-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) এগুলি সুস্পষ্ট গ্রন্থের বাক্য ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আমরা আপনার কাছে মূসা ও ফিরআউনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বিবৃত করছি(১), এমন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে যারা ঈমান আনে।(২)
(১) তুলনামূলক অধ্যায়নের জন্য দেখুন: সূরা আল বাকারাহঃ ৬০–৭২, সূরা আল-আরাফঃ ১০৩–১৭৪, সূরা ইউনুসঃ ৭৫–৯২, সূরা হূদঃ ৯৬–১১০, সূরা আল-ইসরা ১০১–১০৪, সূরা মারয়ামঃ ৫১–৫২, সূরা ত্বা-হাঃ ৯–৯৯, সূরা আল মুমিনুনঃ ৪৫–৫০, সূরা আশ শু'আরাঃ ১০–৬৮, সূরা আন নামলঃ ৭–১৪, সূরা আল-আনকাবূতঃ ৩৯–৪০,সূরা আল-গাফিরঃ ২৩–৪৬, সূরা আয যুখরুফঃ ৪৬–৫৬, সূরা আদ দুখানঃ ১৭–৩৩, সূরা আয যারিয়াতঃ ৩৮–৪০ এবং সূরা আন-নাযিআতঃ ১৫–২৬ আয়াতসমূহ।
(২) অর্থাৎ যারা কথা মেনে নিতে প্ৰস্তুত নয় তাদেরকে কথা শুনানো তো অর্থহীন। তাই যারা মনের দুয়ারে একগুয়েমীর তালা বুলিয়ে রাখে না, এ আলোচনায় সেই মুমিনদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) আমি তোমার নিকট বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে মূসা ও ফিরআউনের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বিবৃত করছি। [1]
[1] মূসা (আঃ)-এর বৃত্তান্ত-বিবরণ এই কথারই প্রমাণ করে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন আল্লাহর সত্য রসূল। কারণ, আল্লাহর অহী ছাড়া বহু শতাব্দী পূর্বের ঘটনা হুবহু যেরূপ ঘটেছিল সেরূপ বর্ণনা করা অসম্ভব। তা সত্ত্বেও এর দ্বারা উপকার ঈমানদার ব্যক্তিদেরই হবে। কারণ, তারাই নবী (সাঃ)-এর কথা বিশ্বাস করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. নিশ্চয় ফিরআউন যমীনের বুকে অহংকারী হয়েছিল(১) এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত থাকতে দিত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।(২)
(১) মূলে علا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, সে উদ্বত হয়ে মাথা উঠিয়েছে, বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করেছে, নিজের আসল মর্যাদা অর্থাৎ দাসত্বের স্থান থেকে উঠে স্বেচ্ছাচারী ও প্রভুর রূপ ধারণ করেছে, অধীন হয়ে থাকার পরিবর্তে প্রবল হয়ে গেছে এবং স্বৈরাচারী ও অহংকারী হয়ে যুলুম করতে শুরু করেছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর] এখানে যমীন বলে, মিসর বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
(২) অর্থাৎ তার কাছে দেশের সকল অধিবাসী সমান থাকেনি এবং সবাইকে সমান অধিকারও দেয়া হয়নি। বরং সে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যার মাধ্যমে রাজ্যের অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হয়। একদলকে সুযোগ সুবিধা ও বিশেষ অধিকার দিয়ে শাসক দলে পরিণত করা হয় এবং অন্যদলকে অধীন করে পদানত, পর্যুদস্ত, নিষ্পেষিত ও ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলকে হেয় করে রেখেছিল। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) ফিরআউন আপন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল[1] এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে[2] ওদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল;[3] সে ওদের পুত্রদেরকে হত্যা করত[4] এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিঃসন্দেহে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।
[1] যুলুম ও অত্যাচারের বাজার গরম করে রেখেছিল, আর সে নিজেকে বড় উপাস্য বলে ঘোষণা করেছিল।
[2] যাদের উপর ভিন্ন ভিন্ন কাজ ও কর্তব্য ন্যস্ত ছিল।
[3] এ থেকে বানী ইস্রাঈলদেরকে বুঝানো হয়েছে; যারা ছিল সে কালের সর্বোত্তম জাতি। কিন্তু আল্লাহর পরীক্ষা স্বরূপ তারা ফিরআউনের দাসে ও তার অত্যাচারের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল।
[4] যার কারণ হল, কিছু জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে, বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে এমন এক সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে, যার হাতে ফিরআউন ও তার রাজত্ব ধ্বংস হবে। যার প্রতিকার ছিল তার নিকট এই যে, তাদের মধ্যে প্রতিটি নবজাত পুত্র-সন্তানকে হত্যা করে দেওয়া হবে। অথচ সে নির্বোধ এ চিন্তা করেনি যে, যদি জ্যোতিষী সত্যবাদী হয়, তাহলে তা হবেই; যদিও সে সন্তানদের হত্যা করতে থাকে। আর যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে সন্তান হত্যার আদেশের কোনই প্রয়োজন ছিল না। (ফাতহুল কাদীর) কেউ কেউ বলেন, ইবরাহীম (আঃ) হতে এ সুসংবাদ প্রচার হয়ে আসছিল যে, তাঁরই বংশে এক সন্তান জন্ম-গ্রহণ করবে, যার হাতে মিসর রাজ্য ধ্বংস হবে। কিবত্বীরা এ সংবাদ বানী ইস্রাঈলদের নিকট হতে শোনার পর তা ফিরআউনের নিকট পৌঁছে দেয়। যার জন্য সে বানী ইস্রাঈলদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করতে শুরু করে। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. আর আমরা ইচ্ছে করলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী করতে;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা ও দেশের উত্তরাধিকারী করতে ইচ্ছা করলাম। [1]
[1] অতঃপর এই রকমই হল। মহান আল্লাহ সেই দুর্বল ও দাস জাতিকে পূর্ব পশ্চিমের মালিক বানিয়ে দিলেন। (সূরা আ’রাফ ১৩৭ আয়াত) সেই সঙ্গে তাদেরকে ধর্মীয় নেতা ও ইমাম বানিয়ে দিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. আর যমীনে তাদেরকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে, আর ফিরআউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তারা সে দূর্বল দলের কাছ থেকে আশংকা করত।(১)
(১) এ আয়াতে ফিরআউনী কৌশলের শুধু ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত হওয়ার কথাই নয়; বরং ফিরআউন ও তার পরিষদবৰ্গকে চরম বোকা ও অন্ধ বানানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে বালকের জন্মরোধ করতে বনী ইসরাঈলের অসংখ্য নবজাতককে হত্যা করেছিল সে বালককে আল্লাহ তা'আলা এই ফিরআউনের ঘরে তারই হাতে লালনপালন করালেন এবং সে বালকের জননীর মনতুষ্টির জন্যে তারই কোলে বিস্ময়কর পন্থায় পৌছে দিলেন। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) ইচ্ছা করলাম দেশে তাদেরকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে[1] এবং ফিরআউন হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তাদের নিকট হতে ওরা আশঙ্কা করত। [2]
[1] এখানে ‘দেশ’ বলতে শাম দেশকে বুঝানো হয়েছে; যেখানে তারা কিনআনীদের দেশের উত্তরাধিকারী হল। কারণ, বানী ইস্রাঈলদের মিসর হতে বের হবার পর পুনরায় সেখানে ফিরে যায়নি। والله أعلم
[2] অর্থাৎ, তাদের যে আশংকা ছিল যে, একজন ইস্রাঈলীর হাতে ফিরআউন, তার দেশ ও তার সৈন্য-সামন্ত সব ধ্বংস হবে, আমি তাদের সেই আশংকাকে সত্যে পরিণত করলাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর মূসা-জননীর প্রতি আমরা নির্দেশ দিলাম(১), ‘তাকে দুধ পান করাও। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশংকা করবে, তখন একে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং ভয় করো না, ফেরেশানও হয়ো না। আমরা অবশ্যই একে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং একে রাসূলদের একজন করব।
(১) বলা হয়েছে, (وَأَوْحَيْنَا) এর মূল হলো, وحي যার শাব্দিক অর্থ হলো, الإعْلَامُ فِى خَفَاءٍ বা গোপনে কোন কিছু জানিয়ে দেয়া। [দেখুন, ফাতহুল বারী: ১/২০৪৪৫] এখানে মূসা-জননীকে আল্লাহ্ তা'আলা যে কোন উপায়ে তাঁর কোন নির্দেশ পৌঁছানোই উদ্দেশ্য। যে অর্থে কুরআনে নবুওয়তের ওহী ব্যবহার হয়েছে সে অর্থের وحى হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) মূসার জননীর কাছে অহী পাঠালাম,[1] শিশুটিকে স্তন্যদান কর। যখন তুমি এর সম্পর্কে কোন আশংকা করবে, তখন একে (নীল) দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না।[2] নিশ্চয় আমি একে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেব[3] এবং একে একজন রসূল করব।
[1] এখানে ‘অহী’ বলতে অন্তরে কোন কথার উদ্রেক করা, অন্তরে ইঙ্গিতে নির্দেশ দেওয়া বা প্রক্ষিপ্ত করা। ‘অহী’ বলতে সেই অহী বুঝানো হয়নি, যা জিবরীল ফিরিশতা দ্বারা নবী-রসূলদের নিকট অবতীর্ণ হয়। আর যদি ফিরিশতা দ্বারা উক্ত অহী এসেও থাকে তবুও একটি অহী দ্বারা মূসা (আঃ)-এর মায়ের নবী হওয়ার কথা সাব্যস্ত হয় না। কারণ, কখনো কখনো ফিরিশতাদের আগমন সাধারণ মানুষের কাছেও ঘটে থাকে। যেমন, হাদীসে টাক-ওয়ালা, অন্ধ ও কুষ্ঠরোগীর নিকট ফিরিশতাদের আগমন ও কথাবার্তা প্রমাণিত। (বুখারী, মুসলিম)
[2] অর্থাৎ, নদীতে ডুবে অথবা মরে যাওয়ার ভয় করবে না। আর তার বিরহে দুঃখও করবে না।
[3] অর্থাৎ, এমনভাবে যে, তার পরিত্রাণ সুনিশ্চিত। কথিত আছে যে, সন্তান হত্যার এই ধারা যখন অনেক লম্বা হয়ে গেল, তখন ফিরআউন জাতির এই আশংকা বোধ হল, যদি এভাবে বানী ইস্রাঈল জাতিই নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে শ্রমসাধ্য কঠিন কাজগুলি আমাদেরকেই করতে হবে। এই আশংকার কথা তারা ফিরআউনের কাছে ব্যক্ত করলে সে এক নতুন আইন জারী করল যে, এক বছর নবজাত সন্তান হত্যা করা হোক আর এক বছর বাদ দেওয়া হোক। যে বছর সন্তান হত্যা না করার কথা সে বছর হারুন (আঃ)-এর জন্ম হয়। কিন্তু মূসা (আঃ)-এর জন্ম হয় হত্যার বছরে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর পরিত্রাণের ব্যবস্থা এইভাবে করলেন যে, প্রথমতঃ মূসা (আঃ)-এর মায়ের গর্ভাবস্থার লক্ষণ এমনভাবে প্রকাশ করলেন না, যাতে ফিরআউনের ছেড়ে রাখা ধাত্রীদের চোখে পড়ে। সেই জন্য গর্ভের এই মাসগুলি নিশ্চিন্তে পার হয়ে গেল এবং এই ঘটনা সরকারের পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্বশীলদেরও জানা হল না। কিন্তু জন্মের পর তাঁকে হত্যা করার আশংকা বিদ্যমান ছিল। যার সমাধান মহান আল্লাহ নিজেই ইলহামের মাধ্যমে মূসা (আঃ)-এর মাতাকে বুঝিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি তাঁকে একটি কফিনে (কাঠের বাক্সে) পুরে নীল নদে ভাসিয়ে দিলেন। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. তারপর ফির’আউনের লোকজন তাকে কুড়িয়ে নিল। এর পরিণাম তো এ ছিল যে, সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হবে।(১) নি:সন্দেহে ফিরআউন, হামান ও তাদের বাহিনী ছিল অপরাধী।
(১) অর্থাৎ এটা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং এ ছিল তাদের কাজের পরিণাম। যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল। তারা এমন এক শিশুকে উঠাচ্ছিল যার হাতে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ধ্বংস হতে হবে। [দেখুন: কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) অতঃপর ফিরআউনের লোকজন মূসাকে উঠিয়ে নিল।[1] পরিণামে সে ওদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হল।[2] নিশ্চয় ফিরআউন, হামান ও ওদের বাহিনী ছিল অপরাধী। [3]
[1] সেই ব্যাক্তি ভাসতে ভাসতে ফিরআউনের প্রাসাদের নিকট পৌঁছল যা ছিল নদীর উপকূলে। ফিরআউনের কর্মচারীরা সেটি নদী থেকে তুলে নিয়ে এল।
[2] لِيَكُونَ এর লামটি পরিণামবাচক। অর্থাৎ, সে তো তাঁকে নিজ সন্তান ও চক্ষুশীতলতা স্বরূপ গ্রহণ করেছিল; শত্রু মনে করে নয়। কিন্তু তার এই কাজের পরিণাম এই হল যে, সে তার শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াল।
[3] এখানে পূর্বোক্ত কথার কারণ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, মূসা (আঃ) তার শত্রু কেন প্রমাণিত হলেন? কারণ তারা ছিল সকলেই আল্লাহর অবাধ্য ও অপরাধী। আল্লাহ তাআলা শাস্তিস্বরূপ তাদের নিকট পালিত ব্যক্তিকেই তাদের ধ্বংসের কারণ বানালেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. ফিরআউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়ন-প্ৰীতিকর। একে হত্যা করো না, সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে ওরা এর পরিণাম উপলব্ধি করতে পারেনি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) ফিরআউনের স্ত্রী বলল, ‘এ শিশু আমার এবং তোমার নয়ন-প্রীতিকর। তোমরা একে হত্যা করো না।[1] সম্ভবতঃ সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করব।’[2] প্রকৃতপক্ষে ওরা এর পরিণাম বুঝতে পারেনি। [3]
[1] এ কথাটি তখন বলেছিল, যখন কাঠের বাক্সের ভিতর সুন্দর শিশু (মূসা)-কে দেখেছিল। আবার কারো নিকট এটি ঐ সময়ের কথা, যখন মূসা (আঃ) (শৈশবে) ফিরআউনের দাড়ি ধরে টান দিয়েছিলেন। ফলে ফিরআউন তাঁকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিল। (আইসারুত তাফাসীর) ‘‘তোমরা একে হত্যা করো না’’ বহুবচন শব্দ ফিরআউন একা হলেও তার সম্মানার্থে ব্যবহার হয়েছে অথবা সেখানে কিছু তার পরিষদের লোকও থেকে থাকতে পারে, যার জন্য বহুবচন ব্যবহূত হয়েছে।
[2] কারণ ফিরআউন সন্তান হতে বঞ্চিত ছিল।
[3] যে, এ সেই শিশু যাকে আজ সে নিজ সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেছে। যাকে মারার জন্য হাজার হাজার শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর মূসা-জননীর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়েছিল। যাতে সে আস্থাশীল হয় সে জন্য আমরা তার হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিলে সে তার পরিচয় তো প্ৰকাশ করেই দিত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) মূসা-জননীর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়েছিল।[1] যাতে সে আস্থাশীল হয় সেজন্য তার হৃদয়কে আমি সুদৃঢ় করে না দিলে, সে তার পরিচয় তো প্রকাশ করেই দিত। [2]
[1] فَارِغ মানে শূন্য বা খালি। অর্থাৎ, তাঁর অন্তর প্রত্যেক বস্তুর চিন্তা হতে খালি হয়ে গিয়ে শুধুমাত্র মূসার চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েছিল। যাকে অস্থির বা ব্যাকুল হওয়া বলা যেতে পারে।
[2] অর্থাৎ, দুঃখের কারণে এ কথা প্রকাশ করে দিতেন যে, এ শিশু আমার। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর অন্তরকে সুদৃঢ় রাখলেন। সুতরাং তিনি ধৈর্যধারণ করলেন আর বিশ্বাস রাখলেন যে, আল্লাহ মূসাকে সকুশল ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অবশ্যই পূর্ণ হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান