-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ(১)
(১) কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে “কারি'আহ” এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, মহাবিপদ। কারা'আ মানে কোন জিনিসকে কোন জিনিসের ওপর এমন জোরে মারা যার ফলে তা থেকে প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এই শাব্দিক অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভয়াবহ দুৰ্ঘটনা ও বড় রকমের মারাত্মক বিপদের ক্ষেত্রে “কারি'আহ” শব্দ বলা হয়ে থাকে। [মুজামুল ওয়াসীত] এখানে “আল-কারি'আহ” শব্দটি কিয়ামতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আবার সূরা আল-হাক্কায় কিয়ামতকে এই শব্দটি দিয়েই চিহ্নিত করা হয়েছে। [আয়াত: ৪] সুতরাং আল-কারি'আহ শব্দটি কিয়ামতের একটি নাম। যেমনিভাবে আল-হাক্কাহ, আত-ত্বাম্মাহ, আস-সাখখাহ, আল-গাশিয়াহ, ইত্যাদিও কিয়ামতের নাম। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া১। ঠক্ঠক্কারী (মহাপ্রলয়)। [1]
[1] এটাও কিয়ামতের নামাবলীর অন্যতম। যেমন এর পূর্বে কিয়ামতের বিভিন্ন নাম উল্লিখিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপঃ الحاقَّة (হা-ক্ক্বাহ), الطَّامَّة (মহাসংকট), الصَّاخَّة (ধ্বংস-ধ্বনি), الغَاشِيَة (সমাচ্ছন্নকারী), السَّاعَة (মহাকাল), الوَاقِعَة (সংঘটন) প্রভৃতি। القَارِعَة (ঠক্ঠক্কারী) এ জন্য বলা হয়েছে যে, কিয়ামত নিজ ভয়াবহতায় মানুষের হৃদয়কে জাগ্রত করে তুলবে এবং আল্লাহর দুশমনদেরকে আযাব সম্পর্কে অবহিত করবে। যেমন দরজায় করাঘাতকারী ঠক্ঠক্ শব্দ করে গৃহবাসীকে সতর্ক করে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া৩। কিসে তোমাকে জানাল, ঠক্ঠক্কারী (মহাপ্রলয়) কি?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত(১),
(১) অর্থাৎ মানুষ সেদিনের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিক্ষিপ্ততা, আনা-গোনা ইত্যাদিতে উদ্ভ্রান্তের মত থাকবে। মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পতঙ্গ। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল”। [সূরা আল-কামার: ৭] আগুন জ্বালানোর পর পতংগ যেমন দিক-বিদিক থেকে হন্য হয়ে আগুনের দিকে ছুটে আসে সেদিন মানুষ তেমনিভাবে হাশরের মাঠের দিকে ছুটে আসবে। [ইবন কাসীর, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। [1]
[1] فِرَاش মশা ও আলোর কাছে ঘুরে বেড়ায় এমন পতঙ্গকে বলা হয়। مَبثُوث মানে হল বিক্ষিপ্ত। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের ন্যায় ছুটাছুটি করতে থাকবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গিন পশমের মত।(১)
(১) অর্থাৎ যখন মহাদুর্ঘটনা ঘটে যাবে। আর এর ফলে সারা দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে, লোকেরা আতংকগ্ৰস্ত হয়ে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে যেমন আলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া পতংগরা চারদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। পাহাড়গুলো ধূনা পশমের মত হবে, যা হাল্কা বাতাসে উড়ে যাবে। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। এবং পর্বতসমূহ হবে ধূনিত রঙ্গিন পশমের ন্যায়। [1]
[1] عِهن সেই পশমকে বলা হয় যা নানান রঙে রঞ্জিত হয়। مَنفُوش অর্থ হল ধূনিত। এতে পাহাড়ের সেই অবস্থাকে বর্ণনা করা হয়েছে, যা কিয়ামতের দিন তার ঘটবে। কুরআন কারীমে পাহাড়ের উক্ত অবস্থা নানানভাবে বিভিন্ন স্থানে উল্লিখিত হয়েছে; যার বিস্তারিত বিবরণ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। এরপর সেই দুই দলের কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হচ্ছে, যারা কিয়ামতের দিন নিজ নিজ আমলানুযায়ী বিভক্ত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. অতঃপর যার পাল্লাসমূহ(১) ভারী হবে(২),
(১) এ সূরায় আমলের ওজন ও তার হালকা এবং ভারী হওয়ার প্রেক্ষিতে জাহান্নাম অথবা জান্নাত লাভের বিষয় আলোচিত হয়েছে। মূলে ‘মাওয়াযীন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দটি বহুবচন। এর কারণ হয়ত মীযানগুলো কয়েকটি হবে; অথবা যে আমলগুলো ওজন করা হবে, সেগুলো বিভিন্ন প্রকারের হবে। [কুরতুবী] তাছাড়া বান্দার আমলের ওজন হওয়া যেমন সত্য তেমনি আমলকারীর ওজন হওয়াও সত্য। অনুরূপভাবে আমলনামারও ওজন করা হবে। [শরহুত তাহাবীয়া লিবনি আবিল ইযয: ৪১৯] এক্ষেত্রে একথা স্মর্তব্য যে, কেয়ামতে মানুষের আমল ওজন করা হবে-গণনা হবে না।
আমলের ওজন ইখলাস তথা আন্তরিকতা ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যের কারণে বেড়ে যায়। যার আমল আন্তরিকতাপূর্ণ ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সংখ্যায় কম হলেও তার আমলের ওজন বেশী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সংখ্যায় তো সালাত, সাওম, দান-সদকা, হজ-ওমরা অনেক করে, কিন্তু আন্তরিকতা ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্য কম, তার আমলের ওজন কম হবে। মানুষ আমলের যে পুঁজি নিয়ে আল্লাহর আদালতে আসবে তা ভারী না হালকা, অথবা মানুষের নেকী তার পাপের চেয়ে ওজনে বেশী না কম-এরি ভিত্তিতে সেখানে ফায়সালা অনুষ্ঠিত হবে। [দেখুন: মাজমু ফাতাওয়া শাইখিল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ: ১০/৭৩৫–৭৩৬]
এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখিত হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছেঃ “আর ওজন হবে সেদিন সত্য। তারপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” [সূরা আল-আরাফ: ৮–৯] আবার কোথাও বলা হয়েছে, “হে নবী! বলে দিন, আমি কি তোমাদের জানাবো নিজেদের আমলের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ কারা? তারাই ব্যর্থ যাদের দুনিয়ার জীবনে সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে গেছে। কিয়ামতের দিন আমি তাদের কোন ওজন দেবো না।” [সূরা আল-কাহাফ: ১০৪–১০৫]
অন্যত্র বলা হয়েছে, “কিয়ামতের দিন আমি যথাযথ ওজন করার দাড়িপাল্লা রেখে দেবো। তারপর কারো ওপর অণু পরিমাণও যুলুম হবে না। যার সরিষার দানার পরিমাণও কোন কাজ থাকবে তাও আমি সামনে আনবো এবং হিসেব করার জন্য আমি যথেষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭] এই আয়াতগুলো থেকে জানা যায়, কুফরী করা বৃহত্তম অসৎকাজ। গুনাহের পাল্লা তাতে অনিবাৰ্যভাবে ভারী হয়ে যায়। ফলে আর কাফেরের এমন কোন নেকী হবে না নেকীর পাল্লায় যার কোন ওজন ধরা পড়ে এবং তার ফলে পাল্লা ঝুঁকে পড়তে পারে; কারণ তার ঈমান নেই। [সা'দী, সূরা কাহফ: আয়াত-১০৫]
(২) বলা হয়েছে, যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে সে থাকবে সন্তোষজনক জীবনে। পাল্লাভারী হওয়ার অর্থ সৎকর্মের পাল্লা অসৎকর্ম থেকে ভারী হওয়া। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। তখন যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, [1]
[1] مَوَازِين হল مِيزَان শব্দের বহুবচন। এর অর্থ দাঁড়িপাল্লা; যার দ্বারা (কিয়ামতে) মানুষের আমলনামা ওজন করা হবে। এ ব্যাপারে সূরা আ’রাফের ৮নং, সূরা কাহফের ১০৫নং ও সূরা আম্বিয়ার ৪৭নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। কিছু কিছু উলামা বলেন যে, এখানে مَوَازِين হল مِيزَان শব্দের বহুবচন নয়; বরং তা مَوزُون শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ এমন আমল যা আল্লাহর নিকট বিশেষ গুরুত্ব ও ওজন রাখে (তা ভারী অথবা হাল্কা হবে)। (ফাতহুল ক্বাদীর) কিন্তু প্রথম অর্থই বলিষ্ঠ ও সঠিক। উদ্দেশ্য হল, যার নেকী বেশী হবে এবং আমল ওজন হবার সময় তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. সে তো থাকবে সন্তোষজনক জীবনে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৭। সে তো সন্তোষময় জীবনে (সুখে) থাকবে। [1]
[1] অর্থাৎ, এমন (সুখের) জীবন; যা সে পছন্দ করবে এবং যা পেয়ে সে সন্তুষ্ট হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে(১)
(১) অর্থাৎ যাদের অসৎকর্মের পাল্লা সৎকর্ম থেকে ভারী হবে। [মুয়াসসার, সাদী]
তাফসীরে জাকারিয়া৮। কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, [1]
[1] অর্থাৎ, যার নেকীর তুলনায় বদীর পরিমাণ বেশী হবে, ফলে পাপের পাল্লা ভারী হবে এবং পুণ্যের পাল্লা হালকা হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. তার স্থান হবে ‘হাওয়িয়াহ’(১)
(১) মূল আরবী শব্দে أمه বলা হয়েছে। أم শব্দের অর্থ স্থান বা ঠিকানাও হয়, যেমনটি উপরে অর্থের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া আয়াতের আরেক অর্থ হলো, সে জাহান্নামের আগুনে অধোমুখে মাথার মগজসহ পতিত হবে। তাছাড়া যদি أم শব্দটির বিখ্যাত অর্থ গ্রহণ করা হয় তাহলে তার অর্থ হবে, মা। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, তার মা হবে জাহান্নাম। মায়ের কোল যেমন শিশুর অবস্থান হয় তেমনি জাহান্নামবাসীদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া আর কোন অবস্থান হবে না। আয়াতে উল্লেখিত ‘হাওয়িয়াহ’ শব্দটি জাহান্নামের একটি নাম। শব্দটি এসেছে ‘হাওয়া’ থেকে। এর অর্থ হচ্ছে উঁচু জায়গা থেকে নীচুতে পড়ে যাওয়া। আর যে গভীর গর্তে কোন জিনিস পড়ে যায় তাকে হাওয়িয়া বলে। জাহান্নামকে হাওয়িয়া বলার কারণ হচ্ছে এই যে, জাহান্নাম হবে অত্যন্ত গভীর এবং জাহান্নামবাসীদেরকে তার মধ্যে ওপর থেকে নিক্ষেপ করা হবে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া৯। তার স্থান হবে হাবিয়াহ। [1]
[1] هَاوِيَة জাহান্নামের একটি নাম। তাকে হাবিয়াহ এই জন্য বলা হয় যে, জাহান্নামী তার গভীর গর্তে গিয়ে পড়বে। স্থান বুঝাতে أُمّ (মা) শব্দ এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যে, যেমন মানুষের জন্য ‘মা’ আশ্রয়স্থল হয়, তেমনি জাহান্নামীদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। কোন কোন আলেম বলেন, এখানে ‘উম্ম’ (মা) অর্থ হল দেমাগ বা মস্তিষ্ক। যেহেতু জাহান্নামী তার মাথার উপর ভর করে হাবিয়াহ দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর আপনাকে কিসে জানাবে সেটা কী?
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০। কিসে তোমাকে জানাল, তা কি? [1]
[1] এখানে জাহান্নামের ভয়াবহতা এবং আযাবের কঠিনতাকে বোঝানোর জন্য প্রশ্নবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তা মানুষের কল্পনা ও ধারণার বাইরে। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান তা আয়ত্ত করতে এবং তার প্রকৃতত্বকে জানতে অক্ষম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান