-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. ত্বা-সীন; এগুলো আল-কুরআন এবং সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত(১);
(১) “সুস্পষ্ট কিতাবের” একটি অর্থ হচ্ছে, এ কিতাবটি নিজের শিক্ষা, বিধান ও নিদের্শগুলো একেবারে দ্ব্যর্থহীন পদ্ধতিতে বর্ণনা করে দেয়। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এটি যে আল্লাহর কিতাব সে ব্যাপারটি সুস্পষ্ট। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) ত্ব-সীন; এগুলি কুরআন ও সুস্পষ্ট গ্রন্থের বাক্য;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. পথনির্দেশ ও সুসংবাদ মুমিনদের জন্য।(১)
(১) অর্থাৎ এ আয়াতগুলো হচ্ছে পথনির্দেশ ও সুসংবাদ। যার অর্থ “পথনির্দেশকারী” ও “সুসংবাদদানকারী”। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) বিশ্বাসীদের জন্য (তা) পথ-নির্দেশক এবং সুসংবাদ বিশেষ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।(১)
(১) অর্থাৎ কুরআন মজীদের এ আয়াতগুলো কেবলমাত্রএমন সবলোকদেরই পথনির্দেশনা দেয় এবং শুভ পরিণামের সুসংবাদও একমাত্রএমন সবলোকদের দান করে যাদের মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, তারা ঈমান আনে এবং সে ঈমান অনুসারে আমল করে। ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে তারা কুরআন ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত গ্রহণ করে। এক আল্লাহকে নিজেদের একমাত্র উপাস্য ও রব বলে মেনে নেয়। কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে স্বীকার করে নেয়। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য নবী বলে গ্রহণ করে। আর আমল করার অর্থ হচ্ছে, তারা এ বিষয়গুলো কেবলমাত্র মেনে নিয়েই বসে থাকে না বরং কার্যত এগুলোর অনুসরণ ও আনুগত্য করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তাই তারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়। দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে, তারা ঈমান রাখে যে, এ জীবনের পর দ্বিতীয় আর একটি জীবন আছে, সেখানে আমাদের নিজেদের কাজের হিসেব দিতে এবং প্রত্যেকটি কাজের প্রতিদান লাভ করতে হবে। এ দু'টি শর্ত যারা পূর্ণ করবে। কুরআন মজীদের আয়াত তাদেরকেই দুনিয়ায় সত্য সরল পথের সন্ধান দেবে। [ইবন কাসীর]
এ পথের প্রতিটি পর্যায়ে তাদেরকে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য বুঝিয়ে দেবে। তাদেরকে ভুল পথের দিকে অগ্রসর হবার হাত থেকে রক্ষা করবে। তাদেরকে এ নিশ্চয়তা দান করবে যে, সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন করার ফল দুনিয়ায় যাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত তারই বদৌলতে চিরন্তন সফলতা তারাই অর্জন করবে এবং তারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সৌভাগ্য লাভে সক্ষম হবে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “বলুন, এটি মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও আরোগ্য। আর যারা ঈমান আনে না তাদের কানে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন এদের (অন্তরের) উপর অন্ধত্ব তৈরী করবে।” [সূরা ফুসসিলাত: ৪৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) যারা যথাযথভাবে নামায পড়ে, যাকাত দেয় ও পরলোকে নিশ্চিত বিশ্বাসী। [1]
[1] এ বিষয়টি বিভিন্ন স্থানে কয়েকবার আলোচিত হয়েছে যে, কুরআন কারীম এমনিতে বিশ্ব মানবতার পথ নির্দেশিকা হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তা হতে সত্যিকার পথ ওরাই পায়, যারা পথ অন্বেষণকারী। যারা নিজেদের অন্তর ও মস্তিষ্কর জানালাগুলি সত্য দেখার ও শোনার জন্য বন্ধ রাখে বা যাদের অন্তরাত্মা পাপের অন্ধকারে নিমজ্জিত, তাদেরকে কুরআন কিরূপে পথের দিশা দিতে পারে? এর উদাহরণ সেই (ঘুমন্ত বা) অন্ধ ব্যক্তিদের ন্যায় যারা সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত; যদিও সূর্য সারা বিশ্বকে আলোকিত করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. নিশ্চয় যারা আখেরাতে ঈমান আনে না, তাদের জন্য তাদের কাজকে আমরা শোভন করেছি(১), ফলে তারা বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়;
(১) এখানে বলা হয়েছে যে, যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না আমরা তাদের দৃষ্টিতে তাদের কুকর্মকে শোভন করে দিয়েছি। ফলে তারা সেগুলোকে উত্তম মনে করে পথ ভ্ৰষ্টতায় লিপ্ত থাকে। এটা এ জন্যই যে, তারা আখেরাতকে অস্বীকার করেছে। [ইবন কাসীর] সুতরাং আখেরাতকে অস্বীকার করাই তাদের জন্য যাবতীয় পতনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হলো। এক গুনাহ অন্য গুনাহর কারণ হয়। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি তেমনি আমরাও তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্ৰান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেব।” [সূরা আল-আনআমঃ ১১০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) নিশ্চয় যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না, তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকে আমি শোভন করেছি, [1] ফলে ওরা বিভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ায়; [2]
[1] এটি পাপের পরিণাম ও তার বদলা যে, পাপ তাদেরকে ভাল মনে হয়। আর এর মূল কারণ হল পরকালে অবিশ্বাস। শোভন করার সম্পর্ক আল্লাহর দিকে করা হয়েছে, যেহেতু প্রতিটি জিনিস তার ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। তাছাড়া এর মধ্যে আল্লাহর সেই নীতি কার্যকর থাকে, যাতে তিনি সৎ লোকদের জন্য পুণ্যের এবং অসৎ লোকদের জন্য পাপের রাস্তা সহজ করে থাকেন। কিন্তু এই উভয়ের মধ্যে একটি রাস্তা বেছে নেওয়া মানুষের নিজের এখতিয়ারভুক্ত।
[2] অর্থাৎ, ভ্রষ্টতার যে রাস্তায় তারা চলতে থাকে তার বাস্তবিকতা তাদের অজানা থাকে এবং সঠিক রাস্তার দিশা পায় না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. এদেরই জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট শাস্তি এবং এরাই আখেরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্ৰস্ত।(১)
(১) এ নিকৃষ্ট শাস্তিটি কিভাবে, কখনও কোথায় হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। কারণ তা ব্যাপক, দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট শাস্তি। [ইবন কাসীর] এ দুনিয়ায়ও বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও জাতি নানাভাবে এ শাস্তি লাভ করে থাকে। এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় একেবারে মৃত্যুর দ্বারদেশেও যালেমরা এর একটি অংশ লাভ করে। মৃত্যুর পরে “আলমে বরযাখে” ও (মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পূর্ববর্তী সময়) মানুষ এর মুখোমুখি হয়। আর তারপর হাশরের ময়দানে এর একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে এবং তারপর এক জায়গায় গিয়ে তা আর কোনদিন শেষ হবে না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) এদের জন্য আছে নিকৃষ্ট শাস্তি এবং এরাই পরকালে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. আর নিশ্চয় আপনি আল-কুরআন প্রাপ্ত হচ্ছেন প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট থেকে।(১)
(১) অর্থাৎ এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন উড়ো কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের আন্দাজ অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়। বরং এক জ্ঞানবাদ প্রাজ্ঞ সত্তা এগুলো নাযিল করেছেন। যাঁর সমস্ত আদেশ-নিষেধে রয়েছে প্রাজ্ঞতা। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত, অনুরূপ ছোট বড় সবকিছু সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তাঁর জ্ঞান সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করে। তাঁর পাঠানো যাবতীয় সংবাদ কেবল সত্য আর সত্য। তাঁর দেয়া যাবতীয় বিধান ইনসাফপূর্ণ ও ন্যায়ানুগ। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রব-এর বাণী পরিপূর্ণ।” [সূরা আল-আন’আম: ১১৫] [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) নিশ্চয় তোমাকে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে কুরআন দেওয়া হচ্ছে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. স্মরণ করুন, যখন মূসা তার পরিবারের লোকদেরকে বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি আগুন দেখেছি, অচিরেই আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য কোন খবর আনিব অথবা তোমাদের জন্য আনব জলন্ত অঙ্গার, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।(১)
(১) মূসা আলাইহিস সালাম এ স্থলে দুটি প্রয়োজনের সম্মুখীন হন। এক, হারানো পথ জিজ্ঞাসা। দুই, আগুন থেকে উত্তাপ সংগ্ৰহ। কেননা, রাত্রি ছিল কনকনে শীতের। [বাগভী]] এ ব্যাপারে আরও আলোচনা পূর্বে সূরা ত্বা-হা এর ১০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় গত হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, ‘আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য কোন খবর আনতে পারব, অথবা তোমাদের জন্য আনতে পারব জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড; যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’ [1]
[1] এটি ঐ সময়কার ঘটনা যখন মূসা (আঃ) নিজ স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফিরছিলেন। রাতের অন্ধকারে রাস্তা নির্ণয় করতে পারছিলেন না। আর শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য আগুনেরও প্রয়োজন ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. অতঃপর তিনি যখন সেটার কাছে আসলেন(১), তখন ঘোষিত হল, বরকতময়, যা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যা আছে এর চারপাশে(২), আর সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ পবিত্র ও মহিমান্বিত!(৩)
(১) যখন তিনি গাছের কাছে আসলেন, তখন তিনি ভয়ানক ও আশ্চর্যজনক এক দৃশ্য দেখতে পেলেন, তিনি সেখানে দেখতে পেলেন সবুজ গাছে আগুন জলছে। আর সে আগুনে শুধু আলোর তীব্ৰতাই প্রকাশ পাচ্ছে। অপরদিকে গাছটিতেও সবুজতা ও সজীবতা বেড়েই চলেছে। তারপর তিনি তার মাথা উপরের দিকে উঠালেন, দেখলেন সে নূর আকাশ পর্যন্ত ছেয়ে আছে। ইবন আব্বাস বলেন, এটা কোন আগুন ছিল না বরং জ্বলে উঠার মত আলো ছিল। তখন মূসা আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত ও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর তখনই বলা হল, যিনি আগুনে আছেন তিনি বরকতময় হোন। ইবন আব্বাস বলেন, বরকতময় হওয়ার অর্থ, পবিত্র ও মহিয়ান হওয়া। আর তার পাশে যারা আছে তারা হচ্ছেন ফিরিশতা। [ইবন কাসীর]
(২) এখানে আল্লাহর বাণীঃ “বরকতপূর্ণ হয়েছে, যা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যা আছে এর চারপাশে” এর মধ্যে আলোতে কে আছে এবং আলোর চারপাশে কি আছে তা নির্ধারণ করার ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে।
এক. এখানে ‘অগ্নিতে যা আছে তা দ্বারা মূসা আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। আর তখন এর চারপাশে যা আছে তা বলে আশেপাশে উপস্থিত ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হবে। [বাগভী; কুরতুবী]
দুই. কোন কোন মুফাসসির এখানে ‘অগ্নিতে যা আছে’ বলে ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন এবং ‘এর চারপাশে যা আছে’ তা বলে মূসা আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। [বাগভী]
তিন. ‘এখানে অগ্নিতে যা আছে’ তা বলে আল্লাহর নূরকে বুঝানো হয়েছে, আর ‘এর চারপাশে যা আছে’ তা বলে ফেরেশতা [ইবন কাসীর] অথবা মূসা বা সেই পবিত্ৰ উপত্যকা অথবা সে গাছ সবই উদ্দেশ্য হতে পারে। আর এ মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। তবে কোন অবস্থাতেই এখানে ‘অগ্নিতে যা আছে’ দ্বারা স্বয়ং আল্লাহ তা'আলার পবিত্র ও মহান সত্তা বুঝানো হবে না। কেননা স্রষ্টা তাঁর আরশে রয়েছেন। কোন সৃষ্টিবস্তুর মধ্যে স্রষ্টার অনুপ্রবেশ হতে পারে না। এটা তাওহীদের পরিপন্থী কথা। সুতরাং রাব্বুল আলামিনের নূরের আলোর দ্বারাই সে গাছ কোন ভাবে আলোকিত হয়েছিল। তবে সরাসরি কোন আলো কোথায় পতিত হলে তা ভষ্ম হয়ে যাবে।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ ঘুমান না, ঘুমানো তার জন্য সমীচীনও নয়, ইনসাফের পাল্লা বাড়ান এবং কমান, দিবাভাগের আগেই রাতের আমল তার কাছে উত্থিত হয় অনুরূপভাবে রাত্রি আগমণের আগেই তার কাছে দিবাভাগের আমল উত্থিত হয়। তাঁর পর্দা হলো নূরের। যদি তিনি তার পর্দাকে অপসারণ করেন তবে তা তার চেহারার আলো দৃষ্টিশক্তি যতদূর যায় ততদুর জ্বলিয়ে ভষ্ম করে দেবে।” [সহীহ মুসলিমঃ ১৭৯]
(৩) অর্থাৎ তিনি আরশের উপর থেকেও যমীনে এক গাছের উপরে তাঁর আলো ফেলে সেখান থেকে তাঁর বান্দা মূসার সাথে কথা বলছেন। তিনি অত্যন্ত মহান ও পবিত্র, তিনি যা ইচ্ছে করতে পারেন। তাঁর সত্তা, গুণাগুণ ও কার্যধারা কোন কিছুই কোন সৃষ্টজীবের মত হতে পারে না। তাঁর সৃষ্ট কোন কিছু তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না। আসমান ও যমীন তাঁকে ঘিরে রাখতে পারে না। তিনি সুউচ্চ, সুমহান, সমস্ত সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক। [ইবন কাসীর]
তিনি এ গাছের উপর থেকে কথা বললেও এটা যেন কেউ মনে না করে বসে যে, তিনি সৃষ্ট কোন কিছুর ভিতরে প্রবেশ করেছেন। এ আয়াতাংশ বলার উদ্দেশ্য সম্ভবত এও হতে পারে যে, দুনিয়াতে অধিকাংশ শির্ক সংঘটিত হয়েছে আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। তাঁর কোন দৃষ্টি কোন কিছুর উপর পতিত হলে মানুষ সেটাকেই ইলাহ মনে করে পুজা করতে আরম্ভ করে। যদি আল্লাহকে সঠিকভাবে তাঁর মর্যাদা, সম্মান ও প্রতিপত্তি দেয়া হতো তা হলে কেউ শির্কে লিপ্ত হতো না। তাই এখানে তাঁকে এ ধরণের কাজ থেকে মুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) অতঃপর সে যখন আগুনের নিকট এল তখন তাকে ডেকে বলা হল, ‘যে (এই) আগুনে এবং যারা ওর চারিপাশে আছে তারা বরকতপ্রাপ্ত, [1] বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমার্নিত।[2]
[1] দূর হতে যেখানে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে পৌঁঁছলেন অর্থাৎ, ত্বুর পাহাড়ে এবং দেখলেন এক সবুজ গাছ হতে আগুনের শিখা উপরে উঠছে। এটি বাস্তবে আগুন ছিল না; বরং আল্লাহর নূর ছিল। যার আলো আগুনের মত মনে হচ্ছিল। مَنْ فِي النَّار (যে আগুনে আছে) বলতে মহান আল্লাহ। আর نار (আগুন) বলতে তাঁর নূরকে বুঝানো হয়েছে। আর وَمَنْ حَوْلَهَا (যারা ওর চারিপাশে আছে) বলতে মূসা (আঃ) ও ফিরিশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে মহান আল্লাহর পর্দাকে نور (জ্যোতি) আর এক অন্য বর্ণনায় نار (আগুন) বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে যে, তিনি যদি নিজেকে পর্দা থেকে প্রকাশ করে দেন তাহলে তাঁর প্রতাপ সমস্ত সৃষ্টিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।
(মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়, বিস্তারিত দেখার জন্য দ্রষ্টব্যঃ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ ৫/৪৬৪- ৪৫৯)
[2] এখানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার অর্থ এই যে, ঐ অদৃশ্য ডাক হতে কেউ যেন এটা মনে না করে যে, আল্লাহ ঐ গাছ বা আগুনে প্রবেশ করে আছেন; যেমন অনেক মুশরিকরা ধারণা করে থাকে। বরং এটি সত্য দর্শনের একটি পদ্ধতি যার দ্বারা প্রত্যেক নবীকে নবুঅতের শুরুতে সম্মানিত করা হয়। কখনো ফিরিশতার মাধ্যমে, আবার কখনো বা স্বয়ং আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করে এবং সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে; যেমন, এখানে মূসা (আঃ)-এর সাথে ঘটেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. হে মূসা! নিশ্চয় আমি আল্লাহ!(১) পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়,
(১) মূসা আলাইহিস সালামের এ ঘটনা। কুরআনের অন্যান্য স্থানেও বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ত্বা-হায় বলা হয়েছে, (إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى ٭ وَأَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوحَىٰ ٭ إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي) আমিই আপনার রব, অতএব আপনার পাদুকা খুলে ফেলুন, কারণ আপনি পবিত্ৰ ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছেন। এবং আমি আপনাকে মনোনীত করেছি। অতএব যা ওহী পাঠানো হচ্ছে আপনি তা মনোযোগের সাথে শুনেন। আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ‘ইবাদাত করুন এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কয়েম করুন। [সূরা ত্বা-হাঃ ১২–১৪] অনুরূপভাবে সূরা আল-কাসাসে বলা হয়েছে, (فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِنْ شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَنْ يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ) “যখন মূসা আগুনের কাছে পৌছলেন তখন উপত্যকার দক্ষিণ পাশে পবিত্র ভূমির উপর অবস্থিত একটি গাছের দিক থেকে তাঁকে ডেকে বলা হল, হে মূসা! আমিই আল্লাহ, সৃষ্টিকুলের রব; [সূরা আল-কাসাসঃ ৩০]
এ সূরাত্রয়ের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্নরূপ হলেও বিষয়বস্তু প্রায় একই। তা এই যে, সে রাত্রিতে আল্লাহ্ তা'আলা তুর পাহাড়ের কাছে এক গাছে মূসা আলাইহিস সালামকে তাঁর আলো দেখালেন। আয়াত থেকে এটাই জানা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তাকে জানিয়ে দিলেন, যিনি তাকে সম্বোধন করছেন, তার সাথে আলাপ করছেন, তিনি তার একমাত্র প্রবল পরাক্রমশালী রব, যিনি সবকিছুকে তাঁর ক্ষমতা, প্রভাব, ও শক্তি দিয়ে অধীন করে রেখেছেন। তিনি তার প্রতিটি কাজ ও কথা প্রজ্ঞার সাথে সম্পন্ন করেন। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে মূসা! আমি তো আল্লাহ, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [1]
[1] গাছ হতে ডাক আসা মূসা (আঃ)-এর জন্য আশ্চর্যজনক ছিল। আল্লাহ তাআলা বললেন, মূসা! আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আমিই আল্লাহ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর আপনি আপনার লাঠি নিক্ষেপ করুন। তারপর যখন তিনি সেটাকে সাপের মত ছুটোছুটি করতে দেখলেন তখন তিনি পিছনের দিকে ছুটতে লাগলেন(১) এবং ফিরেও তাকালেন না। হে মূসা! ভীত হবেন না, নিশ্চয় আমি এমন যে, আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না(২);
(১) সূরা আল-আ’রাফে ও সূরা আশ-শু'আরাতে এ জন্য (ثعبان) (অজগর) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে একে جانّ শব্দের মাধ্যমে প্ৰকাশ করা হচ্ছে। “জান” শব্দটি বলা হয় ছোট সাপ অৰ্থে। এখানে “জান” শব্দ ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এই যে, দৈহিক দিক দিয়ে সাপটি ছিল অজগর। কিন্তু তার চলার দ্রুততা ছিল ছোট সাপদের মতো। সূরা ত্বা-হা-য় (حَيَّةٌ تَسْعَىٰ) (ছুটন্ত সাপ) এর মধ্যেও এ অর্থই বর্ণনা করা হয়েছে।
(২) অর্থাৎ আমার কাছে রাসূলদের ক্ষতি হবার কোন ভয় নেই। রিসালাতের মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত করার জন্য যখন আমি কাউকে নিজের কাছে ডেকে আনি তখন আমি নিজেই তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে থাকি। [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন সে ওকে সাপের মত ছুটাছুটি করতে দেখল তখন পিছনে না তাকিয়ে সে বিপরীত দিকে ছুটতে লাগল। (আমি বললাম,) ‘হে মূসা! ভয় পেয়ো না; [1] আমার কাছে তো রসূলরা ভয় পায় না।
[1] এখান হতে জানা যায় যে, নবীরা অদৃশ্যের (গায়বের) সংবাদ জানতেন না। তাছাড়া মূসা (আঃ) নিজের হাতের লাঠি হতে ভয় পেতেন না। দ্বিতীয়তঃ প্রকৃতিগত ভয় নবীদেরও হয় যেহেতু তাঁরাও ছিলেন মানুষ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান