-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. হা-মীম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হা- মীম।[1]
[1] সূরার শুরুতে বিচ্ছিন্ন এই অক্ষরগুলো সেই অস্পষ্ট আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত, যার জ্ঞান কেবল আল্লাহই রাখেন। কাজেই এগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য জানার পশ্চাতে পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। তথাপি কোন কোন মুফাসসির এগুলোর দু’টি উপকারিতার কথা বর্ণনা করেছেন; যা সূরা লুকমানের শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. এ কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকে নাযিলকৃত;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) এ কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু'য়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুই আমরা যথাযথ ভাবে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছি। আর যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে যে বিষয়ে ভীতিপ্রদর্শন করা হয়েছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যস্থিত সব কিছুই আমি যথাযথভাবে নির্দিষ্টকালের জন্য সৃষ্টি করেছি; [1] কিন্তু অবিশ্বাসীরা তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [2]
[1] অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার পিছনে রয়েছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য। আর তা হল, মানুষকে পরীক্ষা করা। দ্বিতীয়তঃ তার একটি নির্দিষ্ট সময়ও রয়েছে। প্রতিশ্রুত সে সময় যখন উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন আকাশ ও পৃথিবীর বর্তমান এ সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। তখন না এই আকাশ থাকবে, আর না এই পৃথিবী। (দেখুনঃ সূরা ইবরাহীম ৪৮ আয়াত) يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ (ابراهيم: ৪৮)
[2] অর্থাৎ ঈমান না আনার কারণে যখন তাদেরকে পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদানের ব্যাপারে ভয় দেখানো হয়, তখন তারা তার কোন পরোয়াই করে না। না তারা তার উপর ঈমান আনে, আর না পারলৌকিক শাস্তি হতে বাঁচার কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. বলুন, তোমরা আমাকে সংবাদ দাও, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক আমাকে দেখাও তো তারা যমীনে কী সৃষ্টি করেছে অথবা আসমানসমূহে তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি? এর পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান থাকলে তা তোমরা আমার কাছে নিয়ে আস যদি তোমরা সত্যবাদী হও।(১)
(১) এ আয়াতে মুশরেকদের শির্ক এর দাবি বাতিল করার জন্য তাদের দাবীর সপক্ষে দলিল চাওয়া হয়েছে। কেননা, সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত কোন দাবি গ্ৰহণীয় হয় না। দলিলের যত প্রকার রয়েছে, সবগুলো আয়াতে উল্লেখ করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, মুশরেকদের দাবির পক্ষে কোন দলিল নেই। তাই এহেন দলিলবিহীন দাবিতে অটল থাকা নিরেট পথভ্রষ্টতা। আয়াতে দলিলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম: যুক্তিভিত্তিক দলিল। এর খণ্ডন বলা হয়েছে (أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّمَاوَاتِ) “এরা যমীনে কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও অথবা আসমানসমূহে তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি?” দ্বিতীয় প্রকার ইতিহাসভিত্তিক দলিল। বলাবাহুল্য আল্লাহর ব্যাপারে কেবল সেই ইতিহাসভিত্তিক দলিল গ্রহণীয় হতে পারে; যা স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। যেমন তাওরাত, ইঞ্জীল; কুরআন ইত্যাদি কিতাব অথবা আল্লাহ মনোনীত নবী ও রাসূলগণের উক্তি। এই দুই প্রকারের মধ্যে প্রথম প্রকারের খণ্ডনে বলা হয়েছে (ائْتُونِي بِكِتَابٍ مِنْ قَبْلِ هَٰذَا) অর্থাৎ তোমাদের মূর্তি পূজার কোন দলিল থাকলে কোন ইলাহী কিতাব পেশ কর, যাতে মূর্তি পূজার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এর পর দ্বিতীয় প্রকার ঐতিহাসিক দলীল পেশ করার আহবান জানিয়ে বলা হয়েছে, (أَوْ أَثَارَةٍ مِنْ عِلْمٍ) অর্থাৎ কিতাব আনতে না পারলে কমপক্ষে রাসূলগণের পরম্পরাগত কোন উক্তি পেশ কর। তাও পেশ করতে না পারলে তোমাদের কথা ও কাজ পথ ভ্ৰষ্টতা বৈ কিছুই নয়। এর পরবর্তী আয়াতে তাদের শির্কের তৃতীয় প্রকার দলীল পেশ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। কারণ, তারা হয়ত বলতে পারে যে, তাদেরকে আমরা আল্লাহর শরীক এজন্যই সাব্যস্ত করি যে, তারা আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে আমাদের কোন উপকার সাধন কিংবা অপকার থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে। তাদের সে দলিল পেশের সম্ভাবনাকে নাকচ করে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান করছে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের আহবানে সাড়া দিতে পারবে না। সুতরাং তাদের শির্কের সপক্ষে কোন যুক্তি বা দলিলই অবশিষ্ট রইল না। [দেখুন: ইবনে কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) বল, ‘তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, তাদের কথা ভেবে দেখছ কি? তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও অথবা আকাশমন্ডলীতে তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি?[1] এর পূর্ববর্তী কোন কিতাবে অথবা পরম্পরাগত জ্ঞান থাকলে তা তোমরা আমার নিকট উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’[2]
[1] أرَأَيْتُمْ এর অর্থ أَخْبِرُوْنِيْ অথবা أَرُوْنِيْ অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব প্রতিমাগুলোর অথবা ব্যক্তিত্বের তোমরা উপাসনা কর, আমাকে বল বা দেখাও দেখি, আকাশ-পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারে তাদের কি কোন অংশ রয়েছে? অর্থাৎ আকাশ-পৃথিবী সৃষ্টির কাজে তাদের কোনই অংশ নেই, বরং পরিপূর্ণরূপে এই সমস্ত কিছুর স্রষ্টা হলেন একমাত্র মহান আল্লাহ। (ব্যাপার যখন এই) তখন তোমরা অসত্য এই উপাস্যগুলোকে আল্লাহর ইবাদতে শরীক কেন কর?
[2] অর্থাৎ কোন নবীর প্রতি অবতীর্ণ করা কিতাবে অথবা বর্ণিত কোন বর্ণনায় এ কথা লেখা থাকলে তা নিয়ে এসে দেখাও, যাতে তোমাদের সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যায়। কেউ أَثَارَةٍ مِنْ عِلْمٍ এর অর্থ করেছেন, জ্ঞানভিত্তিক স্পষ্ট দলীল। এ ক্ষেত্রে কিতাব অর্থ হবে, বর্ণনাভিত্তিক প্রমাণ, এবং أَثَارَةٍ مِنْ عِلْمٍ এর অর্থ হবে, জ্ঞানভিত্তিক দলীল। অর্থাৎ কোন যুক্তিসংগত অথবা বর্ণনাগত প্রমাণ পেশ কর। أثر ধাতু হতে গঠিত হওয়ার কারণে তার প্রথম অর্থ রেওয়ায়াত বা বর্ণনা করা হয়েছে অথবা بَقِيَّةٍ مِّنْ عِلْمٍ অর্থাৎ পূর্বের নবীদের শিক্ষার অবশিষ্ট অংশ যা নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তাতে (তোমাদের) এ কথার উল্লেখ থাকলে (তা আমার কাছে নিয়ে এস)।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. আর সে ব্যক্তির চেয়ে বেশী বিভ্রান্ত কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাকে সাড়া দেবে না? এবং এগুলো তাদের আহবান সম্বন্ধেও গাফেল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না? আর তারা তাদের ডাক সম্বন্ধে অবহিতও নয়। [1]
[1] অর্থাৎ, এরাই সব চেয়ে বড় ভ্রষ্ট, যারা পাথরের মূর্তিগুলোকে অথবা মৃত ব্যক্তিদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে। তারা তো কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ডাকে সাড়া দিতে অক্ষম। আর কেবল অক্ষমই নয়; বরং একেবারে বেখবরও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. আর যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন সেগুলো হবে এদের শত্রু এবং এরা তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের উপাসনাকে অস্বীকার করবে। [1]
[1] এই বিষয়টি কুরআনের একাধিক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। যেমন, সূরা ইউনুসের ২৯নং আয়াতে, সূরা মারয়্যামের ৮১-৮২নং আয়াতে এবং সূরা আনকাবুতের ২৫নং আয়াত সহ আরো অন্য আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়াতে দু’ প্রকারের উপাস্য বিদ্যমান রয়েছে। এক তো হল, নিষ্প্রাণ জড়পদার্থ, উদ্ভিদ এবং মহান আল্লাহর মহাশক্তির নিদর্শনাবলী (সূর্য, আগুন প্রভৃতি)। আল্লাহ তাআলা এগুলোর মধ্যে প্রাণ এবং বাকশক্তি দান করবেন। ফলে এ জিনিসগুলো মুখের ভাষায় ব্যক্ত করবে যে, এ কথা আমরা আদৌ জানতাম না যে, এরা আমাদের পূজা করত এবং তোমার উপাস্যত্বে আমাদেরকে শরীক করত। কেউ কেউ বলেছেন, বাচনিক জবানে নয়, বরং অবস্থার জবানে তারা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। দ্বিতীয় প্রকার উপাস্য হল, নবী, ফিরিশতা ও নেক লোক বা সৎব্যক্তিদের মধ্য থেকে। যেমন, ঈসা, উযাইর (আলাইহিমাস্ সালাম) এবং আল্লাহর অন্যান্য নেক বান্দাগণ। এঁরাও আল্লাহর সমীপে সেইরূপই উত্তর দেবেন, যেমন ঈসা (আঃ)-এর উত্তর পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রয়েছে। এ ছাড়া শয়তানও অস্বীকার করবে। যেমন সকল শরীকদের উক্তি কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। ﴿ تَبَرَّأْنَا إِلَيْكَ مَا كَانُوا إِيَّانَا يَعْبُدُونَ﴾ (القصص:৬৩) ‘‘আমরা তোমার সম্মুখে (আমাদের পূজারীদের সাথে) সম্পর্ক ছিন্নতার কথা ঘোষণা করছি, এরা আমাদের পূজা করত না।’’ (সূরা কাসাসঃ ৬৩)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর যখন তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন যারা কুফরী করেছে তাদের কাছে সত্য আসার পর তারা বলে, এ তো সুস্পষ্ট জাদু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন যারা সত্য উপস্থিত হওয়ার পর তা অস্বীকার করে, তারা বলে, ‘এটা তো সুস্পষ্ট যাদু।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. নাকি তারা বলে যে, সে এটা উদ্ভাবন করেছে। বলুন, যদি আমি এটা উদ্ভাবন করে থাকি, তবে তোমরা আমাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে কিছুরই মালিক নও। তোমরা যে বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত আছ, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবগত। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে তিনিই যথেষ্ট এবং তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) তবে কি তারা বলে যে, ‘সে (মুহাম্মাদ) এটা (কুরআন) উদ্ভাবন করেছে?’ [1] তুমি বল, ‘যদি আমি এটা উদ্ভাবন করে থাকি, তাহলে তোমরা তো আল্লাহর শাস্তি হতে আমাকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না।[2] তোমরা যে বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত আছ, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [3] আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে তিনিই যথেষ্ট[4] এবং তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [5]
[1] এখানে তাদের কাছে আগত ‘হক’ বা ‘সত্য’ হল কুরআন। তারা তার অলৌকিকতা ও আকর্ষণ শক্তি দেখে তাকে ‘যাদু’ বলে আখ্যায়িত করত। আবার এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অথবা যখন এ কথায় কোন ফল বুঝত না বা কোন কাজ হত না, তখন তারা বলত, এটা তো মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিজের উদ্ভাবন করা (স্বরচিত) বাণী।
[2] অর্থাৎ, তোমাদের এ কথা যদি সঠিক হয় যে, আমি আল্লাহ-প্রেরিত রসূল নই এবং এ বাণী আমারই রচনা করা, তাহলে তো নিশ্চয় আমি এক বড় অপরাধী। এত বড় মিথ্যা অপরাধে মহান আল্লাহ আমাকে পাকড়াও না করে কিছুতেই ছেড়ে দেবেন না। আর এ ধরনের কোন ধর-পাকড় যদি হয়, তাহলে জেনে নিও যে, আমি মিথ্যুক এবং তোমরা আমার কোন সাহায্যও করো না। বরং এমতাবস্থায় আল্লাহর শাস্তি হতে আমাকে রক্ষা করার তোমাদের কোন এখতিয়ারই থাকবে না। এই বিষয়টিকে অন্যত্র এইভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, ﴿وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ، لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ، ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ، فَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ﴾ (الحاقة:৪৪-৪৭) অর্থাৎ, সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত। তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন-ধমনী। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারত। (সূরা হাক্কাহ ৪৪-৪৭)
[3] অর্থাৎ, যত রকম ভাবেই তোমরা এ কুরআনকে মিথ্যাজ্ঞান করছ; কখনো যাদু বলে, কখনো জ্যোতিষীর বাণী বলে, আবার কখনো মস্তিস্ক-প্রসূত (স্বকপোলকল্পিত) বলে, আল্লাহ এসব খুব ভালোভাবেই জানেন। অর্থাৎ, তিনিই তোমাদেরকে তোমাদের এসব জঘন্য কার্যকলাপের বদলা দেবেন।
[4] এই কুরআন যে তাঁরই পক্ষ হতে অবতীর্ণ এ কথার উপর সাক্ষীর জন্য তিনি নিজেই যথেষ্ট এবং তোমাদের মিথ্যাজ্ঞান ও বিরোধিতা করার উপর সাক্ষীও তিনিই। এ কথায় তাদের জন্য কঠিন হুমকি ও ধমক রয়েছে।
[5] তার জন্য, যে তাওবা করে ঈমান আনবে এবং কুরআনকে আল্লাহর সত্য বাণী বলে বিশ্বাস করে নিবে। অর্থাৎ, সময় এখনও আছে। কাজেই তাওবা করে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার অধিকারী হয়ে যাও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. বলুন, রাসূলদের মধ্যে আমিই প্রথম নই। আর আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে; আমি আমার প্রতি যা ওহী করা হয় শুধু তারই অনুসরণ করি। আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্ৰ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) বল, ‘আমি তো কোন নতুন রসূল নই।[1] আর আমি জানি না যে, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে;[2] আমি আমার প্রতি যা অহী (প্রত্যাদেশ) করা হয় শুধু তারই অনুসরণ করি। আমি এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’
[1] অর্থাৎ, আমি তো কোন প্রথম ও নতুন রসূল নই। বরং আমার পূর্বেও অনেক রসূল এসেছেন।
[2] অর্থাৎ, দুনিয়াতে কী করা হবে, তা আমার অজানা। আমি মক্কাতেই থাকব, না এখান থেকে বহিষ্কার হতে আমাকে বাধ্য হতে হবে, আমার সাধারণ ও স্বাভাবিক মরণ হবে, না তোমাদের হাতে আমাকে হত্যা হতে হবে? তোমরা শীঘ্রই শাস্তির সম্মুখীন হবে, নাকি দীর্ঘকাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেওয়া হবে? এ সবের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটেই আছে। আমার এটা জানা নেই যে, আগামী কাল আমার অথবা তোমাদের সাথে কী আচরণ করা হবে? তবে পরকাল সম্পর্কে আমি নিশ্চিত রূপে বিদিত যে, মু’মিনরা জান্নাতে এবং কাফেররা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর হাদীসে যে বর্ণিত হয়েছে, কোন সাহাবীর মৃত্যুর সময় তাঁর ব্যাপারে সুধারণা প্রকাশ করা হলে নবী (সাঃ) বলতেন, (وَاللهِ مَا أَدْرِيْ- وأَنَا رَسُوْلُ اللهِ- مَا يُفْعَلُ بِيْ وَلاَ بِكُمْ) ‘‘আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রসূল হওয়া সত্ত্বেও এ কথা জানি না যে, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে?’’ (সহীহ বুখারী, মানাক্বিবুল আনসার) তো এখানে কোন এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির সুনিশ্চিত পরিণাম সম্বন্ধে অজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। হ্যাঁ! যাঁদের (জান্নাতী হওয়ার) কথা সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা সুসাব্যস্ত, তাঁদের ব্যাপার ভিন্ন। যেমন, সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রমুখ সাহাবীগণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, যদি এ কুরআন আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হয়ে থাকে এবং তোমরা তার সাথে কুফরী কর, আর বনী ইসরাঈলের একজন অনুরূপ কিতাবের আয়াতের উপর সাক্ষ্য দিয়ে তাতে ঈমান আনল; আর তোমরা ঔদ্ধত্য প্ৰকাশ করলে, (তাহলে তোমাদের পরিণাম কি হবে?) নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।(১)
(১) এ আয়াত এবং সূরা আশ-শু'আরার ১৯৬ ও ১৯৭ নং আয়াতের অর্থ একই রকম। সারমর্ম এই যে, যেসব ইহুদী ও নাসারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেসালাত ও কুরআন অমান্য করে, তারা স্বয়ং তাদের কিতাব সম্পর্কেও অজ্ঞ। ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত ও নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। সে আলেমগণের সাক্ষ্য কি এই মূর্খদের জন্যে যথেষ্ট নয়? এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমরা আমার নবুওয়াত দাবিকে ভ্রান্ত এবং কুরআনকে আমার রচনা বল। এর এক জওয়াব পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ বাস্তবে নবী না হয়ে নিজেকে নবী বলে মিথ্যা দাবি করলে তার দুনিয়াতে নিপাত হয়ে যাওয়া জরুরি, যাতে জনসাধারণ প্রতারিত না হয়।
এ জওয়াবই যথেষ্ট, কিন্তু তোমরা যদি না মান তবে এ সম্ভাবনার প্রতিও লক্ষ্য কর যে, আমার দাবি যদি সত্য হয় এবং কুরআন আল্লাহর কিতাব হয়। আর তোমরা একে অমান্য করেই যাও, তবে তোমাদের পরিণতি কি হবে, বিশেষত যখন তোমাদের বনী ইসরাঈলেরই কোন মান্যবার ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, এটা আল্লাহর কিতাব, অতঃপর সে নিজেও মুসলিম হয়ে যায়? এ জ্ঞান লাভের পরও যদি তোমরা জেদ ও অহংকারে অটল থাক, তবে তোমরা গুরুতর শাস্তির যোগ্য হয়ে যাবে। আয়াতে বনী ইসরাঈলের কোন বিশেষ আলেমের নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং এটাও নির্দিষ্ট করা হয়নি যে, এ সাক্ষ্য আয়াত অবতরণের পূর্বেই জনসমক্ষে এসে গেছে, না ভবিষ্যতে আসবে। তাই বনী ইসরাঈলের কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করার ওপর আয়াতের অর্থ নির্ভরশীল নয়।
আল্লাহর বাণীর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, কুরআন তোমাদের সামনে যে শিক্ষা পেশ করছে তা কোন অভিনব জিনিস নয়। পৃথিবীতে প্রথমবারের মত শুধুমাত্র তোমাদের সামনেই তা পেশ করা হয়নি যে, তোমরা ওজর পেশ করে বলবেঃ এ ধরনের কথা তো ইতোপূর্বে মানব জাতির কাছে আর আসেনি। তাই আমরা কি করে তা মানতে পারি। ইতোপূর্বেও এসব শিক্ষা এভাবেই অহীর মাধ্যমে বনী ইসরাঈলদের কাছে তাওরাত ও অন্যান্য আসমানী কিতাব রূপে এসেছিলো। বনী ইসরাঈলদের একজন সাধারণ মানুষও তা মেনে নিয়েছিলো এবং একথা স্বীকার করে নিয়োছিলো যে অহীই হচ্ছে এসব শিক্ষা নাযিল হওয়ার মাধ্যম। তাই অহী এবং এই শিক্ষা দুর্বোধ্য জিনিস তোমরা সে দাবী করতে পার না।
আসল কথা হলো, তোমাদের গর্ব, অহংকার এবং ভিত্তিহীন আত্মম্ভরিতা ঈমানের পথে অন্তরায়। খ্যাতনামা ইহুদী আলেম আবদুল্লাহ ইবন সালামসহ যত ইহুদী ও নাসারা ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন, তারা সবাই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, এ আয়াত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, দাহহাক প্রমুখ তাফসীরবিদগণ তাই বলেছেন। যদিও আবদুল্লাহ ইবনে সালাম এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরে মদীনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপরও এ আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ার পরিপন্থি নয়। এমতাবস্থায় আয়াতটি ভবিষ্যদ্বনি হিসেবে গণ্য হবে। [দেখুন: তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি যে, যদি এ (কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে (অবতীর্ণ) হয়ে থাকে, আর তোমরা এতে অবিশ্বাস কর, অথচ বানী ইস্রাঈলের একজন এর অনুরূপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করল, আর তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে,[1] (তাহলে তোমাদের পরিণাম কী হবে?) নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’
[1] বানী-ইস্রাঈলের এই সাক্ষী থেকে কাকে বুঝানো হয়েছে? কেউ বলেন যে, এই শব্দটি জাতি বা সম্প্রদায় অর্থে প্রয়োগ হয়েছে। বানী-ইস্রাঈলের সকল ঈমান আনয়নকারী এর অন্তর্ভুক্ত। কারো মতে সূরাটি মক্কী হওয়ার ফলে মক্কায় অবস্থানকারী কোন এক বানী-ইস্রাঈলী উদ্দিষ্ট হবে। আবার কারো কারো নিকট এ থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে সালামকে বুঝানো হয়েছে এবং তাঁরা এই আয়াতকে মাদানী বলে গণ্য করেন। বুখারী-মুসলিমের বর্ণনা থেকেও এ উক্তির সমর্থন মেলে। (দেখুনঃ সহীহ বুখারী, মানাক্বিবুল আনসার, মুসলিম, ফাযাইলুস সাহাবা) এই কারণে ইমাম শাওকানী এই মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। عَلَى مِثْلِهِ (এর অনুরূপ সম্পর্কে সাক্ষ্য) এর অর্থ হল, তাওরাতের সাক্ষ্য দেওয়া যা আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআনের অবতীর্ণ হওয়ার কথা একান্ত ভাবে প্রমাণ করে। কেননা, কুরআনও তাওহীদ (একত্ব) ও পরকাল সাব্যস্ত করার ব্যাপারে তাওরাতের মতনই। অর্থাৎ, কিতাবধারীদের সাক্ষ্য দেওয়া ও তাদের ঈমান আনার পর এই কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ তাতে সন্দেহ অবশিষ্ট থাকে না। সুতরাং এরপর আর তোমাদের অস্বীকার ও অহংকার করার কোন বৈধতা থাকে না। তোমাদেরকে তোমাদের এই আচরণের পরিণাম সম্পর্কে ভেবে দেখা উচিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান