাগী বা নির্জনবাসী আর قسيسين এর ভাবার্থ; পন্ডিত। অর্থাৎ, এই খ্রিষ্টানদের মধ্যে জ্ঞান ও বিনয় আছে। আর এই জন্যই ইয়াহুদীদের মত তাদের হঠকারিতা ও দাম্ভিকতা ছিল না। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে নম্রতা, উদারতা ও ক্ষমাশীলতার শিক্ষার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মান আছে। এমন কি তাদের ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, কেউ যদি তোমার ডান গালে চড় মারে, তাহলে তার সামনে বাম গাল বাড়িয়ে দাও। অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ করবে না। এই কারণে ইয়াহুদীদের তুলনায় খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের নিকটতর। খ্রিষ্টানদের এই প্রশংসা ইয়াহুদীদের মোকাবেলায় করা হয়েছে। নচেৎ ইসলাম-বিদ্বেষের অভ্যাস কম-বেশী তাদের মধ্যেও আছে। যেমন এ কথা ক্রুস ও ক্রিসেণ্টের বহু শতাব্দী-ব্যাপী যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে স্পষ্ট এবং যা অদ্যাবধি চলে আসছে। আর বর্তমানে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সরগরম। এই কারণেই কুরআনে উভয় সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৩

وَ اِذَا سَمِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَی الرَّسُوۡلِ تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُوۡا مِنَ الۡحَقِّ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِیۡنَ ﴿۸۳﴾

و اذا سمعوا ما انزل الی الرسول تری اعینهم تفیض من الدمع مما عرفوا من الحق یقولون ربنا امنا فاكتبنا مع الشهدین ﴿۸۳﴾
‘আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে। তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন’।

-আল-বায়ান

রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয় তারা যখন তা শুনে, তুমি দেখবে, সত্যকে চিনতে পারার কারণে তখন তাদের চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই তুমি আমাদেরকে সাক্ষীদাতাদের তালিকাভূক্ত কর।

-তাইসিরুল

আর যখন রাসূলের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা শ্রবণ করে তখন তুমি দেখতে পাও যে, তাদের অশ্রু বইছে; এ কারণে যে, তারা সত্যকে উপলদ্ধি করতে পেরেছে। তারা এরূপ বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আমরা মু’মিন হয়ে গেলাম, সুতরাং আমাদেরকেও ঐ সব লোকের সাথে লিপিবদ্ধ করে নিন, যারা (মুহাম্মাদ ও কুরআনকে সত্য বলে) স্বীকার করে ।

-মুজিবুর রহমান

And when they hear what has been revealed to the Messenger, you see their eyes overflowing with tears because of what they have recognized of the truth. They say, "Our Lord, we have believed, so register us among the witnesses.

-Sahih International

৮৩. আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা যখন তারা শুনে, তখন তারা যে সত্য করে তার জন্য আপনি তাদের চোখ অশ্রু বিগলিত দেখবেন।(১) তারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি; কাজেই আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যবহদের তালিকাভুক্ত করুন।

(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে মুসলিমদের সাথে শক্রতা ও বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে ঐসব আহলে কিতাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা সত্যানুরাগ ও আল্লাহভীতির কারণে মুসলিমদের প্রতি হিংসা ও শক্রতা পোষণ করত না। কিন্তু ইয়াহুদীদের মধ্যে এ জাতীয় লোকের সংখ্যা ছিল একান্তই নগণ্য। উদাহরণতঃ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমূখ। নাসারাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল বেশী। বিশেষতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী এবং উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল প্রচুর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসী একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তখন তিনি জাফর ইবন আবু তালেব, ইবন মাসউদ, উসমান ইবন মায'উনসহ একদল সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি দেন।

তারা সেখানে সুখে-শান্তিতেই বসবাস করছিল। মক্কার মুশরিকরা এ খবর পেয়ে আমর ইবন আসকে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে নাজ্জাসীর কাছে পাঠায়। তারা নাজ্জাসীকে অনুরোধ জানায় যে, এরা আহম্মক ধরণের কিছু লোক। এরা বাপ-দাদার দ্বীন ছেড়ে আমাদেরই একজন লোক- যে নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে, তার অনুসরণ করছে। আমরা তাদেরকে ফেরৎ নিতে এসেছি। নাজ্জাসী জাফর ইবন আবু তালেবকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ঈসা এবং তার মা সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? জবাবে তিনি বললেনঃ ঈসা আল্লাহর বান্দা এবং তার এমন কালেমা যা তিনি তার পক্ষ থেকে মারইয়ামের কাছে অর্পণ করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি রূহ।

একথা শুনে নাজ্জাসী একটি কাঠি উঠিয়ে বললেনঃ তোমরা যা বলেছ, তার থেকে ঈসা এ কাঠি পরিমাণও বেশী নন। তারপর নাজ্জাসী তাদেরকে বললেনঃ তোমাদের উপর যা নাযিল করা হয়েছে, তা থেকে কি আমাকে কিছু শুনাতে পার? তারা বললঃ হ্যাঁ। নাজ্জাসী বললেনঃ পড়। তখন জাফর ইবন আবু তালেব কুরআনের আয়াত পড়ে শুনালে নাজ্জাসীসহ তার দরবারে সে সমস্ত নাসারা আলেমগণ ছিলেন তারা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। [সহীহ সনদসহ তাবারী, বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৩) এবং যখন তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চক্ষু অশ্রুবিগলিত দেখবে। তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি। অতএব তুমি আমাদের (সত্যের) সাক্ষীদের দলভুক্ত কর।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৪

وَ مَا لَنَا لَا نُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ مَا جَآءَنَا مِنَ الۡحَقِّ ۙ وَ نَطۡمَعُ اَنۡ یُّدۡخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۸۴﴾

و ما لنا لا نؤمن بالله و ما جآءنا من الحق و نطمع ان یدخلنا ربنا مع القوم الصلحین ﴿۸۴﴾
আর আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে তার প্রতি ঈমান আনব না? আর আমরা আশা করব না যে, আমাদের রব আমাদেরকে প্রবেশ করাবেন নেককার সম্প্রদায়ের সাথে’।

-আল-বায়ান

আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহ্তে এবং যে সত্যবিধান আমাদের নিকট এসেছে তাতে ঈমান আনব না, আর আমরা প্রত্যাশা করি যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করবেন।

-তাইসিরুল

আর আমাদের কি এমন ওযর আছে, যে জন্য আমরা ঈমান আনবনা আল্লাহর প্রতি এবং সেই সত্যের প্রতি যা আমাদের কাছে পৌঁছেছে; অথচ এ আশা রাখবো যে, আমাদের রাব্ব নেককারদের সাথে আমাদেরকে শামিল করবেন?

-মুজিবুর রহমান

And why should we not believe in Allah and what has come to us of the truth? And we aspire that our Lord will admit us [to Paradise] with the righteous people."

-Sahih International

৮৪. আর আল্লাহর প্রতি ও আমাদের কাছে আসা সত্যের প্রতি ঈমান না আনার কি কারণ থাকতে পারে যখন আমরা প্রত্যাশা করি যে, আমাদের রব আমাদেরকে নেককার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৪) আর আমরা যখন প্রত্যাশা করি যে, আল্লাহ আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন, তখন আল্লাহতে ও আমাদের নিকট আগত সত্যে আমাদের বিশ্বাস স্থাপন না করার কি কারণ থাকতে পারে?’ [1]

[1] হাবশা নামক স্থানে, যেখানে মুসলিমগণ মক্কী জীবনে দুইবার হিজরত করেছিলেন, যেখানে আসহামা নাজাশীর শাসন ছিল। এটি খ্রিষ্টান-রাষ্ট্র বলে পরিচিত ছিল। এই আয়াত হাবশায় অবস্থানরত খ্রিষ্টানদের শানেই অবতীর্ণ হয়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সাঃ) আমর বিন উমায়ইয়াহ যামরী (রাঃ)-কে লিখিত পত্র সহ নাজাশীর নিকট প্রেরণ করেন এবং তিনি পত্র বহন করে নিয়ে গিয়ে নাজাশীকে পাঠ করে শুনান। নাজাশী উক্ত পত্র শোনার পর হাবশায় অবস্থানরত মুহাজিরগণ ও জা’ফর ইবনে আবু তালেব (রাঃ)-কে ডেকে পাঠান। আর সাথে সাথে তাঁর স্বধর্মীয় আলেম, আবেদ ও পন্ডিতগণকেও একত্রিত করেন। অতঃপর জা’ফর (রাঃ)-কে কুরআন পাঠ করার নির্দেশ দেন এবং তিনি সূরা মারয়্যাম পাঠ করেন; যাতে ঈসা (আঃ)-এর অলৌকিক জন্ম-বৃত্তান্ত ও আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল হওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। তারা সকলেই তেলাওয়াত শুনে বড় প্রভাবিত হন। তাঁদের চক্ষু দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয় এবং তাঁরা সকলেই ঈমান আনয়ন করেন। আবার কেউ বলেন, নাজাশী তাঁর কিছু সংখ্যক উলামাকে রসূল (সাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেন। যখন রসূল (সাঃ) তাঁদের সামনে কুরআন পাঠ করে শুনান, তখন তাঁদের চক্ষু দিয়ে অনায়াসে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয় এবং তাঁরা সকলেই ঈমান আনয়ন করেন। (ফাতহুল ক্বাদীর) কুরআন শুনে যেভাবে তাঁরা প্রভাবিত হয়েছিলেন, উল্লিখিত আয়াতে তার চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। এই শ্রেণীর খ্রিষ্টানদের ঈমান আনয়নের কথা কুরআনের বেশ কিছু জায়গায় উল্লিখিত রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,{وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ لِلّهِ} অর্থাৎ, নিশ্চয় গ্রন্থধারীদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যারা আল্লাহতে, তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে আল্লাহর নিকট বিনয়াবনত হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে---। (সূরা আলে ইমরান ১৯৯) আর হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী করীম (সাঃ) নাজাশী বাদশাহর মৃত্যুর সংবাদ পেলেন, তখন তিনি সাহাবা কেরাম (রাঃ)-কে বললেন, হাবশাতে তোমাদের ভাই নাজাশীর ইন্তেকাল হয়েছে, তাঁর জানাযার নামায আদায় কর। সুতরাং নবী করীম (সাঃ) মুসাল্লায় তাঁর গায়েবী জানাযার নামায আদায় করলেন। (বুখারী, মুসলিম) অন্য এক হাদীসে আহলে কিতাবদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সাঃ)-এর নবুঅতের প্রতি যে ঈমান আনয়ন করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী করা হবে। (বুখারীঃ ইলম অধ্যায় ও নিকাহ অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৫

فَاَثَابَهُمُ اللّٰهُ بِمَا قَالُوۡا جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ وَ ذٰلِكَ جَزَآءُ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۸۵﴾

فاثابهم الله بما قالوا جنت تجری من تحتها الانهر خلدین فیها و ذلك جزآء المحسنین ﴿۸۵﴾
সুতরাং তারা যা বলেছে এর কারণে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দেবেন জান্নাতসমূহ, যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হল সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান।

-আল-বায়ান

তাদের এ কথার কারণে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত দান করবেন, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে, আর এটাই হল সৎকর্মশীলদের পুরস্কার।

-তাইসিরুল

ফলতঃ তাদের এই উক্তির বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে এমন উদ্যানসমূহ প্রদান করবেন, যার তলদেশে নহর বইতে থাকবে, তারা তাতে অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎ কর্মশীলদের জন্য এটাই প্রতিদান!

-মুজিবুর রহমান

So Allah rewarded them for what they said with gardens [in Paradise] beneath which rivers flow, wherein they abide eternally. And that is the reward of doers of good.

-Sahih International

৮৫. অতঃপর তাদের এ কথার জন্য আল্লাহ তাদের পুরস্কার নির্দিষ্ট করেছেন জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা মুহসিনদের পুরস্কার।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৫) অতঃপর তাদের এ কথার জন্য আল্লাহ তাদের পুরস্কার নির্দিষ্ট করেছেন জান্নাত, যার নিম্নে নদীমালা প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ সৎকর্মশীলদের পুরস্কার।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৬

وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ ﴿۸۶﴾

و الذین كفروا و كذبوا بایتنا اولٓئك اصحب الجحیم ﴿۸۶﴾
আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।

-আল-বায়ান

আর যারা আমার আয়াতগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে ও মিথ্যা জানবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী।

-তাইসিরুল

আর যারা কাফির হয়েছে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী।

-মুজিবুর রহমান

But those who disbelieved and denied Our signs - they are the companions of Hellfire.

-Sahih International

৮৬. আর যারা কুফরী করেছে ও আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে, তারাই জাহান্নামবাসী।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৬) এবং যারা অবিশ্বাস করেছে ও আমার আয়াত (বাক্যসমূহ)কে মিথ্যাজ্ঞান করেছে, তারাই জাহান্নামবাসী।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৭

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُحَرِّمُوۡا طَیِّبٰتِ مَاۤ اَحَلَّ اللّٰهُ لَكُمۡ وَ لَا تَعۡتَدُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ﴿۸۷﴾

یایها الذین امنوا لا تحرموا طیبت ما احل الله لكم و لا تعتدوا ان الله لا یحب المعتدین ﴿۸۷﴾
হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।

-আল-বায়ান

ওহে ঈমানদারগণ! পবিত্র বস্তুরাজি যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম করে নিও না আর সীমালঙ্ঘন করো না, অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।

-তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে সব বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তন্মধ্যে সুস্বাদু বস্তুগুলিকে হারাম করনা এবং সীমা লংঘন করনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেননা।

-মুজিবুর রহমান

O you who have believed, do not prohibit the good things which Allah has made lawful to you and do not transgress. Indeed, Allah does not like transgressors.

-Sahih International

৮৭. হে মুমিনগণ! আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না(১), এবং সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীকে পছন্দ করেন না।(২)

(১) আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ তিনজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের ঘরে এসে তার ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাদেরকে তা জানানো হলে তারা সেসবকে অল্প মনে করল এবং বলল, আমরা কোথায় আর রাসূল কোথায়? তার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা রাত সালাত আদায় করব। অন্যজন বলল, আমি সারা বছর সিয়াম পালন করব। অপরজন বলল, আমি মহিলাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকব এবং বিয়েই করব না। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেন, তোমরা এসব কথা বলেছ? জেনে রাখ, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সবার চাইতে আল্লাহকে বেশী ভয় করি এবং বেশী তাকওয়ারও অধিকারী।

কিন্তু আমি সিয়াম পালন করি, সিয়াম থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি আবার নিদ্ৰাও যাই এবং মেয়েদের বিয়েও করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে সে আমার দলভুক্ত নয়। [বুখারীঃ ৫০৬৩] অপর বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা যুদ্ধে যেতাম, আমাদের সাথে আমাদের স্ত্রীরা থাকত না। তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলাম যে, আমরা খাসি’ হয়ে যাই না কেন? তখন আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছিল। তারপর আবদুল্লাহ এ আয়াত পাঠ করলেন। [বুখারী ৪৬১৫]

(২) ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তার কাছে একবার খাবার নিয়ে আসা হলো। একলোক খাবার দেখে একদিকে আলাদা হয়ে গেল এবং বলল, আমি এটা খাওয়া হারাম করছি। তখন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেন, কাছে আস এবং খাও। আর তোমার শপথের কাফফারা দাও। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩১৩, ৩১৪; ফাতহুল বারী ১১/৫৭৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৭) হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে সব উৎকৃষ্ট বস্তু বৈধ করেছেন, সে সকলকে তোমরা অবৈধ করো না[1] এবং সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।

[1] হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যখনই গোশত ভক্ষণ করি, তখনই আমার মধ্যে কামোত্তেজনা অনুভব করি। তাই নিজের জন্য গোশতকে হারাম করে নিয়েছি।’ যার ফলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ তিরমিযী, আলবানী ৩/৪৬) অনুরূপভাবে অবতীর্ণের এই কারণ ব্যতীত বিভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কিছু সংখ্যক সাহাবা সংসার ত্যাগ এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে কিছু বৈধ জিনিস হতে (যেমন বিবাহ করা হতে, ঘুমিয়ে রাত্রিযাপন করা হতে, দিনে পানাহার করা হতে) নিজেদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। যখন নবী করীম (সাঃ) এ ব্যাপারে অবগত হলেন, তখন তাঁদেরকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করলেন। এমন কি উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) তিনিও নিজের স্ত্রী থেকে দূরে থাকতেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকেও তিনি তা করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসগ্রন্থসমূহ দ্রষ্টব্য) সুতরাং এই আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ কর্তৃক হালাল যে কোন বস্তুকে নিজের উপর হারাম করে নেওয়া অথবা তা এমনিই বর্জন করা বৈধ নয়। চাহে তা খাদ্যদ্রব্য হোক অথবা পানীয় দ্রব্য, পোষাক-পরিচ্ছদ হোক অথবা আনন্দদায়ক কোন বস্তু, বৈধ কামনা-বাসনা হোক বা অন্য কিছু।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য কোন হালাল জিনিসকে (কসম ছাড়া) হারাম করে নেয়, তবে তা হারাম বলে গণ্য হবে না; একমাত্র স্ত্রী ব্যতীত। অবশ্য এ ব্যাপারে উলামাদের অভিমত হচ্ছে, তাকে কসমের কাফফারা দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোন কিছুই লাগবে না। ইমাম শাওকানী বলেন, সহীহ হাদীস দ্বারা এই কথারই প্রমাণ হয় যে, নবী করীম (সাঃ) কোন ব্যক্তিকে এ ধরনের হারাম করাতে কসমের কাফফারা আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেননি। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, ‘এই আয়াতের পরে আল্লাহ কসমের কাফফারার কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে বুঝা যায় যে, কোন হালাল জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নেওয়া কসমেরই অন্তর্ভুক্ত, যা কাফফারা আদায় করার দাবী রাখে।’ কিন্তু এই দলীল সহীহ হাদীসের উপস্থিতিতে গ্রহণীয় নয়। সুতরাং সঠিক হল,যা ইমাম শাওকানী বলেছেন। (সউদী আরবের মুফতীগণের মতে কাফফারা দিতে হবে।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৮

وَ كُلُوۡا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ حَلٰلًا طَیِّبًا ۪ وَّ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡۤ اَنۡتُمۡ بِهٖ مُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۸۸﴾

و كلوا مما رزقكم الله حللا طیبا و اتقوا الله الذی انتم بهٖ مؤمنون ﴿۸۸﴾
আর আহার কর আল্লাহ যা তোমাদের রিয্ক দিয়েছেন তা থেকে হালাল, পবিত্র বস্তু। আর তাকওয়া অবলম্বন কর আল্লাহর যার প্রতি তোমরা মুমিন।

-আল-বায়ান

যে সমস্ত হালাল ও পবিত্র জীবিকা আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছেন সেগুলো ভক্ষণ কর, যে আল্লাহর প্রতি তোমরা ঈমান এনেছ তাঁকে ভয় কর।

-তাইসিরুল

আর আল্লাহ তোমাদেরকে যা দান করেছেন তন্মধ্য হতে হালাল ও পবিত্র বস্তুগুলি আহার কর, এবং আল্লাহকে ভয় কর - যাঁর প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।

-মুজিবুর রহমান

And eat of what Allah has provided for you [which is] lawful and good. And fear Allah, in whom you are believers.

-Sahih International

৮৮. আর আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে খাও এবং আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর, যাঁর প্রতি তোমরা মুমিন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৮) আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছেন তা হতে বৈধ ও উৎকৃষ্ট বস্তু ভক্ষণ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর প্রতি তোমরা সকলে বিশ্বাসী।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৮৯

لَا یُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِكُمۡ وَ لٰكِنۡ یُّؤَاخِذُكُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰكِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَهۡلِیۡكُمۡ اَوۡ كِسۡوَتُهُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِكَ كَفَّارَۃُ اَیۡمَانِكُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ وَ احۡفَظُوۡۤا اَیۡمَانَكُمۡ ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۸۹﴾

لا یؤاخذكم الله باللغو فی ایمانكم و لكن یؤاخذكم بما عقدتم الایمان فكفارتهٗ اطعام عشرۃ مسكین من اوسط ما تطعمون اهلیكم او كسوتهم او تحریر رقبۃ فمن لم یجد فصیام ثلثۃ ایام ذلك كفارۃ ایمانكم اذا حلفتم و احفظوا ایمانكم كذلك یبین الله لكم ایتهٖ لعلكم تشكرون ﴿۸۹﴾
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।

-আল-বায়ান

তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। (এ পাকড়াও থেকে অব্যাহতির) কাফফারা হল দশ জন মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোযা পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য বিষদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।

-তাইসিরুল

আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন কসমের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেননা, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ঐ কসমসমূহের জন্য পাকড়া করবেন যেগুলিকে তোমরা (ভবিষ্যত বিষয়ের প্রতি) দৃঢ় কর, সুতরাং ওর কাফফারা হচ্ছে দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম ধরণের খাদ্য প্রদান করা, যা তোমরা নিজ পরিবারের লোকদেরকে খাইয়ে থাক, কিংবা তাদেরকে পরিধেয় বস্ত্র দান করা (মধ্যম ধরণের), কিংবা একজন গোলাম কিংবা বাঁদী মুক্ত করা। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখেনা সে (একাধারে) তিন দিন সিয়াম পালন করবে; এটা তোমাদের কসমসমূহের কাফ্ফারা যখন তোমরা কসম কর এবং অতঃপর ভঙ্গ কর এবং নিজেদের কসমসমূহকে রক্ষা করবে। এই রূপেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় বিধানসমূহ বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

-মুজিবুর রহমান

Allah will not impose blame upon you for what is meaningless in your oaths, but He will impose blame upon you for [breaking] what you intended of oaths. So its expiation is the feeding of ten needy people from the average of that which you feed your [own] families or clothing them or the freeing of a slave. But whoever cannot find [or afford it] - then a fast of three days [is required]. That is the expiation for oaths when you have sworn. But guard your oaths. Thus does Allah make clear to you His verses that you may be grateful.

-Sahih International

৮৯. তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছে করে কর সেগুলোর জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। তারপর এর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি।(১) অতঃপর যার সামর্থ নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন।(২) তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফফারা। আর তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো।(৩) এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।

(১) এর সারমর্ম এই যে, ইয়ামীনে লাগভ-এর জন্য আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না অর্থাৎ কাফফারা ওয়াজিব করেন না। অন্য শপথের জন্য কাফফারা দিতে হবে। আর তা হল, তিনটি কাজের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় যে কোন একটি কাজ করতে হবে। (১) দশ জন দরিদ্রকে মধ্যশ্রেণীর খাদ্য সকাল-বিকাল দুবেলা খাওয়াতে হবে কিংবা (২) দশ জন দরিদ্রকে সতর ঢাকা পরিমাণ পোশাক-পরিচ্ছদ দিতে হবে। উদাহরণতঃ একটি পাজামা অথবা একটি লুঙ্গি অথবা একটি লম্বা কোর্তা কিংবা (৩) কোন গোলামকে মুক্ত করে দেয়া। [ইবন কাসীর, কুরতুবী]

(২) এরপর বলা হয়েছেঃ “কোন শপথ ভঙ্গকারী ব্যক্তি যদি এ আর্থিক কাফফারা দিতে সমর্থ না হয়, তবে তার জন্য কাফফারা এই যে সে তিন দিন রোযা রাখবে”। কোন কোন বর্ণনায় এখানে ধারাবাহিকভাবে তিনটি সিয়াম রাখার নির্দেশ রয়েছে। তাই ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ ও অন্যান্য কয়েকজন ইমামের মতে শপথের কাফফারা হিসেবে যে সিয়াম পালন হবে তা ধারাবাহিকভাবে হওয়া জরুরী। [ইবন কাসীর, কুরতুবী]

(৩) আলোচ্য আয়াতে শপথের কাফফারা প্রসঙ্গে প্রথমে إطعام শব্দ বলা হয়েছে। আরবী ভাষায় এর অর্থ যেমন খাদ্য খাওয়ানো হয়, তেমনি কাউকে খাদ্য দান করাও হয়। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৯) আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য, কিন্তু যে সব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সেই সকলের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন।[1] অতঃপর এর কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হল, দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান করা; যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও,[2] অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করা,[3] কিংবা একটি দাস মুক্ত করা।[4] কিন্তু যার (এ সবে) সামর্থ্য নেই, তার জন্য তিন দিন রোযা পালন করা।[5] তোমরা শপথ করলে এটিই হল তোমাদের শপথের প্রায়শ্চিত্ত। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কর। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

[1] قسم (কসম) এর আরবী প্রতিশব্দ حلف বা يمين আর বহুবচন أحلاف বা أيمان যা শপথ অর্থে ব্যবহার হয়। এই কসম বা শপথ তিন ভাগে বিভক্ত; (ক) لغو (খ)  غموس (গ) مُعقَّدة (ক) لغو (নিরর্থক বা নিরুদ্দেশ) এমন কসম, যা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবং কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে। (এমন কসম খাওয়া তার মুদ্রাদোষে পরিণত হয়।) এই ধরনের কসমের কোন কাফফারা বা ধর-পাকড় নেই। (খ) غموس (মিথ্যা কসম) যা মানুষ ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণা করার জন্য করে থাকে। এটা মহাপাপ; বরং অতি মহাপাপ। কিন্তু এ ধরনের কসমের কোন কাফফারা নেই। (গ) معقَّدة ঐ কসমকে বলা হয়, যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়ত সহকারে নিজের কথার সত্যতার তাকীদ ও তা পাকা করার জন্য ব্যবহার করে। যদি কেউ এ ধরনের কসম ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। এই কাফফারার কথা এই আয়াতের পরের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

[2] (কসমের কাফফারায়) প্রদেয় খাদ্যের পরিমাণ সম্বন্ধে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। আর এই জন্য উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ইমাম শাফেয়ী (রঃ) রমযান মাসের রোযা অবস্থায় স্ত্রী-সহবাস করার ফলে যে পরিমাণ কাফফারা দেওয়ার কথা হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে তা দলীলরূপে পেশ করে বলেন, প্রত্যেক মিসকীনকে এক ‘মুদ’ (প্রায় ৬২৫ গ্রাম) খাদ্য দান করতে হবে। কেননা নবী করীম (সাঃ) ঐ ব্যক্তিকে সহবাসের কাফফারা আদায় করার জন্য ১৫ সা’ (সাড়ে ৩৭ কিলো) খেজুর দিয়েছিলেন, যা ৬০ জন মিসকীনের মাঝে বণ্টন করতে বলা হয়েছিল। আর এক সা’ সমান চার মুদ (আড়াই কিলো) হয়। এই হিসাবে ১০ মিসকীনকে ১০ মুদ করে (অর্থাৎ প্রায় সওয়া ৬ কিলো) খাদ্যদ্রব্য কাফফারা হিসাবে প্রদান করতে হবে। ((মতান্তরে মাথাপিছু দু মুদ (সওয়া এক কিলো) খাদ্য দান করতে হবে। যেহেতু কা’ব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে মহানবী (সাঃ) তাঁকে বলেন, ‘‘তোমার মাথা মুন্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকীনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’ (মোটামুটি সওয়া এক কিলো) করে ছয়টি মিসকীনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগল কুরবানী কর।’’ (বুখারী ১৮১৬, মুসলিম ১২০১নং)

[3] পোশাক বা বস্ত্রদানের ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। বাহ্যতঃ এর ভাবার্থ এক জোড়া এমন কাপড়, যা পরিধান করে মানুষ নামায আদায় করতে পারে। আবার কোন কোন উলামা খাদ্য ও বস্ত্রদান উভয় ক্ষেত্রেই সমাজের প্রচলিত নিয়ম-নীতিকে অনুসরণীয় মনে করেন।

[4] কোন কোন উলামা ভুল করে হত্যা করার ফলে যে রক্তপণ দিতে হয় তার উপর অনুমান করে মুক্তিযোগ্য দাস-দাসীর ক্ষেত্রে ঈমানের শর্তারোপ করেছেন। কিন্তু ইমাম শওকানী বলেন, আয়াতটি ব্যাপক, আর এর মধ্যে মুমিন ও কাফের উভয়ই শামিল।

[5] অর্থাৎ, উল্লিখিত তিনটি এখতিয়ারের মধ্যে একটি কেউ যদি পালন করতে না পারে, তাহলে তাকে তিন দিন রোযা রাখতে হবে। আর এটাই তার কসমের কাফফারা হয়ে যাবে। (উক্ত তিনটির মধ্যে একটিতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।) আবার রোযা রাখার ব্যাপারেও উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে; কেউ বলেন, ধারাবাহিকভাবে পরপর তিনদিন রোযা রাখতে হবে। আবার কেউ বলেন; একদিন পর পর বা বিলম্ব করে (অর্থাৎ একটি রাখার পর বিলম্ব করে তারপর আরেকটি রাখতে পারে।) উভয় অবস্থা জায়েয বা বৈধ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৫ : ৯০

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾

یایها الذین امنوا انما الخمر و المیسر و الانصاب و الازلام رجس من عمل الشیطن فاجتنبوه لعلكم تفلحون ﴿۹۰﴾
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

-আল-বায়ান

হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তী ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ, তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যমন্ডিত হতে পার।

-তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।

-মুজিবুর রহমান

O you who have believed, indeed, intoxicants, gambling, [sacrificing on] stone alters [to other than Allah], and divining arrows are but defilement from the work of Satan, so avoid it that you may be successful.

-Sahih International

৯০. হে মুমিনগণ! মদ(১), জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর(২) তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।(৩)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক সম্প্রদায় হবে যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ব্যবহার, মদ্যপান ও গান বাদ্যকে হালাল করবে। [বুখারীঃ ৫৫৯০] অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করবে ও তাওবাহ করবে না, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। [বুখারীঃ ৫৫৭৫]

(২) أزلام শব্দটি زلم এর বহুবচন। আযলাম এমন শরকে বলা হয়, যা দ্বারা আরবে ভাগ্যনির্ধারণী জুয়া খেলার প্রথা প্রচলিত ছিল। দশ ব্যক্তি শরীক হয়ে একটি উট যবাই করত। অতঃপর এর মাংস সমান দশ ভাগে ভাগ করার পরিবর্তে তা দ্বার জুয়া খেলা হত। দশটি শরের সাতটিতে বিভিন্ন অংশের চিহ্ন অবিকৃত থাকত। কোনটিতে এক এবং কোনটিতে দুই বা তিন অংশ অংকিত থাকত। অবশিষ্ট তিনটি শর অংশবিহীন সাদা থাকত।

এ শরগুলোকে তূনীর মধ্যে রেখে খুব নাড়াচাড়া করে নিয়ে প্রত্যেক অংশীদারের জন্যে একটি করে শর বের করা হত। যত অংশবিশিষ্ট শর যার নামে হত, সে তত অংশের অধিকারী হত এবং যার নামে অংশবিহীন শর হত, সে বঞ্ছিত হত। [কুরতুবী] আজকাল এ ধরনের অনেক লটারী বাজারে প্রচলিত আছে। এগুলো জুয়া এবং হারাম। পূর্বে এ সূরার ৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে।

(৩) মদ্যপানকে পর্যায়ক্রমিকভাবে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কুরআনের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম হচ্ছে এই যে, মদ্যপান সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়েছে। তন্মধ্যে প্রথম আয়াত ছিল, (يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا) [সূরা আল-বাকারাহ: ২১৯] যাতে সাহাবায়ে কিরাম মদ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। তাতে মদ্যপানের দরুন যেসব পাপ ও ফাসাদ সৃষ্টি হয়, তার বর্ণনা দিয়েই ক্ষান্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াত ছিল, (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ) [সূরা আন-নিসাঃ ৪৩]

এতে বিশেষভাবে সালাতের সময় মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য সময়ের জন্য অনুমতি রয়ে যায়। কিন্তু সূরা আল-মায়িদাহ এর আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে পরিস্কার ও কঠোরভাবে মদ্যপান নিষিদ্ধ ও হারাম করে দেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] এ বিষয়ে শরীআতের এমন পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ ছিল এই যে, আজীবনের অভ্যাস ত্যাগ করা বিশেষতঃ নেশাজনিত অভ্যাস হঠাৎ ত্যাগ করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর হত। [ফাতহুল কাদীর]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সম্পর্কে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন। এরশাদ হয়েছেঃ ‘সর্বপ্রকার অপকর্ম এবং অশ্লীলতার জন্মদাতা হচ্ছে মদ [ইবন মাজাহ ৩৩৭১] কারণ, এটি পান করে মানুষ নিকৃষ্টতর পাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, মদ এবং ঈমান একত্রিত হতে পারে না। [নাসায়ীঃ ৮/৩১৭] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর ব্যক্তির উপর লা'নত করেছেন। (১) যে লোক নির্যাস বের করে, (২) প্রস্তুতকারক, (৩) পানকারী, (৪) যে পান করায়, (৫) আমদানীকারক, (৬) যার জন্য আমদানী করা হয়, (৭) বিক্রেতা, (৮) ক্রেতা, (৯) সরবরাহকারী এবং (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী। [ইবন মাজাহঃ ৩৩৮০]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন এক মজলিশে মদ্যপানে সাকীর কাজ সম্পাদন করছিলেন। আবু তালহা, আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাই ইবন কা'ব, সোহাইল রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমূখ নেতৃস্থানীয় সাহাবীগণ সে মজলিশে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন - এবার সমস্ত মদ ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাড়ি ভেঙ্গে ফেল। [মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮১; বুখারী ৪৬২০; মুসলিম: ১৯৮০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯০) হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।[1]

[1] এটি মদের ব্যাপারে তৃতীয় নির্দেশ। প্রথম ও দ্বিতীয় নির্দেশে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু এখানে মদ ও তার সাথে জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক তীরকে অপবিত্র বা ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানী বিষয় বলে স্পষ্ট ভাষায় তা থেকে দূরে থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ আয়াতে মদ ও জুয়ার অতিরিক্ত অপকারিতা বর্ণনা করে প্রশ্ন করা হয়েছে, তবুও কি তোমরা বিরত হবে না? এ থেকে উদ্দেশ্য ঈমানদারকে পরীক্ষা করা। সুতরাং যাঁরা মু’মিন ছিলেন, তাঁরা আল্লাহর উদ্দেশ্য বুঝে গেলেন এবং তা যে নিশ্চিত হারাম, তা মেনে নিয়ে বললেন, ‘আমরা বিরত হলাম, হে আমাদের প্রতিপালক!’ (আহমাদ ২/৩৫১) কিন্তু সাম্প্রতিক কালের তথাকথিত কিছু ‘চিন্তাবিদ’ বলেন যে, ‘মদ হারাম কোথায় বলা হয়েছে?!’ এমন চিন্তা-বুদ্ধির জন্য তো রোদন করতে হয়। মদকে অপবিত্র বা ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানী বিষয় গণ্য করে তা হতে দূরে থাকতে আদেশ দেওয়া এবং দূরে থাকাকে সফলতার কারণ গণ্য করা ঐ ‘মুজতাহিদ’দের নিকট হারাম হওয়ার জন্য (দলীল হিসাবে) যথেষ্ট নয়! যার মতলব হল, আল্লাহর নিকট অপবিত্র বস্তুও বৈধ, শয়তানী কাজও বৈধ। যে জিনিস থেকে আল্লাহ দূরে থাকতে বলেন, সে জিনিসও হালাল। যে কাজ সম্পাদন করাকে অসফলতা ও বর্জন করাকে সফলতার কারণ গণ্য করা হয়, তাও বৈধ! সুতরাং ‘ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিঊন।’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৮১ থেকে ৯০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 6 7 8 9 10 11 12 পরের পাতা »