-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. শপথ তূর পর্বতের(১),
(১) বলা হয়ে থাকে যে, সুরিয়ানী ভাষায় طور (তুর) এর অর্থ পাহাড়, যাতে লতাপাতা ও বৃক্ষ উদগত হয়। এখানে তুর বলে মাদইয়ানে অবস্থিত তুরে-সিনীন বোঝানো হয়েছে। এই পাহাড়ের উপর মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার সাথে বাক্যালাপ করেছিলেন। তুরের কসম খাওয়ার দ্বারা মহান আল্লাহ এ পাহাড়টিকে সম্মানিত করেছেন। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) শপথ ত্বূর (পর্বতের), [1]
[1] طُوْرٌ সেই পাহাড়, যেখানে মূসা (আঃ) মহান আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ করেছিলেন। এই পাহাড়টিকে ‘ত্বূরে সাইনা’ও বলা হয়। তার এই বিশেষ মর্যাদার কারণে মহান আল্লাহ তার কসম খেয়েছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে(১)
(১) লিখিত কিতাব বলে মানুষের আমলনামা বোঝানো হয়েছে, না হয় কোন কোন তফসীরবিদের মতে পবিত্র কুরআন বোঝানো হয়েছে। আবার কারো কারো মতে এর দ্বারা লাওহে মাহফুজই বুঝানো হয়েছে। কারো কারো মতে এর দ্বারা সকল আসমানী কিতাবকে বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে, [1]
[1] مَسْطُوْرٍ এর অর্থ হল লিপিবদ্ধ। লিখিত বস্তু। কিন্তু এখানে তা থেকে বিভিন্ন জিনিসকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, কুরআন মাজীদ, লাওহে মাহফূয, সমস্ত অবতীর্ণ কিতাব অথবা মানুষের সেই আমলনামা, যা ফিরিশতাগণ লিখে থাকেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. উন্মুক্ত পাতায়(১);
(১) رق শব্দের আসল অর্থ লেখার জন্যে কাগজের স্থলে ব্যবহৃত পাতলা চামড়া। তাই এর অনুবাদ করা হয় পত্র। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) উন্মুক্ত পত্রে, [1]
[1] এটির সম্পর্ক হল مَسْطُوْرٍ এর সাথে। رَقٍّ সেই পাতলা চামড়া, যার উপর লেখা হত। আর مَنْثوُرٍ অর্থ হল مَبْسُوْطٍ তথা উন্মুক্ত বা বিস্তৃত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* আবাদ গৃহ বলতে সপ্তাকাশের বায়তুল মা‘মূরকে বুঝানো হয়েছে। অগণিত ফেরেশতা নিরবচ্ছিন্ন ইবাদাতে যা আবাদ রেখেছে।
৪. শপথ বায়তুল মামুরের(১),
(১) আকাশস্থিত ফেরেশতাদের কাবাকে বায়তুল মামুর বলা হয়। এটা দুনিয়ার কা'বার ঠিক উপরে অবস্থিত। হাদীসে আছে যে, মে'রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বায়তুল মামুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এতে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদতের জন্যে প্রবেশ করে। এরপর তাদের পুনরায় এতে প্রবেশ করার পালা আসে না। প্রত্যহ নতুন ফেরেশতাদের নম্বর আসে। [বুখারী: ৩২০৭, মুসলিম: ১৬২] সপ্তম আসমানে বসবাসকারী ফেরেশতাদের কা'বা হচ্ছে বায়তুল মামুর। এ কারণেই মেরাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে পৌছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে বায়তুল মামুরের প্রাচীরে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পান। [বুখারী: ৩২০৭] তিনি ছিলেন দুনিয়ার কা'বার প্রতিষ্ঠাতা। আল্লাহ তা'আলা এর প্রতিদানে আকাশের কা'বার সাথেও তাঁর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। প্রতি আসমানেই ফেরেশতাদের জন্য একটি ইবাদতঘর রয়েছে। প্রথম আসমানের ইবাদতঘরের নাম ‘বাইতুল ইযযত’৷ [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) শপথ বায়তুল মা’মূরের, [1]
[1] ‘বায়তে মা’মূর’ হল সপ্তম আকাশে অবস্থিত সেই ইবাদতখানা, যেখানে ফিরিশতাগণ ইবাদত করেন। এই ইবাদতখানা ফিরিশতাবর্গ দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে যে, প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার করে ফিরিশতা ইবাদতের জন্য প্রবেশ করেন। যাঁদের কিয়ামত পর্যন্ত পুনরায় প্রবেশের পালা আসবে না। আর এ কথা মি’রাজের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলোতে বলা হয়েছে। কেউ কেউ ‘বায়তে মা’মূর’ বলতে ‘কা’বা-ঘর’ বুঝিয়েছেন। যে ঘর ইবাদতের জন্য আগমনকারী মানুষ দ্বারা সর্বদা পরিপূর্ণ থাকে। ‘মা’মূর’ শব্দটির অর্থই হচ্ছে আবাদ ও পরিপূর্ণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. শপথ সমুন্নত ছাদের(১),
(১) সমুন্নত ছাদ বা উঁচু ছাদ অর্থ আসমান, যা পৃথিবীকে একটি গম্বুজের মত আচ্ছাদিত করে আছে বলে মনে হয়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) শপথ সমুন্নত ছাদের, [1]
[1] এ থেকে আকাশ বুঝানো হয়েছে যা পৃথিবীর জন্য ছাদস্বরূপ। কুরআনের অন্যত্র এটাকে ‘সুরক্ষিত ছাদ’ বলা হয়েছে। {وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًا وَهُمْ عَنْ آيَتِهَا مُعْرِصُوْنَ} سورة الأنبياء ৩২ কেউ কেউ এ থেকে আরশ বুঝিয়েছেন। যা সমস্ত সৃষ্টিকুলের জন্য ছাদ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* অন্য তাফসীর মতে-আগুনের সাগর যা দুনিয়াতে হতে পারে, অথবা কিয়ামতে।
৬. শপথ উদ্বেলিত সাগরের(১)—
(১) مَسْجُورٌ শব্দটি سجر থেকে উদ্ভূত। এর কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির একে ‘আগুনে ভর্তি’ অর্থে গ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ অর্থ করেছেন, অগ্নি প্ৰজ্বলিত করা। তখন আয়াতের অর্থ, সমুদ্রের কসম, যাকে অগ্নিতে পরিণত করা হবে। এথেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কিয়ামতের দিন সকল সমুদ্র অগ্নিতে পরিণত হবে। অন্য এক আয়াতে আছেঃ (وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ) [সূরা আত-তাকভীর: ৬] কেউ কেউ একে শূন্য ও খালি অর্থে গ্রহণ করেন যার পানি মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। বা শপথ খালি সমুদ্রের যা পরিপূর্ণ হবে। কেউ কেউ একে আবদ্ধ বা আটকিয়ে রাখা বা বাধাপ্ৰাপ্ত হওয়ার অর্থে গ্ৰহণ করেন।
তাদের মতে এর অর্থ হচ্ছে, সমুদ্রকে আটকিয়ে বা থামিয়ে রাখা হয়েছে যাতে তার পানি মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হারিয়ে না যায় এবং স্থলভাগকে প্লাবিত করে না ফেলে এবং পৃথিবীর সব অধিবাসী তাতে ডুবে না মরে। অথবা জলভাগকে স্থলভাগ গ্রাস করতে বাধা দিয়ে রাখা হয়েছে নতুবা তা অনেক আগেই গ্ৰাস করে ফেলত। কেউ কেউ একে মিশ্ৰিত অর্থে গ্রহণ করে থাকেন। অর্থাৎ এর মধ্যে মিঠা ও লবণাক্ত পানি এবং গরম ও ঠান্ডা সব রকম পানি এসে মিশ্রিত হয়। আর কেউ কেউ একে কানায় কানায় ভরা ও তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ অর্থে গ্রহণ করেন। কাতাদাহ্ রাহেমাহুল্লাহ প্রমুখ مَسْجُورٌ এর অর্থ করেছেন পানিতে পরিপূর্ণ। ইবন জারীর রাহেমাহুল্লাহ এই অর্থই পছন্দ করেছেন। [কুরতুবী]।
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) শপথ উদ্বেলিত (প্রজ্বালিত) সমুদ্রের,[1]
[1] مسجور এর অর্থ হল প্রজ্বালিত। কেউ কেউ বলেছেন, এ থেকে সেই পানি বুঝানো হয়েছে, যা আরশের নীচে অবস্থিত এবং যেখান থেকে কিয়ামতের দিন বৃষ্টিপাত হবে। আর এর দ্বারা মৃতদেহ সজীব হয়ে উঠবে। কেউ বলেছেন, এ থেকে সমুদ্র বুঝানো হয়েছে। এগুলোতে কিয়ামতের দিন অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ বলেন, {وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَت} যখন সমুদ্রসমূহ প্রজ্বালিত হবে। ইমাম শাওকানী (রঃ) শেষোক্ত এই অর্থটিকেই সর্বাধিক সঠিক বলে গণ্য করেছেন। আবার কেউ কেউ مَسْجُوْرٌ এর অর্থ করেছেন, مَمْلُوْءٌ (পরিপূর্ণ)। অর্থাৎ, বর্তমানে সমুদ্রে আগুন নেই বটে, তবে তা পানিতে ভরে আছে। ইমাম ত্বাবারী (রঃ) এই অর্থকেই পছন্দ করেছেন। এর আরো কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। (দেখুন তাফসীর ইবনে কাসীর) (এ ছাড়া সমুদ্রের নিচে লাভা প্রজ্বালিত হয়ে থাকে। এই হিসাবেও সমুদ্র প্রজ্বালিত। -সম্পাদক)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. নিশ্চয় আপনার রবের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তোমার প্রতিপালকের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী,
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. এটার নিবারণকারী কেউ নেই।(১)
(১) বলা হয়েছে, একে অর্থাৎ আপনার রবের শাস্তিকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, একবার উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূরা আত-তূর পাঠ করে যখন এই আয়াতে পৌছেন, তখন একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিশ দিন পর্যন্ত অসুস্থ থাকেন। তার রোগ নির্ণয় করার ক্ষমতা কারও ছিল না। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি এক রাত্রে প্রজাদের অবস্থা দেখার জন্য ছদ্মবেশে বের হন, এমতাবস্থায় এক লোকের বাড়ির পাশে গিয়ে এ আয়াত শুনতে পান। তিনি তৎক্ষণাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এক মাসের মত সময় অসুস্থ ছিলেন। কেউ তার রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম ছিল না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) এর নিবারণকারী কেউ নেই, [1]
[1] এটা হল উল্লিখিত শপথসমূহের জওয়াব। অর্থাৎ, এই সমস্ত জিনিস যা মহান আল্লাহর বিশাল ক্ষমতার নিদর্শন, এ কথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহর সেই আযাব অবশ্যই সংঘটিত হবে, যার তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তা কেউ রোধ করার কোন ক্ষমতা রাখে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. যেদিন আসমান আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে(১),
(১) আরবী ভাষায় مور শব্দটি আবর্তিত হওয়া, কেঁপে কেঁপে ওঠা, ঘুরপাক খাওয়া, নড়েচড়ে উঠা এবং বারবার সামনে ও পেছনে চলা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। কিয়ামতের দিন আসমানের যে অবস্থা হবে একথাটির মাধ্যমে তা বর্ণনা করে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, সেদিন ঊর্ধ্বজগতের সমস্ত ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং কেউ যদি সেদিন আকাশের দিকে তাকায় তবে দেখবে যে, সেই সুশোভিত নকশা বিকৃত হয়ে গিয়েছে যা সবসময় একই রকম দেখা যেতো আর চারদিকে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে। [1]
[1] مور এর অর্থ হল আন্দোলন ও অস্থিরতা। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আকাশের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে বিশৃঙ্খলতা এবং মহাশূন্যে ভ্রাম্যমান তারকারগুলোর ঝরে ও খসে পড়ার কারণে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, সেটাকেই বুঝানো হয়েছে এই শব্দগুলোর মাধ্যমে। আর (যেদিন) হল উল্লিখিত আযাবের ‘যার্ফ’ বা ঘটনকাল (ক্রিয়াবিশেষণ)। অর্থাৎ, এই শাস্তি সংঘটিত হবে সেই দিন, যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে এবং পর্বতমালা স্বীয় স্থান ছেড়ে ধূনিত তুলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের ন্যায় এবং ধূলিকণার ন্যায় উড়তে থাকবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর পর্বত পরিভ্রমণ করবে দ্রুত(১);
(১) অর্থাৎ আসমান এমনভাবে শূন্যে উড়তে থাকবে যেন মেঘমালা ভেসে বেড়াচ্ছে। এভাবে পাহাড় নিজ অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) এবং পর্বতসমূহ দ্রুত চলতে থাকবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান