-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. আলিফ-লাম-মীম(১),
(১) এগুলোকে হুরূফে মুকাত্তা’আত বলে। যার আলোচনা সূরা বাকারার প্রথমে চলে গেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১) আলিফ লা-ম মী-ম।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই(১), তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক।(২)
(১) এ আয়াতে তাওহীদের ইতিহাসভিত্তিক প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। যেমন, মনে করুন, কোন একটি বিষয়ে বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও বিভিন্ন সময়ে জন্মগ্রহণকারী সব মানুষ একমত। পূর্বাপর এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে শত শত, এমন কি হাজার হাজার বছরের ব্যবধান। একজনের উক্তি অন্য জনের কাছে পৌছারও কোন উপায় নেই। তা সত্বেও যিনিই আসেন তিনিই যদি পূর্ববর্তীদের মত একই কথা বলেন, একই কর্ম ও একই বিশ্বাসের অনুসারী হন, তবে এমন বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে নিতে মানব-স্বভাব বাধ্য। উদাহরনতঃ আল্লাহ্ তা'আলার তাওহীদের পরিচয় সম্পর্কিত তথ্যাদিসহ সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে পদার্পণ করেন। তার ওফাতের পর তার বংশধরদের মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত এই তথ্যের চর্চা প্রচলিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর এবং আদম সন্তানদের প্রাথমিক কালের আচার-অভ্যাস, সভ্যতাসংস্কৃতি প্রভৃতি সর্ববিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন সূচীত হওয়ার পর নুহ আলাইহিস সালাম আগমন করেন।
তিনিও মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত ঐসব বিষয়ের দিকে দাওয়াত দিতে থাকেন, যেসব বিষয়ের দিকে আদম 'আলাইহিস্ সালাম দাওয়াত দিতেন। অতঃপর সুদীর্ঘকাল অতীতের গর্ভে বিলীন হওয়ার পর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুব আলাইহিমুস সালাম ইরাক ও সিরিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। তারাও হুবহু একই দাওয়াত নিয়ে কর্মক্ষেত্রে অবতরন করেন। এরপর মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালাম এবং তাদের বংশের রাসূলগণ আগমন করেন। তারা সবাই সে একই কালেমায়ে তাওহীদের বাণী প্রচার করেন এবং এ কালেমার প্রতি মানুষজনকে দাওয়াত দিতে থাকেন। এরপরও দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গেলে ঈসা আলাইহিস সালাম সেই একই আহবান নিয়ে আগমন করেন। সবার শেষে খাতামুল-আম্বিয়া মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে দুনিয়াতে আবির্ভূত হন।
মোটকথা, আদম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যত নবী ও রাসূল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাষায় এবং বিভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং সবাই একই বাণী উচ্চারণ করেন। তাদের অধিকাংশেরই পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত হয়নি। তাদের আবির্ভাবকালে গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশনার আমলও ছিল না যে, এক রাসূল অন্য রাসূলের গ্রন্থাদি ও রচনাবলী পাঠ করে তার দাওয়াতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবেন; বরং তাদের একজন অন্যজন থেকে বহুদিন পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। জাগতিক উপকরণাদির মাধ্যমে পূর্ববর্তী রাসূলগণের কোন অবস্থা তাদের জানা থাকারও কথা নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী লাভ করেই তারা পূর্বসুরীদের যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাদেরকে এ দাওয়াত প্রচার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়।
এখন যে ব্যক্তি ইসলাম ও তাওহীদের দাওয়াতের প্রতি মনে মনে কোনরূপ বৈরীভাব পোষণ করে না, সে যদি খোলা মনে সরলভাবে চিন্তা করে, তবে এত বিপুল সংখ্যক নবী-রাসূল বিভিন্ন সময় এক বিষয়ে একমত হওয়াই বিষয়টির সত্যতা নিরূপণের জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু রাসূলগণের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, তাদের সততা ও সাধুতার উচ্চতম মাপকাঠির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে কারো পক্ষে এরূপ বিশ্বাস করা ছাড়া গত্যন্তর নেই যে, তাদের বাণী ষোল আনাই সত্য এবং তাদের দাওয়াতে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেরই মঙ্গল নিহিত। [তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন]
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু'টি আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার ইসমে আযম রয়েছে, এক, (وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ) দুই, সূরা আলে ইমরানের প্রথম দু' আয়াত’। [তিরমিযীঃ ৩৪৭৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক। [1]
[1] حَيٌّ এবং قَيُّومٌ মহান আল্লাহর বিশেষ গুণ। ‘হায়্যুন’এর অর্থ তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু ও ধ্বংস নেই। ‘ক্বায়্যুম’এর অর্থ, তিনি নিখিল বিশ্বের ধারক, সংরক্ষণকারী এবং পর্যবেক্ষক। বিশ্বের সব কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ অথবা তাঁর পুত্র কিংবা তিনের এক মনে করত। সুতরাং তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, ঈসা (আঃ)ও যখন আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েছেন এবং তাঁর জন্মকালও পৃথিবী সৃষ্টির বহুকাল পর। তাহলে তিনি আল্লাহ অথবা তাঁর পুত্র কিভাবে হতে পারেন? যদি তোমাদের বিশ্বাস সঠিক হত, তাহলে সে সৃষ্টি হয়ে তাকে ইলাহী গুণের অধিকারী এবং অনাদি হওয়া উচিত ছিল। অনুরূপ তাঁর উপর মৃত্যু আসাও উচিত নয়, কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন মৃত্যু তাঁকে গ্রাস করবে। আর খ্রিষ্টানদের ধারণা অনুযায়ী তিনি তো মারাই গেছেন। বহু হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহর ইসমে আ’যম (মহান নাম) তিনটি আয়াতে এসেছে। কেউ যদি এই নামের অসীলায় দু’আ করে, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না। এক তো এই সূরা আলে-ইমরানে। দ্বিতীয় আয়াতুল কুরসীতে [اللهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ] এবং তৃতীয় সূরা ত্বাহাতে [وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ] (ইবনে কাসীর-তাফসীর আয়াতুল কুরসী)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. তিনি সত্যসহ আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, পূর্বে যা এসেছে(১) তার সত্যতা প্রতিপন্নকারীরূপে। আর তিনি নাযিল করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জীল।
(১) কাতাদা বলেন এখানে পূর্বে যা এসেছে তা বলা দ্বারা কুরআনের পূর্বে যে সমস্ত কিতাবাদি নাযিল হয়েছে সেগুলোকে বোঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে মুজাহিদ বলেন, এখানে পূর্বে যা এসেছে বলে, পূর্বেকার যাবতীয় কিতাব ও রাসূলকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এই কুরআন পূর্বতন সকল নবী-রাসূল ও যাবতীয় কিতাবের সত্যয়নকারী। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন,[1] যা ওর পূর্বের কিতাবের সমর্থক।
[1] অর্থাৎ, এটা যে আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর কিতাব বলতে কুরআন মাজীদ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. ইতোপূর্বে মানুষের হেদায়াতস্বরূপ(১) আর তিনি ফুরকান নাযিল করেছেন(২)। নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে কুফরী করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। আর আল্লাহ মহা-পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।(৩)
(১) কাতাদা বলেন, এ দুটি আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব। এতে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা। যে এ দুটি থেকে হিদায়াত গ্রহণ করেছে, সত্য বলে বিশ্বাস করেছে এবং সেটা অনুসারে আমল করেছে সে নিরাপত্তা পেয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] সে হিসেবে এটাকে মানুষের হিদায়াতের জন্য নাযিল করা হয়েছে বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার পর এ দুটি গ্রন্থ রহিত হয়ে গেছে, তা থেকে হিদায়াত লাভের আর কোন উপায় নেই।
(২) ওয়াসিলা ইবন আসকা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সহীফাসমূহ রামাদান মাসের প্রথম রাত্রিতে নাযিল হয়েছিল, তাওরাত নাযিল হয়েছিল রামাদান মাসের ছয়দিন অতিবাহিত হওয়ার পর, ইঞ্জল নাযিল হয়েছিল রামাদান মাসের তের রাত্রি পার হওয়ার পর আর ফুরকান নাযিল হয়েছিল রামাদান মাসের চব্বিশ রাত্রি পার হওয়ার পর।” [মুসনাদে আহমাদ ৪/১০৭] কাতাদাহ বলেন, আয়াতে ফুরকান বলে পবিত্র কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর তা নাযিল করে এর মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর হালালকৃত বস্তুকে হালাল এবং হারামকৃত বস্তুকে এর মাধ্যমে হারাম ঘোষণা করেছেন। তাঁর শরীআতকে প্রবর্তন করেছেন। অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কি কি জিনিস ফরয করেছেন তা বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অবাধ্যতা হতে নিষেধ করেছেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
(৩) আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার পরিপূর্ণ শক্তি এবং সর্ববিষয়ে সার্বিক সামর্থ্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি মানুষকে জননীর উদরে তিনটি অন্ধকার স্তরের মাঝে কিরূপ নিপুণভাবে গঠন করেছেন। তাদের আকার-আকৃতি ও বর্ণ বিন্যাসে এমন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন যে, আকৃতি ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে একজনের আকার-আকৃতি অন্যজনের অনুরূপ নয় বিধায়, স্বতন্ত্র পরিচয় দূরূহ হয়ে পড়ে। এহেন সর্বব্যাপী জ্ঞান ও পরিপূর্ণ শক্তি-সামর্থ্যের যুক্তিসঙ্গত দাবী এই যে, ইবাদাত একমাত্র তারই করতে হবে। তিনি ছাড়া আর কারো জ্ঞান ও শক্তি-সামর্থ্য এরূপ নয়। কাজেই অন্য কেউ ইবাদাতের যোগ্যও নয়। [মাআরিফুল কুরআন]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) পূর্বে তিনি মানবজাতিকে সৎপথ প্রদর্শনের জন্য[1] তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি ফুরক্বান (ন্যায়-অন্যায়ের মীমাংসাকারী; কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। [2] নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। বস্তুতঃ আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
[1] ইতিপূর্বে নবীদের উপর যে কিতাবসমূহ নাযিল হয়েছে, এই কিতাব সেগুলোর সত্যায়ন করে। অর্থাৎ, সে কিতাবগুলোতে যে কথাগুলো লিপিবদ্ধ ছিল, তার সত্যায়ন করে এবং তাতে যে সব ভবিষ্যদ্বাণী বর্ণিত হয়েছে, তা সত্য বলে স্বীকার করে। আর এর পরিষ্কার অর্থ হল, কুরআন কারীমও সেই সত্তার পক্ষ হতে অবতীর্ণ, যে সত্তা পূর্বেও বহু কিতাব নাযিল করেছেন। এটা যদি কোন অন্য পক্ষ হতে আসত অথবা মানুষের চেষ্টার ফল হত, তাহলে এর এবং উক্ত কিতাবগুলোর মধ্যে পারস্পরিক মিল থাকার পরিবর্তে অমিলই থাকত।
[2] অর্থাৎ, অবশ্যই তাওরাত এবং ইঞ্জীল সব সব সময়ে মানুষের হিদায়াতের উৎস ছিল। কারণ এগুলোর অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এটাই। এরপর ‘তিনি ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন’ বলে এ কথা পরিষ্কার করে দিলেন যে, তাওরাত ও ইঞ্জীলের যামানা শেষ হয়ে গেছে। এখন তো কুরআন অবতীর্ণ হয়ে গেছে। আর কুরআনই হল ফুরকান এবং সত্য ও মিথ্যা জানার এটাই হল কষ্টিপাথর। এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস না করলে আল্লাহর নিকট কেউ মুসলিম ও মু’মিন হতে পারবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. নিশ্চয় আল্লাহ, আসমান ও যমীনের কোন কিছুই তার কাছে গোপন থাকে না।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছু জানেন। সূরা আল-আন'আমে এ বিষয়টি বিস্তারিত এসেছে, সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, এসব কিছু তিনি যে শুধু জানেন তা-ই নয় বরং তিনি তা এক গ্রন্থে লিখেও রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর অদৃশ্যের চাবি তারই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তার অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুস্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা আল-আন’আম: ৫৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দ্যুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন।(১) তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই; (তিনি) প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(১) কাতাদা বলেন, আল্লাহর শপথ, আমাদের রব তার বান্দাদেরকে মায়ের গর্ভে যেভাবে ইচ্ছা গঠন করতে পারেন। ছেলে বা মেয়ে, কালো বা গৌরবর্ণ, পূর্ণসৃষ্টি অথবা অপূর্ণসৃষ্টি। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। [1] তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[1] সুশ্রী অথবা কুশ্রী, ছেলে অথবা মেয়ে, সৌভাগ্যবান অথবা দুর্ভাগ্যবান এবং পূর্ণাঙ্গ অথবা বিকলাঙ্গ ইত্যাদি বিচিত্রময়তা মায়ের গর্ভে যখন এককভাবে আল্লাহই সৃষ্টি করেন, তখন ঈসা (আঃ) ইলাহ কিভাবে হতে পারেন? তিনি নিজেও তো সৃষ্টির নানা পর্যায় অতিক্রম করে দুনিয়াতে এসেছেন। মহান আল্লাহ তাঁরও সৃষ্টি সম্পাদন করেছেন তাঁর মায়ের গর্ভে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. তিনিই আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন যার কিছু আয়াত ‘মুহকাম’, এগুলো কিতাবের মূল আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ’(১), সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে শুধু তারাই ফেৎনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে(২)। অথচ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর(৩) তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান রাখি, সবই আমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে’(৪); এবং জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা ছাড়া আর কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না।
(১) আয়াতে আল্লাহ তা'আলা কুরআনের সুস্পষ্ট ও অস্পষ্ট আয়াতের কথা উল্লেখ করে একটি সাধারণ মুলনীতি ও নিয়মের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যার দ্বারা অনেক আপত্তি ও বাদানুবাদের অবসান ঘটে। এর ব্যাখ্যা এরূপ, কুরআনুল কারীমে দুই প্রকার আয়াত রয়েছে। এক প্রকারকে মুহকামাত তথা সুস্পষ্ট আয়াত এবং অপর প্রকারকে মুতাশাবিহাত তথা অস্পষ্ট আয়াত বলা হয়।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মুহকাম হচ্ছে, ঐ সব আয়াতগুলো, যা নাসেখ বা রহিতকারী, যাতে আছে হালাল-হারামের বর্ণনা, শরীআতের সীমারেখা, ফরয-ওয়াজিব, ঈমান ও আমলের বিষয়াদির বর্ণনা। পক্ষান্তরে মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হচ্ছে, যা মানসূখ বা রহিত, যাতে উদাহরণ ও এ জাতীয় বিষয়াদি পেশ করা হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
প্রথম প্রকার আয়াতকে আল্লাহ্ তা'আলা ‘উম্মুল কিতাব’ আখ্যা দিয়েছেন। এর অর্থ এই যে, এসব আয়াতই সমগ্র শিক্ষার মূল ভিত্তি। এসব আয়াতের অর্থ যাবতীয় অস্পষ্টতা ও জটিলতামুক্ত।
দ্বিতীয় প্রকার আয়াতে বক্তার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট হওয়ার কারণে এগুলো সম্পর্কে বিশুদ্ধ পন্থা হল, এসব আয়াতকে প্রথম প্রকার আয়াতের আলোকে দেখা। যে আয়াতের অর্থ প্রথম প্রকার আয়াতের বিপক্ষে যায়, তাকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে বক্তার এমন উদ্দেশ্য বুঝতে হবে, যা প্রথম প্রকার আয়াতের বিপক্ষে নয়। উদাহরণতঃ ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে কুরআনের সুস্পষ্ট উক্তি এরূপ (إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ) অর্থাৎ “সে আমার নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দা ছাড়া অন্য কেউ নয়।” [সূরা আয-যুখরুফঃ ৫৯] অন্যত্র বলা হয়েছেঃ (إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ) অর্থাৎ “আল্লাহ্র কাছে ঈসার উদাহরণ হচ্ছে আদমের অনুরূপ আল্লাহ্ তাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে।” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৫৯]
এসব আয়াত এবং এ ধরনের অন্যান্য আয়াত থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তা'আলার মনোনীত এবং তার সৃষ্ট। অতএব তিনি উপাস্য, তিনি আল্লাহর পুত্র-নাসারাদের এসব দাবী সম্পূর্ণ বানোয়াট। তারা যদি كَلِمَةُ الله ‘আল্লাহর কালেমা’ বা رُوْحٌ مِنْهُ ‘তাঁর পক্ষ থেকে রূহ’ শব্দদ্বয় দ্বারা দলীল নেয়ার চেষ্টা করে তখন তাদের বলতে হবে যে, পূর্বে বর্ণিত আয়াতসমূহের আলোকেই এশব্দদ্বয়কে বুঝতে হবে। সে আলোকে উপরোক্ত كَلِمَةُ الله ও رُوْحٌ مِنْهُ শব্দদ্বয় সম্পর্কে এটাই বলতে হয় যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্ট হয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে পাঠানো একটি রূহ মাত্র।
(২) বলা হয়েছে, যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। ইবনে আব্বাস বলেন, যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে একথা বলে যাদের অন্তরে সন্দেহ রয়েছে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। তারা মুহকাম আয়াতকে মুতাশাবিহ আয়াতের উপর এবং মুতাশাবিহ আয়াতকে মুহকাম আয়াতের উপর ইচ্ছাকৃত সন্দেহ লাগানোর জন্য নির্ধারণ করে, ফলে তারা নিজেরা সন্দেহে পতিত হয় এবং পথভ্রষ্ট হয়। তারা সঠিক পথ গ্রহণ করতে সচেষ্ট থাকে না। [আত-তাফসীরুস সহীহ] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদল লোককে কুরআনের আয়াত সম্পর্কে পরস্পর বাদানুবাদে লিপ্ত দেখে বললেন, “তোমাদের পূর্বের লোকেরা এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
তারা আল্লাহর কিতাবের একাংশকে অপর অংশের বিপরীতে ব্যবহার করত। আল্লাহর কুরআন তো এ জন্যই নাযিল হয়েছিল যে, এর একাংশ অপর অংশের সত্যয়ণ করবে। সুতরাং তোমরা এর একাংশকে অপর অংশের কারণে মিথ্যারোপ করো না। এর যে অংশের অর্থ তোমরা জানবে সেটা বলবে, আর যে অংশের অর্থ জানবে না সেটা আলেম বা যারা জানে তাদের কাছে সোপর্দ করো।” [মুসনাদে আহমাদ ২/১৮৫, নং ৬৭৪১; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবাহ ১১/২১৬–২১৭, হাদীস নং ২৩৭০]
(৩) এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গভীর জ্ঞানের অধিকারীগণ কি এ সমস্ত মুতাশাবিহাতের অর্থ জানে কি না? কোন কোন মুফাসসির এখানে تَأْوِيل শব্দের অর্থভেদে এর উত্তর দিয়েছেন। কারণ, تَأْوِيل শব্দটির এক অর্থ, তাফসীর বা ব্যাখ্যা। অপর অর্থ, সেই প্রকৃত উদ্দেশ্য, যার জন্য আয়াতটি নিয়ে আসা হয়েছে। যদি প্রথম অর্থ উদ্দেশ্য হয়, তবে এর কোন কোন অর্থ মুফাসসিরগণ করেছেন। যা ব্যাখ্যার পর্যায়ে পড়ে। সে হিসেবে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা এগুলোর تَأْوِيل তথা ব্যাখ্যা জানে। [তাবারী] আর যদি দ্বিতীয় অর্থ উদ্দেশ্য হয়, তখন এর অর্থ আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী এই দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করে বলেছেন যে, মুতাশাবিহাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। যেমন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেমদের জ্ঞানের দৃঢ়তার পরিচয় এই যে, তারা মুহকাম ও মুতাশাবিহ সব ধরনের আয়াতের উপরই ঈমান এনেছে, অথচ তারা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের تَأْوِيل তথা প্রকৃত ব্যাখ্যা জানে না। অনুরূপভাবে উবাই ইবন কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণ এগুলোর تَأْوِيل তথা প্রকৃত ব্যাখ্যা জানে না, বরং তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান আনি, সবই আমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে। [তাবারী]
(৪) এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বর্ণনা করেন যে, যারা সুস্থ স্বভাবসম্পন্ন তারা অস্পষ্ট আয়াত নিয়ে বেশী তথ্যানুসন্ধান ও ঘাটাঘাটি করে না; বরং তারা সংক্ষেপে বিশ্বাস করে যে, এ আয়াতটিও আল্লাহর সত্য কালাম। তবে তিনি কোন বিশেষ হেকমতের কারণে এর অর্থ সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেননি। প্রকৃতপক্ষে এ পন্থাই বিপদমুক্ত ও সতর্কতাযুক্ত। এর বিপরীতে কিছুসংখ্যক লোক এমনও আছে, যাদের অন্তর বক্র। তারা সুস্পষ্ট আয়াত থেকে চক্ষু বন্ধ করে অস্পষ্ট আয়াত নিয়ে ঘাটাঘাটিতে লিপ্ত থাকে এবং তা থেকে নিজ মতলবের অনুকূলে অর্থ বের করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পায়। এরূপ লোকদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতখানি তিলাওয়াত করে বললেন, “যখন তোমরা তাদেরকে দেখবে যারা এ সমস্ত (মুতাশাবিহ) আয়াতের পিছনে দৌড়াচ্ছে, তখন বুঝে নিবে যে, আল্লাহ এ সমস্ত লোকের কথাই পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। তখন তাদের থেকে সাবধান থাকবে।” [বুখারী ৪৫৪৭; মুসলিম: ২৬৬৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন; যার কিছু আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, এগুলি কিতাবের মূল অংশ; যার অন্যগুলি রূপক;[1] যাদের মনে বক্রতা আছে, তারা ফিতনা (বিশৃংখলা) সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না।[2] আর যারা সুবিজ্ঞ তারা বলে, আমরা এ বিশ্বাস করি। সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত। বস্তুতঃ বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে।
[1] مُحكَمَات (সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন) সেই আয়াতসমূহকে বলা হয় যাতে যাবতীয় আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, মাসলা-মাসায়েল এবং ইতিহাস ও কাহিনী আলোচিত হয়েছে; যার অর্থ স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন এবং যেগুলো বুঝতে কোন প্রকার অসুবিধা হয় না। আর مُتَشَابِهَات (রূপক) আয়াতগুলো এর বিপরীত। যেমন, আল্লাহর সত্তা, ভাগ্য সম্পর্কীয় বিষয়াদি, জান্নাত ও জাহান্নাম এবং ফিরিশতা ইত্যাদির ব্যাপার। অর্থাৎ, এমন বাস্তব জিনিস যার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি অপারগ অথবা যে ব্যাপারে এমন ব্যাখ্যা করার অবকাশ বা তাতে এমন অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থতা থাকে যে, তার দ্বারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতায় ফেলা সম্ভব হয়। এই কারণেই বলা হচ্ছে যে, যাদের অন্তরে বক্রতা থাকে, তারাই অস্পষ্ট আয়াতগুলোর পিছনে পড়ে থাকে এবং সেগুলোর মাধ্যমে ফিৎনা সৃষ্টি করে। যেমন খ্রিষ্টানদের অবস্থা; কুরআন ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল বলেছে। এটা একটি পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন কথা। কিন্তু খ্রিষ্টানরা এটাকে বাদ দিয়ে কুরআনে যে ঈসা (আঃ)-কে ‘রুহুল্লাহ’ এবং ‘কালিমাতুল্লাহ’ বলা হয়েছে, সেটাকেই নিজেদের ভ্রষ্ট আকীদার দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ তা ভুল। অনুরূপ অবস্থা বিদআতীদেরও; কুরআনের সুস্পষ্ট আকীদার বিপরীত বিদআতীরা যে ভ্রান্ত আকীদা গড়ে রেখেছে, তাও এই ‘মুতাশাবিহাত’ (অস্পষ্ট) আয়াতগুলোর ভিত্তিতেই। আবার কখনো নিজেদের দার্শনিক চিন্তাধারার কঠিন পেঁচ দ্বারা ‘সুস্পষ্ট’ আয়াতগুলোকে ‘অস্পষ্ট’ বানিয়ে ফেলে। (আল্লাহ আমাদেরকে এ কাজ হতে পানাহ দিন।) পক্ষান্তরে সঠিক আকীদা অবলম্বি মুসলিম ‘সুস্পষ্ট’ আয়াতগুলোর উপর আমল করে এবং ‘অস্পষ্ট’ আয়াতগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ হলে, সেগুলোকে ‘সুস্পষ্ট’ আয়াতগুলোর আলোকে বুঝতে চেষ্টা করে। কেননা, কুরআন ‘সুস্পষ্ট’ আয়াতগুলোকেই কিতাবের ‘মূল অংশ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এর ফলে তারা ফিৎনা থেকে বেঁচে যায় এবং আকীদার বিভ্রান্তি থেকেও রেহাই পায়। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন।
[2] ‘তা’বীল’-এর এক অর্থ হল, কোন জিনিসের আসল প্রকৃতত্ব, তত্ত্ব ও তাৎপর্য। এই অর্থের দিকে খেয়াল করে ‘ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে থামা জরুরী। কারণ, প্রত্যেক জিনিসের আসল প্রকৃতত্ব স্পষ্টভাবে কেবল মহান আল্লাহই জানেন। ‘তা’বীল’এর দ্বিতীয় অর্থ হল, কোন জিনিসের ব্যাখ্যা, অর্থপ্রকাশ এবং পরিষ্কারভাবে তা বর্ণনা করা। এই অর্থের দিক দিয়ে ‘ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে না থেমে [وَالرَّاسِخُوْنَ فِي الْعِلْمِ] পড়ে থামা যায়। কারণ, গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিরাও সঠিক ব্যাখ্যা এবং সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ‘তা’বীল’এর এই উভয় অর্থ কুরআনে কারীমে ব্যবহূত হয়েছে। (ইবনে কাসীর থেকে সারাংশ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. হে আমাদের রব সরল পথ দেয়ার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না। আর আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিও না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান কর। নিশ্চয় তুমি মহাদাতা।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি সমস্ত মানুষকে একদিন একত্রে সমবেত করবেন এতে কোন সন্দেহ নেই(১); নিশ্চয় আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না।
(১) শাফাআতের বিখ্যাত হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা'আলা পূর্বাপর সকল মানুষকে কিয়ামতের দিন এক মাঠে একত্রিত করবেন। অতঃপর তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তাদের চক্ষু পরস্পরকে বেষ্টন করবে এবং তারা যে কোন আহবানকারীর আহবান শুনতে পাবে। আর সূর্য তাদের নিকটবর্তী করা হবে।” [বুখারী ৩৩৬১]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি মানবজাতিকে একদিন একত্রে সমাবেশ করবে -- এতে কোন সন্দেহ নেই; নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্ধারিত সময়ের ব্যতিক্রম (প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ) করেন না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. নিশ্চয় যারা কুফরী করে আল্লাহর নিকট তাদের ধন-সম্পদ ও সস্তান-সন্তুতি কোন কাজে আসবে না এবং এরাই আগুনের ইন্ধন।(১)
(১) মহান আল্লাহ এ আয়াতে কাফেরদের সম্পর্কে এটা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তারা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। “যেদিন যালেমদের কোন ওজর-আপত্তি কাজে আসবে না, আর তাদের জন্য থাকবে লা'নত এবং তাদের জন্য থাকবে খারাপ আবাস” [গাফের: ৫২] দুনিয়াতে তাদেরকে যে সমস্ত সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দেয়া হয়েছিল তাও তাদের কোন উপকার দিবে না এবং তাদেরকে আল্লাহর কঠোর শাস্তি ও কঠিন পাকড়াও থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হবে না। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা এ বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন, “কাজেই ওদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আপনাকে যেন বিমুগ্ধ না করে, আল্লাহ তো এসবের দ্বারাই ওদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান। ওরা কাফের থাকা অবস্থায় ওদের আত্মা দেহত্যাগ করবে” [আত-তাওবাহঃ ৫৫] আরও বলেন, “যারা কুফরী করেছে, দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন কিছুতেই আপনাকে বিভ্রান্ত না করে। এ তো স্বল্পকালীন ভোগ মাত্র; তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস আর ওটা কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! [সূরা আলে ইমরান: ১৯৬–১৯৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) যারা অবিশ্বাস করে তাদের ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর নিকট কোন কাজে লাগবে না। এবং এ সকল লোকই দোযখের ইন্ধন হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান