-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. আপনি কি দেখেছেন(১) তাকে, যে দ্বীনকে(২) অস্বীকার করে?
(১) এখানে বাহ্যত সম্বোধন করা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। কিন্তু কুরআনে বর্ণনাভঙ্গী অনুযায়ী দেখা যায়, এসব ক্ষেত্রে সাধারণত প্রত্যেক জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনা সম্পন্ন লোকদেরকেই এ সম্বোধন করা হয়ে থাকে। আর দেখা মানে চোখ দিয়ে দেখাও হয়। কারণ সামনে দিকে লোকদের যে অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে তা প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী স্বচক্ষে দেখে নিতে পারে। আবার এর মানে জানা, বুঝা ও চিন্তা-ভাবনা করাও হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]
(২) এ আয়াতে “আদ-দীন” শব্দটির অর্থ আখেরাতে কর্মফল দান এবং বিচার। অধিকাংশ মুফাসসিররা এমতটিই গ্ৰহণ করেছেন। [ইবন কাসীর, কুরতুবী, মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া১। তুমি কি দেখেছ তাকে, যে (পরকালের) কর্মফলকে মিথ্যা মনে করে?[1]
[1] أرَأيتَ শব্দ দ্বারা নবী (সাঃ)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। আর এতে প্রশ্নসূচক বাক্য দ্বারা বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। ‘তুমি কি দেখেছ’ অর্থাৎ, ‘তুমি কি চিনেছ তাকে---।’ আর الدِّين থেকে উদ্দেশ্য আখেরাতে হিসাব ও প্রতিদান। কেউ কেউ বলেন, এখানে আরো কিছু শব্দ উহ্য আছে। আসল বাক্য হল যে, ‘তুমি কি চিনেছ তাকে, যে (পরকালের) কর্মফলকে মিথ্যা মনে করে? তার এ মনে করা ঠিক অথবা ভুল?’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. সে তো সে-ই, যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়।(১)
(১) এখানে يَدُعُّ বলা হয়েছে। এর অর্থ, রূঢ়ভাবে তাড়ানো, কঠোরভাবে দূর করে দেয়া। এতিমদের প্রতি অসদাচরণ করা, তাদের প্রতি দয়া না করে কঠোরভাবে ধিক্কার ও যুলুম করা, তাদেরকে খাদ্য দান না করা এবং তাদের হক আদায় না করাই এখানে উদ্দেশ্য। [মুয়াস্সার, ইবন কাসীর, তাবারী] জাহিলিয়াতের যুগে এতিম ও নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত। আর বলা হত, যারা তীর-বর্শা নিক্ষেপ করে এবং তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করে তারাই শুধু সম্পত্তি পাবে। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এ ধরনের প্রথা বাতিল করে দিয়েছে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া২। সে তো ঐ ব্যক্তি, যে পিতৃহীন (এতীম)কে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। [1]
[1] কারণ, একে তো সে বখীল। তাতে আবার সে কিয়ামত অস্বীকারকারী। সুতরাং এই শ্রেণীর বদগুণসম্পন্ন ব্যক্তি কিভাবে এতীমের সাথে সদ্ব্যবহার করতে পারে? এতীমদের সাথে সদ্ব্যবহার সেই ব্যক্তিই করতে পারবে যার অন্তরে মাল-ধনের পরিবর্তে মানবতার কদর এবং সচ্চরিত্রের নৈতিকতার গুরুত্ব ও মহববত আছে। দ্বিতীয়তঃ সে এ কথার বিশ্বাসী হবে যে, এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন আমি উত্তম প্রতিদান পাব।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর সে উদ্বুদ্ধ করে না(১) মিসকীনদের খাদ্য দানে।
(১) لَا يَحُضُّ শব্দের মানে হচ্ছে, সে নিজেকে উদ্ধৃদ্ধ করে না, নিজের পরিবারের লোকদেরকেও মিসকিনের খাবার দিতে উদ্ধৃদ্ধ করে না এবং অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে না যে, সমাজে যেসব গরীব ও অভাবী লোক অনাহারে মারা যাচ্ছে তাদের হক আদায় করো এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য কিছু করো। কারণ তারা কৃপণ এবং আখেরাতে অবিশ্বাসী। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। এবং সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ প্রদান করে না। [1]
[1] এ কর্মও তারাই করবে, যাদের মধ্যে উক্ত গুণসমূহ বিদ্যমান থাকবে। নচেৎ এও এতীমের মত মিসকীনদেরকেও রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. কাজেই দুর্ভোগ সে সালাত আদায়কারীদের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৪। সুতরাং পরিতাপ সেই নামায আদায়কারীদের জন্য;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫। যারা তাদের নামাযে অমনোযোগী। [1]
[1] নামাযে অমনোযোগী বা উদাসীন বলে ঐ সমস্ত লোকদেরকে বোঝানো হয়েছে, যারা মোটেই নাযায পড়ে না অথবা প্রথম দিকে পড়ত অতঃপর তাদের মধ্যে অলসতা এসে পড়েছে অথবা নামায যথাসময়ে আদায় করে না; বরং যখন মন চায় তখন পড়ে নেয় অথবা দেরী করে আদায় করতে অভ্যাসী হয় অথবা বিনয়-নম্রতার (ও একাগ্রতার) সাথে নামায পড়ে না ইত্যাদি। এই সমস্ত প্রকার ত্রুটি ঐ অর্থের শামিল। অতএব নামাযের ব্যাপারে উক্ত সকল আচরণ হতে বাঁচা প্রয়োজন। এখানে এ উল্লেখ করাতে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এ সমস্ত বদ অভ্যাসে অভ্যস্ত ঐ সব লোকই হতে পারে, যারা আখেরাতের হিসাব ও প্রতিদানের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে না। এ জন্যই মুনাফিকদের একটি গুণ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘‘যখন তারা (মুনাফিকরা) নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে, কেবল লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে।’’(সূরা নিসা ১৪২ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে(১),
(১) এটা মুনাফিকদের অবস্থা। তারা লোক দেখানোর জন্যে এবং মুসলিম হওয়ার দাবী সপ্রমাণ করার জন্য সালাত পড়ে। কিন্তু সালাত যে ফরয, এ বিষয়ে তারা বিশ্বাসী নয়। ফলে সময়ের প্রতিও লক্ষ্য রাখে না এবং আসল সালাতেরও খেয়াল রাখে না। লোক দেখানোর জায়গা হলে পড়ে, নতুবা ছেড়ে দেয়। আর সালাত আদায় করলেও এর ওয়াজিবসমূহ, শর্ত ইত্যাদি পূর্ণ করে না। আসল সালাতের প্রতিই ভ্রুক্ষেপ না করা মুনাফিকদের অভ্যাস এবং سَاهُون শব্দের আসল অর্থ তাই। সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ভ্ৰান্তি হয়ে যাওয়ার কথা এখানে বোঝানো হয়নি। কেননা, এজন্যে জাহান্নামের শাস্তি হতে পারে না। এটা উদ্দেশ্য হলে (عَنْ صَلَاتِهِمْ) এর পরিবর্তে (فِىْ صَلَاتِهِمْ) বলা হত। সহীহ হাদীসসমূহে প্রমাণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনেও একাধিকবার সালাতের মধ্যে ভুলচুক হয়ে গিয়েছিল। [কুরতুবী, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। যারা লোক প্রদর্শন (করে তা) করে, [1]
[1] অর্থাৎ, এই শ্রেণীর লোকেদের নিদর্শন এই যে, তারা লোক মাঝে থাকলে নামায পড়ে নেয়; নচেৎ তারা নামায পড়ার প্রয়োজনই বোধ করে না। অর্থাৎ, তারা কেবলমাত্র লোক প্রদর্শন করার জন্যই নামায পড়ে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*ماعون গৃহস্থালীর ছোট-খাট সামগ্রী। যেমন, পানি, লবণ, দিয়াশলাই, বালতি ইত্যাদি।
৭. এবং মাউন(১) প্ৰদান করতে বিরত থাকে।
(১) ماعون শব্দের অর্থ অধিকাংশ মুফাসসিরদের নিকট যৎকিঞ্চিৎ ও সামান্য উপকারী বস্তু। মূলত: মাউন ছোট ও সামান্য পরিমাণ জিনিসকে বলা হয়। এমন ধরনের জিনিস যা লোকদের কোন কাজে লাগে বা এর থেকে তারা ফায়দা অর্জন করতে পারে। অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে, সাধারণত প্রতিবেশীরা একজন আর একজনের কাছ সাধারণ মানবতারূপে গণ্য হয়; যথা কুড়াল, কোদাল অথবা রান্না-বান্নার পাত্ৰ এ সবই মাউনের অন্তর্ভুক্ত। প্রয়োজনে এসব জিনিস প্রতিবেশীর কাছ থেকে চেয়ে নেয়া দোষণীয় মনে করা হয় না। কেউ এগুলো দিতে অস্বীকৃত হলে তাকে বড় কৃপণ ও নীচ মনে করা হয়। আবার কারও কারও মতে আলোচ্য আয়াতে ماعون বলে যাকাত বোঝানো হয়েছে। যাকাতকে ماعون বলার কারণ সম্ভবত এই যে, যাকাত পরিমাণে আসল অর্থের তুলনায় খুবই কম। অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের এক ভাগ-হয়ে থাকে। ব্যবহার্য জিনিসপত্র অপরকে দেয়া খুব সওয়াবের কাজ এবং মানবতার দিক দিয়ে জরুরি। কোন কোন হাদীসে ماعون এর তাফসীর ব্যবহার্য জিনিস, যেমন: বালতি, পাত্র ইত্যাদি করা হয়েছে। [আবু দাউদ: ১৬৫৭] [আদওয়াউল বায়ান, মুয়াস্সার, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৭। এবং গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছোটখাট সাহায্য দানে বিরত থাকে। [1]
[1] مَعن সামান্য বা ছোটখাট কিছুকে বোঝায়। কোন কোন উলামাগণ مَاعُون এর অর্থ যাকাত নিয়েছেন। কেননা, যাকাত আসল মালের তুলনায় খুবই সামান্য পরিমাণ (শতকরা আড়াই শতাংশ মাত্র) তাই। আর কেউ কেউ এ থেকে সাংসারিক ছোটখাট আসবাব-পত্র অর্থ করেছেন, যা প্রতিবেশীরা সাধারণতঃ একে অপরের কাছে ধার হিসাবে চেয়ে থাকে। তার মানে হল যে, গৃহস্থালী ব্যবহার্য জিনিসপত্র অপরকে ধার দেওয়া এবং তাতে কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ না করা একটি সদগুণ। আর এর বিপরীত কৃপণতা ও কুণ্ঠা প্রকাশ করা হল পরকালকে অবিশ্বাসকারীদেরই অভ্যাস।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান