-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. শপথ(১) ধূলিঝঞ্ঝার,
(১) (وَالذَّارِيَاتِ ذَرْوًا) এখানে الذَّارِيَاتِ বলে ধূলিকণা বিশিষ্ট ঝঞ্ঝাবায়ু বোঝানো হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, (فَالْحَامِلَاتِ وِقْرًا) এখানে الْحَامِلَات এর শাব্দিক অর্থ বোঝাবাহী; অর্থাৎ যে মেঘমালা বৃষ্টির বোঝা বহন করে। তারপর বলা হয়েছে, (فَالْجَارِيَاتِ يُسْرًا ٭ فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا) এখানে الْجَارِيَات ও الْمُقَسِّمَات এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কেউ এ কথাটিকে অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন যে, এ দুটি বাক্যাংশের অর্থও বাতাস [ফাতহুল কাদীর]। অর্থাৎ এ বাতাসই আবার মেঘমালা বহন করে নিয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহর নির্দেশানুসারে যেখানে যতটুকু বর্ষণের নির্দেশ দেয়া হয় ততটুকু পানি বন্টন করে [কুরতুবী]।
এ তাফসীর অনুসারে পুরো চারটি আয়াতই ঝঞ্ঝাবায়ুর সাথে সংশ্লিষ্ট। পক্ষান্তরে আরেক দল মুফাসসির الْجَارِيَات আয়াতাংশের অর্থ করেছেন দ্রুতগতিশীল নৌকাসমূহ এবং الْمُقَسِّمَات এর অর্থ করেছেন সেসব ফেরেশতা যারা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাঁর সমস্ত সৃষ্টির জন্য বরাদ্দকৃত জিনিস যথা রিযিক, বৃষ্টির পানি এবং কষ্ট ও সুখ ইত্যাদি তাদের মধ্যে বন্টন করে [ফাতহুল কাদির]। আবার কারও কারও মতে الْجَارِيَات বলে বোঝানো হয়েছে, তারকাসমূহ যারা তাদের কক্ষপথের প্রতি সহজেই চলে থাকে। আল্লাহ তা'আলা এ চারটি বস্তুর শপথ করে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া যে বাস্তব তা বিধৃত করেছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর] উপরে যে অর্থ বর্ণিত হয়েছে তা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর তাফসীর অনুসরণ করে করা হয়েছে। তিনি এরূপই তাফসীর করেছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) শপথ ঝড়ো হাওয়ার। [1]
[1] এ থেকে বুঝানো হয়েছে সেই বাতাস বা ঝড়কে, যা ধূলা-বালি উড়িয়ে ছড়িয়ে দেয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. অতঃপর বোঝাবহনকারী মেঘপুঞ্জের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) শপথ বোঝা বহনকারী মেঘপুঞ্জের, [1]
[1] وَقْرٌ প্রত্যেক সেই বোঝা, যা কোন প্রাণী বহন করে। حاملات থেকে বুঝানো হয়েছে এমন সব হাওয়াকে যা মেঘমালা বহন করে। কিংবা এমন মেঘমালা যা পানির বোঝা বহন করে। যেমন, চতুষ্পদ প্রাণীরা মালপত্রের বোঝা বহন করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. অতঃপর স্বচ্ছন্দগতি নৌযানের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) শপথ স্বচ্ছন্দ গতি নৌযানের, [1]
[1] جَارِيَاتٌ পানিতে চলমান নৌযানসমূহ। يُسْرًا সহজভাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. অতঃপর নির্দেশ বন্টনকারী ফেরেশতাগণের—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) শপথ কর্ম বণ্টনকারী ফিরিশতাদের, [1]
[1] مُقَسِّمَاتِ এ থেকে সেই ফিরিশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাঁরা কর্মসমূহ বণ্টন করে নেন। কেউ রহমতের, কেউ শাস্তির, কেউ পানির, কেউ কষ্টের (অনাবৃষ্টি ইত্যাদির), কেউ বাতাসের, কেউ মৃত্যু ও দুর্ঘটনার ফিরিশতা প্রভৃতি। কেউ কেউ উক্ত শব্দগুলো থেকে কেবল ‘হাওয়া’ উদ্দিষ্ট মনে করেছেন। আর এগুলোকে হাওয়ার বিশেষণ নির্ণয় করেছেন। কিন্তু আমরা ইমাম ইবনে কাসীর এবং ইমাম শাওকানীর তাফসীর অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছি। কসম খাওয়ার উদ্দেশ্য হল, যে জিনিসের জন্য কসম খাওয়া হয় তার সত্যতা বর্ণনা করা। কখনো আবার কেবল তাকীদ স্বরূপ কসম খাওয়া হয়। আবার কখনো যে জিনিসের জন্য কসম খাওয়া হয়, সেটাকে দলীল হিসাবে পেশ করা উদ্দেশ্য হয়। এখানে এই তৃতীয় কসম উদ্দেশ্য। পরে কসমের জওয়াব এটাই বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমাদের সাথে যে প্রতিশ্রুতি করা হচ্ছে, অবশ্যই তা সত্য এবং কিয়ামত সংঘটিত হবেই; যাতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। হাওয়া চলা, মেঘমালার পানি বহন করা, সামুদ্রিক জাহাজের বিচরণ এবং ফিরিশতামন্ডলীর বিভিন্ন কর্মাদি সম্পাদন করা ইত্যাদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দলীল। কারণ, যে সত্তা এই সমস্ত কাজগুলো করেন যা বাহ্যতঃ অতি কঠিন এবং স্বাভাবিক উপায়-উপকরণের বিপরীত, সেই সত্তাই কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষকে পুনরায় জীবিত করতেও পারেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) তোমাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. নিশ্চয় প্রতিদান অবশ্যম্ভাবী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) কর্মফল দিবস অবশ্যম্ভাবী।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. শপথ বহু পথবিশিষ্ট আসমানের(১),
(১) حُبُك শব্দটি حبكة এর বহুবচন। حُبُك শব্দের বেশ কয়েকটি অর্থ রয়েছে। বায়ু প্রবাহের কারণে মরুভূমির বালুকারাশি এবং বদ্ধ পানিতে যে ঢেউ সৃষ্টি হয় তাকেও حُبُك বলা হয় [আদওয়াউল বায়ান]। এখানে আসমানকে حُبُك এর অধিকারী বলার কারণ হচ্ছে যে, অধিকাংশ সময় আসমানে নানা আকৃতির মেঘরাশি ছেয়ে থাকে এবং বাতাসের প্রভাবে বারবার তার আকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে এবং কখনো কোন আকৃতি না স্থায়িত্ব লাভ করে, না অন্য আকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। অথবা এ কারণে বলা হয়েছে যে, রাতের বেলা যখন আকাশে তারকাসমূহ ছড়িয়ে থাকে তখন মানুষ তার নানা রকম আকৃতি দেখতে পায় যার কোনটি অন্যগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় না। অথবা, এর অর্থ কাপড় বয়নে উদ্ভূত পাড়। এটা পথসদৃশ হয় বলে পথকেও حُبُك বলা হয়। কোনো কোনো তাফসিরবিদ এখানে حُبُك এর অর্থ নিয়েছেন শোভা ও সৌন্দৰ্য। তখন আয়াতের অর্থ এই যে, শোভা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আসমানের কসম [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) শপথ বহু পথ বিশিষ্ট আকাশের, [1]
[1] অর্থাৎ, বহু কক্ষপথ বিশিষ্ট। এর দ্বিতীয় অনুবাদঃ শপথ সুসজ্জিত ও আলোক-উজ্জ্বল আকাশের! চন্দ্র-সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্র, প্রদীপ্ত তারকারাজি এবং তার উচ্চতা ও বিশালতা ইত্যাদি আকাশের উজ্জ্বলতা এবং তার শোভা ও সৌন্দর্য বর্ধনের উপকরণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. নিশ্চয় তোমরা পরস্পর বিরোধী কথায় লিপ্ত।(১)
(১) যে বিষয়বস্তুকে জোরদার করার জন্য এখানে কসম খাওয়া হয়েছে, তা এই: (إِنَّكُمْ لَفِي قَوْلٍ مُخْتَلِفٍ) বা “তোমরা তো বিভিন্নরূপ উক্তিতে লিপ্ত”। বাহ্যত এতে মুশরিকদের-কে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে বিভিন্নরূপ উক্তি করত এবং কখনও উন্মাদ, কখনও জাদুকর, কখনও কবি ইত্যাদি বাজে পদবী সংযুক্ত করত। [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন মুফাস্সির বলেন, এখানে সকল স্তরের মানুষকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে; তাই এখানে “বিভিন্ন রূপ উক্তির” অর্থ হবে এই যে, তাদের কেউ তো ঈমান আনে এবং তাকে সত্যবাদী মনে করে এবং কেউ অস্বীকার ও বিরুদ্ধাচরণ করে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) তোমরা তো পরস্পর-বিরোধী কথায় লিপ্ত। [1]
[1] অর্থাৎ, হে মক্কাবাসী! তোমাদের কোন ব্যাপারে আপোসের ঐকমত্য নেই। আমার নবীকে তোমাদের মধ্যে কেউ বলে যাদুকর। কেউ বলে কবি। কেউ বলে জ্যোতিষী। আবার কেউ বলে মিথ্যুক। অনুরূপ কেউ কিয়ামতকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। আবার কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে। এ ছাড়া এক দিকে তোমরা আল্লাহকে স্রষ্টা ও আহারদাতা বলে স্বীকার কর। আবার অন্য দিকে অপরকেও উপাস্য বানিয়ে রেখেছ!
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. ফিরিয়ে রাখা হয় তা থেকে যে ফিরে থাকে।(১)
(১) أفك এর শাব্দিক অর্থ মুখ ফেরানো। এ আয়াতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। (এক) এই সর্বনাম দ্বারা কুরআন ও রাসূলকে বোঝানো হয়েছে। অর্থ এই যে, কুরআন ও রাসূল থেকে সেই হতভাগাই মুখ ফেরায়, যার জন্যে বঞ্চনা অবধারিত হয়ে গেছে। [তাবারী] (দুই) এই সর্বনাম দ্বারা পূর্বের আয়াত বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ এরূপ বিভিন্ন উক্তি বলা থেকে সে ব্যক্তিকেই মুখ ফিরিয়ে রাখা হয়েছে, যাকে আল্লাহ তা'আলা রক্ষা করেছেন এবং তৌফিক দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) সে ব্যক্তিকে তা হতে বিরত রাখা হয়, যাকে বিরত রাখা হয়েছে। [1]
[1] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ) এর উপর ঈমান আনা হতে। অথবা সত্য অর্থাৎ, পুনরুত্থানে বিশ্বাস ও একত্ব হতে। কিংবা অর্থ হল, উল্লিখিত মতানৈক্য হতে সেই ব্যক্তিকে বিরত রাখা হয়েছে, যাকে আল্লাহ তাঁর তওফীক দ্বারা বিরত রেখেছেন। প্রথম অর্থ নিন্দনীয় এবং দ্বিতীয় অর্থ প্রশংসনীয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. ধ্বংস হোক মিথ্যাচারীরা(১),
(১) الْخَرَّاصُونَ এর অর্থ অনুমানকারী, যে ব্যক্তি অনুমানের উপর ভিত্তি করে কথা বলে। এখানে সেই কাফের ও অবিশ্বাসীদেরকে বোঝানো হয়েছে, যারা কোনো প্রমাণ ও কারণ ব্যতিরেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী উক্তি করত। কাজেই এর অনুবাদে মিথ্যাবাদীরা বলা হয়েছে। এই বাক্যে তাদের জন্যে অভিশাপের অর্থে বদ দু'আ রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) ধ্বংস হোক তারা, যারা আন্দাজে কথা বলে,
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান