-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. ক্বাফ, শপথ সম্মানিত কুরআনের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১) ক্বাফ, শপথ গৌরবান্বিত কুরআনের। [1]
[1] এই কসমের জওয়াব ঊহ্য আছে আর তা হল, لَتُبْعَثُنَّ (তোমরা অবশ্যই কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হবে)। কেউ কেউ বলেছেন, এর জওয়াব হল পরবর্তী আলোচ্য বিষয়, যাতে নবুঅত ও পুনরুত্থানের কথাকে সুসাব্যস্ত করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. বরং তারা বিস্ময় বোধ করে যে, তাদের মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী তাদের কাছে এসেছেন। আর কাফিররা বলে, এ তো এক আশ্চর্য জিনিস!
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) কিন্তু অবিশ্বাসীরা তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হতে দেখে বিস্ময়বোধ করে ও বলে, ‘এটা তো এক আশ্চর্য ব্যাপার। [1]
[1] অথচ এতে আশ্চর্যের কোন কথাই নেই। প্রত্যেক নবী সেই জাতিরই একজন হতেন, যে জাতির কাছে তাঁকে প্রেরণ করা হত। সেই হিসাবেই মক্কার কুরাইশদেরকে সতর্ক করার জন্য তাদেরই মধ্য থেকে এক ব্যক্তি (মুহাম্মাদ (সাঃ))-কে নবুঅতের জন্য নির্বাচন করে নেওয়া হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আমাদের মৃত্যু হলে এবং আমরা মাটিতে পরিণত হলে আমরা কি পুনরুত্থিত হব? এ ফিরে যাওয়া সুদূরপরাহত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) আমাদের মৃত্যু হলে এবং আমরা মাটিতে পরিণত হলে (আমরা কি পুনরুজ্জীবিত হব?) সে প্রত্যাবর্তন তো সুদূর পরাহত!’ [1]
[1] অথচ বিবেক-বুদ্ধির নিকষে এটাও অসম্ভবের কিছু নয়। পরের আয়াতে এর কিছু বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. অবশ্যই আমরা জানি মাটি ক্ষয় করে তাদের কতটুকু এবং আমাদের কাছে আছে সম্যক সংরক্ষণকারী কিতাব।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) মাটি তাদের কতটুকু ক্ষয় করে, আমি অবশ্যই তা জানি এবং আমার নিকট আছে সংরক্ষিত কিতাব।[1]
[1] অর্থাৎ, মাটি মানুষের গোশত, হাড় ও চুল আদি জীর্ণ করে খেয়ে ফেলে; অর্থাৎ, দেহকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। আর এ জ্ঞান কেবল যে আমার কাছে --তা নয়। বরং আমার কাছে লওহে মাহফুযেও লিপিবদ্ধ আছে। তাই ঐ সমস্ত চূর্ণ ও বিক্ষিপ্ত টুকরোগুলো একত্রিত করে পুনরায় তাদেরকে জীবিত করে দেওয়া আমার জন্য কোন কঠিন ব্যাপার নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. বস্তুত তাদের কাছে সত্য আসার পর তারা তাতে মিথ্যারোপ করেছে। অতএব, তারা সংশয়যুক্ত বিষয়ে নিপতিত।(১)
(১) অভিধানে مَرِيجٌ শব্দের অর্থ মিশ্র, যাতে বিভিন্ন প্রকার বস্তুর মিশ্রণ থাকে এবং যার প্রকৃত স্বরূপ অনুধাবন করা সম্ভব হয় না। এরূপ বস্তু সাধারণত ফাসেদ ও দূষিত হয়ে থাকে। এ কারণেই কারো কারো মতে, এ শব্দের অর্থ ফাসেদ ও দুষ্ট। আবার অনেকেই এর অনুবাদ করেছে মিশ্র ও জটিল। এ সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশটিতে একটি অতি বড় বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এর অর্থ তারা শুধু বিস্ময়ে প্রকাশ করা এবং বিবেকবুদ্ধি বিরোধী ঠাওরানোকেই যথেষ্ট মনে করেনি। বরং যে সময় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সত্যের দাওয়াত পেশ করেছেন সে সময় তারা কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই তাকে নির্জলা মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছে। অবশ্যম্ভাবীরূপে তার যে ফল হওয়ার ছিল এবং হয়েছে তা হচ্ছে, এ দাওয়াত এবং এ দাওয়াত পেশকারী রাসূলের ব্যাপারে এরা কখনো স্থির ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি।
কখনো তাঁকে কবি বলে, কখনো বলে গণক কিংবা পাগল। কখনো বলে সে যাদুকর আবার কখনো বলে কেউ তাঁর ওপর যাদু করেছে। কখনো বলে নিজের বড়ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সে এ বাণী নিজে বানিয়ে এনেছে আবার কখনো অপবাদ আরোপ করে যে, অন্যকিছু লোক তার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারাই তাকে এসব কথা বানিয়ে দেয়। এসব পরস্পর বিরোধী কথাই প্রকাশ করে যে, তারা নিজেদের দৃষ্টিভংগী সম্পর্কেই পুরোপুরি দ্বিধান্বিত। যদি তারা তাড়াহুড়া করে একেবারে প্রথমেই নবীকে অস্বীকার না করতো এবং কোন রকম চিন্তা ভাবনা না করে আগেভাগেই একটি সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্বে ধীরস্থিরভাবে একথা ভেবে দেখতো যে, কে এ দাওয়াত পেশ করছে, কি কথা সে বলছে এবং তার দাওয়াতের সপক্ষে কি দলীল-প্রমাণ পেশ করছে তাহলে তারা কখনো এ দ্বিধা-দ্বন্দের মধ্যে পড়তো না। [দেখুন: তবারী, ফাতহুল কাদীর, বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) বস্তুতঃ তাদের নিকট সত্য আসার পর তারা তা মিথ্যা মনে করেছে। ফলে তারা সংশয়ে দোদুল্যমান।[1]
[1] حَقٌّ (সত্য) বলতে কুরআন, ইসলাম বা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতকে বুঝানো হয়েছে। এ সবের অর্থ একই। مَرِيْجٌ শব্দের অর্থ মিশ্রিত, গোলযোগপূর্ণ অথবা সন্দেহজনক অবস্থা। অর্থাৎ, এমন বিষয়, যা তাদের জন্যে সন্দেহজনক হয়ে পড়েছে। যার ফলে তারা চাঞ্চল্যকর অবস্থায় পড়ে গেছে। কখনো তাঁকে যাদুকর বলে, কখনো কবি, আবার কখনো বলে গণক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. তারা কি তাদের উপরে অবস্থিত আসমানের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমরা কিভাবে তা নির্মাণ করেছি ও তাকে সুশোভিত করেছি এবং তাতে কোন ফাটলও নেই?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তারা কি তাদের উপরিস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, আমি কিভাবে ওটা নির্মাণ করেছি[1] ও তাকে সুশোভিত করেছি[2] এবং ওতে কোন ফাটলও নেই? [3]
[1] অর্থাৎ, বিনা স্তম্ভে; যার সাহায্যে তা প্রতিষ্ঠিত আছে।
[2] অর্থাৎ, তারকারাজি দ্বারা তাকে সুশোভিত করা হয়েছে।
[3] অনুরূপ তাতে কোন অসামঞ্জস্য ও খুঁত নেই। যেমন, অন্যত্র বলেছেন, ‘‘তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; আবার তাকিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।’’ (সূরা মুলক ৩-৪ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর আমরা বিস্তৃত করেছি যমীনকে এবং তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা। আর তাতে উদগত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং ওতে উদগত করেছি চোখ-জুড়ানো নানা প্রকার উদ্ভিদ। [1]
[1] কেউ কেউ زوج এর অর্থ করেছেন, জোড়া। অর্থাৎ, সকল প্রকারের উদ্ভিদ ও অন্যান্য জিনিসকে আমি জোড়া জোড়া (নর-নারী) সৃষ্টি করেছি। بَهِيْجٌ এর অর্থ, সুদর্শন, শ্যামল এবং সুন্দর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক বান্দার জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) (আল্লাহ) অভিমুখী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশ স্বরূপ। [1]
[1] অর্থাৎ, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং অন্যান্য বস্তুর দর্শন ও সেগুলোর (প্রকৃতত্ব) সম্পর্কে জানা হল এমন লোকদের জন্য জ্ঞান, উপদেশ এবং শিক্ষার উপকরণ স্বরূপ, যারা আল্লাহ-অভিমুখী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. আর আসমান থেকে আমরা বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি অতঃপর তা দ্বারা আমরা উৎপন্ন করি উদ্যান, কর্তনযোগ্য শস্য দানা,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) আকাশ হতে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তার দ্বারা আমি সৃষ্টি করি বহু বাগান ও পরিপক্ব শস্যরাজি, [1]
[1] পরিপক্ব শস্যরাজি বা কাটা শস্য বলতে সেই ক্ষেতগুলো, যেগুলো থেকে গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, ডাল ও ধান ইত্যাদি ফসল হয় এবং তা সুরক্ষিত করে রাখা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. ও সমুন্নত খেজুর গাছ যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আর উঁচু উঁচু খেজুর বৃক্ষ; যাতে আছে কাঁদি কাঁদি খেজুর --[1]
[1] بَاسِقَاتٌ এর অর্থ طِوَالًا شَاهِقَاتٍ সুউচ্চ। طَلْعٌ বলে সেই জালি খেজুরকে যা প্রাথমিক অবস্থায় (মোচার ভিতরে) থাকে। نَضِيْدٌ এর অর্থ স্তরে স্তরে (বা থোকায় থোকায়) বিন্যস্ত। ‘বহু বাগান’-এর আওতায় খেজুরের গাছও এসে যায়। তবুও তাকে পৃথকভাবে বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে খেজুরের সেই গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়, যা আরববাসীদের কাছে রয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান